নেপাল। হিমালয় কন্যা নেপাল। সার্কভুক্ত এই দেশটি হতে পারে স্বল্প বাজেটের ভ্রমণ পিপাসুদের সেরা গন্তব্য। যেখানে প্রকৃতি সৌন্দর্য ঢেলে দিয়েছে অকৃপণ হাতে। তার সৌন্দর্য পথে, ঘাটে, পাহাড়ে, নদী নালার সর্বত্রে। যেখানে সাগরমাতা মাথা উঁচিয়ে দাঁড়িয়ে আছে দাম্ভিকতা নিয়ে। যেখানে শুভ্রতা নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে ধবল গিরি। যেখানে বহুমাত্রিক সৌন্দর্য নিয়ে হাতছানি দিয়ে ডাকে কাঞ্চনজঙ্ঘা। যেখানে লেকের স্বচ্ছ জলে মায়াবী প্রতিচ্ছবি একে চলেছে মাচাপুচড়ে ( ইংরেজি তে Fish Tail)।যেখানে সাধ আর সাধ্যের মধ্যে মিতালী ঘটানো সম্ভব। দারীদ্রতার সাথে পরিস্কার, পরিপাটি বা নান্দনিকতার যে সম্পর্ক নেই, তার মোক্ষম উদাহরণ হতে পারে নেপাল। আমরা যারা মাথাপিছুআয়ের খবর কমবেশি রাখি, খবর রাখি বার্ষিক প্রবৃদ্ধির। তারা নিশ্চিই জানেন নেপালের এই দুটোই আমাদের দেশের থেকে কম। তবু তাদের রয়েছে পোখারার মত নান্দনিক শহর। সেখানে আবার কিনা সাদা চামড়ার পশ্চিমাদের পদভারে বছরজুড়ে মুখরিত! বিশ্বের সবচে সস্তা হোটেল পাবেন এই পোখারাতেই। কিন্তু সুযোগ সুবিধা বা নান্দনিকতা কিন্তু মোটেই কম না। একটা উদাহরণ দেই, আমাদের দেশে সর্বনিম্ন কত দামে আপনি হোটেল পেতে পারেন? আর তাতে কি কি সুবিধা থাকতে পারে বলে মনে করেন? আমার মনে হয় অসুবিধাগুলোর তালিকাই বড় হবে। পোখারার যে হোটেলে ছিলাম, তার ভাড়া ছিলো ৬৪০ টাকা। তাতে ১ টা মাস্টার ডাবল বেড, ১ টা সিংগেল বেড ছিলো। লাগোয়া বেলকনী থেকে ফেওয়া লেকের অনুপম প্রাকৃতিক সৌন্দর্য উপভোগ করা যায়। চমৎকার সুপরিসর স্নানঘর, কেবল টিভি, পানি, পরিস্কার তোয়ালে ২ টি, সাবান, শ্যাম্পু, এরোসল সবই ছিলো। আর সেবাদাতারা ছিলেন হাতের নাগাড়েই হাসিমুখে। নেপালীরা খুবই আন্তরিক। কিছু জিজ্ঞেস করলে হাসিমুখে উত্তর দেয়।আর ঠিকানা জানতে চাইলে দারুণভাবে সাহায্য করে। এমনকি আমাদের হোটেল খুঁজে পেতে নিজের মোবাইল থেকে ফোনে কথাও বলেছেন কর্তৃপক্ষের সাথে।
নেপালের মোট আয়তনের প্রায় ৭০% পাথুরে পাহাড়। সেখানে খাদ্যশস্য জন্মায় খুব কমই। তাই তাদের নিত্যপণ্যের জন্য নির্ভর করতে হয় ভারতের উপর। তার প্রভাব পড়েছে খাদ্যের উপর। তাই খাবারের দাম একটু চড়া। যাতায়াতের জন্য সুলভে ট্যাক্সি সার্ভিস পাওয়া যায় অনায়াসেই। আর দূরপাল্লার জন্য আছে শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত আরামদায়ক বাস সার্ভিস। প্রায় সব বাসেই আছে ফ্রি ওয়াইফাই সুবিধা। বাস ভাড়াও বেশী নয়।
উল্লেখযোগ্য স্পট: পোখারা সিটি
সারাংকোট, মাহেন্দ্র কেভ, ফেওয়া লেক, শান্তি স্তুপা বৌদ্ধ মন্দির, ব্যাট কেভ, দেবী’ স ফলস, রিমোট ভিলেজ, গান্ধুক ভিলেজ ইত্যাদি। এছাড়া এখানে প্যারাগ্লাইডিং, বাঙীজাম্প, রাফটিং খুবই জনপ্রিয়।
রাজধানী শহর কাঠমান্ডুঃ
দুর্বার স্কয়ার, সম্ভুনাথ মন্দির, রাজ প্রাসাদ ( অনুমতি প্রয়োজন) আর কিছু বিশ্বঐতিহ্য আছে। যেগুলো এখন ভূমিকম্পে ধ্বংসপ্রাপ্ত প্রায়। পাশেই নাগরকোট। সেখানে সূর্যোদয় দেখতে চান অনেকেই।
খরচপাতিঃ
US BANGLA AIRLINES রিটার্ন টিকেট পাবেন 15 k – 17k মধ্যে। যদি কোন স্টার হোটেলে না থাকেন তবে ৫০০-৭০০ টাকায় ভালো মানের হোটেল পাবেন। ভাত খেতে চাইলে নেপালী থালি নিবেন। প্রতি থালি ১৫০-১৭৫ নেপালী রুপী। সব মিলে খরচটা হতে পারে ২২- ২৫ হাজার। এই বাজেটে পোখারায় ৩ দিন, কাঠমান্ডুতে ২ দিন ঘুরতে পারবেন অনায়াসে।
খরচের আদ্যোপান্তঃ আমরা দুই জন ছিলাম।
১। রিটার্ন এয়ার টিকেট US BANLS = ১৪৫০০/
২।এয়ারপোর্ট থেকে থামেল হোটেল ( ৪০০/) জনপ্রতি = ২০০/
৩। হোটেল ভাড়া ২ রাত কাঠমান্ডুতে ( ১৪০০/) পার হেড= ৭০০/
৪। পোখারা রিটার্ন টিকেট = ১১০০/
৫। ৩ রাত হোটেল ভাড়া ( ১৯২০/) পার হেড= ৯৬০/
৬। ট্যাক্সি ভাড়া স্পট ভিজিট সারা দিন ( ২২০০/) পার হেড= ১১০০/
৭। স্পট টিকেট ফি সব মিলে = ৩০০/
৮। কাঠমান্ডু সিটি ভিজিট করে ফেরার সময় ট্যাক্সি ভাড়া (৩৫০/) পার হেড = ১৭৫/
উল্লেখ্য আমরা হেটেই দুর্বার স্কয়ার, সম্ভুনাথ মন্দির ভিজিট করেছি। কারণ দূরত্ব খুব বেশি নয়। পোখারা বাসস্টপ থেকে হোটেলেও গেছি হেটে গুগল ম্যাপের সাহায্য নিয়ে। দূরত্ব ১.৫- ২কিমি মত।
৯। লিচু, আম, চিপস, জুস, ইন্ডিয়ান চকলেট =৩৮০/
১০। নাস্তা, লাঞ্চ, ডিনার ( আমরা নেপালি থালি, একটা মুসলিম হোটেলে বিরিয়ানি, মিট কারী সবই খেয়েছি)= ২১৮৫/
আশাকরি এবার আপনাদের বাজেট তৈরি করতে সুবিধা হবে।
আর বাংলাদেশীদের তারা খুব পছন্দ করে। তারা বাংলাদেশের ক্রিকেটেরও দারুণ ভক্ত।
এবার একটা মজার দৃশ্যের কথা আপনাদের সাথে শেয়ার করি। নেপালে সার্কভুক্ত দেশের হওয়ায় বাংলাদেশীরা বিশেষ মর্যাদা পায়। সেখানে ইমিগ্রেশনে মাত্র ১ কপি পাসপোর্ট সাইজের ছবি আর পাসপোর্ট জমা দিলেই ১ মিনিটের মধ্যে সীল মেরে হাসিমুখে নেপালে স্বাগত জানাবে। পাশেই দেখলাম সাদা চামড়ার পশ্চিমাদের দীর্ঘ লাইনে দাঁড়িয়ে থাকতে। তাদের রেজিস্ট্রেশন করতে হয় ফি দিয়ে। যেখানে কালো বাংগালীদের হয়রানির কথা প্রায় শোনা যায় পশ্চিমা দেশে। সেখানে এমন দৃশ্য দেখাটা চোখের জন্য অন্তত আমার কাছে আরামের!
Post Copied From:Abdul Bari Sarkar>Travelers of Bangladesh (ToB)