গত ১৬ই নভেম্বর তুমুল ঝড়ো বাতাস আর গুড়িগুড়ি বৃষ্টির মাঝেই নিলাচলের ক্যাম্পিং সারলাম। বৃষ্টি ভেজা সলিং রাস্তা ধরে নিলাচলের একদম উপরে মোটরবাইকগুলো উঠাতে বেশ বেগই পেতে হয়েছিল আমাদের। তারপরেও ক্যাম্পিং এর আমেজ যেন বৃষ্টির মধ্যে ঢাকা থেকে প্রায় সাড়ে তিনশো কিমি চালিয়ে যাবার ধকল নিমিষেই ভুলিয়ে দিলো।
পরেরদিনের(১৭.১১.২০১৭) ক্যাম্পসাইট ছিলো আরো আকর্ষণীয়… আরো আরাধ্য। কক্সবাজারের বীচ বরাবরই আমার কাছে খুবই আবেদনময়ী। যেন সারাক্ষণই হাতছানি দিয়ে ডাকে… তাই বহুদিনের জমানো ইচ্ছেটাকে বাস্তবে রূপ দিতে আমরা ১৬জন মোটরসাইক্লিস্ট নিলাচল থেকে খুব ভোরে তাবুটাবু গুছিয়ে রউনা দিলাম শামলাপুর বীচের উদ্দেশ্যে। আসলে ক্যাম্পিং করার উদ্দেশ্যই থাকে নিবিড়ভাবে প্রকৃতিকে উপভোগ করা। তাই নির্জনতা হচ্ছে এর ১ম শর্ত। শামলাপুরের এই বীচটি সেদিক থেকে অনেকটাই নির্জন। আবার অপরদিকে নির্জন হলেও সৈকতটিকে আমার পুরোপুরিই নিরাপদ মনে হয়েছে। সাথেই মেরীনড্রাইভ সংলগ্ন বাজার। বাজারের সাথেই পুলিশের চেকপোস্ট। একটু আগালেই বিজিবির আরেকটি চেকপোস্ট। ফলে অনেকটাই নিরাপদ। রোহিংগা ক্যাম্পও অনেক দূরে। খাবারদাবারের ঝামেলা নেই। সারাদিনের জার্নির পরে নিজেরা কিছু করতে না চাইলে সৈকতেই ছোট্ট একটি হোটেল আছে। সন্ধ্যার আগে পৌঁছাতে পারলে ওদের বললে ওরাই ব্যবস্থা করে দিবে। ফলে পেয়ে যাবেন সৈকতে বসেই ডিনারের সুযোগ। সাথেই আছে ওয়াশরুম। ওদের বললেই চাবি দিয়ে দিবে। পাশাপাশি আছে দুটি নলকূপ, চাইলে গোসল করে নিতে পারবেন। নামায পড়তে চাইলে কাছাকাছিই আছে একটি মসজিদ।
কক্সবাজার থেকে মেরীনড্রাইভ ধরে প্রায় ৫০কিমি আগালে বাহারছড়া ইউনিয়নে পড়েছে এই শামলাপুর সমুদ্র সৈকত। কিছু মাছধরার নৌকা আর জেলেরা ছাড়া কোন মানুষজনও আপনার চোখে পড়বে না… ঝাউবনে পাবেন সবুজের ছোঁয়া। সমুদ্রের আছড়ে পড়া ঢেউয়ের সামনে ঝাউবনে ঘেরা নির্জন প্রকৃতিকে পেয়ে আপনি ১৬ আনাই উপভোগ করবেন নিশ্চিত। কক্সবাজার, হিমছড়ি বা ইনানিতে কত মানুষের ভীড়… হৈহল্লোর। এখানে তাঁর কিছুই নেই… শুধু আপনি আর সমুদ্র। বিশ্বাস করুন… আপনাদের মাঝে আর কেউ নেই… কোন হকার বেরসিকের মতো আসবেনা আপনার ধ্যান ভাংগাতে … পড়ন্ত বেলায় মাছ ধরার নৌকাগুলো টেনে তোলার দৃশ্য… জেলেদের জাল দিয়ে মাছ ধরা… স্থানীয় শিশুদের দৌড়ঝাঁপের মধ্যে চোখে পড়বে শুধুই সমুদ্র আর তাঁর নীল জলরাশির শোঁ শোঁ গর্জন…. ব্যস, এবার হারিয়ে যান 🙂
**কলাতলি থেকে চান্দের গাড়ি বা থ্রী হুইলার ভাড়া করে শামলাপুর বললেই নিয়ে যাবে। ৫০ কিমি যেতে হয়তো ঘন্টাখানেক লাগবে।
Post Copied From:Abdul Momen Rohit>Travelers of Bangladesh (ToB)