অনেক সুন্দর, পরিষ্কার এবং শান্তি পূর্ণ একটি শহর

ঘুরে আসুন জয়পুর, দা পিঙ্ক সিটি, রাজস্থানের ক্যাপিটাল।

কিভাবে যাবেন?
ঢাকা থেকে কলকাতা বাসে তারপর কলকাতা থেকে জয়পুর প্লেনে ৬৫০০ টাকা
অথবা কলকাতা থেকে দিল্লি ট্রেনে রাজধানি বেশ ভাল অপশন এবং দিল্লি থেকে জয়পুর ডাবল ডেকার ট্রেনে এ যাবেন ৪ ঘনটায়, আমি ট্রেনের ফেয়ার সঠিক জানি না যেহেতু ওইটা দিয়ে যাতায়াত করি নাই।

জয়পুর ঘুরাঃ
আমি হোটেল থেকে ১৫০০ টাকা ট্যাক্সি ভাড়া করে পুরো জয়পুর ঘুরিছি। ট্যাক্সি সার্ভিস ড্রাইভার টু ড্রাইভার vary করে। ওদেরকে বলবেন সব গুলা স্পট নিয়ে যাইতে এবং আপনি নিজেও স্টাডি করে যাবেন কি কি স্পট আছে ওরা অনেক স্পট ঘুরায় না যেমন Panna Meena Ka Kund আমি request করাতে ঘুরাইসে নাইলে ঘুরাইত না অথছ Amber Fort এর খুব কাছে।

হোটেল প্রসঙ্গঃ
হোটেলে এ থেকছি Krishna Palace পার নাইট ২০০০ রুপি নিয়েছে বেশ ভাল হোটেল তবে আমার বন্ধু রা যখন ঘুরেছে তারা Hotel Maziz Prime এ থেকেছে ওইটা দাম কম কিন্তু রুম ভাল।

খাওয়া দাওয়া প্রসঙ্গঃ
জয়পুর মুলত ভেজ আইটেম পাওয়া যায়, আমার মতে চাপাতি রুটি আর পানির বাটার মাসালা খাওয়া ভাল আর নাইলে সাউথ ইন্ডিয়ান ডিশ দোসা খাওয়া ভাল। Maziz Prime হোটেলের বিপরিতে আপনার হালাল খাবার পাওয়া যায় ঐখানে নন ভেজ আইটেম পাবেন।

ট্রেনের চেয়ে প্লেনে জাওা খরছ কম সময় ও বাঁচে এবং নন ডাইরেক্ট ফ্লাইট টাইম অনেক বেশি লাগ্লেও প্রব্লেম নাই খরছ ভালই কম পরে যায়।

Post Copied From:Sayeed Mohammed‎>Travelers of Bangladesh (ToB)

পিংকসিটি জয়পুর

ইন্ডিয়ার রাজস্থান প্রদেশের রাজধানী এবং সুসজ্জিত রঙ্গিন এই শহর স্থাপিত হয় ১৭৭২ সালে মহারাজা জয়সিং-2 এর সময়। ১৮৭৬ সালে Prince of Wales(Edward VII) কে স্বাগত জানানোর জন্য তৎকালিন রাজা Sawai Ram Singh পুরো শহরকে গোলাপি রঙ্গে রাঙ্গিয়ে তোলে। তাই একে পিংকসিটিও বলে।

সুন্দর এই শহর দেখার লোভ সামলাতে না পেরে তাই এই গরমের মধ্যেই বেরিয়ে পরেছিলাম। চার জনের আমাদের এই যাত্রা শুরু করি ঢাকা থেকে। প্রথমে ঢাকা থেকে বাসে কলকাতা, কলকাতা থেকে দূরন্ত এক্সপ্রেস ট্রেনে নয়াদিল্লী এবং নয়াদিল্লীতে ট্রাভেল এজেন্সী থেকে ট্যাক্সি নিয়ে সোজা জয়পুর। উত্তপ্ত শুষ্ক গরম হওয়া আর রোদে পুড়ে যাওয়া গাছ আমাদের স্বাগত জানায়।

জয়পুরে দেখার মত অনেক জায়গা আছে যেমন Amer Fort/Amber Fort, Jaigarh Fort, Nahargarh Fort, Jal Mahal, Hawa Mahal, City Palace, Albert Hall Museum, Raj Mandir Cinema Hall, Jantar-mantar ও বেশ কিছু পাথর খোদাই করা মন্দির। এখানকার Fort গুলো এতো সুন্দর যে প্রতিটির উপরই অনেক কিছু বলা যায়। তবে Amer Fort/Amber Fort এর মধ্যে অন্যতম। এখানে এসে রাজাদের মত হাতির পিঠে করে Fortএ ঘুরে বেড়ানো এবং উটের পিঠে চড়ার সাধটাও পুরন হয়ে গেছে।

পরিবহনঃ দর্শনীয় স্থানগুলো একটু দূরে দূরে হওয়ার জন্য গাড়ী রিজার্ভ করে নিয়েছিলাম। এতে সময় এবং খরচ দুটিই বাঁচে এবং নিরাপত্তাও ছিল বিশেষ করে পাহাড়ের উপর Fort এ যাওয়ার সময়। স্থানীয় অটোতে করেও যাওয়া যাবে।

খরচঃ দুই দিনের ট্রিপে রাতে হোটেলে থেকে খাবার সহ আমাদের চার জনের জনপ্রতি খরচ 3200 রুপি (দিল্লী–জয়পুর-দিল্লী)। প্রতিটি স্থানে আলাদা টিকিট কেটে ঢুকতে হয়। ফরেইনার হিসেবে আমাদের টিকিট মুল্য বেশী গুনতে হয়েছে।

পরিশেষে স্থানীয় বাজার থেকে কেনাকাটা সেরে ফেরার পথে LASSIWALA® এর লস্যির স্বাদ এখনো জিভে লেগে আছে।

Post Copied From:Peejush Kar‎>Travelers of Bangladesh (ToB)

জয়পুর

জয়পুর আমার দেখা সবচেয়ে উন্নত শহর রাজস্থানের মধ্যে। হাজার-হোক মেট্রো সিটি বইলা কথা। রাতের অন্ধকারে যখন ষ্টেশন এ নামলাম তখন ও দিনের মত লোকজনে ভরপুর জয়পুর জংশন। রাজস্থানের বেশীরভাগ স্টেশন এই আমি দ্রুত গতির ওয়াই ফাই পেয়েছি জয়পুর ও তারপর ব্যতিক্রম নয়। ৭ প্লাটফর্ম এর বিশাল এক ষ্টেশন। জয়পুরের আরো বেশি যা ভাল্লাগছে মেট্রো রেল। কম খরচে শহরের এক মাথা থেকে আরেক মাথা পর্যন্ত যাওয়া যায়। পিংক সিটি নামের সার্থকতা পুরোপুরি বুঝা যায় চারপাশের দেওয়াল , বাড়ি ঘরের রঙ দেখে। লোকাল পরিবহন বলতে বাস, অটো আছে। এতো সুন্দর সাজানো গোছানো শহর যে এমনি ঘুরতেও ভাল্লাগে। জয়পুরে উবার, জুগনো, ওলা সব কিছু আছে সার্ভিস ও খুব ভালো দেয়। খাওয়া দাওয়া করার জন্য রেল স্টেশন এর সাথেই বাঙালি হোটেল আছে। খাবারের স্বাদ ও মান খুবি খুবি ভালো। স্টেশনের আসে পাশেই ৪০০-৬০০ রুপিতে ডাবল বেড এর ভালো হোটেল পাওয়া যাবে থাকার জন্য। জয়পুরে ঘুরার মত অনেক জায়গা আছে। আমার প্ল্যান এ জয়পুরের জন্য ১ টা মাত্র দিন এ বরাদ্দ ছিল। জয়পুরের আসার পর আমি বুঝলাম ১ দিনে কিছুই হবে না তাই জয়পুর থেকে যোধপুর-জয়সাল্মির হয়ে আমি আবার জয়পুর আসি। প্রথমেই যাই আমের দুর্গে। জয়পুর শহর থেকে ভালোই দূরে দুর্গ টা। ভালো হয় লোকাল বাস এ গেলে। দুর্গে যাওয়ার পথেই জল মহল চোখে পরবে দুর থেকে দেখতেই জল মহল সুন্দর লাগে। আমের দুর্গে নেমে প্রথমেই মনে হয়েছে গাইড নি। কিন্তু গাইড ব্যাটা এতো এতো প্যাঁচাল পারে যে শেষে বিরক্ত ধরে যায় ( পূর্ববর্তী অভিজ্ঞতার অবলম্বনে)। বুদ্ধি হচ্ছে নেট থেকে অডিও গাইড নামানো। দুর্গের যেখানেই দেখবেন অডিও গাইড নাম্বার তখন শুধু মোবাইল থেকে তত নাম্বার ফাইল টা প্লে করবেন। গাইড এর খরচ এ বেচে গেল। দুর্গে টা অনেক দুর থেকে প্রাচীর দিয়ে ঘেরা। দুর্গের ঢোকার পথ টা একটু অন্য রকম। আসলে পথ টা হাতিদের চলাচলের জন্য বানানো হয়েছিল। এখন ও প্রতিদিন সকালে হাতি চলাচল করে ওই রাস্তা দিয়ে দুর্গের ভিতরে। আপনি চাইলে হাতির পিঠে করেও দুর্গের ভেতর যেতে পারবেন। দুর্গের সামনে একটা লেক এর মত আছে। লেক এর মধ্যে একটা বাগান আছে। ঘটনা হচ্ছে লেকের ভিতরের বাগানের ভেতরের নকশা, দুর্গের ভেতরের ছোট বাগানের নকশা, শীষ মহলের বিপরীতের একটা দরজার নকশা হুবহু একই তিন জায়গাতেই একই নকশা আঁকা পার্থক্য শুধু নকশার সাইজে। দুর্গের ভিতরের বেশীরভাগ দরজা চন্দন কাঠের তৈরি। ওই সময় বাথ ট্যাব এর চিন্তা কিভাবে তাদের মাথায় আসছে জানি না কিন্তু দুর্গের ভেতর রানীদের গোসল করার জন্য বাথ ট্যাব এর মত আছে। তার পাশে গরম পানির ব্যবস্থা আছে। রানীরা এতো ভারি ভারি কাপড় এবং গয়না পড়তো যে তাদের চলা ফেরার করতে অসুবিধা হত এজন্য পালকির মত দুই চাক্কার বাহন আছে। শীষ মহলের উপরে আয়না এমন ভাবে ফিট করা যে তাতে আলো ফেললে তারার মত দেখা যায়। রানি নাকি রাজার কাছে আবদার করতো তাদের শোবার ঘর থেকে তারা দেখার। এজন্য ছাদে আয়না এমন ভাবে ফিট করা যাতে আলো পরলে তারার মত মনে হয়। সবাই যখন ছাদের দিকে মোবাইলের টর্চ মারে তখন সত্যি হাজার হাজার তারা মনে হয়। আমের দুর্গ ও অনেক বড়। অনেক সময় নিয়ে দেখলে মজা পাবেন। আমের প্যালেস এ ঢুকার দরজার উপরে একটা মাত্র জানালা আছে। রাজা যখন যুদ্ধ থেকে ফিরতও তখন রানি ওই জানালা দিয়ে রাজা কে স্বাগতম জানাতও। অডিও গাইড না শুনলে এসব জিনিস মিস করবেন। আমের দুর্গ এর পাশেই কিছু ঘরবাড়ি আছে। তারা নিজেদের মান সিঙ্ঘ এর উত্তরসূরি দাবি করে। আর সামনে যে দুর্গ দেখা যায় ওটা জয়গারহ দুর্গ। আমের দুর্গ থেকে জয়গারহ দুর্গ সুরঙ্গ দিয়ে যাওয়া যায়। এছাড়াও আর একটা সুরঙ্গ বন্ধ করে দেওয়া। আরেকটা জিনিস মাথায় রাখা জরুরী টিকেট দুইবার চেক হয়। প্রথম বার চেকিং এর পর ফালায় দিলে শেষে বিপদে পরবেন। আমের দুর্গ থেকে ফেরার পথেই রাস্তায় নেমে জল মহল দেখে নিতে পারেন। লেখা বড় হয়ে যাচ্ছে তবু জয়পুরের গল্প শেষ হচ্ছে না…………… চলতে থাকুক।

(চলবে)

Post Copied From:নুরুল গোফরান‎>Travelers of Bangladesh (ToB)

আজমীর শরীফ, রাজস্থান

হযরত খাজা মইনুদ্দিন চিশতি (র:) এর মাজার যা খাজা বাবার মাজার নামে বেশি পরিচিত। জাতি ধর্ম নির্বিশেষে প্রতি বছর লক্ষ লোক এখানে আসে। ১১৯৪ সালে হিন্দু রাজা পৃথিরাজ চৌহান কে মুহাম্মদ ঘুরী তরাইনের যুদ্ধে পরাজিত করার পর ইসলাম ধর্ম প্রচারের জন্য খাজা মইনুদ্দিন চিশতি (র:) আজমীর গমন করেন। প্রতি বছর ১-৬ রজব তার ওফাত দিবসে এখানে ওরশ অনুষ্ঠিত হয়।
কলকাতা বাস/ট্রেন/এয়ার এ আসবেন; কল্কাতা হতে ট্রেনে আজমীর ৩৪ ঘন্টা লাগবে (অনন্য এক্সপ্রেস) অথবা কলকাতা টু জয়পুর এয়ারে এসে ট্যাক্সিতে আজমির ১২৫ কিমি (জয়পুর হতে আজমির বাস ৪ ঘন্টা লাগে) অথবা দিল্লি এয়ারে/ট্রেনে এসে দিল্লি হতে আজমির ট্রেন যায় ৫ ঘন্টা লাগে। থাকার জন্য আজমিরে অনেক মধ্যম মানের হোটেল আছে। আজমিরে পাহাড়ি লেক আনা সাগর ঘুরতে ভুলবেন না, জয়পুর হতে আজমির রোডে গেলে মরুভূমির মত পরিবেশ দেখবেন।

Post Copied From:A Al Mamun Rony‎>Travelers of Bangladesh (ToB)

অ্যাম্বার ফোর্ট, জয়পুর

ছবির মত সাজানো শহর জয়পুর যেটা গোলাপী শহর নামে পরিচিত। এইই পিংক সিটির ভেতরে ‘আমবার প্যালেস’। মহাসড়কের দুই পাশে বিশাল উঁচু পাহাড়। পাহাড়গুলো মার্বেল পাথরে ভর্তি। বলা যায়, পাথরের পাহাড়। আর এই পাথরের পাহাড় খোদাই করে তৈরি করা হয় ‘আমবার প্যালেস’। দূর থেকে পাহাড়চূড়ার এই প্যালেস দেখলে মন জুড়িয়ে যায়। পাহাড়চূড়ায় ওঠার জন্য তৈরি করা আছে সিঁড়িযুক্ত আঁকাবাঁকা বহু পাকা সড়ক। পাহাড় খোদাই করেই এই সড়ক তৈরি করা হয়। দেখা গেল, শত শত বিদেশি পর্যটক এই প্যালেস দেখতে পাহাড়ে উঠছেন হাতির পিঠে চড়ে। পর্যটকদের প্যালেস ঘুরে দেখানোর জন্য সেখানে লাল কাপড়ে সাজানো বৃহদাকৃতির হাতি রয়েছে শতাধিক। এ ছাড়া এখানে রয়েছে বিশাল একটি হ্রদ। তার তিন পাড়ে মসজিদ আকৃতির পাঁচ-ছয়টি গম্বুজ। সেখানে হাজার হাজার কবুতর উড়ে বসে।
ঢাকা হতে কলকাতা বাস/ট্রেন/এয়ার
কলকাতা হতে ট্রেন/এয়ারে জয়পুর,রাজস্থান
শহর থেকে খুব কাছেই ফোর্ট, থাকার জন্য ভাল হোটেল জয়পুরে প্রচুর।
আজমির শরীফ জয়পুর হতে মাত্র ১২৫ কিমি।।

Post Copied From:A Al Mamun Rony‎>Travelers of Bangladesh (ToB)

ইন্ডিয়া ট্রিপ- দিল্লি, আজেমর, জয়পুর, আগ্রা এবং কলকাতা

প্রথমেই দুঃখিত যে খরচের বিস্তারিত হিসাব দিতে পারছি না বলে। ফ্যামিলি মেম্বারসরা গিয়েছি বলে ওভাবে হিসাব রাখা সম্ভব হয় নাই। আমরা ঢাকা থেকে দিল্লি এবং কলকাতা থেকে ঢাকার প্লেনে আসা যাওয়া করেছি। বুকিং ডট কম থেকে সব হোটেল বুক করেছি এবং পরে স্নংশ্লিষ্ট হোটেল এর সাথে মেইল করে রি-কনফার্ম করে নিয়েছি। প্লেন এবং ট্রেনের টিকেট ঢাকা থেকেই করে নিয়ে গিয়েছি।

ডে-১- দিল্লিতে পোছাই দুপুরের দিকে। আমাদের জন্য আগে থেকেই এয়ারপোর্ট’এ ট্যাক্সি ছিল। হোটেল পর্যন্ত পার ট্যাক্সি(০৪ জন এর) ৭৫০ রুপি সাথে ওদের পার্কিং চার্জ দিতে হয়েছিল। ট্যাক্সি বলার সময় ল্যান্ডিং এর সময় মাথায় রেখে দেড় ঘন্টা পরের টাইম দেয়া ভাল। দিল্লিতে স্টেশানের কাছে অনেক বাজেট হোটেল আছে। আমরা হোটেল এলেগেন্টস’এ ছিলাম। ম্যানাজার খুবই হেল্পফুল। অনেক মেইল চালাচালি করে এয়ারপোর্ট পিক আপ এর জন্য গাড়ির কথা বলে নিয়েছিলাম। হোটেলের অবস্থা টাকার তুলনায় বেশ ভাল। নিচে কাউণ্টারে রুপি ভাঙ্গানো যায়। এবং সেটার রেট এয়ারপোর্ট থেকে অনেক ভাল। হোটেল থেকেই সেদিন ৮ ঘণ্টা ৮০ কিঃমিঃ এর জন্য ট্যাক্সি করে দিয়েছিল। ভাড়া ২০০০ রুপি। ঘুরে আসলাম হুমায়ুন টম্ব। চমৎকার লেগেছিল। ওখান থেকে কাছেই নিজাম উদ্দিনের মাজার’এ গিয়েছিলাম। পরে রাতে শপিং এরিয়াতে ঘুরাঘুরি করে খাওয়া শেষে গিয়েছিলাম ইন্ডিয়া গেট। দেখে মনে হলো রাতে এসেই ভাল করেছি। দিনে হয়ত এতো সুন্দর লাগতো না। হোটেলে ফিরে সেদিনের মতো রেস্ট। হোটেল ডেস্ক থেকে পরের দিনের জন্য গাড়ির ব্যবস্থা আগেই করে রেখেছি। ১০ জনের ক্যাপাসিটির গাড়ি ৮ ঘন্টা ৮০ কিঃমিঃ এর জন্য ৪৫০০ রুপি।

ডে-২- কোথায় ঘুরতে হবে সেটা আগেই নেটের সাইটগুলি থেকে বেছে নিয়েছিলাম। যেহেতু গাড়ি ভাড়ার ক্ষেত্রে সময় এবং দুরত্ত দুটাই ইমপর্টেন্ট তাই নিজে থেকে ছক বানিয়ে নেয়া বেটার। তা নাহলে ড্রাইভার উলটাপালটা চালিয়ে বেশি সময় নিয়ে অতিরিক্ত চার্জ করবে। আমরা শুরু করেছি কুতুব মিনার থেকে। এরপর লোটাস টেম্পল, জামে মসজিদ এবং শেষে রেড ফোর্ট অথবা লাল কেল্লা। লাল কেল্লায় বিকালে প্ল্যান করলে ভাল। বিশেষ করে যারা রাতে ওখানে লাইট এবং লেজার শো দেখতে চান তাদের জন্য। সব শেষ করে খেতে চলে

গিয়েছিলাম ম্যাকডোনাল্ডস’এ। একদিনে এর থেকে বেশি দেখা সম্ভব হলো না। কিন্তু দেখার আরো অনেক কিছু আছে দিল্লিতে। অন্তত ৩ দিন থাকলে ভাল করে দেখা যাবে মনে হল।

ডে-৩- সকালে ভোরে আজমিরের ট্রেন ধরার জন্য হোটেল থেকে আগে ঠিক করে রাখা ট্যাক্সি চড়ে স্টেশান চলে গেলাম। কুলির অনেক উৎপাত । পরোয়া না করে নিজে লোকজন কে জিজ্ঞেস করে নির্দিষ্ট প্ল্যাতফর্মে চলে গেলাম। ট্রেন একদম লেট করেনি। দুপুরের মধ্যে আজমের চলে গেলাম। ওখানে আগে থেকে যোগাযোগ করা খাদেম ছিল। তার বাসায় গিয়ে ঊঠলাম। চমৎকার খাওয়া দাওয়ার আয়োজন ছিল। পরে গেলাম হযরত খাজা মাইন ঊদ্দিন চিশিতির মাজারে। জিয়ারতের ইচ্ছা থাকলে সরল মনে সেটা করে আসাই ভাল। ওখানে গেলে অনেক কিছুই ভাল লাগবে না। অনেক বিধর্মিয়রাও যায় সেটা যার যার ব্যাপার। কিন্তু কোন কিছু নিয়ে তর্ক না করাই ভাল। বিকালে রেস্ট করে গেলাম আনা সাগর। ওখানে গিয়ে মন জুড়িয়ে গিয়েছিল। ওখানেও সম্রাট শাহাজানের কিছু কাজ চোখে পড়বে। দরগা থেকে যেতে ২০ মিনিটের মত লাগে।

ডে-৪- সকালে আরেকবার মাজার জিয়ারত করে পরদিন খাদেমের ঠিক করে দেয়া গাড়িয়ে জয়পুরের উর্দ্যেশে যাত্রা করলাম। খাদেম এর ব্যবস্থাপনায় থাকা খাওয়ার চমৎকার ব্যবাস্থা থাকে। এর জন্য কোন নির্দিষ্ট চার্জ নাই। যার যা খুশি দিয়ে আসে। কিছু না দিলেও কিছু বলবেন না। চমৎকার এক্সপ্রেস ওয়ে দিয়ে ৩ ঘন্টা তেই পৌছে গেলাম জয়পুর। প্রাইভেট গাড়ি ছাড়াও বাস অথবা ট্রেনে সহজেই ওখান থেকে জয়পুর যাওয়া যায়। হোটেল নিয়েছিলাম জল মহলের কাছেই। ছাদে থেকেই জল মহল দেখা যায় । বিকালে শপিং এবং শহর দেখার জন্য বের হয়েছিলাম। ওখানে মনে হয় প্রত্যেক লোকই ফ্রড। ড্রাইভার নিয়ে যাবে তার পছন্দের যায়গায়। দাম চাইবে ইচ্ছা মত। প্রচুর বার্গেন করতে হবে শপিং এর জন্য। ১/৪ দাম দিয়ে শুরু করা বেটার। রাতে আবার ম্যাকডোনাল্ডস।

ডে-৫- সকালে ভোরে আগে থেকে হোটেলের ঠিক করে রাখা ট্যাক্সি তে আগ্রার উর্দ্দেশ্যে ট্রেনে চেপে বসলাম। আগ্রাতে গাইড সহ গাড়ি ঠিক করা ছিল। সারাদিনের জন্য গাইড সহ ১০ জনের এসি গাড়ি ৭০০০ রুপি ছিল। আগ্রা এবং জয়পুরে বেশি গরম। এসি গাড়ি না হলে একটু

কষ্ট হয়ে যাবে। গাইড নিয়ে গেল তাজমহল। টুরিস্ট রেটেই টিকেট করেছি। অনেকে কলকাতার বলে লোকার টিকিট করতে চায়। বাট সেটা রিস্কি। অনেক সময় ধরা পড়ে যাবার পসিবিলিটি থাকে। তাজমহল দেখে আগের সব দেখা ম্লান হয়ে গেছে। কি যে সুন্দর সেটা শুধু দেখেই অনুভব করা যাবে, বর্ণনা করা যাবে না। তাজমহল থেকে বের হয়ে গেলামা আগ্রা ফোর্ট। যেখানে শাহাজান মৃত্যুর আগ পর্যন্ত বন্দি ছিলেন। সেখান থেকে বের হয়ে লানচ শেষে গেলাম আকবর’স টম্ব’এ। সময়ের অভাবে এর থেকে বেশি দেখা সম্ভব হয় নি। বিকালের ট্রেনে আবার জয়পুর ফিরে এলাম।

ডে-৬- সকাল সকাল ব্রেকফাস্ট শেষে গাড়ি নিয়ে বেরিয়ে গেলাম। প্রথমেই আম্বরস প্যালাস। শহর থেকে ৩০ মিনিটের মত টাইম লাগে। উপরে ঊঠার জন্য হাতি এবং গাড়ি আছে।। বাজেট অনুযায়ি চুজ করে নেয়া ভাল। ভিতরে গেলে শিস মহল ছাড়াও দেখার জন্য অনেক কিছু আছে। উপর থেকে চারপাশের দৃশ্যগুলাও বেশ সুন্দর। ওখানে বেড়াতে ২/৩ ঘন্টা লেগে যাবে। ওখান থেকে ফেরার পথে জল মহলের থেকে একটু দূরে দাঁড়িয়ে ফটো তুলে আসা যায়। অনেক বছর ধরেই ওখানে আর যাওয়া যায় না। এরপর গেলাম জন্তর মন্তর। এবং সিটি প্যালেস। কাছেই হাওয়া মহল আছে। বাইরে থেকে ফটো তুলে নিয়েছি। ভিতরে আর যাওয়া হয় নি। সিটি প্যালেস টা দেখার মত। শেষে পিঙ্ক সিটিতে লাঞ্চ করে এয়ারপোর্ট চলে গেলাম। সন্ধ্যার ফ্লাইটে চলে গেলাম কলকাতা। চেক ইন করলাম নিউমার্কেটের কাছে হোটেল ডি কে ইন্টারন্যাশানাল’এ।

ডে-৭- সারাদিন শপিং। সন্ধ্যায় গিয়েছিলাম কলেজ স্ট্রিটে কলকাতার নিলখেতে। চারদিকে বই আর বই। ওখান থকে গেলাম সাঊথ সিটি মল। বেশ দূরে ব্রান্ড শপের মার্কেট। ওখানকার থিয়েটারে মুভি দেখে বাইরে ডিনার করে আবার হোটেল। পর দিন শান্তিনিকেতন যাবার জন্য গাড়ি করে আসলাম।

ডে-৮- প্রায় ৪ ঘন্টা ট্রাভেল করে শান্তিনগর পৌছালাম। দেখার কিছুই নাই। গাইড আছে প্রচুর । তারা বিশ্ববিদ্যালয় ঘুরিয়ে দেখায়। তাল গাছ এক পায়ে দাঁড়িয়ে……এক পায়ে দাঁড়িয়ে থাকা তালগাছটা এখনো আছে।(যদি ওদের কথা সত্যি হয়) ওটার নিচে এবং আশেপাশে গাছের নিচে অনেকের পড়ালেখা চলছে। একটা মিউজিয়াম আছে। সময়ের জন্য যাওয়া হয় নাই। অল্প কিছুক্ষন থেকেই চলে এলাম। অনেকের ভাল না লাগলেও আমার ভাল লেগেছে। ফিরে

বিকালে আবার শপিং। রাতে আশেপাশে একটু হাটাহাটি করলাম। পার্ক স্ট্রিটে বেশ কিছু ভাল খাবার দোকান এবং বার আছে। সাথে আছে শাড়ির কিছু ব্রান্ড শপ।

ডে-৯। আর করার কিছু নাই। বিকালে ফ্লাইট। তার আগে ভিক্টরিয়া মেমোরিয়াল আর রেড কোর্সে যাবার জন্য বের হলাম। রেড কোর্সে গিয়ে দেখলাম বন্ধ। পরে আর মেমোরিয়ালও না যেয়ে ফেরত আসলাম। ফেরার জন্য তৈরি হলাম। ৩০০ রুপিতে ট্যাক্সি করে এয়ারপোর্ট ফিরলাম। সন্ধ্যার ফ্লাইটে ফিরে এলাম ঢাকা।

নোটসঃ

১। আগে থেকে ওয়েদার এর খবর নিয়ে যায়া ভাল।

২। দিল্লি মেয়েদের জন্য নিরাপদ নয়। অবশ্যই একা ট্রাভেল করা যাবে না। রাতে বের না হওয়া ভাল। যেখানেই যাবেন গ্রুপে যাবার চেষ্টা করুন

৩। সব যায়গাতেই ধাপ্পাবাজ রা আছে। নিজের বুদ্ধিতে ওদের এড়িয়ে চলতে হবে।

৪। কলকাতা ছাড়া অন্য যায়গায় সিম কার্ড নেয়া বেশ যামেলা। পাসপোর্টের ফটোকপি, নিজের ছবি এবং সাইন লাগে। এক্টিভেট হতে ২-৫ দিন পর্যন্ত লেগে যেতে পারে।

৫। সব যায়গাতেই গাড়ি ভাড়া মোটামুটি ঠিক করা রেট আছে। সেটা জেনে নিন।

৬। কোথায় যাবেন তার প্রায়োরিটি ঠিক করে নিন (ইন্টারনেট থেকে)