ভ্রমন পিপাসুদের জন্য নতুন স্বপ্নের রাজ্য হলো সাজেক ভ্যালী। এখানে একবার ঘুরে মনকে সন্তুষ্ট করতে পেরেছেন এমন মানুষের সংখ্যা কম। সাজেকের প্রতিটি পূর্ণিমাই ছিল উপভোগ্য। আসলে, জায়গা টাই এমন। পাগল মন তাই বারবার ছুটে যেতে চায় সাজেকে।
সারা বছরই যাওয়া যায় সাজেকে। তবে বর্ষায় সাজেকের রূপ যেন বেড়ে যায় কয়েকগুন। বৃষ্টিতে কটেজ থেকে বের হওয়া না গেলেও বারান্দা থেকেই উপভোগ করা যায় মেঘ আর পাহাড়ের মেলবন্ধন। ঝিরি ঝিরি বৃষ্টিতে টিনের চালের রিমঝিম নূপুরের শব্দ আর পাহাড়ে মেঘের বর্ষণ আপনাকে নিয়ে যাবে স্বপ্নের নতুন দিগন্তে।
সাজেকের উত্তরে ভারতের ত্রিপুরা, দক্ষিনে রাঙামাটির লংগদু , পূর্বে ভারতের মিজোরাম, পশ্চিমে খাগড়াছড়ির দীঘিনালা। সাজেক রাঙামাটি জেলায় অবস্থিত হলেও এর যাতায়াত সুবিধা খাগড়াছড়ি থেকে। রাঙামাটি থেকেও সাজেক যাওয়া যায়।
কি কি দেখার আছে সাজেক এবং এর যাওয়ার পথেঃ
১: আলুটিলা
২: রিসাং ঝর্না
৩: খাগড়াছড়ি শহর এবং ঝুলন্ত ব্রীজ
৪: হাজাঝড়া ঝর্না
৫: অজস্র পাহাড়
৬: রুইলুই পাড়া
৭: কংলাক পাড়া(সাজেকের সর্বোচ্চ শৃঙ্গ)
৮: হেলিপ্যাড
৯: গীর্জা
ঢাকা থেকে রাতের ১০ টার খাগড়াছড়ির বাসে উঠে যাবেন। নামবেন খাগড়াছড়ির ইজোর রেস্টুরেন্টের সামনে। এখানে ফ্রেশ হয়ে পরোটা, ডিম ভাজি, সবজি দিয়ে নাস্তা সেরে চলে যাবেন শাপলা চত্বরে। গত ৫ নভেম্বর থেকে সবাইকে এখান থেকেই পিকাপ নিতে হচ্ছে। ভাড়াও বেড়েছে আগের চেয়ে। ঠিক করা চান্দের গাড়ি নিয়ে যত দ্রুত সম্ভব চলে যান রিসাং ঝর্ননায়। গাড়ি আপনাকে যেখানে নামিয়ে দেবে সেখান থেকে ঝর্নায় নেমে যাবেন আপনশক্তিতে। নেমে ভালো সময় কাটিয়ে চলে আসবেন ৯ টার মধ্যে এবং চলে যাবেন বাঘাইহাটের দিকে। আর যদি সময় বেশি খেয়ে ফেলেন তবে টান দিয়ে চলে যাবেন স্কর্ট এর দিকে। ওখানে নাম লিখাবেন, তথ্য দিবেন। এরপর থেকেই সাজেকের পথে যেতে যেতে উপভোগ করবেন দুই পাশের পাহাড়ের সৌন্দর্য। সাজেক পৌছাবেন ঠিক ১২.৩০-১ টায়। ছাদে বসবেন সমস্যা নাই, কিন্তু অবশ্যই শক্ত করে ধরে বসবেন এবং বাচ্চা মানুষ উঠাবেন না। সাজেকে পৌছেই বুকিং করা হোটেলে উঠে যাবেন। ফ্রেস হয়ে খাবারের জন্যে চলে যাবেন চিমবাল্ রেস্টুরেন্ট। আপনার চাহিদার মধ্যে খুব ভালো খাবার পাবেন এবং খাবারের স্বাদও অন্যান্য জায়গা থেকে ভালো। দুপুরের খাওয়া খেয়ে হালকা রেস্ট নিয়ে বিকালে হেলিপ্যাড, রুন্ময়, গীর্জা, সেনাবাহিনীর বানানো বিভিন্ন দোলনা, ব্রীজ নিজের মতো করেই ঘুরবেন। বিকালের শেষ দিকে হেলিপ্যাডে যাবেন অবশ্যই। সূর্যাস্তও দেখতে পারেন হেলিপ্যাড থেকেই। সন্ধ্যার পর ও সাজেকে দিব্বি হাটা চলা করা যায়। রাত ১২ টার আগ পর্যন্ত হেলিপ্যাডে যাওয়া যায়। যাই হোক, প্রথমদিন রুইলুই পাড়া ঘুরবেন। এবং যথারীতি রাতে খাওয়ার ওর্ডার দিয়ে দিবেন। চাইলে রাতে বার-বি-কিউ খেতে পারেন এবং বেম্বো চিকেনও। এইভাবে প্রথম রাত কাটিয়ে দিবেন কটেজ চাইলে রাতেও বের হতে পারেন প্রিয় মানুষকে নিয়ে যদি মন চায়।
সকালে ভোরে উঠে চলে যেতে পারেন সাজেকের সর্বোচ্চ চূড়া কংলাক পাড়ায়। ওখানে উঠতে একটু ১০-১৫ মিনিট ট্র্যাকিং করতে পারেন। ওখান থেকে সাজেক দেখা সকাল চমৎকার সুন্দর। বিশেষ করে যে কারনে সাজেক যাওয়া সেই মেঘ ই দেখা যায় এখান থেকে সবচেয়ে বেশি এরিয়া জুড়ে। ওখানে চা খাইতে পারেন, পেয়ারা পাবেন, কলা পাবেন।ও হ্যা, চান্দের গাড়িতে আসার সময় বাঘাইছড়ি থেকে এক দুই কাদি কলা কিনে নিবেন। এত্ত মজার কলা কোথাও পাবেন না গ্যারান্টি।সকাল টা ওখানে কাটিয়ে নেমে আসবেন রুইলুই। যাওয়ার আগে অথবা আগের রাতে ওর্ডার করে যাবেন নাস্তা। এসেই খেয়ে নিবেন নাস্তা। নাস্তা খেয়ে আবার রুইলুই দেখবেন। যদি ঝুলন্ত ব্রীজ,আলুটিলা গুহা দেখতে চান তবে সকালের স্কর্ট এ চলে আসবেন। আর যদি হাজাঝড়া দেখতে চান শুধু তাহলে বিকালের স্কর্টে রওনা দিয়ে দিবেন।বাঘাইছড়ি বা স্কর্ট যেখানে আছে তার থেকে সামান্য একটু হাটলেই পেয়ে যাবেন হাজাঝড়া ঝর্না। ঝর্না দেখে চলে আসবেন শহরে।
এসে চাইলে ঝুলন্ত ব্রীজ দেখবেন যদি আগে চলে আসেন আর না হয় এসে বাসের টিকেট করে বাসে উঠার আগে খাবার খেয়ে রওনা দিবেন। ঢাকায় এসে পৌছাবেন সকাল ৫-৬ টায়। বন্ধের দিন, উৎসবের দিন সকল টিকেট বুকিং আগে ভাগে দেওয়ার চেষ্টা করবেন। তা না হলে টিকিট নাও পেতে পারেন।
বি:দ্র: ছবিটি মেঘমাচাং কটেজ সাজেক এর পেইজ থেকে নেয়া
Post Copied From:Hridoy Dash Shuvo>Travelers of Bangladesh (ToB)