খুম খুম নাফাখুম….নাফাখুম…নাফাখুম

ইউটিউব এ একের পর এক ভিডিও দেখার পরই নাফাখুম এর প্রেমে পড়ে যায়।তখন সেমিস্টার ফাইনাল চলছিল।পড়ার ফাকে ফাকে ইউটিউব এ ঢুঁ মারাটা ই যেন নেশা হয়ে যাচ্ছিল।মনে মনে ভাবছিলাম বাংলাদেশের মানচিত্রে এত ভয়ংকর সুন্দর জায়গাও আছে।আর আমি এমনিতেও ভ্রমণ পিপাসু।যাইহোক অনেক দূরের পথ!একা একা তো আর যাওয়া যাই না তাই মনে মনে সঙ্গী খুঁজতে লাগলাম।আর আল্লাহর রহমতে সঙ্গী হিসেবে পেলাম আমার জীবনের সেরা ৭ জনকে।সব পরিকল্পনা শেষ।এখন শুধু পরীক্ষা শেষ আর ফরমালিটি ভাইভা শেষ হওয়ার জন্য অপেক্ষা।পরীক্ষা শেষ ১১তারিখ।আর ভাইভার তারিখ জানালো ১৩ই ডিসেম্বর ২০১৭।মনে খুশি আর ধরে না!!ডিসিশন নিয়ে নিলাম ১৩ তারিখ রাতেই রওয়ানা হবো।আমি বেশি excited ছিলাম ত তাই মাঝখানের ২ রাত আর ঘুমই আসে না।আহারে আহারে কবে যাব পাহাড়ে!!!আগের দিন গিয়ে টিকিট কাটি।সিজন হওয়ায় টিকিট পাওয়াটা ঝামেলাই হয়।অনেক কষ্টে হানিফ পরিবহনের ৭ টা টিকিট পাই।ও হ্যা আমাদের মধ্যে ৪জন ছেলে আর ৩ জন মেয়ে ছিল।প্রথমে একটু ভয় কাজ করছিল।কিন্তু কথায় আছে বন্ধুত্ত্বে ভয়কে করো জয়।যাই হোক রাত ১০ টায় আমাদের বাস ছাড়ল সায়েদাবাদ থেকে।সকাল ৬.২০ এ আমরা বান্দরবন পৌছালাম।হোটেল ঠিক করে নাস্তা শেষ করে একটা জিপ রেডি করলাম সারাদিন শহরের আশে পাশে ঘুরার জন্য।১ম দিন:-রামজাদিবৌদ্ধ মন্দির,স্বর্ণমন্দির,মেঘলা,নীলাচল ঘুরা শেষ করে সন্ধ্যায় হোটেলে ফিরে আসলাম।রাতে ডিনার শেষ করে বার্মিজ মার্কেটে একটু ঢুঁ মারলাম।আর সাথে পরদিন নাফাখুম যাওয়ার জন্য থানচির উদ্দেশ্যে চান্দের গাড়ি ঠিক করে নিলাম।কথা হলো আমাদের যাওয়ার পথে শৈলপ্রপাত,চিম্বুকপাহাড়,নীলগিরি দেখিয়ে নিয়ে যাবে।হোটেলে এসে দিলাম ঘুম।
দিন ২:-সকাল ৬ টায় চান্দের গাড়ি আসল আমাদের নিতে।আমরা রওয়ানা হলাম।আমাদের মেইন টার্গেট যেহেতু নাফাখুম তাই মাঝখানের জায়গাগুলোতে বেশি সময় নষ্ট করি নাই।সকাল ১১ টার মধ্যে আমরা থানচি পৌছে যায়।ও হ্যাঁ নীলগিরি পার হবার পর থানচি যাওয়ার রাস্তাটা just ভয়ংকর ভয়ংকর সুন্দর!!আমরা থানচি পৌছে নৌকা রেডি করে ফেলি।যেহেতু আমরা ৭ জন ছিলাম তাই ২ টি নৌকা নেয়া লাগছে কারন এক নৌকায় ৫ জনের বেশি বিজিবি উঠতে দেয় না।শুরু হল আল্লাহর অপরূপ সাজানো বাগান দেখা।নৌকা চলে ২ পাহাড়ের মাঝখান দিয়ে।কখনোও আবার বড় বড় পাথরের ফাকঁ দিয়ে।নৌকার রাস্তাটুকু এক কথায় অস্থির।২ ঘণ্টার মধ্যেই আমরা রেমাক্রি বাজার পৌছে যায়।আমাদের নৌকার মাঝিই আমাদের গার্ডের দায়িত্ত্বে ছিল।ও আমাদের জন্য রাতে থাকার এবং খাবার জন্য কটেজ(উপজাতিদের তৈরি কাঠের ২ তালা ঘর) রেডি করে। (জনপ্রতি থাকা ১৫০ আর খাবার একবেলা ১২০ফিক্সড)।ঐ রেমাক্রি বাজার থেকে নতুন গাইড ধরে নাফাখুম এর উদ্দেশ্যে রওয়ানা শুরু ১ টায় সাথের জিনিস পত্র কটেজে রেখে।যেহেতু আমাদের সাথে মেয়ে ছিল তাই হাটার গতি কিছুটা শিথিল ছিল।শুরু হলো আমাদের ট্রেকিং।পাহাড় পেরিয়ে খালের কিনারা ঘেষে আমরা হাটতে থাকলাম।এখন শীতকাল তাই রাস্তা বেশি ভয়ংকর না কিন্তু পরিবেশটা ভয়ংকর সুন্দর!যাওয়ার পথে ২ বার পানি পাড় হতে হয়।খুব সাবধনে কারণ পাথুরে রাস্তা হওয়ায় খুব পিচ্ছিল।যাই হোক আমরা ৩.৩০ মিনিট এর মধ্যেই পৌছে যায় সেই কল্প-বাস্তবতায় যা কিনা কত রাত আমার চোখের ঘুম কেড়ে নিছিল।কত রাত আমি সপ্নের মধ্যেই চলে যেতাম ঐ জায়গায়।সৌন্দর্য কি বলব!! এক কথায় expectation এর চেয়ে ১০০ গুন উপরে।ভাগ্য খারাপ হলে যা হয়!দিনের দৈঘ্য ছোট হওয়ায় আমরা মাত্র ১৫ মিনিট সেখানে ছিলাম।গোসল করার সৌভাগ্য হয়নাই।আমরা রওয়ানা দিলাম।৩.৪৫ এ।৬.৩০ এর মধ্যেই আমরা কটেজে পৌছে গেলাম।রাতের কাহিনী পুরুই আমাদের অবাক করে দিয়েছে।আমার মনে হয় না এত দুর্গম জায়গায় এত ভালো থাকা আর খাওয়ার প্রত্যাশা কেউ করতে পারে।রাত কাটিয়ে সকালে ১৬ই ডিসেম্বর।(কিছু কথা শেষে লিখব বিজয় দিবস নিয়ে ওদের উদযাপন)।আমরা ৯.৩০ এ আমাদের নৌকায় চড়ে রওয়ানা দিলাম থানচির উদ্দেশ্য।যাওয়ার সৌন্দর্য আমাদের বিমোহিত করেছে।যদিও সাংগু নদীর অনূকূলে যাওয়াটা অনেক কষ্টসাধ্য।আমাদের মাঝিগুলা খুব সু্ন্দরভাবে ই নিয়ে গেছেন।হালকা কুয়াশা।পাহাড়ের বুকে মেঘ আটকে থাকা,রাজা পাথর দেখে,বড় পাথর দেখা,পাথরে দাড়িয়ে ছবি তুলা মানে awesome.তবে ভূলেও কেউ রাজাপাথরে উঠে ছবি তুলবেন না।স্থানীয়রা অনেক সমীহ করে চলে। আমরা ১১.৩০ এ থানচি বাজারে পৌছে যাই।সেখান থেকে বান্দরবনের গাড়ি ঠিক করি।চান্দের গাড়ি।মাঝপথে গাড়ি থামিয়ে পাহাড়ি আনারসের টেষ্ট নেয়া থেকে কেউ বন্ঞ্চিত হবেন না।২.৪৫ এ আমরা বান্দরবন শহরে পৌছে যায়।ঢাকার বাসের জন্য যাই।বাস রাতের ৮ টায়।আমাদের হাতে enough সময় আছে।দুপুরের খাবার খেয়ে ২য় বারের মতো চলে যাই নীলাচলের সূ্র্যাস্তের দৃশ্য উপভোগ করতে।৭ টায় আমরা কাউন্টারে এসে রাতে খাওয়ার জন্য খাবার কিনে বাসে উঠে পড়ি।ভোর ৪ টায় আমরা সায়দাবাদ পৌছে যায়।
.
.
ট্যুর প্লান:
ঢাকা-বান্দরবান(রামজাদি বৌদ্ধমন্দির, স্বর্ণমন্দির,মেঘলা,নীলাচল,মিলনছরি,শৈলপ্রপাত,চিম্বুকপাহাড়,নীলগিরি)-থানচি-রেমাক্রি-নাফাখুম-ঢাকা
.
.
সময় লেগেছে:-
৩দিন ও ২রাত(যাওয়া আসার রাত ছাড়া)
.
.
খরচ পড়েছে:-
মাথাপিছু ৫৫০০
নৌকা+গাইড(তাইজুল:-০১৮২৩৬৭৯২৪০)
.
.
(আমার সম্পূর্ণ নিজের অভিমতে নিচের লেখাটি লিখলাম।দয়া করে কেউ ব্যক্তিস্বার্থে নিবেন না:-
.
.
উপজাতি ও বিজয় দিবস
♠এতো গভীরে মানুষ থাকতে পারে তা যখন চিন্তা করাই কঠিন সেখানে সবাইকে তাক লাগিয়ে ঐ মানুষ গুলোই এতো সুন্দরভাবে বিজয় দিবস উদযাপন করছে।আমি হতবাক।যেখানে তারা বেচেঁ থাকার জন্য রাতদিন সংগ্রাম করে।একটি দেশের নাগরিকের সুবিধা ত দূরে থাক যেখানে কিনা বিদ্যুত,মোবাইল নেটওয়ার্ক ই পৌছায়নি সেই তারাই বাংলাদেশের ৪৬ তম বিজয় দিবসকে চমৎকারভাবে পালন করছে।আর আমাদের মত মানুষ গুলো রাষ্টীয় দিবস গুলো ঘুমিয়ে কাটাচ্ছি।তাদের দেখে মনে হয় সমস্ত স্বাধীনতা আমাদের দেয়া হয়েছে আর আমরা তা মূল্যই দিচ্ছি না।সেলুট তাদের।তাদের ব্যবহার অতুলনীয়।একবার কাছ থেকে ওদের জীবনটা দেখে আসুন আমাদের জীবন সম্পর্কে ধারনা পাল্টে যাবে।আল্লাহর দরবারে লাখো কোটি শোকরিয়া আমাদের নিজেদের অবস্থান থেকে।উপজাতিরাও মানুষ।

Post Copied From:RI Rahad‎>Travelers of Bangladesh (ToB)

বান্দরবান

১.খাগড়াছড়ি থেকে বান্দরবান এর বাস আছে কি?না থাকলে ইজি রুট কোনটা?

উত্তরঃনা নাই। চিটাগং বা রাংগামাটি হয়ে যেতে হবে

.সাজেক এর জিপ ভাড়া কত এখন?
–৯১০০/-
৩.নাফাখুম,অমিয়াখুম সহ সব গুলো ঘুরতে গাইড খরচ কত?
–৭০০০-৮০০০/-
৪.থানচি থেকে রেমাক্রি নৌকা ভাড়া কত?
৪০০০-৫০০০/-
৫.নাফাখুম এ কি থাকার ব্যবস্থা আছে?
–না নাই।

বান্দরবান এ ২ দিন ঘুরার জন্য জীপ রিজার্ভ কত টাকা নিবে?
১ম দিন নীলগিরী, শৈলপ্রপাত রুট
২য় দিন নীলাচল, গোল্ডেন টেম্পল রুট

ঊত্তরঃday 1 = 3500-4000/-
day 2 = 1200-1500/-

আমিয়াখুম ও সাতভাইখুম ( বান্দরবান ) ভ্রমণ পরিকল্পনা ও খরচ

আমীয়াখুম ট্যুর প্লান ।

০। দিন রাতে ঢাকা টু বান্দরবান প্রতি সিট ভাড়া গাড়ির মান অনুযায়ী ৬২০টাকা,থেকে ৯০০টাকা পর্যন্ত ॥

১ম  দিনঃ ভোরে ঢাকার গাড়ি থেকে বান্দরবান শহরে নেমে নাস্তা করে ।থানছির উদ্দেশ্যে রওনা হবেন ।যাওয়ার পথে ,সৌন্দর্য পূর্ণ যেই দৃশ্যে গুলো দেখতে পাবেন ,শৈলপ্রপাত,চিম্বুক ,নীলগিরি ॥

থানছি যাওয়ার মাধ্যম ॥

চাঁদের গাড়ি অথবা লোকাল বাস॥ বান্দরবন টু থানছি লোকাল বাস ভাড়া প্রতি জনের ২০০টাকা,সময় ৪/৫ঘন্টা । অথবা চাঁদের গাড়ি রিজার্ভ করতে পারেন ভাড়া ৫০০০/৬০০০টাকা,যাত্রী সংখ্যা সর্বোচ্চ ১৪ জন । সময় ৩/৩:৩০ঘন্টা ॥ থানছি পৌঁছে গাইড নিতে পারেন ১জন গাইড চার্চ আলোচনা সাপেক্ষ ॥

৩দিনের জন্য শুকানো খাবার ও রান্নার প্রয়োজনিয় খাদ্য দ্রব্য কিনে নিতে পারেন।

বিকাল ৩টার আগেই (থানা+বিজিবির ) অনুমতি নিবেন,অন্যথায় থানছিতে রাত যাপন করতে হবে ।

দুপুরের খাবার খেয়ে প্রথমেই বোট ভাড়া করবেন পদ্ন মূখ যাওয়ার জন্যে । লোকাল বোটে জন প্রতি ৫০টাকা ,অবশ্য লোকাল বোট সবসময় পাওয়া যায় না সেক্ষেত্রে রিজার্ভ ভাড়া করতে হয় ১০০০/১২০০টাকা প্রতি বোট । পদ্ন মুখ থেকে পদ্ন ঝিরি ,রোনাজুন পাড়া,হরিচন্দ্র পাড়া হয়ে ৬/৭ ঘন্টা হেটে থুইষা পাড়ায় পৌছাবেন । থুইষা পাড়ায় রাতের খাবারের জন্য চাউল ,তরকারী কিনবেন আর গাইড রান্না করে খাওয়াবে ।থুইষা পাড়ায় থাকার ঘরভাড়া জন প্রতি ১৫০টাকা ।

২য় দিনঃ ভোরে ঘুম থেকে উঠে মোটামুটি খেয়ে আমিয়া খুমের উদ্দেশ্যে রওনা হবেন । থুইষা পাড়া থেকে আমিয়া খুম যাওয়া আসা ৬/৭ ঘন্টা সময় লাগবে, সেক্ষেত্রে অবশ্যই শুকানো খাবার ও পানির বোতল নিতে বুলবেন না ।৩/৩:৩০ ঘন্টা হাটার পর দেখতে পাবেন অবিশ্বাস্য সৌন্দর্য আমীয়া খুম । সাতভাই খুম ওভেলা খুম দুটিই পাশাপাশি দেখার মতো স্পট ,চাইলে ঐ দুটু খুমের সৌন্দর্য উপভোগ করতে পারেন । সূর্য ডুবার আগেই থুইষা পাড়ায় ফিরে আসবেন।

৩য় দিনঃ ভোরে মোটামুটি খেয়ে হাটা শুরু করবেন নাফাখুম হয়ে রেমাক্রীর উদ্দেশ্যে ।জিন্নাহ পাড়া, উল্হাউ পাড়া উলাচিং পাড়া হয়ে ৩ঘন্টা হাটার পর দেখতে পাবেন প্রকৃতির অপরুপ সৌন্দর্য নাফাখুম জলপ্রপাত ।নাফাখুমে ১ঘন্টা রেষ্ট নিয়ে হেডম্যান পাড়া ,পিনিডং পাড়া হয়ে ২ঘন্টা হেটে পৌছাবেন রেমাক্রী বাজার ।দুপুরের খাবার খেয়ে বোটে করে তিন্দু হয়ে থানছির উদ্দেশ্যে রওনা হবেন ।রেমাক্রী টু থানছি রিজার্ভ বোট ভাড়া ২০০০/২৫০০টাকা।বোটে করে থানছি আসার পথে দেখতে পাবেন মনোমুগ্ধকর দৃশ্যে তিন্দু বড় পাথর ।

থানছি পৌছা মাত্র সময় ও চাঁদের গাড়ি যদি ঠিকটাক থাকে বান্দরবানের উদ্দেশ্যে রওনা হবেন ,ভাড়া আসার মতই ।রাতে ঢাকার বাসে ঢাকার উদ্দেশ্যে রওনা হবেন ॥

সরকারী ছুটির দিনে বান্দরবান টু থানছির চাঁদের গাড়ি ভাড়া ও থানছি টু রেমাক্রীর ট্রলার ভাড়া কম বেশি হতে পারে ॥

  • মোঃ হারুন রশীদ
  • পর্যটক গাইড
  • থানছি ,বান্দরবান
  • ফোন কল ;-01556705010
  • 01849556340

প্রথম বার বান্দরবন ভ্রমনের সহায়িকা

আমি প্রথম বান্দরবন যাই ২০০৭ এ। তেমন কিছুই জানতাম না। প্রথমবার এসে মেঘলা, নিলাচল/ টাইগার হিল, স্বর্ণ মন্দির, শৈলপ্রপাত, চিম্বুক দেখে ওয়াওওয়াও করতে থাকি। এগুলো সবই মুলত শহরেরআশেপাশে। সেবার ওইগুলো দেখেই পেটভরা গল্প নিয়ে ঘরেফিরি। ২য় বার এসে কেক্রাডং “জয়” করে বিজয়ী বেশে ঘরে ফিরি ।

এরপর বেশ কয়েকবার বার বান্দরবন গেছি, অনেক কিছুই দেখেছি। তবে আরও অনেককিছু এখনো দেখার বাকি রয়ে গেছে।

শুধু মেঘলা, নিলাচল/ টাইগার হিল ইত্যাদি জায়গা দেখতে চাইলে পরিকল্পনা করবেন এভাবে- ১ম দিন সকালে পৌঁছে ফ্রেশহয়ে নাশ্তা করে মেঘলা, নিলাচল/ টাইগার হিল, স্বর্ণ মন্দির এসব দেখতেপারেন। ২য় দিন একটা জীপ ভাড়া (টাকা ২০০০/৩০০০) করে শৈলপ্রপাত, নীলগিরি ঘুরে আসেন।

তবে বান্দরবন এর আসল ঐশ্বর্য দেখতে হলে আপনাকে আরও একটু ভিতরে ঢুকতেহবে। ২/৩ দিন পাহাড়ে হাঁটাহাঁটিকরতে হবে। আমি এখন সেই পথের কথা বলব।

দিন ১ –বান্দরবনশহরে পৌঁছে নাশ্তা করে একটা জীপ নিতে হবে রুমা বাজার পর্যন্ত। টাকা ২০০০/২৫০০ লাগবে। পৌছতে ঘন্টা দেড় লাগবে। সেখানে পৌঁছে গাইড নিতেহবে। গাইডের কয়েকটি সমিতি আছে। যেকোনো একটা থেকে একজনগাইড নিতে হবে। কেওক্রাডং পর্যন্ত গেলে দৈনিক ৪০০ করে মোট ১২০০টাকা লাগবে। জাদিপাই গেলে প্যাকেজ ২০০০/২৫০০ টাকার মত। তাদের দেয়া ফর্ম পুরনকরে আর্মি ক্যাম্পে গিয়ে সেখানে নাম এন্ট্রি করতে হবে। তারপর দ্রুত গাইডের সাথেগিয়ে জীপ ভাড়া করতে হবে বগা লেক যাওয়ার জন্য। ভাড়া ২০০০ টাকা। তবে বর্ষাকালে গাড়ি বগা লেকপর্যন্ত যায় না।

বগা লেকে ওঠার শেষ রাস্তাটুকু পার হতে অনেক কষ্ট হবে। খাড়া পাহাড়ে উঠতে হবে। আসলে এই জায়গাটুকু পারহতেই সবচেয়ে বেশি কষ্ট হয় সবার। কারন, সারারাত জার্নি করে, হইচই করে সবাই খুব ক্লান্ত থাকে। একারনেই কিছু মানুষ বগাউঠেই সিদ্ধান্ত নেয় আর আগাবে না। এটা ভুল সিদ্ধান্ত। আমি অনেক বাঘা বাঘা ট্রেকারদেরজিজ্ঞাসা করে দেখছি। ট্রিপের প্রথম দিন বগায় উঠতে সবারই অনেক কষ্ট হয়। ২য় দিন থেকে আর এত কষ্টহবে না।

বগায় পৌঁছে সিয়াম দিদি/ লারাম বা অন্য কারও কটেজেউঠতে হবে। কটেজ আগে থেকে ঠিক করে রাখা ভালো। এরপর লেকে গোছল করে বাকি দিনরেস্ট। এখন যেহেতু রুমা যেতে নৌকা লাগে না সেহেতু বেলা ১১/১২ টার মধ্যে বগায়পৌঁছে অনেকেই আরও সামনে এগিয়ে যায়। তবে যারা প্রথমবার যাচ্ছে, তাদের বগায় ১ম রাত থাকাউচিৎ। স্থানটা অনেক সুন্দর। (এখানে সেনেটারি টয়লেটআছে)।

দিন ২ (আয়েশি ভ্রমন) – ভোরে উঠে খিচুরি+ ডিম ভাজি খেয়ে ভোর ৫.৩০ টার মধ্যেই রওনা হতেহবে কেওক্রাডং এর উদ্দেশ্যে। পথে চিংড়ি ঝর্না দেখতে হবে। ঝর্নার উপর পর্যন্ত গিয়েনা দেখলে কিন্তু বিরাট মিস। আগে পরে আরও কিছু ঝর্না পড়বে। মোট ৩/৩.৫ ঘণ্টা হাটার পরে পাবেন কেওক্রাডং। বাংলাদেশের “সর্বচ্চ” (সরকারি তথ্য মতে) পাহাড়।

লালার হোটেলে দুপুরেরে খাবার খেয়ে আবার ফিরতি পথে বগা।

অথবা দিন ২ (একটুখানিএডভেঞ্চার ভ্রমন) – ভোরে উঠে খিচুরি+ ডিমভাজি খেয়ে ভোর ৫.৩০ টার মধ্যেই রওনা হতে হবে কেওক্রাডং এর উদ্দেশ্যে। পথে চিংড়ি ঝর্না দেখতেহবে। ঝর্নার উপর পর্যন্ত গিয়েনা দেখলে কিন্তু বিরাট মিস। আগে পরে আরও কিছু ঝর্না পড়বে। কোন ঝর্নাতেই ১০/১৫ মিনিটেরবেশি সময় দেয়া যাবে না। মোট ৩/৩.৫ ঘণ্টা পরে পাবে কেওক্রাডং। বাংলাদেশের “সর্বচ্চ” পাহাড়। চুড়ায় ওঠার আগেই লালার হোটেলে দুপুরের খাবারঅর্ডার ও রাতে থাকার বুকিং দিয়ে দিবেন।

তারপরে ১০ টার ভিতরে দুপুরের খাবার খেয়ে পাসিং পাড়া হয়ে জাদিপাইপাড়া হয়ে জাদিপাই ঝর্না। কেওক্রাডং থেকে জাদিপাই যেতে কোন পাহাড়ে ওঠানাই, শুধু নামা আর নামা। ঘণ্টা ২/২.৩০ লাগবে পৌছাতে। শেষ ২০০ ফিট সাবধানে নামতেহবে। ৫০ ফিট পাটের মোটা দড়ি/কাছিসাথে করে নিয়ে গেলে এখানটায় নামতে সুবিধা হবে। লোকে বলে জাদিপাইনাকি বাংলাদেশের সবচেয়ে সুন্দর ঝর্না। কথাটির সাথে আমিও দ্বিমত নই। দেখলেআপনিও বোধ করি দ্বিমত করবেন না।
এখানে ঘণ্টা খানেক থেকে আবার ফিরতে হবে। আমরা ঐদিনই বগায় ফিরেএসেছিলাম। তবে সেটা বেশি কষ্টকর হতে পারে। আপনারা কেওক্রাডং এসেলালার হোটেলে ঐ রাত থাকবেন। (এখানে সেনেটারি টয়লেট আছে)।

দিন ৩ –অবশ্যইসূর্য ওঠার আগে ঘুম থেকে উঠবেন। কেওক্রাডং এর চুড়া থেকে সূর্যোদয় অনেক বেশি সুন্দর। নাশ্তা করে ফিরবেন বগা। সেখান থেকে জীপ স্ট্যান্ডেগিয়ে আগেই ফোনে ঠিক করে রাখা জীপে করে রুমায় ফিরবেন।
১২ টার মধ্যে রুমায় পৌঁছে দুপুরের খাবার খেয়ে ট্রলার নিবেন রিঝুকফলস পর্যন্ত। ৮০০/১০০০ টাকা নিবে। ৩০/৪০ মিনিট লাগে যেতে। রিঝুক দেখে রুমা ফিরেআবার জীপে করে বান্দরবন। বগাথেকে ঝিরিপথে হেঁটেও রুমা ফেরা যায়। ৬/৭ ঘণ্টা লাগে। পথটা অসাধারন সুন্দর।

রুমা থেকে বান্দরবন ট্রলারে করেও ফেরা যায়। ৩/৪ ঘণ্টা লাগবে। ৪০০০/৪৫০০ টাকা লাগতেপারে। ফিরতি পথে ৪০/৫০ কিমিসাঙ্গু দেখতে অনেক ভালো লাগবে।
এই পরিকল্পনায় ৩ দিন ঘুরে আসলে আর শৈলপ্রপাত, নীলগিরি, চিম্বুক, মেঘলা ইত্যাদি জায়গায়যাওয়া অর্থহীন। কেওক্রাডং, জাদিপাইর কাছে এগুলোকেশিশুপারক মনে হবে।

এই ৩ দিনের টুরে আরও কিছু মশলা দেয়া যায়, তবে প্রথমবার হিসেবে সেটাবাড়াবাড়ি হয়ে যাবে।

অবশ্য পালনীয় কর্তব্য –== = = = = = = =

১) ভালো, মজবুত ব্যকপ্যাক নিবেন। হাতব্যাগ/ লাগেজ এসব চলবেনা, চলবে না¸ চলবে না।

২) পুরো টুরে নিজের ব্যাগ নিজের কাধে রাখতে হবে। পাহাড়ে ওঠার সময় মেকাপবক্স/ পারফিউম ইত্যাদি ফেলে দিতে হবে ওজন কমাতে। অতএব, কাপড় মাত্র ২ সেট নিবেন। অন্যান্য জিনিস যাই নিবেনভেবে নিবেন। অযথা ব্যাগ ভারী করলে পরে কাঁদতে হবে।

৩) ভালো, মজবুত স্যান্ডেল নিবেন। মাটিতে ভালো গ্রীপ করে, পিছলে যায় না এমন স্যান্ডেলনিবেন।

৪) সঙ্গে সবসময় আধা/এক লিটার পানি, সামান্য কিছু হাল্কা খাবাররাখবেন।

৫) কলার পটাশিয়াম পেশির জন্য উপকারী। পাহাড়ে উঠলে পেশির উপরঅনেক চাপ পরে। অতএব, বান্দরবন গেলে বান্দরের মত কলা খাবেন।

৬) বেশি স্যালাইন খেলে রক্তচাপ বাড়ে, ঘাম বাড়ে ফলে আরও বেশিপানি শূন্যতা সৃষ্টি হয়। অতএব, সারাদিন চলার পথে বেশি স্যালাইন খাবেন না। পানি খাবেন। অনেক তৃষ্ণা পেলেও একবারেবেশি পানি খাবেন না। হটাত পেট ভারী হয়ে গেলে হাঁটতে পারবেন না।

৭) মশা প্রতিরোধের জন্য অবশ্যই Ododmos লোশন নিবেন।

৮) হাটার সময় ফুটবলারদের মত আংলেট, নী-ক্যাপ পড়বেন।

৯) টর্চ নিবেন। কম কম জ্বালাবেন। চার্জ শেষ হলে চার্জ দেয়াঝামেলা।

১০) প্রতিদিন খুব ভোরে ঘুম থেকে উঠবেন। অবশ্যই, অবশ্যই। যত দেরিতে রওনা হবেন, রোদে তত বেশি কষ্ট হবে। অলস কেউ থাকলে তাঁকে কক্সবাজারপাঠিয়ে দিন। বান্দরবন তার জন্য না।

১১) জোঁকের জন্য সবার সঙ্গে সামান্য লবন রাখবেন। জোঁক লাগলেই অযথা চেঁচামেচিনা করে আপনার পাশে জনকে লবন দিতে বলুন। জোঁক মরে যাবে।

১২) দল ১০ জনের হলে ৫ জনের ২ টা দলে হাঁটবেন। কেও যেন দলছাড়া না হয়েযায়।

১৩) ক্যাপ পড়বেন সবাই।

১৪) ছাতা/ রেইনকোট নিবেন।

১৫) ব্যাকপ্যাক কাভার নিবেন সবাই। বা সকল জিনিস বড় পলিথিনেভরে তারপর ব্যাকপ্যাকে ভরবেন।

১৬) সবাই ১টা করে পিঠে ঝুলানর মত দড়ি দেয়া কাপড়েরএক্সট্রা  ব্যাগ নিবেন ।

১৭) জ্বর, পেই কিলার,আমাশা, গ্যাস্ট্রিক, স্যালাইন, পানি বিশুদ্ধকরন ট্যাবলেটইত্যাদি নিবেন।

এবং দয়া করে

১৮) বিস্কুট/ চিপস/ চানাচুর ইত্যাদির প্যাকেট বা প্লাস্টিকের বোতল, অপচনশিল বস্তু ফেলবেন না যেখানে সেখানে। যেসব পাড়ায়ডাস্টবিন আছে সেখানে ফেলুন। না পারলেপুড়িয়ে ফেলুন।