ভাসু বিহার

স্থানীয়ভাবে নরপতির ধাপ নামে পরিচিত। মাটি চাপা পড়ে থাকা উঁচু টিলা আকৃতির এই এলাকা এক সময় ছিল বৌদ্ধ বিহার। চীনা পরিব্রাজক হিউয়েন সাং’য়ের বিবরণে ভাসু বিহারের উল্লেখ আছে। ৬৩৯-৬৪৫ খৃষ্টাব্দে তিনি এ জায়গা পরিদর্শন করেন বলে জানা যায়।
ইতিহাস বলে সে সময়ে তিনি বিহারের সাতশত ভিক্ষুকে পড়ালেখা করতে দেখেছিলেন। তাঁর বিবরণের উপর ভিত্তি করেই স্যার আলেকজান্ডার কানিংহাম ভাসুবিহারকে বৌদ্ধ বিহার হিসেবে সনাক্ত করেন।
ভাসু বিহারের নির্মাণশৈলী অসাধরণ। সর্বপ্রথম এখানে প্রত্নতাত্ত্বিক খনন কাজ শুরু হয় ১৯৭৩-৭৪ সালে। টানা তিন বছরের খননের ফলে জায়গাটিতে দুটি মাঝারি আকৃতির বিহার এবং একটি মন্দিরের স্থাপত্তিক কাঠামো আবিস্কৃত হয়। আরও মেলে প্রচুর পুরানো নিদর্শন।
দুটি বিহারের মধ্যে একটি অপেক্ষাকৃত বড়, অন্যটি ছোট। বড় বিহারের আয়তন পূর্ব-পশ্চিমে ৫৬ মিটার এবং উত্তর-দক্ষিণে ৪৯ মিটার। এর দক্ষিণ পাশের কেন্দ্রস্থলে প্রবেশ পথ এবং চারপাশে ৩০টি ভিক্ষু কক্ষ আছে।
ভূমি পরিকল্পনা ও স্থাপত্য কৌশলে বড়টির অনুরূপ ছোট বিহার । এর আয়তন পূর্ব-পশ্চিমে ৪৬ মিটার ও উত্তর-দক্ষিণে ৪৯ মিটার। চারপাশে ভিক্ষুদের বসবাসের জন্য ২৬টি কক্ষ এবং কক্ষগুলোর সামনের চারপাশে ঘোরানো বারান্দা আছে। পূর্ব পাশের কেন্দ্রস্থলে এর প্রবেশ পথ।
বিহার দুটির কাছেই উত্তরমূখী প্রত্নস্থল হচ্ছে একটি মন্দির। এর আয়তন পূর্ব-পশ্চিমে ২৭ মিটার এবং উত্তর-দক্ষিণে ৩৮ মিটার। মন্দিরের কেন্দ্রস্থলে উঁচু বর্গাকার জায়গাটি মণ্ডপ। চারপাশে ধাপে ধাপে উন্নীত প্রদক্ষিণ পথ।
ভাসুবিহারে বিভিন্ন সময়ে খননের ফলে আট শতাধিক প্রত্নতাত্ত্বিক জিনিসের সন্ধান মিলেছে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল ব্রোঞ্জের ক্ষুদ্রাকৃতির মূর্তি, বিভিন্ন রকম পোড়ামাটির ফলক, পোড়ামাটির সীলমোহর, পাথরের গুটিকা, লোহার রপরেক, মাটির গুটিকা, অলঙ্কৃত ইট, মাটির প্রদীপ ইত্যাদি।
ভাসু বিহারে প্রাচীন মন্দিরের কাঠামো।
ভাসু বিহার খননের ফলে প্রাপ্ত দুটি বিহারের মধ্যে অপেক্ষাকৃত বড় বিহারের উপরিভাগ।
ভাসু বিহার থেকে প্রায় এক কিলোমিটার দূরে বিহার ইউনিয়নে আরেকটি প্রত্নস্থল আছে। ‘বিহার ধাপ’ নামের এ স্থাপনা স্থানীয়ভাবে তোতারাম পণ্ডিতের ধাপ নামেও পরিচিত।
১৯৭৯ থেকে ১৯৮৬ সালের বিভিন্ন সময়ে এ জায়গায় খনন কাজ চলে। পরে ২০০৬-২০০৭ সালে খনন করে এখানে একটি বৌদ্ধ বিহার, একটি বৌদ্ধবিহারের অংশবিশেষ, দুটি বৌদ্ধ মন্দিরের ধ্বংসাবশেষসহ নানান প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শণের সন্ধান মেলে। এই বিহারের দৈর্ঘ্যে ৫৭ মিটার এবং প্রস্থে ৬১ মিটার। মাঝখানে একটি খোলা জায়গার চারপাশে ৩৭টি ভিক্ষু কক্ষ আছে। কক্ষগুলোর সামনে চারপাশে টানা বারান্দা। বিহারের পূর্ব দেয়ালের কেন্দ্রস্থলে এর প্রবেশ পথ।
বিহার ধাপে বিভিন্ন সময়ে খননের ফলে এক হাজারেরও বেশি বিভিন্ন ধরণের প্রত্নতাত্ত্বিক জিনিসের সন্ধান মিলেছে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল ব্রোঞ্জ নির্মিত ধ্যানমগ্ন বুদ্ধমূর্তি, রৌপ্য মুদ্রা, পোড়া মাটির ফলক, পোড়া মাটির সীল মোহর, ধুপদানী, পিরিচ, মাটির পাত্র, অলঙ্কৃত ইট ইত্যাদি। নানান প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন অনুযায়ী এই প্রত্নস্থলের সময়কাল খৃস্টীয় ৭ম-৯ম শতক।
কীভাবে যাবেন
ভাসু বিহারের অপেক্ষাকৃত ছোট বিহার।
বগুড়া শহর থেকে অটো রিকশা নিয়ে সহজে যাওয়া যায় ভাসুবিহার। শহরের ঠনঠনিয় বাস স্টেশন কিংবা সাতমাথা থেকে জায়গাটিতে যেতে অটো রিকশা রিজার্ভ করে নিতে হবে। সকালে গিয়ে দুপুরের মধ্যেই জায়গা দুটি দেখে ফেরা সম্ভব। পথে দেখে নিতে পারেন মহাস্থানগড়ও। এক বেলার জন্য একটি অটো রিকশার ভাড়া ৮শ’ থেকে ১ হাজার টাকা। নিজস্ব গাড়ি নিয়ে গেলে বগুড়া-রংপুর মহাসড়ক ছেড়ে মহাস্থানের গড়ের সড়ক ধরে চলতে হবে।
ঢাকার কল্যাণপুর, গাবতলী থেকে বগুড়া যায় এস আর, টি আর ও ডিপজল পরিবহনের এসি বাস। মহাখালী বাস স্টেশন থেকে যায় শাহ ফতেহ আলী পরিবহনের এসি বাস, ভাড়া ৫শ’ থেকে সাড়ে ৬শ’ টাকা। এছাড়া কল্যাণপুর ও গাবতলী থেকে এস আর, শ্যামলী, হানিফ, কেয়া, ডিপজল ইত্যাদি পরিবহনের নন এসি বাসও যায় বগুড়া। মহাখালী বাস স্টেশন থেকে বগুড়া যায় এস আর, শাহ ফতেহ আলী ও একতা পরিবহনের নন এসি বাস। ভাড়া সাড়ে ৩শ’ থেকে ৪শ’ টাকা।
কোথায় থাকবেন
বগুড়া শহরে ভালো মানের আবাসিক হোটেল আছে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল শহরের ছিলিমপুরে হোটেল নাজ গার্ডেন, ফোন- ০৫১-৬২৪৬৮, ৬৩২৭২। এছাড়া বনানীতে পর্যটন মোটেল, ফোন ০৫১-৬৭০২৪-২৭। চার মাথার মোড়ে হোটেল সেফ ওয়ে, ফোন ০৫১-৬২৬৯০, ৬৬০৮৭। বনানী ফুলদিঘীতে হোটেল সিস্তা, ফোন ০৫১-৬৬৯৬৫, ৬৬৩১০। এসব হোটেলে ৫শ’ থেকে ৯ হাজার টাকায় বিভিন্ন মানের বিভিন্ন রকম কক্ষ রয়েছে।
এখানে যা যা দেখতে পারবেনঃ
১/ প্রায় ৮০০ টির মত শামুখ খোল পাখি (শুধুমাত্র গরমের সময়)
২/ ৩০০ বছরের পুরনো ২ টি মসজিদ , মসজিদ টির ভিতরে অনেক কারুকার্য করা
৩/ বিহারীদের বাড়ি ( বিলাস ভবন স্থাপিতঃ ১৯৪২ )
৪/ বিহার তোতারাম পণ্ডিতের ধাপ যা এক সময় পো শি পো ছিল
৫/ ভাসুবিহার নরপতি রাজার ধাপ
৬/ ইংরেজ সরকার বিরোধী আন্দোলনের প্রধান নেতা প্রফুল্ল চাকী এর বাড়ি ও তার সৃতি সমুহ
৭/ পাকিস্তানের সাবেক প্রধান মন্ত্রী মোহাম্মাদ আলী এর বাড়ি
৮/ ৩০০ বছরের পুরনো ১ টি পাকুড় গাছ
৯/ নয়নাভিরাম নাগর নদী
১০/ এবং অপার সুন্দর গ্রামের দৃশ্য
প্রয়োজনীয় তথ্য
ভাসু বিহার ও বিহার ধাপ প্রত্নস্থল দুটি উম্মুক্ত। সূর্যোদয় থেকে সূর্যাস্ত, যে কোনো সময়ই যাওয়া যায়। সপ্তাহের সব দিনই খোলা থাকে।
বিশেষ দ্রষ্টব্যঃ এখানে সকাল এবং দুপুরের খাবার + ভ্রমন গাইড দেয়া হয়
যদি আপনারা আসেন গ্রুপ ট্যুরে খাওয়া দাওয়া এর জন্য যোগাযোগ করুন
আসার সাত দিন আগে জানাতে হবে
নবাব মোহাম্মাদ আলী খানা বাড়ী

Post Copied From:Khan Md Taufik Hasan‎>Travelers of Bangladesh (ToB)

Leave a Reply

Your email address will not be published.