হিমালয় কন্যা পঞ্চগড়

পঞ্চগড় হলো বাংলাদেশের সর্বউত্তরের জেলা। এটি একটু সুরু জেলাও বটে।
পঞ্চগড় জেলাতে ৫ টি উপজেলা মোটামুটি সব উপজেলাতেই কিছু না কিছু আছে।
১★আটোয়ারি উপজেলা ★ এটা পঞ্চগড় জেলা শহর থেকে ২২ কি.মি দূরে অবস্থিত।
এখানে দেখার মত রয়েছে চাবাগান,মির্জাপুর শাহী মসজিট,বার আউলিয়ার মাজার, সুইস গেট। এছাড়া ডিসেম্বর মাসে ১ মাস ব্যাপী শতবর্ষ পুরাতন একটা মেলা হয়।
২★বোদা ★ পঞ্চগড়ের আর একটি উপজেলা হলো বোদা এখানে কয়েকটা প্রাচীন মন্দির রয়েছে আর তেমন কিছু নেই।
৩★দেবীগন্জ★ এই উপজেলা তে একটা প্রাচীন কালিমন্দির রয়েছে এছাড়া লিচু ও আম বাগান আছে।
৪★পঞ্চগড় সদর উপজেলা ★ এখানে রয়েছে পাথরের জাদুঘর যা রকস মিউজিয়াম নামে পরিচিত এটি মহিলা কলেজের তত্ত্বাবেধনে থাকে এছাড়া কিছু চাবাগান ও একটা প্রাচীন দিঘী ও ভিতরঘর রয়েছে।
৫★তেতুলিয়া উপজেলা পঞ্চগড় ও ঢাকা থেকে সরাসরি আসা যায় এই উপজেলাতে।
যেখান থেকে কাঞ্চনজঙ্ঘা দেখা যায়, যার তিন দিকেই ভারতের সীমানা-প্রাচীর দিয়ে ঘেরা। এর উত্তর দিকেই ভারতের দার্জিলিং জেলা উপজেলা সদরে একটি ঐতিহাসিক ডাকবাংলো আছে। এর নির্মাণ কৌশল অনেকটা ভিক্টোরিয়ান ধাঁচের। জানা যায়, কুচবিহারের রাজা এটি নির্মাণ করেছিলেন। ডাকবাংলোটি জেলা পরিষদ পরিচালনা করে। এর পাশাপাশি তেঁতুলিয়া উপজেলা পরিষদ একটি পিকনিক স্পট নির্মাণ করেছে। ওই স্থান দুটি পাশাপাশি অবস্থিত হওয়ায় সৌন্দর্যবর্ধনের বেশি ভূমিকা পালন করছে। সৌন্দর্যবর্ধনে এ স্থান দুটির সম্পর্ক যেন মুদ্রার এপিঠ-ওপিঠ। মহানন্দা নদীর তীরঘেঁষা ভারতের সীমান্তসংলগ্ন (অর্থাৎ নদী পার হলেই ভারত) সুউচ্চ গড়ের ওপর সাধারণ ভূমি থেকে প্রায় ১৫ থেকে ২০ মিটার উঁচুতে ডাকবাংলো ও পিকনিক স্পট অবস্থিত।

ডাকবাংলোর বারান্দায় দাঁড়ালে আপনার চোখে পড়বে ভারত-বাংলাদেশের অবারিত সৌন্দর্য। ওই স্থান থেকে হেমন্ত ও শীতকালে কাঞ্চনজঙ্ঘার সৌন্দর্য উপভোগ করা যায়। বর্ষাকালে মহানন্দা রূপ অনেক বেড়ে যায় এছাড়া এখানে রয়েছে অনেক চা বাগান ও বাংলা বন্ধা জিরো পয়েন্ট।

কিভাবে যাবেন ★ ঢাকা থেকে সব উপজেলাতেই সরাসরি বাসে যাওয়া যায় এছাড়া মোটামুটি সারাদেশের সাথে বাস যোগাযোগ আছে পঞ্চগড়ের সাথে।জেলা শহর থেকে বাস বা মাহেন্দ্র দিয়ে অন্যসব উপজেলাতে যেতে পারবেন।
কয়েকমাস যাবত ঢাকা টু পঞ্চগড় ট্রেন সার্ভিস চালু হয়েছে।
কোথায় থাকবেন ★ মোটামুটি জেলা শহর সহ সব উপজেলা তে থাকার ব্যাবস্থা আছে ২০০- ১০০০ টাকা র মাঝে অনেক ভালো হোটেল পাবেন থাকার জন্য।
খাবার ★ এই জেলা তে খাবারের দাম খুব কম।
ভ্রমণের উপযুক্ত সময় ★সেপ্টেম্বর টু ডিসেম্বর।
তাহলে দেরী না করে একবারের জন্য হলেও ঘুরে আসুন হিমালয় কন্যা পঞ্চগড়ে।
ছবি ★ গুগল থেকে নেওয়া
আমার সব ছবি তে মানুষ পাশাপাশি সেলফি তাই রোলস অনুযায়ী দিতে পারলাম।
পরে আমার ট্যুর দেওয়া ঠাকুরগাঁও জেলা নিয়ে হাজির হবো আপনাদের সামনে।

Post Copied From:Bijoy Babu‎>Travelers of Bangladesh (ToB)

পঞ্চগড় থেকে সিনিওলচুর দর্শন

পঞ্চগড় থেকে কাঞ্চনজঙ্ঘা ছাড়াও আশে পাশের আরো কয়েকটি পর্বত দেখা যায় তারমধ্যে অন্যতম সিনিওলচু ।
সিনিওলচু দেখার জন্যই যখন আজ বাংলাবান্ধার কাছাকাছি পৌছালাম তখন ভোর ছয়টা বাজতে ৫ মিনিট বাকি ।এবার উদ্দেশ্য কাঞ্চনজঙ্ঘা নয় । সিক্কিম এ অবস্থিত সিক্কিম এর সর্ব উচ্চ পর্বত গুলোর একটি ‘সিনিওলচু’ । সবচেয়ে সুন্দর বরফ পর্বত গুলোর একটি বিবেচনা করা হয় সিনিওলচুকে । কাঞ্চনজঙ্ঘার চুড়ো থেকে পুর্ব দিকে একাকি দাঁড়িয়ে আছে সিনিওলচু , চুড়োয় সোনালী আভা । নিচে ধানের ক্ষেতেও সোনালী রঙ । ভোরের সোনালী আলোয় তা আরো জ্বলজ্বল করছিল । গত বছর দেখেছিলাম জেনেছিলাম সিনিওলচুর কথা কিন্তু তেমন ছবি তোলা হয়নি । ১৯৩৬ সনে ৬৮৮৮ মিটার উচ্চতার পর্বতটি সর্বপ্রথম জয় করেন জার্মান পর্বতারোহী কার্ল উইয়েন । পরে সিক্কিমিজ পর্বতারোহী সোনাম গ্যাটসো ও সিনিওলচু জয় করেন ।
পঞ্চগড় এর সব যায়গা থেকে সিনিওলচু দেখা যায় না । তেতুলিয়া ডাক বাংলো থেকে অল্প একটু দেখা যায় কিন্তু বোঝা যায়না । কারন সামনে দার্জিলিং এর পাহাড় সারি পড়ে যায় । তেতুলিয়া থেকে যত পুর্বে যাওয়া যায় ততই ভালো দেখা যায় সিনিওলচু । এই ছবি শালবাহান এর পূর্বদিকে এক গ্রাম থেকে তোলা ।
পঞ্চগড় থেকে কাঞ্চনজঙ্ঘা দর্শন এর পাশাপাশি বোনাস হিসেবে সিনিওলচুর ও স্মৃতিও গেথে নিতে পারেন মনে ।
দেখতে আসা সম্পর্কিত যেকোন তথ্যের জন্য ইনবক্স করতে পারেন ।

পঞ্চগড় এ স্বাগতম 🙂
হ্যাপী ট্রাভেলিং

চোখ মেলেই কাঞ্চনজঙ্ঘা.

শেষ বিকেলের খাবার টাই যে রাতের আহার হবে সেটা কেউই ভাবিনি! কারণ শেষ বিকেলে খেয়ে দেয়ে দেশীয় স্বাভাবিক নিয়ম অনুযায়ী বেড়াতে বের হলাম যে যার মত। সবাই ফিরবে যার-যার মত রাতের খাবার খেয়ে, নির্ধারিত সাময়িক আবাসে। কিন্তু আগের পুরো রাত আর সারাদিনের জার্নির ক্লান্তি একাকার হয়ে আমরা আত্ন-সমর্পণ করলাম বিশ্রাম আর বিছানার কাছে।

কারণ, ১৫-২০ মিনিটের মধ্যে সবাই ফিরে এসেছিলাম নিজেদের আবাসে! এতো বেশী উঁচু-নিচু পথে এতটা আয়েশ করে আর উপভোগ করা যাচ্ছেনা বলে। তার চেয়েও বড় কথা হল, সকল দোকান-পাট-বাজার-রেস্তোরাঁ-মল সব একে-একে তাদের ঝাঁপ ফেলে আর শেকল টেনে তালা লাগিয়ে দিচ্ছিল! কিছু বুঝে ওঠার আগেই!

তাই নিজেদের নিয়মিত ক্ষুধার কথা ভেবেই আগাম কিনে নিয়েছিলাম পাওরুটি আর জিলাপি! কারণ এ ছাড়া আর কিছুই পাওয়া যাচ্ছিলোনা! তাই সেই ঢের আর সেই সাথে একটি শীত তাড়ানোর ভিন্ন স্বাদের কিছু পানীয়! সে বললেও আর না বললেও!

রুমে ফিরে খাবার গুলো আবার চালান করে দেয়া হল বাংলাদেশী গাড়লদের পেটে! কোন অপেক্ষা ছাড়াই ডাবল কম্বলের নিচে সুড়সুড় করে ঢুকে পড়লাম যে যার মত সুবিধা করে নিয়ে এবং অচিরেই ঘুম! প্রস্তুতি ছাড়াই, কে-কখন ঘুমোলো কেউ জানিনা।

অনেক ভারী পর্দার সামান্য ফাঁক গলে আলোহীন প্রত্যূষে ঘুম ভেঙে গেল। ওহ এতো ভোঁরে ঘুম ভাঙার কি দরকার ছিল? কোথাও বেরোনোর এতো বেশী তারা নেই। ধীরে-সুস্থে উঠে হেলে-দুলে বের হব, তারপর আজকের প্ল্যান কোথায় ও কিভাবে যাব। কিন্তু এতো সকালে কি করি? আবার ডুব দিলাম কম্বলের নিচে। কিন্তু আগের রাতে যেহেতু সাভাবিকের চেয়ে অনেক তাড়াতাড়ি ঘুমিয়ে পড়েছি তাই ঘুম আর কিছুতেই আসছিলনা।

এপাশ-ওপাশ আর উসখুস করে অন্যের ঘুম না ভাঙিয়ে বরং উঠে একটু মেঘ আর কুয়াশার লুকোচুরি দেখি! আর যদি সেই সাথে দেখা মেলে এক টুকরো পাহাড়ের তো কথাই নেই আর! পাহাড় সেতো আমার প্রেম! তাকে যখন-যেখানে-যেভাবেই পাইনা কেন, আমি আপ্লুত-বিমুগ্ধ-বিলুপ্ত ওর মাঝে!

সেই ভেবে খুব সন্তর্পণে অনেক ভারী পর্দা সরিয়ে রুমের সাথে লাগোয়া করিডোরের ছিটকানি খুললাম, ওহ যেন ছিটকে ফেলে দিতে চাইলো কনকনে ঠাণ্ডা এক দমকা হাওয়া! সেই সাথে মুখ ভিজিয়ে দিল না চাইতেই, বেহায়া কুয়াশা! তবুও শীতের চাঁদর গায়ে জড়িয়ে বের হলাম… আমার বাম পাশে ঘন সবুজ অরণ্যে বেষ্টিত থরে-থরে সিঁড়ির মত সাজানো পাহাড়, আমি ও দিকেই তাকিয়ে ছিলাম মুগ্ধ হয়ে, অন্য দিলে তাকাবার ইচ্ছেই যে হয়নি আর!

আবারো বাতাস, আবারো ধেয়ে আসা কুয়াশা, ভিজে যাওয়া মুখ! কুয়াশার ঢেউয়ে একটু মুখ ঘোরাতেই আমার আরও ডানে কাছের জানালায় চোখ পড়তেই যেন ঝলসে গেলাম! সোনালি আভায় আর হঠাৎ চোখে পড়া অর্কর ছটায়! এবার বাধ্য হয়ে পাহাড়কে উপেক্ষা করে ডানে তাকালাম… বেশ-বেশ দূরে অর্কর আভায় কমলা-সোনালি-রুপালি-গোলাপি-ক্ষীণ লাল-আর কিছুটা হলুদের ছটা দেখতে পেলাম!

এই সময়টার সঠিক অনুভূতিটা কি ছিল বা হয়ে থাকে সেটা আসলে বোঝানোর নয়, ঠিক বোঝারও নয়! এই রকম মনোমুগ্ধকর সম্মোহনে মানুষ আসলে বোবা হয়ে যায় বোধয়! অথবা হয়ে যায় অনুভূতিহীন-বাকরুদ্ধ-অসাড়! কারণ তখন তাকিয়ে-তাকিয়ে দেখা ছাড়া পৃথিবীর আর সব কিছুই তুচ্ছ আর অমুলক অথবা ভিত্তিহীন বাস্তবতা! তখন ওই সম্মোহনই একমাত্র প্রার্থনা-প্রাপ্তি বা প্রবঞ্চনা!

এভাবে কয়েক মিনিট নির্বাক হয়ে সেই সম্মোহন উপভোগ করার পর, সূর্য আর একটু আলো ছড়ালে দূরের সেই নানান রঙের মেলা, শেতশুভ্র বরফে আচ্ছাদিত কাঞ্চনজঙ্ঘার লাজুক ঘোমটা সরাতে লাগলো, একটু-একটু করে, ভেঙে লজ্জা-শরম ও গাল ভরা অভিমান!

কারণ? ওটা যে কাঞ্চনজঙ্ঘা সেটা যে বুঝতেই পারিনি তখন!

এরপর আর নয়, সেটা বিশ্বাসঘাতকতা হয়ে যাবে সেই ভঁয়ে অন্যদেরও ডেকে তুললাম, ততক্ষণে শুরু হয়ে গেছে আমার অবিরাম ক্যামেরার ক্লিক-ক্লিক-ক্লিক! যেখানে-যেমন ওঠে উঠুক, পরে দেখেশুনে বাছাই করবো! আগে তো তুলে নেই জতখুশি তত!

এবার অন্যরাও সরব হল, সব ভুলে, কেউ-কেউ হাড় কাঁপানো শীতেও উপেক্ষা করে, তবে বঞ্চিত হয়েছিল সেদিনকার মত, সেই প্রথম দেখা রঙ-বেরঙ এর বরফ-আলোর সম্মিলিত সম্মোহন থেকে! তবে এর পরের দিন থেকে একটি দিনের জন্যও নয়, কেউ-ই।

কারণ আমাদের সামনেই…… সব সময়, সারাক্ষণ দেখতে পাই, রুমের পর্দা সরালেই বা করিডোরে দাঁড়ালেই, হেটে-বসে বা শুয়ে, যখন-যেভাবে-যেমন আর যত খুশি………

সে এক অপার্থিবতা, চোখ মেললেই কাঞ্চনজঙ্ঘা……!

ঢাকা-শিলিগুড়ি-দার্জিলিং

Post Copied From:Sajol Zahid‎>Travelers of Bangladesh (ToB

পঞ্চগড় থেকে কাঞ্চনজঙ্ঘা আপডেট

পঞ্চগড়ে গতকয়েক দিন থেকে ঘন কুয়াশা পরছে। যেই ডাকবাংলো থেকে ভালো ভিউ পাওয়া যায় সেখানেও তীব্র কুয়াশা। ভাগ্য ভালো হলে হয়তো ভিউ পেতে পারেন তবে চান্স ৫/১০ শতাংশ আমার মতে।

কাঞ্চনজঙ্ঘা’র ভিউ দেখার সবচেয়ে ভালো সময় প্রতিবছর অক্টোবর ১৫ থেকে নভেম্বরের শুরু পর্যন্ত এই ২০-২৫ দিন। তাই সামনের বছর আবার। এই বছর আর যেয়ে লাভ হবে বলে মনে হয় না। কষ্ট করে এতদূর যেয়ে হতাশ হবেন অনেকেই তাই ভাবলাম একটু আপডেট দেই যেয়ে যাতে হতাশ না হতে হয়।

চুপিচুপি টাইগারহিলে

আজ দার্জিলিং ভ্রমণের শেষ দিন। মনটা বড্ড মেঘলা! ফিরে যাবার জন্য নয়! এজন্য যে টাইগার হিল যাওয়া হলনা! ভ্রমণ সঙ্গীরা সবাই তৃপ্ত তাঁদের এবারের ভ্রমণ নিয়ে। সুতরাং আর কোথাও যেতে চায়না, কেউই! অথচ সবাইকে বোঝালাম যে যাব তো সকালে। জীপ নিজেদের। শিলিগুড়ি যাবার পথেই তো পড়বে। একটু আগে বের হতে হবে এই যা!

কিন্তু অতো ভোরে কেউই এই হিম ঠাণ্ডা শীতের সকালে লেপের উষ্ণতা ভেঙে বের হবেনা! আমার মনের ভিতর খচখচ, দার্জিলিং এলাম অথচ এতো জনপ্রিয় টাইগার হিলে গেলাম না! সেটা কি মেনে নেয়া যায়! সমস্যা হল আমার কাছে আর অবশিষ্ট কোন রুপিই নাই! সুতরাং একা-একা যে যাবো সেই সম্ভাবনাও ক্ষীণ!

রাতে ডিনার করে বেদনা নিয়ে ঘুমোতে ঢুকলাম। লেপের তলায় শরীর ওম হয়েছে ঠিকই কিন্তু মনে ওম নেই! কখন যেন ঘুমিয়ে গেলাম। একসময় ঘুম ভাঙল, স্বাভাবিক নিয়মে মধ্যরাতের শেষে। আবার বিছানায় যাব, এমন সময় চোখ গেল রুমের দেয়াল ঘড়ির দিকে। রাত ৩:৩০ পার হয়ে গেছে। মনে পড়লো আরে যারা টাইগার হিল যায়, এই সময়ই তো বের হয়!

রোমাঞ্চের বিদ্যুৎ খেলে গেল শরীর, মন ও মাথায়! বেরিয়েই দেখিনা, যদি কোন হৃদয়বান ব্যাক্তি বা গ্রুপ পাওয়া যায়, একটু নিয়ে যাবে দয়াকরে! বহু মানুষই তো যাবে। কাউকে না কাউকে নিশ্চই পাওয়া যাবে! আমার মন বলছে যেতে পারবো! সুতরাং বেরিয়েই দেখিনা কি হয়? মনকে তো বোঝাতে পারবো যে চেষ্টা করেছি কিন্তু পারিনি!

যেই ভাবা, সেই কাজ। প্রস্তুত হলাম নতুন ও নিজস্ব এডভেঞ্চারের নেশায় মাতাল হয়ে! ডেকে তুললাম আর এক জনকে। যে না গেলেও অন্তত বাঁধা দেবেনা! আমার প্রস্তুতি আর উদ্যম দেখে সেও উঠে গেল এবং তৈরি হয়ে নিল!

৪ টা বাজে। দুজন হোটেল বয়কে ডেকে, গেট খুলে বের হলাম। চারিদিকে রাতের শেষ অন্ধকারের হাতছানি। একটু অজানা আশংকা অচেনা অন্ধকারে! সামান্ন গাঁ ছমছমে শিহরণ! সব মিলে একটা কেমন-কেমন অনুভুতি। অব্যাক্ত, গুমোট, খিটখিটে মোট কথা সুখকর নয় আদৌ! হোটেলের নিচু থেকে উপরে রাস্তায় উঠে মনের বিসন্নতা বিলীন হয়ে গেল একনিমিশেই!

এতরাতে চারিদিকের কোলাহল আর কলকাকলি দেখে! সেই সাথে হাজারো জীপের বহর দেখে। আলোয়-আলোয় আলোকিত পুরো রাস্তা। আগে-পিছে, দূরে যতদূর চোখ যায়, আলো আর আলো! ঝলমলে চারিদিক দেখে! এবার মনটা খুশিতে নেচে উঠালো। সম্ভাবনা নিশ্চই আছে। সুযোগ পাবই, এই ভেবে!

দুজন মিলে অনেক্ষণ ধরে চেষ্টা করেও তেমন কারো মনোযোগ আকর্ষণ করতে ব্যর্থ হলাম! সবাই ব্যাস্ত নিজেদের নিয়ে। অন্য কোনদিকে কারো খেয়াল করার সময় কোথায়? আর সবচেয়ে বড় কথা সব গাড়িই ভরপুর! কাউকে অনুরোধ করার কোন সুযোগই নেই!

এবার আমার সঙ্গীকে জিজ্ঞাসা করলাম, তার কাছে কোন রুপি আছে কিনা? নেই! একদমই নেই! আর কোথাও যাওয়া হবেনা যেনে গতকাল রাতেই সব খরচ করে ফেলেছে! শুধু টাকা আছে তাও মাত্র ৫০০! আর আমার কাছে তো শুরু থেকেই নেই। আমার কাছেও আছে মাত্র ৫০০ টাকা! কিন্তু অদম্য ইচ্ছা আর চেষ্টা থাকলে বিধাতা যে কাউকেই নিরাশ করেননা তারই প্রমান হল আবারো! এবং দারুণ নাটকীয়তায়! বলি সেই গল্প….

দুজনে বিরস বদনে বসে-বসে দেখছি অন্যদের দুর্বার যাত্রা! মানিক বন্দোপাধ্যয়ের সেই উক্তির মত “দুই ক্ষুধার্ত কুকুর! সুখ পাচ্ছে অন্যদের খাওয়া দেখে!” আসলে টাইগারহিল দেখতে যাওয়া দেখে!

পিছন থেকে গাড়ির আওয়াজ। আমাদের কে সরে যাবার ইশারা। গাড়িটি আমাদের ক্রস করে যেতে-যেতে আবার থেমে গেল! সদ্য কৈশোর উত্তীর্ণ যুবক। ছোট একটি কার নিয়ে যাচ্ছে। আমাদের উদেশ্যে তার জিজ্ঞাসা? টাইগারহিল যাব নাকি! আমরা বিস্মিত, আরে বলে কি? এই ভেবে। হ্যাঁ যাব কিন্তু রুপি নাই! তার উত্তর ডলার তো আছে?

নাহ! আছে বাংলাদেশী টাকা! যাবে?

সে দ্বিধান্বিত। আসলে তার বাবা কলকাতা গেছে। গাড়িটা ফাঁকা পড়ে আছে। এইজন্য কিছু বাড়তি উপার্জনের আশায় বেরিয়েছে, কাউকে না জানিয়ে! সে যেতে চায় কিন্তু বাংলাদেশী টাকার মান নিয়ে তার ধারনা নেই। তাকে বোঝালাম যে মান প্রায় কাছাকাছি, ভারতের ১০০ টাকা আমাদের ৭৫ টাকার চেয়েও বেশী। সুতরাং সে ১০০০ টাকায় যেতে পারে। এতে তার ৭৫০ টাকা হবে।

সে একটু অনিশ্চতা আর কিছুই না পাওয়ার চেয়ে অল্প পাওয়া ভাল এইসব ভেবে-ভেবে শেষ পর্যন্ত সম্মত হল! আর আমাদের আনন্দ! সে ছিল সীমাহীন! আরও একবার নিজেকে নিজে সাধুবাদ জানালাম। অদম্যতা আর হার না মানার সাহসিকতার জন্য। শেষ দেখে ছাড়া মানসিকতার জন্য এবং জয়ী হবার সম্ভাবনার জন্য।

আমরা চলছি, ভীষণ দ্রুত গতিতে। যেহেতু বেশ দেরি হয়ে গেছে। সূর্য উদয়ের মুহূর্ত উপভোগ করতে না পারলে তো আর কোনোই লাভ নেই! চলছি, আঁকাবাঁকা পাহাড়ি পথের একপাশে গভীর খাঁদ, একপাশে খাড়া পাহাড়ের ছোট রাস্তা ধরে। ঘুম স্টেশন পেরিয়ে দুটো বা তিনটা পাহাড় ডিঙ্গানোর পরেই শুরু হল জ্যাম! সারি-সারি গাড়ি পুরো রাস্তা জুড়ে! যেহেতু ছোট গাড়ি। জায়গা খুবই কম লাগে। সেহেতু সেইসব গাড়ির সারি ভেদ করেই চলছে আমাদের টগবগে যুবক। অতিরিক্ত সামান্ন অর্থের সন্ধানে আর আমাদের শেষ রোমাঞ্চের স্বাদ দিতে।

এভাবে আরও ২০ মিনিট চলার পরে আর কোনো ভাবেই যাওয়া যাচ্ছেনা! কিন্তু আর বেশী দুরেও না। সুতরাং নেমে গেলাম কার থেকে। যুবকের নাম্বার নিয়ে। এবার শুরু পাহাড় চড়ার পালা। পাগলের মত উঠছি, পাহাড়ের লতাপাতা, গাছের শিকড়, ইটপাথর উপেক্ষা করে! রাস্তা ধরে গেলে দেরি হব।, তাই সর্টকার্ট করে, ট্রেকিং পদ্ধতি অনুসরন করে! সারা গায়ে ধুলো-বালু, কাঁদা, হাতের ছিলে যাওয়া, সব জয় করে পৌঁছে গেলাম সেই কাঙ্ক্ষিত চুড়ায়! টাইগারহিলের শীর্ষে!

ভিড় আর ভিড়, মানুষ আর মানুষ! যেন মেলা বসেছে বছর শুরুর! আবারো সবকিছু উপেক্ষা আর বকাবকি তুচ্ছ করে চলে গেলাম সামনে! সূর্যি মামা শুধু আমাদের জন্যই যেন অপেক্ষা করছিল! শুধুই আমাদের জন্য!

কাঞ্চনজঙ্ঘার রুদ্ধশ্বাস রূপে আরও হাজারো রঙে রাঙিয়ে দিয়ে রঙিন হয়ে উঠছে সূর্য তার সকল সৌন্দর্য নিয়ে! কত যে রঙের খেলা, কত যে খেয়ালি কাঞ্চনগঙ্ঘা আর কিজে এক অব্যাক্ত অনুভূতি? যার প্রকাশ ভাষায় অসম্ভব! এ শুধু গিয়ে, দেখে নিজের মত করে অনুভবের।

আমার ভাষায় বর্ণনা অসাধ্য। সেই ভাষাই যে নেই! দারুণ স্বার্থক ও শতভাগ আনন্দের ভ্রমণ পুরোপুরি পূর্ণতায় পরিসমাপ্ত।

POst Copied From:Sajol Zahid‎>Travelers of Bangladesh (ToB)

কাঞ্চনজঙ্ঘার দিনরাত্রী

কাঞ্চনজঙ্ঘার দিনরাত্রী

হিমালয় কন্যা পঞ্চগড় <3

তেতুলিয়ার ফরেস্ট ডিপার্টমেণ্টের ইকো কটেজ কাপিয়ে সাড়ে চারটা থেকে এলার্ম বাজতে থাকে ৫ টা পর্যন্ত , তেতুলিয়ার ভোরের ঠান্ডায় ঘুম থেকে উঠা বেশ কস্টকর । সঙ্গীদের ডেকে তড়িঘড়ি করে রেডি হয়ে যন্ত্রপাতি,বাইক নিয়ে বের হয়ে পড়ি তেতুলিয়ার রাস্তায় হাড় কাপানো ঠান্ডায় । ৪০ মিনিট লাগে গন্তব্যে পৌছাতে । উদ্দেশ্য প্রথম আলোয় পাহাড় দেখা , ছবি তোলা ।

মিনিট বিশেক থাকে সোনালী আলো । সাদা পাহাড় ধীরে সোনালী হয়ে যায় , নিচে কার্শিয়ং শহরের ঝিকিমিকি লাইট জ্বলে , নিচে সবুজ সোনালী মাঠে কুয়াশার আস্তরন ,অসাধারন সুন্দর , দেখে ভড়কে যাই ছবি তুলবো নাকি বসে দেখবো , ফটোগ্রাফাররা ঠিকভাবে সৌন্দর্য উপভোগ করতে পারেনা , ছবিই তোলা লাগে । খুব অল্প সময়ে সাবজেক্ট বের করা , কম্পোজিশন করা বেশ কঠিন ।

ছবি তোলা হলে মাঠে ঘাটে নাশতা করে আবার বেড়িয়ে পড়ি পাখি দেখতে , তারপর দুপুরে খেয়ে গাছের তলে ঘুম । আবার পাখি , সন্ধ্যায় আবার পাহাড় । এভাবেই গেল তেতুলিয়ার কয়েক দিন । তেতুলিয়া যাওয়ার পথে নতুন পাখি দেখলাম , ভাবিনাই এই পাখির দেখা পাবো পঞ্চগড়ে । ১৫ কেজি ওজনের পাখি প্যালিকেন । তাও দুইটা ।

বেশ কিছু নতুন যায়গায় দাঁড়িয়ে পাহাড় দেখলাম , দেখে মনে হচ্ছিল না বাংলাদেশে আছি । এক জায়গা থেকে ভুটানের তিনটা পাহাড় চুড়া দেখা যায় সে নিয়ে পরে পোস্ট দিবো । নিজ জেলা পঞ্চগড় যে এত সুন্দর আবার নতুন করে আবিস্কার করলাম ।
পথে ঘাটে দেখা হয় পাহাড় দেখতে আসা টুরিস্টদের , বেশ ভালো লাগে । দুইজন আবার আমাকেই আমার কথা জিজ্ঞেস করলো ।

ব্যাক টু ব্যাক তিনটা ট্রিপে সাথে ছিল ছোট ভাই তুর্য্য , তুষার আর লেমন ভাই । সবার সাথে সময় গুলো বেশ উপভোগ্য ছিল । মাঝে যোগ দিয়েছিলেন আমিন স্যার , শাকির স্যার , রাহী ভাই ।
ট্রিপ গুলো শুধু পাহাড় দেখার ছিলো না , বেশ কিছু কাজ নিয়ে গিয়েছিলাম । সফল বলা যায় । বিশেষ করে তুষার অনেক কস্ট স্বীকার করেছে প্রোজেক্ট নিয়ে । সময়গুলোকেও উপভোগ্য করে তুলেছে সে , পাখির প্রতি তার আগ্রহ আমাকে মুগ্ধ করেছে । লেমন ভাইয়ের আতিথেয়তায় আমরা মোটেও মুগ্ধ নই । আবার আসবো জ্বালাতে 😀
ছবির মাঝে বড় করে ওয়াটারমার্ক দিলাম না , দিতে ভালো লাগেনা । আশা করি সবাই মেধাস্বত্ব আইনের প্রতি সম্মান দেখাবেন ।

Post Copied From:Firoz Al Sabah‎>Travelers of Bangladesh (ToB)

নিরিবিলি আর সুন্দর জায়গা তেঁতুলিয়া, কাঞ্চনজঙ্ঘা

ভ্রমনের জন্য খুবই নিরিবিলি আর সুন্দর জায়গা তেঁতুলিয়া। এখানকার মানুষ গুলো খুব সাধারন আর অনেক হেল্পফুল। তাদের সাথে কিছুক্ষণ গল্প করলেই বুঝতে পারবেন তারা কতটা সাদাসিধে আর মিশুক প্রকৃতির। শুধু কাঞ্চনজঙ্ঘা দেখার জন্য না, এখানকার মানুষ গুলোর সাথে কিছুক্ষণ সময় কাটানোর জন্য হলেও এখানে একবার ঘুরে আসা উচিত। (তবে অবশ্যই এটাকে “সাজেক” বানিয়ে ফেলবেন না)
যেভাবে যাবেনঃ ঢাকা (গাবতলি) থেকে সরাসরি তেঁতুলিয়া যায় শ্যামলীর বাস। ভাড়া ৬০০/- টাকা। আর তেঁতুলিয়াতে ঘুরার জন্য লোকাল ভ্যান অথবা অটো ব্যাবহার করতে পারেন। লোকাল ট্রান্সপোর্টের ভাড়া খুবই কম।
বাস স্ট্যান্ডের কাছেই হোটেল সীমান্তের পাড় আছে। তাদের সার্ভিসও ভাল।
তেঁতুলিয়ার ফুল অ্যালবামের লিংকঃ https://www.facebook.com/tushar.roy.cse/media_set…
#তেঁতুলিয়া #কাঞ্চনজঙ্ঘা

Post Copied From:Tushar Roy‎ > Travelers of Bangladesh (ToB)