ঘুরে আসলাম দেশের একমাত্র ম্যানগ্রোভ ফরেস্ট সুন্দরবন। আমাকে যদি কেউ বলে ” তোমার লাইফের বেস্ট ট্যুর কোনটা?” আমার উত্তর নিঃসন্দেহে সুন্দরবন ট্যুর।
২৬ নভেম্বর রাত ১১টায় আমাদের যাত্রা শুরু হয় জাবি ক্যাম্পাস থেকে। ডিপারটমেন্ট এর ট্যুর ছিল এবং আমরা মোটমাট ১১২ জন যাই। ২৭ নভেম্বর ভোর ৫টায় আমরা খুলনা পৌছে যাই এবং ৬টার দিকে আমাদের বহনকারী লঞ্চ সুন্দরবন এর উদ্দেশ্যে যাত্রা শুরু করে। মংলা থেকে ৩ জন ফরেস্ট গারড নিয়ে আমাদের মেইন যাত্রা শুরু হল।
প্রথমে আমরা পৌছালাম হাড়বাড়িয়া ফরেস্ট রেঞ্জে। এখানেই ROAR মুভিটির শুটিং হয়েছিল। জায়গাটা খুব সুন্দর। লাইক আশেপাশে বাঘ ছিল এইরকম একটা ফিল 😀 । এরপর সেখান থেকে আমাদের লঞ্চ ছেড়ে যায় কটকার উদ্দেশ্যে দুপুর ২টায়। রাত ১০টার দিকে আমরা কটকায় পৌছে এবং সেখানে নোঙ্গর করে।
২৮ নভেম্বর সকাল এ ঘুম থেকে উঠে যে দৃশ্য দেখলাম তা বলে বোঝান যাবে না। পাড়ে অনেক চিত্রা হরিণ ঘোরাঘুরি করছে। ৬ঃ৩০ এ আমরা ট্রলারযোগে চলে গেলাম কটকা ফরেস্ট রেঞ্জে। ছবিতে যে দুটি হরিণের ছবি দেয়া তা এখানেই তোলা। আর কটকা ফরেস্ট রেঞ্জ পুরোটাই সীবিচ এর পাশ বরাবর। হরিণ দূর থেকেই দেখা লাগবে, কাছে গেলে দূরে চলে যাবে। এরপর সকালে নাস্তা করে চলে গেলাম কটকা জামতৈল সীবিচ।এখানে সীবিচ পর্যন্ত যেতে হলে বিশাল এক মাঠ পেরিয়ে চলে যেতে হবে। মাঠের মধ্য দিয়ে হাটার সময়ও মনে হচ্ছিল এইত আশেপাশে বাঘ আছে কিনা। :p মাঠ পেরিয়ে গেলেই ওয়াচটাওয়ার আছে, সবাই অবশ্যই উঠবেন। আলাদা একোতা ফিল পাবেন। এরপর এসে গেলাম বীচে। জামতৈল সীবিচ সুন্দর অনেক, কিন্তু অনেক চোরাবালি। কেউ গেলে গোসল করতে না নামাটাই উচিত। এরপর লঞ্চে ব্যাক করেই বঙ্গোপসাগর এর ভেতর দিয়ে আমরা চলে যাই দুবলার চরে। চরের কিছু আগে লঞ্চ নোঙ্গর করে। ট্রলারযোগে দুবলার চরে পৌছাই। বিশেষত দুবলার চর এ রাসমেলার জন্য বিখ্যাত এবং এটা বাংলাদেশের বড় শুটকীপল্লির মধ্যে একটি। কেউ গেলে অবশ্যই শুটকি কিনে নিয়ে আসবেন । এরপর লঞ্চে ব্যাক করতেই লঞ্চ ছেড়ে যায় হীরনপয়েন্ট এর উদ্দেশ্যে। রাত ৯ঃ৩০ এ পৌছে যাই আমরা, সেখানেই লঞ্চ নোঙ্গর করে।
২৯ নভেম্বর সকালে আমরা হীরনপয়েন্ট এ চলে যাই । এখানের সাইডে অনেকদূর পর্যন্ত কাঠের ওয়াকওয়েতে ঘুরতে পারবেন। ঘোরাঘুরি করে করমজলের উদ্দেশ্যে চলে যাই। করমজলে রয়েছে কৃত্তিম কুমির এবং হরিণ প্রজনন কেন্দ্র। মজার ব্যাপার হল এখানে রোমিও- জুলিয়েট কুমির দম্পতি রয়েছে। এদের নাম ধরে ডাকলেই এরা চলে আসে। 😀 এরপর আমরা খুলনার উদ্দেশ্যে যাত্রা করি। আমরা রাত ১১টায় নেমে বাসযোগে ঢাকার উদ্দেশ্যে যাত্রা করি ।
আমাদের ট্যুর এর ব্যবস্থা করেছিল Ever Youth Tourism.
সৌরভ ভাই,শামীম ভাই,রাজীব ভাই উনারা আমাদের গাইড ছিলেন।পুরো সুন্দরবন ঘুরাতে উনারাই পুরো ডিরেকশান দিয়েছেন। খুব ভালো মানুষ এবং ফ্রেন্ডলি উনারা। স্টুডেন্ট প্যাকেজে গিয়েছিলাম আমরা। আমাদের পড়েছিল ৬৫০০টাকা। বাসে যাওয়া আসা, লঞ্চে থাকা, খাওয়া-দাওয়া সবকিছুই এর মধ্যে ইনক্লুডেড ছিল।
শেষে বলব ” লাইফে অন্তত একবার হলেও সুন্দরবন যাওয়া উচিত। দেশের একমাত্র ম্যানগ্রোভ ফরেস্ট এটি। প্রাকৃতিক সুন্দর ভিউ দেখতে পারবেন অনেক। আর হা বাঘ মামার দেখা যদি পেয়ে যান তাহলে আপনার কপাল ১০০/১০০ বলতে হবেই। আমরা যদিও বাঘের পায়ের ছাপ ছাড়া কিছু পাইনি। ”
Post Copied From:Gazi Ishmam Hasan>Travelers of Bangladesh (ToB)