খাগড়াছড়ির রিসং ঝর্না, আলুটিলা গুহা, জেলা পরিষদ পার্ক, ঝুলন্ত ব্রীজ, বৌদ্ধ মন্দির, হার্টিকালচার পার্ক, শতবর্ষী বটগাছ, দেবতার পুকুর এবং হাতিমাথা । 

তিন দিন চার রাত সময় নিয়ে ঘুরে আসতে পারেন সাজেক এবং খাগড়াছড়ির রিসং ঝর্না, আলুটিলা গুহা, জেলা পরিষদ পার্ক, ঝুলন্ত ব্রীজ, বৌদ্ধ মন্দির, হার্টিকালচার পার্ক, শতবর্ষী বটগাছ, দেবতার পুকুর এবং হাতিমাথা ।
3500 টাকার ভিতরেই সম্ভব। ঢাকা থেকে রাতের খাগড়াছড়ির বাসে উঠে পড়ুন। যদি গ্রুপে লোক কম হয় তাহলে বাঘাইহাটের বাসে যেতে পারেন। 620/- ভাড়া। এস আলম, শান্তি, ঈগল পরিবহন যায় ( শান্তির সার্ভিস ভালো লাগে নাই)। ৮ টার দিকেই পৌছে যাবেন বাঘাইহাট। যদি গ্রুপে লোক বেশি থাকে তাহলে দীঘিনালা (580/-) বা খাগড়াছড়ি (520/-) নেমে চাঁদের গাড়ি, সি.এন.জি বা মোটরসাইকেল ঠিক করতে পারেন। আমরা দীঘিনালা থেকে ঠিক করছিলাম 6000/- টাকায়। হাঝাছড়া ঝর্না, সাজেক ঘুরিয়ে পরের দিন খাগড়াছড়িতে রিসাং ঝর্না, আলুটিলা,
জেলা পরিষদ পার্কের ঝুলন্ত ব্রীজ, বৌদ্ধ মন্দির, হার্টিকালচার পার্ক ঘুরাবে ( রিজার্ভ করার সময় ঠিক করে নিন ড্রাইভারের থাকা খাওয়ার বিষয়টা। থাকা খাওয়ার জন্য ওরা সাধারণত 500 টাকায় রাজি হয়। যদিও অনেক বেশি চাইতে পারে)। প্রথমেই আমরা গিয়েছিলাম হাঝাছড়া ঝর্না। মেইন রাস্তা থেকে একটু ভিতরে। ঝর্ণার সৌন্দর্যে মুগ্ধ হতে বাধ্য। ঝর্নাটা নিরাপদ। একদম পানি পড়ার নিচে পর্যন্ত যেতে পারবেন। ঝর্ণার বাম পাশ দিয়ে পাহাড়ের উপর উঠা যায়। যেখান থেকে ঝর্না নিচে পড়ছে। ঝর্নার পানিতে গোসল, দাপাদাপি করে ফিরে আসুন চাঁদের গাড়িতে। পাহাড়ি পেপে, কলা, ডাব পাওয়া যায়। দরদাম করলে কমেই পাওয়া যায়। গাছপাকা হওয়ায় বেশ মিষ্টি। (যারা সরাসরি বাঘাইহাট নামবেন তারা লোকাল চাঁদের গাড়িতেই ঝর্নায় পারবেন। ঝর্না দেখা শেষ হলে আবার বাঘাইহাট ফিরে আসুন। বাঘাইহাট বাজার থেকে লোকাল চাঁদের গাড়ি সাজেক যায় ভাড়া 110/- টাকা করে।) সকাল 10.30 এবং বিকাল 3.30 এ আর্মি এসকর্ট চাঁদের গাড়িগুলোর সাথে যায়। এই টাইমেই যেতে হবে রিজার্ভ গাড়িগুলোর । 10.30 এর আগেই হাঝাঝড়া শেষ করে প্রথম এসকর্টেই সাজেক। সাজেক যাওয়ার রাস্তা পাহাড়ি রোলার কোস্টার টাইপ রাস্তা। আশেপাশের ছোট আদিবাসী বাড়ি, রোদের সাথে মেঘের খেলা মনোমুগ্ধকর। যখন সাজেকের কাছাকাছি পৌছে যাবেন আকাশে মেঘ থাকলে দেখতে পেতে পারেন শুধু সাজেকের উপর রোদের আলো পড়ছে অন্য দিকে নেই কখনও উল্টোটা। মনে হবে কোন এক স্বর্গীয় আলো। 1.30 ঘন্টার যাত্রা শেষে পৌছে যাবেন সাজেক। আমাদের সাজেকে ঢোকার মূহুর্তটা অসাধারণ ছিল। ঢোকার সাথে সাথেই বৃষ্টি হয় নাই তারপরেও মাথা ভিজে গেছিল মেঘের কারনে। অবর্ণনীয় অনুভূতি। সাজেকে পৌছেই কটেজ ঠিক করে নিন। রাস্তার ডান পাশের রিসোর্ট বা কটেজ গুলো নিলে ভোরের ভিউটা বেশি ভাল পাবেন। উচু এবং শেষের দিকের কটেজ বেশি ভাল হবে। কটেজ ভেদে রুম পাবেন 600 টাকা থেকে। ঘুরেফিরে দরদাম করে নিলে কমে পাওয়া যায়। বিদ্যুৎ এবং পানির সমস্যা আছে সাজেকে। রিসোর্ট এ কথা বলে নেওয়া ভালো হবে। কটেজে ফ্রেশ হওয়ার পরে খাওয়ার জন্য বেরিয়ে পড়ুন। মনটানা রেস্টুরেন্টে খেতে পারেন মান ভালই। তারপর কংলাক পাড়ার উদ্দেশ্য যাত্রা করুন। আর্মি হ্যালিপ্যাড পর্যন্ত যাবে চাঁদের গাড়ি তারপর থেকে হেটে যেতে হবে। কংলাক পাহাড়ের সবথেকে উচুঁতে উঠতে মিস করবেন না। ওইজায়গার বেন্ঞ্চে বসে চা খাওয়ার অনুভূতি অন্য রকম। আশেপাশের সবকিছু থেকে নিজেকে অনেক উচ্চতায় দেখা অন্যরকম। কংলাক পাড়া ঘুরে ফিরে এসে হ্যালিপ্যাডে বসুন। রাতে সাজেকের রাস্তায় ঘুরতে পারেন। রাতের খাবার হিসাবে ব্যাম্বু চিকেন খেতে পারেন। ব্যাম্বু চিকেনের জন্য আগেই বলা লাগে। দেশী ও ব্রয়লার মুরগীর জন্য দাম আলাদা আলাদা পড়ে। (450-600) এক কেজি সাইজের মুরগী। ভাত, ডাল, সবজি, ভর্তা 60 টাকা প্রতিজন যত খেতে পারেন। পরদিন সকালে কমলক ঝর্ণা থেকে ঘুরে আসুন। তারপর আবারও চাঁদের গাড়িতে করে চলে আসুন খাগড়াছড়ি। দুপুরের খাবারের জন্য বেস্ট হবে সিস্টেম রেস্টুরেন্ট। হাঁসের কালাভুনা টা মিস করবেন না। পাহাড়ী সবজি, বাশের কোরাল ভাজি সহ প্রতিটি আইটেমই সুস্বাদু। চাঁদের গাড়িই আপনাকে নিয়ে যাবে আলুটিলা গুহায়। গেটের বাইরে নয় গাড়ি কিন্তু গুহার সিঁড়ি পর্যন্ত যায়। ছবি তোলার জন্য মশাল নিতে পারেন নাহলে মোবাইলের ফ্লাশই ভাল। মশাল 10/- করে। তারপর রিসং ঝর্নায়। ঢাল বেয়ে স্লিপ দেওয়া যায় কিন্তু বেশ রিস্কি। বৃষ্টি হলে না দেওয়াই ভাল তখন অনেক পিচ্ছিল থাকে। এরপর জেলা পরিষদ পার্কের ঝুলন্ত ব্রিজ। পার্কটাও ঘুরে দেখতে পারেন তারপর বৌদ্ধ মন্দির। তারপর খাগড়াছড়ি শহরেই নামিয়ে দিবে চাঁদের গাড়ি। নারিকেলেবাগানেই হোটেলে থাকতে পারেন।
মোটামুটি মানের হোটেলে ডাবল বেডের রুম 700 থেকে শুরু। খাগড়াছড়িতে কারেন্ট সার্ভিস ভালো না। জেনারেটর সুবিধা শুনে তারপর হোটেলে উঠা ভালো। রাতেও সিস্টেমেই খেয়ে নিন। সিস্টেম বিশেষ কিছু আইটেম পাওয়া যায়। পরের দিন সকালের মিশন হাতিমাথা এবং দেবতার পুকুর। সকালেই ঢাকা ফেরার টিকিট কেটে রাখুন। হাতিমাথা যাওয়ার জন্য সকালে উঠেই হালকা নাশতা শেষে ইজিবাইক বা সি.এন.জি ঠিক করুন জামতলা পর্যন্ত। চেঙ্গি নদীর ঘাট পর্যন্ত 15 টাকা করে নিবে। নৌকায় 5 টাকা দিয়ে পার হয়ে হাটা শুরু করুন। অল্প কিছুদূর যাওয়ার পরেই একটা দোকান পাবেন। পানি নিয়ে নিন। আমরা হাতিমাথা গেছিলাম তখন জোরে বৃষ্টি হচ্ছিল। এই বৃষ্টির ভিতরেই 1ঘন্টা 25 মিনিটের ট্রেকিং শেষে পৌছে গেছিলাম হাতিমাথা। বৃষ্টি না হলে আরও কম সময় লাগবে। 273 টি সিড়ি বেয়ে আমরা যখন উপরে উঠলাম তখন শুরু হয়েছিল ঝড়ো বাতাস। এই বাতাসের ভিতরেই সিড়ি শেষে আরও উপরে যাব ভাবলাম। 1.5 ফিট পিচ্ছিল রাস্তা দুইপাশে খাদ সাথে বৃষ্টি এবং ঝড়ো বাতাস থ্রিলার এর জন্য আর কি লাগে। উচু যায়গা পর্যন্ত উঠছিলাম আমরা। তারপর নেমে আসা। স্থানীয়দের কাছে শুনেছি আরও সামনে নাকি কয়েকটি গ্রাম এবং আর্মি ক্যাম্প আছে। ভবিষ্যতে ইচ্ছা ওই গ্রামে যাব। দেবতার পুকুর যাওয়ার জন্য খাগড়াছড়ি বাসস্ট্যান্ডে এসে খাগড়াছড়ি -রাঙ্গামাটি বাসে মাইঝছড়ি নামতে হবে। ভাড়া 25 টাকা। সিনজিও যায়, 40 টাকা করে ভাড়া। মাইজছড়ি বাজার থেকে সি.এন.জি, মটরসাইকেল এবং মাহেন্দ্রা যায়। মটরসাইকেল 100 টাকা করে ভাড়া।
সিঁড়ি বেয়ে উঠে পড়ুন এবার।
দেবতার পুকুর ঘোরা শেষে খাগড়াছড়ি ফিরে আসুন। তারপর সন্ধ্যায় খাগড়াছড়ি শহরটা একটা চক্কর দিয়ে রাতের খাবার খেয়ে বাসে ঢাকা। রাতের অধিকাংশ বাসই রাত 9 টায় ছাড়ে।
4.00-5.00 দিকে পৌছাবেন।
হ্যাপি ট্রাভেলিং।

Post Copied From:

Soaib Safi‎ t> Travelers of Bangladesh (ToB)