সমুদ্র পথে বিদেশ ভ্রমণ

সমুদ্র পথে বিদেশ ভ্রমণ (সিঙ্গাপুর – মালায়শিয়া – থাইল্যান্ড)

১১ টি ডেকের প্রায় ৯০০ ফিট জাহাজ Royal Caribbean – Legend of the sea. ২০০০ লোকের ধারণ ক্ষমতা, কি নেই জাহাজটাতে, বড় থিয়েটার, সুইমিং পুল, দৌড়ানোর জন্য ট্র্যাক, মিনি গল্ফ, সিনেমা হল, ক্যাসিনো, ক্লাব,শপিং সেন্টার, ফটো ষ্টুডিও , বাচ্চাদের খেলার জায়গা । তার সাথে তো রয়েছে ৩ বেলা বুফে খাবার। আর ভারত মহাসাগরের অভূতপূর্ব সৌন্দর্য তো আছেই।

সবচেয়ে অবাক করা বিষয় ছিল এই সব সুবিধা সহ চার দিন – তিন রাতের খরচ ছিল মাত্র ৩০,০০০ টাকা।

আমরা প্রথমে ঢাকা থেকে সিঙ্গাপুর যাই, তারপর Harbourfront থেকে সকালে উঠে পড়ি বিশালাকারের জাহাজে। সকলের পাসপোর্ট জমা নিয়ে অদের একটা কার্ড দিয়ে দেয়, যা দিয়ে দরজা খোলা থেকে শুরু করে যে কোনো জিনিস কেনা যায়। শুরু হয় এক নতুন ভ্রমণ অভিজ্ঞতার।

জাহাজে বোরিং লাগার কোনো বিষয় নেই, সব সময়ই একটা না একটা প্রোগ্রাম চলতে থাকে।

একদিন ভারত মহাসাগরের মাঝে চলার পর নোঙ্গর ফেলে মালয়েশিয়ার Port Klang এ। একটা বিষয় এখনো আমার কাছে রহস্য রয়ে গেছে তা হলো আমাদের মালয়েশিয়ার কোনো ভিসা ছিলোনা, আমাদের পাসপোর্ট এ মালয়েশিয়ার entry / exit সীল ও নেই, কিন্তু আমরা জাহাজ থেকে নেমে Port Klang থেকে কুয়ালালামপুর ঘুরে আসি। কুয়ালালামপুর থেকে জাহাজে ফিরি বিকেল ৪ টায়। তারপর জাহাজ চলতে থাকে থাইল্যান্ড এর Phuket এর উদ্দেশ্যে।

এর পরদিন সকালে জাহাজ পৌঁছে যায় Phuket এ, সারাদিন ফুকেটে থাকার পর সন্ধ্যায় আবার রওনা হয় সিঙ্গাপুরের উদ্দেশ্যে।

খরচ / পারসন :
ঢাকা – সিঙ্গাপুর : ২২,০০০ ~ ২৬,০০০ টাকা
Cruise: ৩০,০০০ ~ ৩৫,০০০ টাকা

সিঙ্গাপুর অনেক এক্সপেন্সিভ, সিঙ্গাপুরে থাকলে খরচ বেড়ে যাবে। যারা সমুদ্র পছন্দ করেন তারা চেষ্টা করবেন একবার হলেও এই ভ্রমণ অভিজ্ঞতা নেয়ার।

 

 

********** আপডেট ১**********

অনেকের আগ্রহ দেখে ভালো লাগছে – ক্রুজ শিপ ভ্রমণ সম্পর্কে সবাই ধরে নেয় লাখ লাখ টাকার বিষয় আসলে তা নয়। আমি বুকিং – খরচের আরো ডিটেলস পরে জানাবো।

আশা করি সবার সাধ আর সাধ্য এক হবে।

********** আপডেট ২**********

অনেকে ডিটেইলস জানতে চেয়েছেন – যতটুকু সম্ভব এই আপডেট এ জানাচ্ছি।

* আমি cheapest way টা দেখানোর চেষ্টা করেছি।
* Visa Application – Air Ticket – Hotel booking নিজে করতে হবে
* ফেব্রুয়ারীর ১৩ – ১৭ তারিখের ক্রুজ জার্নির জন্য খরচের estimate করা
* দুই জনের হিসেবে করা হয়েছে
* ডলার ভ্যালু ৮১ টাকা ধরা হয়েছে

ভিসা:

সিঙ্গাপুর – Double Entry – 2600 টাকা (Ref: http://www.saimongroup.com/singaporevisa/Visa_Fee ) ট্রাভেল এজেন্সী ৪০০০ থেকে ৬৫০০ টাকা নেবে। ক্রুজ এর invitation থাকলে ভিসা পাওয়া সহজ।

থাইল্যান্ড – Single Entry – ৫৪০ টাকা (http://www.vfsglobal.com/Thail…/Bangladesh/Tourist_Visa.html )ট্রাভেল এজেন্সী ১০০০ – ১৫০০ টাকা

মালয়েশিয়া – ভিসা প্রয়োজন নেই, হয়তো cruise কোম্পানির সাথে মালয়েশিয়ার গভঃ স্পেশাল arrangement আছে। মালয়েশিয়ায় ঢুকার সময় কোনো ইমিগ্রেশন পার হতে হয়না।

এয়ার টিকেট :

Feb ১২ – Feb ১৭

Tiger Airlines: (Dhaka – Singapore) – ২৩,৮১৫ টাকা (রিটার্ন এয়ার টিকেট সহ)

ক্রুজ শীপ:

Royal Caribbean – Mariner of the Sea
Room type: Interior state room

খরচ: ৬৮,৭০০ (২ জনের)

বুকিং http://www.royalcaribbean.com/

Included:

– ৪ দিন / ৩ রাত থাকা
– ৩ বেলা বুফে খাবার (Chinese, Indian cuisines)
– বিকেলে পিজ্জা – আনলিমিটেড (২ পিস নেয়ার পর লজ্জা লাগতো 😛 )
– ক্যাপ্টেন’স ককটেল পার্টি
– Most of the entertainment and services.

– সফ্ট ড্রিঙ্কস ইনক্লুডেড না – তবে $১২ দিয়ে ৪ দিনের জন্য আনলিমিটেড ড্রিঙ্কস প্যাকেজ নেয়া যায়।

Excluded:

– ইন্টারনেট / টেলিফোন সার্ভিস (সিম রোমিং করা থাকলে প্রায় এ অসুবিধা হয় না )
– ক্যাসিনো
– ড্রিঙ্কস
– লন্ড্রি সার্ভিস
– Gratuity
– Shore excursions
– শপিং

Dress code:

– শুধু ক্যাপ্টেন্স ককটেল পার্টি (valantines night a) ড্রেস কোড রয়েছে। ছেলেদের – Tuxedo (অথবা যেকোনো ধরণের স্যুট), মেয়েদের – black এন্ড shine ড্রেস।

ক্যাপ্টেন্স ককটেল পার্টি ডিনার এ ড্রেস কোড মেইনটেইন না করলে একটু বিব্রতকর পরিস্হিতিতে পরতে পারেন।)

সেবার মান – ৫ star মানের

নিচে ২ ধরণের জার্নি উল্লেখ করলাম (যার জন্য যেটা প্রযোজ্য)

জার্নি ১ – (cheapest)

১. ঢাকা – সিঙ্গাপুর by air ( ১২ ফেব্রুয়ারী রাত ৯:৩০)
২. সিঙ্গাপুর এ প্লেন ল্যান্ড করবে রাত ৩:০০ টায়, ইমিগ্রেশন পার হতে রাত ৪:০০ টা
৩. রাত ৪ টা থেকে সকাল ৮ টা পর্যন্ত রেস্ট এয়ারপোর্ট এ। (ডিউটি ফ্রি শপ আর লাউঞ্জে সময় কেটে যাবে )
৪. সকাল ৮ টায় Uber / ট্যাক্সি নিয়ে HarborFront
৫. সকাল ১০ টায় জাহাজে চেকইন
৬. Enjoy the trip
৭. ১৭ তারিখ সকাল ১১ টায় জাহাজ HarborFront নোঙ্গর ফেলবে।
৮. বিকেল ৫:৩০ রিটার্ন ফ্লাইট to ঢাকা

ভিসা (নিজ) + এয়ার টিকেট + ক্রুজ টিকেট = ৬১,৩০০ টাকা
Shore excursions + অন্যান + আমার জন্য চকলেট 😛 = ১০,০০০ টাকা

মোট – ৭১,৩০০ / পারসন

জার্নি ২ – (comfortable)

১. ঢাকা – সিঙ্গাপুর by air ( ১১ ফেব্রুয়ারী রাত ৯:৩০)
২. সিঙ্গাপুর এ একদিন থাকা
৪. ১৩ তারিখ সকাল ৮ টায় Uber / ট্যাক্সি নিয়ে HarborFront
৫. সকাল ১০ টায় জাহাজে চেকইন
৬. Enjoy the trip till 17th
৭. ১৭ তারিখ সকাল ১১ টায় জাহাজ HarborFront নোঙ্গর ফেলবে।
৮. সিঙ্গাপুর এ দুই রাত থাকা
৯. ১৯ তারিখ বিকেল ৫:৩০ রিটার্ন ফ্লাইট to ঢাকা

ভিসা (এজেন্সী) + এয়ার টিকেট + ক্রুজ টিকেট = ৬৫,০০০ টাকা
সিঙ্গাপুর থাকা + shore excursions + অন্যান + আমার জন্য চকলেট 😛 = ৩৫,০০০ টাকা

মোট: ১ লক্ষ টাকা / পারসন

Post Copied From:Hasan Shahriar‎>Travelers of Bangladesh (ToB)

মাতৃভূমি তে তো অনেক ঘুরাঘুরি হল, এবার চলুন একটু দেশের বাইরে থেকে ঘুরে আসি

স্থানঃ সিঙ্গাপুর

কিভাবে যাবেনঃ উড়োজাহাজ ছাড়া গতি নাই। ইউএস বাংলা, বাংলাদেশ বিমান, মালিন্দ, রিজেন্ট এই বিমান গুলি করে যাওয়া যাবে। কোন কোন টার বিরতি থাকে মালয়সিয়া তে। তবে বিরতি না নেওয়া ই ভাল। ৪ ঘণ্টা লাগে পৌছাতে।

ভাড়াঃ +/- ২৫,০০০ টাকা

কোথায় থাকবেনঃ অনেক হোটেল আছে সিঙ্গাপুর এ। কিন্তু অন্যান্য দেশের থেকে সিঙ্গাপুর এ হোটেল ভাড়া বেশি। এর প্রধান কারন হল, দেশ টা খুব ছোট, আর বেশীরভাগ ই টুরিস্ট প্লেস। তবে অনেক উন্নত তারা। বিশেষ করে ওদের ট্রাফিক সিস্টেম অনেক উন্নত। অস্ট্রেলিয়া এর ট্রাফিক সিস্টেম ও হার মানবে। এক রাতে থাকার জন্য ২/৩ তারকা হোটেলে ভাড়া গুনতে হবে ৬০০০ – ৭০০০ টাকা। তবে অফ সিজন এ কিছু কম হতে পারে। হোটেল বুকিং দিতে অনলাইন সাইট গুলি দেখে নিন। একা থাকার জন্য অনেক হোস্টেল পাওয়া যায়, ওগুলা তে ভাড়া আরো কম।

সিকিউরিটিঃ সিঙ্গাপুর এর সিকিউরিটি অনেক ভাল। রাত ৩/৪ টা পর্যন্ত ঘুরা ঘুরি করে টুরিস্ট রা। অনেক ২৪/৭ শপ ও খোলা থাকে। ঘুরতে এসে ঘুমালে কি চলে?

ট্রান্সপোর্টঃ সিঙ্গাপুর এ পাতাল ট্রেন খুব ই পপুলার। ইজি লিংক কার্ড কিনে সহজেই এক স্থান থেকে অন্য স্থান এ যাওয়া যায়। খরচ পরবে $১৫ (টপ আপ কার্ড)। এই কার্ড দিয়ে বাস এও চলা যায়। তবে গ্রুপ এ গেলে ট্যাক্সি তে করেও যাওয়া যায়। এতে খরচ কম হয়।

খাবারঃ সব ধরনের ইন্টারন্যাশনাল ব্রান্ড রেস্টুরেন্ট গুলি আছে সিঙ্গাপুর এ। বেশির ভাগ ই হালাল খাবার সরবারহ করে। তবুও জিজ্ঞাস করে নেয়া ভাল। আর আমরা বাঙালি দের জন্য বাংলা খাবার এর ও ব্যবস্তা আছে। এর জন্য যেতে হবে মোস্তফা সেন্টরে। এর আসে পাশে অনেক বাঙালি রেস্টুরেন্ট আছে। ওখানে $৪ এর তরকারি আর $১ এ ভাত পাওয়া যায়। রান্না ও অনেক ভাল এবং মজা। $১০ এ ৩ জন সহজেই খাওয়া যায়।

ঘুরাঘুরিঃ ঘুরা ঘুরি করার জন্য বেশি বেগ পেতে হবে না। পুরা সিঙ্গাপুর শহর টাই একটা টুরিস্ট প্লেস। যেখানে যাবেন সেখানেই দেখার অনেক কিছু। পুরা সিঙ্গাপুর শহর এ ১০০ এর ও বেশি টুরিস্ট অ্যাটরাকশন আছে। এর মধ্যে কয়েকটা পপুলার প্লেস হল, মেরিনা বে, মারলিওন পার্ক, ইউনিভারসাল স্টুডিও, সান্তসা আইসল্যান্ড, সিঙ্গাপুর যু, মাদাম তুসদ, নাইট সাফারি এবং আরও অনেক। তবে মনে রাখবেন, সব গুলি পার্ক এই প্রবেশ করতে টিকেট লাগে, আর টিকেট এর দাম ও বেশ চড়া। উধাহরন স্বরূপ ইউনিভারসাল স্টুডিও এর টিকেট এর দাম $৭৬, যেটা প্রায় ৪৫০০ টাকার সমান। যাওয়ার আগে ভাল করে খোঁজ নিয়ে নিন কত টাকার টিকেট কিনতে হবে। সব ইনফর্মেশন অনলাইন এ পাওয়া যায়। বলে রাখা ভাল, পৃথিবীর ২য় এবং ৩য় দামী বিল্ডিং সিঙ্গাপুর এই অবস্থিত।

কেনাকাটাঃ এমন কোন ব্র্যান্ড এর শপ নাই যে সিঙ্গাপুর এ নাই। ব্র্যান্ডেড কিছু কিনতে হলে অরচিড স্ট্রিট, প্লাজা সিঙ্গাপুরা এই সব জায়েগা তে যাওয়া ভাল। আর বাজেট কেনাকাটার জন্য বুগিজ স্ট্রিট, মুস্তাফা সেন্টার এই জায়েগা গুলা বেশ ভাল। তবে আর ও অনেক শপিং কমপ্লেক্স আছে পুরা শহর জুড়ে।

আশা করি লেখাটা আপনাদের অল্প হলেও কাজে আসবে। কোন প্রশ্ন থাকলে কমেন্ট সেকশন এ করতে পারেন।

ধন্যবাদ এবং ভ্রমণের শুভেচ্ছা।

Post copied From:Zay Hasan‎>Travelers of Bangladesh (ToB)

কম খরচে প্যাকেজ প্ল্যান

#সিঙ্গাপুর

যদি আপনি ভ্রমণ পিপাসু হয়ে থাকেন তাহলে ভ্রমণের কথা চিন্তা করলেই নিজে নিজে প্যাকেজ প্ল্যান করুন। এতে আপনি ইচ্ছা স্বাধীনভাবে কম খরচে ঘুরতে পারবেন। একদম সহজ উপায়ে এই বেড়ানো সম্ভব কিন্তু আমরা অনেকেই এটিকে অসম্ভব মনে করে অন্যের মাধ্যমে বেশী টাকা দিয়ে বেড়াতে যাই।

দেড় বছর আগে আমার ভ্রমনটি যেমন ছিলঃ

মালিন্দো এয়ারলাইন্সে রিটার্ন সহ জনপ্রতি ২৫৫০০/- টাকা দিয়ে আমরা হাজবেন্ড ওয়াইফ দুটি টিকিট কাটলাম। আমাদের রুট ছিল প্রথমে ঢাকা টু সিঙ্গাপুর ( ট্রানজিট মালয়েশিয়া) ০২ রাত সিঙ্গাপুর থাকার পর সিঙ্গাপুর থেকে মালয়েশিয়া। এরপর মালয়েশিয়া ৪ রাত থাকার পর মালয়েশিয়া টু ঢাকা।
ঢাকা থেকেই অনলাইনে প্রতিরাত ১০০ সিঙ্গাপুর ডলারে Claremont Hotel সিঙ্গাপুরে দুইরাত ডাবল রুম বুকিং দিলাম। এছাড়া ৫০ ইউ এস ডলারে ৪ রাত Metro hotel মালয়েশিয়াতে বুকিং দিলাম।

ভ্রমণের প্রথম অধ্যায় সিঙ্গাপুরঃ
আমরা ঢাকা থেকে যাত্রা শুরু করলাম রাতে। মালয়েশিয়ার স্থানীয় সময় ভোরে পৌঁছাইলাম। সেখানে ৩ ঘন্টা এয়ারপোর্টে ট্রানজিট সময় পার করে পরবর্তী প্লেনে চলে গেলাম সিঙ্গাপুর। এটি ছিল আমার সিঙ্গাপুরে প্রথম ভ্রমণ। যদিও এর আগে একবার রাতের আকাশ থেকে সিঙ্গাপুর দেখেছিলাম আর তখনই বুঝেছি কতইনা সুন্দর একটি দেশ। বাস্তবে যখন সিঙ্গাপুর এয়ারপোর্টে পা রাখলাম তখনই বাকীটা বুঝে গেলাম এ বুঝি আমেরিকাকে ছোট পরিসরে কোন শোকেসে রাখা হয়েছে !!!!
পুরো এয়ারপোর্টটি রঙ্গিন কার্পেট দ্বারা আবৃত। যেন চারিদিকে ঝকঝক করছে। কিছু দূর হেঁটে স্কেলেটারে নেমে সোজা চলে গেলাম আন্ডারপাস ট্রেন ষ্টেশনে। আগেই বলে রাখি সিঙ্গাপুরে একটি আসাধারণ ট্রেন সার্ভিস চালু। মাটির উপরে বেশী লোকজন না দেখলেও মাটির নীচ দিয়ে হাজার হাজার মানুষের এক স্থান থেকে অন্য স্থানে যাতায়াত চলে। প্রতিটি এলাকাতেই কোননা কোন বড় বিল্ডিং বা শপিং মলের নীচে ট্রেন স্টেশন এবং দোতলা তিনতলা পর্যন্ত আন্ডার গ্রাউন্ডে একাধিক প্ল্যাটফর্ম থেকে বিভিন্ন রুটে ট্রেন চলে যা উপর থেকে কোনই বুঝার উপায় নেই।
যাইহোক আমি ষ্টেশনে যেয়েই একটি ম্যাপ নিলাম এবং দশ সিঙ্গাপুর ডলার করে দুইটি ট্রান্সপোর্ট কার্ড নিলাম কাউন্টার থেকে। এছাড়া ভ্রমণ লোকেশন অনুযায়ী আপনি বুথ বা কাউন্টার থেকে টিকিট কিনতে পারবেন তবে এই কার্ড দিয়ে আপনি সিঙ্গাপুরে যেকোন স্থানে বাস অথবা ট্রেনে ভ্রমণ করতে পারবেন এবং ঝামেলা মুক্ত। আমার যতদূর মনে আছে আমরা দুইজনে কার্ড ক্রয়সহ মোট ৪বার রিচার্জ করে অর্থাৎ ৫৭*৪০ডলার = ২২৮০টাকায় পুরো সিঙ্গাপুরে ট্রেন ভ্রমণ করি। ট্রেনের সিস্টেমটি এত সুন্দর যা আমাদের দেশ আগামী ২০০ বছরেও মনেহয় চিন্তা করতে পারবেনা। আমি কার্ডটি ওয়ালেটে ঢুকিয়ে রাখলাম এবং কার্ডের সেন্সর এত ভাল যে ওয়ালেট সহ টাচ করলেও তা কাজ করে। টাচ করে ট্রেন ষ্টেশনের প্ল্যাটফর্মে ঢুকলেও আপনার টাকা কাটবেনা। এবার আপনি ভিতরে ঢুকে এক ষ্টেশন থেকে আর এক ষ্টেশন করে পুরো সিঙ্গাপুর ঘুরে ফেললেও যেই মাত্র পান্স করে আউট হবেন ঠিক তখনই কার্ড থেকে আপনার টাকা কাটবে। মেশিন শুধু কাউন্ট করবে আপনি কোথা থেকে ইন হয়েছেন আর কোথায় আউট হয়েছেন তার দূরত্বের ভাড়া। এভাবে ম্যাপ দেখে মাঝে একটি প্ল্যাটফর্ম চেঞ্জ করে অন্য ট্রেনে উঠে হোটেলের এরিয়ার ষ্টেশনে নেমে পড়লাম এবং মাটির নীচ থেকে গ্রাউন্ডে উঠে ১০০ গজ পায়ে হেঁটেই আমার হোটেল পেয়ে গেলাম। এই হোটেলটি নেওয়ার কারন ছিল এটি মোস্তফা সেন্টারের পাশেই। হোটেলে যেয়েই গোসল করে ফ্রেস হয়ে নিলাম। সিঙ্গাপুর খুব ব্যয়বহুল সিটি এজন্য ১০০ ডলারেও মনমত হোটেলটি ছিলনা। এরই মাঝে দুপুরে ক্ষুধা লেগে গেল। খুব ভাত খেতে মন চাচ্ছিলো। সিঙ্গাপুরে অবস্থানরত আমার ছোটবেলার বন্ধু হোটেলে হাজির। উদ্দ্যেশ্য আমাকে সংজ্ঞ দিবে। তার সঙ্গে পায়ে হেঁটে চলে গেলাম এমন জায়গা মনেহয় আমি ঢাকার প্রেসক্লাবের সামনেই আছি। রাস্তাঘাট একটু স্যাঁতসেঁতে দেখেই বুঝতে পারলাম বাঙ্গালী পাড়া :p সেই ধানসিঁড়ি, বাসমতি, ফকরুদ্দিন থেকে শুরু করে ঢাকার সব রেস্তোরাই আছে সেখানে। আর ঠিক ঢাকার মত সব আড্ডাবাজি চলছে সেখানে। করল্লা সহ বিভিন্ন শাক-সবজি ও বড় বাইন মাছ দিয়ে ভরপুর সেটে দিলাম ভরা দুই প্লেট 🙂 খাওয়া দাওয়া শেষ করে হোটেলে এসে কিছুক্ষণ রেস্ট নিয়ে ড্রেস চেঞ্জ করে তিনজন চলে গেলাম মেরিনা বে। মেরিনা বে সিঙ্গাপুরের সবচেয়ে আকর্ষনীয় স্থানের মধ্যে একটি। মূল সিটি সহ অফিস পাড়া সেখানে। চারিদিকে বিশাল বিশাল বল্ডিং। বড় একটি লেকের একপাশে সিংহের মূর্তির মুখ দিয়ে পানি বের হচ্ছে আর একপাশে পরপর তিনটি বিল্ডিংয়ের উপরে শীপের আকৃতি যেটিকে মেরিনা বে স্যান্ডস বলে। আরো একপাশে ওপেন স্টেডিয়ামও আছে। সোজা কথা তার চারিপাশে বিনোদনের স্থান। ঘুরে ঘুরে আর ছবি তুলে সন্ধ্যা হয়ে গেল। এরপর শুরু হলো পানির লেজার সো যা এখন হাতিরঝিলে করেছে। আঁধার নামতেই চারিদিকে লাইটিংয়ে পুরো সিঙ্গাপুর ঝকঝক করছে। Marina Bay sands বিল্ডিংয়ের নীচে অয়ার্ল্ড ক্লাস ক্যাসিনো। পাসপোর্ট ছাড়া সেখানে ঢুকা যায় না। সেখানেও আমরা ঢুকলাম। মাথা নষ্ট করার মত সেই ক্যাসিনো। চারিদিকে শুধু জুয়ার আসর। এক সুন্দরী এসে এক গ্লাস ফ্রি সফট ড্রিংস দিল সেটি হাতে নিয়ে ভাব নিয়ে চারিদিকে ঘুরে ঘুরে জুয়ার আসর দেখলাম। ভাব দেখে সুন্দরীরা শুধু আমন্ত্রন জানাচ্ছে জুয়া খেলার জন্য কিন্তু আমি জাতে মাতাল হলেও তালে ঠিক আছি সেটি বুঝে নাই 🙂 সেই আসর থেকে বের হয়ে বিল্ডিংয়ের ভিতরে প্রবেশ করলাম। সেখানে দেখি আর এক আজব বিনোদন। বিল্ডিইংয়ের ভিতরেই কৃত্রিম ক্যানেল যেখানে দশ ডলারের বিনিময়ে বেশ কিছুক্ষণ সাম্পান রাইড করতে পারবেন। এরই মাঝে বাহিরে খুব মিউজিক কানে ভেসে আসলো। রাত হয়ে গেছে বাহিরে বের হয়ে বিল্ডিংয়ের পিছনে যেতে দেখলাম বিশাল বিশাল কৃত্রিম অনেক গাছ এবং পুরো গাছ গুলোই লাইটিং করা। সবাই মাটিতে বসে উপভোগ করছে। মিউজিকের সাথে লাইটিংয়ের খেলা দেখতে থাকলাম। অনেক সময় হয়ে গেল ক্লান্ত লাগতে থাকলো তাই হোটেলে ফিরে আসলাম। খাওয়া দাওয়া করেই হেঁটে চলে গেলাম মোস্তফা সেন্টারে। এই সেন্টারটি সারারাত খোলা। এমন একটি দোকান যেখানে ঢুকলে আপনি সব কিছুই পাবেন। শপিং করে হোটেলে ফিরলাম। পরের দিন সকালে চলে গেলাম ট্রেনে Sentosa and Universal Studio একই স্থানে অবস্থিত দুটি বিনোদন স্থান যা সারাদিনেও আপনি ঘুরে শেষ করতে পারবেন না। Sentosa তে ছোট ছোট দুই একটা বীচ আছে তা উপভোগ করে আর কোন কিছু না দেখে সোজা ঢুকে পড়লাম Universal Studio তে। অনেক মজার স্থান এটি। যতদূর মনে হয় জনপ্রতি ৭০ সিঙ্গাপুর ডলার লাগে ঢুকতে। এই টিকিটে ঢুকেই আপনি সেখানের সব রাইড উপভোগ করতে পারবেন। ইংলিশ মুভিতেই দেখা যায় যা অনেক কিছুই উপভোগ করলাম। যার মধ্যে উল্লেখ্যযোগ্য ছিল Transformers . Roller coaster, Canopy Flyer, Jurassic park, Revenge of the Mummy, Madagascar, Treasure Hunters আমার কাছে সবচেয়ে ভয়ঙ্কর ছিল রোলার কোস্টার এবং ট্রান্সফর্মার। প্রতিটি রাইড এত চমৎকার যে বিনোদন কাহাকে বলে হাড়েহাড়ে টের পাবেন। অসাধারণ অভিজ্ঞতা যে না দেখবে তাকে বুঝানো যাবেনা। সারাদিন শেষ করে সন্ধ্যায় ফিরে আসলাম হোটেলে। খুব ক্লান্ত তাই খাওয়া শেষে বেশ কিছুক্ষণ রেস্ট নিয়ে রাত ১২টায় চলে গেলাম মোস্তফা সেন্টারে। মনমতো সপিং করলাম। দাম একটু বেশী হলেও সিঙ্গাপুরে সব কোয়ালিটি পণ্য পাওয়া যায়। শপিং সেন্টার থেকে কম মূল্যে গোল্ড কিনতেও বউ ভুল করলো না 🙁 যাইহোক রাত ৩টা বেজে গেল। মল থেকে বের হয়ে মলের পাশ দিয়ে হাঁটছি। সিঙ্গাপুরের নিরাপত্তা দেখে হতবাক হয়ে গেলাম। এত কাছের একটি দেশ তারপরেও কতইনা সভ্য। মলের পাশ দিয়ে যখন হাঁটছি বাহির থেকে দেখলাম গ্লাসের ভিতর শতশত ডায়মন্ড ও স্বর্নের নেকলেস ডিসপ্লে করা এবং তার গ্লাসডোরে শুধুমাত্র বাই সাইকেল ব্যবহার করা লক লাগানো যা সহজেই গ্লাস ভেঙ্গে বা লক ভেঙ্গে ডাকাতি করা যায় অথচ কেউ ভুলেও তা ধরছেনা। বিষয়টি অদ্ভুদ লেগেছে যেহেতু চোরের দেশে আমাদের জন্ম 🙁
যাইহোক পরের দিন সিঙ্গাপুর ভ্রমণ শেষ করে ট্রেনে আবার এয়ারপোর্ট এসে সেই মালিন্দোতে রওনা দিলাম মালয়েশিয়া। অনেক বড় লেখা তাই এ পার্ট এখানেই শেষ করছি

Post Copied From:Miah Mizanur Rahman Kazol‎>Travelers of Bangladesh (ToB)