ময়মনসিংহের ইতিহাস পরে জানবো । আগে আপনাদের ঘুরিয়ে নেই আমাদের প্রিয় শহরকে । আমাদের যাত্রা শুরু করবো রাজধানী থেকেই । ইচ্ছে হলে ট্রেনে বা বাসে করে ময়মনসিংহে আসতে পারবেন । সকাল ৭.৩০ মিনিটে তিস্তা এক্সপ্রেসে অথবা মহাখালি বাসস্ট্যান্ড থেকে এনা পরিবহনে আসতে পারবেন । তবে বাসে সকাল ৬ টায় রওনা দিলে ৮.৩০ টা নাগাদ মাসকান্দা বাসস্ট্যান্ড ময়মনসিংহে । ট্রেনে আসলে সকাল ৮:০০ কমলাপুর থেকে ময়মনসিংহ আসতে ১১.৩০ টা বেজে যাবে ।
ভাড়া পরবেঃ
এনা বাসে- জন প্রতি ২২০ টাকা।
আন্তনগর ট্রেনেঃ ১২০ থেকে ২৭০
বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ঃ
যেখানেই নামুন । প্রথমে নাস্তা খেয়ে নিবেন । এরপর অটোরিক্সায় চলে যাবেন সোজা বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়…ভাড়া প্রতিজন ২০-৩০ টাকা। রিক্সায়ও যেতে পারেন,ভাড়া ৫০ টাকার বেশি নয় ।
ইচ্ছে হলে রিক্সা ঘন্টা খানিকের জন্য নিতে পারেন। বলে নিবেন পুরো বিশ্ববিদ্যালয় ঘুরিয়ে বোটানিক্যাল গার্ডেনের সামনে নামিয়ে দিবে । ভাড়া ১৫০-২০০ নিবে।
সেখানে যা দেখবেন,
মৎস গবেষণা ইনস্টিটিউট ও আবাসিক এলাকার প্রাকৃতিক সৌন্দর্য । এছাড়া এখানে আছে দৃষ্টি নন্দন ‘একোয়াপনিক গার্ডেন’ । এরপর চলে যাবেন হর্টিকালচার এরিয়াতে সেখানে কিছুক্ষন থেকে চলে আসবেন বাংলাদেশের একমাত্র কৃষি মিউজিয়ামে । এখানে আসার পথে পাবেন অপরুপ সৌন্দর্যের প্রতীক আমবাগান !!
দেখা শেষ হলে জব্বারের মোড়ে চা খেয়ে বোটানিক্যাল গার্ডেন চলে আসবেন (১৯৬৩ সালে এ বোটানিক্যাল গার্ডেনটি প্রতিষ্ঠা করা হয়। এর মধ্যে ঢুকেই প্রাণ জুড়িয়ে যাবে সারি সারি অচেনা সব গাছ দেখে। সুন্দর বাঁধানো রাস্তা আর তার দুই পাশের সুশোভিত বৃক্ষরাজি ছেড়ে আসতে ইচ্ছে করবে না। জেনে অবাক হবেন যে এ গার্ডেনে ৫৫৮ প্রজাতি কয়েক হাজার গাছ রয়েছে) ।
পাশেই ব্রহ্মপুত্র নদ, পাল তোলা রঙিন নৌকা বাধা সারি সারি, সময় নিয়ে ঘুরতে পারেন।
তারপর কে আর মার্কেটে মালাই চা, গরুর দুধের চা খেয়ে নিবেন অবশ্যই।
এরপর সোজা চলে যাবেন কেওয়াটখালি সেখানে আছে শতবর্ষী রেলব্রীজ । ঠিক সেখানেই দেখতে পারবেন উপর ও নীচ দিয়ে রেললাইন । এটি বিরল !
মুক্তাগাছা জমিদার বাড়ি
সোজা চলে আসবেন টাউন হল । সিএনজিতে ২৫ মিনিটে চলে যাবেন মুক্তাগাছা জমিদার বাড়িতে । সবকিছু দেখে মুক্তাগাছার বিখ্যাত মন্ডা খেয়ে চলে আবার ফিরে আসবেন শহরে,টিচার্স ট্রেনিং কলেজে…..।
শশী লজ
এখানেই শশী লজ । প্রায় দেড়শ বছর আগে মুক্তাগাছার জমিদার সূর্যকান্ত আচার্য চৌধুরী ৯ একর জমির ওপর দোতলা এ নয়নাভিরাম ভবনটি তৈরি করেন। নাম রাখেন তাঁর দত্তক ছেলে শশীকান্তর নামে। এ বাড়িটি ‘ক্রিস্টাল প্যালেস’ বা ‘রংমহল’ নামেও পরিচিত ছিল।
আলেকজান্ডার ক্যাসেল
হেঁটে চলে আসবেন । নোট দেই……..(আলেকজান্ডার ক্যাসেল ময়মনসিংহ শহরের পুরোনো একটি স্থাপনা কাঠামো । মহারাজা সূর্যকান্ত আচার্য ১৮৭৯ সালে প্রায় ৪৫ হাজার টাকা ব্যয় করে ততকালীন জেলা ম্যাজিস্ট্রেট আলেকজান্ডারের সম্পত্তি রক্ষার্থে এ প্রাসাদটি নির্মাণ করেছিলেন । প্রাসাদটিতে লোহার ব্যবহার বেশি করা হয়েছিল বলে এলাকাবাসী এটিকে ‘লোহার কুঠি’ নাম দিয়েছিল । প্রতিষ্ঠার পর থেকে ভবনটিতে অনেক বরেণ্য ব্যক্তির পদধূলি পড়েছে । ১৯২৬ সালে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ময়মনসিংহ সফরের সময়ে আলেকজান্ডার ক্যাসেলে কিছুদিন ছিলেন । এ ছাড়া এখানে আরো এসেছিলেন লর্ড কার্জন, দেশবন্ধু চিত্তরঞ্জন দাশ, নওয়াব স্যার সলিমুল্লাহ, কামাল পাশা প্রমুখ । এটি বর্তমানে শিক্ষক প্রশিক্ণ কেন্দ্রের পাঠাগার হিসেবে ব্যবহৃত হয়)
গৌরীপুর লজ
সোনালী ব্যাংক বললেই রিক্সার চালক নিয়ে যাবে । চমৎকার একটি কাঠের বাড়ি । নিশ্চিত থাকেন বাড়িটিতে একদিন থাকার ইচ্ছে হবে !
জয়নুল পার্ক ও ব্রহ্মপুত্র
হেঁটে ৫ মিনিটে চলে আসুন নদের পাড়ে । উপভোগ করুন নির্মল বাতাস ও সবুজ পাতা দৃশ্য ।
ময়মনসিংহের মানুষের প্রাণের স্পন্দন এখানে, কিছুক্ষন পরেই পেয়ে যাবেন জয়নুল সংগ্রহশালা …!!!
জয়নুল সংগ্রহশালা
এখানে এসে আপনার ভালোলাগা ভিন্ন মাত্রায় পৌছাবে । স্থাপত্য ছবিতে আপনি মগ্ন হয়ে যাবেন । নোট দেই …(১৯৭৫ সালে এ সংগ্রহশালাটি প্রতিষ্ঠিত হয় । এখানে শিল্পাচার্যের ৭০টি চিত্রকর্ম ছিল কিন্তু কিছু ছবি চুরি হয়ে যাওয়ায় এখন মোট ৬৩টি চিত্রকর্ম প্রদর্শিত হচ্ছে । এসব ছবির মধ্যে আছে শম্ভুগঞ্জ ঘাট, শম্ভুগঞ্জ ব্রিজ, স্কেচ, স্কেচ, স্কেচ, স্কেচ, স্কেচ, স্কেচ (বংশীবাদক), বাস্তুহারা, প্রতিকৃতি এবং অন্যান্য অনেক ছবি । এসব ছবি ছাড়াও রয়েছে তাঁর ব্যবহৃত জিনিস এবং তাঁর কিছু স্থিরচিত্র । সংগ্রহশালাটি শুক্রবারের দুপুর ২টা ৩০ মিনিট থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত খোলা থাকে । অন্যান্য দিন সকাল ১০টা থেকে। প্রবেশ ফি ২০ টাকা)
আনন্দ মোহন কলেজ
কাছেই বিখ্যাত এই কলেজটি । স্থাপত্যশৈলী আপনার মন কাড়বে । লাল বিল্ডিংটি খুবই সুন্দর । এই কলেজের শিক্ষক ছিলেন জাতীয় নেতা শহীদ সৈয়দ নজরুল ইসলাম সহ অনেক নামী ও গুণি ব্যাক্তিরা।
সামনে ফুচকা খেতে ভুলবেন না।
সারাদিন ঘুরার পর ঘড়ির কাটায় বিকাল ৫টা বেঁজে যাবে । ইচ্ছে হলে সন্ধ্যার নদের আলো উপভোগ করতে পারেন । যদি ট্রেনে ঢাকা ব্যাক করতে চান তাহলে ৫.২৩ ও ৭.১৫ মিনিটে ট্রেন আছে । বাস রাত ৮ টা পর্যন্ত মাসকান্দা থেকে ছেড়ে যায় তবে ব্রিজ মোড়ে রাত ৯ টা পর্যন্ত বাস পাবেন ।
ময়মনসিংহের নামকরনঃ
এবার আসুন সংক্ষেপে জেনে নেই ইতিহাস।
বাংলাদেশের প্রাচীন জেলাগুলোর মধ্যে অন্যতম ময়মমনসিংহ । ১৭৮৭ সালের ১ মে এই জেলা প্রতিষ্ঠিত হয়। ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির শাসনামলে প্রশাসনিক সুবিধা এবং বিদ্রোহ দমনে ব্রিটিশরা এ জেলা গঠন করেছিল । ময়মনসিংহের পুরোনো নাম মোমেনশাহী । মধ্যযুগে মোমেন শাহ নামে এক সাধক ছিলেন, তাঁর নামেই এটি মোমেনশাহী নামে পরিচিতি পায় । পরবর্তীকালে বাংলার স্বাধীন সুলতান সৈয়দ আলাউদ্দিন হোসেন শাহ তাঁর ছেলে সৈয়দ নাসির উদ্দিন নসরত শাহর নামানুসারে এর নামকরণ করা হয় নসরতশাহী বা নাসিরাবাদ । কিন্তু এ নামে রাজপুতনায় আরেকটি জায়গা থাকায় নাম পরিবর্তন করে ময়মনসিংহ রাখা হয়।
থাকা ও খাওয়াঃ
রাতে থাকতে চাইলে
→ হোটেল আমির ইন্টারন্যাশনাল
→ হোটেল মুস্তাফিজ
→ সিলভার ক্যাসেল
এছাড়া সাধারণ হোটেলের মধ্যে, নিরালা হোটেল
হোটেল মমতাজ সহ আরো অনেক পাবেন।
আমির এবং মুস্তাফিজে ভাড়া পরবে প্রতিরাত,
সিঙ্গেল/ ডাবল বেড, এসি,/ নন এসি- ১০০০/১৫০০/২০০০ এরকম।
সিলভার কেসেলে সর্বনিম্ন ভাড়া ২০০০/২৫০০ থেকে শুরু।
খাবারঃ
যে খাবারগুলো বিখ্যাতঃ
→ খন্দকারের ভূনা খিচুড়ি
→ সারিন্দা,ধানসিড়ির,প্রেস ক্লাবের বিরিয়ানি,
→ মুক্তাগাছার মন্ডা
→ নেত্রকোনার বালিশ মিষ্টি( নেত্রকোনা যেতে হবে)
→ জব্বারের মোড়ের মিলন মামার দোকানের দই চিড়া
→ চাচার হোটেলের বাংলা খাবার (স্বল্প দাম)
→ বিপিন পার্কের বুলেট চা
→ চড়পাড়া ল্যাবএইডে পাশে, কালজিরার চা, তেতুল চা
→ কৃষ্ণা কেবিনের মিষ্টি
ভালো খাবারের হোটেল পাবেন সিকে ঘোষ রোডে
→ সারিন্দা,ধারসিড়ি, অবন্তি, রি ইট, বেস্ট বাইট, সিএফসি,আরএফসি, কিচেন ৩৬৫, বিগ বার্গার,ফৃড কিং,মিনিয়নস, ইট মি,সরগরম, খন্দকার, রান্নাঘর, মোঘল দরবারসহ অনেক ভাল হোটেল এবং ফাস্টফুড রেস্টুরেন্ট পাবেন। এছাড়া দুর্গা বাড়ি রোডেও কিছু হোটেল আছে।
১০০- ২০০ টাকায় ভাল প্যাকেজে খেয়ে নিতে পারবেন মজাদার সব খাবার 🙂
অল্পদামে বাংলা ভাল খাবার খেতে চাইলে, আবার যেতে হবে কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় জব্বারের মোড়ে।
মিষ্টির জন্যে পাবেন কৃষ্ণা কেবিন/দয়াময় মিষ্টান্ন বা মিষ্টি কানন । দোকানগুলি আশেপাশেই ।
আজ এ পর্যন্তই।
যদি হাতে একদিন সময় নিয়ে আসতে চান তবে,
পরদিন সকালে ঘুরে আসতে পারেন চিনামাটির পাহাড় দুর্গাপুরে।
ট্রেনে গেলে ৫০০ টাকার মধ্যে সব ঘুরে আসতে পারবেন দুর্গাপুর থেকে।
[[ একা বা গ্রুপ করে আসতে চাইলে ইনবক্সে জানাতে পারেন, ফ্রি থাকলে সময় দিবো 🙂
😉 ফ্রি গাইড হিসেবে আমিতো আছিই 😉
আমাদের ময়মনসিংহের মানুষ খুবি অতিথি পরায়ন 🙂 ]]
আমাদের প্রাণের শহর ময়মনসিংহে সু স্বাগতম।
ভালো থাকুন । আপনার ট্রাভেলিং আনন্দদায়ক হোক
Post Copied From:Aríf Ahméd Ríád>Travelers of Bangladesh (ToB)