সেন্টমার্টিন বা কক্সবাজার ভ্রমনের এটিই সব থেকে ভালো সময়

সমুদ্রের প্রতি অন্যরকম একটা টান কেন জানি খুব কাজ করে… আর সেক্ষেত্রে সেন্টমার্টিনের প্রতি টান টা একটু বেশিই…. তাইতো একই বছরে ৩য় বারের মত ছুটে গিয়েছিলাম এই প্রবাল স্বর্গরাজ্যে… হ্যাঁ, উদ্দেশ্য একটাই স্বচ্ছ প্রকৃতি আর নীল দিগন্তের কাছাকাছি আরও একটিবার নিজেকে সমর্পণ করা……
গত ৫.১২.২০১৭ গিয়েছিলাম এই বছরের জন্য সর্বশেষ ট্যুর দিতে…
মজার ব্যাপার ছিল… বছর টা শুরু হয়েছিল এই সেন্টমার্টিন দিয়ে আবার শেষ ও হল এই সেন্টমার্টিনকে দিয়েই……

প্রথমেই বলে রাখি… সেন্টমার্টিন বা কক্সবাজার ভ্রমনের এটিই সব থেকে ভালো সময়… সেন্টমার্টিন যেতে হলে প্রথমে আপনাকে যেতে হবে টেকনাফ লঞ্চঘাটে… ঢাকার শ্যামলী, কল্যাণপুর, গাবতলী, কলাবাগান, ফকিরাপুল, কমলাপুর, সায়দাবাদ সহ বিভিন্ন যায়গা থেকে প্রতিদিনই বিভিন্ন পরিবহনের এসি/ননএসি বাস টেকনাফের উদ্দেশ্যে সন্ধ্যা ৬ থেকে রাত ৮ টার মধ্যেই ছেড়ে যায়.. ননএসি বাসের ভাড়া সিট প্রতি ৯০০ টাকা…এসি বাসে গেলে আপনাকে গুনতে হবে সিট প্রতি ১৫০০-১৭৫০ টাকা। ঢাকা থেকে টেকনাফের দূরত্ব কম বেশি ৪৭০ কিলোমিটার…. পরদিন সকাল ৮ টা নাগাদ পৌছে যাবেন টেকনাফ লঞ্চ ঘাটে…

বাস থেকে নেমেই জাহাজের টিকিট কেটে নেয়াই হবে বুদ্ধিমানের কাজ… টেকনাফ থেকে প্রতিদিনই ৪-৫টি জাহাজ সেন্টমার্টিনের উদ্দেশ্যে ছেড়ে যায়… তবে আবহাওার অবস্থা অনুযায়ী তারতম্য ঘটে… তাই সেন্টমার্টিন ভ্রমণের প্ল্যান করার আগে অবশ্যই আবহাওার পূর্বাভাস দেখে তবেই সিদ্ধান্ত নিবেন… টেকনাফ থেকে প্রতিদিনই এল.সি.টি. কুতুবদিয়া, কেয়ারি সিন্দবাদ, এম ভি গ্রীনলাইন সহ বেশ কিছু জাহাজ সেন্ট মার্টিন যাওয়া আসা করে… তবে ভুল করেও কেউ টাকা বাঁচানোর জন্য ট্রলারে করে সেন্ট মার্টিন যাওয়ার কথা ভাববেন না। জাহাজে বেশ কয়েকটি শ্রেণীর টিকিট রয়েছে… শ্রেণী ভেদে টিকিটের দাম ৫৫০-১৫০০ টাকা পর্যন্ত। তবে ওপেন ডেকে গেলেই আপনি নাফ নদী ও বঙ্গোপসাগরের আসল সৌন্দর্য উপভোগ করতে পারবেন… জাহাজের টিকিট কাটার সময় চেষ্টা করবেন কাউন্টারের লোকদের যত সম্ভব বুঝিয়ে দাম কমানোর… তবে সেটা অবশ্যই জন সম্মুখে নয়… নিজের ব্যাক্তিগত অভিজ্ঞতা থেকে বলছি কাউন্টারের ভেতর দরদাম করে ওপেন ডেকের ৭০০ টাকার টিকিট ৫৫০ পর্যন্ত নামিয়ে আনতে পেরেছিলাম… তবে যারা প্রথমবার সেন্টমার্টিন যাবেন তাদের জন্য বলছি… টিকিট কাটার সময় কেউ যেন বুঝতে না পারে যে এটিই আপনার প্রথম ভ্রমণ… দেখবেন অনেক কিছুই সহজ হয়ে যাচ্ছে…

সবকটি জাহাজ ই সকাল ৯ঃ৩০ এ ঘাট থেকে রওনা হয়ে যাবে… জাহাজ যত সামনে আগাবে নাফ নদী ততই আপনার সামনে তার সৌন্দর্য তুলে ধরবে… আর জাহাজের দুপাশ দিয়ে অজস্র গাংচিল আপনাকে পথ দেখিয়ে নিয়ে যাবে আপনার গন্তব্য পর্যন্ত… জাহাজে অবশ্যই এমন কোন কিছু করা থেকে নিজেকে বিরত রাখবেন যা আপনার জন্য কোন অনাকাঙ্ক্ষিত অভিজ্ঞতার কারন হয়ে দাড়ায়… আপনার জন্য যাবতীয় নির্দেশনা জাহাজেই মাইকিং করে আপনাকে জানিয়ে দেয়া হবে… দুপুর ১২ টার মধ্যেই পৌঁছে যাবেন সেন্টমার্টিন জেটিতে… জাহাজ থেকে নামার সময় অবশই সাবধানতা অবলম্বন করবেন… এরপর চলে যাবেন ব্রিজ ধরে সেন্টমার্টিন বাজারে… মান ও সুযোগ সুবিধা ভেদে অনেক রকম রিসোর্ট গড়ে উঠেছে এখানে… নিজের রুচি ও সামর্থ্য যাচাই করেই বেছে নিবেন… ভাড়া রুম প্রতি ১০০০-৩৫০০ পর্যন্ত… তবে অবশ্যই দরদাম করে নিবেন…

ফ্রেশ হয়ে বেরিয়ে পড়ুন দুপুরের খাবারের জন্য… আগেই বলে রাখি… সেন্টমার্টিন এর খাবারের স্বাদের প্রতি আগে থেকেই অনেক বেশি প্রত্যাশা নিয়ে না আসাই ভালো… নিজের পছন্দ মত বুঝে শুনে খাবার নির্বাচন করবেন… তবে এখানে প্রায় সব খাবারের হোটেলে একটা ব্যাপার দেখা যায়… ভাত মাথা পিছু ৪০ টাকা আনলিমিটেড… তবে সামুদ্রিক মাছের স্বাদ না নিয়ে সেন্টমার্টিন থেকে আসবেননা…

সমুদ্রে নামার আগে অবশ্যই জোয়ার ভাটার সময় জেনে নামবেন… আর অবশ্যই লাল পতাকা যুক্ত যায়গা গুলোয় পানিতে নামা থেকে বিরত থাকবেন… সাঁতার জানা না থাকলে খুব বেশি দূর না যাওয়াই ভাল… চাইলে বীচের উপর রাখা চেয়ার ভাড়া নিয়ে বুক ভরে নিঃশ্বাস নিয়ে কিছুক্ষন হারিয়ে যেতে পারেন সুবিশাল সমুদ্রের মাঝে… বিকালে চাইলে সাইকেল ভাড়া করে বেরিয়ে পরতে পারেন পুরো দ্বীপটি ঘুরে দেখতে… কারণ পায়ে হেঁটে পুরোটা ঘুরে দেখা বেশ কষ্টকর… আর অবশ্যই সূর্যাস্ত মিস করবেননা… হয়তো এটি ই হতে পারে আপনার জীবনের শ্রেষ্ঠ সূর্যাস্ত… রাতের আকাশে কোটি কোটি তারার মেলা বসে সেন্টমার্টিনের আকাশে… জীবনে মনে রাখার মত কিছু সময় যদি আলাদা রাখতে চান… তাহলে বেরিয়ে পড়ুন রাতের আকাশ টা একবার দেখে আসার জন্য… চেষ্টা করবেন পরদিন খুব ভোরে ঘুম থেকে উঠতে… সেন্ট মার্টিনের সূর্যোদয় যেন সৃষ্টিকর্তার আরেকটি উপহার… জেটি থেকে খুব সুন্দর দেখা যায় সূর্যোদয়…

সূর্যোদয় দেখে নাস্তা সেরে বেড়িয়ে পড়ুন ছেড়া দ্বীপের উদ্দেশ্যে। সেন্টমার্টিনে এসে ছেড়া দ্বীপ দেখে না গেলে বলবো এই জীবণে অনেক কিছু দেখা থেকে বঞ্চিত হবেন তাও আবার এত কাছে এসেও….। আর যারা যেদিন আসবেন সেদিনই টেকনাফ ফিরে যাবেন তাদের জন্য ১ মিনিট নিরবতা ছাড়া আর কিছু বলতে পারছিনা….. উপরে যা কিছু বলা হল সব কিছু থেকেই তারা বঞ্চিত হবেন…।

যাই হোক, জেটি থেকে ছেড়া দ্বীপ যাওয়ার ৪টি উপায় আছে…. ট্রলার, গাম বোট, স্পীড বোট এবং পায়ে হেটে…. ট্রলারে যেতে হলে লাগবে কম বেশি ৩০ মিনিট… জন প্রতি লাগবে ১৫০ টাকা…. গাম বোটে যেতে সময় লাগবে ২০ মিনিট আর জন প্রতি লাগবে ২০০ টাকা…..স্পীড বোটে যেতে সময় লাগবে ১০ মিনিট… আর জনপ্রতি ৩০০ টাকা…. যেভাবেই যাননা কেন ছেড়া দ্বীপ ঘুরতে সময় পাবেন ১ ঘণ্টা….আর পায়ে হেঁটে গেলে অবশ্যই ভাটার সময় রওনা হবেন… যদিও সময় বেশি লাগবে…তাও অন্যরকম এক অভিজ্ঞতা নিতে পারেন… অবশ্যই সেখানকার ডাব খেয়ে আসতে ভুলবেননা… এক কথায় অমৃত….৩০-৪০ টাকার ডাবের পানি খেয়ে লাখ টাকার তৃপ্তি পাবেন এটুকু বলতে পারি।… ছেড়া দ্বীপের কাছাকাছি গেলেই দেখবেন স্বচ্ছ পানির তলদেশে নানা রঙের প্রবাল আর ছোট ছোট মাছ……

দুপুরের খাবার শেষে ২ঃ৩০ এর মধ্যে জেটিতে উপস্থিত থাকবেন…। কারন জাহাজ গুলো ২ঃ৪৫ এ একে একে টেকনাফের উদ্দেশ্যে ছেড়ে যাবে… যারা শুধুমাত্র সেন্টমার্টিন ভ্রমণের জন্য আসবেন তারা চাইলে সেন্ট মার্টিন থেকেই ঢাকার টিকিট কেটে নিতে পারেন। জাহাজ বিকাল ৫ঃ৩০ এর মধ্যেই টেকনাফ লঞ্চঘাটে পৌঁছে যাবে…। যারা কক্সবাজার যাবেন তারা ঘাট থেকেই রাস্তা পার হয়ে কক্সবাজারের বাসে উঠে যাবেন… টেকনাফ থেকে কক্সবাজারের ভাড়া ১৫০ টাকা…।

একটা কথা সব সময়ই মনে রাখবেন…। প্রকৃতির এই অপার সৌন্দর্য উপভোগ করতে যেয়ে প্রকৃতির কোন প্রকার ক্ষতি হয় এমন যে কোন প্রকার কাজ থেকে বিরত থাকবেন…। কারন আপনার বা আমার ছোটখাটো অবহেলাও প্রাকৃতিক সম্পদের ক্ষতির কারণ হয়ে দাড়াতে পারে… আর আমাদের সম্পদের ক্ষতি মানে আমাদের নিজেদের ই ক্ষতি…। আর দেশকে যত কাছ থেকে দেখবেন দেশের প্রতি ভালবাসা ততই বাড়বে…।

Post Copied From:

Tariqul Islam Chowdhury Rafi‎ > Travelers of Bangladesh (ToB)

সেন্টমার্টিন ট্যুরের খরচাপাতি; সাথে কিছু গুরুত্বপূর্ণ তথ্য:

ঢাকা/চট্টগ্রাম থেকে যাওয়া আসায় কত খরচ আর কোথায় কত সময় লাগে সে ব্যাপারে লিখব আজকে!

ঢাকা টু টেকনাফ বাস ভাড়া ৯০০ (নন-এসি); ১৫০০-২০০০ (এসি)

টেকনাফ টু সেন্টমার্টিন- যাওয়া আসা ভাড়া ৫৫০ থেকে শুরু, শীপভেদে ১০০০/১২০০ টাকা নিবে! যাওয়া আসার টিকেট একসাথেই কাটা হয়, কবে যাবেন আর কবে ফিরবেন সেটা আগে থেকে বলে দিতে হয়, সেন্টমার্টিনে ১ দিন থাকেন বা ২ দিন থাকেন, ভাড়া একই!

আর কেউ যদি টিকেটে উল্লেখিত তারিখে না ফিরে অন্যদিন ফিরতে চান তাহলে সেটাও সম্ভব, তবে সেক্ষেত্রে সীটের নিশ্চয়তা থাকবেনা!

ঢাকা থেকে টেকনাফগামী বাসগুলো সাধারণত ৭ টা বা ৭:৩০ এ ঢাকা থেকে রওনা দেয়, পরদিন সকাল ৭/৮ টায় শীপের ঘাটে আপনাকে নামিয়ে দিবে, ওখান থেকেই শীপ ধরতে পারবেন! সাধারণত ৯:৩০ মিনিটের দিকে শীপগুলো সেন্টমার্টিনের উদ্দেশ্যে ছেড়ে যায়, ১১:৩০ বা ১২ টার ভেতরে শীপ সেন্টমার্টিনে পৌছে!
বিকেল ৩ টার দিকে শীপ সেন্টমার্টিন থেকে টেকনাফের উদ্দেশ্যে ছেড়ে যায়!

দুপুরে বা বিকেলে টেকনাফ থেকে কোন শীপ সেন্টমার্টিন যায়না, আবার সকালেও সেন্টমার্টিন থেকে কোন শীপ টেকনাফ আসেনা, সব শীপের শিডিউল একই রকম!

শীপ মিস করলে ট্রলারে চড়ে যেতে পারেন, ভাড়া ২০০ টাকা, শুধু যাওয়া কিংবা আসা! টেকনাফ শহর থেকেই ট্রলারগুলো ছাড়ে!

ছুটির দিনগুলোতে আগে থেকেই শীপের টিকেট কেটে রাখা ভাল, অন্যান্য দিন ঘাটেই টিকেট মিলবে!

সেন্টমার্টিনে থাকার খরচ জনপ্রতি ৩০০-৫০০ পড়ে, অর্থাৎ মোটামুটি মানের হোটেল/রিসোর্টে এক রুমের ভাড়া সাধারণত ১২০০-২০০০ টাকা নেয়, এক রুমে ৪ জন থাকা যায়! পিক টাইম বা টানা কয়েকদিন ছুটির দিন থাকলে রুমের ভাড়া আরো একটু বাড়তে পারে!

সেন্টমার্টিনে ৭০-৮০ টাকায় সকালের নাস্তা, ১৩০-১৮০ টাকায় দুপুর আর রাতের খাবার খেতে পারেন সামুদ্রিক মাছ দিয়ে! রুপচান্দা দিয়ে খেতে চাইলে দামটা একটু বেশিই পড়বে! রাতের বেলা বার-বি-কিউ ১৭০-২০০ টাকা পড়তে পারে, গেলে অন্তত এক বেলা এটাও ট্রাই করে দেখতে পারেন!

ছেড়াদ্বীপ যাবেন অবশ্যই, এটা না দেখে ফিরবেন না!

ট্রলারে চড়ে গেলে জনপ্রতি ১৫০ টাকা নিবে ভাড়া, স্পীডবোট রিজার্ভ ১৬০০-১৮০০ টাকা নিবে যাওয়া আসা, দরদাম করে যা পারেন, একটা স্পীডবোটে ৬ জন বসা যায়! ট্রলার বা স্পীডবোট আপনার জন্যে দেড় দুই ঘণ্টা অপেক্ষা করবে ছেড়াদ্বীপে, আবার আপনাদেরকে নিয়ে ফিরে আসবে! যেখানে শীপ থামে সেখানেই ছেড়াদ্বীপ যাওয়ার বোট পাওয়া যায়! ৩-৪ ঘণ্টার মধ্যেই ছেড়াদ্বীপ ঘুরে ফিরে আসা যায়!

সাইকেল চালিয়ে বা হেটে হেটেও ছেড়াদ্বীপ যাওয়া যায়, তবে তা ভাটার সময়, স্থানীয়দের কাছ থেকে জোয়ার ভাটার সময় জেনে নিতে পারেন!

প্রতিটি ডাব ৪০-৬০ টাকায় পাবেন!

সাইকেল ঘণ্টাপ্রতি ৪০ টাকা ভাড়া নিবে!

আর সকাল ১০/১১ টার দিকে অথবা বিকেলের কোন এক সময়ে পারলে জেটির পাশে এসে বসে থাকবেন, পানির রঙ দেখে মন ভরে যাবে!

চট্টগ্রাম থেকেও সরাসরি টেকনাফের বাস আছে, সিনেমা প্যালেস (লাল দীঘির পাড়) থেকে রাত ১২/১ টার দিকে কিছু বাস ছাড়ে, সকালে টেকনাফ পৌছে, ভাড়া ৪০০ টাকা!

কক্সবাজার থেকে সেন্টমার্টিন যেতে চাইলে শহর থেকে টেকনাফ যাওয়া লাগবে প্রথমে, ভাড়া ১৫০ টাকা নিবে! খুব ভোরে রওনা দিতে হবে, নয়তো শীপ মিস হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে!

কক্সবাজার থেকে মেরিন ড্রাইভ হয়ে টেকনাফ গিয়ে শীপ ধরা সম্ভব না, প্রাইভেট গাড়িতে করে গেলে সম্ভব হতেও পারে!

অনেকেই ঢাকা থেকে ট্রেনে করে চট্টগ্রাম গিয়ে তারপর অইদিনই বাসে করে কক্সবাজার/টেকনাফ গিয়ে সেন্টমার্টিন যাওয়ার ইচ্ছে পোষণ করেন, এটা কোন মতেই সম্ভব না! চট্টগ্রাম থেকে কক্সবাজার যেতেই তো ৪-৫ ঘন্টা লেগে যায়, টেকনাফ তো আরো বহুদূর!

কিছু অনুরোধ-
ভ্রমণের স্মৃতিচিহ্ন হিসেবে প্রবাল নিয়ে আসবেন না!
যেখানে সেখানে পানির বোতল, খালি প্যাকেট ইত্যাদি অপচনশীল জিনিস ফেলবেন না!

শীপে চড়ে যাওয়ার সময় অনেককেই দেখা যায় চিপসের খালি প্যাকেট সমুদ্রে ফেলে দেয়, এমনটা করবেন না প্লিজ, আপনার সাথে থাকা ভ্রমণসঙ্গীকেও এ ব্যাপারে সতর্ক করুন!

Post Copied From:Sujauddin F. Sohan‎>Travelers of Bangladesh (ToB)

নাফ নদীতে যাত্রা পথে নিস্বর্গের ছোঁয়া

এই সময়টাতে নাফ নদী হয়ে সেন্টমার্টিনে যেতে যেতে আপনি নিস্বর্গের ছোঁয়া পাবেন,
নাফ নদীর পাশেই দেখবেন কুয়াশায় ঢাকা টেকনাফের পাহাড়ের সারি কয়েক স্তরে।

১৬ই ডিসেম্বর রাতে গিয়ে ১৭ই ডিসেম্বর সেন্টমার্টিনে থেকে ১৮তারিখ ফিরলাম,
৬জন ঘুরে আসলাম (চট্টগ্রাম থেকে) জনপ্রতি ৩০০০/টাকায়,
খরচ বেশি পড়েছে কারণ ফুল সিজন এটা।

আর আমরা গিয়েছিলাম “কেয়ারী ক্রুজ এন্ড ডাইন” এ জনপ্রতি ৮০০/ টাকা টিকেটে,
কেয়ারী সিনদাবাদ এ গেলে ৫৫০/ টাকায় যেতে পারবেন,
দুটো জাহাজই কেয়ারী ঘাট থেকে একসাথে ছাড়ে সকাল ৯:১৫মিনিটে।

আমার মনে হয় শীতকালে ডিসেম্বরের এই সময়টাই সেন্টমার্টিন ঘুরে আসার জন্য সেরা সময়।

বিঃদ্রঃ
নিজেতো কোন আবর্জনা বা প্যাকেট সেন্টমার্টিন বা নাফ নদীতে ফেলবেনই না,
বরং কাউকে ফেলতে দেখলে বুঝিয়ে নিষেধ করুন।

অনেককেই দেখেছি নদীতে/সাগরে চিপসের প্যাকেট পানির বোতল ছুঁড়ে ফেলছে,
অথচ জাহাজের আনাচে কানাচে ডাস্টবিন রাখা আছে,
এমনকি মাইকেও নিষেধ করা হয়।

প্রকৃতির সাথে নিজের বেডরুমের মত আচরন করুন,
প্রকৃতি সুন্দর রাখুন,
তা নাহলে এদেশে নীল পানির সৈকত খুঁজে পাওয়া যাবেনা আর।

আমাদের দেশীয় পানি/চিপসের মোড়ক ভেসে ভেসে অন্যদেশের সীমানায় গেলে বাংলাদেশকে আন্তর্জাতিক পরিবেশ আইনে জরিমানা করা হতে পারে,
তাছাড়াও একটা ইমেজের ব্যাপারতো থাকছেই।।

Post Copied From:Nazmul Abhie‎>Travelers of Bangladesh (ToB)

আকাশ সমুদ্রের মিলনমেলা(কক্সবাজার,সেন্টমার্টিন ভ্রমণ)

যেভাবে গিয়েছি এবং কোথায় কেমন খরচ (জনপ্রতি) হয়েছে সব সিকোয়েন্সিয়ালি দিয়ে দিলাম…

***৯ ডিসেম্বর ২০১৭***
—————————-
#যাত্রাঃ ঢাকা ফকিরাপুল থেকে “হানিফ পরিবহণের” (#Hanifparibahan) বাসে করে সন্ধ্যা ৭টায় টেকনাফের উদ্দেশ্য আমরা ১০জন বন্ধু রওনা দেই। (বাস টিকিট-৯০০টাকা, টি-শার্ট-৩০০ টাকা; মোট-১২০০ টাকা)

***১০ ডিসেম্বর ২০১৭***
***কক্সবাজার***
====================
#টেকনাফঃ সকাল ৮টায় আমরা টেকনাফের “কেয়ারী ঘাটে” (#KeariSindbad) পৌঁছাই। সমুদ্রে ঐদিন ৩ নাম্বার সতর্কতা সঙ্কেত থাকায় শীপ বন্ধ ছিল। আমাদের আগে থেকেই প্লান ছিল আমরা সেন্টমার্টিন থেকে ঘুরে কক্সবাজার যাব। যেহেতু সেন্টমার্টিন যাওয়া হচ্ছে না তাই সবাই মিলে ঠিক করলাম আগে কক্সবাজার ঘুরি তারপর যদি আবহাওয়া ঠিক হয় এবং সতর্কতা সঙ্কেত তুলে নেয়া হয় তাহলে সেন্টমার্টিন যাব। তাই আর দেরি না করে কেয়ারী ঘাটেই সকালের নাস্তা সেরে “সরাসরি স্পেশাল” পরিবহণে করে কক্সবাজার চলে যাই। (খরচঃ নাস্তা-৫০ টাকা, বাস ভাড়া-১৮০টাকা; মোট-২৩০টাকা)

#কক্সবাজারঃ কক্সবাজার পৌঁছাতে পৌঁছাতে বেলা ১২টা বেজে যায়। দু’জনকে হোটেল খুঁজতে পাঠিয়ে দিয়ে আমরা কয়েকজন বিচের আশেপাশে ঘুরতে থাকি। তারা কিছুক্ষণের মধ্যে হোটেল কনফার্ম করে আমাদের ইনফর্ম করলে আমরা হোটেলে চলে যাই।

#হোটেল_কক্সবাজারঃ আমরা কলাতলি বিচের কাছাকাছি বিচ ওয়ে হোটেলের গোলিতে “প্রতীক জিনিয়া” (Protik Jinia) নামের একটি এপার্টমেন্টে ৩,৫০০ টাকায় (২ দিনের জন্য) একটি ফ্লাট ভাড়া নেই। ৩ রুমের ফ্লাট, ২টা বাথরুম, ২টা বেলকনি, একরুম এসি, এক কথায় আমাদের ১০ জনের জন্য অসাধারণ। তবে একটু দামাদামি করলে দিন প্রতি ১৫০০ টাকা মানে দু’দিনের জন্য ৩০০০ টাকার মধ্যেই পেয়ে যেতাম (খরচঃ হোটেল ভাড়া বাবদ ৩৫০ টাকা)

#সমুদ্রে_গোসলঃ সমুদ্রে ২টা থেকে ভাটা শুরু হয়। তখন সমুদ্রে গোসল করা রিস্কি, আর ২ টার পর সমুদ্রে গোসল করতে নামতেও দেয় না। তাই দেরি না করে আমরা ১টার মধ্যেই সুগন্ধা বিচে চলে যাই। দশজন একসাথে সমুদ্রে ঝাঁপিয়ে পড়ি। কিছুক্ষণের মধ্যেই সমুদ্রের ঢেউয়ের সাথে সবাই মিশে যেতে থাকি। একজন ফটোগ্রাফার নিয়েছিলাম। সমুদ্রে গোসল করবার সময় সবাই এক এক করে, গ্রুপে অনেক ছবি তুলেছি। আমরা মোট ৩৬০টি ছবি তুলি। এরজন্য ফটোগ্রাফারকে আমাদের দিতে হয়েছে ৬০০ টাকা। (খরচঃ ছবি বাবদ জনপ্রতি খরচ ৬০ টাকা)

(নোটঃ সমুদ্রে গোসল করতে চাইলে অবশ্যই ২টার আগে যাবেন। ২টার পর দ্রুত ভাটা চলতে থাকে। তখন সমুদ্রের পানি দ্রুত নেমে যেতে থাকে তাই স্রোতে ভেসে যাবার রিস্ক থাকে এবং গোলস করেও মজা থাকে না। সমুদ্রে গোসল করতে যাবার আগে মোবাইল ফোন, জুতা, টাকা-পয়সা অন্যান্য সরঞ্জাম না নিয়ে যাওয়াই ভালো। কেননা বিচে এগুলো রাখার কোন সেফটি প্লেস নেই। বিচ ফটোগ্রাফারদের দিয়ে ছবি তুলে নেবার আগে দামাদামি করে নিন। এরা ৫টাকা করে চাবে। দামাদামি করলে ২.৫-৩ টাকায় রাজি হয়। ছবি তুলে দেবার পর ছবিগুলো নেবার আগে ফটোগ্রাফারের ক্যামেরায় ছবিগুলো সিলেক্ট করে নিন কোন কোন ছবিগুলো আপনার ভালো লেগেছে এবং বাকিগুলান ডিলিট করে দিন। কেননা তারা এক ছবি ৩/৪বার স্নাপ নেয় যার ফলে বারতি টাকা দাবি করে। মনে রাখবেন ছবি সিলেক্ট করবার সময় একবারই সিলেক্ট এবং ডিলিট করবেন। তারা দ্বিতীয়বার সুযোগ দেয় না।)

#চাদের_গাড়ি_ভাড়াঃ সমুদ্রে গোসল সেরে হোটেলে ফিরে আধা ঘন্টার মধ্যে সবাই রেডি হই। আমরা ঠিক করি দুপুরের খাবার শেষ করে “ইনানী বিচে” (#InaniBeach) যাব। সুগন্ধা বিচের মাথায় মেইন রোডে ইনানী বিচে যাবার জন্য চাদের গাড়ি এবং অটো ভাড়া পাওয়া যায়। আমরা দামাদামি করে ১২০০ টাকায় একটা চাদের গাড়ি রিজার্ভে ভাড়া করি। যেটা আমাদের ইনানী বিচে নিয়ে যাবে এবং নিয়ে আসবে। (জনপ্রতি খরচঃ ১২০ টাকা)

#দুপুরের_খাবারঃ গাড়ি ভাড়ার ঝামেলা শেষ হয়ে গেলে ঐ গাড়িতে করেই আমরা খাবার হোটেলে যাই। কক্সবাজারে দুটি জনপ্রিয় খাবার হোটেল আছে। একটি “শালিক” এবং অন্যটি “পোউশি”। ইনানী বিচে যাবার পথে #শালিক_রেস্তরা পরে। আমরা শালিক রেস্তরায় কম্বাইন্ড করে দুপুরের খাবার খাই। খাবার আইটেমঃ ভাত,
২ প্লেট ভর্তা (৫জের জন্য এক প্লেট এনাফ), ডাল ২ বাটি, বিফ মাংস (২টা)। রেটিং ৮.৫/১০। আমরা মাছের কোন আইটেম নেইনি কারন আমরা ঠিক করেছিলাম সেন্টমার্টিন গিয়ে মাছ খাব। আর কক্সবাজারে মাছের দামও বেশি। আমাদের মোট খরচ হয় ১১০০ টাকা (জনপ্রতি খরচঃ ১১০ টাকা)

#মেরিন_ড্রাইভঃ সমুদ্রের পারে বিচ ঘেসে চলে গেছে দীর্ঘ পিচঢালা পথ। মেরিন ড্রাইভ। এই পথ দিয়ে গাড়িতে চলবার অনুভূতিও অন্যরকম। গাড়ি চলছে, পাশেই সমুদ্রের বেলাভূমি। বেলাভূমি ঘেসে সমুদ্র। সমুদ্রের ঢেউ আছড়ে পড়ছে বেলাভুমির তটে। সূর্যও ডুবি ডুবি করছে। সমুদ্রের গর্জন। কিছুদুর পরপর পথের দুধারে ছোট-বড় রেস্টুরেন্ট, সেনাবাহিনীর ক্যাম্প, সুপারি আর পানের বাগান। সব মিলিয়ে মেরিড ড্রাইভের পিচঢালা পথ সমুদ্রের দীর্ঘ সী-বিচের মতই অপূর্ব।

#ইনানী_বিচঃ মেরিন ড্রাইভ ধরে ইনানী বিচে পৌঁছতে পৌঁছতে আমাদের সাড়ে ৪টা বেজে যায়। কক্সবাজার যাবার পর থেকে যেটাই দেখছি সেটাতেই মুগ্ধ হচ্ছি। ইনানী বিচ দেখেও মুগ্ধ হলাম। পায়ের স্যান্ডেল হাতে নিয়ে সমুদ্রের পানিতে বিচ ধরে হাটা দিলাম। কিছুক্ষণ পরপর সমুদ্রের উত্তাল ঢেউ এসে শীতল জলে বারবার পা ভিজিয়ে দিচ্ছে আর আমি ফিরে যাচ্ছি ফ্যান্টাসিতে। এখানেও ফটোগ্রাফারে গিজগিজ করছে। একজন ফটোগ্রাফার ঠিক করে নিয়েছিলাম। তাকে দিয়ে কিছু ছবি তুলে নিলাম। নিজের ফোনের ক্যামেরা দিয়েও প্রকৃতির কিছু ছবি তুললাম। কিছুক্ষণ পর সূর্যাস্ত শুরু হলো। ওয়েদার ভালো ছিলনা, তাই সূর্যাস্ত মন মত দেখা গেল না। একটু সূর্য থাকে আবার মেঘ ঢেকে দেয়। হাটু পানিতে নেমে সূর্যের লুকোচুরি দেখে উঠে এলাম। বিচের একপাশে ডাব বিক্রি হয়। ৪৫ টাকা করে ১০টা ডাব নিয়ে সবাই খেলাম। (খরচঃ ছবি-৭০টাকা, ডাব-৪৫টাকা; মোট-১১৫টাকা)

#কেনাকাটাঃ ইনানী বিচ থেকে ফিরতে ফিরতে সন্ধ্যা ৭টা বেজে যায়। কিছু কেনাকাটার জন্য সবাই মিলে বিচের পাশেই লাবনি পয়েন্টের মার্কেটে চলে যাই। অনেকে অনেক কিছু কেনে। আমি শুধু কয়েক আইটেমের আচার কিনেছিলাম। (খরচঃ ৫০টাকা)

#রাতের_খাবারঃ রাতের খাবার খেতে আমরা সবাই “পোউশি” রেস্তরায় যাই। লাবনি পয়েন্ট থেকে ১০-১৫ টাকা ভাড়ায় অটো (অটো রিক্সা) পাওয়া যায়। আমরা রিজার্ভে ৪০ টাকা করে দুটি অটোতে করে “পোউশি” রেস্তরায় যাই। আমরা যেতে যেতে লেট হওয়ায় রাতের খাবার শেষই হয়ে গিয়েছিলো। পোউশিতেও আমরা ভর্তার ২টা আইটেম নেই এবং ডাল নিয়েছিলাম। তবে শালিকের মত ভালো লাগেনি। লেট হবার কারনেও হতে পারে। রেটিং ৬/১০। (খরচঃ ৯৫ টাকা)

***১১ ডিসেম্বর ২০১৭***
——————————
আবহাওয়া খারাপ থাকায় সূর্যোদয় দেখতে পারিনি। তাছাড়া কক্সবাজার ঘোরাঘুরি আমাদের গত কালই শেষ হয়ে গিয়েছিলো। ভেবেছিলাম আজই সেন্টমার্টিন রওনা দেব এবং ২দিন সেখানে থাকব। আবহাওয়া ঠিক না হওয়ায় আরও একদিন আমাদের কক্সবাজার কাটাতে হল। ঠিক করেছিলাম মহেশখালী গিয়ে আদিনাথের মন্দির আর পাহাড় ঘুরে আসব। টিমের অনেকে যেতে রাজি না হওয়ায় কক্সবাজারেই অলস দিনের ঘাটি গাড়লাম। সকালের নাস্তা শেষ করে কয়েকজন সুইমিং পুলে গেল সাঁতার কাটতে। আমরা কয়েকজন কলাতলি বিচ, সুগন্ধা বিচ, লাবনি পয়েন্ট ঝাউবন দিয়ে ঘুরাঘুরি করলাম। লাবনি বিচে ঘন্টায় ২০ টাকা করে ৩টা বিচ চেয়ার ভাড়া করে গা এলিয়ে দিলাম। সমুদ্র দেখছি এমন সময় অনুভব করলাম কেউ একজন মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছে। তাকিয়ে দেখি একটা পিচ্চি মাথায় মাসাজ করে দিচ্ছে। অনেক বলবার পরেও চলে না যাওয়ায় শেষমেশ রাজি হয়ে বললাম ঠিক আছে ২০ টাকা দেব। পিচ্চির মাথা মাসাজে মোহিত হয়ে গেলাম। সমুদ্রের উত্তাল ঢেউ, শরীর শিরশির করা শীতল বাতাস, পিচ্চির মাজাস সব মিলিয়ে ঘন্টা খানেক ভালোই সময়য় কাটল। এরপর সুইমিং পুলের ওরাও চলে এল।

সবার পেট ভরাই ছিল। বিকেলের দিকে হালকা খাবার খেয়ে নেবার পর অনেকে বলল বার্মিজ মার্কেটে যাবে কেনাকাটা করবার জন্য। মার্কেটে ঘুরতে আমার ভালো লাগে না। তাই আমি এবং আর দু’জন মিলে আমরা তিনজন হোটেলে ফিরে এলাম। অন্যরা মার্কেটে গেল। বিপিএলের খেলা চলছিলো। খেলা দেখলাম। কেনাকাটা শেষ করে সবাই রাতে এল। আমরা আবার শালিকে গেলাম রাতের খাবার খেতে। সেম আইটেম নিলাম। তবে আজকে ভর্তার বদলে নিলাম ২ প্লেট সবজি (রাতের আইটেম সবজি)। রেটিং ৭/১০। (খরচঃ সকালের নাস্তা- ৫০টাকা; চেয়ার ভাড়া, মাসাজ, চিপস-৭০ টাকা; বিকেলে পারাটা চা-২০ টাকা; রাতের খাবার-১১০ টাকা; মোট- ২৫০ টাকা)

***১২ ডিসেম্বর ২০১৭***
***সেন্টমার্টিন***
=====================
#কক্সবাজার_থেকে_টেকনাফঃ কক্সবাজারে বেশকিছু ট্যুর এজেন্ট আছে যারা সেন্টমার্টিন যাবার যাত্রীদের কক্সবাজার থেকে টেকনাফ জাহাজ ঘাটে পৌঁছে দেয়। আগেরদিন রাতেই আমরা ১০ জনের জন্য ১৫০ টাকা করে ১৫০০ টাকা দিয়ে টিকিট করে রেখেছিলাম। সকাল ৬ টা ৩০ মিনিটে সেই ট্যুরিস্ট বাসে করে আমরা টেকনাফ কেয়ারী ঘাটের উদ্দেশ্য রওনা দেই। (খরচঃ ১৫০ টাকা)

#কেয়ারী_ঘাটঃ সকাল ৮টা ৩০ মিনিটে আমরা কেয়ারী ঘাটে পৌঁছাই। কেয়ারী সিন্দবাদ শীপের টিকিট তাদের ঢাকা অফিস থেকেই নিয়ে রেখেছিলাম। তাই টিকিট নিয়ে কোন ঝামেলা পোহাতে হয়নি। বাস থেকে নেমেই কাউন্টারে রিপোর্টিং করি। সময় না থাকায় কেয়ারী ঘাট থেকে সকালের নাস্তা পার্সেল নিয়ে সরাসরি শীপে উঠে পড়ি। সেন্টমার্টিনের উদ্দেশ্যে সকাল ৯টা ৩০ মিনিটে ঘাট থেকে শীপ ছেড়ে যায়। (শীপের টিকিট-৫৫০টাকা, সকালের নাস্তা_১টা পারাটা, হাফ ডিম-২৫টাকা; মোট-৫৭৫ টাকা)

#শীপ_ভ্রমণঃ আমরা শীপের মেইন ডেক নিয়েছিলাম। মেইন ডেকের ভাড়া সব চেয়ে কম। মাত্র ৫৫০ টাকা। এছাড়াও শীপে ওপেন ডেক, এসি ডেক আছে। ওগুলোর ভাড়া একটু বেশি। তবে মেইন ডেক নিলেও মজা কিন্তু ওপেন ডেকের মতই। শীপ ঘাট থেকে ছেড়ে যাবার কিছুক্ষণ পড়েই সবাই ডেক থেকে বেড়িয়ে করিডোর এবং রেলিঙয়ের কাছে চলে আসে। নাফ নদী হয়ে শীপ সমুদ্রে ঢুকবার আগে থেকেই শতশত গাঙচিল (Sea Gull) শীপ ধরে উড়ে উড়ে আসে। যাত্রীরা চিপস, বিস্কিট ছুঁড়ে দেবার সাথে সাথে ছোঁ মেরে ধরে ফেলে। গাঙচিলের খাবার ছোঁ মেরে ঠোটে নেবার এই দৃশ্যও চমৎকার। নদী এবং সমুদ্রের মোহনায় আসববার সাথে সাথে শীপে মাইকে এনাউন্স করে দেয়া হয়। দেখার মত কোন দৃশ্য এলেও শীপ থেকে মাইকে বলে দেয়া হয় কোনটা কী? সমুদ্রের এক পাশে মায়ানমার, অন্যপাশে বাংলাদেশ। সমুদ্রের কোলঘেঁষে পাহাড় আর অরণ্যের মনোমুগ্ধকর দৃশ্য শীপ থেকে দেখলে যে কারও মন পুলকিত হবে।

#সেন্টমার্টিনঃ দুপুর ১২টায় আমরা সেন্টমার্টিন পৌঁছাই। আমাদের মধ্য থেকে তিনজন যায় হোটেল কনফার্ম করতে। আমরা বাকিরা সবাই বাজারে অপেক্ষা করি। এসময় অনেকে তাদের হোটেল নেবার জন্য আমাদের রিকোয়েস্ট করতে থাকে। আধাঘন্টার মধ্য ঐ তিনজন হোটেল কনফার্ম করে আসে।

#সেন্টমার্টিন_হোটেলঃ সেন্টমার্টিনে আমরা বাজারের পাশে “স্বপ্ন বিলাস” রিসোর্টের দুটা রুম নিয়েছিলাম। ভাড়া পরেছিলো ১৩০০ টাকা। বাজারের পাশে বিধায় একটু বেশীই ছিল। আরও ভেতরে হোটেল নিলে আরও কমে পাওয়া যেত। একদম ভেতরে বাগান বাড়ির দিকে “নীল সীমান্ত” নামে একটা একটা রিসোর্ট আছে। বাজার থেকে ভ্যান ভাড়া ১৫-২০ টাকা। হাফ বিল্ডিং রিসোর্ট, তবে সুন্দর। যেটা ২রুম এটাস্ট বাথ, তিন বেড মাত্র ৭০০ টাকায় দিতে রাজি হয়েছিলো। ঘরোয়া পরিবেশ, বাড়ি ভর্তি নাড়িকেল গাছ, সারাক্ষণ সমুদ্রের গর্জন শোনা যায়, বার্বিকিউ এবং খাবারের সুব্যবস্থা ছিল। তবে আমাদের টিমের কয়েকজনের পছন্দ না হওয়ায় আমরা রিসোর্টটা নিতে পারিনি। তবে ব্যক্তিগতভাবে আমার পছন্দ হয়েছিলো। অল্প খরচে থাকার জন্য বেস্ট রিসোর্ট। (খরচঃ ১৩০ টাকা)
নোটঃ কক্সবাজারের মত সেন্টমার্টিনেও হোটেল ভাড়া নিতে হলে দামাদামি করতে হবে। প্রয়োজনে ছ্যাঁচড়ামি করতে হবে। মনে রাখবেন ডিসেম্বরের ১৫ তারিখ পর্যন্ত হোটেল এবং রিসোর্টের ভাড়া অনেক কম। ৪ জন থাকার এক রুম ৬০০-১০০০ টাকায় পাবেন।

#দুপুরের_খাবারঃ হোটেলে ফ্রেশ হয়ে দুপুরের খাবার খাই “নোয়াখালী রেস্তরায়”। আইটেম ভর্তা, ডাল, মাছ। হোটেলের রুমের মত খাবারও অনেক দামাদামি করতে হবে। (খরচঃ ভাত-৩০টাকা, ডাল-১০টাকা, ভর্তা-১০টাকা, টুনা ফিশ ভাজি-৪০টাকা; মোট- ৯০ টাকা)

#সেন্টমার্টিন_ঘোরাঘুরিঃ খাবার পর সাবাই সাইকেল নিয়েই বিচ ঘুরতে বের হয়েছিলো। তবে আমি হেটেই বিচ ঘুরেছি। একবার সাইকেল নিয়েছিলাম ঘন্টায় ৪০ টাকা করে। কিছুক্ষণ চালাবার পর বিরক্ত হয়ে ২০ টাকা জরিমানা দিয়ে ফেরত দিয়েছি। সমুদ্রের কূল ঘেঁষে হেটে হেটে বিচ দেখার মজাই আলাদা। হেটে হেটে বিচ দেখতে দেখতে সূর্যাস্ত দেখলাম। এক সময় হুমায়ূন স্যারের “সমুদ্র বিলাস” এর সামনে পৌঁছে গেলাম। গেটে বলে ভেতরে ঢুকলাম। ভেতরে রিসোর্টের সংস্কার কাজ চলছে। অন্ধকারে ঘুরে ঘুরে দেখ বেড়িয়ে পড়লাম। আর কিছুদুর সামনে গিয়ে বিচের পাশে এক দোকানে চা খেলাম। অদুরেই বিচে ছোট ছোট দোকান বসেছে গরম গরম মাছ, কাঁকড়া ভাজির। অনেকে মাছ বেছে দিচ্ছে, দোকানি সেগুলো ভেজে দিচ্ছেন। চা খেতে খেতে যতদূর চোখ যায় দেখে নিলাম।

#রাতের_খাবারঃ রাতে তেমন ক্ষুধা না লাগায় সবাই পারাটা, ডিমভাজি, কাঁকড়া ভুনা খেলাম। তবে আমি ডিমভাজি আর পারাটা খেয়েছি। কাঁকড়া ভাজি কিংবা ভুনা ১২০ টাকা করে ছিল। (খরচঃ ২টা পারাটা-২০টাকা, ডিমভাজি-৩০ টাকা; মোট-৫০টাকা)

#কেনাকাটাঃ রাতের খাবার শেষ করে অনেকে বাড়ির জন্য শুঁটকি কিনেছিলো। শুঁটকি কেনার জন্য সেন্টমার্টিন বেস্ট। আমি কিছুই কিনিনি…

***১৩ ডিসেম্বর ২০১৭****
——————————-
#সূর্যোদয়ঃ সূর্যোদয় দেখার জন্য সকাল ৬টার মধ্যেই ঘাটের (শীপ থেকে যেখানে নেমেছেন) বিচে চলে যেতে হবে। সূর্যোদয় দেখতে গিয়ে অপূর্ব কিছু দৃশ্যের দেখা মেলে। রাতভর সমুদ্রে বয়ে চলা ট্রলারগুলো সে সময় পারে ভিড়ে। জেলেরা ট্রলার থেকে মাছ নামায়। ছোট থেকে শুরু করে বিশাল বিশাল সে সব মাছ। জীবনের প্রথম চাক্ষুস এমন সাইজের মাছ দেখলে কার না বিস্ময় জাগবে! বিচে কিছুক্ষণ ঘোরাঘুরি করে সকালের নাস্তা সেরে ফেলি। (খরচঃ পারাটা-২০টাকা, ডিম ভাজি-৩০টাকা; মোট-৫০ টাকা)

#ছেঁড়াদ্বীপঃ হোটেল থেকে চেকআউট করে ব্যাগগুলো হোটেলের কাউন্টারে রেখে আমরা ছেঁড়াদ্বীপের উদ্দেশ্য রওনা দেই। সেন্টমার্টিন ঘাট থেকেই ছেঁড়াদ্বীপের স্পীডবোট, লাইফবোট যায়। অনেকে সাইকেল নিয়েও বিচ ধরে ছেঁড়াদ্বীপ যান। আমরা ঐদিনই ফিরতি শীপে করে টেকনাফ ফিরব তাই সাইকেল নিয়ে রিস্ক নিইনি। ঘাট থেকে ২০০ টাকা ভাড়ায় একটা লাইফবোট নিয়ে ছেঁড়াদ্বীপ যাই। স্পীডবোট ৩০০ টাকা ভাড়া। লাইফবোটে ছেঁড়াদ্বীপে যেতে আমাদের সময় লেগেছিল ২৫ মিনিটের মত। স্পীডবোটে ১০-১৫ মিনিট লাগে।
ছেঁড়াদ্বীপে পৌঁছেই ডাবের দোকান পেয়ে সবাই ডাব খেয়ে নিলাম। প্রতিটা ডাব ৫০টাকা করে। সেন্টমার্টিন গেলে ছেঁড়াদ্বীপ না গেলে সেন্টমার্টিন যাওয়া বৃথা। কেননা সেন্টমার্টিনের সৌন্দর্যের পূর্ণতা দেয় ছেঁড়াদ্বীপ ভ্রমণ। ছেঁড়াদ্বীপ পুরোটা ঘুরে আমি এতটাই বিস্মিত হয়েছিলাম যে ঠিক করেছি আবার যদি কখনো যাই তাহলে ছেঁড়াদ্বীপে তাবু গেড়ে ক্যাম্প করব। সাইকেল নিয়ে গেলে পুরো দ্বীপটা ঘুরে দেখতে সমস্যায় পরবেন। তাই আমার মনে হয় ছেঁড়াদ্বীপ পুরোটা দেখতে হলে হেটেহেটে দেখাই উত্তম। ছেঁড়াদ্বীপে মৌসুমি পাথর নামে একটা পাথর আছে। যেখানে নায়িকা মৌসুমি ছবির শুটিং করতে এসে পাথরে নিজের নাম লিখে গিয়েছিলেন। (খরচঃ ২৫০ টাক)

#টেকনাফ_এবং_ঢাকা_ফেরতঃ ছেঁড়াদ্বীপ থেকে ফিরেই দুপুরের খাবার খেয়ে নিলাম। হোটেলের কাউন্টার থেকে ব্যাগ নিয়ে ঘাটে থেমে থাকা শীপে উঠে গেলাম। ঠিক ৩টায় শীপ টেকনাফের উদ্দেশ্য ছেঁড়ে গেল। ডেকের জানালা দিয়ে কিছুক্ষণ অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থেকে সেন্টমার্টিনকে বিদায় জানালাম। টেকনাফ পৌঁছতে পৌঁছতে বিকেল ৫টা পার হয়ে গেল। আগে থেকেই বাসের টিকিট বুকিং দেয়া ছিল। কিছুক্ষণ পড়েই বাস চলে এল। চারদিনের বিস্ময়কর ট্যুর শেষ করে সবাই আবার ফিরে চললাম ব্যস্ত নগরীতে। (খরচঃ বাস ভাড়া-৯০০টাকা)


****আমার মোট খরচ****
———————————-
৯ ডিসেম্বর থেকে ১৩ ডিসেম্বর ২০১৭ পর্যন্ত
ট্যুর বাবদ মোট খরচঃ ৪৮২৫ টাকা (যারা ধুমপান করেন তাদের খরচ কিছুটা বাড়তে পারে)
এবং কিছু হাবিজাবি হাত খরচ গেছে।

****গুরুত্বপূর্ণ কিছু তথ্য এবং টিপস****
————————————————
>>স্টুডেন্ট আইডি কার্ড, NID কার্ড সাথে নিবেন।
>>অল্প খরচে কক্সবাজার কিংবা সেন্টমার্টিন থাকতে হলে ডিসেম্বরের ১৫ তারিখের মধ্যে ট্যুর প্লান করুন। এসময় ৪-৫জন থাকার মত হোটেল ভাড়া ৭০০-১০০০ এর মধ্যেই পাওয়া যায়। ১৫ ডিসেম্বরের পর থেকে পুরোপুরি ট্যুরিস্ট সিজন শুরু হয় তখন হোটেলগুলোর ভাড়া বেড়ে যায়।
>>হোটেল ভাড়া করবার সময় দামাদামি করুন এবং প্রয়োজনে চূড়ান্ত লেভেলের ছ্যাঁচড়ামি করুন।
>>কক্সবাজারের বিচ ফটোগ্রাফারদের দ্বারা ছবি তুলে নেবার আগে দামাদামি করুন। শুধু বিচ ফটোগ্রাফার না লোকাল যানবাহনে যাত্রার পূর্বেও দামাদামি করে নিন।
>>৭-১০ জনের টিমের মধ্যে গেলে খরচ কম হবে। তবে টিমের মধ্য গেলে কম্বাইন্ড করে থাকা, খাওয়ার মনমানসিকতা থাকতে হবে। এতে খরচ অনেক কমে যায়। যেমন আমরা একটা ডিমভাজি ২জন করে খেয়েছি। এক প্লেট ভর্তা ৫জন মিলেমিশে খেয়েছি।
>>শুধু কক্সবাজার না, সেন্টমার্টিনের সব কিছুর ক্ষেত্রে দামাদামি করে নিবেন।
>>টিমের সাথে গেলে অবস্যই সেক্রিফাইসড করবার মত মেন্টালিটি ধারণ করবেন। মনে রাখবেন ট্যুরে টিম মেম্বারের সাথে সামান্য মন কষাকষি ট্যুরের খরচ বাড়ানো থেকে ট্যুরের আনন্দ নষ্ট করে দিতে পারে।
>>ঘুরতে গিয়ে কেউ ময়লা আবর্জনা ফেলে পরিবেশ দূষণ করবেন না। এতে আমাদের প্রাকৃতিক পরিবেশ যেমন দূষিত হয় তেমনি আমাদের প্রাকৃতিক সৌন্দর্যও নষ্ট হয়।

*****হোটেল/বাস/শীপের তথ্য*****
——————————————–
#হানিফ_পরিবহণঃ
ঢাকা কাউন্টার (ফকিরাপুল)- 01713201729
কক্সবাজার কাউন্টারঃ 01713402635
টেকনাফ কাউন্টারঃ 017303776365

#কেয়ারী_সিন্দবাদ_শীপঃ
ঢাকা অফিসঃ 01817148735
কক্সবাজার অফিসঃ 018172104215
টেকনাফ অফিসঃ 01819379083

#কক্সবাজার_হোটেলঃ
প্রতীক জিনিয়া
Rifat Bhai- 01836046043

#সেন্টমার্টিন_হোটেলঃ
স্বপ্ন বিলাস
Alamgir Vhai- 01905062237; 01905062237

নীল সীমান্ত (অল্প খরচে থাকতে চাইলে)
ফোন নাম্বারঃ 01859397005

Post Copied From:Humayun Hanif‎>Travelers of Bangladesh (ToB)

সাম্প্রতিক সময়ে সেন্টমার্টিন ভ্রমণের অভিজ্ঞতা

এই মাসের ১২ তারিখে কয়েকজন বন্ধু মিলে সেন্টমার্টিনে গিয়েছিলাম। দ্বীপটিতে এটি আমার দ্বিতীয়বারের মতো ভ্রমণ। প্রথমবারের অভিজ্ঞতার তুলনায় এবার এখানে কিছুটা ভিন্নতা লক্ষ্য করলাম। আগ্রহীদের অবগতির স্বার্থে খরচসহ এই ট্যুরের বিস্তারিত তথ্য উল্লেখ করছি।

ঢাকা থেকে টেকনাফ রুটে বেশকিছু ভালো বাস আছে। আমরা গিয়েছি শ্যামলীতে। সার্ভিস মোটামুটি। এই রুটে সব ননএসি বাসের ভাড়া ৯০০ টাকা। এসি বাসের ভাড়ায় ভিন্নতা রয়েছে। বাস টেকনাফে শিপঘাটের একেবারে কাছে এনে নামিয়ে দেয়। এক্ষেত্রে সবার প্রতি পরামর্শ থাকবে, রাত সাড়ে আটটার আগের বাসে উঠে পড়তে। কোনক্রমে বাস দেরী করে টেকনাফ পৌছালে শিপ মিস হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

আমরা গিয়েছিলাম কেয়ারি সিন্দাবাদ শিপে করে। এই মুহূর্তে চলাচল করছে কেয়ারি সিন্দাবাদ (ননএসি), এলসিটি কুতুবদিয়া (ননএসি), কেয়ারি ক্রুজ এন্ড ডাইন (এসি) ও গ্রিন লাইন (এসি)। ননএসি শিপের মেইন ডেকের ভাড়া ৫৫০ টাকা এবং ওপেন ডেকের ভাড়া ৭০০ টাকা করে। এসি শিপের ভাড়া ১,০০০ থেকে ১,৪০০ টাকার মধ্যে। এবার যথেষ্ঠ সংখ্যক শিপ ছাড়ে নি বলে শিপের টিকিট নিয়ে কাড়াকাড়ি চলছে।
অনেককে দেখলাম, সিট পান নি বলে দাড়িয়ে দাড়িয়ে যাচ্ছেন। ব্যপারটা খুব কষ্টকর না হলেও বয়স্কদের জন্য খানিকটা পরিশ্রমের। তবে শুনতে পেলাম, দু’একদিনের মধ্যে বে ক্রুজ এবং ফারজান ক্রুজ নামের দুটি শিপ চলাচল করতে শুরু করবে।

শিপ টেকনাফ থেকে ছাড়ে সকাল সাড়ে নয়টায়, সেন্টমার্টিনে এসে পৌছায় বারোটায়। শিপঘাটে নেমে হাঁটা শুরু করলাম। ঘাটের একটু সামনে সারি সারি ভ্যান দাঁড়িয়ে রয়েছে। নিজেদের রিসোর্ট/হোটেল খুব বেশী দূরে না হলে হেঁটে যাওয়া-ই ভালো। কেননা, সবগুলো শিপ কাছাকাছি সময়ে পৌছায় বলে তখন ভ্যান ভাড়া হয় খুবই বেশী। আমাদের রিসোর্টের নাম ছিলো Sea View Resort & Sports। ফেইসবুকে রিসোর্টটির রেটিং খুব ভালো দেখে এর সাথে যোগাযোগ করেছিলাম। এর লোকেশন ছিল চমৎকার, বীচের খুব কাছে।

কম খরচের ব্যপারটাকে মাথায় রেখে আমরা তাবুতে ছিলাম। দুটি তাবুতে মোট সাতজন মানুষ। প্রথমদিন নর্থ বীচে গোসল করে ও ভাড়ায় নেয়া সাইকেল চালিয়ে কাটিয়ে দিলাম। সেন্টমার্টিনের পানি কক্সবাজারের তুলনায় অনেক বেশী নীল। যারা কক্সবাজার ও সেন্টমার্টিন, দুটি-ই ভ্রমণ করবেন বলে ভাবছেন, তাদের প্রতি পরামর্শ থাকবে কক্সবাজার দিয়ে শুরু করতে। নইলে সেন্টমার্টিনকে দেখে আর কক্সবাজারকে ভালো লাগবে না।

দ্বিতীয় দিন সকালে ছেড়া দ্বীপ দেখতে গেলাম। ছেড়া দ্বীপে ইঞ্জিনের নৌকায় করে যেতে হয়। জনপ্রতি খরচ হয় ১৫০ টাকা। এছাড়া স্পিডবোট বা গামবোটেও যাওয়া যায়। এগুলো খানিকটা ব্যয়বহুল। যাওয়া-আসা ও ভ্রমণ মিলিয়ে ছেড়া দ্বীপের জন্য চার ঘণ্টার মতো সময় বরাদ্দ রাখতে হবে। ছেড়া দ্বীপে এসে ধারালো প্রবালের ঘায়ে অনেকের পা কেটে যায়। এর জন্য ব্যান্ডেজ বা সমজাতীয় ব্যবস্থা সাথে রাখাটা বুদ্ধিমানের কাজ হবে।

সমুদ্র ছাড়া সেন্টমার্টিনে দেখার মতো আর কিছু নেই। আমাদের একদিন থাকার কথা ছিল। কিন্তু সমুদ্রের মায়ায় পড়ে আমরা আরো একদিন বেশী থাকবো বলে সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম। ফলে শিপে আজ আমরা এসেছি দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে। গতকাল এলে নিজেদের সিটে বসে আসতে পারতাম। বলতে ভুলে গেছি, ফেরার শিপ দুপুর তিনটায় ছাড়ে। টেকনাফে এনে নামিয়ে দেয় সন্ধ্যা ছয়টায়। টেকনাফ থেকে কক্সবাজারে বাসে ১৬০ টাকা নেয়।

সেন্টমার্টিনের খাবারকে বৈচিত্রময় বলা যায় কিনা জানি না। কিন্তু সামুদ্রিক মাছের জন্য এটি একেবারে আদর্শ একটি স্থান। হরেকরকম রেস্ট্যুরেন্টে তাজা মাছ কেটে সাজিয়ে রাখা হয়েছে। আপনি বললেই ভেজে এনে পাতে তুলে দেবে। ভাত-মাছ-ডাল-সবজি খেতে চাইলে ১৯০-২০০ টাকা বাজেট রাখতে হবে। মাছের মধ্যে থাকবে কোরাল/সুরমা/সুন্দরী/লইট্টা ইত্যাদি। রূপচাঁদা খেতে চাইলে ৩০০ টাকা পড়বে। তবে রূপচাঁদা খেতে না চাওয়া-ই ভালো। কালোচান্দা বা টেকচান্দা এনে হাজির করার করার সম্ভাবনা প্রচুর।

কিছু কথাঃ
*সেন্টমার্টিনের রিসোর্টগুলোতে এখন ঘন ঘন চুরি হচ্ছে। জিনিসপত্র সাবধানে রাখতে হবে।
*বীচের কাছাকাছি রিসোর্টে থাকার পরামর্শ থাকবে। সমুদ্রের সান্নিধ্য দিনটিকে রঙ্গিন করে তুলবে। এই ডিসেম্বর মাসের ১৫, ১৬, ২২-২৫, ৩১ তারিখে সেন্টমার্টিনের সকল রিসোর্টের ভাড়া হবে অত্যধিক বেশী। যাদের বাজেট কম, এই দিনগুলো তাদের এড়িয়ে চলতে হবে।
*বারবিকিউ চাইলে রেস্ট্যুরেন্ট থেকে ব্যবস্থা করে দেয়া হয়। চিকেন বারবিকিউ ২০০-২২৫ টাকার মধ্যে এবং কোরালের বারবিকিউ ৩০০ টাকার মধ্যে হয়ে যাবে।
*সেন্টমার্টিনে সার্বক্ষণিক বিদ্যুৎ, শীতাতপনিয়ন্ত্রিত রুম বা স্যাটেলাইট টেলিভিশন পাবেন না।

Happy Traveling 

Post Copied From:Faisal Mahmudur>Travelers of Bangladesh (ToB)

৪০০০ টাকায় সেন্টমার্টিন ঘুরাঘুরি

৩ কাজিন মিলে সেন্টমার্টিন ঘুরে এলাম ২ রাত, ৩ দিন জনপ্রতি মাত্র ৪০০০ টাকায়।

গাবতলি থেকে হানিফ বাসে ভাড়া ৯০০ টাকা টেকনাফ পর্যন্ত।টেকনাফে সকালের নাস্তা ৫০ টাকায়।আমাদের Plan ছিলো যাবো জাহাজে এবং তৃতীয় দিন সকালে ট্রলারে টেকনাফ গিয়ে কক্সবাজার যাবো,ওখানে সারাদিন কাটিয়ে রাতের বাসে ঢাকা।তাই শুধু জাহাজে যাওয়ার টিকিট কাটি ৩২৫ টাকা। সেণ্টমার্টিন পৌঁছাই ১২ টার দিকে।এখান থেকে আমরা Hotel sand shore এ ৪ জনের এক রুম নিলাম ২ রাতের জন্য ১০০০ টাকায়(জনপ্রতি ৩৩৩ টাকা)। এরপর দুপুরের খাবারের জন্য ১০০ টাকার প্যাকেজ নিলাম। ভাত, ডাল, আলু ভর্তা,আর শুটকি মাছের চর্চরি। এরপর একটু রেস্ট নিয়ে বীচে চলে গেলাম,গোসল করে রুমে ফেরত আসলাম। সন্ধ্যায় নাস্তা করে,মুরগীর বারবিকিউ অর্ডার করে চলে গেলাম বিচে। আমাদের পার পারসন ১৫০ টাকা করে লেগেছে। বিচে live টুনামাছ,চিংড়ি,কাকড়া ভাজা খেলাম ৩ জনে,নিলো ২০০ টাকা।রাত ১০টায় BBq খেলাম।খেয়ে আবারও বিচে গেলাম,জোসনা উপভোগ করতে।সেখানে ডাবলসিট ভাড়া করলাম ৫০ টাকা দিয়ে unlimited সময়ের জন্য।পরের দিন সকালে ৫০ টাকায় নাস্তা সেরে পুরো দ্বীপ +ছেঁড়া দ্বীপের উদ্দেশ্যে সাইকেল ভাড়া নিলাম ৩ঘন্টার জন্য ১৫০ টাকা জনপ্রতি।পথে ডাব খেলাম ৫০ টাকার,এক ডাবে ৩ জনের পেট ভরে গেলো।ঘুরে এসে বীচে গোসল করলাম।বীচ থেকে ১:৩০ এর মধ্যে ফিরে এসে আবার দুপুরের খাবার খেলাম ১০০ টাকার প্যাকেজ এ।ফিরলাম হোটেলে।বিকেলে পাশের হালকা নাস্তা করে,সেখান থেকে কক্সবাজার টু ঢাকার টিকেট কাটলাম ৮০০ টাকা দিয়ে,তুবা লাইনে। তারপর এক হোটেল তিনজনের জন্য একটি সামদ্রিক মাছের bbq অর্ডার দিয়ে,চলে গেলাম বিচে,কোরাল হাফ কেজি নিয়েছিলাম ৩০০ টাকা,সাথে পরটা।রাত ১০টায় ফোন দিলো bbq ready.খেয়ে আবার বিচে।পরের দিন সকালে নাস্তা করে,ট্রলারে উঠে পরলাম ২১০ টাকা দিয়ে টিকেট কেটে,ছাড়লো ১০টায়।টেকনাফ পৌছালাম, ১টায় (এমন আস্তে চলে),সেখান থেকে জনপ্রতি ১৫০ টাকায় কক্সবাজারের গাড়ীতে উঠলাম। পথে পুলিশ চেকিং হলো ৬ বার,সারাদিন না খাওয়া+বুঝলাম কক্সবাজারে আর দিন কাটানো হলো না।সন্ধ্যায় পৌছালাম।বার্মিজ মার্কেটে হালকা কেনাকাটা করে, রাত ১৫০ টাকা দিয়ে বিরিয়ানি খেয়ে, বীচে ঘোরাঘুরি করে ১০ টায় ঢাকার বাসে উঠে পরলাম।

 

৩ জন এর গ্রুপের জন্য প্রযোজ্য

কিভাবে ঘুরে আসবেন ঢাকা-সেন্টমার্টিন-কক্সবাজার-ঢাকা পার পারসন মাত্র ৩৯৮৯ টাকায়?

প্রথমে সায়দাবাদ থেকে হানিফ নন এসি নাইট কোচ এ উঠুন, টেকনাফ পর্যন্ত। ভাড়া ৯০০ টাকা, ছাড়ে সন্ধ্যা ৭:৩০-৮:০০ টার দিকে। একদম টেকনাফ এর কেয়ারী ঘাট এ নামিয়ে দিবে ভোর ৭ টার দিকে, নেমে নাস্তা করে নিন, ঘাটের পাশেই একটা হোটেল আছে। পরোটা, সবজি পাওয়া যায়, পরোটা ১০ টাকা আর সবজি ২০ টাকা। চা ১০ টাকা,,,,,, আমাদের ৩ জন এর ১৭০ টাকা বিল আসছিল। আশেপাশে আর কোন দোকান না থাকায় এই হোটেলে খাবারের দাম ডাবল রাখতেছে, তাই খাওয়ার আগে দাম জিজ্ঞেস করে নিবেন। নাস্তা করার আগে শীপের টিকিটটা করে নিতে পারেন, আমরা মেইন ডেক এর টিকিট করেছিলাম ৫৫০ টাকায় (up down)। শীপ ছাড়ে ৯.১৫-৯.৩০ এর দিকে। হাতে যখন সময় আছে সেহেতু ঘুরে আসতে পারেন জাহাজ ঘাটের আশেপাশে, তবে বেশিদূর না যাওয়াই ভালো। কারন ভোর বেলায় রাস্তাঘাটে তেমন মানুষ থাকে না, পাহাড়ি এলাকা, তাই সাবধান থাকাই ভালো। জাহাজ ছাড়ার আগে কাউন্টার থেকে একটা এন্ট্রি টিকিট সংগ্রহ করবেন ফ্রী তে, তারপর জাহাজের দিকে রওনা দিবেন। এন্ট্রি টিকেট টা জাহাজ ঘাটের মাথায় রেখে দিবে আর একটু সামনে গেলে জাহাজের টিকিটটাও রেখে দিবে। আর আপনাকে ২টা টিকিট দেয়া হবে, একটা যাওয়া আর একটা আসার জন্য। জাহাজে প্রবেশের আগে যাওয়ার টিকিটটা দিবেন। জাহাজ ছাড়ার পর ডেকে বেড়িয়ে আসুন, দেখতে পাবেন অনেক গাংচিল(শিউর নয়) জাহাজের আশেপাশে উড়ে বেড়াচ্ছে। গাংচিল কে দেয়ার জন্য চিপস কিনতে পারেন। নাফ নদীর উপর দিয়ে যাত্রা শুরু করার বেশকিছুক্ষন পর জাহাজ সমুদ্রে পৌছাবে আর পানি আস্তে আস্তে নীল হয়ে যাবে। চারপাশের পাহাড় আপনাকে আকর্ষণ করবে।। এইগুলা দেখতে দেখতে ১২-১ টার দিকে আপনি সেন্টমার্টিন পৌছে যাবেন। নেমেই সবার আগে হোটেল ঠিক করবেন, হোটেল দামাদামি করবেন, এখন যেহেতু সিজন চলে আসছে তাই দাম অনেক বেশি চাইবে। আমরা ১টা সিংগেল আর ২ টা ডাবল বেড এর রুম নিয়েছিলাম ৫০০ টাকায়, দোতলায়। এখন অবশ্য ভাড়া বেড়ে যাওয়ার কথা। সেন্টমার্টিনে কারেন্ট নাই, সন্ধ্যা ৭টা থেকে ১০ টা পর্যন্ত জেনারেটর চালানো হয়। ভালো হয় পাওয়ার ব্যাংক থাকলে। চেকইন করে চলে যাবেন সৈকতে গোসল করতে। গোসল শেষ করে রুমে ফিরে আসবেন, দুপুরের খাবারের জন্য আশেপাশের হোটেল গুলায় খোজ নেন। আমরা ভাত, ডাল, মাছের ভর্তা, আলু ভর্তা দিয়ে খেয়েছিলাম, ৩ জন এর বিল আসছিলো ২০০ টাকা। খাওয়ার পর হোটেলে ফিরে রেস্ট নিলাম। ৪:৩০ এর দিকে হাটতে হাটতে বের হলাম সুর্যাস্ত দেখার জন্য দ্বীপের পশ্চিম পাশে। যদি চিনতে সমস্যা হয় তাহলে দেখবেন রিকসা করে অনেকেই যাচ্ছে, ওই দিকে হাটা ধরবেন, ২০ মিনিট লাগবে যেতে। চাইলে রিকসায় যেতে পারেন, ভাড়া ৫০-৬০ টাকা নেবে। গিয়ে সুর্যাস্ত দেখবেন, এক ধরনের প্রশান্তির মতো আসবে মনে। যেদিকে মুখ করে সুর্যাস্ত দেখছিলেন তার উলটো দিকে মুখ করে তাকালেই দেখতে পাবেন বিশাল বড় চাঁদ। দেখতে এতোই কাছে মনে হবে যে ভাববেন হয়তো সামনের গাছের উপরে উঠলেই ধরে ফেলতে পারবেন চাঁদ মামা কে। সন্ধার পর রিকসায় করে ফিরে আসুন হোটেলে, এসে ফোন চার্জে দিন। রেস্ট করে ৯ টার দিকে বের হয়ে পড়ুন বারবিকিও করার জন্য।
বীচের পাশেই অনেক দোকান থাকে, দামাদামি করে একটা মাছ কিনে নিন, আমরা কিনেছিলাম ৩০০ টাকা দিয়ে কোরাল মাছ , সাথে পরোটা ৯ টা (৯০ টাকা)। সব হয়ে গেলে ৩ টা বেঞ্চ ভাড়া করে বসে পড়ুন বীচে। আর পান ৫ স্টার হোটেলে বসে খাবার স্বাদ, আমার জীবনের অন্যতম স্মরণীয় মুহুর্ত ছিলো এটা। খাওয়া শেষ করে আরো কিছুক্ষন সমুদ্রের বাতাস গায়ে লাগিয়ে ১২ টার দিকে হোটেলে ফিরে আসুন, এসে জম্পেস একটা ঘুম দিন।

Post Copied From:

ফারহান ওয়ালিদ>Travelers of Bangladesh (ToB)

সেন্টমার্টিন

কটেজের গেইট খুল্লেই নীল সমুদ্র। গেট থেকে বের হয়ে একটু বামে আসলেই বাশ দিয়ে তৈরি চা এর দোকান। যদিও কটেজ থেকে চা এর দোকাল ৩০ সেকেন্ডের পথ তাও এখানে যেতে বেগ পেতে হয়েছে।
ডিনার শেষ করে রাত ১০টার দিকে গিয়েছিলাম প্রচন্ড ঢেউ এর কারনে দোকানে যাওয়া যাচ্ছিল না। ঢেউ যখন একটু নিচে নেমে যায় তখন দৌড়ে দোকানে আসি। ঢেউ আসলে দোকানের ভিরত পানি ঢুকে যায়, সে জন্য রয়েছে বিশেষ ব্যবস্থা। ছোট ছোট বালির বস্তা আছে চেয়ারে বসে বস্তার উপর পা রাখলে পা পানিতে ভিজবে না… যদিও চা এর স্বাদ ছিল জঘন্য তাও ৩ কাপ খেয়েছি। কফি টেষ্ট করে মনে হয়েছিল ভাতের মার খাচ্ছি কিন্তু তাও কেন জানি মনে হচ্ছিল এখানে বসে কাপ হাতে না থাকলে ভাল লাগবে না,…
কফির মগ নিয়ে বসে ছিলাম মধ্য রাত পর্যন্ত। আকাশে হাজারো তারা সমুদ্রের গর্জন , সময়টা কেন যেন তাড়াতাড়ি চলে যাচ্ছিল।
শাহাবুদ্দিন ভাই ডাব কিনলেন। আমার টা বড় দেখে নিয়েছিলাম তাই টেষ্ট পাইনি, উনাদের কাছে থেকে ভাগ নিয়েছিলাম স্বাদ ভালই ছিল। জয় ক্যামেরা নিয়ে এদিক ওদিক দৌছাচ্ছে। দোকানদার এর সাথে চলছিল রোহিংগা টপিক নিয়ে আলাপ আলোচনা…
তমা আর ঐশিও বসে গল্প শুনছে আর ডাব খাচ্ছে।
ঢেউ কমেছিল রাত ১২ টার দিকে তখন চেয়ারটা সামনে টেনে বসে ছিলাম। এমন সময় জ়য় ছবিটি তুলেছিল……।।
সোনালী স্মৃতি হয়ে থাকবে সময়গুলো।

Post Copied From:
Ihdo Nahraf Adajahahs‎>Travelers of Bangladesh (ToB)

সেন্টমার্টিন

বাংলাদেশের শেষ প্রান্তে ৯ কি.মি জুড়ে বিসৃস্ত এক দ্বীপ! যেদিকেই চোখ যাবে শুধু নীল আর নীল! আজকের পোষ্ট মূলত সেন্ট মার্টিনের বিপদজনক দিকটা দেখানোর জন্য করা! আগের পোষ্টে অনেকেই জিজ্ঞসে করেছিল কোন দিকটা বিপদজনক! ছবি না থাকার কারণ দেখাতে পারি নাই! ভিডিওটা অনেক কষ্টে খুজে পেলাম,মনে করছিলাম ডিলেট হয়ে গেছে! ভিডিওটা হল সেন্টমার্টিন শীপঘাটের সামনে,যেখানে গিয়ে শীপ ভিড়ে! দেখতেই পাচ্ছেন যতদূর চোখ যাই শুধু নীল আর নীল😊! নীলের ভেতরও প্রকৃতি তার কিছু ভয়ংকর রুপ নিয়ে লুকিয়ে আছে সেটাকে দারুচিনি বীচ বলা হয়! সেটাই হল সেন্ট মার্টিনের সব থেকে ভয়ংকর জায়গা! সেখানে অবশ্য লাল পতাকা লাগানো আছে,কিন্তু আমাদের অনকেই সেই কথাটা মাথায় রাখি না! যাই হউক সবাই এই দিকটা এড়িয়ে চলবেন!গত বছর ঢাকার কোন একটা ভার্সিটি ট্যুরে গিয়ে ওখানে ২-৩ নাকি মারা গেছে! আর দুইটা ভয়ংকর জায়গার নাম বলি! যারা সেন্টমার্টিন থেকে সাইকেলে করে ছেড়াদ্বীপ যাবেন তারা অবশ্যই স্থানীয় লোকজন থেকে জোয়ারের সময়টা জেনে নিবেন! কারণ যে রাস্তা দিয়ে যাবেন,আসার সময় জোয়ার হলে সে রাস্তা ডুবে যাবে! সে রাস্তা গুলাতে অসংখ্য ছোট বড় গর্ত আছে,যেগুলা জোয়ার হলে দেখতে পাবেন না,তখনই ঘটে যাবে বড় ধরনের দুর্ঘটনা! আরেকটা বিষয় সব সময় মাথায় রাখতে হবে,সেটা হল ছেড়াদ্বীপপের প্রবাল গুলার কথা! প্রবালগুলা এতটাই পিচ্ছিল আর দাড়ালো যে যারা দুর্ঘটনার শিকার হয়েছেন তারাই বুঝতে পারবেন! তাই সবসময় ভাল মানের জুতা ব্যবহার করবেন,আর আর একটু সাবধানে থাকবেন!😊 কিছু সময়ের আনন্দ নিতে গিয়ে আমাদের মূল্যবান জীবনটাই যেন হারিয়ে না যায়!
আর যাদের স্কুবা সম্পর্কে কনফিউশনে আছেন,তাদের জন্য বলি সেন্ট মার্টিনে স্কুবা করা যায়! ঘাট থেকে একটু দূরেই ওদের অফিস আছে! যারা সাতার জানেন না তাদের স্কুবা না করাটা ভাল’!
সেন্ট মার্টিনে কয়েকটা জিনিসের খুব বেশি প্রয়োজন পড়ে!
১/ আইডি কার্ড: টেকনাফ যাওয়ার পথে আপনাকে কয়েকবার বিজিবি,সেনাবাহিনী,পুলিশের হয়রানির শিকার হতে হবে যদি মেরিম ড্রাইভ দিয়ে যান! তাই সাথে করে আইডি কার্ড রাখাটা ভাল!
২/সান্সক্রিম ও চসমা: সেন্ট মার্টিনে প্রচুর পরিমাণে রোদ,যখন বীচে যাবেন তখন সানগ্লাস এন্ড সান্সক্রিম ব্যবহার করাটা উত্তম!😊
অনেক জ্ঞান দিয়ে ফেললাম,ভূলক্রুটি হয়ে থাকলে ক্ষমার দৃষ্টিত্র দেখবেন!

হ্যাপি ট্রাভেলিং! ভ্রমণে ভ্রমণে সুন্দর হয়ে উঠুক আপনার আমার সবার জীবন!😊

Post Copied From:

Rony Bhuiyan‎ < Travelers of Bangladesh (ToB)