দিল্লীর দালাল, সাবধান

শ্রীনগর এয়ারপোর্টেই আমাদের প্রায় ২ ঘণ্টা দেরি হয়ে গেল, প্লেন দেরি করে আসা আর আবহাওয়ার কারনে আরও দেরি করে ছাড়ায়। তার মানে সন্ধ্যার দুরন্ত এক্সপ্রেস মিস হয়ে যাচ্ছে, কারন প্লেন দিল্লী পৌঁছান আর ট্রেন ছাড়ার সময়ের মধ্যে ২:৩০ ঘণ্টার ব্যবধান ছিল। ওদিকে দুইমাস আগেই দুরন্ত এক্সপ্রেসের টিকেট কেটে রেখেছিলাম প্রায় ৩০০০ টাকা করে! কিন্তু সেই চিন্তা করে তো আর লাভ নেই।

তবুও দিল্লীর আকাশে যখন প্লেন এলো নিচে এয়ারপোর্ট, রানওয়ে দেখতে পারছিলাম আবছা আবছা। কিন্তু প্লেন ল্যান্ড করতে পারছেনা, কারন নিচের আবহাওয়া অনেক খারাপ, যেটা উপর থেকে ঠিক বোঝা যাচ্ছেনা। ২০ মিনিট প্লেন আকাশে চক্কর দেবার পরে যখন ল্যান্ড করলো তখন হাতে মাত্র ২০ মিনিট সময় আছে। অথচ আমাদের স্টেশনে যেতে অন্তত ৪০ মিনিট লাগবে জ্যাম না থাকলেও।

আমাদের অবস্থা জেনে একজন পরামর্শ দিলেন, ট্যাক্সি না নিয়ে যেন মেট্রোতে যাই। তাহলে অনেকটা সময় বেঁচে যাবে স্টেশনে পৌছানোর, অন্তত সন্ধ্যায় দিল্লীর ভয়াবহ জ্যামটা এড়ানো যাবে। মেট্রোর খোঁজ নিতে গিয়ে জানলাম সেটাও এই আভ্যন্তরীণ টার্মিনাল থেকে নয়, এখান থেকে ১০ মিনিটের গাড়ি বা বাসের পথ। পড়িমরি করে উঠে পরলাম ছেলে-ছেলের মা আর ব্যাগপত্র নিয়ে দাড়িয়ে থাকা বাসে। কোন রকমে উঠতেই বাস ছেঁড়ে দিল। আর মাত্র ৮ মিনিট চলার পরেই আমাদেরকে মেট্রো স্টেশন নামিয়ে দিল। হাতে সময় আছে ১২ মিনিট, মানে নিউ দিল্লী স্টেশন থেকে দুরন্ত একপ্রেস ছাড়ার। ট্রেন পাবোনা জানি, তবুও মিথ্যে করে হলেও আশাকে বাঁচিয়ে রেখে বাকি পথটুকু চলার অনুপ্রেরণা খোঁজা।

তাড়াহুড়োতে মেট্রোতে ভুল টিকেট কাটা হয়েছিল ট্রেনের পরিবর্তে বাসের! যেটা বুঝতে পারলাম প্লাটফর্মে ঢুকতে গিয়ে, আবার সেই টিকেট ফেরত দিয়ে, মেট্রোর টিকেট কাটা হল, নিচে নেমে দেখলাম ট্রেন আসতে তিন মিনিট বাকি আছে, বড় করে লাগোয়া ট্রেনের টাইম টেবিল সেখানে অনবরত ভেসে চলেছে। ঠিক তিন মিনিট পরে ট্রেন এলো। আমরা উঠে পরলাম।

যথেষ্ট সিট ফাঁকা আছে কিন্তু ট্রেন মিসের দুশ্চিন্তা আর রাতে কোথায় থাকবে সেই টেনশনে সবাই দাড়িয়েই ছিলাম। ২৫ মিনিট পরে মেট্রো নিউ দিল্লী ষ্টেশনের উল্টো পাশে, পুরনো দিল্লীতে নামিয়ে দিল। বুকে তখনও কিছুটা মিথ্যে আশা বেঁধে রেখেছি যদি ট্রেন এক ঘণ্টা লেট হত? কিন্তু না প্লাটফর্মের বাইরে বেরিয়ে কুলিদের জিজ্ঞাসা করাতে জানালো ঠিক ২০ মিনিট আগে একদম সঠিক সময়ে ট্রেন ছেঁড়ে দিয়েছে!

মানসিক প্রস্তুতি সবারই ছিল তবুও, সবাই মুহূর্তেই ভেঙে পড়লো, মানসিক ও শারীরিকভাবে। প্রত্যেকে ব্যাগের উপরে বসে পরলো, ভীষণ বিষণ্ণতায়, নিদারুণ মন খারাপ করে। ওদের এই অবস্থা দেখে দিল্লীর দালালরা আমাদেরকে পেয়ে বসলেন। ট্রেনের টিকেট নিয়ে নানা রকম ফন্দি ফিকির শুরু করে দিল। কনফার্ম টিকেট আছে, আগামীকালকের, মাত্র ৫০০ রুপী করে বেশী দিতে হবে, কেউ ৪০০ রুপী আবার কেউ ৩০০ রুপী বেশী দিয়ে ট্রেন টিকেটের নানা রকম প্রলোভন দেখিয়ে যাচ্ছে। ওদের কাছে ছাড়া নাকি আগামী ৭ দিনের কলকাতার কোন টিকেট নেই! এটা শুনে ওরা চারজন আরও মুষড়ে পরলো যেন! দালালদেরকে বললাম আগে নিজ থেকে ফরেন কোটার খোঁজ নেব, তারপর অন্য ভাবনা ভেবে দেখবো। ওরা জানালো বিকেল পাঁচটার পরে ফরেন কোটার অফিস বন্ধ হয়ে যায় আর শুক্রবার বন্ধ থাকে! তবুও বললাম আগে খোঁজ নিয়ে নেই।

আমি তখনও চুপচাপ আছি। ওদেরকে একটা কর্নারে যেখানে সিসি টিভির পুরো ফুটেজ পাওয়া যায় তেমন যায়গায় ব্যাগপত্র নিয়ে বসতে বললাম। এখান থেকে আমি ফিরে না আসা পর্যন্ত যেন এক চুলও কেউ না নড়ে। ওদেরকে নুডলস কিনে দিয়ে প্লাটফর্মের দিকে হাটতে লাগলাম। আমার পিছনে পিছনে দিল্লীর দালাল লেগে আছে। ওরা যে কোন উপায়ে আমাদের টিকেট কেটে দিতে বদ্ধপরিকর।

একই সাথে পিছনে তিনজন দালাল লেগেছে, একজন ট্রেন টিকেটের, একজন হোটেল দেবার আর একজন আমাদের আগামীকাল দিল্লী ঘুরিয়ে দেখাবে পাশাপাশি আজকে রাতে আমাদের তার ট্যাক্সিতে করে এগিয়ে দেবে এবং সেজন্য কোন অতিরিক্ত টাকা নেবেনা। পূর্বে কয়েকবারের দিল্লীর দালালের নানা রকম অভিজ্ঞতা থেকে ওদের সাথে কোন রকম আলোচনা না করে নিজের মত প্লাটফর্মের ভিতরে চলে গেলাম, আর প্লাটফর্মের ভিতরে ঢোকার পরে ওরা নিজ থেকেই নিজেদের কাজে চলে গেল!

১৬ নাম্বার প্লাটফর্মে ঢুকে খোঁজ নিয়ে জানতে পারলাম, ফরেন টিকেট দেয়া হয় ১ নাম্বার প্লাটফর্ম থেকে। নিউ দিল্লী স্টেশনে ১৬ টা প্লাটফর্ম! খুব দ্রুত হেটে গেলেও ১৬ থেকে ১ নাম্বার প্লাটফর্মে যেতে হলে কমপক্ষে ২০ মিনিট লাগবে। এতক্ষণে আমার নিজেরও বেশ ক্লান্তি চলে এসেছে, সেটা যতটা না শারীরিক তারচেয়ে বেশী মানসিক। জানেন তো মানসিক ক্লান্তি মানুষকে বেশী দুর্বল করে দেয়।

যাই হোক ১ নাম্বার প্লাটফর্মে গিয়ে খুঁজে খুঁজে ২য় তলায় ফরেন কোটার টিকেট অফিসে গেলাম। দারুণ, আরামদায়ক সোফা আর এসির আরাম আছে সেখানে, সেটা দেখে টিকেট এর খোঁজ নিয়ে জানতে পারলাম, সবার অরজিনাল পাসপোর্ট দেখেই তবে টিকেটের সঠিক তথ্য দিতে পারবে! তার মানে সবাইকে নিয়ে এখানে আসতে হবে। মোবাইলও নেই যে অন্যদের পাসপোর্ট নিয়ে আসতে বলবো, আমাদের তিন জনের পাসপোর্ট আমার কাছেই আছে।

আবারো ছুটতে হল প্লাটফর্ম ১ থেকে ১৬ তে। দুটো অটো নিয়ে সবাই মিলে অনেকটা ঘুরে চলে এলাম ১ নাম্বার প্লাটফর্মে। ব্যাগপত্র নিয়ে ফরেন কোটার অফিসে ঢুকতে ঢুকতে সাবই বিধ্বস্ত। নরম সোফা আর এসির আরমে বসে টিকেটের খোঁজ নিয়ে জানতে পারলাম মাত্র চারটা টিকেটই আছে, সেটাও টু টায়ারের, ভাড়া ৪২০০ রুপী করে! প্লেনের চেয়েও বেশী। তবুও ঝটপট কেটে নিলাম, যেহেতু আর কোন অপশন তখন নেই।

টিকেট কাটার পরে সবাই একটু নিশ্চিন্ত হলাম, এরপর রয়েছে হোটেল খুঁজে বের করার বিশাল ঝামেলার আর একটা কাজ। ওদেরকে ওখানেই বসিয়ে রেখে বের হলাম, যেহেতু দুটো পরিবার তাই যেমন তেমন হোটেল তো নেয়া যাবেনা, তাই অনেক খুঁজে খুঁজে দালালের চক্র থেকে নিজেদের বাঁচিয়ে পেয়েছিলাম মোটামুটি রাত কাটানোর মত ভদ্রস্থ একটা হোটেলের দুটো রুম। তখন রাত ১১ টা। আবার প্লাটফর্মে গেলাম ওদেরকে নিয়ে আসতে।

শেষ হল একটি বিপর্যস্ত সন্ধ্যা আর বিধ্বস্ত রাত ও দিল্লীর দালাল থেকে নিস্তার পাবার গল্প।

শেষ কথা হল, দিল্লীতে ট্রেন টিকেট কাটার জন্য অবশ্যই আগে যাবেন ১ নাম্বার প্লাটফর্মে, যেটা ৭/২৪ (সাত দিন আর ২৪ ঘণ্টাই খোলা থাকে) দালালের চক্করে না পরে আগে নিজ থেকে খোঁজ নিন, তারপর না হয় এজেন্ট বা দালালের ফাঁদে পা দেবেন। কারন ওরা টাকা নেবে, টিকেটও দেবে, কিন্তু সেটার হয়তো সিট নাম্বার থাকবেনা যেটা নিয়ে পরতে হবে নিদারুণ বিড়ম্বনায়। যেটা আমরা দুইবার পরেছিলাম! টিকেট ছিল, কিন্তু সিট ছিলোনা, তাও দিগুণ টাকা দিয়ে কাটা টিকেট!

তাই ভাই-বোনেরা যারা আসছে ছুটিতে ভারত যাবেন আর ট্রেন ভ্রমণের কথা ভাবছেন, পারলে টিকেট গুলো আগে করে রাখুন আর হাতে সময় নিয়ে রাখুন পর্যাপ্ত। আর খুব খুব আর খুব সাবধান! যে কোন যায়গায় থাকতে পারে…

দিল্লীর দালাল…!!

১৯ ডিসেম্বর ২০১৭

Post Copied From:

Sajol Zahid>Travelers of Bangladesh (ToB)

মিশন কাশ্মির

কাশ্মির ভ্রমনের ইচ্ছা আর সবার মত আমারো ছিল। অনেক দিন ধরে ইচ্ছাটাপুষিয়ে রেখেছিলাম। সবাই কে দেখতাম বিভিন্ন টুর প্যাকেজ এ করে কাশ্মির ভ্রমনে যায়। কিন্তু তাদের খরচের কথা শুনার পর কখনোই কাশ্মির ভ্রমনের দু:সাহস করি নাই। কিছুদিন আগে জীবনের প্রথম ইন্ডিয়ান ভিসা সিল পাওয়ার পর ভাবলাম যাই ইন্ডিয়ে ঘুরে দেখে আসি। যেহেতু সল্প বেতনের চাকরি করি। খুজতে থাকলাম ১৬-১৭ হাজার এ কোথায় ঘুরে আসা যায় ভারতের। সবাই বল্ল এই বাজেটে দার্জিলিং ছাড়া কোথায় নাকি ঘুরতে পারব না। যাই হোক নিজের দৃড় ইচ্ছা আর TOB help line এর সহায়ায়তায় কাশ্মির এর ব্যাপারে অনেক খুটিনাটি তথ্য নেওয়া শুরু করলাম। অনেক ভেবে দেখলাম কাশ্মির ২০ হাজার টাকাতেই ঘুরে আসা সম্ভব।
আর মিথ্যা বলবনা। সত্যিই আমি ১৮০০০ টাকা নিয়ে কাশ্মির এর উদ্দেশ্যে বেড়িয়েছিলাম আর দেশে ফেরত এসেছি ৪০ রুপি নিয়ে। আজকে আমার এই পোস্টে আমার সেই কম খরচে কাশ্মির টুরের গল্ম শুনাব সবাইকে।
কাশ্মির টুরের প্রস্তুতি শুরু হয় আমার ঢাকা থেকেই, হাওড়া টু কাশ্মির আপ -ডাউন টিকেট কেনার মধ্য দিয়ে। ১ মাস আগে টিকেট করেছিলাম। হিমগিরি এক্সপ্রেসে হাওড়া টু জাম্মু যাওয়া আসা আমার টিকেটে খরছ হয়েছিল ৭৫০+৭৫০=১৪০০ রুপি। বাংলা টাকায় ২২০০ পড়েছিল।
২৩ নভেম্বর সন্ধ্যা ৭টার চিত্রা এক্সপ্রেস ট্রেনে প্রথমে যশোর যাই। ট্রেন ভাড়া ৪৬০ টাকা। যশোর নামিয়ে দেয় ভোর ৪ টায়। ট্রেন থেকে যশো নেমে স্টেশনের বাইরে থেকেই বাস পেয়ে যাই বেনাপোল বর্ডারের। ভাড়া ৫০ টাকা।
২৪ তারিখ ভোর ৬ টার মধ্যে বর্ডার পৌছাই। আর কোন প্রকার দালালের সহায়তা ছাড়াই সাড়ে ৬ টার মধ্যে ভারতিয় সীমানায় প্রবেশ করি। বর্ডার ক্রস করে চা খেয়ে নিলাম। তার পর অটোরিক্সায় ৩০ রুপি ভাড়ায় লোকালে চলে এলাম বনগা স্টেষন। ১০ রুপি দিয়ে বনগা থেকে গেলাম দমদম স্টেশন। আমি চাইলে সরাসরি শিয়ালদহ স্টেশনে আসতে পারতাম। কিন্তু খুব ইচ্ছা ছিল কোল্কাতার মেট্রো রেল ভ্রমনের। যাইহোক দমদম নেমে চলে গেলাম মেট্রোরেল স্টেশনে। ১০ রুপি টিকেট কাটলাম দমদম থেকে এসপ্লেনেট। ১৫ মিনিট এ পোছে গেলাম এসপ্লেনেট। এসপ্লেনেট এ মেট্রোরেল থেকে নেমেই রাস্তা ক্রস করেই কোল্কাতা নিউ মার্কেট।
যেহেতু রাত ১২ টা তে আমার ট্রেন। আর পকেটেও টাকা কম। তার আর হোটেল নিলাম না। ইচ্ছা ছিল সারাদিন কোল্কাতা শহর ঘুরে দেখে একবারে রাতে ট্রেন ধরব সরাসরি। যাইহোক কোলকাতা পৌছে প্রথমত সব টাকা ডলার রুপিতে কনভার্ট করলাম। আর ৩৪০ রুপি দিয়ে একটা এয়ারটেল সিম কিনে নিলাম। সারাদিন কোল্কাতা ঘুরলাম। আমি যেহেতু স্ট্রিট সিংগিং করি। কোলকাতার বেশ কয়েকটি স্থানে আম রাস্তায় গান করেছিলাম। কোলকাতার মানুষ বাংলা গানের অনেক কদর করে। অনেক স্রদ্ধ্যা ভালোবাসা পেয়েছি সেখানে। ইভেন এক ছেলে আমাকে তার বাইকে করে কোলকাতা শহর ঘুরে বেরানোর প্রস্তাব দেয়। এত সুন্দর অফার সাথে সাথেই লুফে নিলাম। ছেলেটা নিজের খরচে আমাকে ইডেন গার্ডেন, ভিক্টোরিয়া মেমরিয়াল, হাওড়া ব্রিজ সহ অনেক প্লেসে ঘুরিয়ে নিয়ে আসে। কাশ্মির টুরের জন্যে প্রয়জনিয় জিনিস পত্র সব ঢাকা থেকেই কিনে নিয়ে গেছিলাম। তাই শপিং এ সময় না দিয়ে ঘুরে বেড়িয়ে স্ট্রিট সিংগিং করে আর রাস্তার পাশের খাবার খেয়েই সময় পার হয়ে গেছিল। রাত ১১ টার মধ্যে হাওড়া স্টেশনে পৌছলাম। রাত ১২ টায় যথা সময়ে ট্রেন ছেড়ে যায়।
২৫ তারিখ ঘুম ভাংগে ট্রেনের মধ্যে। নন এসি স্লিপার এর বাংকার খারাপ না। এটলিস্ট আমার মত যারা কষ্ট করে ভ্রমন করতে পারেব তাদের খারাপ লাগবেনা। ট্রেনে খাওয়া দাওয়া সস্তা আছে। কিন্তু খাবার বেশি মজার নয়। ডিনার /লাঞ্চ এ আমার ৬০ রুপি আর নাস্তায় আমার ৩০ রুপি করে খরচ হয়েছিল।
দীর্ঘ ৪৬ ঘন্টা জার্নির পর ২৬ তারিখ রাত ১০ টায় জাম্মু তাওয়াই স্টেশনে নামি। স্টেশনে নেমে হালকা খেয়ে আবার বাস নিয়ে রোউনা দেই শ্রীনগরের উদ্দেশে। রাত ১২ টায় বাসে উঠি আর শ্রীনগরে পৌছাই সকাল ৮ টায়। পুরো রাস্তা অনেক সুন্দর ছিল কিন্তু অনেক রাত হওয়াতে তেমন কিছু দেখতে পারি নাই। পথে অনেক গুলো ট্যানেল পড়েছিল। কয়েকটা ছিল ৬-৭ কিমি লম্বা।
২৭ তারিখ শ্রীনগরের আসে পাশে ঘুরে দেখি। ডাল লেক এ শিকারা রাইড করি। শিকারা বোটের খরচ ৩০০-৪০০ রুপি ৪ জন উঠা যায়।
ঠান্ডায় শ্রীনগরর আসলে দেখার মত তেমন কিছু নাই। তবে কয়েকটা পার্ক এ গিয়েছিলাম। পার্ক গুলা মেপল লিফ এ ভরা ছিল। পার্কের বেশ কিছু ছবিও দিয়েছি। শ্রিনগরে খাবার এর মান অনেক ভালো। এখানে আসলে অবশ্যই আপনি এখানকার কাবার আইটেল গুলা ট্রাই করে দেখবেন। ১৫০ রুপি এর মধ্যে ভরপুর লাঞ্চ বা ডিনার করতে পারবেন। কেনাকাটা যা করার শ্রিনগর থেকেই সেরে নিন কারন অন্য প্লেসে এত দোকান পাবেন না।
২৮ তারিখ গেছিলাম গুল্মার্গ। গুল্মার্গ এ গেলে অনেকেই আপনাকে বলবে ঘোড়া নেওয়ার জন্যে খরচ ও কম চায়না। একেকজন একেদাম বলে কনফিউসড করবে। তার পরেও কম পক্ষে ঘোড়ায় ৫-৬শ রুপি খরচ হবে। তবে আমি মনে করি যদি আপনার ভালো জুতা আর শারিরিক শক্তি থাকে আপনি সহজেই হেটে গুল্মার্গ এর সব গুলা টুরিস্ট প্লেস গুলা ঘুরে দেখতে পারবেন। সেক্ষেত্রে সকাল সকাল আপনাকে গুল্মার্গ এ পৌছাতে হবে। গুলমার্গ এ গেলে অবশ্যই কেবল কারে চড়বেন। কেবল কারে করে ৮০০০ ফিট উঠ তে খরচ হবে ৭০০ রুপি ১৪০০০ ফিট উপরে উপরর গেলে ১৬০০ রুপি। উপরে উঠে ধুমপান/ মধ্যপান / দৌড়া দৌড়ি না করাই ভালো। এতে আপনার অসুস্থ হওয়ার অনেক সম্ভবনা থাকবে।
গুলমার্গ এ রাতে থাকতে চাইলে আপনার রুপ প্রতি ১২০০ রুপি থেকে ৫০০০ রুপি খরচ হবে। খাওয়া দাওয়া ১৫০ রুপিতে লাঞ্চ/ ডিনার। ১০০ রুপিতে ব্রেকফাস্ট।
২৯ আর ৩০ দুই দিন থেকেছিলাম প্যাহেল্গাম এ। পেহেল্গাম এডভেঞ্চার প্রিয় আর ট্রেকারদের জন্যে স্বর্গস্থান। এখানে আপনি ট্রেক করার জন্যে টুলিয়ান লেক, তারসার-মারসার, শিষনাগ সহ আরো অনেক প্লেস পাবেন। তবে রিলাক্সলি ঘুরে দেখতে চাইলে আরু ভেলি, বেতাব ভেলি, বাইসারান ইত্যাদি প্লেস গুলা ঘুরে দেখতে পারেন। আরু ভ্যালি এর পার্ট টায় যেতে গাড়ি লাগবে। বাইসারান এর দিকে গেলে ঘোড়া বা হেটেও যেতে পারবেন। পেহেল্গামে শপিং করার তেমন দোকান পেলাম না। তবে স্ট্রিট ফুড পাবেন অনেক। পেহেলগামে থাকতে খরচ হবে ৬০০- ৫০০০ রুপির মত।
ফিরে আসার দিন আমি সরাসরি পেহেলগাম থেকে জাম্মু চলে আসি। কিন্তু আসার দিন আমার পুর্ব নির্ধারিত ট্রেন কেন্সেল হয়ে যাওয়ায় আমার দুর্বিষহ যাতনায় পড়তে হয়েছিল। পকেটেকে টাকাও প্রায় ফুরিয়ে এসেছিল।আমার মনে পড়ে আমি যখন ফেরার টাইমে উত্তর প্রদেশে ছিলাম আমার শেষ সম্বল ছিল মাত্র ১৩০ রুপি। যাই হোক সৃষ্টি কর্তার অসিম কৃপায় আর ট্রেনে সহযাত্রিদের সহায়তায় আমি নিরাপদে বেনাপোল বর্ডার ক্রস করি। অইখানে এসে মাকে বলি বিকাশ করতে। ওই বিকাশের টাকা দিয়ে অবশেষে বাড়ি ফিরে আসি।
কিছু বিষয় আপনাদের বলে রাখি।
১. কাশ্মিরে একমাত্র কেবল কার ছাড়া কোন প্রাইস ই সরকার নির্ধারিত নয়। সো একদম গুলিস্তান স্টাইলে দরদার করবেন।
২. সবপ্লেসেই যাওয়ার জন্যে শেয়ার বাস গাড়ি পাবেন। তাই যারা একা টুর দিতে চাচ্ছেন নির্ভয়ে চলে যান। রিজার্ভ গাড়ি ভাড়া দিন প্রতি ২০০০-৩৫০০ পর্যন্ত আছে।
৩. স্থানিয় ব্যাবসায়ি, দোকানদার, এদের সাথে অবশ্যই হিন্দি আর উর্দু তে কথা বলবেন।
আর বি এস এফ পুলিশ ধরলে ধুমায়ে ইংলিশ বলবেন 😉 খিক খিক খিক
৪. ডাল লেকে শপিং না করে শ্রিনগরে কেনাকাটা করবেন।
৫. কোন প্লেস এ ছবি তোলার আগে বা ওপেনলি স্মোক করার আগে জেনে নিবেন
আমি যখন কাশ্মির গিয়েছিলাম প্রায় প্রতিদিন এ মাইনাস ডিগ্রি তাপমাত্রা ছিল। কখনো কখনো মাইনাস ৬-৭ ও পেয়েছি। এই শীত থেকে বাচতে আমি যা যা পড়েছিলাম
১. এক্সট্রা ইনার সহ স্নো বুট।
২. সিন্থেটিক ইনার
৩. লাক্স বডি ওয়ার্মার ( থার্মাল)
৪.উলের ফুলহাতা টিশার্ট
৫. মোটা উলের সোয়েটার
৬. রেইন কোট
নিচে
৭. সিন্থেটিক ইনার প্যান্ট
৮. ফ্লিস এর পায়জামা
৯. গ্যাবার্ডিং প্যান্ট
আমার এই টুরে গিয়ে আমার ভারতীয় দের ব্যাপারে ধারনা একদম পালটে গেছে। 🙂
ভারতীয় লোকজন অনেক ভালো। অনেক হেল্পফুল আর মিশুক। আমি আমার পুরা জার্নিতে এত এত বন্ধু আর এত ভালোবাসা পেয়েছি। আমার সারাজীবন মনে থাকবে। স্পেশালি ওদের বি এস এফ সদস্যরা অনেক আন্তরিক। ওদের ভয় পাবেন না।
অনেক সংক্ষেপে পুরা টুরের হিসাব নিকাশ দেওয়া টা কঠিন ছিল। তার পরেও কারো বিস্তারিত যেকোন তথ্যের জন্যে আমাকে নক করতে পারেন। আমার সাধ্য মত হেল্প করব 🙂

Post Copied From:Pearl Matthew>Travelers of Bangladesh (ToB)

আড়িয়াল বিল

বর্ষায় পানিতে টই টই, শীতে শুকিয়ে বিস্তীর্ণ শস্যক্ষেত। যেদিকে চোখ যায় শুধু সবুজ আর সবুজ। আর এই সৌন্দর্য উপভোগ করতে যেতে হবে মুন্সীগঞ্জ এর “আড়িয়াল বিল” এ। আড়িয়াল বিল ঢাকার দক্ষিণে পদ্মা ও ধলেশ্বরী নদীর মাঝখানে অবস্থিত প্রায় ১৩৬ বর্গ কিলোমিটার আয়তনের একটি অবভূমি।

#কীভাবে_যাবেন:
ঢাকার মালিবাগ/মৌচাক থেকে প্রচেষ্টা পরিবহন অথবা গুলিস্তান থেকে যে কোন মাওয়াগামী বাসে উঠে পড়ুন। যার মধ্যে “বিআরটিসি”, “ইলিশ পরিবহন” ভালো। শ্রীনগর ছনবাড়ি বাস স্ট্যান্ডে নামবেন। এক-দেড় ঘন্টা সময় লাগবে। বাস ভাড়া ৫০/৬০/৭০ টাকার মত নিবে।

সেখান থেকে রাস্তার অপরপাশে গিয়ে অটো ভাড়া করবেন গাদিঘাটের উদ্দেশ্যে। ভাড়া পড়বে মাথাপিছু ১৫-২০ টাকা। আর রিজার্ভ করে নিলে সর্বোচ্চ ২০০ টাকা।

গাদিঘাট বড় ব্রিজে নামিয়ে দিবে অটো। সময় লাগবে ২০-২৫ মিনিটের মত। সেখান থেকেই বিলে ঘোরার নৌকা বা ট্রলার ভাড়া পাবেন। নৌকা বা ট্রলার ভাড়া করে ফেলুন। ২/৩/৪ ঘন্টার জন্য ৬০০-১০০০ টাকার মত খরচ হবে। তবে আমি সাজেস্ট করবো ইঞ্জিন চালিত ট্রলার গুলো ভাড়া করতে। এতে আপনি অনেক দূর আর গভীরে চলে যেতে পারবেন।

ফেরার পালা এরপর। অটো করে শ্রীনগর বাজারে চলে আসুন। অটোর ভাড়া আগের মতই। বাজার থেকে দুই মিনিট হেঁটে গেলেই বাসস্ট্যান্ড। উঠে পড়ুন বাসে।

দেরী না করে ঘুরে আসতে পারেন ঢাকার কাছেই এই সুন্দর জায়গাটা থেকে। 🙂

#প্রয়োজনীয়_তথ্য:
১. এ সময়ে রোদের তেজ ভালো। ভ্রমণে তাই অবশ্যই ছাতা এবং রোদ টুপি নিয়ে নিবেন।
২. শ্রীনগরের পর বিলের কোথাও দোকান পাট নেই। গাদিঘাট এ কিছু গ্রাম্য দোকান পাবেন। সঙ্গে অবশ্যই পর্যাপ্ত খাবার পানি ও শুকনা খাবার নিতে ভুলবেন না।

আর অনুরোধ করবো, গ্রামের মানুষগুলোর সাথে সুন্দর আচরণ করবেন আর বিল ও গ্রামের পরিবেশ নোংরা করবেন না।

Post Copied From:Ariful Huda Ashik>Travelers of Bangladesh (ToB)

সোনামার্গ, শ্রীনগর, কাশ্মীর

কিভাবে যাবেন, কোথায় থাকবেন, খরচ কেমন বা ওখানকার মানুষগুলো কতটা আন্তরিক? অথবা কলকাতা পুলিশের অহেতুক হয়রানি বা কাস্টমসের ঝামেলাগুলো, বা ভারতের সবচেয়ে বড় পর্যটক দেশ হওয়ার পরেও দিল্লি’র বেশ কিছু হোটেলগুলোয় “বাংলাদেশী নিষিদ্ধ” বলার কারন বা ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়াল, দিল্লি রেডফোর্ট, আগ্রা ফোর্ট, তাজমহল, পেহেলগামে সিজনের প্রথম তুষারপাত, বা গুলমার্গের অসহ্য ঠান্ডা… এসব কেমন, কেন, এসব নিয়ে অনেকেই আগে অনেকবার বলেছেন, তাদের সবাইকে ধন্যবাদ। উনাদের কারণে আমাদের ট্যুরটা হয়তো সহজই হয়েছে তবে যে কথা উনারা কেউই বলেননি, যার জন্য আমার (অন্য দুই বন্ধুর তুলনামূলক কম) বেশ ঝামেলা পোহাতে হয়েছে আজ তা বলবো।
আমার মত যারা আছেন তাদের জন্য এই পোস্ট।
আমার মত মানে, যাদের আবহাওয়া পরিবর্তনের সাথে নাক দিয়ে পানি পড়ে তারা। আপনারা দয়া করে ভারত ভ্রমনে গেলে, যদি দৌড়ের উপর থাকেন দয়া করে বেশী করে পকেট টিস্যু নিয়ে যাবেন।
জোক করছি না।
আমাদের দেশে পান দোকানীর কাছেও যা পাওয়া যায় তা আপনি ওদের কিছু কিছু সুপার শপেও পাবেন না! ফলাফল, হয়তো আপনাকে প্রতিদিন দামী রেস্টুরেন্টে খেতে গিয়ে আমার মত টিস্যু (নাকি টিস্যু সদৃশ কাগজ?!) পকেটে করে (চুরি বলবেন না, আমরা খাবারের দামের সাথে টিপস ও দিতাম!) নিয়ে আসা লাগবে আর নাহয় ছোটবেলার মত নাক পরিষ্কার করে প্যান্টে হাত মোছা লাগবে! আর যদি তাজমহলের মত জায়গায় ঢুকে কোন উপায় না দেখে বারবার নাক টানতে থাকেন… সে কথা আর না ই বলি।
তাই আমার মত যারা আছেন, ভারত যেতে দয়াকরে পাসপোর্টের পরে দ্বিতীয় গুরুত্বপূর্ণ জিনিস তথা পকেট টিস্যু নিতে ভুলবেন না। 🙂

আর ঝামেলাগুলো? এমন হতেই পারে, তারাও প্রায় আমাদেরই মত, অতি সভ্য কোন জাতি না।ধন্যবাদ।

Post Copied From:Tanbir Roman‎>Travelers of Bangladesh (ToB)

 

 

 

এ যেন এক স্বপ্নের জায়গা

লাদাখ যেন এক স্বপ্নের জায়গা! এখানকার প্রকৃতি,পাহাড়, হাইওয়ে আর আকাশ আপনাকে কাছে টানবে সেই সাথে লাদাখের বিভিন্ন মনেস্ট্রিগুলোর নির্মাণশৈলী আপনাকে অবাক হতে বাধ্য করাবে! অসাধারণ কিছু লেক, নুব্রাভ্যালীর বালুর রাজ্যে বিলুপ্তপ্রায় দুই কুঁজওয়ালা উটের পিঠে চড়ার আনন্দ আর ভারতের শেষ প্রান্তের পাকিস্তান বর্ডারের কাছে টুরটুক গ্রামের সৌন্দর্য আপনাকে পৌঁছে দেবে ভাল লাগার এক ভিন্ন জগতে!
যাওয়ার সবচেয়ে উপযোগী সময় জুন-অক্টোবর। আর নভেম্বর থেকে বরফ পড়া শুরু হয়ে যাওয়াতে গাড়ির রাস্তা বন্ধ হয়ে যায় তাই তখন লাদাখ যেতে হলে air ব্যবহার করে যাওয়া যাবে।
ঢাকা-কলকাতা-জম্মু-শ্রীনগর-কার্গিল-লেহ
বাই air এ গেলে কলকাতা থেকে লেহ।

ছবি: ডিস্কিট মনেস্ট্রি,ডিস্কিট,লেহ,লাদাখ।
(লাদাখের সবচেয়ে বড় মনেস্ট্রি।)

গুলমার্গ

স্থান, তারিখঃ গুলমার্গ, কাশ্মীর, ২০/১১/২০১৭
কিভাবে যাবেনঃ ঢাকা-কলকাতা–দিল্লী-শ্রীনগর (বাই এয়ার), এরপর গাড়ীতে শ্রীনগর-গুলমার্গ। যাওয়ার আরো অনেক পন্থা আছে, তবে আমার সাথে ছোট বাচ্চা থাকায় বেশী সময় নিয়ে ট্রাভেলের রিস্ক নেয়া সম্ভব ছিল না।

Post Copied From:Taufikur Rahman‎>Travelers of Bangladesh (ToB)

কাশ্মীর

ওয়াটার স্কি নিতান্তই একটি বিপদজনক কাজ। আর এই কাজটি বেশ আনন্দের সাথেই সম্পন্ন করেছিলাম কাশ্মীরের ডাল লেকে .অফ সিজন বলে খরচ কম পড়েছিল ,মাত্র ৩০০ রুপি .
ছবির কোনো সফট কপি আপনাকে দেয়া হবে নাহ, তাদের কাছ থেকেই প্রিন্ট করে নিতে হবে . 6R দুটো ছবি প্রিন্ট করতে ৩০০ রুপি লেগেছে .

কাশ্মীরে গেলে অবশ্যই ওয়াটার স্কি করবেন মাস্ট , অসাধারণ এক্সপেরিয়েন্স হবে .

যেভাবে সহজেই যাবেন কাশ্মীর –

ঢাকা টু কলকাতা বই রোড/এয়ার /ট্রেন .
কলকাতা থেকে ট্রেনে জম্মু ,জম্মু থেকে শেয়ার টেক্সী করে শ্রীনগর . অথবা কলকাতা থেকে ফ্লাইটে সরাসরি শ্রীনগর .

Post Copied From:

Rezwan Karim‎>Travelers of Bangladesh (ToB)

লাদাখের বুকে ১ টুকরো বাংলাদেশ

চট্টগ্রাম থেকে কলকাতা >ট্রেনে জম্মু>জম্মু থেকে পেহেলগাম>পেহেলগাম থেকে শ্রীনগর>শ্রীনগর থেকে গাড়িতে লেহ…..
মোট খরচ ৪০ হাজার(জনপতি) .. ৩ জন ছিলাম গ্রুপ এ..
ছবিটি ১৮ সেপ্টেম্বর ২০১৭ তোলা..

Post Copied From:Mohammad Jobaed Khan‎>Travelers of Bangladesh (ToB)