সেন্টমার্টিন দ্বীপে ক্যাম্পিং!

গত সপ্তাহে ২৭ জনের গ্রুপ ক্যাম্পিং করে এলাম, সেই অভিজ্ঞতার আলোকে কিছু পরামর্শ ও দিকনির্দেশনা :

যাদের এই দ্বীপে ক্যাম্পিং করার ইচ্ছা আছে তারা পড়ে নিতে পারেন, ট্যুর প্ল্যান করতে এই লেখাটা আপনার কাজে দিবে বলে আশা রাখি!

১/ কোন অনুমতি লাগে কিনা?
– নাহ, এমন জায়গায় তাবু সেট করুন যার বিপরীতে কোন রিসোর্ট নেই, তাহলে কারো অনুমতি বা নিষেধাজ্ঞা নিয়ে চিন্তা করা লাগবেনা, কেউ কিছু বলতেও পারবেনা! নৌবাহিনী বা নিরাপত্তাবাহিনীর অনুমতিও লাগেনা! তবে বড় গ্রুপ হলে ট্যুরিস্ট পুলিশকে একটু জানিয়ে রাখতে পারেন!

২/ নিরাপত্তা কেমন?
– এক ট্রাভেলার যখন আমাকে এই প্রশ্নটা করলো তখন আমি উত্তর দিয়েছিলাম, “চুরির ভয় থাকলেও ডাকাতির ভয় নেই!” ব্যাগপত্র একটু ভালমত দেখেশুনে রাখবেন, তাবুর আশেপাশে সবসময় অন্তত একজন হলেও থাকবেন! আমরা ২৭ জন ছিলাম, শুধুমাত্র একজনের ব্যাগ থেকে কিছু মূল্যবান জিনিস হারিয়েছে!

৩/ বাথরুম ও গোসল কোথায় করব?
– ক্যাম্প সাইটের আশেপাশের কোন রিসোর্টের একটা রুম ভাড়া নিয়ে নিন! জরুরি কর্ম সম্পাদনের পাশাপাশি সবাই মিলে যখন ছেঁড়া দ্বীপ বা অন্য কোথাও ঘুরতে বের হবেন তখন রুমে তাবু ও ব্যাগ রেখে যেতে পারবেন! মোবাইল ফোনও চার্জ দেওয়া যাবে! আর হ্যা, এমন রিসোর্ট বেছে নিবেন যেখানে বাইরে এক্সট্রা বাথরুম আছে, এমনটা করলে ১ রুম ভাড়া নিয়ে ২ টা বাথরুম ইউজ করা যাবে, আমরাও এটা করেছিলাম!

৪/ খাবারের দাম কেমন?
– বিভিন্ন রেস্তোরাঁয়য় সকালের নাস্তা সাধারণত ৫০-৬০ টাকায় এবং দুপুর আর রাতের খাবার ১২০-১৫০ টাকায় খেতে পারবেন! রুপচান্দা খেতে চাইলে দাম বেশি নিবে, পোয়া মাছ খেলে কম নিবে- হিসেবটা এরকম আর কি! নিজের পছন্দানুযায়ী!

৫/ নিজেরা রান্না করে খাওয়া যাবেনা?
– এটা একটা প্যারাদায়ক জিনিস, ১০-১২ জন যাবেন, ১/২ জনের উপর সব বোঝা চাপিয়ে দিয়ে বাকিরা গায়ে হাওয়া লাগিয়ে ঘুরে বেড়াবে, এমনটা হলে মিজেরা রান্না না করে বাইরে খাওয়া বেটার! তবে কেউ যদি ১০-১২ জন ট্যুরমেটের জন্য সেক্রিফাইস করতে চায় তাহলে ভিন্ন জিনিস!

তাছাড়া রান্নার সরঞ্জামাদি নিয়ে যাওয়া, হেনতেন অনেক প্যারা আছে, সবাই মিলে যদি এই প্যারা ভাগাভাগি করে নেওয়া যায় তাহলে নিজেরা রান্না করে খেলে খরচ অনেক কমে যাবে, এক্ষেত্রে স্থানীয় কাউকে সার্বক্ষণিক রান্নার কাজে সহযোগিতার জন্য নিতে পারেন!

আমরা মানুষ বেশি ছিলাম, টেকনাফ থেকে মাছ ছাড়া বাকি ২ দিনের বাজার কিনে নিয়ে গেছি, পরিচিত এক রিসোর্ট থেকে রান্নার সরঞ্জাম বিনা ভাড়ায় পেয়েছিলাম, অই রিসোর্টের ২ জন ছেলে আমাদের রান্না-বান্নায় হেল্প করেছে! আমরা যখন গেলাম তখন শীপ বন্ধ ছিল, তাই এটা সম্ভব হয়েছে! এখন এই সুবিধা নাও পেতে পারেন!

৬/ ট্রলারে যাব না শীপে যাব?
– শীপ যদি চলাচল করে তবে শীপে চড়ে যাওয়াকেই আমি বেটার বলব! ট্রলারের কোন ফিক্সড শিডিউল নাই, জোয়ার ভাটার উপর ডিপেন্ড করে,

৭/ খরচ কেমন হবে?
– ঢাকা টু টেকনাফ নন এসি ৯০০ টাকা!
এসি ১৬০০/- টাকা,
টেকনাফ থেকে সেন্টমার্টিন যাওয়া আসা শীপ ভাড়া ৫৫০/- থেকে শুরু, শীপ অনুযায়ী তা ১০০০/১৫০০ ও আছে!

বাকি খরচ আপনি সেন্টমার্টিন কয়দিন থাকবেন এবং কি খাবেন তার উপর নির্ভর করবে!

৮/ শীপ কখন ছাড়ে?
– টেকনাফের দমদমিয়া ঘাট থেকে সকাল ৯:৩০ এর দিকে সেন্টমার্টিনের উদ্দেশ্যে ছেড়ে যায়! বিকেল ৩ টায় সেন্টমার্টিন থেকে টেকনাফের উদ্দেশ্যে ছেড়ে দেয়!

৯/ ক্যাম্প সাইট হিসেবে কোন জায়গা নির্বাচন করলে বেটার?
– আমরা উত্তর বীচে একটা রিসোর্টের পাশে করেছিলাম, রিসোর্টটা আমার পূর্ব পরিচিত ছিল! কিন্তু পশ্চিম বীচে করতে পারলে ভাল হত, তাবুতে বসে সূর্যাস্ত উপভোগ করা যায়! ডিসেম্বর জানুয়ারির ছুটির দিনগুলোতে গেলে পশ্চিম দক্ষিণ কোনায় চলে যেতে পারেন, স্থানীয় কোন বাড়ি দেখে কোন নির্জন জায়গায় তাবু সেট করতে পারেন! কারণ এই সময়ে ট্যুরিস্টের চাপ বেশি থাকে, উত্তএ ও পশ্চিম বীচ লোকে লোকারণ্য হয়ে পড়বে!

১০/ ছেঁড়াদ্বীপে ক্যাম্পিং করা যাবে কিনা?
– ক্যাম্পিং করার জন্য উপযুক্ত পরিবেশ আছে কিনা জানা নেই, কিছুটা নির্জন বলে নিরাপদ কিনা বলা যাচ্ছেনা, ওখানে বাথরুম-গোসলের ব্যবস্থাও অত সুবিধাজনক হবে না!

তবে যাই হোক, সেন্টমার্টিনে আমরা নেক্সট ক্যাম্পিং ট্যুর দিলে ছেঁড়াদ্বীপেই দিতে পারি, খুব ইচ্ছা বাংলাদেশের সর্বদক্ষিণের ভূমিতে অন্তত একরাত ক্যাম্পিং করার!

এসবের বাইরে কিছু জানার থাকলে নক করবেন, নিজের অভিজ্ঞতা থেকে যতটুকু পারি তথ্য দিয়ে হেল্প করার চেষ্টা করব!

ট্যুরে গিয়ে কোন ধরণের হয়রানির শিকার হলে স্থানীয় ট্যুরিস্ট পুলিশের সহায়তা নিন, উনারা খুব হেল্পফুল!

Post Copied From:Sujauddin F. Sohan‎<Travelers of Bangladesh (ToB)

Leave a Reply

Your email address will not be published.