ইন্ডিয়া ট্যুর এর খুঁটিনাটি

জীবনের প্রথম গেলাম ইন্ডিয়া। এটাই আমার প্রথম দেশের বাহিরে যাওয়া তাও আবার একা একা। সর্বমোট ১০ দিন ছিলাম ইন্ডিয়া তার মধ্যে ঘুরেছি হিমাচল প্রদেশ, উত্তর প্রদেশ,মদ্ধ প্রদেশ,দিল্লী এবং ওয়েস্ট বেঙ্গল।

@@যাই হোক এখন আসি কখন ,কোথায় এবং কিভাবে ঘুরলাম তা বর্ণনা করা যাক@@

প্ল্যান করেছিলাম এক মাস আগেই। প্ল্যান মতোই ইন্ডিয়ান ভিসার জন্য এপ্লাই করি এবং কোন ঝামেলা ছাড়া প্রথম বারেই পেয়ে যাই। যেহেতু একা ছিলাম তাই একটু ভয় তো থাকাটাই স্বাভাবিক। কিন্তু পরিশেষে ভয় কে জয় করেছি।

যাত্রা বর্ণনা ঃ
——————-
ঢাকা টু কোলকাতা ট্রেনে মৈত্রী এক্সপ্রেসে ২৫০০ টাকা। ঢাকা কেন্টনমেন্ট থেকে ওঠতে হয়েছে। ৩০ দিন আগে টিকিট কেটেছিলাম। রিটার্ন টিকিট করা ভালো নইলে আসার সময় টিকিট পাওয়া যায়না।
কোলকাতায় নেমে সেখান থেকে টেক্সি নিয়ে সোজা নিউ মার্কেট এরিয়া ( মারকুইস স্ট্রিট) এ নেমে টাকা /ডলার চেঞ্জ করেছি একটা হোটেল নিয়েছিলাম ১২০০ রুপী দিয়ে(বিমান লজ) সেখানে একদিন থেকে পরের দিন টেক্সি করে সোজা কোলকাতা এয়ারপোর্ট। টেক্সি ভাড়া ২০০-২৫০ টাকা নিয়েছে। কোলকাতা থেকে প্লেনে করে সোজা দিল্লী। প্লেনের টিকিট করেছিলাম ঢাকা থেকে ৫৫০০ টাকা তে ওয়ানওয়ে টিকিট। দিল্লী নেমে সেখান থেকে উবার করে পাহারগঞ্জ । ভাড়া এসেছিল ৫২৩ রুপী। সেখানে একদিন হোটেল এ থেকে ( রাজ মহল ইন) পরের দিন রুম চেক আউট দিয়ে সোজা চলে যাই উবার করে মজনুকা টিলা ভাড়া আসে ২০০ টাকার মতো।হোটেল ভাড়া ছিল ১০০০ রুপী। অস্থির একটা হোটেল আমার কাছে ভালো লেগেছে। যাই হোক মজনুকা টিলা পৌঁছে সেখান থেকে হেটে গেলাম তানিস্ক হলিডেস ট্রাভেলস । চাইলে অটো করে যাওয়া জায় ভাড়া পার হেড ১০ রুপী।এ ঐখান থেকে মানালির জন্য সন্ধ্যা ৭.৩০ টার
বাসের একটা টিকিট নিলাম। টিকিটের দাম ৯০০-১০০০ রুপী একটু মুলামুলী করলে এর কমেও আসা যায়,কারণ আমি গিয়েছিলাম ৭৫০ রুপী দিয়ে কিন্তু আসার সময় তা পারা একটু কস্টের। দিল্লীতে কিছুক্ষণ ঘুরাঘুরি করে ৭ টার সময় হাজির হলাম বাসের সামনে। লাগেজে ব্যাগ রাখতে ২০ রুপী করে নিবে প্রতিটা ব্যাগের জন্য। বাস ছাড়লো ঠিক একজেক্ট সময়ে। যাত্রা পথে দুইবার বিরতি পরবে প্রথম বার হয়তো হারিয়ানা দ্বিতীয় বার চান্ডীগর আমার একজেন্ট মনে নেই । বাস ছাড়ার ঠিক ১৪ ঘণ্টা পর বাসের সবাইকে মানালি নামিয়ে দেয়। নেমে আমি থান্ডারড হয়ে গেছিলাম। এতো ঠাণ্ডা আগে কখনো পাই নাই। সেখান থেকে একটা টেক্সি নিয়ে চলে গেলাম মাল রোড ভাড়া ৫০ রুপী আবার চাইলে হেটেও যাওয়া যায়। সেখানে গিয়ে উঠলাম হোটেলে( হোটেল মানালি কমর্ফোট) আগেই বুক করা ছিল। ভাড়া ৬০০ রুপী ডবোল বেড। এক্সটা হিটার নিলে ৩০০ রুপী বেশী পে করতে হবে পার ডে। হোটেল থেকেই জানালা খুল্লেই দেখতে পাবেন বিশাল বরফের পাহার পাশেই একটি বাঙালি খাবারের হোটেল পাবেন ( শ্রী শান্তি নিকেতন)।সেই হোটেল এর অমলেট টা আমার কাছে ভালো লেগেছিল। এর পর থাকার হোটেল এর সাথে ১০০০ রুপী কন্টাক্ট করে টেক্সি করে বেড়িয়ে পরলাম স্নো পয়েন্ট এর উদ্দেশ্য করে তখন রাথাং পাস বন্ধ ছিল। যাবার পথে বরফে থাকার জন্য ড্রেস ভাড়া পাওয়া যায় ২৫০-৩০০ রুপীর ভিতরে। সেগুলে ভাড়ায় পরে চলেগেলাম বরফে অনেক ক্ষণ থাকলাম বরফের মাঝে হাল্কা স্নোফল হচ্ছিল সেখানে । সেখানে থেকে অনেক ক্ষণ সময় দিয়ে পুরোটা ঘুরে চলে গেলাম ওল্ড মানালি যাবার পথে ড্রেস গুলো ব্যাক করলাম। ওল্নাড মানালি গিয়ে টেক্সি ছেড়ে দিলাম। তখন ভাবলাম টেক্সি না নিয়ে হেটে আসলে আমাদের ১০০০ রুপী বেচে যেতো সামান্য এতটুকু রাস্তা তাই নাকি ১০০০ রুপী? অল্ড মানালির ব্রিজের নিচে নেমে ছবি তুলে সিরি বেয়ে চলে গেলাম পাহারের উপর হেটে হেটে চলে গেলাম হাদিম্বা টেম্পল সেখান থেকে আসে পাসের স্পট গুলো দেখলাম। পরের দিন কিছু সপিং করলাম আর আশে পাশে ঘুরা ঘুরি করলাম। সেখানে কাশ্মেরী ভালো শাল পাওয়া যায় যদি একটু সময় দিয়ে কেনা যায় আর রয়েছে অনেক সুন্দর সুন্দর শো-পিছ। দু দিন থেকে আবার দিল্লীর উদ্দেশ্য করে রউনা দিলাম টিকিট কাটলাম আগের বাসেই এটার কাউন্টার মানালির একেবারে মেন রাস্তায় মোড়ে গিয়ে ঠিক হাতের ডান পাশেই। ৪.৩০ এর বাস। আসার সময় আর তেমন কমাতে পারিনি ৮৫০ রুপীতে আসতে হয়েছে। বাস ছাড়লো ঠিক ৪.৩০ এ। বাস আমাদের কাশ্মিরী গেট নামিয়ে দিল ভোর ৬ টায়। সেখান থেকে আবার পাহারগঞ্জ। হোটেলে (হারে কৃস্ন) উঠলাম। বাজে একটা হোটেল।ঐখানে যে রুম ছারভেন্ট সে বলে -“হাম হিন্দুস্তানিকো ভাই মান্তেহে ওর বাকি ছাভিকো কাস্টমার মান্তাহে”। হোটেল ভাড়া ৭০০ রুপী কিন্তু আগে জানলে ৩০০ দিয়েও থাকতাম না। অনলাইন এ একরকম আর সামনা সামনি এক রকম। এর পর সেখানে হোটেল থেকে দিল্লী ঘোরার জন্য টেক্সি বুক করলাম ১৪০০ রুপী সন্ধ্যা ৬:৩০ পর্যন্ত। আগে জানলে নিজেরাই টেক্সি করে নিতাম। তাহলে আরো রুপী বাচাতে পারতাম। টেক্সি করে বেড়িয়ে পরলাম প্রথমে দিল্লী গেট আবার অনেকে বলে ইন্ডিয়ান গেট এর পর দিল্লী জামে মসজিদ সেখান থেকে জুম্মার নামাজ পরলাম
এতো মানুষ একসাথে নামাজ মনে হয় প্রথম পরলাম। এর পর চলে গেলাম দিল্লী লাল কেল্লা,এর পর লোটাস টেম্পল এবং সব শেষএ নিজাম উদ্দিন আউলিয়ার মাঝার। সেখান থেকে সোজা হোটেল এর পর রাতের খাবার খেয়ে আগ্রার জন্য হোটেলে থেকে বাস বুক করলাম এক একজনের সিট এর দাম পরলো ৭০০ রুপী। আগে জানলে বাসে না গিয়ে শেয়ার করে গারি দিয়ে যেতাম খরচ পরতো ১২০০ রুপী তাই প্রতারিত হতাম না। রাতে ঘুমিয়ে সকাল ৬ টার দিকে একজন হুন্ডা দিয়ে নিয়ে গেলো বাসের সামনে সেখানে বাসে উঠে প্রথমে নিয়ে গেলো আগ্রা লাল কেল্লা যেটা কিনা সম্রাট আকবর বানিয়েছিলেন তার শাসন আমলে । সেখান থেকে চলে গেলাম আগ্রা তাজমহল তাজমহল সেখান থেকে তাজমহল যাবার পথে অনেক দোকানে থামিয়েছিল যাদের সাথে ট্র্যাভেল কোম্পানি গুলোর চুক্তি থাকে কাস্টমার এনে দেবার জন্য। যাই হোক আমাদের শাহজাহান এর তাজমহ্ল ঘোরার সময় খুব কম পেলাম। সব জায়গার টিকিট যেমন আগ্রা আকবরের লাল কেল্লা এবং তাজমহল এর প্রবেশ টিকিট নিজেরাই কাটা ভালো বাস ওয়ালাদের কাছে দিলে তারা রুপী বেশী নেয় আর ভয় দেখায় এই হবে সেই হবে । অনেক চিটারি করে।যাই হোক তাদের নির্দিষ্ট সময়ে বাস ছেড়ে দেয় দিল্লী উদ্দেশ্য করে। বাস আমাদের আবার সেখান থেকে দিল্লী নামিয়ে দিয়ে যায়। পরের দিন ফ্লাইট কোলকাতার। দিল্লী থেকে টিকিট কেটেছিলাম। দিল্লী টু কোলকাতা প্রাইজ পরেছিল ৭৮০০ রুপী। সকালে অটো নিয়ে চলে গেলাম দিল্লী এয়ারপোর্ট। ভাড়া এসেছিল ৪০০ রুপী। কোলকাতায় পৌছে সেখান থেকে ৪০০ টাকা দিয়ে ভাড়া করলাম মারকুইস্ট স্ট্রিট । সেখানে অনেক খোজা খোজি করার পর একটা হোটেল( রাজ গেস্ট হাউজ) পেলাম .। হোটেল টা আসলেই অনেক সুন্দর কিন্তু বাহির থেকে তা মনে হয় না। সুন্দর ৩ তলা থেকে। রুম ভাড়া ১৪০০ রুপী। কোলকাতার হোটেল ভাড়া অনেক বেশী এবং খাওয়া দাওয়ার খরচো। পরের দিন সেখান থেকে চলে গেলাম ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়াল । টেক্সি ভাড়া ১০০ রুপী। গিয়ে টিকিট কাউন্টারে শুধু বলেছি দাদা দুটো টিকিট দিন সে আমার কাছ থেকে ২০ রুপী রেখে বাকী ৮০ রুপী ফেরত দিল ।টিকিট নিয়ে পাশের তাকিয়ে দেখলাম ২০ রুপী শুধু ইন্ডীয়ান দের জন্য আর নন ইন্ডীয়ান ২০০ রুপী। যাই হোক টিকিট নিয়ে সুন্দর মতো ঢুকে যাই ভিতরে । কিছুক্ষণ ঘুরা ঘুরি করে ছবি চুলে বিপরীত গেট দিয়ে বেড়িয়ে যাই। বেচে গেলো ১৮০ রুপী হা হা হা। আবার ১০০ রুপী দিয়ে চলে আসলাম নিউ মার্কেট সাখান থেকে কিছু কেনা কাটা করলাম এর পর বাসার জন্য কিছু কেনার জন্য একটা টেক্সি নিয়ে চলে গেলাম কলেজ স্ট্রীট সেখান সব বড় বড় কাপড়ের শো-রুম। সব ফিক্সড দোকান । কেও আপনাকে ঠকাতে পারবে না । মোহীনি মোহন, আদী ঢাকেশ্বরী আরোও অনেক । সেখান থেকে কেনা কাটা করে আবার চলে আসি হোটেল এ । দু দিন কোলকাতা থেকে পরের দিন শ্যামলী ডাইরেক্ট বাসে ঢাকার রউনা দিলাম ভাড়া পরেছিল ১৪০০ রুপী। আসার সময় ইন্ডিয়া আর বাংলাদেশী কাস্টমস কে কিছু দিতে হয়েছিল। এটাকে আমি চাঁদাবাজি ছাড়া অন্য কিছু বলবো না । ইউনিফরম পরে কিভাবে টাকার জন্য হাত পাতছে ইন্ডীয়া আর বাংলাদেশের পুলিশ ।টাকা না দিলে হয়রানী করছে।যাই হোক সব ঝামেলা শেষে এই পারে আবার ঠিক সেই বাসেই উঠে বসলাম। ফেরী পেতে আমাদের তেমন কোন সমস্যা হয় নাই। কিন্তু ফেরী পার হয়ে ড্রাইভার চোখে আর কিছু দেখে নি । চারিদিক কুয়াশায় ঢেকে গেছে হেড লাইট দিয়েও তেমন কোন কাজ করছে না । আল্লাহ আল্লাহ করে হর্ন বাজাতে বাজাতে বাজাতে এগুতে থাকে আর এই ফাকে আমিও কখন ঘুমিয়ে যাই বুঝতে পারি নি । চোখ খুলে দেখি অনেকেই নামছে আর বাস থামিয়ে রেখেছে আমি মনে করলাম হয়তো এসে পরেছে পরে জানতে পারি এটি কল্যাণপুর । সেখান থেকে বেশী সময় লাগে নি কমলাপুর আসতে। ঠিক রাত ৩ টার দিকে বাস আমাকে কোমলাপুর নামালো। সেখান থেকে আল্লাহর অশেষ রহমতে একটি রিকশা পেয়ে গেলাম । রিকশা ৫০ টাকা ভাড়া দিয়ে চলে আসলাম বাসার সামনে। বাসায় উঠতে উঠতে ৪ টার কাছা কাছি।

এর সাথেই শেষ হলো আমার ইন্ডিয়া মিশন তাও আবার একা বুকে অনেক সাহস নিয়ে।

Post Copied From:ftakhairul Alam Tomal‎>Travelers of Bangladesh (ToB)

গোয়া বৃত্তান্ত

গোয়ার নাম শুনলে আমাদের মত মিডল ক্লাস মানুষদের মাঝে দুইরকমের প্রতিক্রিয়া তৈরী হয়।প্রথমত স্বপ্ন ঝিলিক দিয়ে উঠে!কিন্তু পরক্ষণেই সে স্বপ্ন আবার দপ নিভেও যায়,বিভীন্ন বিষয় চিন্তা করে! সবার আগে মাথায় আসে খরচের চিন্তা! বিশ্ববিখ্যাত সী বিচগুলো সেখানে অবস্থিত,খরচও নিশ্চয় ওইরকম মারমার কাটকাট টাইপের হবে! দীর্ঘ একটা সময় পর্যন্ত আমিও এমনটাই ভেবে এসেছি।ফলে,কখনো সেখানে যাওয়ার স্বপ্ন দেখারও সাহস হয়নি।কিন্তু কিছুদিন আগে tob তে একটা রিভিউ দেখলাম গোয়া ভ্রমণ নিয়ে।ভদ্রলোককে অসংখ্য ধন্যবাদ।তিনি সেখানে দেখিয়েছেন,কিভাবে স্বল্প খরচে গোয়া থেকে ঘুরে আসা যায়।মালত তার রিভিউ পড়েই আমার স্বপ্ন পূনরায় ডানা মেলা শুরু করে! মনে মনে বেশ সাহস খুঁজে পাই! তিনি বাংলাদেশ থেকে গোয়া পর্যন্ত খরচ দেখিয়েছিলেন পাঁচ হাজার টাকার মতো।আমি যেহেতু পড়াশোনার জন্য ইণ্ডিয়াতেই থাকি,এবং দিল্লীর আশপাশেই,সে হিসেবে আমার খরচত আরও কম হবে নিশ্চয়! সবকিছু ভেবে, ঝটপট তৈরী হয়ে যাই আমরা তিনজন।এবং,আল্লার অশেষ রহমতে সেই সফর শেষও হয়ে যায় অভাবনীয় সাফল্যের সাথে!জীবনের অবিস্মরণীয় একটা সফর ছিল সেটা!সমূদ্র আমার সবসময়ই অতি প্রিয়।ইতিপূর্বে কক্সবাজর সেন্টমার্টিন গিয়েছিলাম পাঁচবার! এবার দেখে এলাম আরব সমূদ্র!!ক্ষূদ্র জীবনের এও এক বিশাল অর্জন!
এই টাকায়ও যে গোয়া ভ্রমণ সম্ভব,এটা অনেকে বিশ্বাসই করতে পারছেননা! অবশ্য করতে না পারারই কথা,জায়গাটা যেহেতু গোয়া! কিন্তু বিশ্বাস করুন,সম্ভব!আসলেই সম্ভব,তবে একটু কষ্ট সহ্য করতে হবে,এই আরকি!আমিও বেশ ভালই কষ্ট করেছি।কিনতু কষ্টের পর যা পেয়েছি সে তুলনায় কষ্টটাকে তুচ্ছই মনে হয়েছে! আমি এখানে আমার খরচের হিসাব দিচ্ছি,দেখেন।

আমরা দিল্লী হজরত নিজামুদ্দীন থেকে দেরাদূন কচুভেলি এক্সপ্রেসে উঠেছি। এটা সপ্তায় একদিন,সোমবারে, কেরালা যায়।আমরা যেহেতু আগে থেকে টিকিট করিনাই,তৎকালে কাটলে টাকা বেশি লাগবে,তাই ৪০০ রুপি দিয়ে জেনারেলের টিকিট কেটে উঠে বসলাম।প্রায় ৩৪ ঘন্টার সফর জেনারেল বগিতে করাটা কষ্টকর বটে।বিশেষ করে মহিলা কিংবা অনভ্যস্থ হলে তাদের জন্য আরও বেশি কষ্টকর।আমরা অভ্যস্থ হয়ে গেছি,তাই সাহস করে উঠে বসলাম।এজন্য আপনারা যারা অভ্যস্থ না তারা স্লীপারের টিকিট কেটে নিয়েন,৭০০ টাকা লাগবে।পথে কী খরচ করবেন না করবেন,সেটা আপনার উপর ডিপেণ্ড করে।আমরা হালকা নাস্তা টাস্তা করেই কাটিয়ে দিয়েছি পুরো সময়।খুবেকটা কষ্ট হয়নি।
সোমবার দুপুর দেড়টায় ট্রেনে উঠেছিলাম,মারগাও স্টেশনে গিয়ে নেমেছি মঙ্গলবার রাত সাড়ে দশটায়।
এখান থেকে আমাদেরকে যেতে হবে আরামবোল।মারগাও থকে বেশ দূরে।রাত নয়টার পর বাস বন্ধ হয়ে যায়।ফলে বাধ্য হয়েই একটা রাত মারগাও স্টেশনের পাশের হোটেলে থাকতে হয়েছে।তিনজনে হোটেল ভাড়া পড়েছে ছয়শ রুপি।পরদিন সকালে বাসে করে বাসস্ট্যণ্ড পর্যন্ত গেলাম,ভাড়া জনপ্রতি ১০ রুপি।সেখান থেকে বাসে করে পান্জি।ভাড়া ৪০ রুপি করে।পাঞ্জি থেকে বাসে করে মাপোসা।ভাড়া ১৫ রুপি করে। সেখান থেকে পূনরায় বাসে আরামবোল, ফিশমার্কেট।ভাড়া ৩০ রুপি।
সব মিলিয়ে আড়াই ঘন্টার মতো সময় লেগেছে,ভাড়া লেগেছে নব্বই রুপির মতো।
ফিশ মার্কেট নেমে,আশপাশেই ভাল হোটেল পাবেন।বেশ কম দামে।আপনি যদি একা হন,তাহলে ডরমিটরি টাপের হোটেলগুলোতে থাকতে পারেন।জনপ্রতি দুইশ করে লাগবে।সেজন্য হোটেল আরামবোল সবচেয়ে ভাল হবে।আমরাও সেখানেই ছিলাম।ফিশমার্কেট নেমে কাউকে জিজ্ঞেস করলেই দেখিয়ে দেবে।
আর দুই তিনজন হলে ভাল হয় একটা রুম নিয়ে নেবেন।সেজন্য আপনাকে প্রথমেই বীচে চলে যেতে হবে।সেখানে গিয়ে দেখতে পাবেন একদম সমূদ্রের তীরে সারি সারি হোটেল আছে।দরদম করে নিলে পাঁচ ছয়শর ভিতরে রুম পেয়ে যাবেন।পাসপোর্ট বা ড্রাইভিং লাইসেন্স জমা দিয়ে বাইক ভাড়া নিতে পারেন।দিনপ্রতি তিনশ রুপি নেবে।এটা দিয়ে যেখানে খুশি আরামছে চলে যেতে পারবেন!
আমরা প্রথম দিন আরামবোল ও তার আশপাশের বিচেই ছিলাম সারাদিন।বেশ মজা হয়েছিল।
বিকাল ও সন্ধ্যাটাও বিচেই কেটেছে।সে এক অপার্থিব দৃশ্য তৈরী হয় আরব সমূদ্রের তীরে।

গোয়া মূলত সমূদ্র,সী বিচ, প্রাচীনসব চার্চ আর দূর্গের রাজ্য।চারদিকে চার্র আর চার্চ।খোদ ভেনিসেও এতো চার্চ আছে কিনা সন্দেহ!খুব সুন্দর আর পরিপাটি রাস্তাঘাট।ঘরবাড়িগুলো সব ইউরোপিয়ান স্টাইলে নির্মিত।বেশিরভাগই একতলা,দু’তলা।টালির চৌচালা ছাদ।পুরোটা শহরই পাহাড়ের উপর নির্মিত।রাস্তাঘাট সব উঁচুনিচু,ঢালু।ইন্ডিয়ার অন্যান্য রাজ্য আর শহরগুলো থেকে এটা একেবারেই আলাদা,অন্যরকম!

দ্বিতীয় দিন সকালে আমরা চলে গেছি কেরি/ কেডি বীচে।ফিশমার্কেট থেকে বাসে দশ টাকা করে লাগে।
সেখানে গিয়ে ফেরীতে করে তেরিখালি গ্রামে গেলাম।সমূদ্রের একটি চ্যানেল পাড়ি দিতে হয়।ফেরীর কোন ভাড়া লাগেনা।তেরিখালি খুব সুন্দর নিরীবীলি একটি পাহাড়ি গ্রাম।পাহাড়ের গায়ে এসে সমূদ্রের ঢেউ আছড়ে পড়ছে! এই গ্রামে প্রাচীনকালে নির্মীত দুইটি দূর্গ আছে! সেগুলো দেখে আসতে পারবেন।
সেখান থেকে ফিরে আমরা বীচে চলে গেলাম।কেরি বিচটা একটু অন্যরকম,এখানে ঢেউ কিছুটা বেশি।এবং জায়গাটাও একটু গভীর!জায়গাটা অত্যন্ত সুন্দর! এখানেই সারাদিন কেটে গেছে।সন্ধ্যায় আবার আরামবোল বিচে ফিরে আসি।

তৃতীয় দিন সকালে আমরা পাঞ্জির উদ্দেশে রওয়ানা করি।সাড়ে নয়টায় আমরা পৌঁছাই সেখানে।সেখান থেকে সাইট সিয়িংয়ের জন্য ট্যুরিস্ট বাস পাওয়া যায়।মাত্র আড়াইশ টাকায় নর্থ গোয়ার সমস্ত প্রসিদ্ধ স্থান ঘুরিয়ে আনবে।এতে আপনার সারাদিন কেটে যাবে।অনেক বীচ,চার্চ, আর দূর্গ এর আওতায় পড়বে।কোকো বীচ নিয়ে যাবে,সেখানে আলাদা তিনশ টাকা করে দিয়ে, ডলফিন পয়েন্ট ঘুরিয়ে আনবে বোটে করে।এটা অনেক থ্রিলিং ও মজার একটা জার্নি।
বিকালের দিকে বাগা বীচে নিয়ে আসবে।সেখানে ঘন্টা দেড়েক গোসল করার সুযোগ পাবেন।বাকি অন্যান্য জায়গায় কোথায় কী করতে হবে, সব গাইডই বলে দেবে।
দিনশেষে আবার পাঞ্জি ফিরে আসি আমরা। সেখান থেকে বাসে করে মারগাও।প্রায় সাথে সাথেই ট্রেন পেয়ে যাই মুম্বাইয়ের।তাতেই চড়ে বসি।আরামসে এক ঘুম দিয়ে মুম্বাই এসে পৌছে যাই সকাল বেলা।
মুম্বাই সারাদিন ঘুরাঘুরি করে সন্ধ্যায় আবার দিল্লীর ট্রেনে চড়ি।ব্যাস্,গোয়া সফর শেষ।খরচ টরচ সব মিলিয়ে দেখলাম মাত্র তিনহাজার কিংবা তারও কম হয়েছে।অথচ,আআমি আগে কক্সবাজার যেতাম যখন,তখনই আআমার নিম্নে পাঁচ হাজার টাকা লাগতো। চলাফেরায় যে খুব কষ্ট করতে হয়েছে এমনও না।মোটামুটি আরামেই তিন চারটা দিন কাটিয়ে এসেছি গোয়ায়।শেষের দিকে এসে যখন দেখলাম, বাহ,টাকাত খুবেকটা খরচ হচ্ছেনা,তখন ধুমধাম খাওয়া দাওয়াও করলাম মনমতন।

খাবার দাবার খুবই উন্নত ও রিজনেবল প্রাইজে পাওয়া যায় সেখানে।কোন জায়গায়ই চড়া মূল্য নাই।সব ধরনের খাবারই পাবেন।সো,সারাদিনে দুই আড়াইশ টাকায়ই আপনার খাবার হয়ে যাবে।বাকিটা ডিপেন্ড করে আপনার উপর।

আমি হিসাব দিয়েছি দিল্লী থেকে।যারা কোলকাতা থেকে আসবেন তাদেরও হিসেবও অনুরূপই হবে প্রায়।হাউড়া থেকে অমরাবতি এক্সপ্রেস ছাড়ে।ভাড়া ও সময় দিল্লীর সমানই।যাদের সময় ও সুযোগ আছে তারা গেয়া থেকে আরেকটু সামনে এগিয়ে গিয়ে কর্নাটকও ঘুরে আসতে পারেন।অসাধারন সব স্পট সেখানেও আছে।

যাইহোক,ইচ্ছা ছিল অনেক গুছিয়ে গাছিয়ে সুন্দর একটা ভ্রমণ কাহিনী লেখার। কিন্তু আপাতত সেটা পারতেছিনা,ব্যাস্ততা আর ক্লান্তির কারনে।তাই কোনরকম একটা ফিরিস্তিমূলক লেখা দেয়া গেলো!এলোমেলো লেখার জন্য দু:খিত!আরও কোন তথ্য লাগলে ইনবক্স করতে পারেন,যথাসম্ভব সাহায্য করার চেষ্টা করবো।হ্যাপি ট্রাভেলিং!

Post Copied From:Hujaifa Mahmud‎>Travelers of Bangladesh (ToB)

দিল্লীর দালাল, সাবধান

শ্রীনগর এয়ারপোর্টেই আমাদের প্রায় ২ ঘণ্টা দেরি হয়ে গেল, প্লেন দেরি করে আসা আর আবহাওয়ার কারনে আরও দেরি করে ছাড়ায়। তার মানে সন্ধ্যার দুরন্ত এক্সপ্রেস মিস হয়ে যাচ্ছে, কারন প্লেন দিল্লী পৌঁছান আর ট্রেন ছাড়ার সময়ের মধ্যে ২:৩০ ঘণ্টার ব্যবধান ছিল। ওদিকে দুইমাস আগেই দুরন্ত এক্সপ্রেসের টিকেট কেটে রেখেছিলাম প্রায় ৩০০০ টাকা করে! কিন্তু সেই চিন্তা করে তো আর লাভ নেই।

তবুও দিল্লীর আকাশে যখন প্লেন এলো নিচে এয়ারপোর্ট, রানওয়ে দেখতে পারছিলাম আবছা আবছা। কিন্তু প্লেন ল্যান্ড করতে পারছেনা, কারন নিচের আবহাওয়া অনেক খারাপ, যেটা উপর থেকে ঠিক বোঝা যাচ্ছেনা। ২০ মিনিট প্লেন আকাশে চক্কর দেবার পরে যখন ল্যান্ড করলো তখন হাতে মাত্র ২০ মিনিট সময় আছে। অথচ আমাদের স্টেশনে যেতে অন্তত ৪০ মিনিট লাগবে জ্যাম না থাকলেও।

আমাদের অবস্থা জেনে একজন পরামর্শ দিলেন, ট্যাক্সি না নিয়ে যেন মেট্রোতে যাই। তাহলে অনেকটা সময় বেঁচে যাবে স্টেশনে পৌছানোর, অন্তত সন্ধ্যায় দিল্লীর ভয়াবহ জ্যামটা এড়ানো যাবে। মেট্রোর খোঁজ নিতে গিয়ে জানলাম সেটাও এই আভ্যন্তরীণ টার্মিনাল থেকে নয়, এখান থেকে ১০ মিনিটের গাড়ি বা বাসের পথ। পড়িমরি করে উঠে পরলাম ছেলে-ছেলের মা আর ব্যাগপত্র নিয়ে দাড়িয়ে থাকা বাসে। কোন রকমে উঠতেই বাস ছেঁড়ে দিল। আর মাত্র ৮ মিনিট চলার পরেই আমাদেরকে মেট্রো স্টেশন নামিয়ে দিল। হাতে সময় আছে ১২ মিনিট, মানে নিউ দিল্লী স্টেশন থেকে দুরন্ত একপ্রেস ছাড়ার। ট্রেন পাবোনা জানি, তবুও মিথ্যে করে হলেও আশাকে বাঁচিয়ে রেখে বাকি পথটুকু চলার অনুপ্রেরণা খোঁজা।

তাড়াহুড়োতে মেট্রোতে ভুল টিকেট কাটা হয়েছিল ট্রেনের পরিবর্তে বাসের! যেটা বুঝতে পারলাম প্লাটফর্মে ঢুকতে গিয়ে, আবার সেই টিকেট ফেরত দিয়ে, মেট্রোর টিকেট কাটা হল, নিচে নেমে দেখলাম ট্রেন আসতে তিন মিনিট বাকি আছে, বড় করে লাগোয়া ট্রেনের টাইম টেবিল সেখানে অনবরত ভেসে চলেছে। ঠিক তিন মিনিট পরে ট্রেন এলো। আমরা উঠে পরলাম।

যথেষ্ট সিট ফাঁকা আছে কিন্তু ট্রেন মিসের দুশ্চিন্তা আর রাতে কোথায় থাকবে সেই টেনশনে সবাই দাড়িয়েই ছিলাম। ২৫ মিনিট পরে মেট্রো নিউ দিল্লী ষ্টেশনের উল্টো পাশে, পুরনো দিল্লীতে নামিয়ে দিল। বুকে তখনও কিছুটা মিথ্যে আশা বেঁধে রেখেছি যদি ট্রেন এক ঘণ্টা লেট হত? কিন্তু না প্লাটফর্মের বাইরে বেরিয়ে কুলিদের জিজ্ঞাসা করাতে জানালো ঠিক ২০ মিনিট আগে একদম সঠিক সময়ে ট্রেন ছেঁড়ে দিয়েছে!

মানসিক প্রস্তুতি সবারই ছিল তবুও, সবাই মুহূর্তেই ভেঙে পড়লো, মানসিক ও শারীরিকভাবে। প্রত্যেকে ব্যাগের উপরে বসে পরলো, ভীষণ বিষণ্ণতায়, নিদারুণ মন খারাপ করে। ওদের এই অবস্থা দেখে দিল্লীর দালালরা আমাদেরকে পেয়ে বসলেন। ট্রেনের টিকেট নিয়ে নানা রকম ফন্দি ফিকির শুরু করে দিল। কনফার্ম টিকেট আছে, আগামীকালকের, মাত্র ৫০০ রুপী করে বেশী দিতে হবে, কেউ ৪০০ রুপী আবার কেউ ৩০০ রুপী বেশী দিয়ে ট্রেন টিকেটের নানা রকম প্রলোভন দেখিয়ে যাচ্ছে। ওদের কাছে ছাড়া নাকি আগামী ৭ দিনের কলকাতার কোন টিকেট নেই! এটা শুনে ওরা চারজন আরও মুষড়ে পরলো যেন! দালালদেরকে বললাম আগে নিজ থেকে ফরেন কোটার খোঁজ নেব, তারপর অন্য ভাবনা ভেবে দেখবো। ওরা জানালো বিকেল পাঁচটার পরে ফরেন কোটার অফিস বন্ধ হয়ে যায় আর শুক্রবার বন্ধ থাকে! তবুও বললাম আগে খোঁজ নিয়ে নেই।

আমি তখনও চুপচাপ আছি। ওদেরকে একটা কর্নারে যেখানে সিসি টিভির পুরো ফুটেজ পাওয়া যায় তেমন যায়গায় ব্যাগপত্র নিয়ে বসতে বললাম। এখান থেকে আমি ফিরে না আসা পর্যন্ত যেন এক চুলও কেউ না নড়ে। ওদেরকে নুডলস কিনে দিয়ে প্লাটফর্মের দিকে হাটতে লাগলাম। আমার পিছনে পিছনে দিল্লীর দালাল লেগে আছে। ওরা যে কোন উপায়ে আমাদের টিকেট কেটে দিতে বদ্ধপরিকর।

একই সাথে পিছনে তিনজন দালাল লেগেছে, একজন ট্রেন টিকেটের, একজন হোটেল দেবার আর একজন আমাদের আগামীকাল দিল্লী ঘুরিয়ে দেখাবে পাশাপাশি আজকে রাতে আমাদের তার ট্যাক্সিতে করে এগিয়ে দেবে এবং সেজন্য কোন অতিরিক্ত টাকা নেবেনা। পূর্বে কয়েকবারের দিল্লীর দালালের নানা রকম অভিজ্ঞতা থেকে ওদের সাথে কোন রকম আলোচনা না করে নিজের মত প্লাটফর্মের ভিতরে চলে গেলাম, আর প্লাটফর্মের ভিতরে ঢোকার পরে ওরা নিজ থেকেই নিজেদের কাজে চলে গেল!

১৬ নাম্বার প্লাটফর্মে ঢুকে খোঁজ নিয়ে জানতে পারলাম, ফরেন টিকেট দেয়া হয় ১ নাম্বার প্লাটফর্ম থেকে। নিউ দিল্লী স্টেশনে ১৬ টা প্লাটফর্ম! খুব দ্রুত হেটে গেলেও ১৬ থেকে ১ নাম্বার প্লাটফর্মে যেতে হলে কমপক্ষে ২০ মিনিট লাগবে। এতক্ষণে আমার নিজেরও বেশ ক্লান্তি চলে এসেছে, সেটা যতটা না শারীরিক তারচেয়ে বেশী মানসিক। জানেন তো মানসিক ক্লান্তি মানুষকে বেশী দুর্বল করে দেয়।

যাই হোক ১ নাম্বার প্লাটফর্মে গিয়ে খুঁজে খুঁজে ২য় তলায় ফরেন কোটার টিকেট অফিসে গেলাম। দারুণ, আরামদায়ক সোফা আর এসির আরাম আছে সেখানে, সেটা দেখে টিকেট এর খোঁজ নিয়ে জানতে পারলাম, সবার অরজিনাল পাসপোর্ট দেখেই তবে টিকেটের সঠিক তথ্য দিতে পারবে! তার মানে সবাইকে নিয়ে এখানে আসতে হবে। মোবাইলও নেই যে অন্যদের পাসপোর্ট নিয়ে আসতে বলবো, আমাদের তিন জনের পাসপোর্ট আমার কাছেই আছে।

আবারো ছুটতে হল প্লাটফর্ম ১ থেকে ১৬ তে। দুটো অটো নিয়ে সবাই মিলে অনেকটা ঘুরে চলে এলাম ১ নাম্বার প্লাটফর্মে। ব্যাগপত্র নিয়ে ফরেন কোটার অফিসে ঢুকতে ঢুকতে সাবই বিধ্বস্ত। নরম সোফা আর এসির আরমে বসে টিকেটের খোঁজ নিয়ে জানতে পারলাম মাত্র চারটা টিকেটই আছে, সেটাও টু টায়ারের, ভাড়া ৪২০০ রুপী করে! প্লেনের চেয়েও বেশী। তবুও ঝটপট কেটে নিলাম, যেহেতু আর কোন অপশন তখন নেই।

টিকেট কাটার পরে সবাই একটু নিশ্চিন্ত হলাম, এরপর রয়েছে হোটেল খুঁজে বের করার বিশাল ঝামেলার আর একটা কাজ। ওদেরকে ওখানেই বসিয়ে রেখে বের হলাম, যেহেতু দুটো পরিবার তাই যেমন তেমন হোটেল তো নেয়া যাবেনা, তাই অনেক খুঁজে খুঁজে দালালের চক্র থেকে নিজেদের বাঁচিয়ে পেয়েছিলাম মোটামুটি রাত কাটানোর মত ভদ্রস্থ একটা হোটেলের দুটো রুম। তখন রাত ১১ টা। আবার প্লাটফর্মে গেলাম ওদেরকে নিয়ে আসতে।

শেষ হল একটি বিপর্যস্ত সন্ধ্যা আর বিধ্বস্ত রাত ও দিল্লীর দালাল থেকে নিস্তার পাবার গল্প।

শেষ কথা হল, দিল্লীতে ট্রেন টিকেট কাটার জন্য অবশ্যই আগে যাবেন ১ নাম্বার প্লাটফর্মে, যেটা ৭/২৪ (সাত দিন আর ২৪ ঘণ্টাই খোলা থাকে) দালালের চক্করে না পরে আগে নিজ থেকে খোঁজ নিন, তারপর না হয় এজেন্ট বা দালালের ফাঁদে পা দেবেন। কারন ওরা টাকা নেবে, টিকেটও দেবে, কিন্তু সেটার হয়তো সিট নাম্বার থাকবেনা যেটা নিয়ে পরতে হবে নিদারুণ বিড়ম্বনায়। যেটা আমরা দুইবার পরেছিলাম! টিকেট ছিল, কিন্তু সিট ছিলোনা, তাও দিগুণ টাকা দিয়ে কাটা টিকেট!

তাই ভাই-বোনেরা যারা আসছে ছুটিতে ভারত যাবেন আর ট্রেন ভ্রমণের কথা ভাবছেন, পারলে টিকেট গুলো আগে করে রাখুন আর হাতে সময় নিয়ে রাখুন পর্যাপ্ত। আর খুব খুব আর খুব সাবধান! যে কোন যায়গায় থাকতে পারে…

দিল্লীর দালাল…!!

১৯ ডিসেম্বর ২০১৭

Post Copied From:

Sajol Zahid>Travelers of Bangladesh (ToB)

মাত্র ১৫ হাজার টাকায় ঘুরে আসুন( কল্কাতা,মানালী,দিল্লী)

১)কলকাতা(হাওরাব্রীজ,ইডেন গার্ডেন,বিদ্যাসাগর ব্রীজ,ভিক্টোরিয়া পার্ক)
২)দিল্লী(আগ্রা তাজমহল,ইন্ডিয়া গেট,লোটাস টেম্পল,আগ্রা ফোর্ট)
৩)মানালী(সোনাংভ্যালী,রোথাংপাস)

আমরা সফরসঙ্গী ছিলাম ২ জন।
১ম দিন: রাতের খাবার খেয়ে বাসে(হানিফ নন এসি 500 টাকা )রওনা দিলাম সকালে বেনাপোল বর্ডারে পৌছাই।নাস্তা করে (40টাকা) ইমিগ্রেসন এ যাই।
খরচ :500+ 40=540 টাকা

২য় দিন ঃ বর্ডার পার হলাম (৫০০ টাকা ) এরপর অটোতে করে বনগাঁ রেলস্টেশনে গেলাম(৩০রুপি)।বনগাঁ থেকে লোকাল ট্রেনে করে শিয়ালদাহ স্টেশনে এসে নামলাম (২০ রুপি)।সকাল ১১ টা বাজে তখন।আমরা দেরি না করে একটা ট্যাক্সি রিসার্ভ করে(১০০/২=৫০ রুপি)মারকস্ট্রীট আসলাম। সুহাগ কাউন্টার এর অপর পাশে একটা ট্যুরিস্ট এজেন্ট থেকে দিল্লীর রাজধানী ট্রেন এর টিকেট কাটলাম(এসি ৩ টায়ার 2300 টাকা)। আমাদের ট্রেন বিকাল ৫ টায় টাই আর আমরা হোটেল না নিয়ে ব্যাগগুলু ট্যুরিস্ট অফিস এ রেখে দুপুরের খাবার খেয়ে নিলাম(100রুপি থালি)।খাবার খেয়ে একটা ট্যাক্সি ভাড়া করলাম ইডেন গার্ডেন আর হাওড়া ব্রিজ যাওয়ার জন্নে(150/2=75 রুপি)।আসার সময় ভিক্টোরিয়া পার্ক ঘুরে আসলাম(80/2=40 rs) এরপর ট্রেন এ উঠার জন্নে শিয়ালদাহ(70/2=35 rs)গেলাম।ট্রেন এ কমপ্লিমেন্টআরি খাবার ছিল।
খরচঃ2650*1.2=3180+500=3680tk

৩য় দিন ঃ সকাল ১০টায়নিউ দিল্লী ষ্টেসনে নামার পর রাস্তা পার হয়ে একটা এজেন্সির অফিসে যাই।এজেন্সি থেকে মানালী যাওয়া আসার টিকেট কেটে নেই(আসা যাওয়া 2200 রুপি)
আমরা 2 ঘনট্ার জন্য একটা হোটেল ভারা করি(300/2=150রুপি)জরুরী কাজ আর দোসল সেরে আমরা একটা অটো ভাড়া করি(250/2=125রুপি)ইন্ডিয়া গেট আর লোটাস টেম্পল নিয়ে যাওয়ার জন্যে।জায়গাগুলো ঘুরার পর মেট্রোরেলে করে দিল্লী(পাহারগন্জ) ফিরে আসি(30রুপি) আসতে আসতে 5 টা বেজে যায়।পাহারগন্জ থেকে মানালীর গাড়ি স্টপেজ জাওয়ার জন্যে অটো রিজার্ভ করলাম(60/2=30রুপি)5.30 এ পৌছাই স্টান্ড এ।দুপুরের খাবার(120রুপি)খেয়ে গাড়িতে উঠি।প্রায় 13 ঘন্টা আকা বাকা পাহার পেরিয়ে মানালী পৌছাই(রাতের ব্রেকে রাতের খাবার খেয়েছিলাম 200রুপি)
খরচ:2805*1.2=3366

৪ দিন:সকালে মানালী পৌছে হোটেল ঠিক করারা জন্য বাস স্টান্ড থেকে শহরে যাই(100/2=50রুপি)
1000রুপির হোটেল পেতে একটু বেগ পেতে হয়েছিল(1000/2=500)
সকালের নাস্তা(50রুপি)করে ট্যাক্সি শেয়ার করে রওনা দেই রুথাংপাস আর সুনাংভ্যালীর উদ্দেশ্যে(3300/3=1100রুপি)।ঘুড়ে আসতে আসতে বিকাল পার হয়ে যায়।খাবার খরচ 100রুপি।রাতে হোটেল থেকে বের হয়ে শহরটা ঘুড়ে দেখলাম পায়ে হেটে।রাতের খাবার 140রুপি
খরচ:1800*1.2=2160

৫ম দিন :ঘুম থেকে উঠে নাস্তা করে(50রুপি) বের হলাম মানালীর আশে পাশে ঘুরার জন্যে।একটা অটো নিয়ে আশেপাশে ঘুরার জন্য বের হলাম(250/2=125রুপি)মানালীতে জুসটা ভালো হয়।সাথে ছিল চেরি ফল এগুলো মিস করলাম না(150রুপি সব মিলে)পাহার থেকে নেমে আসা বরফ গলা পানির কি জেনো একটা নদী নাম মনে নেই।বের হওয়ার আগে চেক আউট করে ব্যাগ হোটেলের নিচে রেখে গিয়েছিলাম তাই কোন চিন্তা না করে দুপুরের খাবার বাহির থেকে খেয়ে(120রুপি)বিকালে হোটেল থেকে ব্যাগ নিয়ে সন্ধায় রওনা দিলাম দিল্লীর উদ্দেশ্যে।টিকেট আগেই কাটা ছিল।রাতের খাবার ব্রেক টাইমে খেয়ে (100রুপি)সকালে দিল্লী পৌছালাম।
মোট খরচ :654টাকা

৬ দিন :দিল্লী এসেই প্লান করলাম আগ্রা যাবো।তাই নাস্তা করে(45রুপি) দিল্লী থেকে আগ্রা জাওয়ার ট্রেন এর টিকিট(50রুপি) এবং আগ্রা থেকে কলকাতা(1400রুপি)যাওয়ার টিকিট কেটে নিলাম।12 টায় আগ্রা পৌছালাম।একটা অটো রিসার্ভ করলাম(300/2=150রিুপি)তাজমহল এবং আগ্রা ফোর্ট ঘুরার জন্যে।তাজমহল এন্ট্রি ফরেইনারদের 500 রুপি থাকলেও কম খরচে ভিতরে ঢোকার দালালের অভাব নেই।দালাল ধরে 150রুপি দিয়ে ভেতরে ঢুকলাম।আর রেড ফোর্ট এর প্রবেশ 50রুপি।খাবার খেয়ে(120রুপি) বিকাল 5 টায় কলকাতার উদ্দেশ্যে ট্রেনে উঠি।ট্রেনেই রাতের খাবার খেয়ে নেই(100রুপি)।
৭ম দিন ঃ সকাল10 টায় এসে পৌছালাম শিয়ালদাহ।ফিরে এলাম আবার মার্কস্ট্রিট(100/2=50রুপি)হোটেল ইরাম এ রুম নিলাম(1000/2=500রুপি এসি)নাস্তা করে(50রুপি) শপিং এ বের হলাম।
দুপুর+রাতের খাবার(200রুপি)

খরচ (৬+৭ম দিন) :2865*1.2=3438টাকা

৮ম দিন :সকালের নাস্তা(50রুপি)করে চলে আসলাম শিয়ালদাহ(80/2=40রুপি)।লোকাল ট্রেনে করে বনগাঁ(20রুপি)।অটোতে করে(30রুপি)বর্ডারে এসে বর্ডার পার হয়ে চলে আসলাম আমার দেশে।।।দপুরের খাবার খেয়ে(100টাকা)
সোহাগ(550টাকা নন এসি)বাসে করে চলে আসলাম ঢাকা।
খরচ:(140*1.20=168+100+550=818টাকা)

মোট খরচ :540+3680+3366+2160+654+3438+818=14656 tk
অলিখিত হিসাব+14656=15000tk

মানালি

আমি আগেই বলেছিলাম আমাদের ট্যুর প্লান ছিল (ঢাকা-কোলকাতা – কালকা- শিমলা- মানালি- দিল্লী- আগ্রা- কোলকাতা-ঢাকা)। আমাদের এই ট্যুর এর মেম্বার ছিলাম দুই জন। আমি (রিয়াদ আরেফিন ) এবং আমার বন্ধু আবদুল্লাহ আল মাসুম ( বাবু)। আমার এই ট্যুর প্লান টা বলার আগে কিছু কথা আছে… যা কিনা সবার কাছেই পরবর্তীতে প্রশ্ন হয়ে দাঁড়ায়। তাই আমি চিন্তা করলাম এই প্রশ্নের উত্তর গুলো আগে আপনাদের দিবো।
১। মানালি যাওয়ার উপযুক্ত সময় কখন?
২। মানালি যাওয়ার উপযুক্ত রুট কোনটা ?
৩। ইন্ডিয়ার বিভিন্ন স্থান এর খরচ কত হবে?
৪। টয় ট্রেন এর টুকিটাকি।
৫। ইন্ডিয়ান রেল এর টুকিটাকি।
৬। ইন্ডিয়া র বিভিন্ন স্থান এর পরিবহন সমাচার।
৭। ইন্ডিয়ান বিভিন্ন স্থান এর হোটেল সমাচার।
৮। ইন্ডিয়া র বিভিন্ন স্থান এ খাবার সমাচার।
৯। রথাঙ্গ পাস সম্পর্কে কিছু কথা।
১০। দিল্লি ও আগ্রা নিয়ে কিছু কথা।
এবার উত্তরে আসা যাক। আসলে ইন্ডিয়া সম্পর্কে আমি যে সব জানি তা কিন্তু না। ইন্ডিয়া তে যাওয়ার পর যতটুকু ঘুরিছি তার অভিজ্ঞতার উপর ভিত্তি করেই এই সব প্রস্নের উত্তর গুল দিব।

১। মানালি যাওয়ার উপযুক্ত সময় কখন?
উত্তর ঃ আসলে মানালি সব সময় সুন্দর। এই মানালিকে বলা হয় দেবভুমি। মানালির সুন্দরয অসাধারন। সেই প্রসঙ্গে বলতে গেলে মানালি যাওয়ার উপযুক্ত সময় বলে কিছুই নেই, সবসময় সুন্দর সব সময় যাওয়া যায়। কিন্তু সিজান ভেদে মানালির প্রকৃতির পরিবর্তন হয়। আপনি কোন প্রকৃতিতে মানালি কে দেখবেন সেই টাই হবে মানালি কে দেখার উপযুক্ত সময়।
১। জানুয়ারি- ফেব্রুয়ারি- মার্চ ঃ এই সময় টাতে আপনি মানালি তে শুধু বরফ পাবেন। যেই দিকেই তাকাবেন শুধু বরফ। যারা বরফ দেখতে ভালোবাসেন, বরফ নিয়ে খেলতে ভালোবাসেন তাদেরকে বলবো এই মাস গুলতে ট্যুর প্লান করুন। আপনাদের জন্য এই টাই উপযুক্ত সময়।
২। এপ্রিল-মে-জুন ঃ এই সময় টাকে মানালির বসন্ত বলা হয়। প্রকৃতি সবুজ রুপ ধারন করে। দূরে পাহাড়ে বরফ দেখা যায়। সলাং ভ্যালি, রথাঙ্গ পাস বরফ পাবেন। মানালি শহর টা ঘুরতে পারবেন। পায়ে হেটে হিল ট্র্যাকিং করতে পারবেন। প্রকৃতির সুন্দরয দেখার জন্য সব থেকে উপযুক্ত সময়। এই সময় টাতে আপেল গাছে অ্যাপেল একদম ছোট থাকে।
৩। জুলাই- অগাস্ট – সেপ্টেম্বর ঃ এই সময় টায় মানালি তার পুরো যৌবন ফিরে পায়। চারদিকে শুধু পাইন বনের সবুজ সমারহ। বিপাসা হ্রদ তার পূর্ণ রুপ ফিরে পায়। অ্যাপেল , চেরি ফল গুল বড় হবে। পাহাড়ের গায়ে সবুজ প্রকৃতি দেখতে এই সময় টাই উপযুক্ত। আর এই সময় গেলে বরফের দেখা পাবেন না।
৪। অক্টোবর – নভেম্বর – ডিসেম্বর ঃ এই সময় টাতে শীত ের আগমন ঘটবে। নভেম্বর, ডিসেম্বর মাসে গেলে, কপাল ভাল থাকলে স্নও ফাল ও পেয়ে যেতে পারেন। এই সময় টাও মানালি ঘুরার জন্য উপযুক্ত একটা সময়।
এখন এই ৪ টা সিজান উপর ভিত্তি করে যার যেই সময় টা ভালো লাগে সে সেই সময় টাকে উপযুক্ত করে ঘুরে আস্তে পারেন মানালি।

২। মানালি যাওয়ার উপযুক্ত রুট কোনটা ?
উত্তরঃ মানালি যাওয়ার জন্য অনেক গুল রুট আছে। আমি একে একে বলছি যার যেই রুট পছন্দ হয় সে সেই রুট এই প্লান করে ফেলুন।
# কলকাতা থেকে বাই ট্রেন কালকা, কালকা থেকে বাই ট্রয় ট্রেন/ ট্যাক্সি তে সিমলা, সিমলা থেকে বাই বাস/ ট্যাক্সি মানালি, মানালি থেকে বাই বাস দিল্লি, দিল্লি থেকে আগ্রা, আগ্রা থেকে বাই ট্রেন কলকাতা। ( যারা হিল রাইড বেশি পছন্দ করেন, যাদের হিল সিকন্যাস কম তাদের জন্য এই রুট টা উপযুক্ত)
# কলকাতা থেকে বাই ট্রেন আগ্রা, আগ্রা থেকে বাই বাস দিল্লি, দিল্লি থেকে বাই বাস মানালি, মানালি থেকে বাই বাস সিমলা। সিমলা থেকে বাই ট্রয় ট্রেন/ট্যাক্সি তে কালকা , কালকা থেকে বাই ট্রেন এ কলকাতা। ( এই প্লান এও যেতে পারেন )
# কলকাতা থেকে বাই ট্রেন দিল্লি, দিল্লি থেকে বাই বাস মানালি, মানালি থেকে বাই বাস দিল্লি, দিল্লি ,আগ্রা ঘুরে বাই ট্রেন কলকাতা। ( এই প্লান টা যাদের হিল সিকন্যাস আছে, অথবা ট্যুর আ সাথে বেবি আছে, অথবা ট্যুর মেয়েদের সংখ্যা বেশি তারা প্লান টা বেছে নিতে পারেন)।
# কলকাতা থেকে বাই এয়ার দিল্লি / কুল্লু (কুল্লু থেকে মানালি মাত্র ৫০ কিলো ) দিল্লি / কুল্লু থেকে বাই বাস মানালি। মানালি থেকে বাই বাস দিল্লি।দিল্লি ,আগ্রা ঘুরে বাই এয়ার এ কলকাতা। ( যারা এয়ার এ ঘুরবেন তাদের জন্য এই প্ল্যান টা উপযুক্ত)
উপরের প্ল্যান গুলোর ভিতর যেই রুট প্ল্যান টা আপনাদের ভালো লাগবে সেই রুটেই আপনাদের ট্যুর প্ল্যান সাজিয়ে ফেলুন।

৩। ইন্ডিয়ার বিভিন্ন স্থান এর খরচ কত হবে?
উত্তরঃ আসলে আমরা খরচ বলতে থাকা, খাওয়া, ঘুরাঘুরি কেই বুঝাই। শুধু মাত্র কলকাতা বাদে ইন্ডিয়া র সব শহরে খরচ তুলনা মুলক কম হবে। ট্যুর এর প্ল্যান এর উপর নির্ভর করে আসলে খরচ কত হবে। শুধু মাত্র হোটেল এবং পরিবহন ছাড়া অন্ন সব কিছুর খরচ প্ল্যান করে কারা যায়। যত দিন এর ট্যুর হবে তত দিনের খাবারের একটা এভারেজ হিসাব বের করা যায়। কত দিন ঘুরবো কথায় কথায় যাবো তার সঠিক প্ল্যান করা থাকলে পরিবহন হিসাব টাও সহজেই বের করা যায়। শুধু মাত্র (মানালি, সিমলা) হোটেল টা সিজান ভেদে ভাড়ার পরিবর্তন হয়। সেই টা হলেও খুব একটা পরিবর্তন হয় না। আর (মানালি,শিমলা) শহরে আশেপাশে ঘুরার যেই পরিবহন খরচ আছে, অর্থাৎ ট্যাক্সি/ জীপ ভাড়া সিজন ভেদে কমবেশি হয়। তাই বলবো সঠিক প্ল্যান ঠিক করুন এবার খরচ টা প্ল্যান অনুযায়ী বসিয়ে নিন দেখবেন ইন্ডিয়া ট্যুর এর মোট খরচ রেডি হয়ে গেছে।
৪। টয় ট্রেন এর টুকিটাকি।
উত্তরঃ যারা কিনা কলকাতা থেকে কালকা হয়ে সিমলা হয়ে মানালি যাবেন তাদের জন্য এই লেখাটুকু। কলকাতা থেকে কালকা যাওয়ার একমাত্র সরাসরি ট্রেন হল কালকা মেইল। যদিও বলা হয় কালকা মেইল সুপার ফাস্ট, কিন্তু কালকা পৌছাতে ৪ থেকে ৫ ঘণ্টা লেট হয়। কালকা স্টেশন থেকে সিমলার উদ্দেশে সকাল ৬ টা থেকে ট্রয় ট্রেন ছেরে যায়। প্রতি ৩০ মিনিট / ১ ঘণ্টা পরপর ট্রেন ছারে। লাস্ট ট্রেন ১ টায় ছেরে যায়। এখনে অনেকেই বলে থাকে রিজার্ভেশন করা থাকলে ট্রয় ট্রেন এর সিট পাওয়া যায়। কিন্তু আমি বলবো তাদের সব ট্রেন রিজার্ভেশন সিস্টেম থাকে না। প্রতি ১ ঘণ্টা পর পর যেই ট্রেন গুল ছারে সেইগুল তে কোন রিজার্ভেশন থাকে না। যার যেই খানে ইচ্ছা বসতে পারে। র টিকেট এর দাম মাত্র ৫০ রুপি। পাহাড়ের বুক চিরে ১০২ টা টানেল ভেদ করে মেঘের সাথে খেলা করে অসাধারন এক ভ্রমন শেষে করে সিমলা পৌছতে সময় লাগবে ৫ ঘণ্টার মত। তাই আমি বলবো রিজার্ভেশন এর ঝামেলায় যাওয়ার কোন প্রয়োজন নেই অনায়েসে ট্রয় ট্রেন পেয়ে যাবেন।
৫। ইন্ডিয়ান রেল এর টুকিটাকি।
উত্তরঃ ইন্ডিয়ান রেল এর টিকেট পাওয়াটা আকাশের চাঁদ পাওয়ার মত। যারা ফাস্ট টাইম ইন্ডিয়া র কলকাতার বাহিরে যাবেন তাদের জন্য অনেক কঠিন কাজ। অনেকেই চেষ্টা করে দেশে থেকেই টিকেট কনফার্ম করার জন্য বাই এজেন্সি ততকাল কোঠায়, নেট ফেয়ার থেকে বেশি টাকা দিয়ে। যদি কোন পরিচিত এজেন্সি থাকে তবে টিকেট করে নিতে পারেন। অন্যথায় আমি বলবো কলকাতায় হাওরায় ফেয়ারলি প্লেস থেকে ফরেন কোঠায় টিকেট কাটুন। ( হাওড়া গামি যে কোন বাস হেল্পার কে বললেই ফেয়ারলি প্লেস চিনিয়ে দেবে)। সকাল ৮ টার ভিতর ফেয়ারলি প্লেস এ থাকতে পারলে, ভাগ্য ভালো থাকলে অই দিন এর ও টিকেট পেয়ে যেতে পারেন। না হয় ত সর্বচচ ২ দিন কলকাতা থাকতে হতে পারে। আর দিল্লি থেকে অনায়েসে টিকেট পাওয়া যায়। নয়া দিল্লি স্টেশন এর ২য় তালায় ইন্টারন্যাশনাল কোঠায় টিকেট কাটা যায়। সেখনে যে কোন দিন এর টিকেট পেয়ে যেতে পারবেন। তারা অনেক হেল্প ফুল্ল।

৬। ইন্ডিয়া র বিভিন্ন স্থান এর পরিবহন সমাচার।
উত্তরঃ পরিবহন খরচ ট্যুর খরচ এর সব থেকে বড় একটি অংশ। কলকাতা থেকেই শুরু করি, কলকাতা শহর ও আশেপাশে ঘুরার জন্য বাস টাই বেস্ট। মাঝে মাঝে শেয়ার আ সিনজি ব্যাবহার করতে পারেন। মেট্রো রেল ও ব্যাবহার করতে পারেন। এবার আসুন সিমলা, মানালি র পরিবহন খরচ, সিমলা র আশেপাশে ঘুরার জন্য অনায়েসে ট্যাক্সি পেয়ে যাবেন সে সব স্পোর্ট ২০০০ থেকে ২৫০০ রুপির ভিতরে ঘুরে দেখাবে। আই টা সিজন ভেদে কমবেশি হয়ে থাকে। সিমলা থেকে মানালি বাই বাস HRTC (A/C) ৬৫০ রুপি। মানালির আশেপাশে ঘুরার জন্য ট্যাক্সি/জীপ/মাহেন্দ্রা পাবেন। আমি বলবো মানালি শহর এবং আর আশেপাশে পায়েহেটে ঘুরুন অনেক মজার। মানালির শহরের আশেপাশের স্পোর্ট দেখতে ১০০০ থেকে ১৫০০ রুপির ভিতর ট্যাক্সি পেয়ে যাবেন। সলাং ভ্যালি তে যেতে ২০০০ থেকে ২৫০০ পরবে সিজন ভেদে কম বেশি হয়ে থাকে। রথাঙ্গ পাস ২০০০থেকে ৮০০০০ পর্যন্ত হতে পারে সিজানভেদে। (ট্যাক্সি/জিপ)
মানালি থেকে দিল্লি বাই বাস ( A/C VOLVO) ১২০০ থেকে ১৩০০ রুপি পরবে। আর দিল্লি শহর ঘুরলে সিটি ট্যুর প্যাকেজ এ ঘুরতে পারেন। নিজেরাও বাস, সিনজি, ট্যাক্সি, মেট্রো তে করে দিল্লি ঘুরতে পারেন। আর আগ্রা হল সবথেকে খারাপ জায়গা ইন্ডিয়া তে, আগ্রা তে অনেক দালাল দের উপদ্রপ। আগ্রা তে রাতে না থাকাই ভালো ।
৭। ইন্ডিয়ান বিভিন্ন স্থান এর হোটেল সমাচার।
উত্তরঃ ইন্ডিয়া র কলকাতা বাদে সব ট্যুরইস্ট প্লেস এর হোটেল ভাড়া তুলনা মুলক কম। দালাল দের একটা ঝামেলা সব যায়গাতেই থাকবে। শতভাগ চেষ্টা করবেন এরিয়ে চলার জন্য। এতে কিছু টাকা হলেও বাচবে। আপনি আপনার ট্যুর এর প্ল্যান অনুযায়ী হোটেল নির্বাচন করুন। মানালি তে থাকার জন্য সব থেকে সুন্দর যায়গা হল ওল্ড মানালি। ওখানে ১০০০ থেকে ১৫০০ রুপির ভিতর অনেক বড় এবং সুন্দর রুম পাবেন। আর নিউ মানালি ( মল রোড) প্রচণ্ড গিঞ্জি মানুষ বেশি ভারাও বেশি। আর এলোয় ( নিউ মানালি) মল রোড থেকে একটু দূরেই অই খানের হোটেল গুলোর ভাড়া তুলনা মুলক কম। এবার আসুন দিল্লি তে দিল্লি তে থাকার মত অনেক যায়গা আছে। তবে আপনি যদি নিউ দিল্লি স্টেশন এর পাসে পাহাড় গঞ্জ এ থাকতে পারেন। মাইন রোড থেকে একটু ভিতরেই ১০০০ রুপিতে এ/সি রুম পাবেন। এ ছারাও আপনি জামা মসজিদ এর আশেপাশে , রাজীব চওক এর আসে পাসে থাকতে পারেন। ১০০০ থেকে ১৫০০ ভিতর পেয়ে যাবেন। এবার আসুন আগ্রা, আমরা যদিও আগ্রায় রাতে ছিলাম না। আর আগ্রা খুব একটা নিরাপদ যায়গা না। এখানে দালালদের উপদ্রপ খুব বেশি। আপনি চাইলে তাজমহলের আশেপাশে কম খরচে থাকতে পারবেন। এবার আসুন কলকাতায়, নিউ মার্কেট অনেক বেস্ত একটা যায়গা। বাংলাদেশী রা নিউ মার্কেট এর মির্জা গালিব স্ট্রিট, মার্ক কুইক স্ট্রিট, পার্ক স্ট্রিট এর আসেপাসেই থাকেন বাংলাদেশী দের চাপ বেশী থাকলে হোটেল ভাড়া বেড়ে যায় শেয়ার বাজারের মত। এ/সি রুম আর জন্য আপনাকে ২০০০ থেকে ৩০০০ রুপি বাজেট রাখতেই হবে।
৮। ইন্ডিয়া র বিভিন্ন স্থান এ খাবার সমাচার।
উত্তরঃ আমাদের বাঙ্গালী মুসলিমদের জন্য ইন্ডিয়া তে ভালো খাবার পাওয়া টা একটু কষ্ট কর। কলকাতায় আপনি ভালো মানে খাবার পাবেন। খাবার খেয়ে ভালো লাগবে। কিছু হোটেল আর নাম দিয়ে দিলাম হোটেল রাঁধুনি, হোটেল প্রিন্স এই হোটেল গুলোর খাবার অনেক ভালো। যখনি আপনি কলকাতা ছারবেন তখন থেকেই ভালো রুচি সম্মত খাবারের কষ্ট শুরু হয়ে যাবে। ট্রেন এ খাবারের অনেক কষ্ট আণ্ডা বিরানি আর ভেজ বিরানি ছাড়া ট্রেন এ খাবার কিছুই পাওয়া যায় না। ট্রেন এর ওই বিরানির টেস্ট খুব একটা ভালো নয়। আমি বলবো অবশ্যই ট্রেন এ পর্যাপ্ত খাবার নিয়ে উঠার জন্য। সিমলায় থাকলে সিমলা মল রোড এর আশেপাশে বাঙ্গালী খবার হোটেল আছে। এবার আসুন মানালিতে, মল রোড এর আসে পাসে অনেক হোটেল আছে ইন্ডিয়ান খাবার পাওয়া যায়। তবে মানালিতে মুসলিম হোটেল আছে একটাই,হোটেল এর নাম “করিম খানা খাজানা” হোটেল এর মালিক হাফেজ তারিক, খুব ভালো একজন মানুষ, সে বাংলা বুঝে এবং বাংলা বলতেও পারে। উনার বাসা কাশ্মীর। বাংলাদেশ থেকে যারা মানালি তে যায় তাদের কে সে অনেক হেল্প করে। তার নাম্বার আমি দিয়ে দিতেছি (৯৮১৬৬৯৩৭২২, ৯৮০৫১৫৫৪৮৯)।
দিল্লি তে প্রচুর মুসলিম হোটেল পাবেন, কিন্তু খাবারের মান খুব বেশি ভালো হবে না। আগ্রাতেও একি রকম। প্রচুর খাবারের হোটেল আছে। ইন্ডিয়ান রা একটা জিনিস খুব বেশি খায় তা হল চাটনি। যা আমরা একবার খেলে মুখ এক মিনিট বন্ধ হয়ে থাকে। আর কেক, মিষ্টি, ফাস্ট ফুড, চিপ্স, জুস ইত্যাদি আরও অনেক কিছু পাবেন কম টাকায়। ইন্ডিয়া র যেখানেই যাবেন ভারি খাবার খেলে আপনার ২০০ থেকে ২৫০ রুপি পরবে। ( বিরিয়ানি, সাদা ভাত)।
৯। রথাঙ্গ পাস সম্পর্কে কিছু কথা।
উত্তরঃ মানালি থেকে রথাঙ্গ পাস এর দূরত্ব ৫২ কি মি, মানালির সব থেকে সুন্দর যায়গা হল এই রথাঙ্গ পাস। সৃষ্টি কর্তা কতটা সুন্দর্য দিয়েছে এই রথাঙ্গ পাস কে তা না দেখলে বিশ্বাস করা যায় না। যারা মানালি যায় তাদের অনেকই রথাঙ্গ পাস যেতে পারে না। এই টা আসলে ভাগ্যের বেপার। সবার ভাগ্যে রথাঙ্গ পাস থাকে না। তবে পারফেক্ট টাইম এ গেলে রথাঙ্গ পাস এর আসল সুন্দরয দেখা যায়। এপ্রিল , মে, জুন(প্রথমে) আপনি রথাঙ্গ পাস এর রোড পারমিশন পাবেন। সেই সময় আপনি রথাঙ্গ পাস এ পাবেন প্রচুর বরফ, আমি আমার প্রথম লেখাতেই সেই ভিডিও টা দিয়েছিলাম। যদিও পরিবহন খরচ টা একটু বেশি হবে। আপনি যেই দিন মানালি তে যাবেন সেই দিন থেকেই রথাঙ্গ পাস যাওয়ার জন্য চেষ্টা করতে থাকবেন। এজেন্সি র মাধ্যমে গেলে টাকাটা একটু বেশি লাগবে কিন্তু রথাঙ্গ পাস যেতে পারবেন সেই টা ১০০% নিশ্চিত। আমাদের খরচ হয়েছিল জন প্রতি ২০০০ রুপি। ড্রেস ২৫০ রুপি । আমরা দুইজন গিয়েছিলাম শেয়ারে। আমাদের জীপে আরও ৬ জন ছিল। রথাঙ্গ পাস এ প্রতিদিন ১০০০ গাড়ীর পারমিশন দেয় তার ভিতর ৬০০ পেট্রোল র ৪০০ ডিজেল। আপনি মানালির বিভিন্ন ট্যাক্সি ড্রাইভার দের ও হেল্প নিতে পারেন। আর কারও যদি ড্রাইভিং লাইসেন্স থাকে তবে সে ইচ্ছা করলে মোটর সাইকেল এর পারমিশন নিয়ে রথাঙ্গ পাস যেতে পারে।
১০। দিল্লি ও আগ্রা নিয়ে কিছু কথা।
উত্তরঃ- দিল্লি দুই দিন ই যথেষ্ট, বড়জোর ৩ দিন থাকতে পারেন সব ঘুরতে পারবেন। নিউ দিল্লি স্টেশন এর পাশেই পাহাড়গঞ্জ এলাকায় থাকতে পারেন হোটেল ভারাও কম সুবিধাও বেশি। আমি সবাইকে যা বলবো তা হল, প্রতি টা হোটেল এই ট্যুরিস্ট কোচ আছে এ/সি সার্ভিস, এক এক জনের কাছে এক এক টা প্রাইজ রাখে। ৪০০ থেকে ৫০০ রুপি র ভিতর পেলে ওদের ট্রিপ টা নিতে পারেন, সব স্পোর্ট ঘুরলেন, ওদের প্রবলেম একটাই টাইম লিমিট কম। আপনার যেই স্পোর্ট বেশি ভালো লাগবে সেই স্পোর্ট গুল পরের দিন আবার গেলেন বাস এ ( বাস,মেট্রো) পাবলিক সার্ভিস খরচ খুব ই কম। তবে আমরা দিল্লি পাবলিক সার্ভিস এই ঘুরছি। আর আগ্রা থাকার দরকার নাই, একদিন ই আগ্রার জন্য যথেষ্ট। আগ্রা খুব খারাপ যায়গা তাই বলবো সাবধানে থাকবেন। ওদের দালাল গুল খুবই খারাপ। অবশ্যই দালাল এরিয়ে চলবেন দরকার হলে পুলিশ এর সাহায্য নিবেন।

আজ এই পর্যন্তই, আমার ৩য় লিখাতে আমাদের মুল ট্যুর এবং কিছু মজার সৃতি আপনাদের কে বলবো।

Post Copied from:Riad Arefin‎>Travelers of Bangladesh (ToB)

যারা শুধু শপিং এর উদ্দ্যেশে ভারত যেতে চান

(সবচেয়ে আরামদায়,দ্রুত ও কাস্টমস ঝামেলা বিহীন)

# রুট প্ল্যান= ঢাকা টু কলকাতা (বাই ট্রেন ১০ ঘন্টা)- কলকাতা টু দিল্লী (বাই ট্রেন ১৮ ঘন্টা)- দিল্লী টু ঢাকা (বাই এয়ার ২ ঘন্টা)

# অভ্যন্তরীণ যাতায়াত= ১) মেট্রো ট্রেন (এসি+খরচ কম)
২) উবার, উলা ট্যাক্সি (এসি+নিরাপদ+খরচ সীমিত+ চাহিবা মাত্রই এসে যাবে)

# শপিং= কলকাতায়- বড় বাজার ও নিউ মার্কেট। দিল্লীতে- কেরলবাগ মার্কেট, পালিকা বাজার, সদর বাজার, চাঁদনি চক।

Post Copied From:Salman Bhuiyan‎>Travelers of Bangladesh (ToB

গুলমার্গ

স্থান, তারিখঃ গুলমার্গ, কাশ্মীর, ২০/১১/২০১৭
কিভাবে যাবেনঃ ঢাকা-কলকাতা–দিল্লী-শ্রীনগর (বাই এয়ার), এরপর গাড়ীতে শ্রীনগর-গুলমার্গ। যাওয়ার আরো অনেক পন্থা আছে, তবে আমার সাথে ছোট বাচ্চা থাকায় বেশী সময় নিয়ে ট্রাভেলের রিস্ক নেয়া সম্ভব ছিল না।

Post Copied From:Taufikur Rahman‎>Travelers of Bangladesh (ToB)

পিংকসিটি জয়পুর

ইন্ডিয়ার রাজস্থান প্রদেশের রাজধানী এবং সুসজ্জিত রঙ্গিন এই শহর স্থাপিত হয় ১৭৭২ সালে মহারাজা জয়সিং-2 এর সময়। ১৮৭৬ সালে Prince of Wales(Edward VII) কে স্বাগত জানানোর জন্য তৎকালিন রাজা Sawai Ram Singh পুরো শহরকে গোলাপি রঙ্গে রাঙ্গিয়ে তোলে। তাই একে পিংকসিটিও বলে।

সুন্দর এই শহর দেখার লোভ সামলাতে না পেরে তাই এই গরমের মধ্যেই বেরিয়ে পরেছিলাম। চার জনের আমাদের এই যাত্রা শুরু করি ঢাকা থেকে। প্রথমে ঢাকা থেকে বাসে কলকাতা, কলকাতা থেকে দূরন্ত এক্সপ্রেস ট্রেনে নয়াদিল্লী এবং নয়াদিল্লীতে ট্রাভেল এজেন্সী থেকে ট্যাক্সি নিয়ে সোজা জয়পুর। উত্তপ্ত শুষ্ক গরম হওয়া আর রোদে পুড়ে যাওয়া গাছ আমাদের স্বাগত জানায়।

জয়পুরে দেখার মত অনেক জায়গা আছে যেমন Amer Fort/Amber Fort, Jaigarh Fort, Nahargarh Fort, Jal Mahal, Hawa Mahal, City Palace, Albert Hall Museum, Raj Mandir Cinema Hall, Jantar-mantar ও বেশ কিছু পাথর খোদাই করা মন্দির। এখানকার Fort গুলো এতো সুন্দর যে প্রতিটির উপরই অনেক কিছু বলা যায়। তবে Amer Fort/Amber Fort এর মধ্যে অন্যতম। এখানে এসে রাজাদের মত হাতির পিঠে করে Fortএ ঘুরে বেড়ানো এবং উটের পিঠে চড়ার সাধটাও পুরন হয়ে গেছে।

পরিবহনঃ দর্শনীয় স্থানগুলো একটু দূরে দূরে হওয়ার জন্য গাড়ী রিজার্ভ করে নিয়েছিলাম। এতে সময় এবং খরচ দুটিই বাঁচে এবং নিরাপত্তাও ছিল বিশেষ করে পাহাড়ের উপর Fort এ যাওয়ার সময়। স্থানীয় অটোতে করেও যাওয়া যাবে।

খরচঃ দুই দিনের ট্রিপে রাতে হোটেলে থেকে খাবার সহ আমাদের চার জনের জনপ্রতি খরচ 3200 রুপি (দিল্লী–জয়পুর-দিল্লী)। প্রতিটি স্থানে আলাদা টিকিট কেটে ঢুকতে হয়। ফরেইনার হিসেবে আমাদের টিকিট মুল্য বেশী গুনতে হয়েছে।

পরিশেষে স্থানীয় বাজার থেকে কেনাকাটা সেরে ফেরার পথে LASSIWALA® এর লস্যির স্বাদ এখনো জিভে লেগে আছে।

Post Copied From:Peejush Kar‎>Travelers of Bangladesh (ToB)

ঢাকা-কলকাতা-দিল্লী-মানালী-সিমলা-আগ্রা ট্যুর সমন্ধে আমার অভিজ্ঞতা

আমার মত যারা প্রথম বিদেশ ভ্রমন করার চিন্তা করছেন তারা বিশেষ করে অনেক দুশ্চিন্তায় থাকেন বাজেট কত লাগবে, ট্যুর প্লান কি করব, নিরাপত্তার ইস্যু, কোথায় থেকে কিভাবে কোথায় যাব, সব চিনব তো? আর যদি সাথে ফ্যামিলি নিয়ে যান তাহলে তো কথাই নেই। আমি আমার অয়াইফ নিয়ে উক্ত রুটে ভ্রমন করেছি। এবং আল্লাহর রহমতে বেশ ভালভাবেই সম্পন্ন করে গত ৩১ শে অক্টোবর দেশে ফিরেছি। যাবার আগে কত যে চিন্তা ভাবনা করেছি তার ইয়ত্তা নেই। এজেন্ট এর মাধ্যমে যাব কিনা, একা এত সব কিছু ম্যানেজ করতে পারব কিনা, সাথে মেয়ে মানুষ থাকবে আবার ইন্ডিয়ার এখন যা অবস্থা দিল্লী তো ধর্ষনের মাপকাঠিতে বেশ উপরেই আছে। বলে রাখা ভাল, আমার ফেসবুক একাউন্ট ছিল না, টিওবি সমন্ধে একজনের কাছে শুনার পর একাউন্ট ওপেন করি এবং টিওবিতে যুক্ত হই। তারপর সবই ইতিহাস। এই ছেলে একাই পুরো ট্যুরের প্লান করে বউকে নিয়ে কোনো এজেন্ট ছাড়াই দিব্যি সফল ট্যুরের বাস্তবায়ন করতে পেরেছে।
আমার পোষ্টটি বিশেষ করে তাদের কাজে আসবে যারা খরচের চিন্তা না করে ফ্যামিলি নিয়ে সুন্দর একটা রিলাক্স ট্যুর দিতে চান।
প্রথমেই আসি রুট প্লান সমন্ধে। দেখুন যে রুটের কথা আমি বলছি সেই রুটে অনেক ভাবে ভ্রমন করা যেতে পারে। সম্ভাব্য প্লান গুলো এই রকম হতে পারে;
 ঢাকা থেকে সরাসরি দিল্লী রিটার্ন এয়ার তারপর দিল্লী থেকে সিমলা-মানালী-দিল্লী করতে পারেন আবার দিল্লী-মানালী-সিমলা-দিল্লী করতে পারেন।সেক্ষেত্রে কোলকাতা বাদ পরবে।
 ঢাকা-কোলকাতা বাসে যেয়ে কোলকাতা-দিল্লী রাজধানী ট্রেন তারপর দিল্লী থেকে সিমলা-মানালী-দিল্লী করতে পারেন আবার দিল্লী-মানালী-সিমলা-দিল্লী করতে পারেন।
 ঢাকা-কোলকাতা মৈত্রী ট্রেনে গিয়ে কোলকাতা থেকে দিল্লী রাজধানী ট্রেন তারপর দিল্লী থেকে সিমলা-মানালী-দিল্লী করতে পারেন আবার দিল্লী-মানালী-সিমলা-দিল্লী করতে পারেন।
 ঢাকা-কোলকাতা মৈত্রী ট্রেনে গিয়ে কোলকাতা থেকে কালকা ট্রেনে যেয়ে, কালকা থেকে টয় ট্রেনে সিমলা যাবেন। এখানে উল্লেখ্য টয় ট্রেন কিন্তু ওয়ার্ল্ড হেরিটেজের একটি। তারপর সিমলা থেকে মানালী বাসেও যাওয়া যায় ভাড়া ৮০০ রুপি আবার ট্যাক্সি রিজার্ভ নিতে পারেন ভাড়া ২৬০০ থেকে ৫৫০০ রুপি পরবে।
আমার রুট প্লান টা বলে নিই।আমার বউ কখনো ট্রেনে উঠে নাই তাই আমি একটা ট্রেন অপ্সন রাখছি। ঢাকা-কোলকাতা মৈত্রী ট্রেন, কোলকাতা-দিল্লী রিটার্ন বাই এয়ার ইন্ডিগো, দিল্লী-মানালী এসি ভলভো বাস HRTC । মানালী-সিমলা ট্যক্সি রিজার্ভ, সিমলা-দিল্লী এসি ভলভো বাস HRTC। দিল্লী লোকাল সাইট ট্যাক্সি এবং ট্যূরিস্ট বাস, আগ্রা ফোর্ট, তাজমহল ট্যূরিস্ট বাস, কোলকাতা-ঢাকা ইউএস বাংলা এয়ারলাইন্স।

টিকেট সংগ্রহঃ পাসপোর্টের অরিজিনাল কপি নিয়ে কমলাপুর স্টেশনে যেতে হবে অন্য কারো কাছে পাঠিয়ে দিলেও হয় সমস্যা নাই কিন্তু টিকেট কাটতে পাসপোর্টের অরিজিনাল কপি দরকার এটাই হল মুলকথা। তো মৈত্রীর টিকেট কাটলাম কমলাপুর থেকে ১৬৩৩ টাকা পার টিকেট, তারপর ইন্ডিগো এয়ারের টিকেট কাটলাম গুলশান নন্দোস এর উপরে ইন্ডিগোর এজেন্ট এর কাছ থেকে রাউন্ড ট্রিপ কোলকাতা-দিল্লী ১১৯০০ টাকা পার পারসন।

প্রথম দিন
অক্টোবরের ২০ তারিখ সকাল সকাল যাত্রা শুরু করলাম। ক্যান্টনমেন্ট স্টেশনে পৌঁছলাম সকাল ৭ টার দিকে। অনেক লোকের ভীড়, লম্বা লাইন ধরে ভীতরে ঢুকলাম। নির্ধারিত আসনে বসে পড়লাম। আমার ওয়াইফ দেখলাম বেশ অন্য রকম অনুভুতিতে আবিষ্ট। প্রথম দেশের বাইরে যাচ্ছে হোক সেটা ভারত। ট্রেন ছাড়ল সকাল ৮:১০ এ। প্রায় আধা ঘন্টা পর নামল ঝুম বৃষ্টি। চারিদিকে অন্ধকারাচ্ছন্ন আর আমি হেমন্ত দার গান শুনছি;

“এই আছি এই নেই আমি যেন পাখী মেলি পাখনা
সীমানার সীমা ছেড়ে যাই দূর প্রান্তে
নীড় একা পরে থাক থাকনা”

ট্রেনের মাঝে কিছু নাস্তা খেলাম, চিকেনের কোনো আইটেম হবে চিমসায়ে কাঠ হয়ে গেছে। একজন এসে ইমিগ্রেশনের জন্য আরোহন কার্ড দিয়ে গেল, ওটা পুরন করে ফেললাম।ট্রেনের খাবার সরবরাহকারি এসে দুপুরের খাবারে অর্ডার নিয়ে গেল ১৫০ টাকা এক মিল। আমরা দুজনে একটার জন্য বললাম। দুপুর ২:৩০ টায় পৌঁছলাম দর্শনা স্টেশনে, তাড়াহুড়ো করে নেমে পড়লাম। বউকে নিয়ে যেতে যেতে তবুও লাইনের মাঝখানে। একজন মহিলা পুলিশ এসে বললেন আমি একাই দুইজনের টা করতে পারব। ইমিগ্রেশনের ফর্মালিটিজ শেষ করে সিটে ফিরে দেখি দুপুরের খাবার দিয়ে গেছে। খাবারের মান বেশ ভাল। দুজনে খেয়ে নিলাম। সবার ইমিগ্রেশন শেষ করে ট্রেন ছাড়ল বিকাল ৪:০০ টায়। ১০ মিনিট পর গেদে পৌঁছলাম। লাগেজ সব নিয়ে দুজন নেমে পড়লাম। আবার লম্বা লাইন। এখানে একটা ফরম পুরন করতে হয়, ডলার টাকা এবং রুপি কোনটা কি পরিমান আছে তার হিসেব দিয়ে। কাস্টমস অফিসারের সহাস্য প্রশ্ন
– কি করেন?
– আমি, প্রাইভেট জব করি।
– আপনাদের দেশের বেশীর ভাগই কি প্রাইভেট জব করে নাকি? যারা যায় তারাই প্রায় এই কথা বলে। পাসপোর্ট এ সিল মেরে বলছে, আমাদের খুশি করবেন না?
– আমি বললাম কিভাবে খুশি করব?
– কিছু দিয়ে যান।
– আমি বললাম রুপি তো করা হয় নাই আমার।
– তিনি বললেন আমরা সব নেই। দিন ১০০ টাকা দিন।
– ১০০ টাকা দিয়ে বের হয়ে গেলাম। এরা অনেক পাওয়ারফুল কিন্তু ছেছড়া!
ট্রেনে গিয়ে বসে পড়লাম। দেখি তখনো অর্ধেকের বেশী মানুষের ইমিগ্রেশন বাকি। কি আর করা নেমে এসে চা খেলাম ১৫ রুপি কাপ আর কিছু টাকা রুপি করে নিলাম। বর্ডার থেকে না ভাংগানোই ভাল। এখানে রেট কম পাওয়া যায়। সবার ইমিগ্রেশন শেষ করে ট্রেন ছাড়তে প্রায় ৬:৩০ বেজে গেল। অবশেষে চিতপুর স্টেশনে আমরা নামলাম রাত সাড়ে আটটায়। স্টেশন থেকে ট্যাক্সি নিয়ে চলে গেলাম মারকুইস স্ট্রিট। হোটেল আফসায় আগে থেকে ফোন করে রেখেছিলাম বাংলাদেশ থেকে কিন্তু গিয়ে দেখি কোনো রুম খালি নেই। অবশেষে হোটেল ভি আই পি কন্টিনেন্টাল এ উঠে পড়লাম ২৫০০ টাকা এক রাতের জন্য। কোলকাতা হোটেল ভাড়া একটু বেশী আর আমি একটু সুচিবাই টাইপের, অপরিচ্ছন্ন হোটেলে থাকতে পারিনা। ফ্রেশ হয়ে কস্তুরি (মারকুইস স্টিটের নামকরা হোটেল) থেকে খেয়ে নিলাম আর নিউ গংগা থেকে ডলার ভাংগিয়ে রুপি করে নিলাম। হোটেল রুমে গিয়ে ঘুম।

দ্বিতীয় দিন ২১ শে অক্টোবর
সকালে উঠে গোসল দিয়ে ফ্রেশ হয়ে নিলাম। আগের রাতে হোটেল ম্যানেজারকে বলে রেখেছিলাম ট্যাক্সি যোগার করে রাখতে, সেই মোতাবেক ট্যাক্সি হাজির। ৮:৫০ এ আমাদের ফ্লাইট দিল্লীর উদ্দেশ্যে। হোটেল থেকে রওনা হলাম ৬:৩০ এ। আধা ঘন্টার মধ্যে বিমানবন্দরে পৌঁছে গেলাম। কোলকাতার রাস্তায় জ্যাম নেই বললেই চলে। ডিজিটাল সিগনাল সিস্টেম ১০ সেকেন্ড করে সিগনাল। চেক ইন করে বোর্ডিং পাস নিয়ে প্লেনে গিয়ে উঠে বসলাম। যথাসময়ে প্লেন ছাড়ল। সকাল এগারোটায় দিল্লী বিমানবন্দর থেকে বের হলাম। ট্যাক্সি নিলাম আইএসবিটি পর্যন্ত। যেতে যেতে ট্যাক্সিওয়ালার সাথে কথা হচ্ছিল কোথায় যাব কি সমাচার। ফাজিল আমাদের নিয়ে গেল এক এজেন্টের কাছে যারা নাকি ভলভো বাস পরিচালনা করে দিল্লী থেকে মানালী পর্যন্ত। আমি আগে থেকেই খোজ খবর নিয়ে গেছি এইচ আর টি সি ভলভো বাসে যাব। তাই ড্রাইভারকে ঝারি দিলাম হালকা, আমাদের সোজা আই এস বিটি নিয়ে চলেন। বাসস্টপেজ এ নামলাম ১২ টার আগেই। ট্যাক্সি ভাড়া ৪০০। খুজে বের করলাম ২৯ নাম্বার কাউন্টার থেকে মানালির টিকেট পাওয়া যাবে। বিশ্রামাগারে বসে একটু বিশ্রাম নিলাম। টিকেট কাটলাম ২ জন মানালীর জন্য ৩০০০ রুপি। বাস বিকাল ৬:৩০ টায়। হালকা একটু নাস্তা সেরে বেরিয়ে পড়লাম। হাতে কিছুটা সময় আছে ইন্ডিয়া গেট আর রেড ফোর্ট টা দেখব বলে ট্যাক্সি ঠিক করলাম ৩৫০ রুপি দিয়ে। ঘুরে এসে যথাসময়ে বাসে উঠে বসলাম। মজার বিষয় হল বাস ছাড়ল ঠিক সময়ে এক মিনিট আগেও না পরেও না। দিল্লী থেকে যতই উত্তরে যাচ্ছি ঠান্ডার প্রকোপ বাড়ছে। রাতে বাস কোনো এক হরিয়ানার ধাবায় দাড়াল কিছু না বুঝে দাম না শুনে অর্ডার দিয়ে ৪৫০ রুপি গেল জলে খাওয়া কিছুই হল না সব ঝাঝালো আইটেম। বাসে উঠে ঘুমিয়ে পড়লাম। সকালে দেখি পাহারের আঁকাবাঁকা পথে বেয়ে বাস ছুটে চলেছে। দুই পাশে আপেলের বাগান দু চারটে আপেল আছে গাছে। আপেলের সিজন শেষের দিকে তাই গাছ অনেকটাই ফাকা।

তৃতীয় দিন ২২ শে অক্টোবর
মানালী মল রোডে পৌঁছলাম সকাল আটটার দিকে। এক নজর চারিদিকে তাকিয়ে দেখে নিলাম প্রকৃতি অপরুপ সৌন্দর্যে সেজেছে এখানে। মলে নেমেই দেখেশুনে হোটেল নিয়ে নিলাম। হোটেল হোয়াইট তারা ভাড়া ১০০০ রুপি প্রতি রাত। এখানে ৪০০ রুপি থেকে হোটেল পাওয়া যায়। ফ্রেশ হয়ে নাস্তা অর্ডার করলাম হোটেলে, ৫ মিনিটের মধ্যে নাস্তা হাজির। আজ বিকেলে আনুমানিক ১ টার দিকে লোকাল সব সাইট ঘুরে দেখব আর পরদিন রোথাং যাব বলে ট্যাক্সি ঠিক করলাম লোকাল সাইটের জন্য ৮০০ আর রোথাং এর জন্য ২৫০০। খেয়ে দিলাম এক ঘুম। ঘুম থেকে উঠে ফ্রেশ হয়ে খেয়ে নিচে নামলাম। ট্যাক্সি হোটেলের নিচেই দাঁড়িয়ে ছিল। বেরিয়ে পড়লাম। হাদিম্বা মন্দির,তারপর পাশেই আরও একটা মন্দির, ক্লাব হাউজ, হিম ভ্যালি, বিয়াস নদি দেখে দিন পার করে দিলাম।

চতুর্থ দিন ২৩ শে অক্টোবর
ট্যাক্সি হোটেলের নিচে দাঁড়িয়ে। ফ্রেশ হয়ে নাস্তা করে নিচে নামলাম। রওনা হলাম রোথাং এর উদ্দেশ্যে। পাশের পাহারের উপড় মেঘ আছড়ে পড়ছে, একটার উপড় আরেকটা লুটোপুটি খাচ্ছে। আর আমাদের ট্যাক্সি পাহারের ঢালু রাস্তা বেয়ে ধীরেধীরে ঊঠছে চুড়ার দিকে। পথ থেকে বরফে যাওয়ার পোশাক ভাড়া নিলাম ৩০০ রুপি, মোটা মোজা ১০০ টাকা ১ জোড়া। প্রকৃতি এত সুন্দর হতে পারে নিজের চোখকেও বিশ্বাস করতে পারছিলাম না। অবশেষে আমরা প্রায় ২ ঘন্টা পর পৌঁছলাম রোথাং এ। বরফ দেখে কি অবস্থা হয়েছিল তা ভাষায় প্রকাশ করার মত না। আমি পিচ্চিদের মত ছুটাছুটি শুরু করে দিলাম। বরফ হাতে নিয়ে টিকতে না পেরে এক জোড়া হ্যান্ড গ্লোভস নিলাম ১০০ রুপিতে। বরফ ছোড়াছুঁড়ি পর্ব শেষ করে হোটেলে ফিরে এলাম। বিকেলটা মলে ঘুরে কেনাকাটা করে কাটিয়ে দিলাম। মানালীর ড্রাইভারের মাধ্যমে সিমলা যাওয়ার একটা ট্যাক্সি ঠিক করলাম ২৭০০ রুপিতে। এখান থেকে এইচ আর টি সি এর ডিলাক্স বাস যায় সিমলা পর্যন্ত ভাড়া ৮০০ রুপি করে। আমি ট্যাক্সি বেছে নিলাম নিজের মত করে যাব বলে।

পঞ্চম দিন ২৪শে অক্টোবর
মানালী থেকে রওনা হলাম সকাল সাড়ে সাতটার দিকে। আধা ঘন্টার মধ্যে কুল্লু পৌঁছলাম। কুল্লু কিন্তু শালের জন্য বিখ্যাত। এখানকার শাল অনেক ভাল। আমার অফিসের বস ইন্ডিয়ান উনার কাছে থেকে শোনা। শাল ফ্যাক্টরি থেকে কয়েকটা শাল কিনলাম বেশ সাশ্রয়ী দামে। একটু যেয়ে পাঞ্জাবী এক ধাবায় নাস্তার জন্য দাড়ালাম। এদের সব খাবারে এক ধরনের মসলা ব্যবহার করে, আমার এত বিশ্রী লাগে! মুখেই তুলতে পারিনা। কোনোমতে দু লোকমা খেয়ে আবার রওনা হলাম। এই মানালী থেকে সিমলা আসার রাস্তাটা অনেক সুন্দর তাই দিনে ভ্রমন করাই বুদ্ধিমানের কাজ। আসার পথে প্যন্দহ ড্যাম পরবে এক কথায় অসাধারন। সবুজ পাহারে ঘেরা নীল পানির আধার চোখ ধাঁধানো জিনিস। পাহাড়, সবুজ আর পাইন গাছের বন পেরিয়ে ৯ ঘন্টা পর আমরা পৌঁছলাম শিমলাতে। ড্রাইভারের এক পরিচিতের মাধ্যমে হোটেল ঠিক করলাম ১৫০০ প্রতি রাত হিসেবে কিন্তু কথা ছিল হোটেল পছন্দ না হলে নিব না। মল এর পাশেই হোটেলের অবস্থান। পজিশন আর হোটেলের পরিচ্ছন্নতা দেখে পছন্দ হয়ে গেল। উঠে পড়লাম। শিমলা হিমাচলের রাজধানী তাই এখানে খরচ একটু বেশী। ১০০০ থেকে ২০০০ এর মধ্যেই হোটেল নিতে হবে। ফ্রেশ হয়ে মলে বেরিয়ে পরলাম। যেহেতু সারাদিন জার্নি করে ক্লান্ত তাই বেশী সময় ঘোরাঘুরি না করে হোটেলে এসে রাতের খাবার খেয়ে ঘুমিয়ে পরলাম। রাতের খাবার ২০০ টাকায় দুইজন।

ষষ্ঠ দিন ২৫ শে অক্টোবর
ট্যাক্সি রিজার্ভ সারাদিন ঘোরাঘুরি ১০০০ রুপি। সকাল ১০ টায় বের হলাম। প্রথমে হিপ হিপ হুররে। এটা পাহাড়ের গা ঘেষে গড়ে তোলা এমিউজমেন্ট পার্ক। এন্ট্রি ফি ২০০ টাকা প্রতিজন। তারপর কুফরি। এখানে ঘোরায় চড়ে পাহাড়ের চুড়ায় উঠতে হয় ২৮০০ মিটার উপড়ে। ঘোড়া উঠা চার্জ ৫২০ জনপ্রতি। বিকেলে শিমলা মলে চলে এলাম। এখানে রিটজ, মল রোড, স্ক্যন্ডাল পয়েন্ট, জাকু টেম্পল দেখলাম। পুরো বিকেলটা কাটিয়ে দিলাম মল রোডে। শিমলা সত্যিই একটা দেখার মত যায়গা। পাহারে গা বেয়ে বেয়ে সুনিপুনভাবে গড়ে তোলা শহর, ছিমছাম রাস্তা দেখলে যে কারো চোখ জুড়িয়ে যাবে। বিকেলে স্ক্যান্ডাল পয়েন্ট থেকে দিল্লীর টিকেট কাটলাম HRTC AC VOLVO BUS এ ৯০২ রুপি জনপ্রতি। রাতে হোটেল যেয়ে ঘুমিয়ে পড়লাম। শিমলায় কোনো কেনকাটা নয় কারন এখানে নিজস্ব কোনো ইন্ডাস্ট্রি নেই তাই জিনিসপত্রের দাম বেশি। একটা জিনিস খুব চলে এখানে সেটা হল বিভিন্ন ধরনের মদ।

সপ্তম দিন ২৬ শে অক্টোবর
সকালে উঠে হোটেল চেক আউট করে বেরিয়ে পরলাম ট্যাক্সি নিয়ে ISBT এর উদ্দেশ্যে। এটা মল রোড থেকে ৭ কিলো দূরে। ট্যাক্সি ভাড়া ৩০০ রুপি। বাসে উঠে বাংলাদেশী এক কাপল পেলাম। আলাপ করে খুব ভাল লাগল। এক সাথে দিল্লী আসলাম। পৌঁছলাম বিকেল ৫:০ টায়। ৩৫০ টাকায় ট্যাক্সি নিয়ে পাহারগঞ্জ চলে গেলাম। হোটেল ঠিক করলাম ৭০০ রুপি প্রতি রাত। হিসেব করে চলা শুরু করেছি কারন টাকা ফুরিয়ে আসার পথে। সন্ধায় বের হয়ে ট্যুরিস্ট ইনফরমেশন বুথ থেকে ডলার ভাংগালাম ৬৪ রুপি করে। পরের দিন শুক্রবার। আমাদের প্লান ছিল আগ্রা যাব পরের দিন কিন্তু সেটা হলনা। প্লান করলাম শুক্রবার দিল্লীর লোকাল সাইট দেখব আর শনিবার আগ্রা। সে অনুযায়ী ট্যুরিস্ট বাসের জন্য বুকিং দিয়ে দিলাম। খুজে কলকাতার মালিকের এক হোটেল খুজে বের করে ১৫০ টাকা থালি হিসেবে খেয়ে হোটেলে এসে ঘুমিয়ে পরলাম। পাহারগঞ্জে নন এসি হোটেল ৬০০-১০০০ টাকায় আর ১০০০-২০০০ টাকায় এসি হোটেল পাওয়া যায়।

অষ্টম দিন ২৭ শে অক্টোবর
ট্যুরিস্ট বাসে করে বিরলা মন্দির, প্রেসিডেন্ট হাউজ, ইন্ডিয়া গেট, কুতুব মিনার, লটাস টেম্পল, রাজঘাট (গান্ধীজীর সমাধী), রেড ফোর্ট দর্শন। রাতে চাদনি চকে কেনাকাটা আর জামা মসজিদের পাশে চিকেন বিরিয়ানি খাওয়া দাওয়া শেষে হোটেলে ফিরে এলাম। ভাল কথা চাদনি চকের হলদিরাম বেকারি থেকে দিল্লীর প্রায় ১০-১২ রকমের লাড্ডু সব গুলা একটা করে খেয়ে এসেছি এক কথায় অসাধারন।

নবম দিন ২৮ শে অক্টোবর
ট্যুরিস্ট বাসে করে আগ্রা যাত্রা। ট্যাক্সি রিজার্ভ ভাড়া ৪০০০ এর কাছাকাছি। আমার টাকা প্রায় শেষ পর্যায়ে তাই ট্যুরিস্ট বাসেই গেলাম। ট্যুরিস্ট বাসের একটা পেইন হলো এরা বেজায়গায় দাঁড়িয়ে সময় নষ্ট করে যেখানে আপনার কোনো প্রয়োজন নেই। প্রথমে আগ্রা ফোর্ট টিকেট ৮০ রুপি করে তারপর লাঞ্চ বিরতি। ২:০ টার দিকে তাজমহল ঢুকলাম টিকেট ৫৩০ রুপি করে। এখানে পাস্পোর্ট এবং ভারতীয়দের আধার কার্ড চেক করে। সো সাবধান। রাতে হোটেলে ফিরলাম ১২ টার দিকে। মথুরা এবং বৃন্দাবন ও দেখাইছে কিন্তু আমরা নামি নাই বাস থেকে।

দশম দিন ২৯ শে অক্টোবর
সকালে হোটেকে চেক আঊট করে অটো নিয়ে বের হয়ে পড়লাম দিল্লী বিমানবন্দরের উদ্দেশ্যে। ৯:৫০ এর ফ্লাইটে ইন্ডিগো এয়ারে কোলকাতা নামলাম ১২ টার দিকে। হোটেলে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে ভিক্টরিয়া মেমোরিয়াল এ চলে গেলাম। এন্ট্রি ফি বাগান+মিউজিয়াম ২০ রুপি। হোটেল নিয়েছিলাম মারকুইস স্ট্রিটে আর এটা ওর কাছাকাছি। ভিক্টোরিয়া ঘুরে রাতে ফিরে মারকুইস স্ট্রিটের খালিক হোটেলে খেয়ে রাতে শুয়ে পরলাম।

একাদশ দিন ৩০ শে অক্টোবর
গরিয়া হাট শাড়ি কিনতে গেলাম আদি ঢাকেশ্বরী বস্ত্রালয় থেকে শাড়ি কিনলাম। এখানে শাড়ির প্রচুর কালেকশন। বিকেলে চলে গেলাম কোলকাতা নিউ মার্কেট। কেনাকাটা শেষে রাতে খাবার খেয়ে হোটেল ঘুম।

দ্বাদশ দিন ৩১ শে অক্টোবর
ইউ এস বাংলা এয়ারলাইন্সে টিকেট কাটা ৩:৪০ এ ফ্লাইট। চকলেট আর সাবান কিনা বাকি ছিল। সকালে নাস্তা করে নিউ মার্কেট গেলাম আবার। শ্রী লেদার থেকে ইচ্ছেমত জুতা স্যান্ডেল কিনে ব্যাগ ভরে ফেললাম, চক্লেট কিনলাম। ব্যাগপত্র গুছিয়ে হোটেল চেক আউট করলাম ১২ টার আগেই। ট্যাক্সি নিয়ে বিমানবন্দর রওনা হলাম। ট্যাক্সি ভাড়া ৩০০ । ইমিগ্রেশন পার হয়ে বোর্ডিং পাস নিয়ে যথাসময়ে বিমানে উঠে বসলাম। ইউএস বাংলার সার্ভিস আমার ধারনাই পালটে দিল। এত সুন্দর পরিসমাপ্তির জন্য ইউএস বাংলাকেও ধন্যবাদ। পরিশেষে শুধু এই টুকুই বলতে চাই টিওবি না হলে আমার পক্ষে একা এই ট্যুর করা সম্ভব হত না। আমার অশেষ কৃতজ্ঞতা টিওবির প্রতি।

মোট খরচঃ ৮৬০০০ দুইজন (আমি আর আমার ওয়াইফ) ট্রান্সফার+হোটেল+খাওয়া

Post Copied from:Anwar Hossain>Travelers of Bangladesh (ToB)