শিমলা থেকে মানালি ২৫৫ কি.মি.।আপনি চাইলে বাসেও যেতে পারেন।কিন্তু বাসে গেলে কিছু সমস্যা আছে।মানালি যাওয়ার সময় পথে কুল্লু,মান্ডি,সামস্ লেক,রাফটিং পয়েন্ট,পান্ডোহ্ ড্যাম,সুন্দরনগর,হনুমান টেম্পল,3 idiots টানেল জায়গুলোতে বাস থামবে না।সেক্ষেত্রে বাসে যেতে চাইলে আপনাকে কুল্লু ১ রাত থাকতে হবে।কিন্তু শিমলা থেকে গাড়ী নিয়ে গেলে মানালি যাওয়ার সময়ই কুল্লুর সব জায়গাগুলো দেখা সম্ভব।তাহলে আপনাকে বাড়তি একরাত কুল্লু থাকতে হবে না।আপনি শিমলা থেকে একটা ৭ সিটের Xylo গাড়ী ভাড়া করতে পারেন।৫,০০০/- টাকার মধ্যেই হয়ে যাবে।শিমলা থেকে খুব ভোরে বের হতে হবে।সব জায়গাগুলো দেখে কুল্লু থেকে শাল কিনে রাত ১০-১১ টার মধ্যেই মানালি পৌঁছে যেতে পারবেন।
আর যদি শিমলা না গিয়ে সরাসরি মানালি যেতে চান তাহলে কলকাতা থেকে রাজধানী এক্সপ্রেস ট্রেনে প্রথমে দিল্লী যেতে হবে।রাজধানী এক্সপ্রেস এর এসি-থ্রি টায়ার এর ভাড়া জনপ্রতি ৩০০০ রুপি।তারপর দিল্লি থেকে বাই রোডে মানালি যেতে পারেন।বাস ভাড়া এসি ভলভো ১৬০০ রুপী আর নন-এসি ভলভো ১০০০ রুপী। আপনি চাইলে ট্যাক্সি অথবা প্রাইভেট গাড়ি ভাড়া করেও দিল্লি থেকে মানালি যেতে পারেন।
মানালির ইতিহাস:-
প্রাচীনকালে এই উপত্যকায় বিক্ষিপ্ত ভাবে ‘রাক্ষস’ নামে এক যাযাবর শিকারী সম্প্রদায়ের লোকের বাস ছিল। পরবর্তী কালে আগমন ঘটে কাংরা উপত্যকা থেকে আসা মেষপালকদের, এরা মানালিতে কৃষি কাজের জন্য বসতি স্থাপন করে।এ অঞ্চলের প্রাচীনতম বসবাসকারীদের অন্যতম ছিল ‘নৌর’ অথবা ‘নর’, কুলু উপত্যকায় এরা এক বিচিত্র প্রজাতি।এখনো অল্প কয়েক ঘর ‘নর’ পরিবার এখানে বর্তমান।মানালির পশ্চিম তীরে হরিপুরের কাছে সোয়াল গ্রামে এক ‘নৌর’ পরিবার ছিল।বস্তির জমির অধিকার বলে রাক্ষসদের শ্রমজীবী হিসেবে ব্যবহার করে বিখ্যাত হয়েছিল এই পরিবার।
ইংরেজরা আপেল আর ট্রাউট মাছের চাষ শুরু করে, মানালির উদ্ভিদ আর প্রাণীকুলের ইতিহাসে এদের অস্তিত্ব ছিল না।শোনা যায়, প্রথম যখন আপেল গাছ লাগানো হয় এতো বেশী ফলন হয় যে, তার ভার বইতে না পেরে প্রায়ই গাছের ডালপালা ভেঙ্গে পড়ত।এখনো আপেল আর প্লাম চাষ এখানকার অধিকাংশ বাসিন্দাদের মুখ্য জীবিকা।
মানালি যাওয়ার পথে কুল্লু-মানিকরনে যা যা দেখবেন:-
মানিকরনে আপনি দেখতে পাবেন যে, মাটির নিচ থেকে কিভাবে প্রাকৃতিকভাবে গরম (ফুটানো) পানি নির্গত হচ্ছে আর কুল্লু হচ্ছে মানালির আরেকটা পাহাড় রাজ্য। কুল্লু যদি যান তবে সেখান থেকে অবশ্যই শাল কিনবেন।কুল্লুর শাল বিখ্যাত এবং দামও কম।মেয়েরা পশমিনা শাল কিনতে পারেন।ছেলেদের জন্যও বিভিন্ন ধরনের শাল আছে।
কুল্লুর নিজস্ব প্রাকৃতিক রূপ আছে তাই অনেকে কুল্লু হয়ে মানালিতে বেড়াতে আসেন। মানালি থেকে কুল্লু যেতে কমপক্ষে ৩-৩.৩০ ঘন্টা সময় লাগবে। কুল্লুতে দেখার মত জায়গা Hanging bridge, rafting point, Sams lake, Honuman temple, 3 idiots tunnel ইত্যাদি। 3 idiots টানেল মানে যেই টানেলে 3 idiots মুভির অল্প একটু শ্যুটিং হয়েছে। প্রায় ৫ কি.মি. লম্বা টানেল।কুল্লু থেকে ৪৪ কি.মি. দূরে মানিকরণ। প্রায় আড়াই ঘন্টায় ভুন্টারজারি-কাসোল হয়ে ৪৪ কিলোমিটার দূরের মণিকরণে পৌঁছোনো যায়। পশ্চিমে বিষ্ণুকুন্ড, উত্তরে হরেন্দ্র পর্বত, পুবে ব্রহ্মনালা, দক্ষিণে পার্বতীগঙ্গা-এই বিস্তীর্ণ ভূভাগ জুড়ে মণিকরণতীর্থ। শিব-পার্বতীর পৌরাণিক আখ্যান, ধর্মনির্বিশেষে সকল মানুষের অবাধ পুণ্যার্জন, নানকের গুরুদোয়ারা-মণিকরণের পুরো ছবিটাই ভক্তিপ্রেমে উজাড় হওয়া এক তীর্থভূমির মতো। বিশ্বের উষ্ণতম প্রস্রবণটিও এখানেই। এখানকার মন্দিরে মন্দিরে বৈষ্ণোদেবী, হনুমান, ময়নাদেবী, শ্রীকৃষ্ণ, রাম প্রমুখ দেবতার অধিষ্ঠান।
মান্ডি (mandi):
মান্ডি থেকে কিছু দূরে পান্ডোহ্ ড্যাম। নদীতে বাঁধ দিয়ে দিয়ে পানিবিদ্যুৎ উৎপাদনের ব্যবস্থা। বিয়াস এখানে ভয়ংকর।পানির শব্দে কান ঝালাপালা। ফেনীল নিম্নভাগের দিকে হাঁ করে চেয়ে থাকতে হয়। এখানে বিয়াসের কাছে যাওয়া কঠোরভাবে নিষিদ্ধ। বাজে কিছু দূর্ঘটনার ইতিহাস আছে এখানটায়। ছবি তোলাও নিষেধ।
এসব দর্শনীয় স্থানগুলোতে যেতে হলে গাড়ি ছাড়া কোন বিকল্প ব্যবস্থা নেই কারন গাড়ি ছাড়া আর কোন যানবাহন সেসব জায়গাগুলোতে যেতে পারে না।তাই শিমলা থেকে গাড়ী নিয়ে মানালি আসলেই সবচেয়ে ভালো হবে।কুল্লু থেকে মানালি যাওয়ার রাস্তাটুকু যতটা ভয়ংকর ঠিক তারচেয়ে বেশী সুন্দর।
মানালীতে যা যা দেখবেন:-
মানালিতে ২ দিন আর ৩রাত থাকলেই হবে।মানালিতে যা যা দেখবেন:-
রোথাং পাস (Rohtang Pass):
এটি সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ৩,৯৭৮ মিটার বা ১৩,০৫০ ফিট উচ্চতায় অবস্থিত। মানালি শহর থেকে এর দূরত্ব ৫১ কিঃমিঃ বা ৩২ মাইল। এটি কুল্লু (Kullu), লাহাল (Lahaul) এবং স্পিতি (Spiti) উপত্যকার সাথে সংযুক্ত করে রেখেছে। পাহাড়ি রাস্তার আঁকাবাঁকা পথ আর প্রাকৃতিক নয়নাভিরাম দৃশ্য উপভোগ করতে করতে রোথাং পাসে যেতে হয়। এখানে এলে দেখতে পাবেন শ্বেতশুভ্র সুবিশাল পাহাড়ের সারি আর বিশাল বিশাল প্রস্থর খন্ড। যারা আইস স্কেটিং, টবগ্যানিং (Tobogganing) ইত্যাদি ভালোবাসেন তাদের জন্য সেখানে সুন্দর ব্যবস্থা আছে। যেহেতু সেখানকার আবহাওয়া অনেক ঠান্ডা তাই সেখানে ওভারকোট, বুট ইত্যাদি ভাড়ায় পাওয়া যায়।
রোথাং পাস যাবার জন্য বাস পাওয়া যায়। সকাল ৯ টায় যাত্রা শুরু বিকাল ৫ টায় শেষ। ভাড়া ৫০০ রুপী। প্ল্যান থেকে মঙ্গলবারটা বাদ রাখবেন, কারণ এই দিন রোথাং পাস ক্লিন করার জন্য বরাদ্দ থাকে। রোথাং পাস-গুলাবা বর্ডার,সোলাং ভ্যালীর ১ দিনের ট্যুর প্যাকেজ ৩৫০০-৪০০০ রুপী পড়বে ট্যাক্সি রিজার্ভ করলে।
মানালি সরকার প্রতিদিন ৮০০ এর বেশি গাড়ি রোথাং পাস যাওয়ার অনুমতি দেয়না (পরিবেশগত ভারসাম্য রক্ষার্থে )। সুতরাং আগের রাতেই ক্যাব ঠিক করে রাখবেন আর অনুমতি নেয়ার বিষয়টাও নিশ্চিত হয়ে নিবেন।
যাওয়ার পথেই স্পেশাল বরফ জ্যাকেট ভাড়া করে নিতে পারেন।কিন্তু যদি আপনার কাছে শীতের কাপড় যেমন:- গ্লাভস,টুপি,স্নোতে হাঁটার জুতো আর জ্যাকেট থাকে তাহলে শুধু শুধু ভাড়া নেওয়ার দরকার নেই।রোথাং পাস ঘুরার পর, ফেরার পথে সোলাং ভ্যালিতে যাবেন।এখানে আপনি ক্যাবল কারে চড়তে পারবেন ( প্রতিজন ৮০০ রুপি ) আর প্যরাগ্লাইডিংও ( প্রতিজন ২০০০ রুপি) করতে পারবেন। রোথাং পাস যাওয়া আর আসার পথটাই সবথেকে বেশী সুন্দর।রাস্তার বিভিন্ন জায়গায় থেমে থেমে দৃশ্য উপভোগ করতে পারবেন। যাওয়ার পথেই কৃষসহ বহু বলিউড মুভির শুটিং সাইট দেখতে পাবেন।তবে আপনি সরাসরি রোথাং পাস না গিয়ে সোলাং ভ্যালী দেখে তারপর রোথাং পাস যেতে পারেন।
রোথাং পাস হেভি স্নো ফলের কারনে ডিসেম্বর থেকে জুন এর মাঝ পর্যন্ত বন্ধ থাকে।হতাশ হওয়ার কোন কারন নেই।পরবর্তীতে আপনি যখন লাদাখ যাবেন তখন মানালি-লেহ হাইওয়ে দিয়ে গেলেই হবে।কারন তখন আপনাকে রোথাং পাস হয়েই লাদাখ যেতে হবে।
সোলাং ভ্যালি (Solang Valley): –
এটি রোথাং পাস যাওয়ার পথে পড়ে এবং এর দূরত্ব মানালি শহর থেকে ১৪ কি.মি. উত্তরপশ্চিম দিকে অবস্থিত। এটি অ্যাডভেঞ্চারপ্রেমীদের জন্য সুপরিচিত। এখানে প্যারাসুটিং, প্যারাগ্লাইডিং, স্কেটিং ইত্যাদির ব্যবস্থা আছে।রাস্তা থেকে সোলাং ভ্যালীর স্নো পয়েন্টে আপনাকে ঘোড়ায় চড়ে যেতে হবে।ঘোড়া ভাড়া জনপ্রতি ৩০০ রুপি।
রেহালা জলপ্রপাত (Rehala Falls):
এটি রোথাং পাস থেকে ফেরার পথে পড়বে। এটি মানালির চমৎকার একটি জলপ্রপাত। এখানে গেলে দেখা যায় কিভাবে পাহাড়ের গা বেয়ে জলরাশি নেমে বিপাশা/ বিয়াস নদীতে গিয়ে মিশছে।
ডেট গুলাবা (Dett Gulaba):
এখান থেকে চমৎকার নয়নাভিরাম প্রাকৃতিক দৃশ্য উপভোগ করা যায়। রেহালা জলপ্রপাত থেকে খানিকটা দূরে এর অবস্থান।
বিপাশা/বিয়াস নদ (Beas River):
মানালি শহরের একদম গাঁ ঘেষে আঁকাবাঁকা ভাবে বয়ে চলা বিপাশা/বিয়াস নদী আসলেই প্রকৃতির এক অপরূপ বিস্ময়। নদীটির দৈর্ঘ্য ৪৭০ কি:মি: বা ২৯০ মাইল যা পাঞ্জাবের সুটলেজ (Sutlej) নদীর সাথে মিলিত হয়েছে। এই নদীর পানি ভীষণ ঠাণ্ডা আর এর স্রোত বেশ বিপজ্জনক। যারা রিভার রাফটিং (River Rafting) করতে ভালোবাসেন তাদের জন্য এখানে রাফটিং এর ভালো ব্যবস্থা আছে।
হিড়িম্বা টেম্পল:-
ভারতীয় পৌরণিক গাঁথা “মহাভারত” এর চরিত্র ভিমের স্ত্রী ছিলেন হিড়িম্বা দেবী, তার স্মৃতি উদ্দেশ্যে এই মন্দিরের উৎপত্তি। মন্দিরের চারিদিকে বনবিহার ঘিরে আছে। দেবদারু গাছে ছেয়ে থাকা বনভূমি’র ভেতরে বিশালাকৃতির এক পাথুরে চত্বরের উপর এই মন্দির নির্মিত হয় ১৫৫৩ সালে। চারিদিকে কাঠের অবকাঠামো দিয়ে ঘেরা এই মন্দির এর উপরে একটি শিখর আকৃতি রয়েছে।
ছাদের দিকে তিনটি স্তরে চতুষ্কোণাকৃতির ছাদ ক্রমান্বয়ে আকারে ছোট হয়ে উপরে উঠে গেছে, তার উপর শিখর। মহাভারত এর বর্ণনা অনুসারে পঞ্চ পাণ্ডবেরা নির্বাসনে পাঠানো হলে তারা চলে আসে মানালিতে। সেখানকার তৎকালীন ক্ষমতাধর এবং বলশালী হাড়িম্বা দেবী’র ভাইয়ের সাথে পঞ্চপাণ্ডবের যুদ্ধ হয়ে। এই যুদ্ধে হাড়িম্বা দেবীর ভাই মারা যায় এবং পরবর্তীতে পঞ্চ পাণ্ডবের অন্যতম ভিমের সাথে হাড়িম্বা দেবী’র বিবাহ হয়। পরবর্তীতে যখন নির্বাসন শেষ করে পঞ্চ পাণ্ডবেরা ফেরত যায়, ভিমের সাথে হাদিম্বী দেবী ফিরে যান নাই। তিনি মানালিতে থেকে যান এবং আজীবন ভগবানের তপস্যা করে কাটিয়ে দেন। আর সেই তপস্বী হিড়িম্বা দেবীর মন্দিরকে ঘিরে আজকের এই তীর্থ যা মূলত হিড়িম্বা টেম্পল নামে পরিচিত।
হিড়িম্বা টেম্পল মল রোড এর পাশেই।হোটেল থেকে হেঁটেই যেতে পারবেন।
রোয়েরিক আর্ট গ্যালারি:
দুধারে পাইনের জঙ্গল পাশে রেখে পাহাড়ি ঢালু রাস্তা বেয়ে যখন রোয়েরিক আর্ট-গ্যালারির কম্পাউণ্ডে ঢুকলাম তখন আমি স্তব্ধ, বাক্যহারা। পাইন আর পাহাড়ি ফুলের বাগান ঘেরা এই ছবির মত পরিবেশ আর্ট-গ্যালারির জন্য একদম উপযুক্ত।
এই আর্ট-গ্যালারি একসময় বিখ্যাত রাশিয়ান চিত্রকর নিকোলাস রোয়েরিক (জন্ম- ৯ ই অক্টোবর ১৮৭৪ খ্রীষ্টাব্দ, রাশিয়ার সেণ্ট-পিটার্সবার্গ, মৃত্যু- ১৩ই ডিসেম্বর ১৯৪৭ সাল, নাগার, হিমাচল-প্রদেশ, ভারতবর্ষ) সাহেবের বাসভবন ছিল। রোয়েরিক সাহেব ১৯১৭-র রুশ বিপ্লবের পর ভারতবর্ষে চলে আসেন। হিমাচলের সৌন্দর্যে মুগ্ধ রোয়েরিক এখানেই তাঁর বাসস্থান নির্মাণ করেন এবং এখানেই আমৃত্যু বসবাস করেন। তাঁর মৃত্যুর পর তাঁর পুত্র স্যাভিটোস্ল্যাভ এই বাসস্থানকে রোয়েরিক আর্ট-গ্যালারিতে রূপান্তরিত করেন। আর্ট-গ্যালারি ছাড়াও রয়েছে স্যাভিটোস্ল্যাভের একটা ফটো-স্টুডিও।
নাগার ক্যাসেল:
রোয়েরিক আর্ট-গ্যালারি থেকে মিনিট-পাঁচেক (গাড়ীতে) দূরত্বে রয়েছে এই ক্যাসেল। বিয়াস নদীর ধারে, ১৮৫১ মিটার উঁচু নাগার গ্রামটি ছিল কুল্লু রাজাদের রাজধানী। আনুমানিক ১৪৬০ খ্রীষ্টাব্দে কুল্লু রাজা সিধ সিং এই ক্যাসেলটি নির্মাণ করেন। তাঁরই বংশের আরেক অনুজ রাজা জ্ঞান সিং সামান্য একটা বন্দুকের বিনিময় এই ক্যাসেলটি বিক্রি করে দেন ভারতবর্ষের প্রথম ব্রিটিশ কমিশনার মেজর-হে-র কাছে। এই ক্যাসেলের দেওয়াল পাথরের, কড়িবরগায় কাঠের বীম আর কাঠের সিলিং। পাথর আর কাঠের সংমিশ্রণে তৈরী এই ক্যাসেল স্থপত্য-কলার এক অনন্য নির্দশন। মেজর-হে-র কল্যাণে এখানে ফায়ার-প্লেস, চিমনি, কাঠের সিঁড়ি, সোফাসেট প্রভৃতি পাশ্চাত্য উপকরণের সমন্বয়ে এক অপরূপ ইন্দো-ইউরোপীয়ান আমেজের সৃষ্টি হয়েছে।
স্বাধীনতা-পরবর্তী সময়ে ১৯৭৮ খ্রীষ্টাব্দে নাগার ক্যাসেল হস্তান্তরিত করা হয় HPTDC –কে। বর্তমানে এই ক্যাসেল হিমাচল-প্রদেশ-ট্যুরিজম-ডেভলপমেন্ট-করপোরেশন(HPTDC)-র একটি হোটেল। মধুচন্দ্রিমা যাপনের জন্য এই ক্যাসেল হোটেল এক আদর্শ স্থান। ক্যাসেল হোটেলের আরেক বৈশিষ্ট্য হল এখানে পরিবেশিত খাবার। অসাধরণ সুস্বাদু ট্রাউট কারি ( অর্থাৎ ট্রাঊট মাছের ঝোল)…
জানা জলপ্রপাত:
আঁকা-বাঁকা সর্পিল পাহাড়ি পথ। সরু রাস্তার একদিকে পাহাড়। সেই পাহাড়ে ধাপে ধাপে আপেলের বাগান আর পাইনের জঙ্গল। রাস্তার আর একদিকে কোথাও গভীর, কোথাও বা অগভীর খাদ।
ভাল করে ঝুঁকে দেখলে বিয়াস নদী দেখা যায়। কোথাও আবার ছবির মত সুন্দর পাহাড়ি গ্রাম পিছনে ফেলে যেতে হয় জানা জলপ্রপাতের দিকে। রাস্তা এতই সরু যে বিপরীত দিক থেকে একটা গাড়ী এলে অন্যদিকের গাড়ীকে দাঁড়িয়ে যেতে হয়। নাগার ক্যাস্টেল থেকে জানা জলপ্রপাত যেতে গাড়ীতে সময় লাগে প্রায় ৪৫ মিনিট। এইটুকু সময় গাড়ী থেকে পথের যে নৈসর্গিক শোভা দেখা যায় তা অবর্ণনীয়। এক অসাধারণ শ্বাসরোধকারী সৌন্দর্য্যের মধ্যে দিয়ে এগিয়ে যেতে হবে জানা জলপ্রপাতের দিকে।
মানালিতে থাকা:-
বড় বড় পাহাড়ের মাঝখানে গড়ে উঠেছে ছোট শহর মানালি। এখানের মল রোড (Mall Road) সুবিখ্যাত। মল রোডের আশেপাশে অনেক হোটেল-মোটেল গড়ে উঠেছে। প্রকারভেদে হোটেলের ভাড়া ১৫০০-১৮০০ রুপী।হোটেলগুলোতে হিটার সিস্টেমের (Heater System) সুব্যবস্থা আছে। কেনাকাটার জন্য মল রোডে অনেক শপিং মল আছে যেগুলো হোটেল থেকে একদম কাছে।হেঁটেই যাওয়া যায়।
মানালিতে খাওয়াঃ
মানালিতে অনেক ভালো মানের খাবারের হোটেল আছে। যেমন: গুজরাটি, মাদ্রাজি, পাঞ্জাবি, বাঙালি ইত্যাদি। বাঙালি খাবার হোটেলের মধ্য আছে Hotel Adarsh, New Ashapuri Bhojonaloy, Ashapuri Bengali Restaurant ইত্যাদি যেগুলো মল রোডে অবস্থিত।বাঙালি হোটেলের মধ্যে শান্তিনিকেতন এর খাবার বেশ ভালো।
সকালের নাস্তা:
চেস্টা করবেন যে হোটেলে থাকবেন সেই হোটেলের সাথে নাস্তার চুক্তি করতে। যদি তাতে কিছুটা বেশিও লাগে, রাজি হয়ে যাবেন। কারন সাত সকালে ঠান্ডায় বের হতে ইচ্ছা করবে না।আলু পরোটা,তাওয়া রুটি,ম্যাগী নুডলস আর চা দিয়েই নাস্তা সারতে হবে।চা খুব একটা ভালো লাগবে না। কারন ওরা চায়ে আদা আর এলাচ ব্যবহার করে।
দুপুর/রাতের খাবার:-
ভাত খেতে চাইলে থালি সিস্টেমে খাবেন।Veg/Non-Veg দুটোই পাবেন। Veg থালি খেলেই ভালো হবে।কারন মাছ এবং মাংশ রান্না একদমই ভালো না।খেতে পারবেন না শুধু শুধু নষ্ট হবে।
এছাড়া আর যা যা খেতে পারেন:
– চিকেন মমো- স্থানীয় খাবার।
– ট্রাউট মাছ।
– পেস্ট্রি, কাপকেক।
– পাপড়ি চাট।
– ভেলপুরি।
– গোলগাপ্পা বা পানিপুরি।
– ইডলি, দোসা।
– চানাচাট।
– আপেল, নাশপাতি- ফল খেতে ভুলবেন না। একদম ফ্রেশ, নো ফরমালিন।
– ভেড়ার মাংশ।
– আলু গবি।
মানালি যে বিষয়গুলো গুরুত্ব দিতে হবে:-
১। রাস্তায় সিগারেট খাওয়া নিষেধ।ধরা পড়লে জরিমানা দিতে হবে।
২। মানালিতে পুরো বছর ঠাণ্ডা থাকে। যারা মানালি যাওয়ার পরিকল্পনা করছেন তারা অবশ্যই গরম কাপড় যেমন:- জ্যাকেট, ওভারকোট, কানটুপী, কেডস, হাতমোজা ইত্যাদি সঙ্গে রাখবেন।
২। হোটেল ঠিক করার সময় গিজার আর রুম হিটার ঠিক আছে কিনা চেক করে নিন।
২।মানালি যাওয়ার সবচেয়ে ভালো সময় হচ্ছে মে থেকে অক্টোবর পর্যন্ত। অনেকে তুষারপাত দেখার জন্য নভেম্বর-ডিসেম্বরে যায়।আমি ডিসেম্বরে গিয়েছি।এসময় প্রবল তুষারপাতের ফলে মাঝে মাঝে রাস্তা বন্ধ থাকে।
৪। মানালিতে ডলার ভাঙানোর ভালো কোন ব্যবস্থা নেই। সবচেয়ে ভালো হয় মানালিতে যাওয়ার পূর্বে কোলকাতা থেকে ডলার ভাঙানো।
Post Copied From:Dip Biswas>Travelers of Bangladesh (ToB)
কলকাতা থেকে কালকা/চন্ডিগড় থেকে শিমলাঃ
কলকাতার হাওড়া স্টেশন থেকে কালকা মেইল ট্রেনে কালকা যাওয়া যায়।কালকা মেইলের ভাড়া এসি থ্রি-টায়ার ২৩৫০ রুপি প্রতি জন।যদি কালকা মেইল ট্রেনের টিকিট না পান তাহলে অমৃতসর মেইল ট্রেনের টিকিট কেটে আম্বালা ক্যান্টনমেন্ট স্টেশনে নামতে হবে।অমৃতসর মেইলের এসি থ্রি-টায়ার এর ভাড়া ২২৫০ রুপি প্রতি জন।সেখান থেকে বার্মিজ কালকা মেইল নামে একটা ট্রেন আছে কালকা যাওয়ার।আম্বালা ক্যান্টনমেন্ট স্টেশন থেকে টিকিট কেটে কালকা পর্যন্ত যাওয়া যায়।অমৃতসর মেইল ট্রেনে আম্বালা ক্যান্টনমেন্ট পৌঁছাতে সময় লাগে ৩২ ঘন্টা।আর কালকা মেইলে কালকা পর্যন্ত পৌঁছাতে সময় লাগে ৩৬ ঘন্টা।কালকা পৌঁছে কালকা থেকে ভোর ৫টা থেকে ১২ টার মধ্যে অনেক গুলো টয় ট্রেন আছে শিমলা যাওয়ার।শিবালিক ডিলাক্স এক্সপ্রেস,হিমালয়ান কুইন,কালকা-শিমলা রেইল মটর।টয় ট্রেনে কালকা থেকে শিমলা পৌঁছাতে সময় লাগে ৭ ঘন্টা।ভাড়া ২৫০ রুপি।টয় ট্রেনের মধ্যে একটি ট্রেন শিবালিক ডিলাক্স এক্সপ্রেস কালকা মেইলের সাথে কানেক্টেড।অর্থাৎ কালকা মেইল কালকা ষ্টেশনে না পৌঁছানো পর্যন্ত শিবালিক ডিলাক্স এক্সপ্রেস স্টেশন ত্যাগ করবে না।তাই যারা কালকা মেইলে কলকাতা থেকে যাত্রা করবেন তারা ফেয়ারলি প্লেস থেকে শিবালিক টয় ট্রেনের টিকিট কাটার চেস্টা করবেন।কারন, কোন কারনে যদি কালকা মেইল লেটও হয়,টয়ট্রেন মিস হওয়ার ভয় নেই।টয় ট্রেন ঊনবিংশ শতকের মাঝামাঝি থেকে শিমলাকে কালকা শহরটির সঙ্গে সংযুক্ত রেখেছে এবং শহরটিতে পৌঁছানোর জন্য সবচেয়ে অন্যতম জনপ্রিয় রাস্তা টয় ট্রেনের রাস্তাটি।তবে এটি খুবই ধীর গতির। তবে,পারিপার্শ্বিক দৃশ্য পরিদর্শনের জন্য এই ৯৬ কিলোমিটার দীর্ঘ ট্র্যাকটি সারা জীবন মনে রাখার মত।টয় ট্রেনটি ১৭৬টি সুড়ঙ্গপথ ও ৭৬টি সেতুর মধ্যে দিয়ে অতিক্রম করে।
শিমলা রেলষ্টেশন থেকে মল রোড মাত্র এক কিলোমিটার মত দূরত্বে অবস্থিত।
এছাড়া কলকাতা থেকে দিল্লী হয়ে বাই রোডে শিমলা আসা যায়। বাস ভাড়া এসি ভলভো ১৫০০ রুপী আর নন-এসি ভলভো ৯০০ রুপী। আপনি চাইলে ট্যাক্সি অথবা প্রাইভেট গাড়ি ভাড়া করে আসতে পারেন সিমলা।
�শিমলাতে ঘোরার জায়গাঃ
সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ২২০০ মিটার উচ্চতায় অবস্থিত হিমাচলের রাজধানী,শিমলা শহর। পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন, কঠোর নিয়ম কানুন এবং পরিমিত আধুনিকতায় সাজানো শহর। মানুষের সচেতনতা এবং আইনের প্রয়োগ কিভাবে একটা সাদামাটা শহরকে দৃষ্টিনন্দন করে তুলতে পারে,তা দেখতে চাইলে চলে যান শিমলায়।রাস্তায় সিগারেট খাওয়া যায় না।রাতের শিমলা অনেক বেশী সুন্দর।
শিমলা দেখার জন্য ২ দিনই যথেষ্ট।কালকা থেকে টয় ট্রেনে বা বাই রোড গেলে আপনি দুপুরের মধ্যে শিমলা পৌছে যাবেন। হোটেলে চেক ইন করে দুপুরের খাওয়া সেরে ফেলুন। বিকালে চলে যান মল রোড, রিজ বা চার্চের কাছে। শিমলা শহরের মুল আকর্ষন এই রিজ বা মল রোড। পাশেই অবস্থিত শিমলা কালীবাড়ি। চাইলে ভেতরটা ঘুরে আসতে পারেন। এই পুরা মল রোডে এ্যাম্বুলেনস এবং ফায়ার ব্রিগেডের গাড়ি ছাড়া সব রকম যান চলাচল নিষেধ, তাই নিশ্চিন্তে হেটে বেড়ান। চার্চের পাশে বসার জন্য সুন্দর বেঞ্চের ব্যবস্থা আছে। সন্ধ্যাটা উপভোগ করুন এখানে বসেই। দূরের পাহাড়ের গায়ের বাড়িগুলোর বাতি দেখলে মনে হয় তারা গুলো সব পাহাড়ের গায়ে নেমে এসেছে।
অনেক ব্র্যান্ডের দোকান পাবেন মল রোডে, ঘুরে দেখুন।রাত ৯ টার মধ্যেই দোকানপাট বন্ধ হওয়া শুরু হয়।এরপর হোটেলে ফিরে আসুন।
শিমলাতে যা যা দেখবেন:-
জাখু পাহাড় ও জাখু মন্দির: জাখু পাহাড় হল সিমলার সর্বোচ্চ শৃঙ্গ এবং পারিপার্শ্বিক ভূ-প্রকৃতির এক অত্যাশ্চর্য নিদারুণ দৃ্শ্য পরিদর্শনেরও প্রস্তাব দেয়। পাহাড়ের চূড়ায় স্থিত জাখু মন্দির প্রভু হনুমানের প্রতি উৎসর্গীকৃত। স্থানীয়দের অনুমান অনুযায়ী, সঞ্জীবনী ঔষধি বিদ্যমান এই পাহাড়টিকে তুলে নিয়ে আসার সময় প্রভু হনুমান এখানে বিশ্রাম নিয়েছিলেন। এর ফলস্বরূপ, এই স্থানটি একইভাবে ভক্ত এবং ভ্রমণকারীদের মধ্যে খুবই জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে।এত ঠান্ডার মধ্যে জাখু মন্দিরের চূড়ায় ওঠা খুব কঠিন।শ্বাস নিতে অনেক প্রবলেম হয়।কিছুক্ষন উপরে ওঠার পর গাড়ী পাওয়া যায়।গাড়ীতে গেলে ভালো হয়।
ভ্যাইসরিগেল লজ: অবসারভেটারী পাহাড়ের উপর অবস্থিত ভ্যাইসরিগেল লজ ১৮৯৮ সালে নির্মিত হয়েছিল এবং এটি ভারতের ভাইসরয়, লর্ড ডাফরিনের সরকারি বাসভবন হিসেবে ব্যবহৃত হত। বর্তমানে এই স্থানটি হল ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অফ আ্যডভান্স স্টাডিজ। লজটি শুধুমাত্র ভারতে ব্রিটিশ শাসনের মধ্যে একটি অন্তর্দৃষ্টি প্রদান করে না,সূর্যাস্ত ও সূর্যোদয়ের এক অত্যাশ্চর্য দৃ্শ্য পরিদর্শনেরও সুযোগ দেয়।
সামার হিল: সামার হিলের পথের চারপাশে ওক, সেডার, রডোডেনড্রন এবং আরোও অনেক গাছপালা বেড়ে উঠেছে। এখানে অবস্থিত ম্যানরভিল্যে ম্যানশন হল এই এলাকার সবচেয়ে বিখ্যাত ভবন, কারণ এটিই সেই জায়গা যেখানে মহাত্মা গান্ধী সিমলা ভ্রমণের সময় ছিলেন।
দ্যা রিজ্ :-এটি একটি উন্মুক্ত স্থান, যেটি সিমলার সবচেয়ে বেশি কার্যকলাপ কেন্দ্র রূপে পরিচিত। দ্য রিজ্ বা শৈলশ্রেণীতে বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ ঐতিহাসিক ল্যান্ডমার্ক আছে এবং বেশ কিছু কার্যক্রম আয়োজনের পাশাপাশি এখান থেকে পার্শ্ববর্তী পর্বতগুলির এক সুন্দর দৃশ্য পরির্শনেরও প্রস্তাব দেয়। শহরের এই অংশটি সিমলার জনজীবনের জন্যও খুবই গুরুত্বপূর্ণ, কারণ এটির নীচের জলাশয় শহরের একটি প্রধান অংশে জল সরবরাহের দায়ভারে রয়েছে।
মল্ রোড:- সিমলার বিপূল সংখ্যক ল্যান্ডমার্ক এখানে অবস্থিত হওয়ায়, মল রোড পর্যটকদের মধ্যে খুবই জনপ্রিয়। এছাড়াও এখানে বেশ কিছু রেস্তোঁরা, ক্লাব, বার ও দোকান অবস্থিত হওয়ায় এটি সিমলার বাণিজ্যিক কেন্দ্রস্থল হিসাবেও পরিচিত।
ক্রাইস্ট চার্চ:- এটি ১৮৪৪ সালে নির্মিত হয়েছিল এবং এটি উত্তর ভারতের দ্বিতীয় প্রাচীনতম গির্জা। ক্রাইস্ট চার্চটি রিজ্-এ অবস্থিত এবং এটি তার এলিজাবেথীয় স্থাপত্য ও তার নকশায়িত কাঁচের জানলার জন্য পর্যটকদের মধ্যে খুবই জনপ্রিয়। এছাড়াও গির্জাটিতে একটি পাইপ অর্গান রয়েছে, যেটি দেশের সবচেয়ে এক অন্যতম বৃহৎ হিসাবে বিবেচিত হয়। এটি তাদের জন্যই আদর্শ যারা আধ্যাত্মিকতার সাথে সাথে ইতিহাসের এক নিদর্শনকে খুঁজে চলেছে।
সেন্ট মাইকেল ক্যাথিড্রাল:-সেন্ট মাইকেল চার্চ ১৮৫০ সালে নির্মিত হয়েছিল। এটা সিমলার প্রথম ক্যাথলিক গির্জা। এটিতে পাঁচটি মার্বেলের বেদী আছে যেগুলি ১৮৫৫ সালে ইতালি থেকে আনা হয়েছিল। এছাড়াও গির্জাটিতে সুন্দর নকশায়িত কাঁচের জানলা রয়েছে।
গেইটি থিয়েটার :- এই থিয়েটার বা নাট্যমঞ্চটি, সিমলায় ব্রিটিশ বাসিন্দাদের বিনোদনের সুযোগ প্রদানের জন্য ১৮৮৭ সালে নির্মিত হয়েছিল। ভবনটির নব্য স্থাপত্য লালিত নেত্রের জন্য এক সুন্দর দৃশ্য। এখানে একটি প্রদর্শনী সভা ও অন্যান্য বহু সুযোগ-সুবিধা সহ একটি শৈল্পিক গ্যালারি রয়েছে। যেকোনও সূক্ষ শিল্পপ্রেমীদের জন্য এটি একটি অবশ্যই দর্শনীয় স্থান।
তত্তপানি: সিমলা থেকে কয়েক কিলোমিটার দূরে তত্তপানি-তে অবস্থিত সালফিউরাস উষ্ণ প্রসবণ অনেকের মতে ভেষজ উপকারিতা হিসাবে বিবেচিত হয় এবং সেই কারণেই চিকিৎসক পর্যটকদের জন্য তত্তপানি একটি খুবই জনপ্রিয় স্থান। উষ্ণ প্রসবণের পাশাপাশি, শতদ্রু নদীর ঠান্ডা জল রিভার র্যাফটিং-এর সুযোগ প্রদান করে।এখন সরকারী ড্যামের কারনে তত্তপানি তার সৌন্দর্য হারিয়েছে।
কোটগড়: কোটগড়, সিমলা থেকে কয়েক কিলোমিটার দূরে, প্রাচীন হিন্দুস্তান-তিব্বত সড়কের উপর অবস্থিত এবং এটি আপেল বাগানের জন্যও প্রসিদ্ধ। এটি এমন একটি স্থান যেখানে ১৯১৪ সালে হিমাচল প্রদেশের মধ্যে সর্বপ্রথম বাণিজ্যিক ফলের বাগান স্থাপিত হয়েছিল। পরবর্তীকালে, কোটগড় প্রকৃতপক্ষে হিমাচল প্রদেশের এক অন্যতম প্রধান আপেল রপ্তানীকারক স্থান হয়ে ওঠে।
সিমলা জল-অববাহিকা অভয়ারণ্য: ১০.২৫ বর্গ কিলোমিটার এলাকা জুড়ে বিস্তৃত এই অভয়ারণ্যটি সরলবর্গীয় অরণ্য, খাড়াই ভূখণ্ড এবং ক্ষু্দ্র প্রবাহের গৃহস্থল। সিমলার ১২ কিলোমিটার পূর্বে অবস্থিত এই স্থানটি হল বাদামী ভালুক, কৃষ্ণকায় হরিণ, ভারতীয় লাল শেয়াল ও ডোরা-কাটা হায়নার নিরাপদ আশ্রয়স্থল।
কুফরিঃ কুফরি হিমাচল প্রদেশের সিমলা জেলার একটি ছোট্ট হিল ষ্টেশন। সিমলা শহর থেকে ন্যাশনাল হাইওয়ে ২২ এর দিকে ১৩ কিলোমিটার দূরত্বে অবস্থিত এই শহরটি। ‘কুফরি’ শব্দটি স্থানীয় শব্দ ‘কুফ্র’ থেকে এসেছে, যার অর্থ ‘লেক’। এখানে রয়েছে ‘হিমালায়ান ওয়াইল্ড লাইফ জু’। মজার ব্যাপার ১৮১৯ সালের আগে এই এলাকা মানুষের অজানা ছিল, মাত্র দুইশত বছর আগেও।একদল ইংরেজ পর্যটক বনের ভেতর দিয়ে ট্র্যাভেল করতে গিয়ে আবিস্কার করেন এই অপার সৌন্দর্যের জায়গাটি। প্রতি বছর ফেব্রুয়ারিতে হিমাচল ট্যুরিজম এর উদ্যোগে এখানে উইন্টার স্পোর্টস ফেস্টিভ্যাল অনুষ্ঠিত হয়।কুফরির চূড়ায় উঠতে হলে আপনাকে ঘোড়ায় করে উঠতে হবে।জনপ্রতি ঘোড়া ভাড়া ৫০০ রুপি।সরকার কর্তৃক ভাড়া নির্ধারিত।
ফাগুঃ ফাগু কুফরি থেকে ছয় কিলোমিটার দূরে প্রায় ২৫০০ মিটার উঁচুতে অবস্থিত অন্যতম পর্যটন কেন্দ্র। ফাগু শীতে স্কিয়িং আর উইন্টার স্পোর্টস এর জন্য দেশ-বিদেশ এর পর্যটকদের কাছে খুব জনপ্রিয়। ফাগুর চূড়া থেকে ‘গিরি উপত্যকা’র খুব সুন্দর ভিউ দেখতে পাওয়া যায়।
শিমলাতে থাকা:
মল রোড বা লাক্কার বাজার এর আশেপাশে ৮০০-১৫০০ রুপির মধ্যে হোটেল পেয়ে যাবেন।রুম ঠিক করার আগে রুম হিটার আর গিজার আছে কিনা যাচাই করে নিন।
শিমলাতে খাওয়াঃ
সকালের নাস্তা: চেস্টা করবেন যে হোটেলে থাকবেন সেই হোটেলের সাথে নাস্তার চুক্তি করতে। যদি তাতে কিছুটা বেশিও লাগে, রাজি হয়ে যাবেন। কারন সাত সকালে ঠান্ডায় বের হতে ইচ্ছা করবে না।আলু পরোটা,তাওয়া রুটি,ম্যাগী নুডলস আর চা দিয়েই নাস্তা সারতে হবে।চা খুব একটা ভালো লাগবে না। কারন ওরা চায়ে আদা আর এলাচ ব্যবহার করে।
দুপুর/রাতের খাবার- ভাত খেতে চাইলে থালি সিস্টেমে খাবেন।Veg/Non-Veg দুটোই পাবেন।
Veg থালি খেলেই ভালো হবে।কারন মাছ এবং মাংশ রান্না একদমই ভালো না।খেতে পারবেন না শুধু শুধু নষ্ট হবে।
এছাড়া আর যা যা খেতে পারেন:
– চিকেন মমো- স্থানীয় খাবার।
– ট্রাউট মাছ।
– পেস্ট্রি, কাপকেক- শিমলায় অবশ্যই পেস্ট্রি খাবেন।কাপকেক অসাধারন খেতে।
– পাপড়ি চাট।
– ভেলপুরি।
– গোলগাপ্পা বা পানিপুরি।
– ইডলি, দোসা।
– চানাচাট।
– আপেল, নাশপাতি- ফল খেতে ভুলবেন না। একদম ফ্রেশ, নো ফরমালিন।
– টাংরি কাবাব।
Post Copied From:Dip Biswas>Travelers of Bangladesh (ToB)
ফাগু ভ্যালী
শিমলা…
হিমাচল প্রদেশ…
ফাগু ভ্যালী:-
ফাগু কুফরি থেকে ছয় কিলোমিটার দূরে প্রায় ২৫০০ মিটার উঁচুতে অবস্থিত।ফাগু শীতে স্কিয়িং আর উইন্টার স্পোর্টস এর জন্য দেশ-বিদেশ এর পর্যটকদের কাছে এবং গ্রীষ্মে স্থানীয়দের কাছে খুব জনপ্রিয়। এখানকার চূড়া থেকে ‘গিরি উপত্যকা’র অসাম ভিউ দেখতে পাওয়া যায়….
যেভাবে যাবেন:-
বাস/ট্রেনে কলকাতা-কলকাতা থেকে কালকা মেইলে কালকা-কালকা থেকে টয় ট্রেনে শিমলা-শিমলা থেকে জিপে কুফরি।কুফরি থেকে ৬ কি.মি. দূরে ফাগু ভ্যালী…ঢাকা-
Post Copied From:Dip Biswas>Travelers of Bangladesh (ToB)
মানালি
আমি আগেই বলেছিলাম আমাদের ট্যুর প্লান ছিল (ঢাকা-কোলকাতা – কালকা- শিমলা- মানালি- দিল্লী- আগ্রা- কোলকাতা-ঢাকা)। আমাদের এই ট্যুর এর মেম্বার ছিলাম দুই জন। আমি (রিয়াদ আরেফিন ) এবং আমার বন্ধু আবদুল্লাহ আল মাসুম ( বাবু)। আমার এই ট্যুর প্লান টা বলার আগে কিছু কথা আছে… যা কিনা সবার কাছেই পরবর্তীতে প্রশ্ন হয়ে দাঁড়ায়। তাই আমি চিন্তা করলাম এই প্রশ্নের উত্তর গুলো আগে আপনাদের দিবো।
১। মানালি যাওয়ার উপযুক্ত সময় কখন?
২। মানালি যাওয়ার উপযুক্ত রুট কোনটা ?
৩। ইন্ডিয়ার বিভিন্ন স্থান এর খরচ কত হবে?
৪। টয় ট্রেন এর টুকিটাকি।
৫। ইন্ডিয়ান রেল এর টুকিটাকি।
৬। ইন্ডিয়া র বিভিন্ন স্থান এর পরিবহন সমাচার।
৭। ইন্ডিয়ান বিভিন্ন স্থান এর হোটেল সমাচার।
৮। ইন্ডিয়া র বিভিন্ন স্থান এ খাবার সমাচার।
৯। রথাঙ্গ পাস সম্পর্কে কিছু কথা।
১০। দিল্লি ও আগ্রা নিয়ে কিছু কথা।
এবার উত্তরে আসা যাক। আসলে ইন্ডিয়া সম্পর্কে আমি যে সব জানি তা কিন্তু না। ইন্ডিয়া তে যাওয়ার পর যতটুকু ঘুরিছি তার অভিজ্ঞতার উপর ভিত্তি করেই এই সব প্রস্নের উত্তর গুল দিব।
১। মানালি যাওয়ার উপযুক্ত সময় কখন?
উত্তর ঃ আসলে মানালি সব সময় সুন্দর। এই মানালিকে বলা হয় দেবভুমি। মানালির সুন্দরয অসাধারন। সেই প্রসঙ্গে বলতে গেলে মানালি যাওয়ার উপযুক্ত সময় বলে কিছুই নেই, সবসময় সুন্দর সব সময় যাওয়া যায়। কিন্তু সিজান ভেদে মানালির প্রকৃতির পরিবর্তন হয়। আপনি কোন প্রকৃতিতে মানালি কে দেখবেন সেই টাই হবে মানালি কে দেখার উপযুক্ত সময়।
১। জানুয়ারি- ফেব্রুয়ারি- মার্চ ঃ এই সময় টাতে আপনি মানালি তে শুধু বরফ পাবেন। যেই দিকেই তাকাবেন শুধু বরফ। যারা বরফ দেখতে ভালোবাসেন, বরফ নিয়ে খেলতে ভালোবাসেন তাদেরকে বলবো এই মাস গুলতে ট্যুর প্লান করুন। আপনাদের জন্য এই টাই উপযুক্ত সময়।
২। এপ্রিল-মে-জুন ঃ এই সময় টাকে মানালির বসন্ত বলা হয়। প্রকৃতি সবুজ রুপ ধারন করে। দূরে পাহাড়ে বরফ দেখা যায়। সলাং ভ্যালি, রথাঙ্গ পাস বরফ পাবেন। মানালি শহর টা ঘুরতে পারবেন। পায়ে হেটে হিল ট্র্যাকিং করতে পারবেন। প্রকৃতির সুন্দরয দেখার জন্য সব থেকে উপযুক্ত সময়। এই সময় টাতে আপেল গাছে অ্যাপেল একদম ছোট থাকে।
৩। জুলাই- অগাস্ট – সেপ্টেম্বর ঃ এই সময় টায় মানালি তার পুরো যৌবন ফিরে পায়। চারদিকে শুধু পাইন বনের সবুজ সমারহ। বিপাসা হ্রদ তার পূর্ণ রুপ ফিরে পায়। অ্যাপেল , চেরি ফল গুল বড় হবে। পাহাড়ের গায়ে সবুজ প্রকৃতি দেখতে এই সময় টাই উপযুক্ত। আর এই সময় গেলে বরফের দেখা পাবেন না।
৪। অক্টোবর – নভেম্বর – ডিসেম্বর ঃ এই সময় টাতে শীত ের আগমন ঘটবে। নভেম্বর, ডিসেম্বর মাসে গেলে, কপাল ভাল থাকলে স্নও ফাল ও পেয়ে যেতে পারেন। এই সময় টাও মানালি ঘুরার জন্য উপযুক্ত একটা সময়।
এখন এই ৪ টা সিজান উপর ভিত্তি করে যার যেই সময় টা ভালো লাগে সে সেই সময় টাকে উপযুক্ত করে ঘুরে আস্তে পারেন মানালি।
২। মানালি যাওয়ার উপযুক্ত রুট কোনটা ?
উত্তরঃ মানালি যাওয়ার জন্য অনেক গুল রুট আছে। আমি একে একে বলছি যার যেই রুট পছন্দ হয় সে সেই রুট এই প্লান করে ফেলুন।
# কলকাতা থেকে বাই ট্রেন কালকা, কালকা থেকে বাই ট্রয় ট্রেন/ ট্যাক্সি তে সিমলা, সিমলা থেকে বাই বাস/ ট্যাক্সি মানালি, মানালি থেকে বাই বাস দিল্লি, দিল্লি থেকে আগ্রা, আগ্রা থেকে বাই ট্রেন কলকাতা। ( যারা হিল রাইড বেশি পছন্দ করেন, যাদের হিল সিকন্যাস কম তাদের জন্য এই রুট টা উপযুক্ত)
# কলকাতা থেকে বাই ট্রেন আগ্রা, আগ্রা থেকে বাই বাস দিল্লি, দিল্লি থেকে বাই বাস মানালি, মানালি থেকে বাই বাস সিমলা। সিমলা থেকে বাই ট্রয় ট্রেন/ট্যাক্সি তে কালকা , কালকা থেকে বাই ট্রেন এ কলকাতা। ( এই প্লান এও যেতে পারেন )
# কলকাতা থেকে বাই ট্রেন দিল্লি, দিল্লি থেকে বাই বাস মানালি, মানালি থেকে বাই বাস দিল্লি, দিল্লি ,আগ্রা ঘুরে বাই ট্রেন কলকাতা। ( এই প্লান টা যাদের হিল সিকন্যাস আছে, অথবা ট্যুর আ সাথে বেবি আছে, অথবা ট্যুর মেয়েদের সংখ্যা বেশি তারা প্লান টা বেছে নিতে পারেন)।
# কলকাতা থেকে বাই এয়ার দিল্লি / কুল্লু (কুল্লু থেকে মানালি মাত্র ৫০ কিলো ) দিল্লি / কুল্লু থেকে বাই বাস মানালি। মানালি থেকে বাই বাস দিল্লি।দিল্লি ,আগ্রা ঘুরে বাই এয়ার এ কলকাতা। ( যারা এয়ার এ ঘুরবেন তাদের জন্য এই প্ল্যান টা উপযুক্ত)
উপরের প্ল্যান গুলোর ভিতর যেই রুট প্ল্যান টা আপনাদের ভালো লাগবে সেই রুটেই আপনাদের ট্যুর প্ল্যান সাজিয়ে ফেলুন।
৩। ইন্ডিয়ার বিভিন্ন স্থান এর খরচ কত হবে?
উত্তরঃ আসলে আমরা খরচ বলতে থাকা, খাওয়া, ঘুরাঘুরি কেই বুঝাই। শুধু মাত্র কলকাতা বাদে ইন্ডিয়া র সব শহরে খরচ তুলনা মুলক কম হবে। ট্যুর এর প্ল্যান এর উপর নির্ভর করে আসলে খরচ কত হবে। শুধু মাত্র হোটেল এবং পরিবহন ছাড়া অন্ন সব কিছুর খরচ প্ল্যান করে কারা যায়। যত দিন এর ট্যুর হবে তত দিনের খাবারের একটা এভারেজ হিসাব বের করা যায়। কত দিন ঘুরবো কথায় কথায় যাবো তার সঠিক প্ল্যান করা থাকলে পরিবহন হিসাব টাও সহজেই বের করা যায়। শুধু মাত্র (মানালি, সিমলা) হোটেল টা সিজান ভেদে ভাড়ার পরিবর্তন হয়। সেই টা হলেও খুব একটা পরিবর্তন হয় না। আর (মানালি,শিমলা) শহরে আশেপাশে ঘুরার যেই পরিবহন খরচ আছে, অর্থাৎ ট্যাক্সি/ জীপ ভাড়া সিজন ভেদে কমবেশি হয়। তাই বলবো সঠিক প্ল্যান ঠিক করুন এবার খরচ টা প্ল্যান অনুযায়ী বসিয়ে নিন দেখবেন ইন্ডিয়া ট্যুর এর মোট খরচ রেডি হয়ে গেছে।
৪। টয় ট্রেন এর টুকিটাকি।
উত্তরঃ যারা কিনা কলকাতা থেকে কালকা হয়ে সিমলা হয়ে মানালি যাবেন তাদের জন্য এই লেখাটুকু। কলকাতা থেকে কালকা যাওয়ার একমাত্র সরাসরি ট্রেন হল কালকা মেইল। যদিও বলা হয় কালকা মেইল সুপার ফাস্ট, কিন্তু কালকা পৌছাতে ৪ থেকে ৫ ঘণ্টা লেট হয়। কালকা স্টেশন থেকে সিমলার উদ্দেশে সকাল ৬ টা থেকে ট্রয় ট্রেন ছেরে যায়। প্রতি ৩০ মিনিট / ১ ঘণ্টা পরপর ট্রেন ছারে। লাস্ট ট্রেন ১ টায় ছেরে যায়। এখনে অনেকেই বলে থাকে রিজার্ভেশন করা থাকলে ট্রয় ট্রেন এর সিট পাওয়া যায়। কিন্তু আমি বলবো তাদের সব ট্রেন রিজার্ভেশন সিস্টেম থাকে না। প্রতি ১ ঘণ্টা পর পর যেই ট্রেন গুল ছারে সেইগুল তে কোন রিজার্ভেশন থাকে না। যার যেই খানে ইচ্ছা বসতে পারে। র টিকেট এর দাম মাত্র ৫০ রুপি। পাহাড়ের বুক চিরে ১০২ টা টানেল ভেদ করে মেঘের সাথে খেলা করে অসাধারন এক ভ্রমন শেষে করে সিমলা পৌছতে সময় লাগবে ৫ ঘণ্টার মত। তাই আমি বলবো রিজার্ভেশন এর ঝামেলায় যাওয়ার কোন প্রয়োজন নেই অনায়েসে ট্রয় ট্রেন পেয়ে যাবেন।
৫। ইন্ডিয়ান রেল এর টুকিটাকি।
উত্তরঃ ইন্ডিয়ান রেল এর টিকেট পাওয়াটা আকাশের চাঁদ পাওয়ার মত। যারা ফাস্ট টাইম ইন্ডিয়া র কলকাতার বাহিরে যাবেন তাদের জন্য অনেক কঠিন কাজ। অনেকেই চেষ্টা করে দেশে থেকেই টিকেট কনফার্ম করার জন্য বাই এজেন্সি ততকাল কোঠায়, নেট ফেয়ার থেকে বেশি টাকা দিয়ে। যদি কোন পরিচিত এজেন্সি থাকে তবে টিকেট করে নিতে পারেন। অন্যথায় আমি বলবো কলকাতায় হাওরায় ফেয়ারলি প্লেস থেকে ফরেন কোঠায় টিকেট কাটুন। ( হাওড়া গামি যে কোন বাস হেল্পার কে বললেই ফেয়ারলি প্লেস চিনিয়ে দেবে)। সকাল ৮ টার ভিতর ফেয়ারলি প্লেস এ থাকতে পারলে, ভাগ্য ভালো থাকলে অই দিন এর ও টিকেট পেয়ে যেতে পারেন। না হয় ত সর্বচচ ২ দিন কলকাতা থাকতে হতে পারে। আর দিল্লি থেকে অনায়েসে টিকেট পাওয়া যায়। নয়া দিল্লি স্টেশন এর ২য় তালায় ইন্টারন্যাশনাল কোঠায় টিকেট কাটা যায়। সেখনে যে কোন দিন এর টিকেট পেয়ে যেতে পারবেন। তারা অনেক হেল্প ফুল্ল।
৬। ইন্ডিয়া র বিভিন্ন স্থান এর পরিবহন সমাচার।
উত্তরঃ পরিবহন খরচ ট্যুর খরচ এর সব থেকে বড় একটি অংশ। কলকাতা থেকেই শুরু করি, কলকাতা শহর ও আশেপাশে ঘুরার জন্য বাস টাই বেস্ট। মাঝে মাঝে শেয়ার আ সিনজি ব্যাবহার করতে পারেন। মেট্রো রেল ও ব্যাবহার করতে পারেন। এবার আসুন সিমলা, মানালি র পরিবহন খরচ, সিমলা র আশেপাশে ঘুরার জন্য অনায়েসে ট্যাক্সি পেয়ে যাবেন সে সব স্পোর্ট ২০০০ থেকে ২৫০০ রুপির ভিতরে ঘুরে দেখাবে। আই টা সিজন ভেদে কমবেশি হয়ে থাকে। সিমলা থেকে মানালি বাই বাস HRTC (A/C) ৬৫০ রুপি। মানালির আশেপাশে ঘুরার জন্য ট্যাক্সি/জীপ/মাহেন্দ্রা পাবেন। আমি বলবো মানালি শহর এবং আর আশেপাশে পায়েহেটে ঘুরুন অনেক মজার। মানালির শহরের আশেপাশের স্পোর্ট দেখতে ১০০০ থেকে ১৫০০ রুপির ভিতর ট্যাক্সি পেয়ে যাবেন। সলাং ভ্যালি তে যেতে ২০০০ থেকে ২৫০০ পরবে সিজন ভেদে কম বেশি হয়ে থাকে। রথাঙ্গ পাস ২০০০থেকে ৮০০০০ পর্যন্ত হতে পারে সিজানভেদে। (ট্যাক্সি/জিপ)
মানালি থেকে দিল্লি বাই বাস ( A/C VOLVO) ১২০০ থেকে ১৩০০ রুপি পরবে। আর দিল্লি শহর ঘুরলে সিটি ট্যুর প্যাকেজ এ ঘুরতে পারেন। নিজেরাও বাস, সিনজি, ট্যাক্সি, মেট্রো তে করে দিল্লি ঘুরতে পারেন। আর আগ্রা হল সবথেকে খারাপ জায়গা ইন্ডিয়া তে, আগ্রা তে অনেক দালাল দের উপদ্রপ। আগ্রা তে রাতে না থাকাই ভালো ।
৭। ইন্ডিয়ান বিভিন্ন স্থান এর হোটেল সমাচার।
উত্তরঃ ইন্ডিয়া র কলকাতা বাদে সব ট্যুরইস্ট প্লেস এর হোটেল ভাড়া তুলনা মুলক কম। দালাল দের একটা ঝামেলা সব যায়গাতেই থাকবে। শতভাগ চেষ্টা করবেন এরিয়ে চলার জন্য। এতে কিছু টাকা হলেও বাচবে। আপনি আপনার ট্যুর এর প্ল্যান অনুযায়ী হোটেল নির্বাচন করুন। মানালি তে থাকার জন্য সব থেকে সুন্দর যায়গা হল ওল্ড মানালি। ওখানে ১০০০ থেকে ১৫০০ রুপির ভিতর অনেক বড় এবং সুন্দর রুম পাবেন। আর নিউ মানালি ( মল রোড) প্রচণ্ড গিঞ্জি মানুষ বেশি ভারাও বেশি। আর এলোয় ( নিউ মানালি) মল রোড থেকে একটু দূরেই অই খানের হোটেল গুলোর ভাড়া তুলনা মুলক কম। এবার আসুন দিল্লি তে দিল্লি তে থাকার মত অনেক যায়গা আছে। তবে আপনি যদি নিউ দিল্লি স্টেশন এর পাসে পাহাড় গঞ্জ এ থাকতে পারেন। মাইন রোড থেকে একটু ভিতরেই ১০০০ রুপিতে এ/সি রুম পাবেন। এ ছারাও আপনি জামা মসজিদ এর আশেপাশে , রাজীব চওক এর আসে পাসে থাকতে পারেন। ১০০০ থেকে ১৫০০ ভিতর পেয়ে যাবেন। এবার আসুন আগ্রা, আমরা যদিও আগ্রায় রাতে ছিলাম না। আর আগ্রা খুব একটা নিরাপদ যায়গা না। এখানে দালালদের উপদ্রপ খুব বেশি। আপনি চাইলে তাজমহলের আশেপাশে কম খরচে থাকতে পারবেন। এবার আসুন কলকাতায়, নিউ মার্কেট অনেক বেস্ত একটা যায়গা। বাংলাদেশী রা নিউ মার্কেট এর মির্জা গালিব স্ট্রিট, মার্ক কুইক স্ট্রিট, পার্ক স্ট্রিট এর আসেপাসেই থাকেন বাংলাদেশী দের চাপ বেশী থাকলে হোটেল ভাড়া বেড়ে যায় শেয়ার বাজারের মত। এ/সি রুম আর জন্য আপনাকে ২০০০ থেকে ৩০০০ রুপি বাজেট রাখতেই হবে।
৮। ইন্ডিয়া র বিভিন্ন স্থান এ খাবার সমাচার।
উত্তরঃ আমাদের বাঙ্গালী মুসলিমদের জন্য ইন্ডিয়া তে ভালো খাবার পাওয়া টা একটু কষ্ট কর। কলকাতায় আপনি ভালো মানে খাবার পাবেন। খাবার খেয়ে ভালো লাগবে। কিছু হোটেল আর নাম দিয়ে দিলাম হোটেল রাঁধুনি, হোটেল প্রিন্স এই হোটেল গুলোর খাবার অনেক ভালো। যখনি আপনি কলকাতা ছারবেন তখন থেকেই ভালো রুচি সম্মত খাবারের কষ্ট শুরু হয়ে যাবে। ট্রেন এ খাবারের অনেক কষ্ট আণ্ডা বিরানি আর ভেজ বিরানি ছাড়া ট্রেন এ খাবার কিছুই পাওয়া যায় না। ট্রেন এর ওই বিরানির টেস্ট খুব একটা ভালো নয়। আমি বলবো অবশ্যই ট্রেন এ পর্যাপ্ত খাবার নিয়ে উঠার জন্য। সিমলায় থাকলে সিমলা মল রোড এর আশেপাশে বাঙ্গালী খবার হোটেল আছে। এবার আসুন মানালিতে, মল রোড এর আসে পাসে অনেক হোটেল আছে ইন্ডিয়ান খাবার পাওয়া যায়। তবে মানালিতে মুসলিম হোটেল আছে একটাই,হোটেল এর নাম “করিম খানা খাজানা” হোটেল এর মালিক হাফেজ তারিক, খুব ভালো একজন মানুষ, সে বাংলা বুঝে এবং বাংলা বলতেও পারে। উনার বাসা কাশ্মীর। বাংলাদেশ থেকে যারা মানালি তে যায় তাদের কে সে অনেক হেল্প করে। তার নাম্বার আমি দিয়ে দিতেছি (৯৮১৬৬৯৩৭২২, ৯৮০৫১৫৫৪৮৯)।
দিল্লি তে প্রচুর মুসলিম হোটেল পাবেন, কিন্তু খাবারের মান খুব বেশি ভালো হবে না। আগ্রাতেও একি রকম। প্রচুর খাবারের হোটেল আছে। ইন্ডিয়ান রা একটা জিনিস খুব বেশি খায় তা হল চাটনি। যা আমরা একবার খেলে মুখ এক মিনিট বন্ধ হয়ে থাকে। আর কেক, মিষ্টি, ফাস্ট ফুড, চিপ্স, জুস ইত্যাদি আরও অনেক কিছু পাবেন কম টাকায়। ইন্ডিয়া র যেখানেই যাবেন ভারি খাবার খেলে আপনার ২০০ থেকে ২৫০ রুপি পরবে। ( বিরিয়ানি, সাদা ভাত)।
৯। রথাঙ্গ পাস সম্পর্কে কিছু কথা।
উত্তরঃ মানালি থেকে রথাঙ্গ পাস এর দূরত্ব ৫২ কি মি, মানালির সব থেকে সুন্দর যায়গা হল এই রথাঙ্গ পাস। সৃষ্টি কর্তা কতটা সুন্দর্য দিয়েছে এই রথাঙ্গ পাস কে তা না দেখলে বিশ্বাস করা যায় না। যারা মানালি যায় তাদের অনেকই রথাঙ্গ পাস যেতে পারে না। এই টা আসলে ভাগ্যের বেপার। সবার ভাগ্যে রথাঙ্গ পাস থাকে না। তবে পারফেক্ট টাইম এ গেলে রথাঙ্গ পাস এর আসল সুন্দরয দেখা যায়। এপ্রিল , মে, জুন(প্রথমে) আপনি রথাঙ্গ পাস এর রোড পারমিশন পাবেন। সেই সময় আপনি রথাঙ্গ পাস এ পাবেন প্রচুর বরফ, আমি আমার প্রথম লেখাতেই সেই ভিডিও টা দিয়েছিলাম। যদিও পরিবহন খরচ টা একটু বেশি হবে। আপনি যেই দিন মানালি তে যাবেন সেই দিন থেকেই রথাঙ্গ পাস যাওয়ার জন্য চেষ্টা করতে থাকবেন। এজেন্সি র মাধ্যমে গেলে টাকাটা একটু বেশি লাগবে কিন্তু রথাঙ্গ পাস যেতে পারবেন সেই টা ১০০% নিশ্চিত। আমাদের খরচ হয়েছিল জন প্রতি ২০০০ রুপি। ড্রেস ২৫০ রুপি । আমরা দুইজন গিয়েছিলাম শেয়ারে। আমাদের জীপে আরও ৬ জন ছিল। রথাঙ্গ পাস এ প্রতিদিন ১০০০ গাড়ীর পারমিশন দেয় তার ভিতর ৬০০ পেট্রোল র ৪০০ ডিজেল। আপনি মানালির বিভিন্ন ট্যাক্সি ড্রাইভার দের ও হেল্প নিতে পারেন। আর কারও যদি ড্রাইভিং লাইসেন্স থাকে তবে সে ইচ্ছা করলে মোটর সাইকেল এর পারমিশন নিয়ে রথাঙ্গ পাস যেতে পারে।
১০। দিল্লি ও আগ্রা নিয়ে কিছু কথা।
উত্তরঃ- দিল্লি দুই দিন ই যথেষ্ট, বড়জোর ৩ দিন থাকতে পারেন সব ঘুরতে পারবেন। নিউ দিল্লি স্টেশন এর পাশেই পাহাড়গঞ্জ এলাকায় থাকতে পারেন হোটেল ভারাও কম সুবিধাও বেশি। আমি সবাইকে যা বলবো তা হল, প্রতি টা হোটেল এই ট্যুরিস্ট কোচ আছে এ/সি সার্ভিস, এক এক জনের কাছে এক এক টা প্রাইজ রাখে। ৪০০ থেকে ৫০০ রুপি র ভিতর পেলে ওদের ট্রিপ টা নিতে পারেন, সব স্পোর্ট ঘুরলেন, ওদের প্রবলেম একটাই টাইম লিমিট কম। আপনার যেই স্পোর্ট বেশি ভালো লাগবে সেই স্পোর্ট গুল পরের দিন আবার গেলেন বাস এ ( বাস,মেট্রো) পাবলিক সার্ভিস খরচ খুব ই কম। তবে আমরা দিল্লি পাবলিক সার্ভিস এই ঘুরছি। আর আগ্রা থাকার দরকার নাই, একদিন ই আগ্রার জন্য যথেষ্ট। আগ্রা খুব খারাপ যায়গা তাই বলবো সাবধানে থাকবেন। ওদের দালাল গুল খুবই খারাপ। অবশ্যই দালাল এরিয়ে চলবেন দরকার হলে পুলিশ এর সাহায্য নিবেন।
আজ এই পর্যন্তই, আমার ৩য় লিখাতে আমাদের মুল ট্যুর এবং কিছু মজার সৃতি আপনাদের কে বলবো।
Post Copied from:Riad Arefin>Travelers of Bangladesh (ToB)
কোলকাতা, শিমলা, মানালি আর আগ্রা!
১৫ হাজার টাকায় ঘুরে আসলাম কোলকাতা, শিমলা, মানালি আর আগ্রা! কোলকাতায় ২দিন, শিমলায় ১দিন, মানালিতে ২দিন আর আগ্রায় ১দিন আর ৪দিন আসা-যাওয়া মিলিয়ে ১০দিনের ট্যুর ছিল আমাদের।
আমরা গিয়েছিলাম ৪জন। ২২ সেপ্টেম্বর রওনা দিই খুলনা থেকে বেনাপোলের উদ্দেশ্যে। ঢাকা থেকে আসতে চাইলে খুলনার বাস/ট্রেনে আসা যাবে। বাস ভাড়া ৫৫০টাকা, ট্রেন ৫০৫টাকা।
Day Zero:
খুলনা-বেনাপোল ট্রেন (সকাল ৬টায় খুলনা রেলস্টেশন থেকে) = ৪৫টাকা
বেনাপোল-বর্ডার অটো= ২৫ টাকা (রিজার্ভ ১০০টাকা)
বর্ডারে কারো হাতে পাসপোর্ট না দিয়ে নিজে নিজে ইমিগ্রেশন কমপ্লিট করুন। আগে থেকে বিভাগীয় সোনালি ব্যাংক শাখায় ট্রাভেল ট্যাক্স ৫০০ টাকা জমা দিয়ে যেতে পারেন,ইমিগ্রেশনে সময় বাঁচবে। ডলার নিতে পারেন অথবা হাতে ৫০০০ টাকা রাখতে পারেন, বাকিটা ভেতরে। এইটা বৈধ না, তবে বাংলা টাকা ইন্ডিয়ায় ভাঙ্গালে রেট ভালো পাওয়া যায়। বর্ডার পার করে টাকা ভাঙ্গিয়ে আমরা সোজা বনগাঁ স্টেশন চলে যাই। এখান থেকে সকল হিসাব রুপিতে। “১ রুপি=১.২৮ টাকা” “সকল রুম ভাড়া মাথাপিছু প্রতিদিনের”
বর্ডার-বনগাঁ = ৩০ রুপি
বনগাঁ – শিয়ালদাহ = ২০ রুপি
শিমলা যেতে হলে আগে কালকা যেতে হবে ট্রেনে। আগে থেকে টিকেট বুক দিলে তো ঝামেলা কমে গেল। আর না দিলে সোজা শিয়ালদাহ থেকে ফেয়ারলি প্লেস চলে যান। ফরেনারদের জন্য শুধুমাত্র টিকেট বিক্রি হয় ফেয়ারলির ইস্টার্ন রেলওয়ে হেডকোয়ার্টার বিল্ডিং এ। তাই পাসপোর্ট+ভিসার জেরক্স সাথে নেয়া বাধ্যতামূলক।
শিয়ালদাহ-ফেয়ারলি প্লেস= ১৫০ রুপি ট্যাক্সিতে (পারহেড ৪০ রুপি)
ফেয়ারলি থেকে টোকেন সংগ্রহ+পূরণ করে যেসব টিকেট কিনবেনঃ
১) হাওড়া টু কালকা (কালকা মেইল, ১২৩১১) = ৯৯৫ রুপি স্লিপার ক্লাস (GST সহ)
২) দিল্লি টু হাওড়া (কালকা মেইল, ১২৩১২) = ৮৮৫ রুপি স্লিপার।
টিকেট কাটা হয়ে গেলে মারকুইস স্ট্রিটে চলে যান। পূঁজার সময় গিয়েছিলাম তাই আগে থেকে হোটেল বুক দিয়ে যাওয়া বেটার মনে হয়েছে। হোটেল বুক করেছিলাম এর মাধ্যমে। জোড়া গির্জার পাশের গলিতে ” Shaw Guest House” এ ছিলাম।
রুমভাড়া= পারহেড ৪২০রুপি
কোলকাতায় ঘোরার জায়গাঃ
১) ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়াল ২) ইডেন ৩) একুইটিকা ৪) নিউমার্কেট ৫) হাওড়া ব্রীজ ৬) বিদ্যাসাগর সেতু ৭)সাইন্স সিটি
কোলকাতায় ১দিন থাকা শ্রেয়। শহর ঘুরতে হলে আশপাশে আপনার গন্তব্যে কত নাম্বার বাস যায় জিজ্ঞেস করে উঠে পড়ুন বাসে। বাস ভাড়া ৬ থেকে ১০ রুপির মধ্যে। অথবা ক্যাব ভাড়া করতে পারেন সারাদিনের জন্য। পারহেড ম্যাক্সিমাম ২৫০-৩০০ রুপি পড়বে।
খাবারঃ
১)সকালের নাস্তা- ৪টা রুটি, ডিম, ডাল তড়কা= ১৮ রুপি
২) দুপুরে চিকেন/ভেজ থালি= ৫০-৭০ রুপি
৩) রাতের খাবার দুপুরের মতো খেয়ে ফেলবেন= ১০০ রুপির মধ্যে
Day One:
কোলকাতায় ঘুরে কাটিয়েছি।
Day Two:
সন্ধ্যা ৭:৪০ এ কালকা মেইলে করে কালকার উদ্দেশ্যে যাত্রা শুরু করলাম। ৩৩ঘন্টা থাকতে হবে ট্রেনে। তাই যত হালকা পোশাক পড়তে পারেন ততই ভালো। ট্রেনে উঠার আগে শুকনো খাবার কিনে নিতে হবে সকালের নাস্তার জন্য।
Day Three:
ট্রেনেই থাকতে হবে এই দিনটা।
ট্রেনে দুপুর/রাতে খাবার খরচঃ
১) ভেজ থালি- ১১০ রুপি
২) ডিম থালি- ১৩০ রুপি
৩) চিকেন থালি- ১৪০ রুপি
প্রতি থালিতে ১জনের ভাত, ১জনের রুটি থাকবে। স্টাফ কে বললে রুটি চেঞ্জ করে এক্সট্রা ভাত দিবে যা দুইজন আরামসে খেতে পারবে।
Day Four:
ট্রেন লেট না করলে কালকা পৌছে যাবেন ভোর ৪:৩০ এ। আগে থেকে শিবালিক ডিলাক্স টয় ট্রেনের টিকেট (৪২০ রুপি) কেটে রাখলে বসে পড়ুন টয় ট্রেনে অথবা স্টেশন থেকে জেনারেল কোটায় টিকেট (৫০রুপি) কাটতে পারেন। জেনারেল কোটায় সিট পাওয়ার কোন সম্ভাবনা নাই। ট্রেনে আগে উঠলে আগে সিট পাবেন ভিত্তিতে সিট ফিলাপ হয়।
যারা প্রথম যাবেন শিমলা তারা অবশ্যই টয় ট্রেন ট্রাই করবেন। কালকা থেকে শিমলা বাসে/ক্যাবেও যাওয়া যায়। তবে সেক্ষেত্রে অন্যরকম একটা অভিজ্ঞতা মিস করে যাবেন।
শিমলায় আমরা মল রোডের ঠিক নিচেই হোটেল বুক করেছিলাম, শিমলা ওল্ড বাস-স্টপের দিকে, “Hotel Basant”
হোটেল ভাড়া= ২৭৫রুপি পারহেড
শিমলায় যদি বিকেলে পৌছান তবে শাওয়ার নিয়ে সন্ধ্যায় বেরিয়ে পড়ুন রাতের শিমলা দেখতে। বেশ ভালো ঠান্ডায় রাতের শিমলা অদ্ভুত রকমের সুন্দর।
কালি বাড়ি থেকে চার্চ পর্যন্ত হেটে বেড়ান, শেষে মল রোডে এসে বাকি সময় কাটান। আমরা এগুলা ঘুরে একটা এজেন্সীর মাধ্যমে ক্যাব বুক করলাম। নরমালি এজেন্সীর পক্ষপাতি না হলেও কস্ট কম পড়ায় এইটা নিয়ে নিই। প্যাকেজে যা যা ছিলঃ
১) শিমলা লোকাল স্পট ট্রিপ (জাখু মন্দির, গ্রীন ভ্যালি, কুফরী)
২) শিমলা থেকে মানালি বাই টাটা অল্টো ফোর সিটার
৩) মানালি লোকাল স্পট ট্রিপ (হাদিম্বা টেম্পল, মানু টেম্পল, ক্লাব হাউস, ভাসিস্থ রাম মন্দির)
৪) মানালি টু রোথাং পাস বাই টাটা অলটো
৫) রোথাং পাসের পারমিশন চার্জ
সব কিছু মিলায়ে পারহেড পড়েছিল ২১৫০ রুপি। বারগেইন করলে আরো কমে পাওয়া যেত। এজেন্সি নিলে সব কিছু আগে থেকে ঠিকঠাক করে যাবেন, কোথায় কোথায় যাবেন, কতক্ষণ থাকবেন ইত্যাদি।
ম্যানুয়ালি এই ট্রিপটা দেয়া যায় এইভাবেঃ
১) শিমলা ট্রিপ= ১২০০ রুপি ক্যাব (৪জনের)
২) শিমলা টু মানালি বাস (New bus stop shimla থেকে কিনতে হবে) = ৭০০ রুপি
৩) মানালি লোকাল স্পট= ১০০০-১২০০ রুপি পার ক্যাব
৪) মানালি টু রোথাং= অফসিজনে ২০০০রুপি আর অনসিজনে ৬০০০ রুপি পর্যন্ত হয়।
৫) রোথাং এর পারমিশন চার্জ= ৬০০রুপি
ম্যানুয়ালি/ এজেন্সি যেভাবেই যান মানালি পৌছেই রোথাং এর পারমিশন টা করিয়ে নিতে বলবেন ড্রাইভার কে। এইক্ষেত্রে ১ম দিন পারমিশন না পেলে ২য় দিন পারমিশন পাওয়ার চান্স থাকে। যেদিন পারমিশন পাবেন সেদিন ভোর ৪:৩০ এ ড্রাইভারকে পিক করতে বলবেন। নাহলে গাড়ির সিরিয়াল অনেক বেশি হয়ে যাবে আর সময় নষ্ট হবে।
Day Five:
ভোরে ক্যাবে উঠে শিমলার লোকাল স্পটগুলায় যাই। লোকাল স্পটগুলার মধ্যে আছে জাখু মন্দির, গ্রীন ভ্যালি আর কুফরী। জাখুতে অনেক বানর, তাই চশমা আর ক্যামেরা সাবধান। কুফরীতে ঘোড়ায় চড়ে উঠতে হবে।
জনপ্রতি ঘোড়ার ভাড়া= ৫০০ রুপি (এটা সরকার কর্তৃক নির্ধারিত)
ঘোড়ার খরচ একটু বেশি মনে হলেও এত দূর এসে এটা না করলে ইনকমপ্লিট থেকে যায়। ঘোড়ায় চড়ার পর মনে হয়েছে ৫০০ রুপি জলে যায় নি।
কুফরীতে ঢুকতে পথে আরো ২০রুপি দিতে হয়।
শিমলা ঘুরে আমরা দুপুর ২টা ১৫তে ক্যাবে করে মানালির উদ্দেশ্যে যাত্রা করি। পথে দুপুরের খাবার সেরে নিই।
দুপুরের খাবার= ভাত+ডাল মাখনি (৩ জন খাওয়া যায়)= ১০০রুপি পারহেড
আমরা মানালি পৌছাই রাত সাড়ে দশটায়। হোটেল ছিল মল রোডের পাশেই “Hotel Shingar”
ভাড়া= ১৭৫ রুপি পারহেড
পরের দিন মানালির লোকাল স্পটগুলায় ঘুরতে যেতে পারেন। ম্যাক্সিমাম ৩-৪ঘন্টা লাগবে সবগুলা ঘুরতে। রাতের খাবার খেয়ে তাই ঘুম দিলাম।
রাতের খাবার = ১৪০ রুপি (মানালিতে দাম একটু বেশি)
Day Six:
আটটার দিকে বেরিয়ে নাস্তা সেরে নিলাম।
নাস্তাঃ আলু পরাটা,তাওয়া রুটি আর গোলাপ জামুন= ৪৭ রুপি
মানালির লোকাল স্পটগুলার উদ্দেশ্যে বেরিয়ে গেলাম। হাদিম্বা টেম্পল, ক্লাব হাউস, বনবিহার, ভাসিস্থ রাম মন্দির দেখে চলে এলাম মল রোডে।
মল রোডে Hotel Shingar এর পাশেই একটা বাঙ্গালি হোটেল আছে।
সেখানে দুপুরের খাবার খাই।
দুপুরের খাবার (চিকেন থালি) = ১৬০ রুপি
সন্ধ্যার দিকে মল রোডে গিয়ে বসলাম আর টুকটাক শপিং করলাম। পিউর লেদার বলে অনেক জ্যাকেট বিক্রি হয় সেখানে। বাংলাদেশের তুলনায় জ্যাকেটগুলা ভালো তবে একদম ভালোগুলা ৮০০-৯০০ রুপির বেশি দেয়া ঠিক হবে না।
রাতে মল রোড থেকে একটু সামনে এগিয়ে রোডের পাশ থেকে চিকেন ভুনা আর ব্রেড কিনে নিলাম।
চিকেন ভুনা= ৮০রুপি (দুইজন খাওয়া যাবে)
ব্রেড= ২০ রুপি (বড়টা)
Day Seven:
অক্টোবরের প্রথম দিকে অফসিজন থাকে তাই রোথাং এর উদ্দেশ্যে একটু দেরী করে ভোর সাড়ে ছয়টায় রওনা দিলাম। গাড়ি সেটাই যেটা আমাদের শিমলা থেকে মানালি নিয়ে আসছিল।
মানালি থেকে ৫০ কিমি দুরের রোথাং যাওয়ার রাস্তা দেখে অবাক হয়ে গেলাম। এত বেশি এল্টিটিউডের রাস্তা কিভাবে এত সুন্দর থাকে? আঁকাবাকা পাহাড়ি রাস্তা বেয়ে উঠে গেলা ১৩ হাজার ফিট উপরে।
রোথাং পৌছাতে আমাদের সকাল সাড়ে নয়টা-দশটা বাজলো। এখন বরফ নাই, কিন্তু হাড়কাপাঁনো ঠান্ডা আছে। নভেম্বরের শেষের দিক থেকে বরফ পড়া শুরু হয়। এখন দূরের পাহাড়গুলায় বরফ দেখা যায়।
রোথাং এ অনসিজনে (নভেম্বরের শেষ থেকে মার্চ পর্যন্ত) ঘোড়ায় চড়ে উপরে উঠা, প্যারাগ্লাইডিং হয়। প্যারাগ্লাইডিং করতে হলে ৩৫০০-৫০০০ রুপি গুনতে হবে।
মানালি থেকে দিল্লির সেদিন বিকেলের ৫:৩০ এর বাসের টিকেট কাটি হোটেলের মাধ্যমে।
মানালি টু দিল্লি এসি ভলভো বাস= ৯৫০রুপি
ইন্ডিয়ান বাসের অবস্থা আমাদের দেশের চেয়ে খুবই বাজে। ফাকা রাস্তায়ও তারা ৪০ এ চালায়। বাঙ্গালি হোটেলে খেয়ে মানালির হোটেল থেকে চেকআউট করে ৫:৩০ এ “ভলভো বাস স্ট্যান্ড” থেকে বাসে উঠে পড়ি। রাতের জন্য ১কেজি আপেল ৫০ রুপি দিয়ে কিনে নিই। এখানে আপেলের দাম তুলনামূলক কম আর মানও ভালো।
Day Eight:
ভোরে/সকাল ৭টার মধ্যে দিল্লি পৌছানোর কথা ছিল। পৌছালাম সকাল সাড়ে দশটায়।
দশটায় নিউ দিল্লি রেলস্টেশন থেকে আগ্রা যাওয়ার “Jheelum Express” ছিল। তবুও ট্রেন থাকেই আগ্রার এইভেবে নিউ দিল্লি রেলস্টেশন এ যাওয়ার জন্য উবার নিলাম। বলে রাখা ভালো ইন্ডিয়ায় মুভ করার জন্য ফোনে “Uber” ইন্সটল করা ফরজ। ভাড়া নরমাল থেকেও কম পড়ে।
উবারের ড্রাইভারকে জিজ্ঞেস করলাম উনি আগ্রায় যায় নাকি?
বললেন যায়..৩২০০ রুপিতে যাওয়া-আসা।
নরমালি উবারে এই ভাড়া দেখায় ৬০০০রুপি। আমরাও আর দেরী না করে নিয়ে নিলাম। তবে ভাড়া প্রকৃতপক্ষে ৬০০০ রুপিই। উনি তাড়াহুড়ায় কম বলে ফেলসেন। 😀
আগ্রায় পৌছাতে বিকেল ৩টা বাজলো। তাজমহলের টিকেট কাউন্টার পার্কিং এর পাশেই।
তাজের টিকেট কাটতে ডকুমেট শো করতে হয়, ইন্ডিয়ানদের আধার কার্ড আর ফরেনারদের পাসপোর্ট। ইন্ডিয়ানদের জন্য যে টিকেট মাত্র “৪০” রুপি সেই টিকেটই ফরেনারদের জন্য “৫৩০” রুপি।
টিকেটের সাথে এক বোতল পানি, জুতার কভার দিবে সৌজন্য হিসেবে :3
তাজমহল ঢুকে গেলাম ফরেনার কোটায় সবার আগে আলাদা লাইনে। টাকা কথা বললে যা হয় আর কি। সূর্যোদয় থেকে সূর্যাস্ত তাজমহল খোলা থাকে। তাই সূর্যাস্ত টা বসে বসে দেখলাম তাজ থেকে।
আমাদের হাওড়া যাওয়ার কালকা মেইল Old Delhi Railway Station থেকে ছিল পরের দিন সকাল ৬:৫০ এ। আগ্রা থেকে আসার সময় গাড়ি নষ্ট হয়ে যায়, রাতের খাবার ঢাবা তে সারি।
রাতের খাবারঃ রুটি, ডিম ভুর্জি আর কফি= ৭০ রুপি
Day Nine:
রেলস্টেশন পৌছাই রাত চারটায়। সকাল ৬:৫০ এ কালকা মেইল আসলো, উঠে গেলাম, টিকেট সেই ফেয়ারলি থেকে করা।
দিল্লি থেকে হাওড়া যেতে সময় লাগে পাক্কা ২৫ঘন্টা। পরের দিন সকাল ৮টায় হাওড়া পৌছায় এই ট্রেন। ট্রেনে খাওয়া-দাওয়া আর ঘুম দেয়া ছাড়া বিশেষ কিছুই করার নাই, এটলিস্ট এত জার্নির পর আর কিছু করতে ইচ্ছাও করবে না।
সকালের নাস্তাঃ পুরি+সবজী(আলু)= ২০রুপি
দুপুরের খাবারঃ ডিম থালি= ১৩০ রুপি (২জনের)
রাতের খাবার= পুরি সবজী+ ডিম বিরিয়ানি(হাফ) = ৫৫ রুপি (১জনের)
Day Ten:
হাওড়া পৌছাই সকাল নয়টায়। হাওড়া থেকে শিয়ালদাহ চলে যাই বাসে। ভাড়া ৯রুপি। শিয়ালদাহ থেকে বনগাঁ যাওয়ার “বনগাঁ লোকালের” টিকেট কাটি ২০ রুপি দিয়ে। ১০:২৮ এ একটা ট্রেন আছে, ১১:২৮ এ একটা আছে। ১১:২৮ এর ট্রেনে বনগাঁ পৌছাই দুপুর ১:৩০ এ। সেখান থেকে সিএনজি নিয়ে সোজা বর্ডার। বর্ডার পার হয়ে গেলাম আধঘন্টার ব্যাবধানে।
বিঃদ্রঃ ইন্ডিয়ান কোন হোটেলেই এক রুমে ৩জনের বেশি এলাউ করে না, ৪জন এক রুমে থাকতে হলে এক্সট্রা বেডের টাকা দিতে হয়, ২০০-৩০০ রুপি পড়ে প্রতিদিনের হিসাবে।
হ্যাপি ট্রাভেলিং! তবে আগে দেশ ঘুরুন, পরে বিদেশ।
Post Copied From:রাহুল বণিক>Travelers of Bangladesh (ToB)