খৈয়াছড়া (মহামায়া লেক)

গুরুজনরা বলেন, মানুষ চেনা যায় তিন উপায়ে। এক. দীর্ঘ ভ্রমণে। দুই. একসাথে খাওয়াদাওয়া করলে। তিন. রাত্রিযাপন করলে।

এই তিনটিই হয়ে যায় যখন কারো সাথে ট্যুরে যাওয়া যায়।
আমরা আটজন বন্ধু মিলে ঘুরে এলাম খৈয়াছড়া আর মহামায়া লেক।

মূলত একদিনেই এই জায়গাগুলো ঘুরে আসা সম্ভব। রাতে রওনা দিয়ে সারাদিন ঘুরে আবার রাতেই ব্যাক।
শীতকালে ঝর্ণায় অল্প পানি থাকে এবং বৃষ্টি কম হয় বিধায় পাহাড়ে চড়া সহজ হয়।
যখন পাহাড়ের একদম উঁচুতে উঠে বিস্তীর্ণ বনভূমি আর ক্ষুদ্র জনপদ দেখবেন;
চোখ, প্রাণ,শরীর সমস্তকিছু জুড়িয়ে যায়।
পাহাড়ে এতো কষ্ট করে ওঠে আপনি যখন চারপাশ দেখবেন, আপনার সমস্ত কষ্ট, ক্লান্ত মিলিয়ে যাবে। এতো ভালো লাগা কাজ করে, আহা!
আর ওখানকার খাবার তো জোশ। খাবার মাটির চুলায় রান্না করা বিধায় ফ্লেবারই অন্যরকম। পাহাড় চড়ার আগে খেয়ে নেয়াই ভাল।

খৈয়াছড়া থেকে দশটাকা দূরত্বে নাপিত্তাছড়া। ওখানে যাওয়া হয়নি। সামনে কোনো একদিন যাব ইনশাল্লাহ।

আমরা খৈয়াছড়া থেকে মহামায়া ইকোপার্ক গেলাম।।
মহামায়া মূলত পাহাড় আর নদীর সংমিশ্রণ। দশটাকা টিকেট কেটে ঢুকতে হয়।
পাহাড়ের মধ্যদিয়ে ইটপাথর আর সিমেন্টের ঢালাই করা রাস্তা। মনে হয় গাড়ি নিয়ে পাহাড়ে ওঠা যাবে। এখানেও বেশ সুন্দর পরিবেশ।
দিঘির লেকে ঘুরার জন্য ইঞ্চিন নৌকা আছে। যা দিয়ে একটু দূরের একটা ঝর্না ঘুরে আসা যাবে।
আমরা এক ধরনের নৌকায় ওঠেছি। কী যেন নাম ভুলে গেছি।মাত্র দুজন বসা যায়। লাইফ জ্যাকেট আর বইঠা দিয়ে দেয়।
মাঝখানে যেয়ে মাথার একটু উপর দিয়ে প্রায় এক-দেড়শো পানকৌড়ি ওড়ে গেলো।
তাকিয়ে থেকে থেকে অদ্ভুত অনুভব হলো। এতো অসাধারণ! মনে হলো বুকের ভেতর থেকে আরেকজন ‘আমি’ বের হয়ে তাদের সাথে উড়ে গেলাম।

যাতায়াত :
বাস- ঢাকা – মহিপাল। (২৭০৳)
মহিপাল থেকে খৈয়াছড়া (৪০৳)

পুনশ্চ : ছবিটা মহিপাল থেকে খৈয়াছড়া নেমে তুলেছি। এখান থেকে সিএনজি করে ঝর্ণার কাছে যেতে হয়।

Post Copied From:Shahal Hussain>Travelers of Bangladesh (ToB)

কমলদাহ ট্রেইল+ গুলিয়াখালি ট্যুর

I guess বাংলাদেশের most underrated trail গুলোর মধ্যে একটি। কমলদাহ ট্রেইলে যাওয়ার আগে ফেসবুক, ব্লগ অনেক ঘাটাঘাটি করে হাতে গোনা কিছু ঝর্না-ক্যাসকেড এর নাম ই পেলাম। স্পেশালি রূপসী এবং ছাগলকান্ধা নিয়েই ম্যাক্সিমাম রিভিউ অথচ এই ট্রেইলের প্রতি বাকেবাকে যে এতোএতো রহস্য লুকিয়ে আছে তা কয়জন ই জানে। ☺☺ট্রাস্ট মি, আপনার একটি বিস্ময় কাটতে না কাটতেই নতুন কোন বিস্ময় আপনার সামনে চলে আসবে।এই ট্রেইলে আপনি পাবেন ১৭ টির মতো ঝর্না+ ক্যাসকেড, সো বুঝতেই পারছেন কি আছে এর বাকে বাকে।

আমার কাছে এই ২ ট্রেইলের চেয়ে অনেক বেশি রকম ভালো+ এডভেঞ্চারিয়াস লেগেছে কমলদাহ।
যাই হোক ডিরেক্ট ট্যুর রিভিউ তে যাওয়া যাক :
আমি মোটামুটিভাবে সবকিছু in details এ বলার চেষ্টা করবো, তারপরেও কিছু জানার থাকলে feel free to ask.
এয়ারপোর্ট টু ফেনী (মেইল ট্রেন, ৯০ টাকা)>ফেনী স্টেশন টু মহিপাল (১৫)>ব্রেকফাস্ট (৪৫ টাকা)> মহিপাল টু বড়দারোগাহাট (৪০)>কমলদাহ ট্রেইল ( গাইড খরচ ৭০ টাকা)>দুপুরের খাবার (১০০)>বড়দারোগাহাট টু গুলিয়াখালি (৬০)> গুলিয়াখালি টু সীতাকুণ্ড (৩০টাকা)> সীতাকুন্ড টু মহিপাল (৬০ টাকা) > রাতের খাবার(৮০)>মহিপাল টু ঢাকা (৩০০)।
উপরের সবগুলো হিসেব Per person এর জন্য দেয়া, আমাদের খরচ হয়েছে মোট ৮৯০ টাকা প্রতিজন। আমরা সংখ্যায় ৯ জন ছিলাম। চেষ্টা করবেন ১০ জনের টিম যাওয়ার এতে খরচ বাচবে ☺☺আমাদের ১ দিনের শর্ট ট্যুর ছিল।
কমলদাহ ট্রেইল নিয়ে কিছু কথা : যারা এক্সট্রিম ট্যুর পছন্দ করেন তাদের জন্য একদম পারফেক্ট প্লেস এটা। রূপসী+ছাগলকান্ধা+দুধতলী+ সাতমারাধর+আটমারাধর+ বৈদ্য+ পাথরভাঙা এই ৭ টি ঝর্না এই রূটের পপুলার ঝর্না। ছাড়াও এই রূটে আরো ৫ টি ঝর্না আছে যার মধ্যে ৩ টির নাম ই এখনো দেয়া হয়নি ( খুব বেশি রকমের টাফ রূট ২ টিতে যাওয়ার, জাস্ট ২ আঙুলের উপর ভর দিয়ে সারা বডির ওয়েট রাখতে হবে কিছু জাগায়) একদম ডু ওর ডাই সিচুয়েশন যাকে বলে। মোটেও বাড়িয়ে বলছি না, ভিডিও করার ইচ্ছা ছিল বাট কোনভাবেই ক্যামেরা বের করতে পারি নি ওই সিচুয়েশন এ। যাদের ট্রেক করার এক্সপেরিয়েন্স নেই তাদের না যাওয়াই ভালো এরকম প্লেসে, ঝর্নাটি এতোটাই দূর্গম প্লেসে যে স্থানীয় লোকরাও নাকি এখানে আসে না ( আমাদের গাইড বলছিল এটার নাম নেই, আমারা যেনো কোন নাম দিয়ে যাই)।
বেশ লম্বা ট্রেইল, মোটামুটি হাতে ৮ ঘন্টা সময় নিয়ে যাবেন, এর বেশি হলে ভালো। প্রথমবার গেলে গাইড নিবেন নাহলে সবগুলো দেখতে পারবেন না, স্পেশালি ৩ টা ঝর্না বেশ দূর্গম পথে( আমি নিজেও ভুলে গেছি কিভাবে গাইড আমাদের নিয়ে গিয়েছে) 😂😂
কিভাবে যাবেন??
– বাংলাদেশের যেকোন জায়গা থেকে বড়দারোগারহাট নামবেন। বড়দারোগা থেকে উলটা( ঢাকার দিকে) তাকালেই দেখবেন ইটের ভাটা আছে ওই পথ ধরে আগাতে থাকবেন।
– পথে ২ টা খাবার হোটেল পাবনে, পুকুরের পাশে একটি হোটেল দেখবেন (ওইখানে খাবার অর্ডার দিয়ে যাবেন, আর কিন্তু সামনে হোটেল নেই) ওদের কাছেই ব্যাগ রেখে যাবেন (রান্না বেশ মজা, ট্রেকে গিয়ে এরকম রান্না খুব কম ই পেয়েছি) মালিকের নাম জয়নাল, বেশ ভালো মানুষ। সব ঘুড়ার ইচ্ছা থাকলে এখান থেকেই গাইড নেয়া ভালো, উনার ভাই মফিজ ( অস্থির লোক,গাইড্রা নরমালি একটু ফাকিবাজ হয় বাট উনি উল্টো আমাদের জোর করে নিয়ে যাচ্ছিল, আমরা তো জানতাম ও না এতোগুলো ঝর্না আছে এখানে।01821573302 ( জয়নাল চাচার নাম্বার, উনাকে বললেই উনি সব এরেঞ্জ করে দিবেন)। গাইড খরচ ৬০০-৭০০ ( যে সার্ভিস দিছে টাকা উশুল হয়ে গেছে)
– সামনে এগুলো একটা ঝিরিপথ পাবেন, রাস্তাটা ২ ভাগে বিভক্ত।একদিকে রুপসী আরেকদিকে ২ টা ঝর্না( নাম বলতে পারে নাই) বামদিকে আগে যাবেন ( ওই ২ টা ঘুড়ার জন্য) তারপর ব্যাক করে আবার ঝিরিপথে এসে ডানদিকে
– ডানদিকে রুপসী ঝর্না পাবেন। একটু হাটলেই।
– কমলদহের উপরে উঠেই ছোট একটি ক্যাসকেড* (আল্লাহর খুম) পার হয়ে ঝিরি পথে গেলে একটু পর ঝিরিপথ দুভাগ পাবেন। হাতের বামে একটি এবং ডানে একটি
-হাতের বামের ঝিরি পথে যাবেন প্রথমে।
-এই ঝিরিপথে গেলে কিছুটা দুর গেলে আবারো দেখবেন হাতের ডানদিকে আরেকটি ঝিরি পথ পাবেন (এইটায় এখোনি যাবেন না)
-সোজা ঝিরিপথে একটু এগুলে ছাগলকান্দা ঝর্ণা পাবেন (এটার উপরে উঠতে চাইলে পাশের পাহাড় দিয়ে উঠতে পারবেন, রাস্তাটা খুঁজে নিয়েন)
-ছাগলকান্দা ঝর্ণা দেখে ফিরার সময় ৪নং পয়েন্টে যে হাতের ডানের ঝিরি কথা বলছিলাম ঐটা দিয়ে যাবেন এখন
-একটু আগালে একটা ক্যাসকেড পাবেন, ঐ ক্যাসকেডের পাশ দিয়ে খুব রিস্কি পথ দিয়ে ক্যাসকেডের উপরে যাবেন।
– তারপর সামনে এগুলো আবারো দুটি ঝিরিপথ পাবেন।
-দু ঝিরিপথের শেষ মাথায় দুটি ঝর্ণার দেখা পাবেন।
স্পেশালি ডানেরটা দিয়ে গেলে বড় ঝর্না পাবেন, এটার উপরে উঠলে আরো ঝিরিপথ আছে, একটু আগিয়ে কিছু ক্যাস্কেড পাবেন, তারপর পাহাড় বেয়ে আবার উপরে উঠলে পাবেন আরো একটি ঝর্না
-ঐখান থেকে ব্যাক করে ৪ নং পয়েন্টে আসবেন, তারপর ২নং পয়েন্টে ফিরে আসবেন।
-এবার ২ নং পয়েন্টের ডানের ঝিরিতে যাবেন, মাঝখানে একটি ঝর্ণা পাবেন। এই ঝর্নার পাশের হাল্কা পাহাড়ি রাস্তা দিয়ে উপরে উঠে পড়ুন,
-এরপর আবারো ঝিরিপথ পাবেন, একটু এগুলো আরেকটি ক্যাসকেড পাবেন। এই ক্যাসকেড ডিঙিয়ে উঠে পড়ুন।
– তারপর ঝিরিপথে একটু এগুলে সব শেষে ছোট একটি ঝর্না পাবেন, তখন মনে হবে আর সামনে যাওয়া যাবে না।
-এখানে থেমে ছোট এই ঝর্ণাটির পাথর বেয়ে উপরে উঠে যাবেন, উঠার পরই নিজেকে অন্ধকার এক সুরঙ্গে আবিষ্কার করবেন। সামনে এগুবেন… ২মিনিট পরই পাথরভাঙ্গা ঝর্ণার দেখা পাবেন ।
– ঝর্না দেখে আবার ব্যাক করবেন একদম যেখান থেকে শুরু করেছেন। একটু আগালেই দেখবে হাতের বামে একটি, ডানে একটি রাস্তা আছে ( ডানের টি দিয়ে গেলে রুপ্সী দিয়ে নামতে পারবেন)। তবে ওইটা দিয়ে যাবেন না, বাম দিয়ে যাবেন (শর্টকাট) একটু আগালেই দেখবেন নিচে নামার পাহাড়ি রাস্তা, নামলেই সমতল ভূমি পেয়ে যাবেন। এরপর হাটতে থাকবেন একসময় দেখবেন ঠিক যেখান থেকে শুরু করেছেন সেখানেই চলে আসবেন।
গুলিয়াখালি বীচ :
ওইটাকে আসলে সীবিচ বলা উচিত না ( আমি এটলিস্ট সীবিচ বলতে যা বুঝি)। যারা নিরিবিলি পছন্দ করেন তাদের জোস লাগবে, খুব সাজানো প্লেস একটা। মনে হচ্ছিল প্রকৃতিক ভাবে না, মানুষ নিজের মতো করে গুছিয়ে বানিয়েছে। তবে সাগরের পানি বেশ নোংরা, পানিতে নেমে ধাপাধাপি করতে চাইলে না যাওয়াই বেটার।
কিভাবে যাবেন?
বড়দারোগাহাট থেকে রিসার্ভ লেগুনায় গুলিয়াখালি বাধ, ওইখান থেকে পায়ে হেটেও যেতে পারেন/ বোটে করেও যেতে পারেন ( বোটে ভাড়া ৫০)। হেটে( খালিপায়ে) যাবেন, ঢাকার পিচ ঢালা রাস্তায় বড় হওয়া মানুষদের এরকম সবুজ ঘাষের উপরে হাটতে ভালো লাগাই উচিত।
কিছু টিপস:
1. মেইল ট্রেনে যাওয়ার ইচ্ছা থাকলে অবশ্যই ৯:৩০ এর মধ্যে কমলাপুর চলে যাবেন এবং প্লাটফর্ম এর শেষ মাথায় দাড়াবেন, এতে সিট পাওয়ার পসিবিলিটি বেড়ে যাবে।
2. লোকাল বাসে উঠার আগে দামাদামি করে নিবেন .
ব্যাগ যথাসম্ভব হালকা রাখবেন, সাথে পানি ক্যারি করবেন, প্লাস্টিক এর জুতা ব্যবহার করবেন।
3. সব ঘুড়তে চাইলে গাইড নিবেন ( অনেক কনফিউজিং রূট), আমি যথাসাধ্য চেষ্টা করেছি তুলে ধরার (কতোটুকু মনে রাখতে পারছি, জানি না)
#Happy_Traveling

Post Copied From:Ashik Samad‎>Travelers of Bangladesh (ToB)

কমলদাহ ট্রেইল এবং গুলিয়াখালি ট্যুর

I guess বাংলাদেশের most underrated trail গুলোর মধ্যে একটি। কমলদাহ ট্রেইলে যাওয়ার আগে ফেসবুক, ব্লগ অনেক ঘাটাঘাটি করে হাতে গোনা কিছু ঝর্না-ক্যাসকেড এর নাম ই পেলাম। স্পেশালি রূপসী এবং ছাগলকান্ধা নিয়েই ম্যাক্সিমাম রিভিউ অথচ এই ট্রেইলের প্রতি বাকেবাকে যে এতোএতো রহস্য লুকিয়ে আছে তা কয়জন ই জানে। ☺☺ট্রাস্ট মি, আপনার একটি বিস্ময় কাটতে না কাটতেই নতুন কোন বিস্ময় আপনার সামনে চলে আসবে।এই ট্রেইলে আপনি পাবেন ১৭ টির মতো ঝর্না+ ক্যাসকেড, সো বুঝতেই পারছেন কি আছে এর বাকে বাকে। আমি কিছুদিন আগেই খৈয়াছড়া+ নাপিত্তাছড়া নিয়ে একটি রিভিউ দিয়েছিলাম গ্রুপে,
আমার কাছে এই ২ ট্রেইলের চেয়ে অনেক বেশি রকম ভালো+ এডভেঞ্চারিয়াস লেগেছে কমলদাহ।
যাই হোক ডিরেক্ট ট্যুর রিভিউ তে যাওয়া যাক :
আমি মোটামুটিভাবে সবকিছু in details এ বলার চেষ্টা করবো, তারপরেও কিছু জানার থাকলে feel free to ask.
এয়ারপোর্ট টু ফেনী (মেইল ট্রেন, ৯০ টাকা)>ফেনী স্টেশন টু মহিপাল (১৫)>ব্রেকফাস্ট (৪৫ টাকা)> মহিপাল টু বড়দারোগাহাট (৪০)>কমলদাহ ট্রেইল ( গাইড খরচ ৭০ টাকা)>দুপুরের খাবার (১০০)>বড়দারোগাহাট টু গুলিয়াখালি (৬০)> গুলিয়াখালি টু সীতাকুণ্ড (৩০টাকা)> সীতাকুন্ড টু মহিপাল (৬০ টাকা) > রাতের খাবার(৮০)>মহিপাল টু ঢাকা (৩০০)।
উপরের সবগুলো হিসেব Per person এর জন্য দেয়া, আমাদের খরচ হয়েছে মোট ৮৯০ টাকা প্রতিজন। আমরা সংখ্যায় ৯ জন ছিলাম। চেষ্টা করবেন ১০ জনের টিম যাওয়ার এতে খরচ বাচবে ☺☺আমাদের ১ দিনের শর্ট ট্যুর ছিল।
কমলদাহ ট্রেইল নিয়ে কিছু কথা : যারা এক্সট্রিম ট্যুর পছন্দ করেন তাদের জন্য একদম পারফেক্ট প্লেস এটা। রূপসী+ছাগলকান্ধা+দুধতলী+ সাতমারাধর+আটমারাধর+ বৈদ্য+ পাথরভাঙা এই ৭ টি ঝর্না এই রূটের পপুলার ঝর্না। ছাড়াও এই রূটে আরো ৫ টি ঝর্না আছে যার মধ্যে ৩ টির নাম ই এখনো দেয়া হয়নি ( খুব বেশি রকমের টাফ রূট ২ টিতে যাওয়ার, জাস্ট ২ আঙুলের উপর ভর দিয়ে সারা বডির ওয়েট রাখতে হবে কিছু জাগায়) একদম ডু ওর ডাই সিচুয়েশন যাকে বলে। মোটেও বাড়িয়ে বলছি না, ভিডিও করার ইচ্ছা ছিল বাট কোনভাবেই ক্যামেরা বের করতে পারি নি ওই সিচুয়েশন এ। যাদের ট্রেক করার এক্সপেরিয়েন্স নেই তাদের না যাওয়াই ভালো এরকম প্লেসে, ঝর্নাটি এতোটাই দূর্গম প্লেসে যে স্থানীয় লোকরাও নাকি এখানে আসে না ( আমাদের গাইড বলছিল এটার নাম নেই, আমারা যেনো কোন নাম দিয়ে যাই)।
বেশ লম্বা ট্রেইল, মোটামুটি হাতে ৮ ঘন্টা সময় নিয়ে যাবেন, এর বেশি হলে ভালো। প্রথমবার গেলে গাইড নিবেন নাহলে সবগুলো দেখতে পারবেন না, স্পেশালি ৩ টা ঝর্না বেশ দূর্গম পথে( আমি নিজেও ভুলে গেছি কিভাবে গাইড আমাদের নিয়ে গিয়েছে) 😂😂
কিভাবে যাবেন??
– বাংলাদেশের যেকোন জায়গা থেকে বড়দারোগারহাট নামবেন। বড়দারোগা থেকে উলটা( ঢাকার দিকে) তাকালেই দেখবেন ইটের ভাটা আছে ওই পথ ধরে আগাতে থাকবেন।
– পথে ২ টা খাবার হোটেল পাবনে, পুকুরের পাশে একটি হোটেল দেখবেন (ওইখানে খাবার অর্ডার দিয়ে যাবেন, আর কিন্তু সামনে হোটেল নেই) ওদের কাছেই ব্যাগ রেখে যাবেন (রান্না বেশ মজা, ট্রেকে গিয়ে এরকম রান্না খুব কম ই পেয়েছি) মালিকের নাম জয়নাল, বেশ ভালো মানুষ। সব ঘুড়ার ইচ্ছা থাকলে এখান থেকেই গাইড নেয়া ভালো, উনার ভাই মফিজ ( অস্থির লোক,গাইড্রা নরমালি একটু ফাকিবাজ হয় বাট উনি উল্টো আমাদের জোর করে নিয়ে যাচ্ছিল, আমরা তো জানতাম ও না এতোগুলো ঝর্না আছে এখানে।01821573302 ( জয়নাল চাচার নাম্বার, উনাকে বললেই উনি সব এরেঞ্জ করে দিবেন)। গাইড খরচ ৬০০-৭০০ ( যে সার্ভিস দিছে টাকা উশুল হয়ে গেছে)
– সামনে এগুলো একটা ঝিরিপথ পাবেন, রাস্তাটা ২ ভাগে বিভক্ত।একদিকে রুপসী আরেকদিকে ২ টা ঝর্না( নাম বলতে পারে নাই) বামদিকে আগে যাবেন ( ওই ২ টা ঘুড়ার জন্য) তারপর ব্যাক করে আবার ঝিরিপথে এসে ডানদিকে
– ডানদিকে রুপসী ঝর্না পাবেন। একটু হাটলেই।
– কমলদহের উপরে উঠেই ছোট একটি ক্যাসকেড* (আল্লাহর খুম) পার হয়ে ঝিরি পথে গেলে একটু পর ঝিরিপথ দুভাগ পাবেন। হাতের বামে একটি এবং ডানে একটি
-হাতের বামের ঝিরি পথে যাবেন প্রথমে।
-এই ঝিরিপথে গেলে কিছুটা দুর গেলে আবারো দেখবেন হাতের ডানদিকে আরেকটি ঝিরি পথ পাবেন (এইটায় এখোনি যাবেন না)
-সোজা ঝিরিপথে একটু এগুলে ছাগলকান্দা ঝর্ণা পাবেন (এটার উপরে উঠতে চাইলে পাশের পাহাড় দিয়ে উঠতে পারবেন, রাস্তাটা খুঁজে নিয়েন)
-ছাগলকান্দা ঝর্ণা দেখে ফিরার সময় ৪নং পয়েন্টে যে হাতের ডানের ঝিরি কথা বলছিলাম ঐটা দিয়ে যাবেন এখন
-একটু আগালে একটা ক্যাসকেড পাবেন, ঐ ক্যাসকেডের পাশ দিয়ে খুব রিস্কি পথ দিয়ে ক্যাসকেডের উপরে যাবেন।
– তারপর সামনে এগুলো আবারো দুটি ঝিরিপথ পাবেন।
-দু ঝিরিপথের শেষ মাথায় দুটি ঝর্ণার দেখা পাবেন।
স্পেশালি ডানেরটা দিয়ে গেলে বড় ঝর্না পাবেন, এটার উপরে উঠলে আরো ঝিরিপথ আছে, একটু আগিয়ে কিছু ক্যাস্কেড পাবেন, তারপর পাহাড় বেয়ে আবার উপরে উঠলে পাবেন আরো একটি ঝর্না
-ঐখান থেকে ব্যাক করে ৪ নং পয়েন্টে আসবেন, তারপর ২নং পয়েন্টে ফিরে আসবেন।
-এবার ২ নং পয়েন্টের ডানের ঝিরিতে যাবেন, মাঝখানে একটি ঝর্ণা পাবেন। এই ঝর্নার পাশের হাল্কা পাহাড়ি রাস্তা দিয়ে উপরে উঠে পড়ুন,
-এরপর আবারো ঝিরিপথ পাবেন, একটু এগুলো আরেকটি ক্যাসকেড পাবেন। এই ক্যাসকেড ডিঙিয়ে উঠে পড়ুন।
– তারপর ঝিরিপথে একটু এগুলে সব শেষে ছোট একটি ঝর্না পাবেন, তখন মনে হবে আর সামনে যাওয়া যাবে না।
-এখানে থেমে ছোট এই ঝর্ণাটির পাথর বেয়ে উপরে উঠে যাবেন, উঠার পরই নিজেকে অন্ধকার এক সুরঙ্গে আবিষ্কার করবেন। সামনে এগুবেন… ২মিনিট পরই পাথরভাঙ্গা ঝর্ণার দেখা পাবেন ।
– ঝর্না দেখে আবার ব্যাক করবেন একদম যেখান থেকে শুরু করেছেন। একটু আগালেই দেখবে হাতের বামে একটি, ডানে একটি রাস্তা আছে ( ডানের টি দিয়ে গেলে রুপ্সী দিয়ে নামতে পারবেন)। তবে ওইটা দিয়ে যাবেন না, বাম দিয়ে যাবেন (শর্টকাট) একটু আগালেই দেখবেন নিচে নামার পাহাড়ি রাস্তা, নামলেই সমতল ভূমি পেয়ে যাবেন। এরপর হাটতে থাকবেন একসময় দেখবেন ঠিক যেখান থেকে শুরু করেছেন সেখানেই চলে আসবেন।
গুলিয়াখালি বীচ :
ওইটাকে আসলে সীবিচ বলা উচিত না ( আমি এটলিস্ট সীবিচ বলতে যা বুঝি)। যারা নিরিবিলি পছন্দ করেন তাদের জোস লাগবে, খুব সাজানো প্লেস একটা। মনে হচ্ছিল প্রকৃতিক ভাবে না, মানুষ নিজের মতো করে গুছিয়ে বানিয়েছে। তবে সাগরের পানি বেশ নোংরা, পানিতে নেমে ধাপাধাপি করতে চাইলে না যাওয়াই বেটার।
কিভাবে যাবেন?
বড়দারোগাহাট থেকে রিসার্ভ লেগুনায় গুলিয়াখালি বাধ, ওইখান থেকে পায়ে হেটেও যেতে পারেন/ বোটে করেও যেতে পারেন ( বোটে ভাড়া ৫০)। হেটে( খালিপায়ে) যাবেন, ঢাকার পিচ ঢালা রাস্তায় বড় হওয়া মানুষদের এরকম সবুজ ঘাষের উপরে হাটতে ভালো লাগাই উচিত।
কিছু টিপস:
1. মেইল ট্রেনে যাওয়ার ইচ্ছা থাকলে অবশ্যই ৯:৩০ এর মধ্যে কমলাপুর চলে যাবেন এবং প্লাটফর্ম এর শেষ মাথায় দাড়াবেন, এতে সিট পাওয়ার পসিবিলিটি বেড়ে যাবে।
2. লোকাল বাসে উঠার আগে দামাদামি করে নিবেন .
ব্যাগ যথাসম্ভব হালকা রাখবেন, সাথে পানি ক্যারি করবেন, প্লাস্টিক এর জুতা ব্যবহার করবেন।
3. সব ঘুড়তে চাইলে গাইড নিবেন ( অনেক কনফিউজিং রূট), আমি যথাসাধ্য চেষ্টা করেছি তুলে ধরার (কতোটুকু মনে রাখতে পারছি, জানি না)
#Happy_Traveling

Post Copied From:Ashik Samad‎>Travelers of Bangladesh (ToB)