খুম খুম নাফাখুম….নাফাখুম…নাফাখুম

ইউটিউব এ একের পর এক ভিডিও দেখার পরই নাফাখুম এর প্রেমে পড়ে যায়।তখন সেমিস্টার ফাইনাল চলছিল।পড়ার ফাকে ফাকে ইউটিউব এ ঢুঁ মারাটা ই যেন নেশা হয়ে যাচ্ছিল।মনে মনে ভাবছিলাম বাংলাদেশের মানচিত্রে এত ভয়ংকর সুন্দর জায়গাও আছে।আর আমি এমনিতেও ভ্রমণ পিপাসু।যাইহোক অনেক দূরের পথ!একা একা তো আর যাওয়া যাই না তাই মনে মনে সঙ্গী খুঁজতে লাগলাম।আর আল্লাহর রহমতে সঙ্গী হিসেবে পেলাম আমার জীবনের সেরা ৭ জনকে।সব পরিকল্পনা শেষ।এখন শুধু পরীক্ষা শেষ আর ফরমালিটি ভাইভা শেষ হওয়ার জন্য অপেক্ষা।পরীক্ষা শেষ ১১তারিখ।আর ভাইভার তারিখ জানালো ১৩ই ডিসেম্বর ২০১৭।মনে খুশি আর ধরে না!!ডিসিশন নিয়ে নিলাম ১৩ তারিখ রাতেই রওয়ানা হবো।আমি বেশি excited ছিলাম ত তাই মাঝখানের ২ রাত আর ঘুমই আসে না।আহারে আহারে কবে যাব পাহাড়ে!!!আগের দিন গিয়ে টিকিট কাটি।সিজন হওয়ায় টিকিট পাওয়াটা ঝামেলাই হয়।অনেক কষ্টে হানিফ পরিবহনের ৭ টা টিকিট পাই।ও হ্যা আমাদের মধ্যে ৪জন ছেলে আর ৩ জন মেয়ে ছিল।প্রথমে একটু ভয় কাজ করছিল।কিন্তু কথায় আছে বন্ধুত্ত্বে ভয়কে করো জয়।যাই হোক রাত ১০ টায় আমাদের বাস ছাড়ল সায়েদাবাদ থেকে।সকাল ৬.২০ এ আমরা বান্দরবন পৌছালাম।হোটেল ঠিক করে নাস্তা শেষ করে একটা জিপ রেডি করলাম সারাদিন শহরের আশে পাশে ঘুরার জন্য।১ম দিন:-রামজাদিবৌদ্ধ মন্দির,স্বর্ণমন্দির,মেঘলা,নীলাচল ঘুরা শেষ করে সন্ধ্যায় হোটেলে ফিরে আসলাম।রাতে ডিনার শেষ করে বার্মিজ মার্কেটে একটু ঢুঁ মারলাম।আর সাথে পরদিন নাফাখুম যাওয়ার জন্য থানচির উদ্দেশ্যে চান্দের গাড়ি ঠিক করে নিলাম।কথা হলো আমাদের যাওয়ার পথে শৈলপ্রপাত,চিম্বুকপাহাড়,নীলগিরি দেখিয়ে নিয়ে যাবে।হোটেলে এসে দিলাম ঘুম।
দিন ২:-সকাল ৬ টায় চান্দের গাড়ি আসল আমাদের নিতে।আমরা রওয়ানা হলাম।আমাদের মেইন টার্গেট যেহেতু নাফাখুম তাই মাঝখানের জায়গাগুলোতে বেশি সময় নষ্ট করি নাই।সকাল ১১ টার মধ্যে আমরা থানচি পৌছে যায়।ও হ্যাঁ নীলগিরি পার হবার পর থানচি যাওয়ার রাস্তাটা just ভয়ংকর ভয়ংকর সুন্দর!!আমরা থানচি পৌছে নৌকা রেডি করে ফেলি।যেহেতু আমরা ৭ জন ছিলাম তাই ২ টি নৌকা নেয়া লাগছে কারন এক নৌকায় ৫ জনের বেশি বিজিবি উঠতে দেয় না।শুরু হল আল্লাহর অপরূপ সাজানো বাগান দেখা।নৌকা চলে ২ পাহাড়ের মাঝখান দিয়ে।কখনোও আবার বড় বড় পাথরের ফাকঁ দিয়ে।নৌকার রাস্তাটুকু এক কথায় অস্থির।২ ঘণ্টার মধ্যেই আমরা রেমাক্রি বাজার পৌছে যায়।আমাদের নৌকার মাঝিই আমাদের গার্ডের দায়িত্ত্বে ছিল।ও আমাদের জন্য রাতে থাকার এবং খাবার জন্য কটেজ(উপজাতিদের তৈরি কাঠের ২ তালা ঘর) রেডি করে। (জনপ্রতি থাকা ১৫০ আর খাবার একবেলা ১২০ফিক্সড)।ঐ রেমাক্রি বাজার থেকে নতুন গাইড ধরে নাফাখুম এর উদ্দেশ্যে রওয়ানা শুরু ১ টায় সাথের জিনিস পত্র কটেজে রেখে।যেহেতু আমাদের সাথে মেয়ে ছিল তাই হাটার গতি কিছুটা শিথিল ছিল।শুরু হলো আমাদের ট্রেকিং।পাহাড় পেরিয়ে খালের কিনারা ঘেষে আমরা হাটতে থাকলাম।এখন শীতকাল তাই রাস্তা বেশি ভয়ংকর না কিন্তু পরিবেশটা ভয়ংকর সুন্দর!যাওয়ার পথে ২ বার পানি পাড় হতে হয়।খুব সাবধনে কারণ পাথুরে রাস্তা হওয়ায় খুব পিচ্ছিল।যাই হোক আমরা ৩.৩০ মিনিট এর মধ্যেই পৌছে যায় সেই কল্প-বাস্তবতায় যা কিনা কত রাত আমার চোখের ঘুম কেড়ে নিছিল।কত রাত আমি সপ্নের মধ্যেই চলে যেতাম ঐ জায়গায়।সৌন্দর্য কি বলব!! এক কথায় expectation এর চেয়ে ১০০ গুন উপরে।ভাগ্য খারাপ হলে যা হয়!দিনের দৈঘ্য ছোট হওয়ায় আমরা মাত্র ১৫ মিনিট সেখানে ছিলাম।গোসল করার সৌভাগ্য হয়নাই।আমরা রওয়ানা দিলাম।৩.৪৫ এ।৬.৩০ এর মধ্যেই আমরা কটেজে পৌছে গেলাম।রাতের কাহিনী পুরুই আমাদের অবাক করে দিয়েছে।আমার মনে হয় না এত দুর্গম জায়গায় এত ভালো থাকা আর খাওয়ার প্রত্যাশা কেউ করতে পারে।রাত কাটিয়ে সকালে ১৬ই ডিসেম্বর।(কিছু কথা শেষে লিখব বিজয় দিবস নিয়ে ওদের উদযাপন)।আমরা ৯.৩০ এ আমাদের নৌকায় চড়ে রওয়ানা দিলাম থানচির উদ্দেশ্য।যাওয়ার সৌন্দর্য আমাদের বিমোহিত করেছে।যদিও সাংগু নদীর অনূকূলে যাওয়াটা অনেক কষ্টসাধ্য।আমাদের মাঝিগুলা খুব সু্ন্দরভাবে ই নিয়ে গেছেন।হালকা কুয়াশা।পাহাড়ের বুকে মেঘ আটকে থাকা,রাজা পাথর দেখে,বড় পাথর দেখা,পাথরে দাড়িয়ে ছবি তুলা মানে awesome.তবে ভূলেও কেউ রাজাপাথরে উঠে ছবি তুলবেন না।স্থানীয়রা অনেক সমীহ করে চলে। আমরা ১১.৩০ এ থানচি বাজারে পৌছে যাই।সেখান থেকে বান্দরবনের গাড়ি ঠিক করি।চান্দের গাড়ি।মাঝপথে গাড়ি থামিয়ে পাহাড়ি আনারসের টেষ্ট নেয়া থেকে কেউ বন্ঞ্চিত হবেন না।২.৪৫ এ আমরা বান্দরবন শহরে পৌছে যায়।ঢাকার বাসের জন্য যাই।বাস রাতের ৮ টায়।আমাদের হাতে enough সময় আছে।দুপুরের খাবার খেয়ে ২য় বারের মতো চলে যাই নীলাচলের সূ্র্যাস্তের দৃশ্য উপভোগ করতে।৭ টায় আমরা কাউন্টারে এসে রাতে খাওয়ার জন্য খাবার কিনে বাসে উঠে পড়ি।ভোর ৪ টায় আমরা সায়দাবাদ পৌছে যায়।
.
.
ট্যুর প্লান:
ঢাকা-বান্দরবান(রামজাদি বৌদ্ধমন্দির, স্বর্ণমন্দির,মেঘলা,নীলাচল,মিলনছরি,শৈলপ্রপাত,চিম্বুকপাহাড়,নীলগিরি)-থানচি-রেমাক্রি-নাফাখুম-ঢাকা
.
.
সময় লেগেছে:-
৩দিন ও ২রাত(যাওয়া আসার রাত ছাড়া)
.
.
খরচ পড়েছে:-
মাথাপিছু ৫৫০০
নৌকা+গাইড(তাইজুল:-০১৮২৩৬৭৯২৪০)
.
.
(আমার সম্পূর্ণ নিজের অভিমতে নিচের লেখাটি লিখলাম।দয়া করে কেউ ব্যক্তিস্বার্থে নিবেন না:-
.
.
উপজাতি ও বিজয় দিবস
♠এতো গভীরে মানুষ থাকতে পারে তা যখন চিন্তা করাই কঠিন সেখানে সবাইকে তাক লাগিয়ে ঐ মানুষ গুলোই এতো সুন্দরভাবে বিজয় দিবস উদযাপন করছে।আমি হতবাক।যেখানে তারা বেচেঁ থাকার জন্য রাতদিন সংগ্রাম করে।একটি দেশের নাগরিকের সুবিধা ত দূরে থাক যেখানে কিনা বিদ্যুত,মোবাইল নেটওয়ার্ক ই পৌছায়নি সেই তারাই বাংলাদেশের ৪৬ তম বিজয় দিবসকে চমৎকারভাবে পালন করছে।আর আমাদের মত মানুষ গুলো রাষ্টীয় দিবস গুলো ঘুমিয়ে কাটাচ্ছি।তাদের দেখে মনে হয় সমস্ত স্বাধীনতা আমাদের দেয়া হয়েছে আর আমরা তা মূল্যই দিচ্ছি না।সেলুট তাদের।তাদের ব্যবহার অতুলনীয়।একবার কাছ থেকে ওদের জীবনটা দেখে আসুন আমাদের জীবন সম্পর্কে ধারনা পাল্টে যাবে।আল্লাহর দরবারে লাখো কোটি শোকরিয়া আমাদের নিজেদের অবস্থান থেকে।উপজাতিরাও মানুষ।

Post Copied From:RI Rahad‎>Travelers of Bangladesh (ToB)

বান্দরবন ভ্রমন

ভ্রমনের তারিখ : ১৬/১১/২০১৭-২০/১১/২০১৭

আমরা রাতের বেলা ১০.৩০ বাজে কল্যানপুর থেকে যাত্রা শুরু করি! ভোর ৬.৩০ বান্দরবন সদরে পৌছে যাই। নাস্তা সেরে ৯ টা বাজে চান্দের গাড়িতে যাত্রা শুরু করি। যাওয়ার পথে পাহাড়ি রাস্তাগুলো যেন স্বপ্নেরমত! যখন চিম্বুক পাহাড়ে উঠতে শুরু করি তখন মনে শুধু বিস্ময় 😨 আর কত উপরে উঠবো! 😱
যাওয়ার সময় সাদা মেঘে মুড়ানো পাহাড় গুলো দেখে মন থেকে শুধু একটাই শব্দ আসে আর সেটা হল “আলহামদুলিল্লাহ ” ☺
সারা রাস্তা তাই চান্দের গাড়ির ছাদে বসে এসেছি! 😜
চান্দের গাড়ি থানচি পৌছায় বেলা ১২ টার পর!
আমরা প্রায় ১.৩০ টায় বোটে উঠি! লেটে উঠার কারন আমরা যখন থানচি যাই তখন পথে পথে চেকপোস্টে মিথ্যা বলতে হচ্ছিল কারন থানচি এর আগে যাওয়ার পারমিশন ছিল না! একজন এমপি সেই এলাকা পরিদর্শন করবে তাই! মনে তাই ভয় ছিল যেতে পারব কিনা 😰
তবে অবশেষে সব ম্যানেজ করে বোটে উঠলাম! 😍
স্বচ্ছ সবুজ-নীলাভ পানি দেখে মন মন্ত্রমুগ্ধ হচ্ছিল! সুউচ্চ পাহাড় আর স্বচ্ছ সবুজ-নীলাভ পানি এসব সৌন্দর্য চোখের ক্যামেরায় বন্দী করছিলাম! 💜
যাত্রা পথে আমরা বড় পাথর দেখতে পাই!
বিকাল ৪.৩০ টার দিকে প্রায় আমরা রেমাক্রি পৌছাই। রাতে নাফাখুম পাড়ায় থাকব তাই রেমাক্রিতে বোট নামিয়ে দিলে সবাইকে সেখান থেকে হাটা শুরু করি! ১.৫ ঘন্টা পর পথিমধ্যে অন্ধকার শুরু হয়! প্রায় ২৫ মিনিট ঘুটঘুটে অন্ধকারে উচু-নিচু, বন্ধুর পথ, ঝিরিপথ পার করি টর্চের আলো ছাড়াই কারন সাথে থাকা ফ্রেন্ড টর্চ এর কথা ভুলে গেছিল 😑
যাই হোক অবশেষে যখন ট্রেক শেষে টর্চ এর আলোয় শুভ্র, সাদা মেঘের মত স্বচ্ছ নাফাখুম এর জলরাশি দেখতে পাই সকল কষ্ট ভুলে যাই 😍
সেদিন রাতে নাফাখুমে তাবু খাটাই! রাতের বনমোরগ বারবিকিউ এখনও যেন মুখে লেগে আছে 😋
পরের দিন খুব ভোরে খেয়ে দেয়ে প্রায় ৮ টার দিকে নাফাখুম থেকে আমিয়াখুম এর পথে যাত্রা শুরু করি! প্রায় টানা ২ ঘন্টা ট্রেক করার পর জিনাপাড়া এসে ২০ মিনিট রেস্ট নেই! অতপর থুইসাপাড়া এর দিকে যাই সেখান থেকে প্রায় ১.৩০ ঘন্টা পাহাড়ে উপরে উঠা- নামা করে ক্লান্ত হয়ে যাই! দুপুরের তপ্ত রোদে সবার হাটার গতি শ্লথ! তারপর আমরা দেবতা পাহাড় এর খাড়া ঢাল থেকে নামতে শুরু করি! এই ঢাল দিয়ে নামার পরই আমিয়াখুম! যথেষ্ট রিস্কি নামার পথটা! এটা নামতে ৪৫ মিনিট লাগে! যদিও আমরা দ্রুতই নামছিলাম! তারপর সব বাধা পেরিয়ে পানির শব্দ শুনতে পাই! চোখের সামনেই ছিল চোখ ধাধানোঁ রূপসী আমিয়াখুম! সেখানে স্নান সেরে ১.৫ ঘন্টা সময় কাটিয়ে আবার রওনা দেয়া শুরু করি কারন আলো ফুরানোর আগে নাফাখুম ব্যাক যেতে হবে! ভেলাখুম আর সাতভাইখুম না দেখার কষ্ট মনে নিয়ে আবার ফেরত আসলাম! ফেরার সময় খুব দ্রুত ট্রেক করছিলাম যেন সন্ধ্যার আগে নাফাখুম ফেরত যেতে পারি! আলহামদুলিল্লাহ সন্ধ্যার আগেই পৌছে যাই নাফাখুম! সেইরাত নাফাখুমে থাকি তারপর দিন খুব ভোরে নাফাখুমে গোসল সেরে সেখান থেকে আবার ফেরত যাওয়ার জন্য রেমাক্রির উদ্দেশ্য রওনা হই! পথিমধ্যে মনটা খুব খারাপ হয় কখন যে সময় গুলে কেটে গেল টেরই পেলাম না!! 😞

২ ঘন্টা ট্রেকিং এর পর রেমাক্রি ফলসে অনেকক্ষণ হৈ-হুল্লোড় করে বোটে উঠে পড়লাম! থানচি নেমে সেখান থেকে চান্দের গাড়ি দিয়ে বান্দরবন সদর ফেরার পথে নীলগিরি তে নামলাম! নীলগিরি তে কিছু সময় কাটানোর পর বান্দরবন সদরে ব্যাক করলাম! 💔💔

রাত ৯ টার বাস ছিল ভোর ৬ টায় ঢাকা পৌছে যাই!!
আমরা ৯ জন এর টিম ছিলাম, জনপ্রতি ৬২০০ খরচ হয়েছে। আপনাদের কম-বেশি হতে পারে!

সবশেষে এতটুকই বলব যখনই সময় পাই চোখ বন্ধ করে সময় গুলো আবার অনুভব করি! 💜💜💜

 

Post Copied From:

Samia Ahmed‎ > Travelers of Bangladesh (ToB)

রেমাক্রি খাল ( থানচি, বান্দরবান)

সর্ব-জনের মন রাঙিয়ে ছোট্ট খালের চলা,
সর্ব-সতত বসে সেথায় হাজার রঙের মেলা

যেভাবে যাবেন: ঢাকা থেকে বাসে বান্দরবান। ভাড়া ৬২০ টাকা। বান্দরবান থেকে বাসে বা জিপে থানচি। বাস ভাড়া ২০০ টাকা। জিপ ১৩ জনের জন্য ৬০০০ টাকা। থানচি থেকে গাইড নিয়ে ট্রলারে রেমাক্রি। গাইড প্রথমদিনের জন্য ৬০০। পরের দিন থেকে ৫০০। ট্রলার আপডাউন ৪০০০+/-। রেমাক্রি থেকে ঘন্টা দুয়েকের হাঁটাপথে নাফাখুম ও এর আপস্ট্রিমে যেতে যেতে রেমাক্রি খালের সৌন্দর্যের দেখা মিলবে।

Post Copied From:Tanvir Mahmud Konok‎>Travelers of Bangladesh (ToB)

অমিয়াখুম

অমিয়াখুম বাংলাদেশের অন্যতম সুন্দর একটি জায়গা। এর সৌন্দর্য আপনার মন কেড়ে নিবে নিমিষেই। যেমন সুন্দর জায়গা তেমন কষ্টকর এখানে যাওয়ার ট্রেইলটা। পদ্দমঝিড়ি থেকে প্রায় ৬-৭ ঘন্টা হেটে আগে আপনাকে থুইসাপাড়া আসতে হবে। থুইসাপাড়াতে পাহাড়ীদের বাড়িতে থাকবেন এবং খাবেন। তারপরের দিন অমিয়াখুমে আসতে হলে দেবতা পাহাড় নামক একটি খাড়া পাহাড় বেয়ে নামতে হয়। যেকোন এডভেঞ্চারপ্রিয় ট্রাভেলারের জন্যে এই পথে নামাটা একটা থ্রিলিং ব্যাপার। তবে এই কষ্টগুলো নিমিষেই ধুয়েমুছে যাবে অমিয়াখুমের রূপ দেখার পরে। দেবতা পাহাড় থেকে নামার পর হাতের ডানের গেলে নাইক্ষ্যংমুখ পড়বে আর বামের দিকে গেলে অমিয়াখুম। নাইক্ষ্যংমুখে যেতে হলে বাঁশের তৈরি ভেলায় করে যেতে হয় সেটাও একটা দারুণ ব্যাপার।

যেভাবে যাবেনঃ ঢাকা থেকে বাসে করে বান্দরবান, ভাড়া ৬২০ টাকা। বান্দরবান থেকে থানচি রিজার্ভ জীপে (জীপে গেলে খরচ পড়বে ৫২০০ টাকা, ১২ জন যাওয়া যায়।) অথবা লোকাল বাসে (ভাড়া ২০০ টাকা প্রতিজন) করে থানচি। তবে রিজার্ভ জীপেই যাবার জন্যে সাজেস্ট করব আমি। কারণ থানচিতে যত তাড়াতাড়ি পৌছাতে পারবেন তত ভালো। থানচি থেকে গাইড নিতে হবে। সেখান থেকে রিজার্ভ বোটে করে পদ্মমুখ ঝিড়ি। ভাড়া ১২০০-১৫০০ টাকা, এক বোটে ৫-৬ জন যাওয়া যায়। সেখান থেকে আল্লাহর নাম নিয়ে ট্র্যাকিং শুরু করে দিতে হবে। প্রায় ৫-৬ ঘন্টা হাটার পর এসে পৌছাবেন থুইসাপাড়া। সেখান রাতে স্টে করবেন। থাকা জনপ্রতি ১৫০। খাবার ১২০ টাকা। পরদিন সকালে উঠে গাইড নিয়ে চলে যাবেন অমিয়াখুম। যত সকালে যেতে পারবেন তত ভালো, দেবতা পাহাড়ের আগে ছোটখাট দুইটা পাহাড় উঠতে হবে কারণ রোদ উঠে গেলে ট্রেকিং করতে একটু কষ্ট হবে। থুইসাপাড়া থেকে অমিয়াখুম যেতে সময় লাগবে প্রায় ২.৫-৩ ঘন্টা। এরপর আপনার সময় থাকলে নাফাখুম হয়ে রেমাক্রি দিয়ে থানচি ফিরতে পারবেন।

*** অমিয়াখুমে যাবার অফিসিয়ালি কোন অনুমতি নাই।
*** একটা কথা মনে রাখবেন যেখানেই যান কেন ঐ জায়গাটা যেন আপনার দ্বারা নোংরা না হয়। কোন অপচনশিল দ্রব্য যেমন প্লাস্টিক ফেলে আসবেন না। এইসব জায়গাগুলো আমাদের, তাই এর রক্ষা করার দায়িত্বও আমাদের।

#হ্যাপি_ট্রাভেলিং

Post Copied From;Ataul Islam Masum‎>Travelers of Bangladesh (ToB)

মদক রেঞ্জ

Magistic View from the Top of “যোগী হাফং”(৪র্থ সর্বোচ্চ বাংলাদেশের-৩২৫৯ফিট)

ঠিক বান্দরবান-মিয়ানমার বর্ডার এ এই মনোহরি দৃশ্যপটের অবস্থান,
সামনের সুন্দর চুড়াটি “জ তলং”(২য় সর্বোচ্চ চুড়া বাংলাদেশ-৩৩৩৫ ফিট)
যাবার উপায়:
ঢাকা-বান্দরবান-থানচি-রেমাক্রি-দলিয়ানপাড়া-যোগী ট্রেইল।

২টি চুড়া ই সামিট করে আসা যাবে,নুন্যতম ফিটনেস আর ট্রেকিং এক্সপেরিয়েন্স দিয়ে।
সম্ভাব্য খরচ বাজেট:
৪/৫ জনের টিমের-৪৫০০ থেকে৫০০০টাকা জনপ্রতি(গাইড,খাওয়া,থাকা,সকল যাতায়াত,নাস্তা সহ)ঢাকা ট্যু ঢাকা
সম্ভাব্য দিন-৪ দিন।

ট্যুর প্লান:
০ তম দিন>
ঢাকা-বান্দরবান
১ম দিন>
বান্দরবান-থাঞ্চি(লোকালবাস)-রেমাক্রি(বোট)-দলিয়ানপাড়া(ট্রেকিং-৩ঘন্টা)
২য় দিন>
দলিয়ানপাড়া(পাড়া থেকে লোকাল গাইড নিয়ে)-জোতলং চুড়া(ট্রেকিং-৮/১০ ঘন্টা-যাওয়া আসা)-দলিয়ানপাড়া
৩য় দিন>
দলিয়ানপাড়া(লোকাল গাইড নিয়ে)- যোগী হাফং চুড়া(৮/১০ ঘন্টা যাওয়া আসা)
৪র্থ দিন>
দলিয়ানপাড়া-নাফাখুম ঝর্না-রেমাই’ফ খুম-রেমাক্রী-থাঞ্চি-বান্দরবান।

সম্ভাব্য খরচ গুলোর বর্ননা:
১)ঢাকা-বান্দরবান-ঢাকা(বাস-১২৪০ টাকা)জনপ্রতি
২)বান্দরবান-থাঞ্চি-বান্দরবান(লোকালবাস-৪০০ টাকা)জনপ্রতি
৩)থাঞ্চি-রেমাক্রি-থাঞ্চি(১টি বোট এর ভাড়া-আসা যাওয়া-৪০০০/৪৫০০)পুরো টিম
৩)গাইড:পুরোটিমের খরচ
মুল গাইড-১ম দিন ৮০০ তারপর দিনগুলোতে ৭০০ করে বাকি ৩ দিন।(মোট-২৯০০ টাকা)
লোকাল গাইড(দলিয়ান পাড়া থেকে জোতলং-১০০০ করে ২জন,আর যোগী হাফং-৮০০ করে ২জন(মোট-৩৬০০ টাকা)
৪)থাকা-১০০ করে জনপ্রতি প্রতিরাত
৫)খাওয়া-(মুরগী,ডাল,ভাত-১০০/১২০)(আলুভর্তা,ডাল,ভাত-৬০)প্রতি বেলা।

সতর্কতা:
১)ট্রেইলটির জন্য-পূর্ব অভিজ্ঞতা লাগবে(সামান্য)
২)অনেকেই একে সবচেয়ে কঠিন ট্রেইল বলে আখ্যা দিয়ে থাকেন-কিন্তু ততটা না।তাই আত্মবিশ্বাস দরকার।
৩)একজন অভিজ্ঞ টিম্লিডার।

এত বকবক করার উদ্দেশ্য:
নিজেরা টিম গঠন করার কাজে উদ্বোদ্ধ হোন।
ছবি তা আমারই তোলা,তাই ব্যবহার করলে,ক্রেডিট দিলে ভাল লাগবে আর কি

Post Copied From:Taufique Tamal‎>Travelers of Bangladesh (ToB)

ডিম পাহাড়

#ডিম_পাহাড়
#বান্দরবান

প্রকৃতির অনাবিল সৌর্ন্দয আর বৈচিত্র্যময় জীবনধারা নিয়ে বান্দরবানের থানচি-আলীকদম ডিম পাহাড়। ডিম পাহাড়ের অবস্থান আলীকদম এবং থানচি থানার ঠিক মাঝখানে। এই পাহাড় দিয়েই দুই থানার সীমানা নির্ধারিত হয়েছে। খুব দুর্গম এই পাহাড়ে যাওয়ার কোন উপায় এতদিন ছিল না। সৌভাগ্যের ব্যাপার হচ্ছে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর তত্ত্বাবধানে আলীকদম থেকে থানচি পর্যন্ত সড়ক নির্মাণ করা হয়েছে। ৩৩ কিলোমিটার দীর্ঘ এই সড়ক নির্মাণে সময় লেগেছে ১০ বছর এবং নির্মাণকালীন বিভিন্ন দুর্ঘটনায় সেনাবাহিনীর ইঞ্জিনিয়ারিং কোরের ৩ জন সদস্য মৃত্যুবরণ করেছেন। তারমানে বুঝতেই পারছেন ডিম পাহাড়ের রাস্তা কতখানি দুর্গম।

ডিম পাহাড়ে যাওয়ার আগ্রহ বাড়িয়ে দেওয়ার জন্য আরেকটা তথ্য যোগ করে দেওয়া দরকার। আলিকদম-থানচি আঞ্চলিক সড়ক এই মুহূর্তে বাংলাদেশের সবথেকে উঁচু রাস্তা। আলীকদম থেকে এই রাস্তা উপরের দিকে উঠেছে এবং ডিম পাহাড়ের কাছাকাছি রাস্তার উচ্চতা দাঁড়িয়েছে ২৫০০ ফুট। আলীকদম উপজেলা থেকে ৩০ কিলোমিটারের দুরের থানচি-আলীকদমে ডিম পাহাড়ের পুরোটাই পাহাড়ী পথ।

post Copied From:Saidul Islam Sohan‎>Travelers of Bangladesh (ToB)

বছরের শেষসময়ে ঘুরে আসুন বাংলার সবচেয়ে বড় জলপ্রপাত নাফাখু

সৌন্দয্যের দেবী তার সব রূপ ঢেলে দিয়েছেন এই জলপ্রপাতে। বান্দরবন জেলার থানচিতে অবস্থিত এই জলপ্রপাত।
কিভাবে যাবেন আর খরচ কেমন হবে।
১★ ঢাকা থেকে বান্দরবন বাসে ( ৬২০ টাকা ভাড়া)
২★ বান্দরবন থেকে আপনি থানচিতে বাস বা চান্দের গাড়ীতে যেতে পারবেন। বাস ভাড়া জনপ্রতি ২০০ টাকা আর চান্দের গাড়ী রির্জাব ৮০০০-৯০০০ টাকা।
৩★ থানচি নেমে গাইড ঠিক করে অনুমতি নিয়ে নৌকা ঠিক করে সাঙ্গু নদী দিয়ে চলে যাবেন রোমাক্রি।
নৌকা ভাড়া ৪০০০ টাকা রিজার্ভ।
গাইড ভাড়া ১৫০০+ স্থানীয় গাইড সাথে নিতে হবে ৫০০ টাকা।
রোমাক্রি তে রাত্রি যাপন করতে হবে।
লোকপ্রতি রাতে থাকার খরচ হবে ১৫০ টাকা।
খাবার প্রতিবেলা ১০০-১৫০ টাকা।
এবার হিসাব করে বেরিয়ে পরুন নাফাখুমে উদ্দেশ্যে।
বি.দ্রি ★ এই ট্রিপে ৪-৫ ঘন্টা হাঁঠতে হবে,, উপজাতি পাড়ায় থাকতে হবে সেই মন মানসিকতা নিয়ে বেরিয়ে পরুন

Post Copied From:Bijoy Babu‎>Travelers of Bangladesh (ToB)

অপার্থিব আমিয়াখুম

১১-১০-২০১৭

বুধবার রাতে ভালো আবহাওয়া নিয়ে 9 জনের টিম হয়ে (আমি, দোলা আপু,মোঃ যায়েদ বিন হাসেম,Sagor Al Mamun,Neamul Haque Naem,Nayeem Hossain, অপু এবং মাহমুদ ভাই) বাসে করে রওনা দেই বান্দরবান। উদ্দেশ্য ” আমিয়াখুম”। প্ল্যানিং ছিল যাবো পদ্মমুখ-পদ্মঝিরি-হরিচন্দ্রপাড়া-থুইসাপাড়া দিয়ে। আর ফিরবো নাফাখুম-রেমাক্রি হয়ে।

১২-১০-২০১৭

প্রথমেই বাঁধ সাধলো জ্যাম। ৪ ঘন্টা দেরি করে বান্দরবান পৌছালাম।সেখান থেকে চাদের গাড়ি নিলাম যাতে দ্রুত থানচি পৌছে পদ্মঝিরি দিয়ে ট্রেকিং শুরু করতে পারি। কিন্তু মাঝে দিয়ে গাড়ির ব্রেক গেলো নষ্ট হয়ে।ওই পাহাড়ি রাস্তায় ব্রেক ছাড়া কিভাবে আগাবো 😥? ভয়ে কলিজা শুকিয়ে গেলো। আমাদের ড্রাইভার শুধু গিয়ারে বাকি পথ চালিয়ে গেলো খুব ধীরে। প্রতি বাঁকে মনে হচ্ছিল এই বুঝি খাদে পড়লাম !! শেষমেষ অক্ষত অবস্থায় যখন থানচি নামলাম তখন বিকাল ৩.৩০। খাওয়া দাওয়া করে আর্মি ক্যাম্প থেকে পারমিশন নিতে ৪.৩০। পদ্মঝিরি দিয়ে থুইসা পাড়া যেতে সময় লাগবে ৬-৭ ঘন্টা।এখন রওনা দিলে রাত ১১টায় ও যেতে পারবো কিনা সন্দেহ। তারউপর ২ জন মেয়ে,রাতে ট্রেক করার প্রিপারেশন ও টিমের ছিল না। এই অবস্থায় একটাই পথ খোলা,রেমাক্রি চলে যাওয়া। মানে যে রুট ধরে ফিরবো ভেবেছি সেই রুট ধরে যেতে হবে। ওই সময় রেমাক্রি যাওয়ার ও বোট পাওয়া যাচ্ছিলো না কারণ বৃষ্টিতে নদীর পানি অনেক বেড়ে গেছে,সন্ধ্যাও নামছে। এই সময় রওনা দেওয়া রিস্ক।অনেক কষ্টে ২টা বোট ম্যানেজ হলো,চলতে লাগলাম রেমাক্রি। কিন্তু সাংগুর সর্বগ্রাসী স্রোত দেখে ভয়ে চুপসে গেলাম। নৌকা রোলার কোস্টার এর মত উপরনিচ করে 😓!! দোয়া দুরুদ পড়তে লাগলাম মনে মনে। মাগরিবের আযান দিয়ে অন্ধকার নেমে আসলো। তার কিছুখন পরেই আমরা রেমাক্রি নামলাম। এই যাত্রায় পার হলাম। রাতে আমাদের গাইড সাগর ভাই বললেন,নদীর পানি না কমলে আমিয়াখুম রওনা হওয়া যাবেনা।শুধু নাফাখুম দেখেই ফিরে যেতে হবে।নাফাখুম সবাই আগে এসেছি।মন খারাপ নিয়ে ঘুমাতে গেলাম।আমিয়াখুম তখন কেবলই আল্লাহর ইচ্ছা। 😞😞

১৩-১০-২০১৭

সকাল ৪.৩০টায় ঘুম থেকে উঠে পড়লাম।৫.৩০টায় খিচুরি,ডিম ভাজি খেয়ে ৬টায় রওনা দিলাম।আল্লাহর রহমতে পানি কমেছে,যাওয়া যাবে।আজকের সম্পূর্ণ পথ ব্যাগ নিয়েই হাটতে হবে।৮ টার মধ্যে আমরা চলে গেলাম নাফাখুম।এখানে বেশিক্ষন সময় না দিয়ে আবার চলতে লাগলাম।গাইড বলল,৪বার নদী পাড় হতে হবে।শুনেই গলা শুকিয়ে গেলো।তবু আমরা পারস্পরিক সহায়তায় সব বাঁধা পার করলাম।কখনো দড়ি দিয়ে,কখনো বা সবাই হাত ধরে পার হলাম। দোলা আপু তো একবার ভেসেই চলে যাচ্ছিলেন,গাইড ভাই সাঁতরে তাকে উদ্ধার করে আনলেন। কোথাও হাটু সমান কাদা,পা আগানো যায়না। আর জোঁকের কথা কি বলবো। কিছুক্ষন পর পর জোঁক চেক করছিলাম,পাচ্ছিলাম,রক্ত পড়ছিল,তাই নিয়ে আগাচ্ছিলাম।পথ আর শেষ হয়না। এর মধ্যে অনেকের ব্যাগ ভিজে ৫ গুন ওজন হয়ে গেলো।তাই নিয়ে অমানষিক হাটা। এর ই মধ্যে দুইজন বেশ দুর্বল হয়ে পড়লেন। তারা ঘোষণা দিলেন তাদের পক্ষে আজ আর আমিয়াখুম যাওয়া সম্ভব না।তারা থুইসাপাড়া থেকে যাবেন। বাকি ৭ জন আমরা যাবো। অনেক কষ্টে দুপুর ২.৩০টার দিকে আমরা থুইসা পাড়া পৌছালাম। কিন্তু আমরাও আর নড়তে পারছিলাম না। সবার মনে শঙ্কা এই অবস্থায় আমিয়াখুমের বড় চ্যালেঞ্জ দেবতা পাহাড় কিভাবে পাড়ি দিব আমরা ?ক্ষুধায় জীবন যাচ্ছিলো এক একজনের। খেতে খেতে ৪টা বেজে গেলো। নিয়ম অনুযায়ী পাড়ার গাইড এর সাথে আমাদের যেতে হবে আমিয়াখুম। কিন্তু ওই সময়ে কেউ যেতে রাজি হলেন না। ফিরতে নাকি রাত ১০টা বাজবে।আর রাতের বেলা সেই ভয়ংকর দেবতাপাহাড় পাড়ি দেওয়া সম্ভব না। সো আমাদের আর কোন অপশন থাকলো না। কাল সকালেই যেতে হবে। রাতে আমরা আবার মিটিং এ বসলাম। কারণ কাল গেলে আমাদের কাল ও থেকে যেতে হবে।সেক্ষেত্রে ট্যুর একদিন বাড়াতে হবে। খরচ বাড়বে,সবাই পারবে কিনা ম্যানেজ করতে।আবার অনেকের অফিস ও আছে। আমরা বললাম এতদুর এসে আমিয়াখুম না দেখে যাবো না। যা হওয়ার হবে। ২জন বললো তাদের অফিস ম্যানেজ হবেনা। কাল তারা চলে যাবে। তাই সই। ৭ জন ই যাবো। রাতের বেলা টের পেলাম পায়ের পাতায় প্রচণ্ড ব্যাথা। অবশেষে আবিস্কার করলাম একটা কাটা ফুটেছে। নাঈম সেইফটি পিন দিয়ে গুতাগুতি করে কাটা বের করে দিলো। নাহলে পরদিন যাওয়া সম্ভব হত না। 😭

১৪-১০-২০১৭

সকাল ৬টায় বের হয়ে পড়লাম।আজ আর ব্যাগ টানতে হবেনা এই ভেবে একটু relax লাগছিল।দেবতা পাহাড় যাবার আগে ছোট দুইটা পাহাড় পার হতে হয়।তাতেই হাঁপায় গেলাম সবাই। দম আসছে আর যাচ্ছে,খেয়ে রওনা হবার জন্য এমন হচ্ছিলো। এক ফ্রেন্ড কিছুদুর গিয়ে বললো আর যেতে পারবেনা। ফিরে গেলো। আগালাম আমরা ৬ জন।অবশেষে উঠলাম দেবতা পাহাড়। এবার শুধু নামা। সবাই বলে নামতেই কষ্ট, ২ ঘন্টা লাগে।প্রথম দর্শনেই হচকে গেলাম নামার পথ দেখে , একেবারে খাড়া ভাবে নেমে গেছে নিচে । একবার পা ফসকে গেলে কই গিয়ে পরব তা ভেবে গা শিরশির করছিল , সাহস নিয়ে পা বাড়ালাম । নামছি তো নামছি খাড়া ঢাল বেয়ে ,আর ভাবছি এইখান থেকে কি আমি ফিরে যেতে পারব সুস্থ ভাবে ।হঠাৎ পানির গর্জন কানে আসাতে বুঝতে পারি কাছেই আছে আমিয়াখুম । আমাদের নামতে অনেক কম সময় লাগলো ৪০-৪৫ মিনিট। তবে নামার সময় শুধু ভাবছিলাম এই পাহাড় আমাকে উঠতে হবে!!!!
দেবতা থেকে নেমেই সামনে উন্মুক্ত কলকল বয়ে যাওয়া পানির স্রোত । তারপর ৫ মিনিট হেঁটেই আরাধ্য আমিয়াখুম 😍😍 , নিমিষেই সব ক্লান্তি উধাও। বৃষ্টির কারণে পূর্ণ যৌবনা আমিয়াখুম , তার গর্জনের ছন্দে দেহ মন অবশ হয়ে আসে । আমিয়াখুম দেখে ভেলায় ভেসে পরলাম ভেলাখুমে। ব্যাপক লাফালাফি ঝাপাঝাপি করে এবার ফেরার পালা।সবার মুখ শুকিয়ে গেলো এই পাহাড়ে উঠতে হবে ভেবে। এমন খাড়া পাহাড়,২ মিনিট উঠেই হাপায় যাই কিন্তু দাঁড়ানো যাবেনা সব জায়গায় জোঁকের আখড়া!! ৩০ মিনিটেই আমরা উঠে গেলাম।
গাইড বলছিল,আমাদের গতি এত ভাল জানলে সে আমাদের গতকাল বিকালেই নিয়ে আসতো। পাড়ায় পৌঁছে খেয়ে গা এলিয়ে শুয়ে পড়লাম সব। কাল ফেরার পালা। ৬-৭ ঘন্টা হাটা এখনো বাকি।

১৫-১০-২০১৭

পরদিন ভোর ৬টায় বিদায় জানালাম থুইসা পাড়া কে। হাটতেই আছি,পথ আর শেষ হয়না। পাহাড়ে চলতে চলতে একসময় পা অটো হয়ে যায়।থামা যায়না। কাঁধে যে একটা ভারি ব্যাগ আছে সেটাও টের পাচ্ছিলাম না। আমাদের গতি বেশ ভালো থাকায় পথে আমরা অনেক সময় নষ্ট করলাম ঝিরিতে লাফালাফি করে। তবুও হরিচন্দ্রপাড়া,পদ্মঝিরি পার হয়ে ১২টার আগেই চলে গেলাম পদ্মমুখ।নৌকায় করে চলে গেলাম থানচি।সেখান থেকে খেয়ে ২.৩০টার বাসে ফিরলাম বান্দরবান।রাত ৯টায় ঢাকা ফেরার বাস ধরলাম।

এক অদ্ভুত তৃপ্তি নিয়ে ফিরছিলাম। এত প্রতিবন্ধকতা পিছনে ফেলে আমিয়াখুমের স্বাদ নিয়ে তবেই আমি বাড়ি ফিরছি ❤😎!! আর একটা কথা ভেবে শান্তি পাচ্ছিলাম যে,আমি বন্ধুদের সাথে সমান তালে এগিয়ে গিয়েছি।মাঝে মাঝে সবাইকে পিছে ফেলে আমিই ছিলাম সবার সামনে। লুতুপুতু মেয়ে হয়ে কাউকে বিরক্ত করিনি, বিপদেও ফেলিনি 😍😍।

ছবি #রিজভী

খরচ সমুহ:
>ঢাকা বান্দরবান ৬২০
>বান্দরবান-থানচি জীপ ৪৫০০
>থানচি-রেমাক্রি বোট ৩২০০
>রেমাক্রি থাকা ১৫০ জন প্রতি, খাওয়া ১৫০-১৮০ (depends)
>থুইসাপাড়া থাকা ১৫০ জন প্রতি, খাওয়া ১০০-১৫০
>পদ্ম ঝিরি-থানচি বোট ১০০০
>থানচি-বান্দরবান বাস ২০০
>গাইড খরচ ৭০০০
*৫ রাত ৪ দিনে আমাদের জনপ্রতি ৬০০০ টাকা খরচ হয়েছে*

Post Copied From:Ohona Ivy‎>Travelers of Bangladesh (ToB)

কম খরচে নাফাকুম ঘুরে আসার উপায়

হিসেব করে দেখলাম, ৩৪৫০ টাকায় নাফাকুম-রেমাক্রি-তিন্দুর সৌন্দর্য ভালভাবেই উপভোগ করে আসা সম্ভব!

এই মাসের শুরুতে প্রথমবারের মত নাফাকুম জলপ্রপাত দেখে আসলাম, সেই অভিজ্ঞতার আলোকে আজকের লেখা!

১৫ জনের গ্রুপের খরচের হিসেবটা দিলাম!

ঢাকা টু বান্দরবন ৬২০+৬২০= ১২৪০ (যাওয়া আসা)
বান্দরবন টু থানচি ২০০+২০০= ৪০০
থানচি টু রেমাক্রি নৌকা ভাড়া: ৮০০ (যাওয়া আসা প্রতি নৌকা ৪০০০ টাকা নেয়, এক নৌকায় ৫ জন বসা যায়, সে হিসেবে জনপ্রতি ৮০০ টাকা লাগবে, ১৬ ডিসেম্বর, ২১শে ফেব্রুয়ারি বা এই টাপের বন্ধের দিন গেলে নৌকা ভাড়া জনপ্রতি ১০০ টাকা বাড়তে পারে)

গাইড: জনপ্রতি ১৩৫ টাকা! থানচি থেকে যে গাইড নিবেন তাকে ১৫০০ টাকা আর রেমাক্রি থেকে একজন নিতে হয়, তাকে দিতে হয় ৫০০ টাকা, টোটাল ২০০০ টাকা! একজন গাইড সর্বোচ্চ ১৫ জন ট্যুরিস্ট নিয়ে যেতে পারে, আপনারা ১৫ জন গেলে জনপ্রতি গাইড চার্জ আসে ১৩৩ টাকা!

রেমাক্রিতে ১ রাত কটেজে থাকা: ১৫০/- টাকা

খাবারের খরচ: ৬০০

বান্দরবনে ১ম দিন সকালের নাস্তা+ ২য় দিন রাতের খাবার: ২০০
থানচিতে ২ বেলা দুপুরের খাবার: ২০০
রেমাক্রিতে ১ম দিন রাতের খাবার ও ২য় দিন সকালের নাস্তা: ২০০

গাইড; নৌকার মাঝি ও হেল্পারের ২ বেলা খাবারের খরচ আপনাদেরকেই বহন করতে হবে! সেক্ষেত্রে জনপ্রতি ৮০-১০০ টাকা লাগবে!

তাহলে সর্বমোট খরচ দাঁড়ালো : ১২৪০+৪০০+৮০০+১৩৫+১৫০+৬০০+১০০= ৩৪২৫ টাকা!

এর বাইরে আর কোন খরচ নেই!

এখন যদি আপনি একটু রিলাক্সে ট্যুর দিতে চান, পাহাড়ি আঁকাবাঁকা-উঁচুনিচু রাস্তার সৌন্দর্য উপভোগ করতে চান তাহলে খরচ বাড়বে! এই যেমন বাসে করে না গিয়ে বান্দরবন থেকে থানচি রিজার্ভ চান্দের গাড়িতে করে গেলে ভাড়া বেশি পড়বে! যাওয়া আসা একটা চান্দের গাড়ি ৯০০০-৯৫০০ নিতে পারে! এক গাড়িতে ১৩/১৪ জন বসা যায়!

গ্রুপ যদি ছোট হয় তবে জনপ্রতি খরচ ১৫০-২০০ টাকা বাড়বে!
আর আপনারা গেলে ৫/১০/১৫ জন যাবেন, ৭-৮ জন বা ১২-১৩ জন গেলে নৌকার খরচ বাড়বে! এক নৌকায় ওরা ৫ জনের বেশি নিতে চায়না, ২ জন অতিরিক্ত গেলে আরেকটা নৌকা নিতে হবে, ভাড়া কম নিবেনা, অতিরিক্ত ২ জনের জন্য সবার মাথাপিছু নৌকা ভাড়া বেড়ে যাবে! তাই গ্রুপের মেম্বার সংখ্যা নৌকা হিসেব করেই নির্ধারণ করবেন!

নাফাকুমের উদ্দেশ্যে রেমাক্রি থেকে খুব ভোরে বের হবেন, যত তাড়াতাড়ি ফিরে আসা যায়! হাটার সময় খুব খেয়াল করে হাটবেন, অন্যমনস্ক হয়ে বা অন্য দিকে তাকিয়ে হাটবেন কখনোই; পা পিছলে পড়ে যাওয়ার সম্ভাবনা খুবই বেশি! আমার গ্রুপের অনেকেই একাধিকবার আছাড় খেয়েছে, আমি নিজেও একবার পড়ে গেছি!

ট্রেকিং এর পথটা অতটা কঠিন মনে হয়নি, যে কেউ যেতে পারবেন, সেদিন বেশ কয়েকটা মেয়েও চোখে পড়লো যারা নাফাকুমে ঘুরতে গেছে! সুতরাং ছেলে হয়ে নাফাকুম যেতে ভয় পাওয়া মানে লজ্জার বিষয়!

নিরাপত্তা নিয়ে কোন সংশয় নেই, নিশ্চিন্তে যেতে পারেন!

খেয়াল রাখবেন আপনার এবং আপনার সাথে থাকা ভ্রমণসঙ্গীদের দ্বারা যেন পরিবেশের কোন ক্ষতি না হয়! খালি বোতল/প্যাকেট, সিগারেটের ফিল্টার ফেলে আসবেন না, সাথে করে নিয়ে এসে উপযুক্ত জায়গায় ফেলবেন!

স্থানীয় আদিবাসীদের সাথে সুন্দর ও মার্জিত আচরণ করুন, সম্ভব হলে ওদের সাথে ৫-১০ মিনিট আড্ডা দিন!

আমার মনে হয় কি, প্রত্যেকের অন্তত একবারের জন্য হলেও নাফাকুম যাওয়া দরকার! বান্দরবনের আনাচেকানাচে যে কি পরিমাণ সৌন্দর্য ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে তা গহীনে না গেলে বুঝে আসবেনা! আমিয়াকুম-সাতভাইকুম যাওয়া কিছুটা কঠিন, সেখানে না গেলেও অন্তত একটাবার নাফাকুম থেকে ঘুরে আসুন!

আপনার ঘুরবাজ বন্ধুটাকে আজকেই নক করুন, প্ল্যান করে ফেলুন নাফাকুম ঘুরে আসার!

প্রথমবারের মত নাফাকুম দেখে আসলাম, নেক্সট টার্গেট আমিয়াকুম-সাতভাইকুম

Post Copied From:Sujauddin F. Sohan‎>Travelers of Bangladesh (ToB)