মাত্র ৩ দিনে দার্জিলিং ভ্রমন

২৬.০৩.২০১৭ তারিখ সন্ধা ৮.০০ টায় কল্যানপুর থেকে শ্যামলী বাসে চড়েবসি। রাত ২.০০ টায় বগুড়া Food Village এ আমরা ডিনার করি। সারা রাত বাস জার্নির পর সকাল ৭.৩০ টার দিকে বুড়িমাড়ি সীমান্তে পৌছে ফ্রেস হয়ে সকালের নাস্তা করি। বাংলাদেশ ইমিগ্রেশনের কাজ শেষ করে বর্ডার ক্রস করি ১.০০ টার দিকে। ভারতের ইমিগ্রেশনের ঝামেলা শেষ করতে আরো প্রায় ১ ঘন্টা লেগে যায়। সব ঝামেলা শেষে সীমান্ত থেকে টাকা এক্সচেঞ্জ করে ১১.৩০ টায় শিলিগুড়িরর উদ্দেশ্যে আমাদের যাত্রা শুরু হয়। প্রায় ২ ঘন্টা পরে আমরা যখন শিলিগুড়ি পৌছাই তখন বেলা ১.৩০ হবে।হোটেল CENTRAL PLAZA INTERNATIONAL এ লাঞ্চ করে যত দ্রুত সম্ভব জিপে উঠে পরি। যাত্রা শুরু হয় সেই স্বপ্নের দিকে যে স্বপ্ন বহুদিন ঘুমতে দেয়নি।

এখান থেকেই শুরু হয় আসল রোমাঞ্চ। শিলিগুড়ি থেকে দার্জিলিং যাওয়ার পথে প্রথমেই যে দৃশ্যটা মন কেড়েনিবে তা হল বিশাল বিশাল চা বাগানের বুক চিড়ে চলে যাওয়া রাস্তা যা অপলক দৃষ্টিতে শুধু দেখতেই মন চায়। এর পরেই দেখা মিলবে পাহাড় আর পাহাড়। পাহাড় কেটে তৈরি করা এ সকল রাস্তা যেন সমুদ্রের ঢেউ। রাস্তার দুপাশে বিস্তৃত সুউচ্চ পাহাড়ের বুকের উপর দাড়িয়ে থাকা গাছগুলোই আপনাকে পাগল করে দেওয়ার জন্য যথেষ্ট।(গাছগুলোর নাম এই মুহুর্তে মনে করতে পারছিনা)

এরপর যখন আমাদের জিপ দার্জিলিং শহরে ঢুকতে শুরু করল তখন মনে হচ্ছিল আসলেই আমি কোন স্বপ্নের রাজ্যে চলে আসছি। পাহাড়ের খাদে খাদে পাথর কেটে তৈরিকরা বাড়ি গুলো দেখে মনে হচ্ছিল এ যেন পাহাড়ের চুড়ায় ওঠার জন্য বাড়ি দিয়ে সিড়ি তৈরি করা হয়েছে। সিড়ি যেমন একটার পর একটা উপরের দিকে উঠতে থাকে তেমনি বাড়িগুলো একটার মাথার উপর আরেকটা দাড়িয়ে আছে।

অবশেষে স্বপ্নে ভাসতে ভাসতে সন্ধা ৭.৩০ টার দিকে আমরা আমাদের পূর্ব নির্ধারিত হোটেল HOTEL SWEET HOME INTERNATIONAL এ গিয়ে পৌছলাম। রুমে গিয়ে দ্রুতই ফ্রেস হয়ে ৮.০০ টার দিকে বেড়িয়ে পরলাম শহরটা একটু ঘুরে দেখার জন্য। ১/১.৩০ ঘন্টা শহরে ঘোরাঘুরি করে আবার হোটেলে এসে রাতের খাবার খেয়ে সকাল সকাল শুয়ে পরলাম (যদিও ঘুমতে পারিনি উত্তেজনায়) কারন ভোররাতে যে আবার উঠতে হবে টাইগার হিলে সূর্যোদয় দেখার জন্য।

রাত ৩.৩০ এ ঘুম থেকে উঠে গোসল করে (সারাদিন গোসল করার সুযোগ পাবনা তাই) ৪.০০ টার দিকে Tiger hill এর উদ্দেশ্যে বেরহই সূর্যোদয় এবং কাঞ্চনজঙ্ঘা দেখার জন্য। যদিও আমরা দুটোই দমিস করেছিলাম আকাশে অতিরিক্ত মেঘ থাকায়। কবি গুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ও নাকি এখানে সাতবার এসেও একবারো সূর্যোদয় দেখতে পারেননি। সুতরং আমাদের একবারের চেষ্টা ব্যার্থ হওয়া কোন ব্যাপারই না।

এখানে ব্যার্থ হয়ে আমরা হোটেলে ফেরার পথে “বাতাসিয়ে লুপ”(এখানে আমরা কাঞ্চনজঙ্ঘা দেখি) এবং পৃথিবীর সর্বোচ্চ রেলওয়ে স্টেশন “GHOM” রেলওয়েস্টেশন দেখি যেটি সমতল ভুমি থেকে ৮০০০ ফুট উচ্চতায় অবস্থিত।

অতপর ৯.০০ টার দিকে হোটেলে ফিরে সকালের নাস্তা করে আমরা আবার বেড়িয়ে পরি Japan Temple, Rock Garden, HMI zoo, Tensing Rock (পৃথিবীর প্রথম এভারেস্ট বিজয়ী এডমন্ট হিলারি এই পাহাড়ে ট্রেনিং নিয়েছিলেন), এগুলোর উদ্দেশ্যে। এসব জায়গা ঘুরে আমরা চলে যাই Sent Joseph School এ যেখানে রনবির কাপুরের বিখ্যাত বরফি ছবির শুটিং হয়েছে। Sent Joseph এর পাশেই আমরা Rope Way বা Cable Car এ চড়ি। ক্যাবল কার থেকে নিচের চা বাগানের দৃশ্য গুলো দেখতে খুবই সুন্দর।

সবশেষে আমরা সন্ধার ম্যধে আবার হোটেলে ব্যাক করি। রুমে গিয়ে ফ্রেস হয়ে হাল্কা নাস্তা করে আমরা শপিং করতে বেরহই। শপিং শেষ করে হোটেলে গিয়ে রাতের খাবার খেয়ে সারা রাত ঘুম। পরের দিন সকালে নাস্তা করে আবার শিলিগুড়ি। শিলিগুড়ি ফেরার পথে “মিরিক লেক” দেখতে ভুলবেননা।

খরচের কোন বিবরন দিতে পারলামনা কারন আমরা একটা ট্যুরিজম কোম্পানির আন্ডারে গিয়েছিলাম।

Post Copied From:Emdadul Hoque>Travelers of Bangladesh (ToB)