সাম্প্রতিক সময়ে সেন্টমার্টিন ভ্রমণের অভিজ্ঞতা

এই মাসের ১২ তারিখে কয়েকজন বন্ধু মিলে সেন্টমার্টিনে গিয়েছিলাম। দ্বীপটিতে এটি আমার দ্বিতীয়বারের মতো ভ্রমণ। প্রথমবারের অভিজ্ঞতার তুলনায় এবার এখানে কিছুটা ভিন্নতা লক্ষ্য করলাম। আগ্রহীদের অবগতির স্বার্থে খরচসহ এই ট্যুরের বিস্তারিত তথ্য উল্লেখ করছি।

ঢাকা থেকে টেকনাফ রুটে বেশকিছু ভালো বাস আছে। আমরা গিয়েছি শ্যামলীতে। সার্ভিস মোটামুটি। এই রুটে সব ননএসি বাসের ভাড়া ৯০০ টাকা। এসি বাসের ভাড়ায় ভিন্নতা রয়েছে। বাস টেকনাফে শিপঘাটের একেবারে কাছে এনে নামিয়ে দেয়। এক্ষেত্রে সবার প্রতি পরামর্শ থাকবে, রাত সাড়ে আটটার আগের বাসে উঠে পড়তে। কোনক্রমে বাস দেরী করে টেকনাফ পৌছালে শিপ মিস হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

আমরা গিয়েছিলাম কেয়ারি সিন্দাবাদ শিপে করে। এই মুহূর্তে চলাচল করছে কেয়ারি সিন্দাবাদ (ননএসি), এলসিটি কুতুবদিয়া (ননএসি), কেয়ারি ক্রুজ এন্ড ডাইন (এসি) ও গ্রিন লাইন (এসি)। ননএসি শিপের মেইন ডেকের ভাড়া ৫৫০ টাকা এবং ওপেন ডেকের ভাড়া ৭০০ টাকা করে। এসি শিপের ভাড়া ১,০০০ থেকে ১,৪০০ টাকার মধ্যে। এবার যথেষ্ঠ সংখ্যক শিপ ছাড়ে নি বলে শিপের টিকিট নিয়ে কাড়াকাড়ি চলছে।
অনেককে দেখলাম, সিট পান নি বলে দাড়িয়ে দাড়িয়ে যাচ্ছেন। ব্যপারটা খুব কষ্টকর না হলেও বয়স্কদের জন্য খানিকটা পরিশ্রমের। তবে শুনতে পেলাম, দু’একদিনের মধ্যে বে ক্রুজ এবং ফারজান ক্রুজ নামের দুটি শিপ চলাচল করতে শুরু করবে।

শিপ টেকনাফ থেকে ছাড়ে সকাল সাড়ে নয়টায়, সেন্টমার্টিনে এসে পৌছায় বারোটায়। শিপঘাটে নেমে হাঁটা শুরু করলাম। ঘাটের একটু সামনে সারি সারি ভ্যান দাঁড়িয়ে রয়েছে। নিজেদের রিসোর্ট/হোটেল খুব বেশী দূরে না হলে হেঁটে যাওয়া-ই ভালো। কেননা, সবগুলো শিপ কাছাকাছি সময়ে পৌছায় বলে তখন ভ্যান ভাড়া হয় খুবই বেশী। আমাদের রিসোর্টের নাম ছিলো Sea View Resort & Sports। ফেইসবুকে রিসোর্টটির রেটিং খুব ভালো দেখে এর সাথে যোগাযোগ করেছিলাম। এর লোকেশন ছিল চমৎকার, বীচের খুব কাছে।

কম খরচের ব্যপারটাকে মাথায় রেখে আমরা তাবুতে ছিলাম। দুটি তাবুতে মোট সাতজন মানুষ। প্রথমদিন নর্থ বীচে গোসল করে ও ভাড়ায় নেয়া সাইকেল চালিয়ে কাটিয়ে দিলাম। সেন্টমার্টিনের পানি কক্সবাজারের তুলনায় অনেক বেশী নীল। যারা কক্সবাজার ও সেন্টমার্টিন, দুটি-ই ভ্রমণ করবেন বলে ভাবছেন, তাদের প্রতি পরামর্শ থাকবে কক্সবাজার দিয়ে শুরু করতে। নইলে সেন্টমার্টিনকে দেখে আর কক্সবাজারকে ভালো লাগবে না।

দ্বিতীয় দিন সকালে ছেড়া দ্বীপ দেখতে গেলাম। ছেড়া দ্বীপে ইঞ্জিনের নৌকায় করে যেতে হয়। জনপ্রতি খরচ হয় ১৫০ টাকা। এছাড়া স্পিডবোট বা গামবোটেও যাওয়া যায়। এগুলো খানিকটা ব্যয়বহুল। যাওয়া-আসা ও ভ্রমণ মিলিয়ে ছেড়া দ্বীপের জন্য চার ঘণ্টার মতো সময় বরাদ্দ রাখতে হবে। ছেড়া দ্বীপে এসে ধারালো প্রবালের ঘায়ে অনেকের পা কেটে যায়। এর জন্য ব্যান্ডেজ বা সমজাতীয় ব্যবস্থা সাথে রাখাটা বুদ্ধিমানের কাজ হবে।

সমুদ্র ছাড়া সেন্টমার্টিনে দেখার মতো আর কিছু নেই। আমাদের একদিন থাকার কথা ছিল। কিন্তু সমুদ্রের মায়ায় পড়ে আমরা আরো একদিন বেশী থাকবো বলে সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম। ফলে শিপে আজ আমরা এসেছি দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে। গতকাল এলে নিজেদের সিটে বসে আসতে পারতাম। বলতে ভুলে গেছি, ফেরার শিপ দুপুর তিনটায় ছাড়ে। টেকনাফে এনে নামিয়ে দেয় সন্ধ্যা ছয়টায়। টেকনাফ থেকে কক্সবাজারে বাসে ১৬০ টাকা নেয়।

সেন্টমার্টিনের খাবারকে বৈচিত্রময় বলা যায় কিনা জানি না। কিন্তু সামুদ্রিক মাছের জন্য এটি একেবারে আদর্শ একটি স্থান। হরেকরকম রেস্ট্যুরেন্টে তাজা মাছ কেটে সাজিয়ে রাখা হয়েছে। আপনি বললেই ভেজে এনে পাতে তুলে দেবে। ভাত-মাছ-ডাল-সবজি খেতে চাইলে ১৯০-২০০ টাকা বাজেট রাখতে হবে। মাছের মধ্যে থাকবে কোরাল/সুরমা/সুন্দরী/লইট্টা ইত্যাদি। রূপচাঁদা খেতে চাইলে ৩০০ টাকা পড়বে। তবে রূপচাঁদা খেতে না চাওয়া-ই ভালো। কালোচান্দা বা টেকচান্দা এনে হাজির করার করার সম্ভাবনা প্রচুর।

কিছু কথাঃ
*সেন্টমার্টিনের রিসোর্টগুলোতে এখন ঘন ঘন চুরি হচ্ছে। জিনিসপত্র সাবধানে রাখতে হবে।
*বীচের কাছাকাছি রিসোর্টে থাকার পরামর্শ থাকবে। সমুদ্রের সান্নিধ্য দিনটিকে রঙ্গিন করে তুলবে। এই ডিসেম্বর মাসের ১৫, ১৬, ২২-২৫, ৩১ তারিখে সেন্টমার্টিনের সকল রিসোর্টের ভাড়া হবে অত্যধিক বেশী। যাদের বাজেট কম, এই দিনগুলো তাদের এড়িয়ে চলতে হবে।
*বারবিকিউ চাইলে রেস্ট্যুরেন্ট থেকে ব্যবস্থা করে দেয়া হয়। চিকেন বারবিকিউ ২০০-২২৫ টাকার মধ্যে এবং কোরালের বারবিকিউ ৩০০ টাকার মধ্যে হয়ে যাবে।
*সেন্টমার্টিনে সার্বক্ষণিক বিদ্যুৎ, শীতাতপনিয়ন্ত্রিত রুম বা স্যাটেলাইট টেলিভিশন পাবেন না।

Happy Traveling 

Post Copied From:Faisal Mahmudur>Travelers of Bangladesh (ToB)

প্রায় ৬০০ বছরের বৃদ্ধ দ্বীপ: কুতুবদিয়া

#কেন যাবেন:
এইখানে কক্সবাজারের মত বড় বড় ঢেউ, সেন্টমার্টিনের মত নীল পানি কিচ্ছু নাই, তবুও এইখানে সমুদ্র দেখা আমার জীবনের সেরা অভিঙ্গতা গুলোর একটা।

এইখানের সব থেকে যে ব্যাপারটা ভাল্লাগসে ঐটা হইলো এই জায়গায় সাগড় পাড়ে ভিড় চোখে পড়ে নাই, রাত দুইটায় সমুদ্র দেখতে গিয়ে কক্সবাজারের মত ফ্ল্যাশলাইটের আলো দেখার চান্স নাই। আর মানুষগুলোর বেশির ভাগ সহজ সরল প্রকৃতির মনেহইসে,তাদের মধ্যে অতিথি সেবার মনোভাব আছে। কক্সবাজার সেন্টমার্টিনের লোকজনের মত পুরোপুরি ব্যবসায়ী মনোভাব তৈরি হয়নাই এখনো। আমরা যে দুইদিন ছিলাম আমরা ছাড়া আর কোন ট্যুরিস্ট গ্রুপ চোখে পড়ে নাই, এলাকার লোকজনও সাগর পাড়ে খুব প্রয়োজন ছাড়া যায় বলে মনেহয়না। কিছুক্ষণের জন্য নিজেদের সাগর পাড়টার মালিক টাইপস কিছু মনেহয়। আমাদের মত ভাগ্যবান হইলে তিনটা পিচ্চি খেলার সাথী সহ একটা ফুটবল পাইলে ঈদ মোবারক।

#কিভাবে যাবেন(চট্টগ্রাম থেকে):

সবচেয়ে সহজ, ঝামেলামুক্ত, স্বল্প খরচে যাওয়ার উপায় হইলো ফিরিঙ্গি বাজার ব্রিজঘাট থেকে সকাল ৭ টায়(গরমে ৬:৩০ সম্ভবত) ছেড়ে যাওয়া বোট। ১০০ টাকা আর সাড়ে তিনঘন্টায় বিনা ঝাঁকুনিতে অনেকটা মন্ত্রমুগ্ধ অবস্থাতেই পৌঁছে যাবেন কুতুবদিয়া। বোট ধরতে চাইলে ৭ টার আগে পৌঁছানোই বেটার। ছোট নৌকায় করে বড় বোটে উঠতে হয় আর নৌকার উপরে বসার জায়গাও মনমত পাওয়া যায় একটু আগে গেলে। নৌকার উপরে শেষ একঘন্টার রোদে কষ্ট হইসে আমাদের, ছাতা বা ক্যাপ সাথে থাকলে ভালোহয়। পুরো রাস্তা নৌকায় না গিয়ে দরবার ঘাট নেমে সিএনজি(মাহেন্দ্র গাড়ি বলে মেবি) দিয়ে বড়ঘোপ বাজার চলে যাইতে পারেন(ভাড়া- লোকাল ৪০ করে একজন), অনেক সময় বাঁচবে শুনে আমরা নেমে পড়ছি ঐখানে।

বাইরোডে যাইতে চাইলে নতুন ব্রিজ থেকে এস আলম বাস আছে মগনামা ঘাট পর্যন্ত, অথবা ব্রিজের ঐপাড় মইজ্যারটেক থেকে লোকাল সিএনজি ১৮০ টাকা একজন। মগনামা ঘাট থেকে কুতুবদিয়া চ্যানেল নৌকা বা স্পিডবোটে( ভাড়া ৩০ আর ৮০ সম্ভবত) পার হয়ে বড়ঘোপ জেটি ঘাট(প্রথম ছবিটা)। জেটি ঘাট থেকে রিক্সায় বড়ঘোপ বাজার(ভাড়া ৩০ টাকা এক রিক্সা)।

#থাকা খাওয়া:
সমুদ্রে খুব কাছাকাছি মানসস্মত হোটেল টাইপসের থাকার জায়গা সম্ভবত একটাই, সমুদ্র বিলাস। শুক্রবার ছাড়া তেমন ভীড় হয়না শুনলাম, তবুও কেউ গেলে একটু যোগাযোগ করে যাইয়েন(০১৭২২০৮৬৮৪৭)।
কুতুবদিয়া এসে খুব ভালো খাওয়া দাওয়া আসা কইরেন না, সামান্য হতাশ হওয়ার সম্ভাবনা আছে। তবে খারাপ না, একটা মোটামুটি ভালো খাবার হোটেলে যেমন হয় আরকি।
সমুদ্র বিলাসের কাছাকাছি হোটেল নিউ মদিনা আর ক্যাফে ডি আলমের নাম শুনে গেসিলাম, ঐখানে গিয়ে নূর হোটেল নামে ছোট অথচ খাবার ঐগুলার চেয়ে বেটার একটা হোটেল পাইসি।

বন্ধুরা বললো এইখানের পান নাকি বেশি ভাল, মহেশখালি থেকে আনে। হোটেলের নিচের দোকান থেকে টেস্ট করে দেখতে পারেন ।

#যা যা দেখতে পারেন:
আমাদের মত হোটেলে ব্যাগ রেখে কাপড় পাল্টে সমুদ্রে
গিয়ে গোসল করতে পারেন। বিকালে চলে যাইতে পারেন বায়ুবিদ্যুৎ কেন্দ্র( ডান পাশের ছবি দুইটা ঐখানে তোলা)। বড়ঘোপ বাজার থেকে ১০ টাকা লোকাল সিএনজি ভাড়া আর রিজার্ভ ১০০,লোকাল গেলে বলে উইঠেন। বায়ু বিদ্যুকেন্দ্রের সাগড় পাড়ে কাটানো বিকাল জীবনের সেরা বিকালগুলোর একটা হবে সম্ভবত। সূর্যাস্তের পর ফিরে এসে রাতের খাওয়া দাওয়ার পর আবার সমুদ্রে যেতে পারেন, ঐদিকটা নিরাপদ।

পরদিন সকালের নাস্তার পর ৪০০ টাকা দিয়ে আসা যাওয়া আর ১ -১:৩০ ঘন্টা ঘোরার কথা বলে একটা মাহেন্দ্র রিজার্ভ করে বাতিঘর গিয়ে বাতিঘর দেখে সামান্য হতাশ হয়ে বামে তাকিয়ে জীবনে দেখা সবচেয়ে সুন্দর বিচ গুলোর একটা দেখি। ছোট ছোট ঝাউ গাছের ছাড়া ছাড়া বনের মত( ৩ নম্বর ছবি) আছে, এরপর সাগরপাড়। ঐখানে ঝাউগাছের ছায়ায় বসে আর উঠতে ইচ্ছা করতেছিল না কারো।

এরপর ব্যগ নিয়ে বের হয়ে কুতুবদিয়ার বিখ্যাত মাজার দেখে বাইরোডে ব্যাক করতে পারেন, মানে বড়ঘোপ জেটি-মগনামা ঘাট(পেকুয়া)-চট্টগ্রাম। আর যারা লবণের খামার দেখেন নাই, সিএন জি বা রিক্সাওয়ালাকে বললে রাস্তায় থামিয়ে দেখাবে।

নৌকায় ব্যাক করার অপশনও আছে, তবে দিনে একটাই নৌকা ছাড়ে কুতুবদিয়া থেকে চট্টগ্রামের দিকে, আর তা সকাল নয়টায়।

বি.দ্র. – ঐখানে কারেন্ট নাই, জেনারেটর আর সৌরবিদ্যুৎ। পাওয়ার ব্যাংক না আনলে প্যারা খাবেন, লাইট ছাড়া কারেন্ট কম সময় থাকে।তাই গরমের চেয়ে শীত কালই সম্ভবত আদর্শ সময় এইখানে বেড়ানোর জন্য।

হ্যাপি ট্রাভেলিং! 🙂

POst Copied From:Nirmol Das‎>Travelers of Bangladesh (ToB)