খুম খুম নাফাখুম….নাফাখুম…নাফাখুম

ইউটিউব এ একের পর এক ভিডিও দেখার পরই নাফাখুম এর প্রেমে পড়ে যায়।তখন সেমিস্টার ফাইনাল চলছিল।পড়ার ফাকে ফাকে ইউটিউব এ ঢুঁ মারাটা ই যেন নেশা হয়ে যাচ্ছিল।মনে মনে ভাবছিলাম বাংলাদেশের মানচিত্রে এত ভয়ংকর সুন্দর জায়গাও আছে।আর আমি এমনিতেও ভ্রমণ পিপাসু।যাইহোক অনেক দূরের পথ!একা একা তো আর যাওয়া যাই না তাই মনে মনে সঙ্গী খুঁজতে লাগলাম।আর আল্লাহর রহমতে সঙ্গী হিসেবে পেলাম আমার জীবনের সেরা ৭ জনকে।সব পরিকল্পনা শেষ।এখন শুধু পরীক্ষা শেষ আর ফরমালিটি ভাইভা শেষ হওয়ার জন্য অপেক্ষা।পরীক্ষা শেষ ১১তারিখ।আর ভাইভার তারিখ জানালো ১৩ই ডিসেম্বর ২০১৭।মনে খুশি আর ধরে না!!ডিসিশন নিয়ে নিলাম ১৩ তারিখ রাতেই রওয়ানা হবো।আমি বেশি excited ছিলাম ত তাই মাঝখানের ২ রাত আর ঘুমই আসে না।আহারে আহারে কবে যাব পাহাড়ে!!!আগের দিন গিয়ে টিকিট কাটি।সিজন হওয়ায় টিকিট পাওয়াটা ঝামেলাই হয়।অনেক কষ্টে হানিফ পরিবহনের ৭ টা টিকিট পাই।ও হ্যা আমাদের মধ্যে ৪জন ছেলে আর ৩ জন মেয়ে ছিল।প্রথমে একটু ভয় কাজ করছিল।কিন্তু কথায় আছে বন্ধুত্ত্বে ভয়কে করো জয়।যাই হোক রাত ১০ টায় আমাদের বাস ছাড়ল সায়েদাবাদ থেকে।সকাল ৬.২০ এ আমরা বান্দরবন পৌছালাম।হোটেল ঠিক করে নাস্তা শেষ করে একটা জিপ রেডি করলাম সারাদিন শহরের আশে পাশে ঘুরার জন্য।১ম দিন:-রামজাদিবৌদ্ধ মন্দির,স্বর্ণমন্দির,মেঘলা,নীলাচল ঘুরা শেষ করে সন্ধ্যায় হোটেলে ফিরে আসলাম।রাতে ডিনার শেষ করে বার্মিজ মার্কেটে একটু ঢুঁ মারলাম।আর সাথে পরদিন নাফাখুম যাওয়ার জন্য থানচির উদ্দেশ্যে চান্দের গাড়ি ঠিক করে নিলাম।কথা হলো আমাদের যাওয়ার পথে শৈলপ্রপাত,চিম্বুকপাহাড়,নীলগিরি দেখিয়ে নিয়ে যাবে।হোটেলে এসে দিলাম ঘুম।
দিন ২:-সকাল ৬ টায় চান্দের গাড়ি আসল আমাদের নিতে।আমরা রওয়ানা হলাম।আমাদের মেইন টার্গেট যেহেতু নাফাখুম তাই মাঝখানের জায়গাগুলোতে বেশি সময় নষ্ট করি নাই।সকাল ১১ টার মধ্যে আমরা থানচি পৌছে যায়।ও হ্যাঁ নীলগিরি পার হবার পর থানচি যাওয়ার রাস্তাটা just ভয়ংকর ভয়ংকর সুন্দর!!আমরা থানচি পৌছে নৌকা রেডি করে ফেলি।যেহেতু আমরা ৭ জন ছিলাম তাই ২ টি নৌকা নেয়া লাগছে কারন এক নৌকায় ৫ জনের বেশি বিজিবি উঠতে দেয় না।শুরু হল আল্লাহর অপরূপ সাজানো বাগান দেখা।নৌকা চলে ২ পাহাড়ের মাঝখান দিয়ে।কখনোও আবার বড় বড় পাথরের ফাকঁ দিয়ে।নৌকার রাস্তাটুকু এক কথায় অস্থির।২ ঘণ্টার মধ্যেই আমরা রেমাক্রি বাজার পৌছে যায়।আমাদের নৌকার মাঝিই আমাদের গার্ডের দায়িত্ত্বে ছিল।ও আমাদের জন্য রাতে থাকার এবং খাবার জন্য কটেজ(উপজাতিদের তৈরি কাঠের ২ তালা ঘর) রেডি করে। (জনপ্রতি থাকা ১৫০ আর খাবার একবেলা ১২০ফিক্সড)।ঐ রেমাক্রি বাজার থেকে নতুন গাইড ধরে নাফাখুম এর উদ্দেশ্যে রওয়ানা শুরু ১ টায় সাথের জিনিস পত্র কটেজে রেখে।যেহেতু আমাদের সাথে মেয়ে ছিল তাই হাটার গতি কিছুটা শিথিল ছিল।শুরু হলো আমাদের ট্রেকিং।পাহাড় পেরিয়ে খালের কিনারা ঘেষে আমরা হাটতে থাকলাম।এখন শীতকাল তাই রাস্তা বেশি ভয়ংকর না কিন্তু পরিবেশটা ভয়ংকর সুন্দর!যাওয়ার পথে ২ বার পানি পাড় হতে হয়।খুব সাবধনে কারণ পাথুরে রাস্তা হওয়ায় খুব পিচ্ছিল।যাই হোক আমরা ৩.৩০ মিনিট এর মধ্যেই পৌছে যায় সেই কল্প-বাস্তবতায় যা কিনা কত রাত আমার চোখের ঘুম কেড়ে নিছিল।কত রাত আমি সপ্নের মধ্যেই চলে যেতাম ঐ জায়গায়।সৌন্দর্য কি বলব!! এক কথায় expectation এর চেয়ে ১০০ গুন উপরে।ভাগ্য খারাপ হলে যা হয়!দিনের দৈঘ্য ছোট হওয়ায় আমরা মাত্র ১৫ মিনিট সেখানে ছিলাম।গোসল করার সৌভাগ্য হয়নাই।আমরা রওয়ানা দিলাম।৩.৪৫ এ।৬.৩০ এর মধ্যেই আমরা কটেজে পৌছে গেলাম।রাতের কাহিনী পুরুই আমাদের অবাক করে দিয়েছে।আমার মনে হয় না এত দুর্গম জায়গায় এত ভালো থাকা আর খাওয়ার প্রত্যাশা কেউ করতে পারে।রাত কাটিয়ে সকালে ১৬ই ডিসেম্বর।(কিছু কথা শেষে লিখব বিজয় দিবস নিয়ে ওদের উদযাপন)।আমরা ৯.৩০ এ আমাদের নৌকায় চড়ে রওয়ানা দিলাম থানচির উদ্দেশ্য।যাওয়ার সৌন্দর্য আমাদের বিমোহিত করেছে।যদিও সাংগু নদীর অনূকূলে যাওয়াটা অনেক কষ্টসাধ্য।আমাদের মাঝিগুলা খুব সু্ন্দরভাবে ই নিয়ে গেছেন।হালকা কুয়াশা।পাহাড়ের বুকে মেঘ আটকে থাকা,রাজা পাথর দেখে,বড় পাথর দেখা,পাথরে দাড়িয়ে ছবি তুলা মানে awesome.তবে ভূলেও কেউ রাজাপাথরে উঠে ছবি তুলবেন না।স্থানীয়রা অনেক সমীহ করে চলে। আমরা ১১.৩০ এ থানচি বাজারে পৌছে যাই।সেখান থেকে বান্দরবনের গাড়ি ঠিক করি।চান্দের গাড়ি।মাঝপথে গাড়ি থামিয়ে পাহাড়ি আনারসের টেষ্ট নেয়া থেকে কেউ বন্ঞ্চিত হবেন না।২.৪৫ এ আমরা বান্দরবন শহরে পৌছে যায়।ঢাকার বাসের জন্য যাই।বাস রাতের ৮ টায়।আমাদের হাতে enough সময় আছে।দুপুরের খাবার খেয়ে ২য় বারের মতো চলে যাই নীলাচলের সূ্র্যাস্তের দৃশ্য উপভোগ করতে।৭ টায় আমরা কাউন্টারে এসে রাতে খাওয়ার জন্য খাবার কিনে বাসে উঠে পড়ি।ভোর ৪ টায় আমরা সায়দাবাদ পৌছে যায়।
.
.
ট্যুর প্লান:
ঢাকা-বান্দরবান(রামজাদি বৌদ্ধমন্দির, স্বর্ণমন্দির,মেঘলা,নীলাচল,মিলনছরি,শৈলপ্রপাত,চিম্বুকপাহাড়,নীলগিরি)-থানচি-রেমাক্রি-নাফাখুম-ঢাকা
.
.
সময় লেগেছে:-
৩দিন ও ২রাত(যাওয়া আসার রাত ছাড়া)
.
.
খরচ পড়েছে:-
মাথাপিছু ৫৫০০
নৌকা+গাইড(তাইজুল:-০১৮২৩৬৭৯২৪০)
.
.
(আমার সম্পূর্ণ নিজের অভিমতে নিচের লেখাটি লিখলাম।দয়া করে কেউ ব্যক্তিস্বার্থে নিবেন না:-
.
.
উপজাতি ও বিজয় দিবস
♠এতো গভীরে মানুষ থাকতে পারে তা যখন চিন্তা করাই কঠিন সেখানে সবাইকে তাক লাগিয়ে ঐ মানুষ গুলোই এতো সুন্দরভাবে বিজয় দিবস উদযাপন করছে।আমি হতবাক।যেখানে তারা বেচেঁ থাকার জন্য রাতদিন সংগ্রাম করে।একটি দেশের নাগরিকের সুবিধা ত দূরে থাক যেখানে কিনা বিদ্যুত,মোবাইল নেটওয়ার্ক ই পৌছায়নি সেই তারাই বাংলাদেশের ৪৬ তম বিজয় দিবসকে চমৎকারভাবে পালন করছে।আর আমাদের মত মানুষ গুলো রাষ্টীয় দিবস গুলো ঘুমিয়ে কাটাচ্ছি।তাদের দেখে মনে হয় সমস্ত স্বাধীনতা আমাদের দেয়া হয়েছে আর আমরা তা মূল্যই দিচ্ছি না।সেলুট তাদের।তাদের ব্যবহার অতুলনীয়।একবার কাছ থেকে ওদের জীবনটা দেখে আসুন আমাদের জীবন সম্পর্কে ধারনা পাল্টে যাবে।আল্লাহর দরবারে লাখো কোটি শোকরিয়া আমাদের নিজেদের অবস্থান থেকে।উপজাতিরাও মানুষ।

Post Copied From:RI Rahad‎>Travelers of Bangladesh (ToB)

রেমাক্রি খাল ( থানচি, বান্দরবান)

সর্ব-জনের মন রাঙিয়ে ছোট্ট খালের চলা,
সর্ব-সতত বসে সেথায় হাজার রঙের মেলা

যেভাবে যাবেন: ঢাকা থেকে বাসে বান্দরবান। ভাড়া ৬২০ টাকা। বান্দরবান থেকে বাসে বা জিপে থানচি। বাস ভাড়া ২০০ টাকা। জিপ ১৩ জনের জন্য ৬০০০ টাকা। থানচি থেকে গাইড নিয়ে ট্রলারে রেমাক্রি। গাইড প্রথমদিনের জন্য ৬০০। পরের দিন থেকে ৫০০। ট্রলার আপডাউন ৪০০০+/-। রেমাক্রি থেকে ঘন্টা দুয়েকের হাঁটাপথে নাফাখুম ও এর আপস্ট্রিমে যেতে যেতে রেমাক্রি খালের সৌন্দর্যের দেখা মিলবে।

Post Copied From:Tanvir Mahmud Konok‎>Travelers of Bangladesh (ToB)

মদক রেঞ্জ

Magistic View from the Top of “যোগী হাফং”(৪র্থ সর্বোচ্চ বাংলাদেশের-৩২৫৯ফিট)

ঠিক বান্দরবান-মিয়ানমার বর্ডার এ এই মনোহরি দৃশ্যপটের অবস্থান,
সামনের সুন্দর চুড়াটি “জ তলং”(২য় সর্বোচ্চ চুড়া বাংলাদেশ-৩৩৩৫ ফিট)
যাবার উপায়:
ঢাকা-বান্দরবান-থানচি-রেমাক্রি-দলিয়ানপাড়া-যোগী ট্রেইল।

২টি চুড়া ই সামিট করে আসা যাবে,নুন্যতম ফিটনেস আর ট্রেকিং এক্সপেরিয়েন্স দিয়ে।
সম্ভাব্য খরচ বাজেট:
৪/৫ জনের টিমের-৪৫০০ থেকে৫০০০টাকা জনপ্রতি(গাইড,খাওয়া,থাকা,সকল যাতায়াত,নাস্তা সহ)ঢাকা ট্যু ঢাকা
সম্ভাব্য দিন-৪ দিন।

ট্যুর প্লান:
০ তম দিন>
ঢাকা-বান্দরবান
১ম দিন>
বান্দরবান-থাঞ্চি(লোকালবাস)-রেমাক্রি(বোট)-দলিয়ানপাড়া(ট্রেকিং-৩ঘন্টা)
২য় দিন>
দলিয়ানপাড়া(পাড়া থেকে লোকাল গাইড নিয়ে)-জোতলং চুড়া(ট্রেকিং-৮/১০ ঘন্টা-যাওয়া আসা)-দলিয়ানপাড়া
৩য় দিন>
দলিয়ানপাড়া(লোকাল গাইড নিয়ে)- যোগী হাফং চুড়া(৮/১০ ঘন্টা যাওয়া আসা)
৪র্থ দিন>
দলিয়ানপাড়া-নাফাখুম ঝর্না-রেমাই’ফ খুম-রেমাক্রী-থাঞ্চি-বান্দরবান।

সম্ভাব্য খরচ গুলোর বর্ননা:
১)ঢাকা-বান্দরবান-ঢাকা(বাস-১২৪০ টাকা)জনপ্রতি
২)বান্দরবান-থাঞ্চি-বান্দরবান(লোকালবাস-৪০০ টাকা)জনপ্রতি
৩)থাঞ্চি-রেমাক্রি-থাঞ্চি(১টি বোট এর ভাড়া-আসা যাওয়া-৪০০০/৪৫০০)পুরো টিম
৩)গাইড:পুরোটিমের খরচ
মুল গাইড-১ম দিন ৮০০ তারপর দিনগুলোতে ৭০০ করে বাকি ৩ দিন।(মোট-২৯০০ টাকা)
লোকাল গাইড(দলিয়ান পাড়া থেকে জোতলং-১০০০ করে ২জন,আর যোগী হাফং-৮০০ করে ২জন(মোট-৩৬০০ টাকা)
৪)থাকা-১০০ করে জনপ্রতি প্রতিরাত
৫)খাওয়া-(মুরগী,ডাল,ভাত-১০০/১২০)(আলুভর্তা,ডাল,ভাত-৬০)প্রতি বেলা।

সতর্কতা:
১)ট্রেইলটির জন্য-পূর্ব অভিজ্ঞতা লাগবে(সামান্য)
২)অনেকেই একে সবচেয়ে কঠিন ট্রেইল বলে আখ্যা দিয়ে থাকেন-কিন্তু ততটা না।তাই আত্মবিশ্বাস দরকার।
৩)একজন অভিজ্ঞ টিম্লিডার।

এত বকবক করার উদ্দেশ্য:
নিজেরা টিম গঠন করার কাজে উদ্বোদ্ধ হোন।
ছবি তা আমারই তোলা,তাই ব্যবহার করলে,ক্রেডিট দিলে ভাল লাগবে আর কি

Post Copied From:Taufique Tamal‎>Travelers of Bangladesh (ToB)

রেমাক্রি

মনোরম পরিবেশে যান্ত্রিক ক্লান্তিগুলো রেখে আসতে যেতে পারেন। সাথে বোনাস হিসেবে আছে তিন্দু, বড় পাথর এলাকা দিয়ে নৌ ভ্রমণ। আর একটু কষ্ট করলেই দেখা মিলবে নাফাখুমের 😀
>>ঢাকা>>বান্দরবান>>থানছি>>রেমাক্রি
ফেরার সময় ফিরতে পারেন থানছি থেকে বাংলাদেশের সবচেয়ে উচু রাস্তা আলিকদমের ডিমপাহাড় দিয়ে চকরিয়া হয়ে ঢাকা।

Post Copied From:Odvut Mukit>Travelers of Bangladesh (ToB)

অপার্থিব আমিয়াখুম

১১-১০-২০১৭

বুধবার রাতে ভালো আবহাওয়া নিয়ে 9 জনের টিম হয়ে (আমি, দোলা আপু,মোঃ যায়েদ বিন হাসেম,Sagor Al Mamun,Neamul Haque Naem,Nayeem Hossain, অপু এবং মাহমুদ ভাই) বাসে করে রওনা দেই বান্দরবান। উদ্দেশ্য ” আমিয়াখুম”। প্ল্যানিং ছিল যাবো পদ্মমুখ-পদ্মঝিরি-হরিচন্দ্রপাড়া-থুইসাপাড়া দিয়ে। আর ফিরবো নাফাখুম-রেমাক্রি হয়ে।

১২-১০-২০১৭

প্রথমেই বাঁধ সাধলো জ্যাম। ৪ ঘন্টা দেরি করে বান্দরবান পৌছালাম।সেখান থেকে চাদের গাড়ি নিলাম যাতে দ্রুত থানচি পৌছে পদ্মঝিরি দিয়ে ট্রেকিং শুরু করতে পারি। কিন্তু মাঝে দিয়ে গাড়ির ব্রেক গেলো নষ্ট হয়ে।ওই পাহাড়ি রাস্তায় ব্রেক ছাড়া কিভাবে আগাবো 😥? ভয়ে কলিজা শুকিয়ে গেলো। আমাদের ড্রাইভার শুধু গিয়ারে বাকি পথ চালিয়ে গেলো খুব ধীরে। প্রতি বাঁকে মনে হচ্ছিল এই বুঝি খাদে পড়লাম !! শেষমেষ অক্ষত অবস্থায় যখন থানচি নামলাম তখন বিকাল ৩.৩০। খাওয়া দাওয়া করে আর্মি ক্যাম্প থেকে পারমিশন নিতে ৪.৩০। পদ্মঝিরি দিয়ে থুইসা পাড়া যেতে সময় লাগবে ৬-৭ ঘন্টা।এখন রওনা দিলে রাত ১১টায় ও যেতে পারবো কিনা সন্দেহ। তারউপর ২ জন মেয়ে,রাতে ট্রেক করার প্রিপারেশন ও টিমের ছিল না। এই অবস্থায় একটাই পথ খোলা,রেমাক্রি চলে যাওয়া। মানে যে রুট ধরে ফিরবো ভেবেছি সেই রুট ধরে যেতে হবে। ওই সময় রেমাক্রি যাওয়ার ও বোট পাওয়া যাচ্ছিলো না কারণ বৃষ্টিতে নদীর পানি অনেক বেড়ে গেছে,সন্ধ্যাও নামছে। এই সময় রওনা দেওয়া রিস্ক।অনেক কষ্টে ২টা বোট ম্যানেজ হলো,চলতে লাগলাম রেমাক্রি। কিন্তু সাংগুর সর্বগ্রাসী স্রোত দেখে ভয়ে চুপসে গেলাম। নৌকা রোলার কোস্টার এর মত উপরনিচ করে 😓!! দোয়া দুরুদ পড়তে লাগলাম মনে মনে। মাগরিবের আযান দিয়ে অন্ধকার নেমে আসলো। তার কিছুখন পরেই আমরা রেমাক্রি নামলাম। এই যাত্রায় পার হলাম। রাতে আমাদের গাইড সাগর ভাই বললেন,নদীর পানি না কমলে আমিয়াখুম রওনা হওয়া যাবেনা।শুধু নাফাখুম দেখেই ফিরে যেতে হবে।নাফাখুম সবাই আগে এসেছি।মন খারাপ নিয়ে ঘুমাতে গেলাম।আমিয়াখুম তখন কেবলই আল্লাহর ইচ্ছা। 😞😞

১৩-১০-২০১৭

সকাল ৪.৩০টায় ঘুম থেকে উঠে পড়লাম।৫.৩০টায় খিচুরি,ডিম ভাজি খেয়ে ৬টায় রওনা দিলাম।আল্লাহর রহমতে পানি কমেছে,যাওয়া যাবে।আজকের সম্পূর্ণ পথ ব্যাগ নিয়েই হাটতে হবে।৮ টার মধ্যে আমরা চলে গেলাম নাফাখুম।এখানে বেশিক্ষন সময় না দিয়ে আবার চলতে লাগলাম।গাইড বলল,৪বার নদী পাড় হতে হবে।শুনেই গলা শুকিয়ে গেলো।তবু আমরা পারস্পরিক সহায়তায় সব বাঁধা পার করলাম।কখনো দড়ি দিয়ে,কখনো বা সবাই হাত ধরে পার হলাম। দোলা আপু তো একবার ভেসেই চলে যাচ্ছিলেন,গাইড ভাই সাঁতরে তাকে উদ্ধার করে আনলেন। কোথাও হাটু সমান কাদা,পা আগানো যায়না। আর জোঁকের কথা কি বলবো। কিছুক্ষন পর পর জোঁক চেক করছিলাম,পাচ্ছিলাম,রক্ত পড়ছিল,তাই নিয়ে আগাচ্ছিলাম।পথ আর শেষ হয়না। এর মধ্যে অনেকের ব্যাগ ভিজে ৫ গুন ওজন হয়ে গেলো।তাই নিয়ে অমানষিক হাটা। এর ই মধ্যে দুইজন বেশ দুর্বল হয়ে পড়লেন। তারা ঘোষণা দিলেন তাদের পক্ষে আজ আর আমিয়াখুম যাওয়া সম্ভব না।তারা থুইসাপাড়া থেকে যাবেন। বাকি ৭ জন আমরা যাবো। অনেক কষ্টে দুপুর ২.৩০টার দিকে আমরা থুইসা পাড়া পৌছালাম। কিন্তু আমরাও আর নড়তে পারছিলাম না। সবার মনে শঙ্কা এই অবস্থায় আমিয়াখুমের বড় চ্যালেঞ্জ দেবতা পাহাড় কিভাবে পাড়ি দিব আমরা ?ক্ষুধায় জীবন যাচ্ছিলো এক একজনের। খেতে খেতে ৪টা বেজে গেলো। নিয়ম অনুযায়ী পাড়ার গাইড এর সাথে আমাদের যেতে হবে আমিয়াখুম। কিন্তু ওই সময়ে কেউ যেতে রাজি হলেন না। ফিরতে নাকি রাত ১০টা বাজবে।আর রাতের বেলা সেই ভয়ংকর দেবতাপাহাড় পাড়ি দেওয়া সম্ভব না। সো আমাদের আর কোন অপশন থাকলো না। কাল সকালেই যেতে হবে। রাতে আমরা আবার মিটিং এ বসলাম। কারণ কাল গেলে আমাদের কাল ও থেকে যেতে হবে।সেক্ষেত্রে ট্যুর একদিন বাড়াতে হবে। খরচ বাড়বে,সবাই পারবে কিনা ম্যানেজ করতে।আবার অনেকের অফিস ও আছে। আমরা বললাম এতদুর এসে আমিয়াখুম না দেখে যাবো না। যা হওয়ার হবে। ২জন বললো তাদের অফিস ম্যানেজ হবেনা। কাল তারা চলে যাবে। তাই সই। ৭ জন ই যাবো। রাতের বেলা টের পেলাম পায়ের পাতায় প্রচণ্ড ব্যাথা। অবশেষে আবিস্কার করলাম একটা কাটা ফুটেছে। নাঈম সেইফটি পিন দিয়ে গুতাগুতি করে কাটা বের করে দিলো। নাহলে পরদিন যাওয়া সম্ভব হত না। 😭

১৪-১০-২০১৭

সকাল ৬টায় বের হয়ে পড়লাম।আজ আর ব্যাগ টানতে হবেনা এই ভেবে একটু relax লাগছিল।দেবতা পাহাড় যাবার আগে ছোট দুইটা পাহাড় পার হতে হয়।তাতেই হাঁপায় গেলাম সবাই। দম আসছে আর যাচ্ছে,খেয়ে রওনা হবার জন্য এমন হচ্ছিলো। এক ফ্রেন্ড কিছুদুর গিয়ে বললো আর যেতে পারবেনা। ফিরে গেলো। আগালাম আমরা ৬ জন।অবশেষে উঠলাম দেবতা পাহাড়। এবার শুধু নামা। সবাই বলে নামতেই কষ্ট, ২ ঘন্টা লাগে।প্রথম দর্শনেই হচকে গেলাম নামার পথ দেখে , একেবারে খাড়া ভাবে নেমে গেছে নিচে । একবার পা ফসকে গেলে কই গিয়ে পরব তা ভেবে গা শিরশির করছিল , সাহস নিয়ে পা বাড়ালাম । নামছি তো নামছি খাড়া ঢাল বেয়ে ,আর ভাবছি এইখান থেকে কি আমি ফিরে যেতে পারব সুস্থ ভাবে ।হঠাৎ পানির গর্জন কানে আসাতে বুঝতে পারি কাছেই আছে আমিয়াখুম । আমাদের নামতে অনেক কম সময় লাগলো ৪০-৪৫ মিনিট। তবে নামার সময় শুধু ভাবছিলাম এই পাহাড় আমাকে উঠতে হবে!!!!
দেবতা থেকে নেমেই সামনে উন্মুক্ত কলকল বয়ে যাওয়া পানির স্রোত । তারপর ৫ মিনিট হেঁটেই আরাধ্য আমিয়াখুম 😍😍 , নিমিষেই সব ক্লান্তি উধাও। বৃষ্টির কারণে পূর্ণ যৌবনা আমিয়াখুম , তার গর্জনের ছন্দে দেহ মন অবশ হয়ে আসে । আমিয়াখুম দেখে ভেলায় ভেসে পরলাম ভেলাখুমে। ব্যাপক লাফালাফি ঝাপাঝাপি করে এবার ফেরার পালা।সবার মুখ শুকিয়ে গেলো এই পাহাড়ে উঠতে হবে ভেবে। এমন খাড়া পাহাড়,২ মিনিট উঠেই হাপায় যাই কিন্তু দাঁড়ানো যাবেনা সব জায়গায় জোঁকের আখড়া!! ৩০ মিনিটেই আমরা উঠে গেলাম।
গাইড বলছিল,আমাদের গতি এত ভাল জানলে সে আমাদের গতকাল বিকালেই নিয়ে আসতো। পাড়ায় পৌঁছে খেয়ে গা এলিয়ে শুয়ে পড়লাম সব। কাল ফেরার পালা। ৬-৭ ঘন্টা হাটা এখনো বাকি।

১৫-১০-২০১৭

পরদিন ভোর ৬টায় বিদায় জানালাম থুইসা পাড়া কে। হাটতেই আছি,পথ আর শেষ হয়না। পাহাড়ে চলতে চলতে একসময় পা অটো হয়ে যায়।থামা যায়না। কাঁধে যে একটা ভারি ব্যাগ আছে সেটাও টের পাচ্ছিলাম না। আমাদের গতি বেশ ভালো থাকায় পথে আমরা অনেক সময় নষ্ট করলাম ঝিরিতে লাফালাফি করে। তবুও হরিচন্দ্রপাড়া,পদ্মঝিরি পার হয়ে ১২টার আগেই চলে গেলাম পদ্মমুখ।নৌকায় করে চলে গেলাম থানচি।সেখান থেকে খেয়ে ২.৩০টার বাসে ফিরলাম বান্দরবান।রাত ৯টায় ঢাকা ফেরার বাস ধরলাম।

এক অদ্ভুত তৃপ্তি নিয়ে ফিরছিলাম। এত প্রতিবন্ধকতা পিছনে ফেলে আমিয়াখুমের স্বাদ নিয়ে তবেই আমি বাড়ি ফিরছি ❤😎!! আর একটা কথা ভেবে শান্তি পাচ্ছিলাম যে,আমি বন্ধুদের সাথে সমান তালে এগিয়ে গিয়েছি।মাঝে মাঝে সবাইকে পিছে ফেলে আমিই ছিলাম সবার সামনে। লুতুপুতু মেয়ে হয়ে কাউকে বিরক্ত করিনি, বিপদেও ফেলিনি 😍😍।

ছবি #রিজভী

খরচ সমুহ:
>ঢাকা বান্দরবান ৬২০
>বান্দরবান-থানচি জীপ ৪৫০০
>থানচি-রেমাক্রি বোট ৩২০০
>রেমাক্রি থাকা ১৫০ জন প্রতি, খাওয়া ১৫০-১৮০ (depends)
>থুইসাপাড়া থাকা ১৫০ জন প্রতি, খাওয়া ১০০-১৫০
>পদ্ম ঝিরি-থানচি বোট ১০০০
>থানচি-বান্দরবান বাস ২০০
>গাইড খরচ ৭০০০
*৫ রাত ৪ দিনে আমাদের জনপ্রতি ৬০০০ টাকা খরচ হয়েছে*

Post Copied From:Ohona Ivy‎>Travelers of Bangladesh (ToB)

শোন_নাফাখুমের_গল্প

বান্দরবনের গহীনে যে একবার যাবে, সেই এর সৌন্দর্য্যের ভালোবাসায় পড়বেই পড়বে।
নাফাখুম আমার এক ধরনের ড্রীম ট্যুরই ছিলো বলা চলে। ঘুরঞ্চি পাগল আমি বান্দরবনের গহীনে একটাও ট্যুর দিতে পারলাম না এইটাই ছিলো আপ্সুস।
অবশেষে প্লান করে যাওয়ার প্রস্তুতি নিলাম।
আমরা ৮ জন আমার রেগুলার ট্যুর পার্টনার নাবিল,তাউসিফ, অপু ভাই কে সাথে নিয়ে।আরো সাথে ছিলো আমার বেস্ট এভবেঞ্চার ট্যুর পার্টনার তুষ্টি,যে মেয়েটার ভয় ডর একদমই কম।আরো ছিলো ইভা আপু,সীমা আপু,শাওকাত ভাই।

যাওয়ার জন্যে বাস টিকেট রেডি হঠাত শুনি ১৭ নভেম্বর প্রতি মন্ত্রী থানছি আর রেমাক্রিতে অবস্থান করার কারনে সকল টুরিস্টদের থানছির পরে ভিতরে ঢুকতে দেওয়া নিষেধ, কিন্তু পাগল মন কোন বাধাই মানে না, তাই যাওয়ার জন্যে খোঁজখবর নিয়ে বিকল্প পথ বের করে ফেলি।

এই ধরনের স্পটে ট্যুর কস্ট কমানোর জন্যে মিনিমাম ১৫ জন লোক নিয়ে গেলে ভালো,কিন্তু আমাদের টীমে আমরা ৮ জন তাই চিন্তা করি চাদের গাড়ী শেয়ারের জন্যে আরো কাউকে নেওয়া যায় কিনা,পেয়েও গেলাম ৯ জনের একটা টীম।
আল্লাহ্‌ নাম নিয়ে রওনা দেই।বাসের মধ্যে গানে গানে রাত পার করে দেই।সকালে নাস্তা সেরেই চাদের গাড়ীতে উঠে পড়ি। কেউ নিচে বসে থাকতে চায় না,সবাই ছাদের উপরে হেলে দুলে যেতে চায়। যাওয়ার পথে আমাদের বারে বারে মেঘের সাথে আলিংগন মন টাকে ভরিয়ে তোলে।
চারদিকে মেঘ আর মেঘ,কোন কোন সময় আমদের ঢেকে ফেলে,মেঘের সাথে খেলতে খেলতে আর রোলার কোস্টারের মজা নিতে নিতে আমরা পৌছিয়ে যাই থানছি, সেইখান থেকে নৌকা নিয়ে শুরু হয় আরেক ধরনের এডভেঞ্চার, দুপুরের খাবার আমরা নৌকায় সেরে ফেলি,তিন্দু নদীতে নৌকোর স্রোতের সাথে তাল মিলিয়ে যাওয়া,আর রেমাক্রির বড় পাথরের সৌন্দর্য দেখতে দেখতে এক সময় পৌছে যাই রেমাক্রি বাজার,সেইখান থেকে নাফাখুম যেতে নাকি লাগে ৩ ঘন্টা, তখন বাজে ৪ টা,স্বীর্ধান্ত নিয়ে ফেলি আমরা ট্রেকিং করে নাফাকুম যাবো এইখানেই রাতে থাকবো,যেতে পথে সন্ধ্যা হলেও যাবো,এইটাই আমাদের এডভেঞ্চার কে দ্বিগুন বাড়িয়ে দেয়। যাত্রা পথে সৌন্দর্য দেখতে দেখতে এগুতে থাকি,তারপর সূ্র্য ঢুবার সাথেই সাথে পুরো রাস্তাই আধার কালোতে ঢেকে যায়,শুরু হয় নতুন এডবেঞ্জারের পথ চলা,বহুত প্যারা নিয়ে এগুতে হয়,এর মধ্যে বেশী প্যারা টা নেয় তুষ্টি, চলতি পথে ওর ডিজিটাল মিউজিক আঊ আঊ চিতকার পুরো রাস্তা কম্পিত হতে থাকে, কখনো জোক তার হাতে বসে কামড়িয়ে জোকস করে থাকে, কখনো সে অন্ধকারে পা পিছলিয়ে পড়ে যায়,কখনো টর্চ এর আলো পায়ের সামনে ধরল্র দেখা যায় নিরবে কোন একটা সাপ হেটে চলে যায়,ইহা দেখার পর কি হয়েছিলো তা নাই বললাম,অনেক রকম দৃশ্য চোখে ধরা পরে,আবার অন্ধকারে গাইড আগে চলে যাওয়ায় আমরা রাস্তাও ভুল করে ফেলি।
এতকিছুর পরও ছিলো সবার মধ্যে আনন্দ, এই গুলোকেই তাদের কাছে মনেই হলো না কোন প্যারা। ৩ ঘন্টা ট্রেকিং এর পর পৌছাই কাংক্ষিত জায়গায় নাফাকুম ঝর্নায়। ঝর্নার শব্দ শুনতে পেরে সকল ক্লান্তি কে তুচ্ছ মনে হয়।কিন্তু অই মূহুর্তে আমাদের ফ্রেশ হওয়া দরকার এই জায়গায় ওয়াশ রুম কই পবো,তাই গাইড আমাদের নিয়ে যায় নাফাখুমের আপস্ট্রিমের লেকে,রাতের আধারে ঝুপঝাপ গোসল সেরে ফেলি।তারাতাড়ি খেয়ে দেয়ে ঘুমাই নাফাখুমের ওপরের এক পাড়ায়। এইদিকে আরেকটা ঘটনা ঘটে তুষ্টির পেটে কামড়ে থাকা জোকটি রক্ত খেয়ে টুইটুম্বর হয়ে যায়,অইটা দেখে তুষ্টি যে চিতকার দেয়,জোক ভয়ে পড়ে যায়।
কিন্তু ব্লিডিং আর থামে না,সবাই মোটামোটি আতংকিত হয়ে পড়ি, ব্লিডিং কেমনে থামাবো,অনেক কষ্টে ওড়না দিয়ে বেধে রক্ত পড়া বন্ধ করি।
রাতে ডিনার শেষে বারবিকিউ করে খেয়ে দেয়ে ঘুম,শান্তির পরশ নিয়ে ঘুম দিয়ে খুব সকালেই উঠি,দেখি পাহাড়ের মনোরম সেই ভোর,অনেক তৃপ্তিময়।
তারপর নাস্তা করে ঝর্নার আশপাশে ফোটসেশন করে বাড়ী ফেরার উদ্দেশ্য রওনা দেই,দিনের আলোতে ট্রেকিং এর রুট পরখ করতে করতে এগুতে থাকি,যাত্রা পথে আবার সেই প্যারা নিয়ে তুষ্টি এগুতে থাকে, আছাড় খাওয়া তার নিত্যে সংগী হয়ে গেছে,আর সে সেইটা হাসি মুখে বরন করে নিচ্ছে।ফাইনালি আমরা পৌছাই রেমাক্রি ফলসে,অসাধারণ ফলস,দাপাদাপি করে বেরিয়ে পরি থানছি, থনছিতে লাঞ্চ করেই রওনা দেই নিলগিরির দিকে।শেষ মূহুর্তে সূ্র্য ডুবার ভিউটা দেখতে পাই নিলগিরি পাহাড়ে আহারে আহারে।
তারপর আমরা নাফাখুমের মিশন কমপ্লিট করে বের হয়ে পড়ি ঢাকার উদ্দেশ্য।
আলহামদুলিল্লাহ সব কিছুই ভালো ভাবে শেষ হয়।

কিভাবে যাবেন-
ঢাকা টু বান্দরবন, জনপ্রতি আপ ডাউন- ১২৪০ টাকা
বান্দরবন টু থানছি, চাদের গাড়ি ৮ জন শেয়ারিং ১২৫০ টাকা।
থানছি টু রেমাক্রি, বোটে করে ৮ জন শেয়ারিং ১২৫০ টাকা
রেমাক্রি টু নাফাকুম, ৩ ঘন্টা পায়ে হেটে,
খাওয়া দাওয়া, থাকা ও অন্যান্য খরচ সহ আরো যুক্ত হবে।

আমাদের ৮ জনের জন প্রতি খরচ হয়েছিলো ৪৫০০ টাকা

১৫ জনের টীম হলে খরচ আরো কমতে পারতো।

Post Copied From:Farhad Dewan‎>Travelers of Bangladesh (ToB)

কম খরচে নাফাকুম ঘুরে আসার উপায়

হিসেব করে দেখলাম, ৩৪৫০ টাকায় নাফাকুম-রেমাক্রি-তিন্দুর সৌন্দর্য ভালভাবেই উপভোগ করে আসা সম্ভব!

এই মাসের শুরুতে প্রথমবারের মত নাফাকুম জলপ্রপাত দেখে আসলাম, সেই অভিজ্ঞতার আলোকে আজকের লেখা!

১৫ জনের গ্রুপের খরচের হিসেবটা দিলাম!

ঢাকা টু বান্দরবন ৬২০+৬২০= ১২৪০ (যাওয়া আসা)
বান্দরবন টু থানচি ২০০+২০০= ৪০০
থানচি টু রেমাক্রি নৌকা ভাড়া: ৮০০ (যাওয়া আসা প্রতি নৌকা ৪০০০ টাকা নেয়, এক নৌকায় ৫ জন বসা যায়, সে হিসেবে জনপ্রতি ৮০০ টাকা লাগবে, ১৬ ডিসেম্বর, ২১শে ফেব্রুয়ারি বা এই টাপের বন্ধের দিন গেলে নৌকা ভাড়া জনপ্রতি ১০০ টাকা বাড়তে পারে)

গাইড: জনপ্রতি ১৩৫ টাকা! থানচি থেকে যে গাইড নিবেন তাকে ১৫০০ টাকা আর রেমাক্রি থেকে একজন নিতে হয়, তাকে দিতে হয় ৫০০ টাকা, টোটাল ২০০০ টাকা! একজন গাইড সর্বোচ্চ ১৫ জন ট্যুরিস্ট নিয়ে যেতে পারে, আপনারা ১৫ জন গেলে জনপ্রতি গাইড চার্জ আসে ১৩৩ টাকা!

রেমাক্রিতে ১ রাত কটেজে থাকা: ১৫০/- টাকা

খাবারের খরচ: ৬০০

বান্দরবনে ১ম দিন সকালের নাস্তা+ ২য় দিন রাতের খাবার: ২০০
থানচিতে ২ বেলা দুপুরের খাবার: ২০০
রেমাক্রিতে ১ম দিন রাতের খাবার ও ২য় দিন সকালের নাস্তা: ২০০

গাইড; নৌকার মাঝি ও হেল্পারের ২ বেলা খাবারের খরচ আপনাদেরকেই বহন করতে হবে! সেক্ষেত্রে জনপ্রতি ৮০-১০০ টাকা লাগবে!

তাহলে সর্বমোট খরচ দাঁড়ালো : ১২৪০+৪০০+৮০০+১৩৫+১৫০+৬০০+১০০= ৩৪২৫ টাকা!

এর বাইরে আর কোন খরচ নেই!

এখন যদি আপনি একটু রিলাক্সে ট্যুর দিতে চান, পাহাড়ি আঁকাবাঁকা-উঁচুনিচু রাস্তার সৌন্দর্য উপভোগ করতে চান তাহলে খরচ বাড়বে! এই যেমন বাসে করে না গিয়ে বান্দরবন থেকে থানচি রিজার্ভ চান্দের গাড়িতে করে গেলে ভাড়া বেশি পড়বে! যাওয়া আসা একটা চান্দের গাড়ি ৯০০০-৯৫০০ নিতে পারে! এক গাড়িতে ১৩/১৪ জন বসা যায়!

গ্রুপ যদি ছোট হয় তবে জনপ্রতি খরচ ১৫০-২০০ টাকা বাড়বে!
আর আপনারা গেলে ৫/১০/১৫ জন যাবেন, ৭-৮ জন বা ১২-১৩ জন গেলে নৌকার খরচ বাড়বে! এক নৌকায় ওরা ৫ জনের বেশি নিতে চায়না, ২ জন অতিরিক্ত গেলে আরেকটা নৌকা নিতে হবে, ভাড়া কম নিবেনা, অতিরিক্ত ২ জনের জন্য সবার মাথাপিছু নৌকা ভাড়া বেড়ে যাবে! তাই গ্রুপের মেম্বার সংখ্যা নৌকা হিসেব করেই নির্ধারণ করবেন!

নাফাকুমের উদ্দেশ্যে রেমাক্রি থেকে খুব ভোরে বের হবেন, যত তাড়াতাড়ি ফিরে আসা যায়! হাটার সময় খুব খেয়াল করে হাটবেন, অন্যমনস্ক হয়ে বা অন্য দিকে তাকিয়ে হাটবেন কখনোই; পা পিছলে পড়ে যাওয়ার সম্ভাবনা খুবই বেশি! আমার গ্রুপের অনেকেই একাধিকবার আছাড় খেয়েছে, আমি নিজেও একবার পড়ে গেছি!

ট্রেকিং এর পথটা অতটা কঠিন মনে হয়নি, যে কেউ যেতে পারবেন, সেদিন বেশ কয়েকটা মেয়েও চোখে পড়লো যারা নাফাকুমে ঘুরতে গেছে! সুতরাং ছেলে হয়ে নাফাকুম যেতে ভয় পাওয়া মানে লজ্জার বিষয়!

নিরাপত্তা নিয়ে কোন সংশয় নেই, নিশ্চিন্তে যেতে পারেন!

খেয়াল রাখবেন আপনার এবং আপনার সাথে থাকা ভ্রমণসঙ্গীদের দ্বারা যেন পরিবেশের কোন ক্ষতি না হয়! খালি বোতল/প্যাকেট, সিগারেটের ফিল্টার ফেলে আসবেন না, সাথে করে নিয়ে এসে উপযুক্ত জায়গায় ফেলবেন!

স্থানীয় আদিবাসীদের সাথে সুন্দর ও মার্জিত আচরণ করুন, সম্ভব হলে ওদের সাথে ৫-১০ মিনিট আড্ডা দিন!

আমার মনে হয় কি, প্রত্যেকের অন্তত একবারের জন্য হলেও নাফাকুম যাওয়া দরকার! বান্দরবনের আনাচেকানাচে যে কি পরিমাণ সৌন্দর্য ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে তা গহীনে না গেলে বুঝে আসবেনা! আমিয়াকুম-সাতভাইকুম যাওয়া কিছুটা কঠিন, সেখানে না গেলেও অন্তত একটাবার নাফাকুম থেকে ঘুরে আসুন!

আপনার ঘুরবাজ বন্ধুটাকে আজকেই নক করুন, প্ল্যান করে ফেলুন নাফাকুম ঘুরে আসার!

প্রথমবারের মত নাফাকুম দেখে আসলাম, নেক্সট টার্গেট আমিয়াকুম-সাতভাইকুম

Post Copied From:Sujauddin F. Sohan‎>Travelers of Bangladesh (ToB)

বিস্ময়কর এক পাহাড়ি সৌন্দর্যের নাম নাফাখুম জলপ্রপাত

রেমাক্রি থেকে তিন ঘন্টার হাঁটা পথ পাড়ি দিয়ে যেতে হয় আশ্চর্য সুন্দর নাফাখুম জলপ্রপাতে। রেমাক্রি খালের পানি প্রবাহই এই নাফাখুম। নাফাখুমে এসে বাঁক খেয়ে নেমে গেছে প্রায় ২৫-৩০ ফুট, প্রকৃতির খেয়ালে সৃষ্টি হয়েছে চমৎকার এক জলপ্রপাত! সূর্যের আলোয় যেখানে নিত্য খেলা করে বর্ণিল রংধনু! ভরা বর্ষায় রেমাক্রি খালের জলপ্রবাহ নিতান্ত কম নয়। প্রায় যেন উজানের সাঙ্গু নদীর মতই। পানি প্রবাহের ভলিউমের দিক থেকে নাফাখুম-ই বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় জলপ্রপাত।

কিভাবে যাওয়া যাবে: ১. বাসে করে ঢাকা টু বান্দরবান যেতে হবে। (রাতে রওনা হলে পরদিন সকালে পৌঁছাবে।) ২. বান্দরবান থেকে থানচি যেতে হবে চাঁদের গাড়িতে। সময় লাগবে ৪ ঘন্টার মত। (দুপুর ১ টার মধ্যে যাওয়া যাবে।) ৩. থানচি থেকে ১টা বোট ঠিক করে নিতে হবে রেমাক্রী যাওয়ার জন্য। থানচি চেক পোস্ট এ নাম-ঠিকানা লিখতে হবে। থানচি থেকে তিন্দু হয়ে রেমাক্রী বাজার পৌছাবে। সব কিছু ঠিক থাকলে সময় লাগবে ৪ ঘন্টা। (ওই দিনই রউনা হলে প্রথম দিনই রেমাক্রী বাজার যাওয়া যাবে, অথবা রাতে থানচি থেকে পরদিন খুব সকালে রওয়ানা করা যাবে। ) ৪. রেমাক্রী বাজার এ ১ টা রেস্ট হাউস আছে। রেস্ট হাউস খালি না পেলেও ২০/২৫ টা বাড়ি আছে যার প্রায় প্রতিটিতেই ভাড়া থাকার মত রুম আছে । তাও খালি না পেলে ১ টা স্কুল আছে, স্থানীয়দের সাথে যোগাযোগ করে থাকা যাবে। ৫. রেমাক্রী বাজার থেকে পায়ে হেটে নাফাখুম রওনা হতে হবে। যাওয়া ২ ঘন্টা ও ফিরে আসা ২ ঘন্টা , মোট ৪ ঘন্টা লাগবে। ৬. ফেরার জন্য বোট আগে থেকে টিক করে রাখতে হবে। সকালে উঠে রউনা হলে দুপুরের আগেই থানছি পোছানো যাবে। দুপুরের খাওয়া শেষ করে বান্দরবন এর গাড়িতে উঠতে হবে। প্রতিদিন ১টা নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত বাস চলে। ওই সময়ের মধেই বাস ধরতে হবে। ৭. সন্ধায় বান্দরবান এসে রাতের গাড়িতে ঢাকা রওনা হতে হবে। পরদিন সকালে ঢাকা পৌঁছাবে।

Post Copied From:Asad Islam>Travelers of Bangladesh (ToB)

সাঙ্গু নদী

স্থানীয়ভাবে যা শঙ্খ নামে পরিচিত। ইহা বাংলাদেশের অন্যতম নদী যার উৎপত্তি ও সমাপ্তি উভয়ই বাংলাদেশে। বান্দরবান জেলার থানচি উপজেলার দুর্গম মদক এলাকার পাহাড়ে এ নদীর উৎপত্তি।

বান্দরবান জেলা ও দক্ষিণ চট্টগ্রামের ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়ে এটি বঙ্গোপসাগরে গিয়ে মিশেছে। উৎসমুখ হতে বঙ্গোপসাগর পর্যন্ত এই নদীর দৈর্ঘ্য ১৭০ কিলোমিটার।

সাঙ্গু নদী বান্দরবান জেলার প্রধানতম নদী। এ জেলার জীবন–জীবিকার সাথে সাঙ্গু নদী ওতপ্রোতভাবে জড়িত। বান্দরবানের পাহাড়ি জনপদের যোগাযোগের ক্ষেত্রে এ নদী একটি অন্যতম মাধ্যম।

দু ধারের উঁচু উঁচু পাহাড়ের বেষ্টনী, দৃষ্টির সীমানা জুড়ে থাকা পাহাড়সারি, নয়নাভিরাম উপত্যকা, দানবাকৃতির সব পাথরকে পাশ কেটে চলা – সবমিলিয়ে খরস্রোতা সাঙ্গুর বুক চিরে ছুটে চলতে চলতে স্কুল জীবনে শেখা সেই ‘A Journey by Boat’ রচনাটি আবার নতুন করে লিখতে ইচ্ছা করবে 🙂

যেভাবে যাবেনঃ ঢাকা>বান্দরবান>থানচি। তারপর নৌকা ভাড়া নিয়ে থানচি>তিন্দু> রেমাক্রি পর্যন্ত গেলে নাফাখুম ঘুরে আসবেন। আর পারলে কোন এক পূর্ণিমার রাতে তিন্দুতে অবস্থান করবেন।

Post Copied From: Tanvir Mahmud Konok > Travelers of Bangladesh (ToB)