ইন্ডিয়া ট্রিপ- দিল্লি, আজেমর, জয়পুর, আগ্রা এবং কলকাতা

প্রথমেই দুঃখিত যে খরচের বিস্তারিত হিসাব দিতে পারছি না বলে। ফ্যামিলি মেম্বারসরা গিয়েছি বলে ওভাবে হিসাব রাখা সম্ভব হয় নাই। আমরা ঢাকা থেকে দিল্লি এবং কলকাতা থেকে ঢাকার প্লেনে আসা যাওয়া করেছি। বুকিং ডট কম থেকে সব হোটেল বুক করেছি এবং পরে স্নংশ্লিষ্ট হোটেল এর সাথে মেইল করে রি-কনফার্ম করে নিয়েছি। প্লেন এবং ট্রেনের টিকেট ঢাকা থেকেই করে নিয়ে গিয়েছি।

ডে-১- দিল্লিতে পোছাই দুপুরের দিকে। আমাদের জন্য আগে থেকেই এয়ারপোর্ট’এ ট্যাক্সি ছিল। হোটেল পর্যন্ত পার ট্যাক্সি(০৪ জন এর) ৭৫০ রুপি সাথে ওদের পার্কিং চার্জ দিতে হয়েছিল। ট্যাক্সি বলার সময় ল্যান্ডিং এর সময় মাথায় রেখে দেড় ঘন্টা পরের টাইম দেয়া ভাল। দিল্লিতে স্টেশানের কাছে অনেক বাজেট হোটেল আছে। আমরা হোটেল এলেগেন্টস’এ ছিলাম। ম্যানাজার খুবই হেল্পফুল। অনেক মেইল চালাচালি করে এয়ারপোর্ট পিক আপ এর জন্য গাড়ির কথা বলে নিয়েছিলাম। হোটেলের অবস্থা টাকার তুলনায় বেশ ভাল। নিচে কাউণ্টারে রুপি ভাঙ্গানো যায়। এবং সেটার রেট এয়ারপোর্ট থেকে অনেক ভাল। হোটেল থেকেই সেদিন ৮ ঘণ্টা ৮০ কিঃমিঃ এর জন্য ট্যাক্সি করে দিয়েছিল। ভাড়া ২০০০ রুপি। ঘুরে আসলাম হুমায়ুন টম্ব। চমৎকার লেগেছিল। ওখান থেকে কাছেই নিজাম উদ্দিনের মাজার’এ গিয়েছিলাম। পরে রাতে শপিং এরিয়াতে ঘুরাঘুরি করে খাওয়া শেষে গিয়েছিলাম ইন্ডিয়া গেট। দেখে মনে হলো রাতে এসেই ভাল করেছি। দিনে হয়ত এতো সুন্দর লাগতো না। হোটেলে ফিরে সেদিনের মতো রেস্ট। হোটেল ডেস্ক থেকে পরের দিনের জন্য গাড়ির ব্যবস্থা আগেই করে রেখেছি। ১০ জনের ক্যাপাসিটির গাড়ি ৮ ঘন্টা ৮০ কিঃমিঃ এর জন্য ৪৫০০ রুপি।

ডে-২- কোথায় ঘুরতে হবে সেটা আগেই নেটের সাইটগুলি থেকে বেছে নিয়েছিলাম। যেহেতু গাড়ি ভাড়ার ক্ষেত্রে সময় এবং দুরত্ত দুটাই ইমপর্টেন্ট তাই নিজে থেকে ছক বানিয়ে নেয়া বেটার। তা নাহলে ড্রাইভার উলটাপালটা চালিয়ে বেশি সময় নিয়ে অতিরিক্ত চার্জ করবে। আমরা শুরু করেছি কুতুব মিনার থেকে। এরপর লোটাস টেম্পল, জামে মসজিদ এবং শেষে রেড ফোর্ট অথবা লাল কেল্লা। লাল কেল্লায় বিকালে প্ল্যান করলে ভাল। বিশেষ করে যারা রাতে ওখানে লাইট এবং লেজার শো দেখতে চান তাদের জন্য। সব শেষ করে খেতে চলে

গিয়েছিলাম ম্যাকডোনাল্ডস’এ। একদিনে এর থেকে বেশি দেখা সম্ভব হলো না। কিন্তু দেখার আরো অনেক কিছু আছে দিল্লিতে। অন্তত ৩ দিন থাকলে ভাল করে দেখা যাবে মনে হল।

ডে-৩- সকালে ভোরে আজমিরের ট্রেন ধরার জন্য হোটেল থেকে আগে ঠিক করে রাখা ট্যাক্সি চড়ে স্টেশান চলে গেলাম। কুলির অনেক উৎপাত । পরোয়া না করে নিজে লোকজন কে জিজ্ঞেস করে নির্দিষ্ট প্ল্যাতফর্মে চলে গেলাম। ট্রেন একদম লেট করেনি। দুপুরের মধ্যে আজমের চলে গেলাম। ওখানে আগে থেকে যোগাযোগ করা খাদেম ছিল। তার বাসায় গিয়ে ঊঠলাম। চমৎকার খাওয়া দাওয়ার আয়োজন ছিল। পরে গেলাম হযরত খাজা মাইন ঊদ্দিন চিশিতির মাজারে। জিয়ারতের ইচ্ছা থাকলে সরল মনে সেটা করে আসাই ভাল। ওখানে গেলে অনেক কিছুই ভাল লাগবে না। অনেক বিধর্মিয়রাও যায় সেটা যার যার ব্যাপার। কিন্তু কোন কিছু নিয়ে তর্ক না করাই ভাল। বিকালে রেস্ট করে গেলাম আনা সাগর। ওখানে গিয়ে মন জুড়িয়ে গিয়েছিল। ওখানেও সম্রাট শাহাজানের কিছু কাজ চোখে পড়বে। দরগা থেকে যেতে ২০ মিনিটের মত লাগে।

ডে-৪- সকালে আরেকবার মাজার জিয়ারত করে পরদিন খাদেমের ঠিক করে দেয়া গাড়িয়ে জয়পুরের উর্দ্যেশে যাত্রা করলাম। খাদেম এর ব্যবস্থাপনায় থাকা খাওয়ার চমৎকার ব্যবাস্থা থাকে। এর জন্য কোন নির্দিষ্ট চার্জ নাই। যার যা খুশি দিয়ে আসে। কিছু না দিলেও কিছু বলবেন না। চমৎকার এক্সপ্রেস ওয়ে দিয়ে ৩ ঘন্টা তেই পৌছে গেলাম জয়পুর। প্রাইভেট গাড়ি ছাড়াও বাস অথবা ট্রেনে সহজেই ওখান থেকে জয়পুর যাওয়া যায়। হোটেল নিয়েছিলাম জল মহলের কাছেই। ছাদে থেকেই জল মহল দেখা যায় । বিকালে শপিং এবং শহর দেখার জন্য বের হয়েছিলাম। ওখানে মনে হয় প্রত্যেক লোকই ফ্রড। ড্রাইভার নিয়ে যাবে তার পছন্দের যায়গায়। দাম চাইবে ইচ্ছা মত। প্রচুর বার্গেন করতে হবে শপিং এর জন্য। ১/৪ দাম দিয়ে শুরু করা বেটার। রাতে আবার ম্যাকডোনাল্ডস।

ডে-৫- সকালে ভোরে আগে থেকে হোটেলের ঠিক করে রাখা ট্যাক্সি তে আগ্রার উর্দ্দেশ্যে ট্রেনে চেপে বসলাম। আগ্রাতে গাইড সহ গাড়ি ঠিক করা ছিল। সারাদিনের জন্য গাইড সহ ১০ জনের এসি গাড়ি ৭০০০ রুপি ছিল। আগ্রা এবং জয়পুরে বেশি গরম। এসি গাড়ি না হলে একটু

কষ্ট হয়ে যাবে। গাইড নিয়ে গেল তাজমহল। টুরিস্ট রেটেই টিকেট করেছি। অনেকে কলকাতার বলে লোকার টিকিট করতে চায়। বাট সেটা রিস্কি। অনেক সময় ধরা পড়ে যাবার পসিবিলিটি থাকে। তাজমহল দেখে আগের সব দেখা ম্লান হয়ে গেছে। কি যে সুন্দর সেটা শুধু দেখেই অনুভব করা যাবে, বর্ণনা করা যাবে না। তাজমহল থেকে বের হয়ে গেলামা আগ্রা ফোর্ট। যেখানে শাহাজান মৃত্যুর আগ পর্যন্ত বন্দি ছিলেন। সেখান থেকে বের হয়ে লানচ শেষে গেলাম আকবর’স টম্ব’এ। সময়ের অভাবে এর থেকে বেশি দেখা সম্ভব হয় নি। বিকালের ট্রেনে আবার জয়পুর ফিরে এলাম।

ডে-৬- সকাল সকাল ব্রেকফাস্ট শেষে গাড়ি নিয়ে বেরিয়ে গেলাম। প্রথমেই আম্বরস প্যালাস। শহর থেকে ৩০ মিনিটের মত টাইম লাগে। উপরে ঊঠার জন্য হাতি এবং গাড়ি আছে।। বাজেট অনুযায়ি চুজ করে নেয়া ভাল। ভিতরে গেলে শিস মহল ছাড়াও দেখার জন্য অনেক কিছু আছে। উপর থেকে চারপাশের দৃশ্যগুলাও বেশ সুন্দর। ওখানে বেড়াতে ২/৩ ঘন্টা লেগে যাবে। ওখান থেকে ফেরার পথে জল মহলের থেকে একটু দূরে দাঁড়িয়ে ফটো তুলে আসা যায়। অনেক বছর ধরেই ওখানে আর যাওয়া যায় না। এরপর গেলাম জন্তর মন্তর। এবং সিটি প্যালেস। কাছেই হাওয়া মহল আছে। বাইরে থেকে ফটো তুলে নিয়েছি। ভিতরে আর যাওয়া হয় নি। সিটি প্যালেস টা দেখার মত। শেষে পিঙ্ক সিটিতে লাঞ্চ করে এয়ারপোর্ট চলে গেলাম। সন্ধ্যার ফ্লাইটে চলে গেলাম কলকাতা। চেক ইন করলাম নিউমার্কেটের কাছে হোটেল ডি কে ইন্টারন্যাশানাল’এ।

ডে-৭- সারাদিন শপিং। সন্ধ্যায় গিয়েছিলাম কলেজ স্ট্রিটে কলকাতার নিলখেতে। চারদিকে বই আর বই। ওখান থকে গেলাম সাঊথ সিটি মল। বেশ দূরে ব্রান্ড শপের মার্কেট। ওখানকার থিয়েটারে মুভি দেখে বাইরে ডিনার করে আবার হোটেল। পর দিন শান্তিনিকেতন যাবার জন্য গাড়ি করে আসলাম।

ডে-৮- প্রায় ৪ ঘন্টা ট্রাভেল করে শান্তিনগর পৌছালাম। দেখার কিছুই নাই। গাইড আছে প্রচুর । তারা বিশ্ববিদ্যালয় ঘুরিয়ে দেখায়। তাল গাছ এক পায়ে দাঁড়িয়ে……এক পায়ে দাঁড়িয়ে থাকা তালগাছটা এখনো আছে।(যদি ওদের কথা সত্যি হয়) ওটার নিচে এবং আশেপাশে গাছের নিচে অনেকের পড়ালেখা চলছে। একটা মিউজিয়াম আছে। সময়ের জন্য যাওয়া হয় নাই। অল্প কিছুক্ষন থেকেই চলে এলাম। অনেকের ভাল না লাগলেও আমার ভাল লেগেছে। ফিরে

বিকালে আবার শপিং। রাতে আশেপাশে একটু হাটাহাটি করলাম। পার্ক স্ট্রিটে বেশ কিছু ভাল খাবার দোকান এবং বার আছে। সাথে আছে শাড়ির কিছু ব্রান্ড শপ।

ডে-৯। আর করার কিছু নাই। বিকালে ফ্লাইট। তার আগে ভিক্টরিয়া মেমোরিয়াল আর রেড কোর্সে যাবার জন্য বের হলাম। রেড কোর্সে গিয়ে দেখলাম বন্ধ। পরে আর মেমোরিয়ালও না যেয়ে ফেরত আসলাম। ফেরার জন্য তৈরি হলাম। ৩০০ রুপিতে ট্যাক্সি করে এয়ারপোর্ট ফিরলাম। সন্ধ্যার ফ্লাইটে ফিরে এলাম ঢাকা।

নোটসঃ

১। আগে থেকে ওয়েদার এর খবর নিয়ে যায়া ভাল।

২। দিল্লি মেয়েদের জন্য নিরাপদ নয়। অবশ্যই একা ট্রাভেল করা যাবে না। রাতে বের না হওয়া ভাল। যেখানেই যাবেন গ্রুপে যাবার চেষ্টা করুন

৩। সব যায়গাতেই ধাপ্পাবাজ রা আছে। নিজের বুদ্ধিতে ওদের এড়িয়ে চলতে হবে।

৪। কলকাতা ছাড়া অন্য যায়গায় সিম কার্ড নেয়া বেশ যামেলা। পাসপোর্টের ফটোকপি, নিজের ছবি এবং সাইন লাগে। এক্টিভেট হতে ২-৫ দিন পর্যন্ত লেগে যেতে পারে।

৫। সব যায়গাতেই গাড়ি ভাড়া মোটামুটি ঠিক করা রেট আছে। সেটা জেনে নিন।

৬। কোথায় যাবেন তার প্রায়োরিটি ঠিক করে নিন (ইন্টারনেট থেকে)

Leave a Reply

Your email address will not be published.