৫ দিনে নেপাল ভ্রমন

খুব কম্পেক্ট টাইমলাইন।।
প্রথম দিন
ঢাকা বিমানবন্দর থেকে সকাল ১১টার বিমানের ফ্লাইটের টিকেট কাটুন।। যাওয়া আসা ফ্লাইট খরচ ১৮০০০টাকা ।। চেক ইন এর সময় প্লেনের ডান পাশের উইন্ডো সিট চেয়ে নিতে হবে।। আকাশ থেকে হিমালয় দেখতে দেখতে পৌছে যাবেন কাঠমুন্ডুর ত্রিভুবন আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে।। বিমানে disembarkment কার্ড পুরণ করে নিবেন।। ত্রিভুবন বিমানবন্দরে নেমে সোজা চলে যাবেন gratis ভিসা লাইনে।। ইমিগ্রেশন অফিসারের সাথে টুকটাক কথা বলে বিনে পয়সায় ভিসা নিয়ে নিবেন।। বিমানবন্দর থেকে আমাদের বের হতে সময় লেগেছিল ১৫ মিনিটের মত।। বড় লাগেজ থাকলে অনেক বেশি সময় লাগবে।। বিমানবন্দরের সাথেই প্রিপেইড ট্যাক্সি স্ট্যান্ড আছে।। ভাড়া একটু বেশি নিবে তাই সোজা দুই মিনিট হেটে ট্যাক্সি ভাড়া করে চলে যাবেন থামেলে।। ট্যাক্সির মান ভেদে ৪০০-৫০০রুপি লাগবে, সময় লাগবে ১৫মিনিট।।
থামেলে নেমেই দুই তিনটা হোটেল ঘুরে পছন্দসই হোটেল নিয়ে নিন।। আমরা ছিলাম কাঠমান্ডু হোটেল রিসোর্ট, টুইন বেড সিংগেল রুম ১৬০০ রুপি প্রতি রাত। হোটেলে প্রথমেই পোখারা যাবার টুরিস্ট বাসের টিকেট কেটে নিবেন অবশ্যই।। বাস ভেদে দাম পড়বে ৭০০-২০০০ রুপির মত।। বাসের টিকেটের অনেক চাহিদা তাই যত দ্রুত সম্ভব কেটে নিবেন।। এবারো ডান সাইডের সিট চেয়ে নিবেন।।
৫/৬টার মধ্যে বেশির ভাগ জায়গা বন্ধ হয়ে যায় তাই হোটেল সময় বেশি নষ্ট করবেন না।। গুগল ম্যাপ দেখে চলে যান গার্ডেন অব ড্রিমস, বৌদ্ধনাথ স্টুপা, সম্ভুনাথ মন্দির, পশুপথিনাহ মন্দির, দরবার স্কোয়ার।। প্রায় সব গুলোই থামেলের আশেপাশে।। গুগল ম্যাপ দেখে দেখে খুজে বের করতে সময় লাগতে পারে তাই ট্যাক্সি ভাড়া করে নিতে পারেন।। স্পট, সময় আর ট্যাক্সির মান অনুযায়ী ভাড়া হতে পারে ২০০০রুপি পর্যন্ত।। আমরা হেটে হেটে অনেক সময় অপচয় করে ফ্রি গিয়েছিলাম।।
সাইটসিইং শেষে চলে আসুন থামেলে।। থামেল আমাদের কাছে খুবই ভাল লেগেছে, মনে হয়েছে যেন জাতিসংঘে চলে এসেছি।। সব বর্ণের মানুষ পাবেন, নানান দেশের নানান খাবার পাবেন।। কেনাকাটার জন্য অনেক দোকান পাট আছে।। ঘুরে ঘুরে কখনো বোর ফিল করিনি।। থামেলে দোকানপাট, রেস্টুরেন্ট ৯টায় বন্ধ হয়।।

দ্বিতীয় দিন
বাসের টিকেট অনুযায়ী সকাল সকাল উঠে চলে যাবেন কান্তিপথ টুরিস্ট বাস স্ট্যান্ড।। থামেল থেকে ১০ মিনিট হাটতে হবে।। ব্রেকফাস্ট, লাঞ্চে এবং টয়লেটের জন্য একাধিক বার বাস থামবে।। হিমালয় দেখতে দেখতে পৌছে যাবেন পোখারায়।। সময় লাগবে প্রায় ৭-৮ ঘন্টা, বেলা ২-৩টা বাজবে।। রাস্তা যথেষ্ট ভাল।। পোখারায় বাস্ট্যান্ডে পৌছে ট্যাক্সি ভাড়া করুন লেকসাইড যাবার জন্য।। ভাড়া ২০০-৩০০ রুপি।। থামেলের মতই লেকসাইডে অনেক হোটেল পাবেন, অনেক দোকানপাট আছে।। কয়েকটি হোটেল ঘুরে পছন্দসই হোটেল নিয়ে নিন।। আমরা ছিলাম হোটেল পিস প্যালেস।। বেশ সুন্দর পরিপাটি হোটেল, ভাড়া ১৫০০ রুপি প্রতি রাত।। হালকা ফ্রেশ হয় বেরিয়ে পরুন।। দিনের আলো থাকতে থাকতে চলে যান Peace Temple, Devi’s Falls, Mahendra Cave।। এই ৩টি স্পট এক রাস্তায়।। ট্যাক্সি ভাড়া ১২০০-১৫০০রুপির মত নিবে।।
সন্ধার পর চলে আসুন লেকসাইডে।। রাস্তায় অনেক ট্যাক্সি পাবেন, পরের দিন ভোর বেলা সারানকোট যাবার জন্য ট্যাক্সি ভাড়া করে নিন, ভাড়া নিবে ১০০০-১২০০রুপির মত।। হোটেল থেকে ব্যবস্থা করা যাবে তবে অনেক বেশি খরচ, আমাদের কাছে ২৫০০ রুপি চেয়েছিল।।
পোখারায় অনেক কিছু করা যায়।। এডভেঞ্চার এক্টিভিটিস আছে বাঞ্জি জাম্প, জিপ ফ্লাইং, প্যারা গ্লাইডিং, রিভার রাফটিং।। রিলাক্সের জন্য রয়েছে ফিওয়া লেক বোট রাইডিং, অনেক স্পা ম্যাসাজ সেন্টার আছে।। লেকসাইডের রাস্তায় অনেক ট্যুর অপারেটর আছে ।। তাদের সাথে আলোচনা করে বাঞ্জি জাম্প, জিপ রোপিং, প্যারা গ্লাইডিং, রিভার রাফটিং এর বুকিং দিয়ে দিন।। মনে রাখবেন, সব গুলা এক দিনে সম্ভব নয়।। বাঞ্জি জাম্পিং এবং জিপ ফ্লাইং একসাথে ১০০০০ রুপি (গো প্রো ভিডিও করে নিলে আরো ২৫০০রুপি), প্যারা গ্লাইডিং ৭০০০ রুপি, রাফটিং ৪০০০ রুপির মত লাগবে।। আগে প্যারাগ্লাইডিং করে আপনারের শরীরের সহ্যক্ষমতা বুঝে নিবেন, ধকল সহ্য না হলে বাঞ্জি জাম্পিং না করাই শ্রেয়।। মনে রাখবেন, প্রতিটার মূল্য নির্ভর করবে আপনি এক্টিভিটি কতক্ষন করবেন এবং আপানার গাইড/পাইলটের অভিজ্ঞতার উপর।। বুকিং না দিলে অন স্পট কোন কিছু করতে পারবেন না।। লেকসাইডের দোকানপাট রাত ১১টা পর্যন্ত খোলা থাকে।।

তৃতীয় দিন
ভোর পাচ টায় উঠে ট্যাক্সি ড্রাইভারের নাম্বারে যোগাযোগ করে চলে যান সারানকোট।। এটা মূলত একটা পাহাড়।। পাহাড়ের চূড়া থেকে অন্নপূর্ণার সূর্যোদয় দেখবেন।। এটা ভীষণ সুন্দর দৃশ্য।। এখানে ঘন্টা দুয়েক সময় লাগবে।। ফিরে এসে আপনার ট্যুর অপারেটরের সাথে যোগাযোগ করে সারা দিন কাটিয়ে দিন।। দিন শেষে স্পা করিয়ে নিতে পারেন।।

চতুর্থ দিন
এডভেঞ্চার এক্টিভিটিজ আরো করতে চাইলে লাঞ্চের আগেই সেরে ফেলুন।। লাঞ্চ শেষে চলে যান international mountain museum এ।। ট্যাক্সি ভাড়া পড়বে ১৫০০ রুপির মত।। ৫টার সময় বন্ধ হয়ে যায় মিউজিয়াম।। ফিরে এসে ফিওয়া লেকে বোট রাইডিং করতে পারেন।। খরচ পড়বে ৫০০-৭০০ রুপির মত।। ডিনার করতে পারেন freedom cafe তে।। খাবার ভাল এবং বসার পরিবেশ অসাধারণ।।

পঞ্চম দিন
কাঠমুন্ডু এয়ারপোর্ট থেকে সন্ধ্যা ৬টায় ফ্লাইট।। সময় হিসেব করে বাসের টিকেট নিতে পারেন।। অথবা টাক্সি ভাড়া করতে পারেন।। ট্যাক্সি ভাড়া পড়বে ১০০০০ -১২০০০ রুপির মত।। আগে আগে ফিরলে থামেলে কিছু কেনাকাটা করতে পারেন।।

উল্লেখ্যঃ
## ইন্ডিয়ান রুপি সাথে নিবেন।। সব জায়গায় ইন্ডিয়ান রুপি চলে।। টাকা থেকে ডলার থেকে নেপালি রুপি ভাঙালে কিছু লস হবে।। টাকা থেকে ইন্ডিয়ান রুপি করে নিলা লস কম হবে।। 100INR=160NPR.
## হিন্দিতে কথা বললে দামাদামি করে সুবিধা পাবেন।।
## প্রতি টা খরচের সময় অন্তত ডাবল চেক করুন।। এক জিনিস কিনতে কয়েক দোকান ঘুরুন।। সব জিনিস দামাদামি করতে পারবেন।।
## একা গেলে এসকোর্ট সার্ভিসের অনেক অফার পাবেন। গাজা খাওয়ার অফার পাবেন।। দূরে থাকুন।। লোভে পড়ে প্রথমে হয়ত কম টাকায় রফা হবে, কিন্তু আপনাকে বাগে পেয়ে অনেক টাকা খসিয়ে নিবে।।
## অনেক বার, পাব, ড্যান্স বার পাবেন।। চাইলে ঢু মারতে পারেন।। খরচের চিন্তা মাথায় রাখুন।।
## অনেক ধরনের খাবার রেস্টুরেন্ট পাবেন।। সস্তা এবং সেফ থাকতে চাইলে থালি/থাকালি খাবার ভাল।। ২৫০ রুপির মধ্য হয়ে যাবে।।
## প্ল্যান চাইলে চতুর্থ দিনে কাঠমুন্ডু তে ফিরে এসে বিকাল বেলাতে সোজা নাগোরকোট যেতে পারেন ট্যাক্সিতে।। নাগোরকোটে এভারেস্ট দেখতে পারবেন।। পরের দিন নাগোরকোট থেকে ফিরে ফিরতি বিমানে উঠতে পারবেন।।
## বাচ্চা কিংবা বুড়ো সবার জন্য ট্রেকিং আছে।। সবচেয়ে সহজ এবং ছোট ট্রেকিং ৩ দিনের।। খরচের হিসাবটা ট্যুর অপারেটরের সাথে আলোচনা করতে হবে।।
## নেপালি মানুষ জন অনেক ফ্রেন্ডলি।। আগে বাড়িয়ে কথা বলুন, অনেক ইনফোরমেশন।। কে বাটপারি করবে এমনিতেই বুঝে যাবেন।।
## উপরের উল্লেখিত খরচের হিসাব শুধুমাত্র ধারণা দেয়ার জন্য, আপনি চাইলে আরো কমে পাবেন।।
## সর্বশেষ অভিমত, অন্তত ১০ দিনের কমে নেপালে যাওয়া উচিত নয়।।

ধন্যবাদ

Post Copied From:

Syed Shibly>Travelers of Bangladesh (ToB)