সাগরকন্যা কুয়াকাটা

এই সিজনে অনেকেই কুয়াকাটা ভ্রমণে আগ্রহ দেখাচ্ছেন । আগ্রহ জাগানোর মতোই জায়গা । সাগরকন্যা বলে কথা ।
তাই গত বছরের এইদিনে আমরা ৬ বন্ধু বেরিয়ে পরেছিলাম কুয়াকাটা ভ্রমণের উদ্দেশ্যে । এক বন্ধুর বাড়ি ঐ এলাকায় হওয়ায় অনেক সুবিধা হয়েছিলো ।
লঞ্চ বা বাস দুভাবেই যাওয়া যায় ।
আমরা গিয়েছিলাম লঞ্চে ।
সদরঘাট থেকে প্রতিদিন সন্ধ্যা ৬ টায় ছেড়ে যাওয়া লঞ্চে উঠলে খুব ভোরে আমতলী লঞ্চঘাটে পৌছানো যায় ।
সেখান থেকে বাসে সরাসরি কুয়াকাটা ।
লঞ্চের ভাড়া আমার মনে নেই,নামও মনে নেই 🙁
বাসের ভাড়া ১২০ টাকা ছিলো । ১ ঘন্টার মতো লাগে ।
আর সরাসরি ঢাকা থেকে বাসে যেতে চাইলে উঠতে পারেন সাকুরা,সুরভি বা গোল্ডেন লাইনে । ভাড়া বাস ভেদে কমবেশী ৬৫০ টাকা ।
আমতলী বা ঢাকা , সব বাসই একেবারে সৈকত পর্যন্ত যায় , এবং সন্ধ্যায় ওখান থেকেই ছাড়ে ।
.
ঘোরার প্লেস হিসেবে কুয়াকাটা সৈকত , সূর্যোদয় পয়েন্ট , সূর্যাস্ত পয়েন্ট(লেবুরচর),রাখাইন মার্কেট,বৌদ্ধ মন্দির গুলো আশেপাশেই ।
এছাড়া কিছুটা দূরের লাল কাঁকড়ার সৈকত সহ ১২ টা স্পটে ঘুরে আসার জন্যে ভ্যান বা বাইক রয়েছে ।
এগুলোতে গেলে আলাদা ১ টা দিন বরাদ্দ রাখা ভালো ।
.
তবে আমার একটা আফসোস , এখানে সমুদ্র নীল নয় !
শীতের মৌসুমে দিগন্ত প্রায় সারাদিনই কুয়াশা মোড়া থাকে ।
আর সমুদ্রের নিচে বেশ অনেকটা দূরত্বে সমুদ্রতট অগভীর থাকায় পানি কিছুটা ঘোলাটে ।
তাই হয়তো এই অবস্থা ।
.
সূর্যোদয় দেখতে চাইলে অবশ্যই খুব ভোরে উঠতে হবে । যাওয়ার জন্যে বাইক রয়েছে । ১ বাইকে ২ জন যাওয়া যায় ।
ভাড়া লাগামছাড়া না হলেও নির্দিষ্ট না । জনপ্রতি ৫০ টাকা লাগতে পারে ।
আর সূর্যাস্ত দেখতে চাইলে যেতে হবে লেবুরচর নামের জায়গায় ।
আমি শুনেছিলাম কুয়াকাটায় নাকি এক জায়গায় দাঁড়িয়ে সমুদ্রের বুকে সূর্যোদয় ও সূর্যাস্ত দেখা যায় ।
তবে বাস্তবতা ভিন্ন ।
সূর্যোদয় আর সূর্যাস্তের স্পট বলে খ্যাত জায়গা দুটি কুয়াকাটা সৈকতের একদম দুই বিপরীত দিকে ।
সূর্যোদয় দেখতে যেতে হবে সৈকত বরাবর বাম দিকে , সূর্যাস্ত দেখতে যেতে হয় ডান দিকে ।
দু দিকেই ৪০-৫০ মিনিটের মতো লাগে ।
.
সবচেয়ে ভালো লেগেছে সূর্যাস্তের জায়গাটা ।
প্রায় জনমানবহীন এলাকা ।এইদিকে আরো সামনে গেলে সুন্দরবনের একটা অংশ পাওয়া যায় ।
তাই এখানেও এক ধরণের শ্বাসমূলসহ গাছ দেখেছি ।
সন্ধ্যায় এখানে ছোট্ট একটা বাজার বসে ।এটাকে ঠিক বাজার বলা যায়না । এতোটা জনাকীর্ণ নয় ।
আসলে সারাদিনে সমুদ্র থেকে ধরে আনা ফ্রেশ টুনা , ইলিশ সহ বিভিন্ন সামুদ্রিক মাছ ও কাঁকড়া পাওয়া যায় সন্ধ্যাবেলায়।
যেগুলা কিনে দিলে ওনারাই সাথে সাথে ফ্রাই করে এনে দেন ।
বসার জন্যে সৈকতে চেয়ার টেবিল পাতা । সূর্যাস্ত দেখার পরে সন্ধ্যায় সৈকতে বসে খেতে পারেন টুনা কিংবা কাঁকড়া ।
অতি মনোরম মুহূর্ত !
আমরা পর পর দুদিন গিয়েছিলাম এখানে ।
কাঁকড়া প্রকরণভেদে ৫০-১৫০ টাকা , টুনা ২৫০ টাকার মতোন ।
কেউ গেলে এই মজা মিস করবেন না ।
.
এরকম দূরের কোনো জায়গায় গেলে বাইক বা ভ্যানের সাথে আপডাউন চুক্তি করে নিন ।
আপনাকে নামিয়ে দিবে ,আপনার মতো ঘুরে ফিরে দেখবেন । সন্ধ্যার পরে আবার নিয়ে কুয়াকাটা ব্যাক করবে ।
আসলে এখানে ভ্যান বা বাইক এমন আপডাউন চুক্তিতেই চলে ।
কাজেই আপনি যদি শুধু যাওয়ার কথা বলে যান , তাহলে ফেরার সময় আপনিও এক্সট্রা কিছু পাবেন না , ওনারাও যাত্রী পাবেন না ।
তখন আপনাকে নামিয়ে দিয়ে ওনারা হয়তো চলে আসবে । আপনাকে ফিরতে হবে হেটে ।
আমাদের এভাবে একসন্ধ্যায় হেটে ফিরতে হয়েছিলো ।
ফেরার সময় রিকশা-ভ্যান-বাইক কিছুই না পাওয়ায় বাধ্য হয়ে হাটা ধরেছিলাম ।
কিন্তু এই বাধ্য হওয়াটাই খুব দ্রুত আমাদের কাছে রোমাঞ্চ হয়ে উঠেছিলো ।
.
মাইলের পর মাইল অন্ধকার বালিয়াড়ি সৈকত । ডানে সমুদ্র গর্জাচ্ছে । বামে উঁচু রাস্তা ।
যতদূর চোখ যায় জনমনিষ্যিহীন ধু ধু প্রান্তর ।
মাঝে মাঝে চোখে পড়ছে বালিতে নিথর পরে থাকা জেলে নৌকা ।
.
আমরা রাস্তা থেকে নেমে পরেছি। সাগরের পার ধরে ভেজা বালি পেরিয়ে হেটে চলেছি ৬ টা মানুষ ।
ডানে সমুদ্র ,বায়ে নিঃসীম প্রান্তর, আর পায়ের তলায় সাদাটে বালি ।
যা পায়ের তলায় মাঝে মাঝে রহস্যময় সাদা আলো ছড়াচ্ছে !
কি এক রোমাঞ্চকর অভিজ্ঞতা ! *_*
.
তবে সবার তো ৪/৫ কিমি হাটতে ভালো লাগবেনা ।
কাজেই , কেউ যদি এমন দূর্ভোগে পরেই যান , তাহলে অন্য ভ্যান ওয়ালাদের সাথে কথা বলুন । তারা তাদের পরিচিত কাউকে ফোন দিয়ে এনে দিবে ।
এক্ষেত্রে আপনাকে অপেক্ষা করতে হবে , আর টাকা নামেমাত্র কিছু বেশি লাগতে পারে ।
তবে আমি উপদেশ দিবো , হাটতে ভালোবাসলে ৬/৭ জনের গ্রুপ মিলে রোমাঞ্চের নেশায় হলেও ট্রাই করে দেখতে পারেন ।
আদিম রাত আর সমুদ্রের স্বাদ পাবেন ।
.
এছাড়াও কুয়াকাটায় রয়েছে বিশাল শুটকির বাজার ।
ভালো মানের শুটকি হলেও , দামে খুব একটা হেরফের নেই ।
আমরা বাসার জন্যে চ্যাপা,নোনাইলিশ,লইট্যা সহ অনেক শুটকি এনেছিলাম ।
এছাড়া রাখাইন মার্কেট থেকে বিভিন্ন পদের আঁচার , প্রসাধনী বা জামা কাপড় কিনতে পারেন ।
.
এবার ভালো করে অবশ্য মনে রাখার মতোন কিছু পয়েন্ট-
৪.রাখাইনরা সংখ্যায় অনেক হলেও তারা নিজেদের মধ্যে গুটিয়ে থাকে । তাই তাদের বেশি না ঘাটানোই ভালো । তবে তাদের সাথে ভালো ব্যবহার করুন ।

৩.যাতায়াত ব্যবস্থা বা ফোনের নেটওয়ার্ক ভালো হলেও কুয়াকাটা তার বিশালত্বের তুলনায় কিছুটা পশ্চাদপদ ।
তাই ভালো মানের হোটেল পেতে সমস্যা হতে পারে ।
আর কক্সবাজারের স্বাদ আশা না করাই ভালো ।
এখানে কক্সবাজারের মতোন বানিজ্যিকভাবে ট্যুরিজম এখনো বিস্তার লাভ করেনি , তবে ধীরে ধীরে করছে ।
সরকারী বা বেসরকারী উদ্যোগে কিছু মানসম্পন্ন হোটেল নির্মাণ হচ্ছে ।
তখন হয়তো কক্সবাজারের মতো এখানেও মানুষ গিজগিজ করবে !
২.নিরাপত্তার সমস্যা না থাকলেও আমি এখানে ট্যুরিস্ট পুলিশ তেমন একটা দেখিনি । তাই সন্ধ্যার পরে ২/১ জনে দূরে কোথাও যাওয়া বা বেশি রাত অবধি দল বেঁধেও বেশি দূরে না যাওয়াই ভালো ।
কারণ সৈকতের আশে পাশে ছাড়া এলাকাটা পুরো সুনসান । তাই সতর্ক থাকা ভালো ।
***১. সূর্যাস্ত পয়েন্ট,সূর্যোদয় পয়েন্ট বা দূরের কোথাও যাওয়ার সময় বাইকে যথাসম্ভব দরদাম করে উঠুন ।
আর এই সব প্লেসে যাওয়া ছাড়া শখ করে ঘন্টা বা কিমি চুক্তিতে বাইকে উঠবেন না । আই রিপিট , ভুলেও না ।
কুয়াকাটায় যে কদিন থাকবেন অজস্র বার অজস্র প্লাটিনা হোন্ডাবাহক আপনাকে মধুর সূরে ডাকবে , ‘ মামা উঠেন । কিলো মাত্র ২০ টাকা । ‘
তাদের কথায় ভুলেছেন তো মানিব্যাগ ফাঁকা করে ছেড়ে দিবে ।
আধাঘন্টায় ৪/৫ শ টাকা খসিয়ে নিবে ।
এরা সম্ভবত শুরুতে মিটার ডাউন করে নেয়না , আপনি দেখতে চাইলে সহজে দেখাবেও না ।
আমরা একবার উঠেছিলাম , আধঘন্টায় আমাদের একেকজনের ১৫-২৭ কিলোমিটারের হিসেব দিয়ে ফেলেছিলো !
অথচ পরের দিন এরচাইতে প্রায় দ্বিগুণ দূরত্ব আমরা হেটে এসেছিলাম (লেবু্রচর থেকে , যেটা সর্বোচ্চ ৭ কিলোমিটারের বেশি কোনোমতেই হবে না )
আপনি তর্ক করে কিছু করতেও পারবেন না কারণ এরা সংখ্যায় অনেক , এবং একতাবদ্ধ । এবং বোঝা যায় এটা ট্যুরিস্টদের উপর এদের কমন ট্রিক ।
এমন অবস্থায় পরলে অন্য চালকদের সাহায্যের আশা বৃথা । তারা এসে হয়তো এভাবে মধ্যস্থতা করবে , ‘৫৮০ টাকা হয়েছে,আপনি ৫০০ টাকা দিয়েন । এই তুই ওনারে আর কিছু বলিস না ।”
তখন না জেনে ২৫০ টাকার ভাড়া ৫০০ টাকা দিতে পেরে যাকে আপনি বিপদের সময়ের এঞ্জেল ভাবছেন , সে হয়তো এইমাত্র কারো কাছে নিজের ডেভিল রূপটা প্রকাশ করে এসেছে ।
এগুলা আমার কাছে বিরক্তিকর ধাপ্পাবাজি মনে হয় । কর্তৃপক্ষের এদিকে দৃষ্টি দেয়া উচিত ।
অবশ্য সব ট্যুরিস্ট স্পটেই এমন কিছু অবস্থা আছেই । সেটা বেশিরভাগ সময়ই যানবাহনের বেলায়,মাঝে মাঝে ভ্রাম্যমাণ ক্যামেরাম্যানদের বেলায় ।
যার মধুর কথায় ভুলে আপনি শখের বশে তার বাইকে উঠবেন , যার মিষ্টি কথায় আপনি আরো সামনে যেতে উৎসাহ পাবেন , কিছুক্ষণ পরে তার কথার টোন আর ভাবভঙ্গি আপনার সাবেক gf/bf এর চাইতে বেশি দ্রুত চেঞ্জ হবে 😛
০.১২ স্পটের ওদিকে গেলে বাইকে আপনাকে ডাকতে পারে , “মামা চলেন রাখাইন পল্লী, ‘যা চাইবেন সব পাবেন ‘ ”
এহেন ‘লোভনীয় ‘ ও নিষিদ্ধ আনন্দের দিকে পা না বাড়ানোই ভালো ! কে জানে , হয়তো জীবনসংশয়ও ঘটে যেতে পারে কোনো চক্রের হাতে !
-১.সমুদ্রে নামার আগে অবশ্যই অবশ্যই সতর্ক থাকুন ।
আর গলা পানি বা তারচেয়ে বেশি দূরে না যাওয়াই উত্তম । কারণ অগভীর সমুদ্রের টান এখানে বেশ প্রবল । আর ভাটার সময় একদমই নামবেন না । আমরা আপনার ভেসে যাওয়ার খবর পত্রিকায় পড়তে চাই নাহ ।
আপনি ভেসে গেলে হয়তো কেউ খেয়ালই করতে পারবেনা সমুদ্রস্নানের উচ্ছাসে ।
আফটার অল , ভীড়ের মধ্যেই মানুষ সবচেয়ে একা থাকে !
.
.
বন্ধুরা মিলে বন্ধুর সাথে যাওয়ায় আমার খরচের সাথে কারোটা মিলবে না ।
তাই ‘ট্যু দ্য পয়েন্ট’ হিসেব দিলাম না ।
তবে ৩৫০০-৪০০০ টাকায় ভালোভাবেই সম্ভব বলে মনে করি ।

Post Copied From:Al Xayeed‎>Travelers of Bangladesh (ToB)

কুয়াকাটা ট্যুরের গল্প

এখন পর্যন্ত বাংলাদেশের অনেক জায়গাই ঘুড়ে এসেছি। লিখবো লিখবো করেও আসলে কোনো ট্র‍্যাভেলিং স্টোরিই লিখা হয়ে উঠেনা। কুয়াকাটা ঘুড়ে এসে মনে হলো কুয়াকাটা সম্পর্কে না লিখলেই নয়। বেশ লম্বা একটা জার্নি করে কুয়াকাটা পৌঁছুতে হয়, যারা দূরপাল্লায় যাত্রায় অভ্যস্ত নয় তাদের জন্য খুব কষ্টদায়ক হয়ে উঠতে পারে।

বাংলাদেশের অন্যতম সুন্দর একটি সী-বিচ হচ্ছে কুয়াকাটা যা “সাগরকণ্যা” নামে পরিচিত আর দেশের একমাত্র স্থান যেখান থেকে একই সাথে সানরাইজ এবং সানসেট দেখা যায়।

বেশ কিছুদিন ধরে প্ল্যানিং চলছিলো কুয়াকাটা নিয়ে। ঠান্ডা কাঁশি জ্বর থাকার পরেও তাই ১৪ ডিসেম্বর রওনা দিয়ে দিলাম আমরা।
ট্যুরে যাওয়ার কথা ছিলো ৪ জনের। কিন্তু ১ জন খুব বেশি অসুস্থ হয়ে পড়ায় আমরা ৩ জনে পরিণত হলাম।

গাবতলী থেকে বিকেল ৪:৩০ এর দিকে বাবুবাজারের বাসে উঠলাম। বাস যখন চলতে শুরু করলো তখন বুঝলাম, আজকে বুদ্ধিজীবী দিবস এবং মানুষের ঢল নেমেছে রাস্তায়। বাসটা সোয়ারীঘাট এসে পুরোপুরি থেমে গেলো। আমরা লাফ দিয়ে নেমে নৌকায় উঠে গেলাম, গন্তব্য — সদরঘাট।

মাঝি-মামা ২০-২৫ মিনিটে সদরঘাট পৌঁছে দিলো। সদরঘাট এসে দেখি পটুয়াখালীর উদ্দেশ্যে ছেড়ে যাবে এমন ৩টা লঞ্চ অপেক্ষমাণ। কুয়াকাটা-১, এ.এফ.রহমান-১ আর সুন্দরবন-৭।
আমরা ৩টা লঞ্চই ঘুড়লাম কিন্তু কোনোটাতেই কেবিন মিললো না। আফসোস! অতঃপর সুন্দরবন-৭ এর ডেকের টিকিট কেটে উঠে পড়লাম। জনপ্রতি ৩০০ টাকা।

পটুয়াখালী কিংবা বরিশালের লঞ্চের একটা অন্যতম সমস্যা হলো এরা ডেকে সিটের ব্যবস্থা করেনা.. হয়তো কেবিন নাও, কিংবা ফ্লোরে বসে যাও!
আমরা ৩ তলায় কেবিনের পাশের করিডোরে চেয়ার পাতা থাকে এমন তিনটা চেয়ার খালি পেয়ে দ্রুত বসে গেলাম!

সন্ধ্যে ৬:৪৫ মিনিটে হুইসেল দিয়ে লঞ্চ ছেড়ে দিলো। শুরু হয়ে গেলো আমাদের কুয়াকাটা ভ্রমণ।
আমরা খুব আয়েশ করে সেলফি তুলছি, গল্প করছি, ভালোই লাগছিলো।
কিন্তু কিছুক্ষণ পর লঞ্চটা যখন ফতুল্লা ঘাটে থামলো, আত্মা শুকিয়ে যাবার অবস্থা, ৪-৫ হাজার মানুষ লঞ্চে উঠার জন্য অপেক্ষা করছে!
আল্লাহ্‌!! এরা সবাই এই লঞ্চে উঠবে নাকি????
উপর থেকে বসেই দেখলাম মানুষের মারামারি লঞ্চে উঠার জন্য। কিছুক্ষণের মধ্যেই লঞ্চটা কানায় কানায় ভরে উঠলো। জানিনা কতো লোক উঠলো, কিন্তু লঞ্চের ধারণক্ষমতা ১০০০ জনের বেশি অবশ্যই না।

আবার যাত্রা শুরু হলো। হৈ-হুল্লোড়ে মগ্ন পরিবেশ। অনেক কাপল এসেছে, কেউ রোমান্স করছে আর কেউবা ঝগড়া। মনোযোগ দিয়ে ঝগড়া গুলো শুনছি, রোমান্সের দিকে কান দিচ্ছিনা।

একবার কফি, একবার ঝালমুড়ি, একবার চিপস এভাবে পালাক্রমে হালকা নাস্তা খেয়ে দেয়ে চলছি। ভারী খাবার পেটের জন্য পীড়াদায়ক হয়ে যেতে পারে।

আমার চেয়ারের পাশে আর সামনে হঠাৎ দুইটা গ্রুপ চাদর বিছিয়ে শুয়েই নাক ডাকতে আরম্ভ করলো। আমি হতভম্ব হয়ে গেলাম। পা ও নাড়াতে পারবোনা এখন আমি!

রাত তখন ১২টার মতো বাজে। লঞ্চ একটা ছোট্ট চরে প্রবল বেগে ধাক্কা খেয়ে কাঁপতে আরম্ভ করলো। সবাই ভয়ে জেগে উঠলো, কেবিন থেকে সবাই বেরিয়ে এলো, আমরা প্রচন্ড আতংকিত হয়ে পড়লাম। কারণ লঞ্চটা কাঁপছে, বেশ জোরেসোরে কাঁপছে। একটুপর কাঁপুনির মাত্রা কমে এলো, লঞ্চ স্থির হয়ে আবার চলতে আরম্ভ করলো।

রাত ২টা নাগাদ আমাদের লঞ্চ একটা চরে আটকা পড়ে গেলো। অনেক চেষ্টা করে ৩০ মিনিট এর মতো সময় নিয়ে লঞ্চটাকে কিভাবে যেন চর থেকে ছাড়ানো হলো। শীতকালে এটা নাকি একটা কমন ব্যাপার।

রাত যখন ৪টা বাজে তখন খুব ঠান্ডা পড়তে লাগলো। চারপাশ কুয়াশাতে ছেয়ে গেলো। আমার খুব শীত করছিলো। তাই ফুলহাতা গেঞ্জির উপরেই একটা হুডিস চাপালাম, গলায় বাঁধলাম মাফলার, মাথায় কানটুপি, আর মুখে এঁটে দিলাম মাস্ক। সবশেষে গায়ে জড়িয়ে নিলাম একটা কাশ্মীরি শাল। তারপরেও কিভাবে যেন হাড়ে গিয়ে ঠান্ডা বিঁধছিলো। প্রচন্ড অসহায় একটা অনুভূতি।

ভোর ৬টা বাজতেই লঞ্চটা পটুয়াখালী পৌঁছে গেলো। হিসেব কষে দেখলাম সোয়া ১১ ঘন্টা লঞ্চে কাটিয়ে দিয়েছি আমরা।
লঞ্চঘাট থেকে বেরিয়ে অটো নিয়ে নিলাম। পটুয়াখালী বাস স্ট্যান্ড যাবো। জনপ্রতি ভাড়া ২০ টাকা। ১৫ মিনিটের মতো সময় লাগলো বাসস্ট্যান্ডে পৌঁছুতে।
এখানে অনেক ছোটখাটো হোটেল আর খাবারের দোকান আছে। সকালের নাস্তা সেরে নিলাম।

পটুয়াখালী থেকে কুয়াকাটা গামী একটা বাসে উঠে গেলাম। ৭টায় বাস ছাড়লো। একটা ভুলই হয়ে গেলো। বাসটা ঠিক ডিরেক্ট বাস ছিলোনা। অনেকবারই থেমেছে। সাড়ে ৮টা নাগাদ কলাপাড়া এলো আমাদের বাস। এখানে এসে আমাদেরকে অন্য একটা বাসে তুলে দেয়া হলো।
নতুন এই বাস ড্রাইভার একটা জিনিস!!! বাস ছাড়ে না তো ছাড়েই না। সব যাত্রী চিৎকার করছে, তাও বাস ছাড়েনা। শেষমেশ ৯টায় বাস ছাড়লো।

সাড়ে ৯টা বাজে আমরা কুয়াকাটা পৌঁছে গেলাম। বাস স্ট্যান্ড থেকে সাগর চোখে পড়ে। অপূর্ব এক দৃশ্য!

আমরা সী বিচে গিয়ে একটা বেড ভাড়া করে ব্যাগ রাখলাম। রেস্ট করলাম। সাগরের পানিতে পা ভিজিয়ে এলাম। আমার সাথে দু’জন ১২৫ টাকা করে দুইটা সানগ্লাস কিনে আনলো সৈকত থেকেই। আমি আর কিনলাম না।

১ ঘন্টা বাদে উঠে পড়লাম। যেহেতু আজকে রাতেই ফিরবো, তাই টিকিট কেটে ফেলা জরুরি। গোল্ডলাইনে টিকিট কাটলাম। কুয়াকাটা টু ঢাকা ভাড়া ৬০০ টাকা করে।
আমরা একটা চায়ের দোকানে বসে চা তা খেয়ে সাথে পানি নিয়ে নিলাম।

এবার বাইক ভাড়া করে ঘুড়ে দেখবার পালা কুয়াকাটা। এখানে কিছু কথা বলে না রাখলেই নয়। একটা বাইকে ২জন করে ঘুড়তে পারা যায়। বাইক ভাড়া অনেক চাইবে। ৫০০-৬০০ টাকায় রাজি করাতে হবে। চাপার জোর যার যতো বেশি, সে ততো লাভবান হবে। সিজন টাইম ছিলো, তাই আমরা ৬০০ টাকায় ঠিক করতে পেরেছিলাম। ১৮টা স্পট এর কথা বলে তারা (আসলে কিছু স্পট খুবই কাছাকাছি), সময় লাগে ৪-৪.৫ ঘন্টা।

ভাড়া ঠিক করে আমরা বাইকে চেপে বসলাম। ঘুড়তে শুরু করলাম অনিন্দ্য সুন্দর এক স্থান কুয়াকাটা!! জিরো পয়েন্ট থেকে আমাদের যাত্রা শুরু হলো।

🌈 ইকোপার্ক / জাতীয় উদ্যান
বাইক রাইড শুরু হবার পরেই প্রথমে চোখে পড়বে এই জায়গাটা। সারি সারি গাছ। পার্কের মতো করে করা। সাগরকে একপাশে রেখে অন্যপাশে গড়ে উঠেছে এই ইকোপার্ক।

🌈 সূর্যোদয়ের স্থান
এখান থেকে সূর্যোদয় খুব সুন্দর অবলোকন করা যায়। যারা খুব সকালে কুয়াকাটা পৌঁছে যাবে, কিংবা একদিন থেকে পরদিন সূর্যোদয় দেখবে, তারা এইখানে এসে দেখতে পারবে।

🌈 গঙ্গামতির চর
এই জায়গাটা গঙ্গামতির লেক নামে পরিচিত। লেকটা নৌকা করে পার হতে হয়। নৌকায় বাইক তুলা যায়। বাইক প্রতি ৩০ টাকা নিবে। ওপাশে গেলেই চর চোখে পড়বে। অনেক সামুদ্রিক বৃক্ষরাজি। শ্বাসমূল দেখা যায়। আছে পাখি, বন মোরগ, আর বানর। চমৎকার দৃশ্যাবলী।

🌈 কাউয়ার চর
এইখানটাতে বাইক টেনে নিয়ে যাবে। বাইকে বসেই উপভোগ করা যায় প্রাকৃতিক পরিবেশ।

🌈 ক্রাব আইল্যান্ড
লাল কাঁকড়ার দ্বীপ নামে পরিচিত। অনেক কাঁকড়া দেখা যায়। কিন্তু কাছে গিয়ে ছোঁয়া যায়না। তার আগেই এরা বালির ঢিবিতে ঢুকে লুকিয়ে পড়ে। ডিএসএলআর সাথে থাকলে জুম ইন করে ছবি তুলতে পারা যায়। আর মৃত কাঁকড়া পেলে হাতে নিয়ে দেখা যাবে অনায়াসেই।

🌈 ঝাউবন
সবারই পরিচিত ঝাউগাছ। আর অন্যান্য সমুদ্রসৈকতে দেখেও অভ্যস্ত সবাই। কুয়াকাটাতেও ঝাউবনের দেখা মিলবে। কিন্তু বনের গহীনে যেতে নিষেধ করবো আমি। ছবি তুলতে হলে বনের একটু অভ্যন্তরে গিয়েই তুলে চলে আসা ভালো। নিরাপত্তাই প্রথম!

🌈 অতিথি পাখির বীচ
আহামরি কিছু নয়। কিছু অতিথি পাখির দেখা মিলবে শীতকালে। তবে ব্যক্তিগত মতামত দিবো আমি, এরচেয়ে বেশি পাখি জাহাঙ্গীরনগরেই দেখতে পাওয়া যায়। আর কাছাকাছি গেলে, পাখি সব এমনিতেই উড়ে চলে যাবে।

🌈 মিশ্রি পাড়া (সীমা বৌদ্ধ মন্দির)
কুয়াকাটার প্রাচীন কুয়ার সামনেই সীমা বৌদ্ধ মন্দির। কাঠের তৈরি এই মন্দির কয়েক বছর আগে ভেঙে দালান তৈরি করা হয়েছে। তবে মন্দিরের মধ্যে এখনও আছে প্রায় ৩৭ মন ওজনের প্রাচীন অষ্টধাতুর তৈরি বুদ্ধ মূর্তি।
ছবি তুলতে দিবে অবশ্যই, কিন্তু অনুমতি নিয়ে নেয়া ভালো। ১০ টাকা দিয়ে টিকিট কেটে মন্দিরে ঢুকতে হয়।

🌈 মিষ্টি পানির কুয়া
মন্দিরের সাথে লাগোয়া এই কুয়া। দেখে অবশ্যই আশাহত হলাম। নিষেধাজ্ঞা থাকার পরেও মানুষ চিপসের প্যাকেট, সিগারেট এর ধ্বংসাবশেষ, খাবারের উচ্ছিষ্টাংশ ফেলে নোংরা করে রেখেছে কুয়ার পানি। কিছুই বলার নেই।

🌈 রাখাইন তাঁতপল্লী
সবারই পছন্দ আদিবাসীদের হাতের কাজ। এখানে অনেক কিছুই পাওয়া যায়, যা আদিবাসীরা নিজের হাতে তৈরি করে। দামও খুবই কম। শাল, শাড়ি, ফতুয়া থেকে শুরু করে অনেক কিছুই কিনতে পারবেন প্রিয়জনদের জন্য। এখানে একটা পিঠা খেয়েছি, উনুনে বসে এক রাখাইন মধ্যবয়স্কা নারী পিঠা বানাচ্ছিলো। দেখতে পাটিসাপটা এর মতোই, কিন্তু চালের গুড়ো আর নারিকেল দিয়ে বানানো। কেনো জানি মনে হয়, ঐ স্বাদ আবার পেতে হলেও কুয়াকাটা যাওয়া দরকার। আমি কিছু কেনাকাটা ও করেছিলাম রাখাইন পল্লী থেকে।

## এই জায়গাগুলো ঘুড়তে সময় বেশি লেগে গিয়েছিলো আমাদের। তাই আমাদের বাইক রাইডার বের হয়েই খুব জোরে বাইক টান দেয়। এবং বাইক এক্সিডেন্ট করে আমরা কালভার্ট থেকে নিচে পড়ে যাই। আল্লাহ্‌র অশেষ রহমতে তেমন কিছুই হয়নি।

পূর্বদিকের এই জায়গা গুলো ঘুড়া শেষ হলে বাইক আবার জিরো পয়েন্টে এসে পশ্চিম দিকে যাবে।

🌈 লেবুর চর
লেবুর চর নামে একটা জায়গা থেকে তিন নদীর মোহনা দেখা যায়। এক পাশে সমূদ্র আরেক পাশে তিন নদীর মোহনা, অপর পাশে উপকূলীয় বন, নদীর ওপারে দেখা যায় ফাতরার বন- সব মিলিয়ে জায়গা টা অসাধারন।

🌈 তিন নদীর মোহনা
অনেক ঘেটেঘুটেও তিনটা নদীর নাম বের করতে পারলাম না। মনে হয় বালেশ্বর নদী আর আন্ধার মানিকের সাথে সাগরের মিলনকেই তিন নদীর মোহনা বলা হয়।

🌈 সানসেট পয়েন্ট
আসলে সানসেট সব জায়গা থেকেই দেখা যায়। এই জায়গা থেকে হয়তো একটু ভালো দেখা যায় আরকি। আমরা সানসেট পর্যন্ত যেহেতু থাকিনি সেখানে, তাই ডিটেইলস জানাতে পারছিনা।

🌈 ফাতরার বন
এখানকার গাছপালা কিছুটা হলুদ বর্ণের, আর বনের মধ্যে দিয়ে পায়ে চলার পথটা অসম্ভব সুন্দর, বন দিয়ে হাঁটতে হাঁটতে একসময়য় সাগরের দিকে বের হওয়া যায়, সেখানে একটা চুলা আছে যেখানে রাতে ক্যাম্পিং করে বারবিকিউ করা হয়।
ট্রলার করে নদী পার হয়ে যাওয়া লাগে। রাতে থাকার ইচ্ছে না থাকলে না যাওয়াই ভালো।

🌈 শুটকি পল্লী
কুয়াকাটা সমুদ্র সৈকতের পশ্চিম প্রান্তে আছে জেলে পল্লী। এখানে প্রচুর জেলেদের বসবাস। নভেম্বর থেকে মার্চ মাস পর্যন্ত এখানে চলে মূলত শুঁটকি তৈরির কাজ। সমুদ্র থেকে মাছ ধরে এনে সৈকতেই শুঁটকি তৈরি করেন জেলেরা। কম দামে ভালো মানের শুঁটকিও কিনতে পাওয়া যায় এখানে।

🌈 ভাঙা জাহাজ
দৈর্ঘ্য ৭২ ফুট, প্রস্থ ২৪ ফুট এবং উচ্চতা সাড়ে ১০ ফুট। নৌকা নাকি জাহাজ, তা নিয়ে আছে মতভেদ। অনেক পুরাতন এক জাহাজ। ঝাউবনের কাছে বালুচরের নিচে পাওয়া যায় এই জাহাজটি।
ভেঙে গেছে অনেকখানিই। কাঠামো বুঝা যায় কিছুটা।
স্থানীয়দের মতে, বহু বছর আগে মিয়ানমারের আরাকান রাজ্য থেকে বিতাড়িত হয়ে ২৫০টি রাখাইন পরিবার ১৫০টি নৌকা নিয়ে ভাসতে ভাসতে কুয়াকাটায় এসে পাড়ি জমায়। এ নৌকাটি ওই সময়ের হতে পারে।
অনেকে “সোনার নৌকা” নামেও অভিহিত করে থাকে।

🌈 শ্রীমঙ্গল বৌদ্ধ বিহার
এইখানেও ১০ টাকা দিয়ে টিকিট কেটেই প্রবেশ করতে হয়। সুনশান নিরব শান্ত মন্দিরের পরিবেশ। ভেতরে ঢুকে ছবি টবি তুলে আসা যাবে। এখানে ছবি তুলতে কোনো নিষেধাজ্ঞা নেই।

🌈 কুয়াকাটার কুয়া
কুয়াকাটা নামকরণের ইতিহাসের পেছনে যে কুয়া সেটি এখনও টিকে আছে। তবে কয়েক বছর আগে অদূরদর্শী ও কুরুচিকর সংস্কারের ফলে এর সৌন্দর্য নষ্ট হয়ে গেছে। কুয়াকাটা সমুদ্র সৈকতের কাছে রাখাইনদের বাসস্থল কেরাণিপাড়ার শুরুতেই প্রাচীন কুয়ার অবস্থান।
জনশ্রুতি আছে ১৭৮৪ সালে বর্মী রাজা রাখাইনদের মাতৃভূমি আরাকান দখল করলে বহু রাখাইন জায়গাটি ছেড়ে নৌকাযোগে আশ্রয়ের খোঁজে বেড়িয়ে পড়েন। চলতি পথে তারা বঙ্গোপসাগরের তীরে রাঙ্গাবালি দ্বীপের খোঁজ পেয়ে সেখানে বসতি স্থাপন করেন। সাগরের লোনা জল ব্যবহারের অনুপযোগী বলে মিষ্টি পানির জন্য তার এখানে একটি কূপ খনন করেন। এরপর থেকে জায়গাটি কুয়াকাটা নামে পরিচিতি পায়।
এই কুয়া নিয়ে অনেক মিথ প্রচলিত – সূর্যোদয়ের সময় পানি নাকি ভরপুর হয়ে যায়, আবার সূর্যাস্তের পর এতোই নেমে যায় আর দেখা যায়না পানির স্তর।
সত্যমিথ্যা জানিনা।

—————
আসলে কুয়াকাটার কুয়া দেখার সময়ই আমাদের বাইকাররা ভাড়া নিয়ে চলে যায়। আমরা তারপর চৌরাস্তা দিয়ে বের হয়ে এসে দুপুরের খাওয়া দাওয়া করি। খাবার দাবার তেমন স্বাদের না। সাগরের ইলিশ পাওয়া যায় হোটেল গুলোতে, আর মুরগী, গরু,সবজি,ডাল দিয়েই খাওয়া সেরে নিতে হবে। কিছু সামুদ্রিক মাছও তারা রান্না করে।

🌈 সমুদ্র সৈকত
১৮ কি.মি দীর্ঘ এই সৈকতটা দেখতে যাওয়া মোটামুটি স্বার্থক। সাগরের পানি অনেক দূর পর্যন্ত সমান। সাগরের বেশ গভীরে যাওয়া যায়, কক্সবাজারের মতো বালি এতো নরম নয়, পা দিলেই সরে যায় এই ব্যাপারটা কুয়াকাটায় নেই।
তবে সাবধানতা অবলম্বন করা উচিত, জীবনের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ কোনো কাজেই আমি উৎসাহিত করবো না।

বিকেল ৫টায় সাগরে নামি। পানিতে ডুব দিয়েই সানসেট দেখি। অন্যরকম এক অনুভূতি।
সোয়া ৬টা পর্যন্ত সী বিচে ছিলাম আমরা।
সাগরে স্নান শেষে চাইলে বিচের কাছেই গোসলখানা আছে, গোসল সেরে ফ্রেশ হয়ে নেয়া যায়। জনপ্রতি ৩০ টাকা।

কফি খেয়ে আমরা অপেক্ষা করি বাসের জন্য। ৭টায় বাস এসে হাজির হয়।
কুয়াকাটা ট্যুরের পরিসমাপ্তি হচ্ছে। মনটা বেশ খারাপ হয়ে যায়।
সবখানে ব্যাকপ্যাকিং ট্যুর দেই বলে এখানেও তাই দেয়া হলো। দু’একদিন থাকতে পারলে ভালোই হতো।
কিন্তু সবারই কমবেশি ব্যস্ততা আর পরদিন ১৬ ডিসেম্বর এর বিবেচনায় ফিরে আসাটা জরুরি ছিলো।

আমি সংক্ষেপে কুয়াকাটা নিয়ে লিখার চেষ্টা করলাম। আশা করি, যারা পরবর্তীতে কুয়াকাটা ঘুড়তে যাবেন, তাদের জন্য কাজে দিবে।

যাওয়া কিংবা আসা মোটামুটি ১৫ ঘন্টার জার্নি দিতেই হবে। এটা থেকে মাফ নাই। হা হা হা।
আর আসার সময় বাসে উঠে দেখি আমার গলা দিয়ে কোনো আওয়াজই বেরুচ্ছেনা, গলা পুরোদস্তুর ভেঙে গেছে। ঘাপটি মেরেই ১৫ ঘন্টা কাটিয়ে দিলাম বাসে। কি আর করবো, কিচ্ছু করার নেই।

Post Copied From:

কুয়াকাটা ভ্রমণ

★যাত্রাঃ
আমরা ৮-৯ জন কুয়াকাটার উদ্দেশ্যে যাত্রা শুরু করি গত ১৪ডিসেম্বর ভোর ৫টায়।লঞ্চ না পাওয়ার কারণে বাসে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
★যাতায়াতঃ
আমি ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা থেকে বলছি আপনি কুয়াকাটা যেভাবেই যান না কেন জার্নি আপনাকে কিছুটা পেরা দিবে।আপনারা বিভিন্ন ভাবে কুয়াকাটা যাইতে পারবেন।।বাস অথবা লঞ্চ।তবে আমি বলি লঞ্চ টাই বেষ্ট হবে।কারণ কুয়াকাটা যাওয়ার রাস্তাঘাট একদম পছন্দ হয়নি।একদম বাজে অবস্থা।
★আবাসন ব্যবস্থাঃ
আমরা অন সিজনে কুয়াকাটা গেছিলাম।আর তখন প্রায় ৩দিন এর মত বন্ধ ছিল।তাই কুয়াকাটায় মানুষের আনাগোনা বেশি লক্ষ্য করি।এই জন্য রুমের ভাড়া তুলনামূলক ভাবে বেশি ছিল।দামাদামি করে রুম নেওয়া ভাল।
★খাবার ব্যবস্থাঃ
এখানে খাবারের মান মোটামুটি ভাল।তবে তাদের সাথে দামাদামি করা যায় না।যারা সমুদ্র দেখতে আসে তাদের সামুদ্রক মাছের প্রতি চাহিদা একটু বেশিই থাকে।আমরা ৭০০টাকা দিয়ে ‘টোনা’ নামে একটা সামুদ্রিক মাছ কিনছিলাম।
★ঘুরাঘুরিঃ
কুয়াকাটা তে অনেক গুলো স্পট আছে। আপনি চাইলে সবগুলো দেখতে পারবেন।এর জন্য আপনি মোটরসাইকেল ভাড়া করতে পারেন।তারা সব দেখাবে।আমরা যতগুলা স্পট দেখছি তার মধ্যে ভাল লাগছে সূর্যোদয়,, সূর্যাস্ত,, টেংরাগিরি ম্যানগ্রোভ বন।।
★অতিথিপরায়ণঃ
কুয়াকাটা গিয়ে একটা বিষয় দেখে আমি মুগ্ধ হয়েছি।এখানকার মানুষ খুব অতিথিপরায়ণ। তারা খুবই সহজসরল আর হেল্পফুল।যদি কেউ বিপদে পরে তাহলে সবাই যেভাবে এগিয়ে আসে অন্য কোথাও এটা দেখিনি আমি।
★ভাল লাগা -না লাগাঃ
হাতে গোনা কয়েকটা স্থান ছাড়া বাকি গুলো আমার কাছে ভাল লাগেনি।কৃত্রিম মনে হয়েছে।তবে সূর্যোদয় আর সূর্যাস্ত দেখার জন্য হলেও অন্তত একবার আপনার কুয়াকাটা যাওয়া উচিত।
★খরচঃ
আমাদের সবার ২৫০০ টাকা(বেসিক খরচ) লাগছিল।।বাকিটা আপনার।।আসলে অল্প টাকার মধ্যে কেউ যদি দূরে কোথাও যেতে চান, তাহলে আমি বলব কুয়াকাটা যান।আশা করি হতাশ হবেন না।

Post Copied From:Rasel Sikder‎>Travelers of Bangladesh (ToB)

কুয়াকাটা সম্পরকিত কিছু তথ্য

অনেকে দেখি কুয়াকাটা বরিশাল হয়ে যায় কিন্তু সবাই কি ভুলে গেছে কুয়াকাটা পর্যটন কেন্দ্র পটুয়াখালীতে পড়েছে।তৃতীয় সমুদ্র বন্দর সেটাও কুয়াকাটাকে ঘিরে হচ্ছে টিয়াখালীতে।
ওখানকার স্থানীয় মানুষ অনেক ভালো।ইদানীং বাহির থেকে এসে যারা ব্যবসা করছে তাদের আচরন ভালো নয়।সবকিছুতে বেশি দাম নিচ্ছে।আগে তিনটি ফেরি পার হয়ে কুয়াকাটা ভ্রমন অনেক কষ্টদায়ক ছিল।এখন সব ব্রীজ হয়ে গেছে।পূর্ণিমায় জোয়ারের পানিতে ডুবে থাকত ফেরি তখন গাড়ী আর যেতনা।ওখানেই কয়েক ঘন্টা অপেক্ষা করতে হতো।
ঢাকা থেকে কুয়াকাটার দূরত্ব প্রায় ৩৮০কি.মি।বীচটির দৈর্ঘ্য ১৮ কি.মি.দক্ষিন এশিয়ার একমাত্র সমুদ্র সৈকত যেখানে দাঁড়িয়ে সূর্যোদয় ও সূর্যাস্ত দুটোই দেখা যায়।হোটেল নীলাঞ্জনা অনেক পুরানো হোটেল।মোটেল সহ অনেক ভালো মানের হোটেল আছে।সব মেইন বীচের কাছাকাছি।কুয়াকাটা শীতের সিজনে ঘুরলে ভালো হয়।গাড়ীর চেয়ে লঞ্চ ভ্রমন আরামদায়ক।এখানে আছে রাখাইদের মার্কেট,৪০০ বছর আগে মায়ানমার থেকে রাখাইনরা এসেছিল সেই নৌকা ঝড়ে ডুবে যায়।কিছু বছর আগে নৌকাটি উদ্ধার করা হয়।নৌকাটির নাম সোনার নৌকা।ইগো পার্ক,ইলিশ পার্ক ইলিশ মাছ নিয়ে ১০ টি পুকুর আছে।পুকুরে ইলিশ মাছ নিয়ে গবেষনায় সফলতা পেয়েছে।প্রতিদিন নাটক,টেলিফিল্ম নিয়ে অনেক শ্যুটিং হচ্ছে।এখানে খাবারের দাম একটু বেশী।চিংড়ি মাছ ভুনা ছোট এক বাটি ৮০ টাকা।শুটকি মাছ ভুনাসহ অনেক তাজা মাছ রান্না করা পাওয়া যায়।বর্তমানে রাখাইন মহিলা মার্কেটের কাছে রাখা আছে আলাদা বিল্ডিং তৈরি করে।মিশ্রি পাড়ায় আছে এশিয়া মহাদেশের সবচেয়ে বড় মূর্তি।কাউয়ার চর,ফ্যাতরার চর,লাল কাঁকড়ার চর আরো অনেক জায়গা আছে।চরগুলো দেখলে শীতকালে যেতে হবে।কারন সমুদ্র এখন উত্তাল।সমুদ্র পাড়ি দিয়ে যেতে হয়।
ঢাকা থেকে বিলাসবহুল লঞ্চ যায় পটুয়াখালী।৫/৬ টায় ঢাকা থেকে পটুয়াখালীর উদ্দেশ্য ছেড়ে যায়।সিঙ্গেল কেবিন এক হাজার টাকা ডবল দুই হাজার ফ্যামিলি কেবিন আরও একটু বেশী।সব বিলাস বহুল লঞ্চ তিনতলা।এসি,নন এসি,দুটো বেড,দুটো পাখা,টিভি সব আছে।দুজনের রুমে চারজন যাওয়া যায়।পরবর্তী দুজন ডেকের ভাড়া ২০০ করে।কেবিন যদি কেউ না নিতে চায় ডেকে ২০০ টাকা।ছেলেরা দলবেঁধে অনেকে ডেকে যায় যাদের পকেট মানি কম।খুব ভোরে ৬/৭ টায় লঞ্চ পটুয়াখালী যায়।অটো ভাড়া করে বাস স্ট্যান্ড চলে যান।জনপ্রতি ২০/৩০ টাকা।লঞ্চের টাইমে এই ভাড়ায় যাবেনা।একটু দরদাম করে যাবেন।কুয়াকাটা প্রচুর লোকাল বাস যায়।১৪০ টাকা।অনেকগুলি বাস পর পর যায়।খালি বাস দেখে টিকিট কাটবেন।বরিশাল থেকে যে বাস আসে তাতে উঠবেন না।লোক ভর্তি থাকে।একটু অপেক্ষা করে উঠবেন।দু ঘন্টায় পৌঁছে যাবেন।যদি হোটেলে না থাকেন বীচে চলে যাবেন।ছাতার নীচে কাঠের বেড আছে বিশ্রাম করার জন্য ২০ টাকা।বীচে টয়লেট আছে।ভাড়া দেওয়া হয়।সারাদিন ঘুরে সন্ধ্যায় অনেক বাস ছাড়ে।ওগুলো বীচে রাস্তার কাছে

কুয়াকাটা সমুদ্রসৈকত

অল্প টাকায় অনেক বেশি আনন্দদায়ক ট্যুর।।।
২জন গেলে পার পারসন ৩৫০০ টাকা যথেষ্ট ৩ দিন ২রাতের জন্য। কুয়াকাটায় ১৬/১৮ টা স্পট আছে যা আপনি ঘুরে দেখতে পারবেন এবং স্পট গুলো বাইকে ঘুরতে পারবেন। আমার কাছে কুয়াকাটার সব থেকে সুন্দর জায়গা মনে হয় লেবুবনকে।আপনি লেবুবন এ দুপুরের খাবার খেতে পারবেন বা সূর্যাআস্তর সময় যেকোন মাছ বা কাকড়া ফ্রাই খেতে খেতে সূর্যাআস্তর উপভোগ করতে পারবেন অনেক বেশি এঞ্জয় করবেন। কুয়াকাটা বীচ থেকে লেবুবন যেতে ২০০ টাকা বাইক ভাড়া লাগে ১বাইকে ড্রাইভার সহ আর ২জন যেতে পারবেন। আর অনেক বড় মন্দির সূর্য উদয় গমতিখেয়া ঘাট, কাউয়ার চর আর ও আনেক গুলা স্পট দেখতে পারবেন ৩৫০ টাকা নিবে বইক ভাড়া ২জন এর। কুয়াকাটা থেকে সুন্দরবন এর ১টা অংশ দেখা যায় নাম ফাতরারবন বোটে জেতে হয় পার পারসন ৪০০ টাকা নিবে ৪ টা স্পট ঘোরাবে।
ঢাকা থেকে কুয়াকাটা যাওয়ার সব থেকে ভালো বাস সাকুরা পরিবহন ভাড়া ঢাকা টু কুয়াকাটা ৬৫০ টাকা

Post Copied From:anzim Hasan Khan‎>Travelers of Bangladesh (ToB)

কুয়াকাটা ভ্রমন (৩০০০/৩৫০০ টাকার মধ্যে)

ঢাকা থেকে বাস এ ডিরেক্ট যাওয়া যায় সেক্ষেত্রে ভাড়া ৫৫০-৬৫০ টাকা নন এসি বাস।
আবার লঞ্চ এ গেলে, ঢাকা থেকে লঞ্চ এ বরিশাল অথবা পটুয়াখালি নেমে সেখান থেকে বাস এ কুয়াকাটা।
আমরা ঢাকা থেকে লঞ্চ এ বরিশাল গিয়েছিলাম পরে সেখান থেকে বাস এ কুয়াকাটা।
লঞ্চ এ ডেক ভাড়া ১৫০-২০০ এবং সিংগেল কেবিন ভাড়া ৯০০-১০০০ টাকা।
বরিশাল রুপাতলী থেকে বাস ছাড়ে,সব বাস ই লোকাল ভাড়া চায় ২৪০ টাকা, আমরা ২১০ টাকা করে ফিক্স করেছিলাম দরদাম করে। যেতে ৪ ঘন্টা লাগবে।
কুয়াকাটা তে হোটেল বনানী প্যালেস এ ছিলাম,ডাবল বেড ১৫০০ টাকা রেখেছিল।
কুয়াকাটা তে ১৬/১৭ টা স্পট আছে যা বাইক করে ঘুরতে হয়,সকালে সূর্য উদয় দেখতে পারবেন। ভাড়া ৯০০-১০০০ টাকা চাবে কিন্তু দরদাম করে ৫৫০-৬০০ টাকায় হয়ে যাবে, এক বাইক এ ২জন উঠা যাবে।
আসার সময় একইভাবে বরিশাল হয়ে ঢাকা ব্যাক করেছিলাম।
N.B – এর থেকে কমেও ঘুরে আসা যাবে কিন্তু সেটা হয়ত সবাই পারবে না 

Post Copied From:Zarraf Sharar‎>Travelers of Bangladesh (ToB)

বাংলাদেশের সাগরকন্যা

দক্ষিণ পশ্চিমে বাংলাদেশের সাগরকন্যা বলা হয় কুয়াকাটাকে। ১৩ কিমির কিছু বেশি দৈর্ঘ্যের এই সৈকতে আপনি চাইলে ঘুরে আসতে পারেন এখনি। জানাচ্ছি ইন ডিটেইলস। যতটা পারা যায়। আজ অর্থাৎ ১ অক্টোবর সকালে ফিরেছি কুয়াকাটা থেকে। সো আপনাকে যা জানাবো, সেগুলো একদম লেটেস্ট ইনফো।

#যাবেন_কিভাবে?

লঞ্চ অথবা বাস যেভাবে খুশি যেতে পারেন।
#লঞ্চে_গেলে ডেকের ভাড়া ২০০ টাকা জনপ্রতি। কেবিনের ভাড়া ১২০০ টাকা। সন্ধ্যা ৬ টার দিক থেকে ছাড়া শুরু করে লঞ্চগুলো। আমরা গিয়েছিলাম সুন্দরবন ৯ এ। সার্ভিস মোটের ওপর ভালো। পৌঁছে যাবেন ভোরে ৫ টার মধ্যে। রাতে চাইলে লঞ্চেই খাওয়াদাওয়া সেরে ফেলতে পারেন। জনপ্রতি ১৫০ টাকা খরচ পড়বে খুব বেশি হলে। এমভি জামাল ৫, প্রিন্স আওলাদ নামেও আরও কিছু লঞ্চ আছে। সার্ভিস মোটের ওপর ভালো। লঞ্চ আপনাকে নামিয়ে দেবে পটুয়াখালীতে। নেমে অটো নিয়ে যেতে হবে কুয়াকাটার বাসস্ট্যান্ডে ভাড়া ১৫-২০ টাকা জনপ্রতি। সেখান থেকে সরাসরি কুয়াকাটার ডিরেক্ট বাসে যেতে পারেন। ভাড়া ১৪০ টাকা। পুরো বাস একদম লোড না হওয়া পর্যন্ত ছাড়বে না। সিন্ডিকেট করা আছে। ওরা ব্যাপারগুলোকে এভাবেই কন্ট্রোল করে। ঢাকার লোকাল বাসগুলোর মত চেহারা। ডিরেক্ট বাসে ভাগ্য খারাপ হলে সময় লাগবে আড়াই ঘণ্টার বেশি।

আবার চাইলে সেখান থেকে কলাপাড়ার বাসে ওঠে কলাপাড়া ব্রিজের নিচে নেমে যেতে পারেন। ভাড়া ১০০ টাকা জনপ্রতি। সেখান থেকে মাহিন্দ্রা নিয়ে কুয়াকাটা যেতে পারেন। চারপাশের পরিবেশ সুন্দর। রাস্তা কিঞ্চিৎ ভাঙ্গা। ভাড়া জনপ্রতি ৫০ টাকা। এভাবে ভেঙ্গে গেলে সময় লাগবে ২ ঘণ্টা। সবমিলিয়ে খরচ ১৫০ টাকা জনপ্রতি।

#ঢাকা_থেকে_সরাসরি_বাসে গেলে কুয়াকাটা এক্সপ্রেস, ঈগল পরিবহণ, হানিফ, সাকুরা, সুরভী, আবদুল্লাহ পরিবহণসহ বেশ কিছু বাস সার্ভিস আছে। ভাড়া জনপ্রতি ৫০০ টাকা থেকে শুরু করে ৭০০ টাকার মধ্যে। মাওয়া, পাটুরিয়া দুই দিকের বাসই আছে। ভাড়াও নির্ভর করে এই দুই সাইডের ওপর। স্পীডে টানতে অভ্যস্ত এই বাসগুলো। কিছুটা রেকলেস। সিট নর্মালি ভালোই। নামিয়ে দেবে একদম কুয়াকাটা বিচের একটু আগে চার রাস্তার মোড়ে।

#থাকবেন_কোথায়?

কুয়াকাটা ঢোকার মুখেই বনানী প্যালেস, পর্যটন হোটেল, সি কুইনসহ বেশ কিছু হোটেল দেখতে পাবেন রাস্তার দুই পাশেই। হোটেলভেদে ভাড়াও ওঠানামা করবে। এছাড়াও অনেক ছোটখাটো হোটেলও পাবেন যেগুলো খুব একটা সুন্দর না হলেও ২/১ দিন থাকার জন্য মোটের ওপর ভালো। ডাবল বেড রুম ভাড়া ২০০০ টাকা থেকে শুরু। দামদর করে নিতে পারবেন।

#খাবেন_কি?

কুয়াকাটা মোড়ের বাইক স্ট্যান্ডের পাশের রাস্তায় বেশ কিছু হোটেল আছে। খাটি বাংলায় যাকে বলে ভাতের হোটেল, ছালাদিয়া হোটেল। কিন্তু খাবার ঝাক্কাস। প্রাইসও তুলনামূলক কম। বিভিন্ন রকম মাছ ও মাছের ভর্তা থেকে শুরু করে মাংস সবই পাবেন। হোটেলগুলো দেখতে ভালো না হলেও খাবার আসলেই ভালো। অন্তত একবার ট্রাই করতে রিকমেন্ড করব আমি। জনপ্রতি ১৫০ টাকা থেকে ২০০ টাকার মধ্যেই ভরপেট খেয়ে নিতে পারবেন। পানির টেস্ট একটু অন্যরকম। টিউবওয়েলের পানি। আয়রন আছে। মিনারেল জেনারেল ওয়াটারও পাবেন। ডাব ট্রাই করা মাস্ট। ২৫-৩০ টাকা প্রতি পিস।

#যাবেন_ঘুরবেন_কোথায়?

মুল আকর্ষণ হচ্ছে সি বিচ। বলে রাখছি বেশ নোংরা। শক্ত বালি। কিন্তু আবেদন একই রকম। মেইন বিচ থেকে একটু সাইডে সরে গেলে ভিড় একটু কম পাবেন। সিকিউরিটি মোটামুটি। পানিতে লবণাক্ততার পরিমাণ কম। বিচে নেমে হাতের ডানে ট্যুরিস্ট বোটে ঘুরে বেড়ানোর অফার সম্বলিত একটা ছোট্ট অফিস পাবেন। ভাড়া সর্বনিম্ন ২৫০ টাকা। চার ঘণ্টার এই ট্রিপে লাল কাঁকড়ার চর, ফাতরার বনসহ কিছু জায়গা দেখাবে। আরও হাই প্রাইসে বেশি সময়ের ট্রিপও আছে। এছাড়াও মিছরি পাড়ার বুদ্ধ মন্দির দেখতে পারেন। ঝাউবন দেখতে পারেন। রাস্তাগুলো কিঞ্চিৎ ভাঙ্গা। কিন্তু পরিবেশ অসম্ভব সুন্দর। বাইকে ঘুরতে গেলে ট্যুরিস্ট স্পটগুলোর জন্য প্যাকেজ জনপ্রতি ৫০০ টাকা। এক বাইকে দুইজন। চাইলে বাইকে নর্মালি ঘুরতে পারেন। কিমি প্রতি ২০ টাকা জনপ্রতি। খুব বেশি জায়গা নেই ঘোরার। তবে বিচের দিকে যাওয়া পিচের রাস্তার শেষ পয়েন্টটা বেশি বেশি জোস। স্লাবের ওপর পা রেখে বসে থাকতে থাকতে কখন যে সময় পেরিয়ে যাবে, টেরও পাবেন না।

ঘুরে আসুন তাহলে 🙂
Happy Travelling 🙂

Post copied From:Rajvi Bd>Travelers of Bangladesh (ToB

কুয়াকাটা

এটা এই গ্রুপে আমার প্রথম পোষ্ট। অনেক লম্বা পোষ্ট তাই দুঃখিত।
বরিশাল বিভাগের পটুয়াখালী জেলার লতাচাপলি ইউনিয়নে এর অবস্থান।
মাত্র ১৮ কি.মি. দীর্ঘ এই বীচটা কতটা সুন্দর তা না দেখে বোঝা যায় না। রয়েছে নানা প্রাকৃতিক বিশ্ময়। এটি বাংলাদেশের একমাত্র সৈকত যেখান থেকে সূর্যোদয় এবং সূর্যাস্ত দুটোই দেখা যায়।
এর সন্নিকটবর্তী আরও যেসব দর্শনীয় স্থান রয়েছে সেগুলো হলঃ
১. কুয়াকাটার ‘কুয়া’ – কুয়াকাটা সমুদ্রসৈকতের কাছে রাখাইন পল্লী কেরানীপাড়ার শুরুতেই একটা বৌদ্ধ মন্দিরের কাছে রয়েছে একটি প্রাচীন কুপ।
২. সীমা বৌদ্ধ মন্দির – প্রাচীন কুয়াটির সামনেই রয়েছে প্রাচীন সীমা বৌদ্ধ মন্দির, যাতে রয়েছে প্রায় সাঁইত্রিশ মন ওজনের অষ্ট ধাতুর তৈরি ধ্যানমগ্ন বুদ্ধের মূর্তি।
৩. কেরানিপাড়া – সীমা বৌদ্ধ মন্দিরের সামনে থেকেই শুরু হয়েছে রাখাইন আদিবাসীদের পল্লী কেরানিপাড়া।
৪. রাখাইন মার্কেট – সীমা বৌদ্ধ মন্দির ও কুয়ার পাশেই এই মমার্কেটের অবস্থান। রাখাইনদের তৈরি নানান হস্ত শিল্প, তঁাতের তৈরি জামা- কাপড় , সহ বারমিস নানান আসবা পত্র পাবেন এখানে। পাতার বিড়ি নামক বিড়ি পাবেন এখানে চাইলে try করে দেখতে পারেন।
৫. মিশ্রী পাড়া- নানান উপজাতিদের বসবাস এই এলাকাতে। মহুয়া নামক সোম রস যা এখানেই তৈরি করা হয় । (বাচ্চারা এটা থেকে দূরে থাকবেন)
৬. মিশ্রিপাড়া বৌদ্ধ মন্দির – কুয়াকাটা সমুদ্র সৈকত থেকে প্রায় আট কিলোমিটার পূর্বে রাখাইন আদিবাসীদের আবাস্থল মিশ্রিপাড়ায় রয়েছে একটি বৌদ্ধ মন্দির, যাতে রয়েছে উপমহাদেশের সবচেয়ে বড় বৌদ্ধ মূর্তি।
৬. লেবুর বন – বীচে পশ্চিম দিকে এর অবস্থান। খুব সুন্দর ছোট একটি বন। ঝিনুক বীচ নামের বীচটি এখানে। সূর্যাস্ত দেখতে হলে আপনাকে এখানে আসতে হবে। জোনাকি রাতে অসম্ভব সুন্দর লাগে তারা গুলো।
৭. গোমতির লেক – বীচের পূর্ব দিকের গোমতি নদীর মোহনায় অবস্থিত এটি। সূর্যোদয় দেখতে হলে এখানেই আসতে হবে।
৮. লাল কাঁকড়ার চর – এখানে গেলে মনে হবে আপনি কল্পনার জগতে এসেছেন। পুরো বীচ জুড়ে লাল কাঁকড়ার ছড়া ছড়ি। পা ফেলার জন্য জায়গা পাবেন না।
৯. ফাতরার বন – বীচের পশ্চিম দিকে নদীর মোহনার কোল ঘেষে প্রাকৃতিক ভাবে তৈরি হওয়া ম্যানগ্রোভ বন যা সুন্দরবনের এক অংশ হিসেবে পরিচিত। এখানে বানর, বুনো মোরগ, নানান প্রজাতির সাপ , পাখি সহ অনেক বুনো প্রানী দেখতে পাবেন। চাইলেই একটু সময় নিয়ে সুন্দরবনের কটকা রেঞ্জ থেকে ঘুরে আসতে পারবেন।
যেভাবে যাবেন –
ঢাকা থেকে সড়ক ও নৌ দুই পথেই যেতে পারবেন।
সড়ক পথ – গাবতলি থেকে Ac/Non Ac বাস ছাড়ে কুtয়াকাটার উদ্দেশে। ভাড়া AC – ১০০০ টাকা ও Non Ac – ৬৫০ টাকা। সাকুরা ও সুরভী পরিবহনের সার্ভিস ভাল পাবেন।
নৌপথ – বাংলার টাইটানিক নামক লঞ্চে চলার স্বাদটা মিটিয়ে নিতে পারেন। সদর ঘাট থেকে বরিশাল গামী লঞ্চে উঠে পরুন। ভাড়া – ২০০ টাকা থেকে ৮০০০ টাকা। বরিশাল থেকে কুয়াকাটার সরাসরি বাস চলে।
অথবা — ঢাকা থেকে পটুয়াখালী গামী লঞ্চ।
হোটেল- ২০০ টাকা থেকে ২০০০০ টাকা।

Post Copied From:Atik Akon‎>Travelers of Bangladesh (ToB)