সাধ্যের মধ্যে সবটুকু সুখ

আপনি যদি দলবেঁধে চট্টগ্রাম থেকে একদিনে কাপ্তাই ঘুরে আসতে চান,সাধ্যের মধ্যে সবটুকু সুখ নিতে চান,তবে পোষ্টটা একদমই আপনার জন্য 🙂

ফ্রেন্ডরা মিলে দলবেঁধে কোথাও ঘুরতে যাওয়া আমাদের পুরানো অভ্যাস।কিছুদিন থেকেই প্লান ছিলো একদিনে কাপ্তায়ের একটা ট্যুর দিবো।দিনক্ষণ ঠিক করে অবশেষে সকালে রওনা দিয়ে সন্ধ্যার পরপরই ফিরে আসতে সক্ষম হলাম।গ্রুপে অনেকে আছে যারা কাপ্তাই যেতে ইচ্ছুক কিন্তু খরচের সঠিক হিসাব,কিভাবে গেলে সহজ হবে বা টাইম শিডিউল কিভাবে সাজাবে তা জানেনা বিধায় যেতে পারছে নাহ তাদের জন্য আমাদের ভ্রমণের দিনটার সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত সম্পূর্ণ শিডিউলটা নিজে তুলে ধরার চেষ্টা করলাম,হয়তো আপনাদের কাজে দিবে ☺

আমাদের ফ্রেন্ড সার্কেলের সবাই স্টুডেন্ট। যেকোনো ট্যুরের আগে আমাদের দুইটা জিনিস মাথায় রাখতে হয়।
১) সব থেকে কম খরচে কিভাবে সবটুকু ফায়দা নিয়ে ঘুরে আসা যায়।
২)সকালে গিয়ে কিভাবে সন্ধ্যার মধ্যে ফিরে আসা যায়।

যেহেতু ফ্রেন্ড সার্কেলে অনেক মেয়ে আছে,সবার পক্ষে বাসায় বলে যাওয়া সম্ভব হয়না,ক্লাস বা বিভিন্ন অজুহাত দিয়ে বের হতে হয় অনেক জনকে।তাই সন্ধ্যার মধ্যেই ফিরে আসার ব্যাপারটা মাথায় রাখতে হয় সবার আগে সব সময়।

আমাদের ট্যুরের প্লানটা ছিলো দুইটা জায়গা ঘিরে।একটা হচ্ছে কাপ্তাই কায়াকিং ক্লাব,যেখানে কায়াকিং করবো,আর দ্বিতীয়টা কাপ্তাই লেক।বলে রাখা ভালো কাপ্তাই লেক আর কাপ্তাই কায়াকিং ক্লাব দুইটাই আলাধা যায়গা আর দুটাতেই আলাধা রকমের মজা।

ট্যুরেরদিন সকলে ৮টার মধ্যে সবাইকে বহদ্দারহাট থাকতে বলা হলো,কারন কাপ্তাই যাওয়ার ক্ষেত্রে সকলে একত্রিত হওয়ার জন্য বহদ্দারহাটই আদর্শ জায়গা।তো মোটামোটি সবাই সকাল সাড়ে ৮টার ভেতর বহদ্দারহাট এসে জমা হলাম।আমরা ট্যুর মেম্বার ছিলাম সর্বমোট ১৫জন,তাই চিন্তা করলাম ডাইরেক্ট টেম্পু নিয়ে চলে যাবো।টেম্পু রিজার্ভ করলে যদিও ভাড়াটা কিছুটা বেশি তবু সবাই এক সাথে বসতে পারবো ভেবেই নেওয়া।আপনি চাইলে টেম্পু না নিয়ে লোকাল বাসেও যেতে পারবেন,সেক্ষেত্রে আপনাকে বহদ্দারহাট বাস টার্মিনালে যেতে হবে।ওখান থেকে কাপ্তাইয়ের লোকাল বাস পাওয়া যায়।আর টেম্পু নিতে চাইলে আপনাকে চার চাক্কার সাদা টেম্পু গুলো নিতে হবে,তিন চাক্কার টেম্পু গুলো ওই রাস্তায় যায়না।

কিছুক্ষন খোঁজাখুঁজি পর দামদর করে ১৭৫০টাকায় কাপ্তাই কায়াকিং ক্লাব পর্যন্ত যাওয়ার জন্য টেম্পু রিজার্ভ করলাম।
আমাদের যাত্রা শুরু হলো সকাল ৯টার পর করে।আঁকাবাঁকা রাস্তার মধ্য দিয়ে চলতে থাকলাম কাপ্তাইয়ের উদ্দেশ্যে।যারা প্রথম যাচ্ছেন কাপ্তাই,তাদের এই রাস্তা ভালো না লেগে উপায় নাই।
গলা ছেড়ে গান আর আড্ডাবাজীর মধ্য দিয়ে চলতে চলতে প্রায় সাড়ে এগারোটার পর কাপ্তাই কায়াকিং ক্লাবের সামনে নামলাম।সোজা নিচে চলে গেলাম বোটের কাছে।তারপর ওখানে থাকা ভাইয়্যাটার কাছ থেকে কায়াকিং এর বিস্তারিত জেনে নিলাম।কায়াকিং করার জন্য এক বোটে দুজন উঠতে পারে,প্রতি বোট ঘন্টায় ৩০০টাকা আর আধা ঘন্টা ১৫০টাকা।
আমরা আঘা ঘন্টা ১৫০টাকা করে মোটা ৮টা বোট নিলাম।পানিতে নামার আগে ওখানে রাখা নির্ধারিত ফরম পূরণ করতে হলো,তারপর সবাইকে লাইফ জ্যাকেট পড়িয়ে দেওয়া হলো।
আপনি যতবড় সাঁতারু হননা কেনো আপনাকে লাইফ জ্যাকেট ছাড়া বোট নিয়ে পানিতে নামতে দেওয়া হবেনা।লাইফ জ্যাকেট পড়ার পরে উনি সবাইকে ৫মিনিটের একটা ব্রিফিং দিলো,কিভাবে বোট চালাতে হবে,বিপদে পড়লে কি করতে হবে এইসব ব্যাপারে।আপনি যদি কোনোদিন বোট না চলিয়ে থাকেন কিংবা একেবারেই সাতার না পেরেও থাকেন তবুও আপনি নিশ্চিন্তে বোট চালাতে পারবেন,কেনোনো আপনি পানিতে পরে গেলেও লাইফ জ্যাকেট আপনাকে ডুবতে দিবেনা আর তাদের ওখানে রাখা ইঞ্জিন চালিত বোট আপনাকে দ্রুতই উদ্ধার করে আনবে।

তারপর দুজন দুজন করে সবাইকে বোটে উঠিয়ে দেওয়া হলো,আমরা মনের আনন্দে চালাতে থাকলাম যে যেভাবে পাড়ি।তারমধ্যে সেল্ফি আর এক বোট থেকে অন্যবোটের ছবি তুলে দেওয়াতো আছেই।দেখতে দেখতে আমাদের আধা ঘন্টা শেষ হয়ে গেলো।স্টুডেন্ট আইডি কার্ড সাথে থাকলে কিছু টাকা ডিসকাউন্ট করা হয়।আমাদের তিনজনের কাছে তখন আইডি কার্ড ছিলো,যার কারনে আমাদের ১৫০টাকা ছাড় দেওয়া হয়।

সময় নষ্ট না করে ভাইয়্যাটার কাছ থেকে বিদায় নিয়ে দ্রুতই আমরা উপরে উঠে আসলাম।দশ পা সামনে আসলেই ফ্লোটিং প্যারাডাইজ নামে একটা রেস্টুরেন্ট। ততক্ষনে সবার পেটে চোঁচোঁ অবস্থা।তো আমরা ওখানে ঢুকে গেলাম দুপুরের খাবার খাওয়ার জন্য,কায়াকিং ক্লাব থেকে গেলে ৫%ডিসকাউন্টেরও ব্যবস্থা আছে ওখানে।

তাদের প্যাকেজ গুলা-
সাদাভাত+দেশি মুরগী+ডিম=২০০টাকা
সাদাভাত+ফার্মের মুরগী+ডিম=১৫০টাকা
সাদাভাত+মাছ+ইত্যাদি=২০০টাকা

খরচ যেহেতু বেশি পড়বে তাই উনাদের সাথে কথা বলে প্যাকেজ না নিয়ে ভেংগে ভেংগে নিলাম।
মুরগী যেহেতু ২পিচ করে থাকে তাই ১৫জনের জন্য ৮বাটি নেই,সাথে আলু ভর্তা ও ডাল নেই।
তো আমাদের জন ডিসকাউন্ট সহ জনপ্রতি ১১০টাকার মতো করে বিল আসে।

আমাদের পরবর্তী স্থান কাপ্তাই লেক,সেখানে যেতে হলে কাপ্তাই নেভী গেইট যেতে হবে।তো লোকাল বাসের জন্য অপেক্ষা করতে থাকলাম,কিছুক্ষনের মধ্যে লোকাল বাস পেয়ে গেলাম।১০টাকা করে জনপ্রতি ভাড়া দিয়ে কাপ্তাই বাজারে চলে গেলাম।ওখান থেকে প্রতিজন ২০টাকা করে অর্থাৎ ১০০টাকা করে রিজার্ভ সিএনজি নিলাম কাপ্তাই নেভী গেইট যাওয়ার জন্য।ওখানের সিএনজি গুলা আপনার থেকে ভাড়া কমও নিবেনা বেশিও নিবেনা,ফিক্সড ভাড়া।
আপনাকে নিয়ে সিএনজি দাঁড়াবে নেভী গেইট পর্যটন স্পটে,ওখান গিয়ে নেভী ক্যান্টিন থেকে জন প্রতি ২০টাকা করে টিকিট সংগ্রহ করতে হবে।তারপর পুরো এলাকা ইচ্ছামতো ঘুরে দেখুন,মুগ্ধ না হয়ে পারবেন নাহ।

ঘুরা শেষ হলে আবার ক্যান্টিনের সামনে দাঁড়ান, না হয় হেটে আরেকটু সামনে চলে আসুন।ওখানে সিএনজি রাখার নির্ধারিত জায়গা আছে।
তো আমরাও সেম উপায়ে ঘুরাঘুরি শেষ করে ৪টার পরে আবার কাপ্তাই বাজারে চলে আসলাম।বাজার থেকে কিছুক্ষন পরপরই চিটাগাং এর উদ্দেশ্যে বাস ছেড়ে আসে।ভাড়া ৬৫টাকা করে,দামদর করে ৬০টাকা করে ১৫টা সিট নিলাম। আড়াই ঘন্টার জার্নি শেষে বাস আমাদের বহদ্দারহাট বাস টার্মিনালে নামিয়ে দিলো,ওখান থেকে যে যার বাসায়।

নিচে জনপ্রতি খরচ ও যাওয়ার বিস্তারিত দেওয়া হলো:

♦বহদ্দারহাট থেকে টেম্পুতে কায়াকিং ক্লাব ১৭৫০টাকা
♦কায়াকিং ৮বোট ১০৫০(১৫০টাকা ছাড়)
♦দুপুরের খানা ১৭১০টাকা
♦কায়াকিং ক্লাব থেকে ১৫জন কাপ্তাই বাজার পর্যন্ত বাসে ১৫০টাকা
♦বাজার থেকে নেভীগেইট তিন সিএনজি ৩০০টাকা
♦টিকেট ১৫জনের ৩০০টাকা
♦নেভী গেইট থেকে কাপ্তাই বাজার তিন সিএনজি ৩০০টাকা
♦কাপ্তাই থেকে বাসে চট্টগ্রাম ৯০০টাকা

মোট খরচ:১৭৫০+১০৫০+১৭১০+১৫০+৩০০+৩০০+৩০০+৯০০=৬৪৬০টাকা
জন প্রতি: ৬৪৬০/১৫=৪৩০টাকা

কাপ্তাই কায়াকিং ক্লাব যেভাবে খুজে পাবেন:
কায়াক ক্লাব জুম রিসোর্ট থেকে কিছুটা সামনে এবং ফ্লোটীং প্যারাডাইজ রেস্টুরেন্টের একটু আগে অবস্থিত। কায়াক ক্লাবে আসতে হলে জুম রিসোর্ট এর গেইট ফেলে কিছুটা সামনে এগিয়ে আসতে হবে এবং কাপ্তাই কায়াক ক্লাবের ব্যানার সমূহ তীর চিহ্নের মাধ্যমে আপনাকে কায়াক ক্লাবের পথ দেখিয়ে দিবে

যারা বাসে কাপ্তাই যাবেন:
বাসে যেতে হলে আপনাকে বহদ্দার বাস টার্মিনালে যেতে হবে,ওখান থেকে লোকাল বাস ছাড়ে কাপ্তাইয়ের।ভাড়া ৬০টাকা নিবে।

যারা সিএনজিতে যাবেন:
সিএনজিতে যেতে হলে আগে বহদ্দারহাট থেকে ১০নাম্বার বাসে করে রাস্তারমাথা যেতে হবে,ওখান থেকে কাপ্তাইয়ের সরাসরি সিএনজি তেমন পাওয়া না গেলেও কাপ্তাইয়ের আগে লেচু বাগান নামক যায়গার সিএনজি সিরিয়ালে পাবেন।ভাড়া নিবে ৬০টাকা।লেচু বাগান থেকে আবার কাপ্তায়ের সিএনজি পাবেন,ভাড়া নিবে ৩০টাকা।চাইলে ২৫টাকা দিয়ে কায়াকিং ক্লাবের সামনে নেবে যেতে পারবেন।

(ভুলত্রুটি হলে ক্ষমা করবেন,আর কোন জিজ্ঞাসা থাকলে অবশ্যই বলবেন)

Post Copied From:SK Munna>Travelers of Bangladesh (ToB)

এক এর ভিতর চার

শুভলং ঝর্ণা ও শুভলং টি এন্ড টি পাহাড়
কাপ্তাই লেক,রাঙামাটি

ভ্রমণ পিয়াসুদের জন্য প্রকৃতির এক অপরূপ সৃষ্টি হচ্ছে রাঙামাটির শুভলং ঝর্ণা ও শুভলং টি এন্ড টি পাহাড়।সুউচ্চ পাহাড় থেকে পড়া ঝর্ণার পানি আপনাকে বিমোহিত করবেই।ঝর্ণার হিমশীতল পানি আপনার ক্লান্তিকে নিমিষেই দূর করে দেবে।শুভলং ঝর্ণার পাশেই আছে শুভলং টি এন্ড টি পাহাড়।এডভেঞ্চার প্রিয় মানুষ হলে উঠে যেতে পারেন পাহাড়ে।তবে এর জন্য প্রয়োজন পাহাড় জয় করার ইচ্ছা শক্তি আর শারীরিক দক্ষতা।অধিকাংশ মানুষই অর্ধেক যাওয়ার পর ফিরে আসে।তাই এক্ষেত্রে আপনাকে কৌশলতা অবলম্বন করতে হবে।কিছুদূর যাওয়ার পর বিশ্রাম নিয়ে নিন তারপর আবার ট্রাকিং শুরু করুন।ভাগ্য সহায় হলে দেখা পেয়ে যাবেন বানর আর হরিণের ।উপরে একটি পুলিশ ক্যাম্প আছে।ক্যাম্পেতে বসে রেস্ট নিতে পারেন।তাদের কাছে শুনা এই পাহাড়ের উচ্চতা নাকি সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ১৮৬০ ফুট।যদিও আমি শিউর না।যদি তাই হয় তাহলে এটি প্রায় ১৮৬ তলা ভবনের সমান হবে।তবে আমি শিউর উপরে উঠার পর আপনার সমস্ত পরিশ্রম স্বার্থক হয়ে যাবে নিচের দিকে তাকালে। মনে হবে রাঙামাটি জেলাটি কাপ্তাই লেকের পানির মধ্যে ভেঁসে আছে।আর ছোট ছোট দ্বীপ স্বরূপ পাহাড়কে মনে হবে কচুঁরিপানার মত পানিতে ভেঁসে আছে। এই পাহাড়ের অপরূপ সৌন্দর্য সারা জীবন মনে রাখার মত।

শুভলং ঝর্ণা আর শুভলং টি এন্ড টি ভ্রমণ করার আরেকটি ভাল দিক হলো যাওয়ার পথের সৌন্দর্য।লেকের ছোট ছোট পাহাড়ের সৌন্দর্য আপনার মনকে ছুঁয়ে যেতে বাধ্য। দুইপাহাড়ের মাঝদিয়ে বয়ে যাওয়া লেককে দেখে আমার মনে হয়েছিল আমি বোধহয় পথ হারিয়ে থাইল্যান্ড চলে এসেছি😜।আবার বার বার এর সুবিশাল জলরাশি দেখে টাংগুয়ার হাওরের কথা মনে হচ্ছিল।

যেভাবে যাবেন:ঢাকা থেকে রাঙামাটি।রাঙামাটির রিজার্ভ বাজারে নৌকা পাবেন।সারাদিনের জন্য ভাড়া করুন ১৩০০-১৫০০ টাকার মধ্যে।১০-১৫ জন যেতে পারবেন নৌকাতে। যেতে দেড় থেকে দুই ঘন্টা সময় লাগবে।লেকের ভিতর আরো ৭-৮ টা টুরিস্ট স্পট আছে।সবগুলো ঘুরে দেখতে পারেন।

যারা সাতার জানেননা তারা অবশ্যই লাইফ জ্যাকেট ইউজ করবেন।আর লেকের ভিতর ময়লা আবর্জনা ফেলবেন না।

(এটা আমার প্রথম রিভিউ। ভুল হলে ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন।হালকা কুয়াশা থাকার কারণে ছবি ভাল আসে নি।আর শীতের সময় শুভলং ঝর্ণায় পানি কম থাকে।)

Post Copied From:Jahid Hasan‎>Travelers of Bangladesh (ToB)