এর অবস্থান চট্টগ্রাম এর মিরসরাই তে। কিছুদিন আগেও এই ঝর্ণার তেমন পরিচিতি না থাকলেও, এইই ঝর্ণার বিশালতা ও সৌন্দর্যের কারনে এর সুনাম ছরিয়ে গেছে সারা দেশজুড়ে। রিতিমত এটি পর্যটনকেন্দ্র এ পরিনত হয়েছে। তাই তো প্রতিদিন ই ভিড় বাড়চ্ছে খৈয়াছড়ায় যা ঝর্ণাপ্রেমীদের কাছে মোটেও কাম্য নয়।
আমি নিজেই ২ বার ছুটে গেছিলাম খৈয়াছড়া ঝর্ণাতে। আমার ভ্রমন অভিজ্ঞতা আজ শেয়ার করব।
*ভ্রমন গল্প – ১
আমরা সেইবার ১২ জন সদস্য গেছিলাম। প্রথমে নাপিত্তাছড়া ট্রেইল শেষ করে পৌছাই খৈয়াছড়াতে। নাপিত্তাছড়ায় প্রায় ৬ ঘন্টা ট্রেকিং পর সবারই সরিরের অবস্থা নাজেহাল ছিল। প্রথমে ২ -১ জন জেতে অনিচ্ছুক থাকলেও পরবর্তিতে সবাই হাটা শুরু করলাম খৈয়াছড়া ষ্টান থেকে। বৃষ্টিতে রাস্তাগুলো তখন অসম্ভব পিচ্ছিল ছিল। প্রতিটা ষ্টেপ এই ভেবে চিনতে পা ফেলতে হয়েছিল, কেউ কেউ পা পিছলিয়ে পরেও জাচ্ছিল। কিছু সদস্যদের কারনে আমরা সবাই পিছিয়ে যাচ্ছিলাম। তাও চাই সবাই জেনো পৌছাতে পারি শেষ অপদি।
হাটা শুরু করার ২০-২৫ মিনিট পরে ফিরে আসা কিছু অনাকাংখিত ট্রাভেলাররা বলতাছে – ভাই, লেট করে ফেলছেন, কিছুই দেখতে পাবেন নাহ, রাস্তা অনেক খারাপ, গেলে আসতে প্রবলেম হয়ে যাবে আরো অনেক কিছু। অনাকাঙ্ক্ষিত বলার কারন হচ্ছে একজন সত্যিকারের ট্রাভেলার কখনই অন্য ট্রাভেলারদের নিরুৎসাহিত করবে নাহ।
অই ট্রাভেলারদের কথা শুনে আমরা ৩-৪ জন একটু দ্রুত হাটা শুরু করি। পিচ্ছিল রাস্তায় একটু সতর্ক থাকলে একটু ভাল রাস্তা পেলেই দৌড়াচ্ছিলাম। কারন যেভাবেই হৌক দেখে যাবো। প্রায় ১ ঘন্টা পরে অবশেষে পৌছাই কাঙ্ক্ষিত সেই ঝর্ণায়।
এর পর পরের স্টেপ এ উঠার পালা, কিন্তু কিভাবে উঠবে একজন মানুষও তখন ছিল নাহ। একটা পিচ্চিকে দেখতে পেয়ে বললাম উপরে নিয়ে যেতে বিনিময় তাকে কিছু বকশিশ দিব। ওই ছেলেটা রাজি হয়।
উঠার রাস্তাটা দেখে আর একবার ভাবতে শুরু করলাম, উঠবো কি উঠবো নাহ। ট্রেকিং অভিজ্ঞতা তখন ছিল নাহ তাই একটু ভয়ও পেয়েছি। খাড়া পাহাড়ের গা বেয়ে উঠতে হবে। পর্যটকদের কারনে রাস্তা পুরোটা পিচ্ছিল ছিল, উপর থেকে মাটি ভেঙ্গে পরতাছিল। একটা রশি দেয়া আছে, ওইটা ধরেই নাকি উঠা লাগবে। কিছু রশিটা এতটা পিচ্ছিল ছিল যে বার বার হাত পিছলিয়ে যাচ্ছিলা। গামছা দিয়ে দরিটাতে গ্রিপ করে অনেক ভয় নিয়েই উঠছি ২য় স্টেপ এ।
পিচ্ছি গাইড ছেলেটা বলতাছে এখন উঠলে নামার সময় পাবেন নাহ। আবার একটা মানুষও ছিল না ওখানে। পুরো নির্জন ছিল জায়গাটা। আশায় ছিলাম কোন গ্রুপ উঠলে তাদের সাথে আমরা ২ জন এড হয়ে উঠবো। কিছুক্ষন বসে থেকেও দেখি কেউ আসে নাহ। তারপর বাধ্য হয়ে ফিরে আসছি। নিচে নেমে দেখলাম আমাদের টিম এর মাত্র ৫-৬ জন আসছে এই অপদি। বাকিরা মাঝপথ থেকেই চলে গেছে। আসার সময় মনে আকাঙ্ক্ষা ছিল পুরোটা না দেখার। হতাশ হয়েই ফিরে আসতে হয়েছিল আমাদের।
* ভ্রমন গল্প – ২
আগেরবারের আকাঙ্ক্ষাটা পুরোন করতে আবারো যাই খৈয়াছড়া ঝর্ণায়। এবার আমরা মাত্র ৪ জন। সকাল সকাল ই পৌছে যাই খৈয়াছড়া স্টান এ। হাটতে শুরু করি আমরা। এবার একটু সাহস বেসি ই ছিল। আর রাস্তাগুলো দেখে মনে হচ্ছিল প্রচুর পর্যটক এর দারা নির্যতিত তারা। রাস্তা আর এখন রাস্তা নাই, কেমন যেনো হয়ে গেছে। কাদা মাখা রাস্তার অনেকটা যায়গায় এমন ছিল যে পা দিলেই হাটু পর্যন্ত পা ঢুকে যাচ্ছে। অনেক কাদা থাকার কারনে এবার একটু সময় বেসিই লাগছিল যেতে।
গিয়ে দেখি প্রচুর মানুষের ভিড়। অবাক হয়ে গেলাম। মনে হচ্ছিল হয় ওয়াটারলেন্ড এ আসছি। যাই হোক, নিচে আর দারালাম নাহ। দরি বেয়ে উপরে উঠা শুরু করলাম। এবার জেতে খুব বেসি কষ্ট হয় নি। ২য় স্টেপ এ উঠার পরে ২ জন আর যাবে নাহ বলতাছে। আমি এবার আর হাল ছারব নাহ ঠিক করেই রাখছি। ওদের ওখানেই রেখে আমি আর এক বন্ধু উপরে উঠা শুরু করলাম। ৫/৬ স্টেপ এ উঠার পরে মানুষ পাচ্ছি না আরর। অনেকে দেখি ফিরে আসতাছে।
এর মদ্ধ্যে প্রচুর বৃষ্টিও শুরু হয়ে গেল। আর ১ স্টেপ পরে দেখি একটা গ্রুপ বসে আছে, সামনে জাওয়ার আর সাহস পাচ্ছে নাহ। তাদের উৎসাহ দিয়ে নিয়ে চললাম একসাথে। তাদের মদ্ধ্যে একটা সাহসী ছেলেও ছিল, যে অনেকবার আমকে সাবধান করেছে সাবধনএ পা ফেলতে। অবশেষ এ আমরা পৌছাই শেষ গন্তব্যে। নামার সময় খুব বেসি একটা কষ্ট হয় নি। বৃষ্টিতে পাথরের গায়ে লেগে থাকা কাদাগুলো ধুয়ে গেছে।
তখনও অনেক মানুষ উপরে উঠার জন্য মরিয়া হয়ে আছে। এমনিতে পাহাড়ের গা বেয়ে উঠতে হয়। তারপর আবার কেউ উঠতাছে আবার কেউ নামতাছে। এজন্য কোথাও কোথাও আবার ট্রাফিক ও তৈরী হচ্ছে। গা ছমছম করে নিচের দিকে তাকালেই। একটু কিছু হলেই মৃত্যু ছাড়া উপায় নেই।
সবশেষে ভাল ভাবে বাসায় ফিরে আসছি, আলহামদুলিল্লাহ।
*কিছু কথা:
খৈয়াছড়াকে একটা প্রাথমিক ট্রেকিং এর সূচনা বললে ভুল হবে নাহ। কারনটা না গেলে বুঝতে পারবেন নাহ। এমনিতে খুব বেসি কঠিন না হলেও বৃষ্টিতে এটা ভয়াবহ রূপ ধারন করে। ভিডিওতে দেখলাম এক ভাইর পা ভেঙ্গে গেছিল, তারপর তাকে এলাকাবাসীর সহায়তায় ওখান থেকে আনা হয়। সেদিন শুনলাম ভার্সিটি পরুয়া এক ভাই মারা গেছেন পাহার থেকে পরে গিয়ে। তাই ট্রেকিং এ হইহুল্লা না করে সতর্ক থাকবেন।
যেভাবে যাবেন:
ঢাকা থেকে চট্টগ্রামগামী যেকোন বাস এ মিরসরাই এর বড়তাকিয়া তে নামবেন। ট্রেন এ গেল ফেনি বা সিতাকুন্ড ষ্টেশন থেকে বাস বা লেগুনায় বড়তাকিয়া যাবেন > বড়তাকিয়ার একটু সামনে লোকাল সি.এন.জি পাবেন খৈয়াছড়া ষ্টান এ যাওয়ার> খৈয়াছড়া ষ্টান থেকে পা এ হেটে খৈয়াছড়া।
* ভ্রমন টিপস:
> খাবার স্যলাইন নিবেন, ট্রেকিং এ অনেক এনার্জি পাবেন।
> জুতা ব্যাগ যাওয়ার পথে কোন একটা রেষ্টুরেন্ট এ রেখে যাবেন। আসার পথে দুপুরের লাঞ্চও করে আসতে পারেন।
> এলাকাবাসীদের সাথে খারাপ আচরন করবেন নাহ।
> পর্যটন কেন্দ্রে পানির বোতল, খাবার, পলিথিন কোন কিছু ফেলে আসবেন নাহ।
^আপনার ভ্রমন সুন্দর ও নিরাপদ হোক
Post Copied From:MD Sayed Hossen>Travelers of Bangladesh (ToB)