রকেট এক্সপ্রেস : দর্শনা টু চুয়াডাংগা

রকেট এক্সপ্রেস নাম শুনলেই মনে হয় রকেটের গতিতে ট্রেন চলবে। বাস্তব তার উলটা। দর্শনার কেরু এন্ড কোং দেখে যখন আশে পাশে কি আছে খুজতেছি তখন এক হোটেলয়ালা মামা বয়ান করেন দর্শনা হল্ট নিয়ে। যে কোন জেলা উপজেলা শহরে গেলে আমার সে এলাকার রেল স্টেশন দেখতে খুব ভাল লাগে। এইটা বলতে গেলে পুরান অভ্যাস। কোন কিছু না ভেবেই চলে আসলাম দর্শনা হল্ট। খুলনা থেকে ঢাকাসহ উত্তরবঙ্গ থেকে দক্ষিণ বঙ্গে চলাচলকারী ট্রেনগুলোর প্রবেশমুখ এই দর্শনা হল্ট ষ্টেশন। জরাজীর্ণ এই স্টেশনে ঢুকে দেখলাম ব্যাপক মানুষের চাপ। স্বভাব বশত আগে চায়ের দোকান খুজে বের করলাম। গ্রাম্য এই রকম রেল স্টেশনে বসে এক কাপ কড়া লিকারের চা এক অন্য রকম আমেজ এনে দেয়। নিজেকে তখন দার্শনিক বা উপন্যাসের পাতা থেকে উঠে আসা কোন চরিত্র মনে হয়। আমার ভ্রমণ সংগী ইমরান ভাইয়ের আবার স্ট্যাম্প এর বাতিক। আমাদের মধ্যে কথা হচ্ছিলো এই স্টেশন থেকে চুয়াডাঙ্গার যে ট্রেনই পাব উঠে যাব। কারন আলো থাকতে থাকতে ডাকঘরে ঢুকতে হবে। না হলে বিরাট বড় কবিরা গুনাহ হয়ে যাবে। ট্রেনের সময়সূচি চেক করতে গিয়ে দেখলাম খুলনা থেকে রকেট এক্সপ্রেস মেইল ট্রেন ছেড়েছে। টাইম টেবিল ঠিক থাকলে ১.৪৫ এর মধ্যে দর্শনা হল্ট পৌছে যাবে। এর শেষ গন্তব্য পার্বতীপুর তবে মাঝে অনেক ঘাটের পানি খেয়ে যাবে। আমাদের চুয়াডাঙ্গা নামতে পারলেই হল। টিকেট মাস্টারের কাছ থেকে ১৫ টাকা দিয়ে টিকেট কেটে নিলাম। এখন অপেক্ষার পালা রকেট এক্সপ্রেস কখন আসবে। বাংলাদেশ রেলওয়ে আমাকে কখনও হতাশ করে না। যথারীতি ১০ মিনিট লেট করে ট্রেন আসলো। ট্রেন থামার সাথে সাথেই ক্ষুর্ধাত শিয়াল যেমন খাবারের উপর ঝাপিয়ে পড়ে, যাত্রীরাও সে ভাবে ট্রেনের উপর ঝাপিয়ে পড়লো। ব্যাপক সংগ্রামের পর ট্রেনের ভিতর ঢুকে যখন সিট পেলাম তখন চোখে মুখে এক বিশ্বজয়ী হাসি। ট্রেনে উঠে নানা রকম লোকের সন্ধান পেলাম। সবই গ্রামের আলা ভোলা মানুষ। কেউ চালের বস্তা কেউবা মুরগী কেউবা বাজার করে ট্রেনে উঠেছে। বলতে গেলে ট্রেনটাই আমার কাছে চলন্ত বাজার মনে হল। কিছুক্ষন পরপর ফেরিয়ালা নানা রকমের পসরা সাজিয়ে দোকান নিয়ে এই বগি থেকে ওই বগি ছুটছে। ট্রেন চলা শুরু করলো কিন্তু আমার মনটা খারাপ। জানলার সাইডে সিট পেলাম না। ট্রেন চলছে হেলেদুলে। সারাদিন ক্লান্তির পর মনে হচ্ছে আমাকে যেন কেউ মায়ের মমতায় ঘুম পাড়িয়ে দিচ্ছে। আহ কি ঝিমুনির ফিলিংস। জানলা দিয়ে বাহিরে তাকলাম। মনে হল পুরা চুয়াডাঙ্গাই সবুজের মত সুন্দর। সবুজের প্রকৃতির আলো ছায়ার খেলা দেখতে হলে আসতে হবে চুয়াডাঙ্গা। সকালে করিমন নামে অদ্ভুতুড়ে যানের কল্যানে কার্পাসডাংগা টু দর্শনা আসতে রোড সাইড ভিউ দেখে আমার মন ভরে গেছে। মনে হয় কোন শিল্পী তুলির সুনিপুন আচড়ে ছবি একে রেখেছে। আল্লাহ’র কি কুদরত। কল্পনার জগৎ থেকে ফিরে আসলাম বাস্তবে আমাদের ট্রেন ছুটে চলছে গন্তব্যের উদ্দ্যেশে। তখনও আমি জানি না আমি ৫০ বছর বয়সী এক বৃদ্ধ ট্রেনে জার্নি করছি। এক চাচা মিয়ার মুখে যখন শুনলান উনি এই ট্রেনে পাকিস্তান আমলে চড়ছেন তখন একটু খটকা লাগলো। ততক্ষনে এসে পড়েছি আমাদের কাংক্ষিত গন্তব্যে। চুয়াডাঙ্গা নেমে রকেট এক্সপ্রেসের সব কথা গেলাম ভুলে। ঢাকা এসে গুগল মামার কল্যানে জানতে পারলাম এইটা বাংলাদেশ রেলওয়ের ওয়ান অফ দ্যা ওল্ডেস্ট ট্রেন। যার প্রোডাকশন ইয়ার ১৯৬৫। মাঝে মাঝে শর্ট ডেস্টিনেশন গুলা মনের ভিতর গেথে যায়। দর্শনা টু চুয়াডাঙ্গা আমাকে পরিচয় করিয়ে দিয়েছে রকেট এক্সপ্রেসের সাথে। সময় সুযোগ হলে রকেটে চড়ে হয়তো কোন একদিন খুলনা টু পার্বতিপুর চলে যাব। ততদিন মনের ভিতর গেথে থাকুক রকেট এক্সপ্রেস।

Post Copied From:Ashik Sarwar>Travelers of Bangladesh (ToB)