১২,৬৬৭ হাজার রুপি রুট প্লান ( ঢাকা , কলকাতা , আগ্রা ,দিল্লি, মানালী, আম্রিতাসর )

,

ঘুরে আসুন ঢাকা – কলকাতা – আগ্রা – দিল্লি – মানালী – আম্রিতাসর ( পাঞ্জাব ) – কলকাতা – ঢাকা মাত্র ১৮৬ ডলার বা ১২,৬৬৭ হাজার রুপি ( রুট প্লান )
.
কি অবাক হচ্ছেন। ভাবছেন গাজা খুড়ি গল্প মারছি না হয় ফাউল একটা টুরের গল্প শুনাচ্ছি। না ! একটা পরিকল্পিত ভালো বা লাক্সরিয়াস টুরের গল্প বলছি। দালাল বা এজেন্সি বাদ দিয়ে নিজে নিজে ট্যুর করতে শিখুন 🙂 । এবার নিচে পড়তে থাকুন। এই টুর দিতে হলে আপনাকে মিনিমাম ৩ জন হতে হবে এবং সময় লাগবে ১৫ দিন।
.
◄◄▌▌ দিন এক : ঢাকা থেকে বেনাপোল শ্যামলী , গ্রীন লাইন, সোহাগ পরিবহন ৫০০ টাকা বা ৪২০ রুপি। বাংলাদেশ ইমিগ্রেশনে খরছ ৫০ রুপির মত। এবার সোজা চলে আসবেন বনগাঁ রেলওয়ে স্টেশনে খরছ সি এন জি ৩০ রুপি। এখান থেকে শিয়ালদাহ ট্রেনের ভাড়া ২০ রুপি। আপনি সোজা চলে এলেন শিয়ালদহ। প্রথম দিন কলকাতায় থাকবেন না। শিয়ালদহ থেকে রাতের ট্রেন ধরে চলে যাবেন আগ্রা ফোরট রেলওয়ে স্টেশন। ভাড়া নিবে স্লিপার ক্লাস ৫৬৫ রুপি মাত্র। যারা ভাবেন স্লিপার ক্লাস খারাপ তাদের জন্য এক বালটি সমবেদনা। শিয়ালদাহ রেলস্টেশনে এসে এর পিছনের গেটে চলে যাবেন। ওখানে কম দামে ভালো খাবার পাওয়া যায়। ১০০ রুপি দিয়ে ভাত আর মাছ পাবেন আর ৭ রুপির সোডা খাবেন। সোডাটা মিস করবেন না।। অস্থির জিনিস। আল ইন্ডিয়া এয়ারটেল সিম + ১ জিবি কিনবেন ৩০০ রুপি দিয়ে । ভোডা ফোনের কভারেজ কম । এয়ারটেল বেষ্ট
.
দিন ১ এর মোট খরছ ৪২০+৫০+৩০+২০+৫৬৫+৩০+১০০+৭ +৩০০ = ২০৩৩ রুপি
.
◄◄▌▌দিন দুই : ট্রেনে খাবেন আন্ডা বিরিয়ানি। প্রতি প্যাকেট ১০০ রুপি মাত্র, সাথে থাকবে ২ টা ডিম আর ফ্রাইড রাইস । ২ বেলা আন্ডা বিরিয়ানি আর সকালে নাস্তা মিলে খরছ ২৫০ রুপি। আপনার যদি চা খাবার ইচ্ছে থাকে তবে খেয়ে নিন। ১০ রুপি পার কাপ। স্লিপার ক্লাসে আপার টা নিবেন। রাতে শান্তির ঘুম আর দিনে ট্রেনের জানালা দিয়ে ভারতবর্ষ কে দেখুন। আপনি এসি কামড়ায় গেলে হয়তবা আরাম বেশী পাবেন বাট ভারতবর্ষ তো আর দেখতে পারবেন না ঠিকমত। যারা ট্রেন ভ্রমন করেছেন তারা জানেন ট্রেনের দরজায় দাঁড়িয়ে বাহিরের জগত দেখার মজাটা কিরকমের।
.
দিন ২ এর মোট খরছ: ২৫০+২০= ২৭০ রুপি
.
◄◄▌▌দিন তিন: সকাল বেলা চলে আসবেন আগ্রা ফোরট স্টাশনে। সকালে ট্রেনেই নাস্তা সেরে নিবেন। খরছ হবে ৫০ রুপি। আমরা ছিলাম স্টেশনের পাশেই অজয় ইন্টান্যাশনালে। ১ রাতের জন্য ভাড়া ৯৫০ রুপি বা পার পারসন হিসেবে ৩১৭ রুপি। এবার হোটেলে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে নিন। হোটেল থেকে বেড়িয়ে হাতের ডান দিকে একটু হাটুন। ২ মিনিট হাটলেই জামা মসজিদ পাবেন । মসজিদ এর সাথে সব মুসলিম খাবারের হোটেল পাবেন। এক প্লেট কলিজা ৪০ রুপি আর তন্দুররুটি ৫ রুপি। ৩ টে খেলেই পেট ভড়ে যাবে। খাওয়া শেষ করে মোবাইলের জিপিএস অন করুন এবং বিজালি ঘর ক্রসিং ট্রাক করুন । ৫ মিনিটের হাটাপথ বিজালি ঘর ক্রসিং মোড়ে চলে আসুন। এখান থেকে তাজমহল গামী সি এন জি পাবেন, পার পারসন ১০ রুপি। সোজা গিয়ে নামবেন তাজমহল এর Western Gate। এখানে গিয়ে টিকিট কাটুন। টিকিট কাটার সময় অবশ্যই বলবেন SAARC COUNTRY. টিকিটের মুল্য হয়ে যাবে ৫৩০ রুপি মাত্র। আগে তাজমহল দেখবেন। কেন দেখবেন সেটা পরে বলছি 🙂 । তাজমহল দেখার সময় সব সময় ফরেনার জোন ব্যাবহার করবেন। পুলিশ টিকিট দেখতে চাইলে দেখাবেন। ফরেনার টিকিটে অনেক সুবিধা। বাথরুম ফ্রি, সবার আগে যেতে পারবেন ইত্যাদি। ৩ থেকে ৪ ঘন্টা সময় নিয়ে তাজমহল দেখুন। এর পর একটা অটো নিয়ে চলে আসুন আগ্রা ইমতি উদ দৌউলা । দাম নিবে ৮০ রুপি, পার পারসন রুপি ২৭ রুপি । আসার পথে মিনা বাজার দেখুন। এর পর সোজা চলে জান ইমতি উদ দৌউলা দেখতে। ইমতি উদ দৌউলা এর আশে পাসেই ২ টি স্থাপনা আছে বাট আমার মতে দেখার দরকার নেই খুব একটা সুন্দর না। বিকেল বেলা বেবি তাজ বা ইমতি উদ দৌউলা থেকে যমুনা নদীর উপর সূর্যাস্ত দেখুন। অনেক সুন্দর। ইমতি উদ দৌউলা প্রবেশ ফি ১৫ রুপি ( অবশ্যই SAARC বলে নিবেন ) । এবার আপনি চাইলে হেটে হেটে আপনার হোটেলে আসতে পারেন আবার অটোতেও আসতে পারেন । আগ্রা ফোরট রেলওয়ে স্টেশনে আসতে জন প্রতি ১৫ রুপি পরবে । আমরা হেটে হেটে এসেছি, আগ্রা শহর ঘুরে ঘুরে দেখছি। হোটেলে ফিরার সময় পেট ভরে খেয়ে নিন। পার পারসন খুব বেশি হলে ১০০ রুপি পরবে।
.
দিন ৩ এর আপনার মোট খরছ: ৫০+৩১৭+৪০+১৫+১০+৫৩০+২৭+১৫+ ১৫+১০০ = ১১১৯ রুপি
.
◄◄▌▌দিন চার: সকাল সোজা চলে যান আসুন বিজালি ঘর ক্রসিং । এখান থেকে আগ্রা ক্যান্ট রেলওয়ে স্টেশন ভাড়া ১০ রুপি । আগ্রা ক্যান্ট রেলওয়ে ষ্টেশনের সামনে দাঁড়ালে আপনার হাতের ডান পাশে সেকেন্ড ক্লাস টিকিট ও লাগেজ রুম এবং বা পাশে SL , AC এর টিকিট কাউন্টার । বাম পাশে গিয়ে রাত ১ টার দিল্লী গামী ( হযরত নিজাম উদ্দিন রেলওয়ে স্টেশন , দিল্লী ) ট্রেন্রের টিকিট কাটুন, পার পারসন ১৭০ রুপি । এবার লাগেজ রুমে গিয়ে ২০ রুপি পার পারসন আপনাদের লাগেজ রাখুন (নিরাপদ) । এবার জেনারেল ক্লাসের টিকিট ঘরে গিয়ে ফতেহ পুর সিক্রি যাবার ট্রেনের টিকিট করুন , ভাড়া ১০ রুপি । ফতেহপুর সিক্রি ঢুকার এন্ট্রি ফি ৪০ রুপি ( অবশ্যই SAARC বলে নিবেন ) । ১২ টার মধ্যে আগ্রা ক্যান্টে রেলওয়ে স্টেশনে চলে আসুন , ভাড়া ১০ রুপি ট্রেনে । স্টেশনে নেমেই হালকা কিছু খেয়ে নিন , খরছ ৩০ রুপি । এখান থেকে আগ্রা ফোরট পার পারসন সি এন জি তে ১৫ রুপি । আগ্রা ফোরট এ গিয়েই পুলিশকে আপনার আগের দিনের তাজমহলের টিকিট টি দেখিয়ে বলবেন আমি SAARC এর আওতায় টিকিট কাটব । পার পারসন ৩৫ রুপি , না হলে কিন্তু ৫০০ এর মত দিতে হবে 🙂 । এবার আবার আগ্রা ক্যান্ট রেলওয়ে স্টেশনে আপনার পছন্দ মত সময়ে ফিরুন । এখানে ভারী কিছু খেয়ে নিন , খরছ ১০০ রুপি । এখানে কিছু বিষয় মাথায় রাখুন আগ্রা ক্যান্ট রেলওয়ে স্টেশনে আসার পথের স্টেশনের খুব কাছে রাস্তার দুপাশে হাতের ডান ও বামদিকে অনেক খাবারের দোকান পাবেন । বাম সাইডের গুলো কিন্তু আসলে বার আর ডান সাইডের গুলো ফ্যামেলি নিয়ে বসার জন্য 🙂 । আপনি যখন হযরত নিজাম উদ্দিন রেলওয়ে স্টেশন, দিল্লীতে পৌঁছবেন তখন আনুমানিক রাত ৫ টা বা ৪ টা বেজে যাবে । এবার সোজা এ সি ওয়েটিং রুমে গিয়ে শুয়ে পরুন 🙂
.
দিন 8 এর আপনার মোট খরছঃ১০+১৭০+২০+১০+৪০+১০+৩০+১৫+৩৫+১০০ = ৪৪০ রুপি
.
▌▌◄◄ দিন পাঁচঃ সকাল ৯ টার মধ্যে ঘুম থেকে উঠে পরুন । এবার ফ্রেশ হয়ে মোবাইলের জিপিএস অন করে হুমায়ূনের কবর দেখতে বের হউন । যাবার পথে ছোট একটা বাস স্ট্যান্ড পরবে সেখান থেকে হালকা নাস্তা করে নিন, খরছ পার পারসন ৫০ রুপি । এবার সকালের দিল্লির রুপ দেখতে দেখতে হুমায়ূনের কবর দেখে ফেলুন , এন্টি ফি ৩০ রুপি । এবার একটা সি এন জি নিয়ে রেড ফোরট চলে আসুন ভাড়া পার পারসন ৩৫ রুপি । রেড ফোরট প্রবেশ ফি ৩৫ রুপি। রেড ফোরড দেখে ভারী কিছু খেয়ে নিন , ১০০ রুপিতেই হয়ে যাবে । রেড ফোরট দেখেই ের সামনে অনেক টুরিস্ট বাস পাবেন পার পারসন ১৩০ থেকে ১০০ রুপি নেবে পুরো দিল্লীর সব ঐতিহাসিক স্থাপনা গুলো ঘুরে দেখাবে । বিকেল ৫ টার মধ্যেই কাশ্মীর গেট বাস স্টেশনে চলে আসুন । ষ্টেশনের সাথেই মেট্রো রেল স্টেশন ওখানেই ম্যাক ডোনাল পাবেন । পার পারসন ২৫০ রুপি খরছ করলেই পেট ভরে যাবে । এবার শীতকাল হলে মানলী যাবার জন্য ভলভো এর গরমের দিন হলে সাধারন HRTC গাড়ির টিকিট কাটুন । ভল্ভো ১৪১২ রুপি এর সাধারন ৬৭৫ রুপি । সারাদিনের ক্লান্তিদুর করার জন্য ভল্ভোর টিকিট কাটুন । মানলী যাবার সময় চান্ডিগড় সহ অনেক কিছুই দেখতে থাকুন এর বোনাস হিসেবে রাতের দিল্লী তো থাকছেই । দিল্লী জামা মসজিদের কাছেই মুসলিম কম দামের খাবারের হোটেল আছে ।
.
দিন ৫ এর আপনার মোট খরছঃ ৫০+৩০+৩৫+৩৫ +১০০+১৩০+১৪১২+২৫০ = ২০৪২
.
◄◄▌▌ দিন ছয়ঃ মানলী ঢুকার সাথে সাথেই OYO , MAKE MY TRIPS এর অ্যাপ মোবাইলে নামিয়ে নিন । OYO ভালো , অনেক অফার দেয় । সবাই আপনাকে মল রোডে থাকার পরামর্শ দিবে আমি বলব না । আপনি যদি মানলীর সৌন্দর্য দেখতে চান তবে লজ হাট এরিয়া বা অল্ড মানলী বা সার্কিট হাউজ এরিয়ায় থাকবেন । আমরা লজ হাট এরিয়াজ মানলীর সব থেকে উঁচুতে সুন্দর একটা হোটেলে ছিলাম । OYO অ্যাপ এর মাধ্যেমে ৬৯% ডিস্কাউন্ট পাইছি ( অফ সিজেন ছিল বলে ) । মল রোড বা বাস স্ট্যান্ড থেকে লজ হাট যেতে জেকোন সি এন জি খুব বেশী পার পারসন ২৫ রুপি নেবে । আমাদের হোটেলে ৬৯% ডিস্কাউন্টে মাত্র ২ রাত ৩ দিন + ফ্রি ব্রেকফাস্ট সহ ২৫০০ নিয়ে ছিল । আমাদের ৩০০ রুপি বেশী নিয়েছে কারন আমাদের আর্লি চেক ইন ছিল , সে হিসেবে পার পারসন ৮৩৪ রুপি মাত্র  । ভুলেও মল রোডে খাবেন না । লজ হাট এরিয়ায় কিছু নেপালী থাবা পাবেন ১০০ রুপিতে মুরগীর মাংস সহ ভাত একজন খেয়ে শেষ করতে পারবেন না । লজ হাট এরিয়ার কাছেই হাডিম্বা দেবীর মন্দির । মন্দির দেখে সোজা পাহাড় দেখতে চলে যান । এলাকাটা ধুরে ঘুরে দেখুন । অনেক সুন্দর । সারাদিনের খাবার করছ মাত্র ২০০ রুপি । মল রোডে থাকলে ২০০০ এও কিছু করতে পারবেন কিনা আল্লাহ জানে । পাহড়ি এলাকা খুব তাড়াতাড়ি রাত নামে এর সব কিছু ফাকা হয়ে যায় । রাত ৭টার মধ্যে খেয়ে দেখে হোটেলে ফিরে আসুন ।
.
দিন ৬ এর আপনার মোট খরছঃ ২৫+ ৮৩৪+ ২০০ = ১০৫৯ রুপি
.
◄◄▌▌দিন সাতঃ সি এন জি ভাড়া করে শহরের সব গুলো জায়গা বা আপনার পছন্দের বাকি ভ্রমণ প্লেস গুলো দেখে নিন । সবার শেষে দিন জন্য সোলাং ভ্যালি রাখবেন । সারা দিনের সি এন জি ভাড়া ৮০০ রুপি এর বেশী হবেই না, পার পারসন ২৬৭ । ভুলেও ক্যাব নিবেন না । তা হলে ধরা । সারা দিনের খাওয়া খরছ ২০০ রুপি ।
.
দিন ৭ এর আপনার মোট খরছঃ ২৬৭+ ২০০ = ৪৬৭ রুপি
.
◄◄▌▌দিন আটঃ সকালে হোটেল থেকে চেক আউট করে বেড়িয়ে পড়ুন । মল রোডে গিয়ে সোলাং ভ্যালী যাবার জন্য সি এন জি ঠিক করুন । ভাড়া নিবে ৭০০ এর মত সাথে ৩ থেকে ৪ টা স্থানো দেখবেন । জন প্রতি হিসেবে সি এন জি ভাড়া পরবে ২৩৪ রুপি । ৩ টের মধ্যে মল রোডে চলে আসুন । ভারী কিছু খেয়ে নিন । পার পারসন ১০০ হলেই হবে । এবার আম্রিতাসর , পাঞ্জাব যাবার জন্য HRTC এর সাধারন গাড়ির টিকিট কাটুন, পার পারসন ৫৫০ রুপি । গাড়ি ছাড়বে ৩.৩০ মিনিটে । ভুলেও ৬.৩০ এর ভল্ভো গাড়ির টিকিট কাটবেন না । কেন কাটবেন না ? নিচের কথা গুলো পড়লেই বুঝবেন । গাড়ি ছাড়বে ৩.৩০ মিনিটে । গাড়ি যখন পাহাড়ের গা বেয়ে কুলু বাস স্ট্যান্ডের দিকে আসতে থাকবে আপনি দুরের পাহাড় গুলো দেখে অন্য এক জগতে হাড়িয়ে যাবেন । সন্ধ্যার সময় কুলু বাস স্ট্যান্ডে পৌঁছে যাবেন । চারদিকে পাহাড় ঘেরা অসম্ভব সুন্দর কুলু বাস স্ট্যান্ড । এবার সারা রাত পাহাড়ের গায়ে মিট মিট করে জলতে থাকা ঘর বাড়ি দেখতে দেখতে চলে আসবেন আম্রিতাসর , পাঞ্জাব । পথে পার পারসন ১০০ রুপি দিয়ে কিছু খেয়ে নিন।
.
দিন ৮ এর আপনার মোট খরছঃ ২৩৪+১০০+৫৫০+১০০ = ৯৮৪ রুপি
.
◄◄▌▌দিন নয়ঃ বাসে ঘুমাতে ঘুমাতে সকালে আম্রিতাসর বাস স্ট্যান্ডে চলে আসবেন । এখান থেকে ১০ রুপি ভাড়া আম্রিতাসর রেলওয়ে স্টেশন । ওখানে গিয়ে এসি বা ফার্স্ট ক্লাস ওয়েটিং রুমে গিয়ে গোসল সেরে নিন । লাগেজ রুমে ২০ রুপির বিনিময়ে আপনার লাগেজ রাখুন । স্টেশনের সামনে ১৫০ রুপি দিয়ে ভরা পেটে মুরগী বিরিয়ানি খেয়ে নিন । এবার জন প্রতি ১৫ রুপি দিয়ে গোল্ডেন টেম্পেল্ট চলে যান । গোল্ডেন টেম্পেল্টর কাছেই জালিওয়ানওলা বাগ । সব কিছু দেখা শেষ হলে গোল্ডেন টেম্পেল্ট সংলগ্ন মার্কেটে শপিং করুন কারন এখানে অনেক কম দাম জিনিস পত্রের । অবশ্যই লাচ্ছি আর আইস্ক্রিম খাবেন , ২৫+৩০ রুপি । অনেক কম দাম । এবার ৬.৩০ এর মধ্যে ১৫ রুপি পার পারসন আম্রিতাসর রেলওয়ে স্টেশন চলে আসুন । ১ দিনের আম্রিতাসর দেখা শেষ, বর্ডারে যাবার দরকার নেই । অহেতুক এক দিন থাকতে হবে তাহলে । রাত ৬.৩০ মিনিটে আম্রিতাসর , পাঞ্জাব থেকে হাওড়া , কলকাতা ট্রেন । আবার মুরগী বিরিয়ানি বা অন্য কিছু খান , ১৫০ রুপিতেই হয়ে যাবে । আম্রিতাসর টু কলকাতা ট্রেন ভাড়া ৭৬৫ রুপি ।
.
দিন ৯ এর আপনার মোট খরছঃ ১৫+১০+২০+১৫০+ ১৫+১৫০+২৫+৩০ +৭৬৫ = ১১৮০রুপি
.
◄◄▌▌দিন দশ + এগারো + বারোঃ লক্ষ্য করুন আপনি যে পথে গেছেন সে পথে কিন্তু ফিরেন নি । ফিরেছেন অন্য পাশ দিয়ে । ফেরার পথে অনেক নতুন নতুন জায়গা পাবেন । তিন দিনে খাওয়া খরছ ৬০০ রুপির বেশী হবেই না । এই তিনদিন আপনি আম্রিতাসর থেকে কলকাতা আসার ট্রেনে থাকবেন । সো অনলি খাওয়া খরছ
.
দিন ১০ + ১১ +১২ মোট খরছঃ ৬০০ রুপি
.
◄◄▌▌দিন তেরঃ সকালে বা ১০ টার দিকেই হাওড়া স্টেশনে পৌঁছে যাবেন । সেখান থেকে সাব ওয়েতে চলে আসুন । ১২৯/C বাসে করে ৬ রুপি ভাড়া দিয়ে পার্ক স্ট্রিট । আসার পথে হাওড়া ব্রিজ দেখুন । পার্ক স্ট্রিট থেকে ১৫ মিনিট হাটলেই মির্জা গালিব স্ট্রিট । ওখানে এসে ২০০০ এর মধ্যে ২ রাতের জন্য হোটেল পেয়ে যাবেন , সে হিসেবে পার পারসন ৬৬৭ রুপি । মির্জা গালীবেই হোটেল খাজা হাবিবের পাশেই ইসলামিক নামের একটা মুসলিম খাবারের হোটেল আছে , নাম মনে আসছে না । ওখানে ৬০ রুপি দিয়ে গরুর মাংশ আর ২ প্লেট ভাত পাবেন । পরিমানে অনেক বেশী দেয় ওরা আবার চাইলে এক্সট্রা ঝোলও দেয় । হোটেলে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে বিকেলে জি পি এস ট্রাক করে ইডেন গার্ডেন , মিলেনিয়াম পার্ক , JAMES PRINSER GHAT , দ্বিতীয় হুগলী ব্রিজ দেখুন । সন্ধ্যাটা অবশ্যই JAMES PRINSER GHAT এর সামনের মাঠেও বসে কাটাবেন । রাতে ৬০ রুপি দিয়ে খেয়ে হোটেলে ফিরুন ।
.
দিন ১৩ মোট খরছঃ ৬+৬৬৭+৬০+৬০ = ৭৯৩ রুপি ।
.
◄◄▌▌ দিন চোদ্দঃ মোটা মুটি পার পারসন ৭০০ রুপি খরছ করলেই সায়েস সিটি , গড়ের মাঠ সহ কলকাতার সব কিছুই দেখতে পারবেন । কলকাতা সম্পর্কে বেশী কিছুই লিখছি না । বাংলা ভাষাভাষীদের জায়গা , সো কারো কোন সমস্যা হবে না । সারাদিনে তিন বেলা খেতে ১৮০ রুপি খরছ হবে । বিকেলে নিউমার্কেটে ফিরে কেনা কাটা করুন । রাতে কলকাতা শহর ঘুরে দেখুন ।
দিন ১৪ এর খরছঃ ৭০০+১৮০ = ৮৮০ রুপি
.
◄◄▌▌দিন পনেরোঃ সকালে পার পারসন ৪০রুপি দিয়ে ট্যাক্সি নিয়ে শিয়ালদাহ রেলওয়ে স্টেশনে চলে আসুন । এবার বনগাঁ যাবার ট্রেনের টিকিট ২০ রুপি দিয়ে কেটে ফেলুন । বনগাঁর মানুষ যশোরের ভাষায় কথা বলে । এবার ৩০ রুপি দিয়ে হরিদাশ পুর বর্ডার বা বেনাপোলে চলে আসুন । ৫০০ টাকা বা ৪২০ রুপি দিয়ে ঢাকা । খাওয়া খরছ সারা দিনে ২৫০ রুপি
.
দিন ১৫ এর খরছঃ ৮০+ ২০ + ৩০ + ৪২০+২৫০ = ৮০০ রুপি
.
১৫ দিনের ট্যুরে মোট খরছঃ ১২,৬৬৭ বা ১৮৬ ডলার ( পার ডলার ৬৮.৩০ রুপি রেট হিসেব)
.
.
◄◄▌▌১৫ দিনে আপনি অতিক্রম করবেন ভারতের ওয়েস্ট বেঙ্গল , উত্তর প্রদেশ ( EAST ) , উত্তর প্রদেশ ( WEST ) , দিল্লী , হিমাচল প্রদেশ আর পাঞ্জাব প্রদেশ ।
.
আর যাত্রা পথে ট্রেন থেকে দিনের আলোতে দেখতে পারবেন ঝারখান্ড , বানারাস , কানপুর ( উত্তর প্রদেশ) , হারিয়ানা , চান্ডিগর , এলাহবাদ , লুডাইয়ানা , কুলু , জালান্দার , দুর্গাপুর , বারাসাত , ২৪ পরগণা , আসানসোল , লাখনো আর অতিক্রম করবেন মোটা মুটি ৫০১০ কিঃমিঃ 😛
.
◄◄▌▌কিছু অভিজ্ঞতাঃ আমার একটা নেশা আছে , সেটা হলো ভ্রমনের নেশা । আমি বদ্ধ এসি কামরায় বা বিমানে উরে গিয়ে কিছু দেখে আসতে ভালো বাসি না । আমার মতে ভ্রমণ হবে নিরাপদে অনেক কিছু জানার । ভারত ভ্রমণ যদি ট্রেনে না করেন তবে ভ্রমনের ৫০% অপূর্ণ থেকে যাবে । ট্রেনের দরজার পাশে দাড়িয়ে দুরের পাহাড় , ভারতবর্ষের গ্রাম দেখা , নতুন নতুন জায়গার উপর দিয়ে যখন ট্রেন যাবে তখন উপভোগ করা এসব কিছুর মাঝেই আছে আনন্দ । আমি আমার ভ্রমনে পুরোটাই মোবাইলের জি পি এস নির্ভর ছিলাম । আমরা হেটে বেড়িয়েছি ভারতের শহরের অলিতে গলিতে ।

ভারতের রেলওয়ে স্টেশন গুলোতে গোসল , বাথ্রুমের ভালো ব্যাবস্থা আছে । শুধুমাত্র নিশ্চিত টিকিটের PNR নাম্বার দিয়ে আপনি এগুলোতে আক্সেস নিতে পারবেন । স্টেশনে আছে গুগলের হাই স্পিড ফ্রি WiFi ( মোবাইল নাম্বার না হলে কাজ করবে না ) । ট্রেনে মোবাইল চার্জ দেওয়ার ব্যাবস্থা আছে । কিছু অ্যাপ এর ঠিকানা দিচ্ছি এগুলো মোবাইলে অবশ্যই রাখবেন । অনেক গুলো বাংলাদেশের আইপি দিয়ে আক্সেস পাবেন না ইন্ডিয়া গিয়েই মোবাইলে ইন্সটল দিয়ে নিবেন । এগুলো দিয়ে হোটেল , ট্রেনের স্থান, কোন স্টেশনে থেকে কোন স্টেশনে ট্রেন যাবে তার তথ্য পাবেন ।

১. OYO (Best)
২. Make My Trips
৩. Goibibo
৪. Ixigo Train
৫. Uber / Ola Cabs
৬. enquiry.indianrail.gov.in এর অ্যাপ
৭. Google Map
.
দালাল এড়িয়ে চলবেন । পাসপোর্ট কাউকে দিবেন না । নিজের পাসপোর্ট + ভিসা + কয়েক কপি ছবি নিজের কাছে বাংলদেশে থেকে নিয়ে যাবেন । ওখানে ফটোকপি বলে না যেরকক্স বলে । ডলার ভাঙাবেন কলকাতায় । বেনাপোলে বা হরিদাশপুরে ৫০০ টাকার মত ভাঙিয়ে নিবেন ।
.
ইন্ডিয়াতে SAARC COUNTRY ( বাংলাদেশ + পাকিস্তান + শ্রীলংকা + নেপাল + ভুটান + আফগানিস্তান + মালদ্বীপ ) এর ফরেনারদের জন্য অন্য ফরেনারদের তুলুনায় কম টিকিটের দাম রাখা হয় । অনেক ক্ষেত্রে ঈন্ডিয়ান্দের টিকিটের মুল্যে SAARC COUNTRY এর লোকেরা টিকিট কাটতে পারে । আপনাকে শুধু মেনশন করতে হবে আপনি SAARC COUNTRYএর লোক ।
.
◄◄▌▌ কিছু চিকন পিনের কথা ( ভালো না লাগলে এড়িয়ে যান )ঃ কলকাতা বাদে যেখানেই যাবেন হোটেল বুকিং বা ভ্রমনের স্থান ছাড়া সকল ক্ষেত্রে বলবেন আপনি কালকাতা থেকে এসেছেন । হিন্দি বলতে পারলে ভালো , অনেক ঝামেলা থেকে বেচে যাবেন । হিন্দি ভালো পারলে কলকাতায় হিন্দিতে কথা বলবেন এতে আপনি সঠিক দামে জিনিস কিনতে পারবেন । বর্ডার পার হবার সময় ডলারের সাথে শুধু মাত্র ২০ টাকার ৮ + ১০ টাকার ৪ টি নোট রাখবেন । কোথাও চাইলে ২০ টাকা দিবেন খুব বেশী হলে ৩০ টাকা দিবেন । অবশ্যই মোবাইলে ইন্টারনেট আর জি পি এস অন রাখবেন । কারন আপনার জি পি এস আপনাকে কখনোই ভুল তথ্য দিবে না 🙂 । আর একটা গুরুত্বপূর্ণ কথা ” মানুষ শক্তের ভক্ত নরমের যম ” কথাটা ইন্ডিয়ায় গেলে মাথায় রাখবেন 🙂
.
.
NOTE: আমার এই ভ্রমনে ট্যুর প্লানে শুধুমাত্র ভারত ভ্রমনের কথাই বলা আছে । ভিসা ফি , ট্র্যাভেল ট্যাক্স বা অন্যান্য কিছু নিয়ে লিখি নাই যেটার জন্য আপনাদের খুব বেশী হলে ১২০০ টাকা খরছ হবে । আমি যে রুট প্লান দিয়েছি সেটা ভারতে গিয়ে অনেক ধাক্কা খেয়ে খুঁজে বের করা 🙂 আশা করছি আপনাদের হেল্প হবে । তবে আপনারা অবশ্যই কিছু টাকা এক্সট্রা ব্যাকআপ নিয়ে যাবেন , কারন সবার ভ্রমনের অভিজ্ঞতাটা সবার থেকে আলাদা । অনেক বড় লিখা সময় নিয়ে পড়ার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ 🙂

Post Copied From:রেজওয়ানুল কবীর‎>Travelers of Bangladesh (ToB)

তাজের প্রেমে

তাজমহল। একটি প্রেমের নাম। একটি প্রেমের গল্পের নাম। প্রেম আর ভালোবাসায় ভোর করেই তাজমহলের গড়ে ওঠা। পুরনো ইতিহাস বাদ দেই, সেটা সবই কম বেশী জানে। এই গল্পের শুধু অনন্য স্থাপনা তাজমহলের আকর্ষণের গল্প থাকুক।

তাজমহল এমনই একটি স্থাপনা যে এটি যারা দেখেননি তারাও এটাকে ভালোবাসেন বা প্রেমে পরেন আর যারা ওকে দেখেছে তারা আরও বেশী করে ভালোবেসে ফেলে বা আরও গভীরভাবে তাজমহলের প্রেমে পরে যায়। বাধ্যই হয় বলা যায়। তাজমহল, তার অবস্থান, ইতিহাস, ঐতিহ্য, আভিজাত্য, কারুকাজ, সম্মোহনী ক্ষমতা সবকিছু নিয়েই সবাইকে আকুল আবেগ আর অন্যরকম একটা বন্ধনে বেঁধে ফেলে।

একটু খেয়াল করলেই দেখবেন, ছোট-বড়-মধ্য বয়সী বা বৃদ্ধ প্রত্যেকটা সাধারণ মানুষ যারা একটু আধটু বেড়াতে ভা ভ্রমণ করতে ভালোবাসে। তাদের সব সময়ের একটা অন্যতম ভ্রমণ আকর্ষণ হল তাজমহল। এখনো বাড়ির বড়দের বা বৃদ্ধদের দেশের বাইরে কোথায় যেতে চান জানতে চাইলে এক কথায় মনের একটা অপূর্ণ বাসনা ব্যাক্ত করে, একবার তাজমহল দেখতে চাই! আহ কি ভীষণ আকুলতা একবার তাজমহল দেখতে চাওয়া।

আপনি যদি শুধু তাজমহলের নাম শুনে আর ছবি দেখেই ওর প্রেমে পরে গিয়ে থাকেন আর ওকে নিবিড়ভাবে ভালোবেসে থাকেন তবে জীবনে একবার অন্তত আপনার তাজমহল ঘুরে আসা উচিৎ, কষ্ট করে হলেও। দেখবেন তাজকে কাছ থেকে দেখার, ছোঁয়ার, নিজের মত করে আলতো স্পর্শ করার অনুভূতি সারাজীবনের একটা অনন্য অর্জন হয়ে থাকবে আপনার সবটুকু জুড়ে।

আপনি যখন কলকাতা থেকে ট্রেনে বা প্লেনে করে আগ্রায় নামবেন, তখন থেকেই তাজমহলের একটা অন্য রকম অনুভূতি আপনাকে নাড়া দেবে। এরপর হোটেলে একটু বিশ্রাম নিয়ে আপনি যখন তাজ দেখতে বের হবেন নানা রকম রোমাঞ্চকর অনুভূতি খেলা করবে আপনার ভিতরে। অনেক দিনের স্বপ্ন দেখা, না দেখে ভালোবেসে ফেলা কারো সাথে অনেক অপেক্ষার পরে, অনেক ত্যাগের বিনিময়ে প্রথম দেখা হবার অনুভুতির মত।

টিকেট কেটে লাইনে দাঁড়ানোর পরে, হালকা তল্লাশির পরে যখন তাজমহলের ফটকে ধুকবেন, হয়তো ঢুঁকেই হতাশ হয়ে পরবেন তাজমহল দেখতে না পেয়ে। কারন সামনে পরবে বিশাল সবুজ ঘাসের লন আর লাল পুরনো আমলের স্থাপনা। ভাববেন ভুল যায়গায় এসে পরেছেন বোধয়। কিন্তু না, একটু সামনে এগিয়ে দুই পাশের সবুজ লনের মাঝখানে দাড়াতেই দেখতে পাবেন বিশাল লোহার গেট। সেই মুঘল আমলের। যে গেটেই ভিতর দিয়েই আপনি প্রথম দর্শন পাবেন প্রিয় তাজের। দূরে, ধবধবে সাদা, শ্বেত পাথরে সেজে দাড়িয়ে আছে যমুনার পারে।

আর অপেক্ষা করা আপনার পক্ষে সম্ভব হবেনা, তাই ঢুকে পড়ুন ঝটপট। বিশাল গেটের ভিতর দিয়ে ওপাশে গিয়েই আপনি দেখা পাবেন এতো দিনের অপেক্ষার, আপনার সামনে শ্বেত পাথরে সেজে, হেসে দাড়িয়ে আছে প্রিয় তাজমহল। সামনে বিশাল বিশাল ফুলের বাগান, সবুজের মখমলের মত মিহি ঘাসের গালিচা, নানা রকম ছোট-বড়-মাঝারি পাতা বাহারের সাঁজে সেজে আছে পুরো তাজমহল খোলা আঙিনা। যত ধীরে পারুন হাঁটুন। ধীরে ধীরে চারপাশের ফুল বাগান, ফোয়ারা, বসার বেদী, ছবি তোলার বেঞ্চি, পাথরের শান বাঁধানো সিঁড়ি, বর্ণীল সবকিছুর খুব ধীরে ধীরে উপভোগ করতে করতে এগোতে থাকুন তাজমহলের মূল আঙিনায়। আপানর একদম সামনেই দাড়িয়ে আছে আপানর অনেক দিনের স্বপ্ন দেখা তাজমহল!

উঠে পড়ুন তাজমহলের বেদীতে। আগে চারপাশটা ঘুরে ঘুরে দেখুন সময় নিয়ে। চলে যান তাজমহলের পিছনে যমুনার পাড়ে দাঁড়ানো তাজমহলের দেয়ালের কাছে। যেখানে ধীর লয়ে বয়ে চলেছে শুষ্ক যৌবনা যমুনা। যমুনার ওপারে ভঙ্গুর কালো তাজমহলের অসম্পূর্ণ দেয়ালের ধ্বংসাবশেষ আপনাকে বুঝিয়ে দেবে শাহজাহানের শেষ জীবনের দিনের কথা! কেমন কেটেছিল তার দূরের আগ্রা ফোরটে বন্দী দশায়।

তাজমহলের দুইপাশে রয়েছে আরও দুটি অনন্য স্থাপনা, একটা অতিথিশালা আর একটা মসজিদ। সময় থাকলে ঘুরে দেখতে পারেন ওগুলোও। এরপর পুরো তাজমহলের বাইরের অংশ ভালো করে দেখা হলে যেতে পারেন তাজমহলের ভিতরে আছে মমতাজের সমাধি আর শাহজাহানের আবেগের, ভালোবাসার আর অমর প্রেমের ছড়াছড়ি। প্রতিটি পাথরে, পাথরের খাঁজে, ভাঁজে, নানা আসবাব আর ঐতিহ্যের সকল কিছুতে। মমতাজের প্রতি শাহজাহানের অনিঃশেষিত ভালোবাসার পরশ।

এরপর, তাজমহল ঘুরে দেখা শেষ হলে, যখন ফেরার পথ ধরবেন দেখবেন কেমন একটা আকর্ষণের আপনি ঠিক হেটে যেতে পারছেননা বা আপনার মন ফিরে যেতে চাইছেনা। একটা অদ্ভুত বাঁধনে, মায়ায়, টানে আর আবেগে বাঁধা পরছেনে যেন। ফিরে যেতে যেতেই মন খারাপ হয়ে যাবে। এমন ভালোলাগার আর ভালোবাসার যায়গা ছেঁড়ে চলে যাবার ব্যাথায়। তবুও যান, একবার ঘুরে আসুন, স্পর্শ করে দেখুন প্রিয় তাজমহলকে তার বিশালতা, ভালোবাসা আর অসীম আবেগকে।

ফিরে এসে যখন সৃতি চারনা করবেন বা নিজেদের ছবি দেখেবন, দেখবেন আবারো প্রেমে পরেছেন!

তাজের প্রেমে!

কিভাবে যাবেনঃ ঢাকা থেকে আগ্রার তাজমহল যাওয়া আজকাল আর তেমন কোন কঠিন কাজ নয়। বেশ কয়েকভাবেই যাওয়া যায় আগ্রাতে। ঢাকা থেকে কলকাতা হয়ে প্লেনে আগ্রা বা ঢাকা থেকে দিল্লী প্লেনে, দিল্লী থেকে ট্রেন, বাস বা ট্যাক্সিতে আগ্রা।

অথবা ঢাকা থেকে কলকাতা বাস বা ট্রেনে গিয়ে কলকাতা থেকে আগ্রা প্লেনে। সবচেয়ে কম খরচে যাবার উপায় হচ্ছে ঢাকা থেকে বাস বা ট্রেনে কলকাতা, কলকাতা থেকে ট্রেনে আগ্রা। থাকার হোটেল পাবেন ১০০০ টাকা থেকে যত দামী চান। আর খাবার খরচ ভারতের অন্যান্য শহরের মতই স্বাভাবিক ও সাধ্যের মধ্যে।

Post Copied From:Sajol Zahid‎>Travelers of Bangladesh (ToB)

মানালি

আমি আগেই বলেছিলাম আমাদের ট্যুর প্লান ছিল (ঢাকা-কোলকাতা – কালকা- শিমলা- মানালি- দিল্লী- আগ্রা- কোলকাতা-ঢাকা)। আমাদের এই ট্যুর এর মেম্বার ছিলাম দুই জন। আমি (রিয়াদ আরেফিন ) এবং আমার বন্ধু আবদুল্লাহ আল মাসুম ( বাবু)। আমার এই ট্যুর প্লান টা বলার আগে কিছু কথা আছে… যা কিনা সবার কাছেই পরবর্তীতে প্রশ্ন হয়ে দাঁড়ায়। তাই আমি চিন্তা করলাম এই প্রশ্নের উত্তর গুলো আগে আপনাদের দিবো।
১। মানালি যাওয়ার উপযুক্ত সময় কখন?
২। মানালি যাওয়ার উপযুক্ত রুট কোনটা ?
৩। ইন্ডিয়ার বিভিন্ন স্থান এর খরচ কত হবে?
৪। টয় ট্রেন এর টুকিটাকি।
৫। ইন্ডিয়ান রেল এর টুকিটাকি।
৬। ইন্ডিয়া র বিভিন্ন স্থান এর পরিবহন সমাচার।
৭। ইন্ডিয়ান বিভিন্ন স্থান এর হোটেল সমাচার।
৮। ইন্ডিয়া র বিভিন্ন স্থান এ খাবার সমাচার।
৯। রথাঙ্গ পাস সম্পর্কে কিছু কথা।
১০। দিল্লি ও আগ্রা নিয়ে কিছু কথা।
এবার উত্তরে আসা যাক। আসলে ইন্ডিয়া সম্পর্কে আমি যে সব জানি তা কিন্তু না। ইন্ডিয়া তে যাওয়ার পর যতটুকু ঘুরিছি তার অভিজ্ঞতার উপর ভিত্তি করেই এই সব প্রস্নের উত্তর গুল দিব।

১। মানালি যাওয়ার উপযুক্ত সময় কখন?
উত্তর ঃ আসলে মানালি সব সময় সুন্দর। এই মানালিকে বলা হয় দেবভুমি। মানালির সুন্দরয অসাধারন। সেই প্রসঙ্গে বলতে গেলে মানালি যাওয়ার উপযুক্ত সময় বলে কিছুই নেই, সবসময় সুন্দর সব সময় যাওয়া যায়। কিন্তু সিজান ভেদে মানালির প্রকৃতির পরিবর্তন হয়। আপনি কোন প্রকৃতিতে মানালি কে দেখবেন সেই টাই হবে মানালি কে দেখার উপযুক্ত সময়।
১। জানুয়ারি- ফেব্রুয়ারি- মার্চ ঃ এই সময় টাতে আপনি মানালি তে শুধু বরফ পাবেন। যেই দিকেই তাকাবেন শুধু বরফ। যারা বরফ দেখতে ভালোবাসেন, বরফ নিয়ে খেলতে ভালোবাসেন তাদেরকে বলবো এই মাস গুলতে ট্যুর প্লান করুন। আপনাদের জন্য এই টাই উপযুক্ত সময়।
২। এপ্রিল-মে-জুন ঃ এই সময় টাকে মানালির বসন্ত বলা হয়। প্রকৃতি সবুজ রুপ ধারন করে। দূরে পাহাড়ে বরফ দেখা যায়। সলাং ভ্যালি, রথাঙ্গ পাস বরফ পাবেন। মানালি শহর টা ঘুরতে পারবেন। পায়ে হেটে হিল ট্র্যাকিং করতে পারবেন। প্রকৃতির সুন্দরয দেখার জন্য সব থেকে উপযুক্ত সময়। এই সময় টাতে আপেল গাছে অ্যাপেল একদম ছোট থাকে।
৩। জুলাই- অগাস্ট – সেপ্টেম্বর ঃ এই সময় টায় মানালি তার পুরো যৌবন ফিরে পায়। চারদিকে শুধু পাইন বনের সবুজ সমারহ। বিপাসা হ্রদ তার পূর্ণ রুপ ফিরে পায়। অ্যাপেল , চেরি ফল গুল বড় হবে। পাহাড়ের গায়ে সবুজ প্রকৃতি দেখতে এই সময় টাই উপযুক্ত। আর এই সময় গেলে বরফের দেখা পাবেন না।
৪। অক্টোবর – নভেম্বর – ডিসেম্বর ঃ এই সময় টাতে শীত ের আগমন ঘটবে। নভেম্বর, ডিসেম্বর মাসে গেলে, কপাল ভাল থাকলে স্নও ফাল ও পেয়ে যেতে পারেন। এই সময় টাও মানালি ঘুরার জন্য উপযুক্ত একটা সময়।
এখন এই ৪ টা সিজান উপর ভিত্তি করে যার যেই সময় টা ভালো লাগে সে সেই সময় টাকে উপযুক্ত করে ঘুরে আস্তে পারেন মানালি।

২। মানালি যাওয়ার উপযুক্ত রুট কোনটা ?
উত্তরঃ মানালি যাওয়ার জন্য অনেক গুল রুট আছে। আমি একে একে বলছি যার যেই রুট পছন্দ হয় সে সেই রুট এই প্লান করে ফেলুন।
# কলকাতা থেকে বাই ট্রেন কালকা, কালকা থেকে বাই ট্রয় ট্রেন/ ট্যাক্সি তে সিমলা, সিমলা থেকে বাই বাস/ ট্যাক্সি মানালি, মানালি থেকে বাই বাস দিল্লি, দিল্লি থেকে আগ্রা, আগ্রা থেকে বাই ট্রেন কলকাতা। ( যারা হিল রাইড বেশি পছন্দ করেন, যাদের হিল সিকন্যাস কম তাদের জন্য এই রুট টা উপযুক্ত)
# কলকাতা থেকে বাই ট্রেন আগ্রা, আগ্রা থেকে বাই বাস দিল্লি, দিল্লি থেকে বাই বাস মানালি, মানালি থেকে বাই বাস সিমলা। সিমলা থেকে বাই ট্রয় ট্রেন/ট্যাক্সি তে কালকা , কালকা থেকে বাই ট্রেন এ কলকাতা। ( এই প্লান এও যেতে পারেন )
# কলকাতা থেকে বাই ট্রেন দিল্লি, দিল্লি থেকে বাই বাস মানালি, মানালি থেকে বাই বাস দিল্লি, দিল্লি ,আগ্রা ঘুরে বাই ট্রেন কলকাতা। ( এই প্লান টা যাদের হিল সিকন্যাস আছে, অথবা ট্যুর আ সাথে বেবি আছে, অথবা ট্যুর মেয়েদের সংখ্যা বেশি তারা প্লান টা বেছে নিতে পারেন)।
# কলকাতা থেকে বাই এয়ার দিল্লি / কুল্লু (কুল্লু থেকে মানালি মাত্র ৫০ কিলো ) দিল্লি / কুল্লু থেকে বাই বাস মানালি। মানালি থেকে বাই বাস দিল্লি।দিল্লি ,আগ্রা ঘুরে বাই এয়ার এ কলকাতা। ( যারা এয়ার এ ঘুরবেন তাদের জন্য এই প্ল্যান টা উপযুক্ত)
উপরের প্ল্যান গুলোর ভিতর যেই রুট প্ল্যান টা আপনাদের ভালো লাগবে সেই রুটেই আপনাদের ট্যুর প্ল্যান সাজিয়ে ফেলুন।

৩। ইন্ডিয়ার বিভিন্ন স্থান এর খরচ কত হবে?
উত্তরঃ আসলে আমরা খরচ বলতে থাকা, খাওয়া, ঘুরাঘুরি কেই বুঝাই। শুধু মাত্র কলকাতা বাদে ইন্ডিয়া র সব শহরে খরচ তুলনা মুলক কম হবে। ট্যুর এর প্ল্যান এর উপর নির্ভর করে আসলে খরচ কত হবে। শুধু মাত্র হোটেল এবং পরিবহন ছাড়া অন্ন সব কিছুর খরচ প্ল্যান করে কারা যায়। যত দিন এর ট্যুর হবে তত দিনের খাবারের একটা এভারেজ হিসাব বের করা যায়। কত দিন ঘুরবো কথায় কথায় যাবো তার সঠিক প্ল্যান করা থাকলে পরিবহন হিসাব টাও সহজেই বের করা যায়। শুধু মাত্র (মানালি, সিমলা) হোটেল টা সিজান ভেদে ভাড়ার পরিবর্তন হয়। সেই টা হলেও খুব একটা পরিবর্তন হয় না। আর (মানালি,শিমলা) শহরে আশেপাশে ঘুরার যেই পরিবহন খরচ আছে, অর্থাৎ ট্যাক্সি/ জীপ ভাড়া সিজন ভেদে কমবেশি হয়। তাই বলবো সঠিক প্ল্যান ঠিক করুন এবার খরচ টা প্ল্যান অনুযায়ী বসিয়ে নিন দেখবেন ইন্ডিয়া ট্যুর এর মোট খরচ রেডি হয়ে গেছে।
৪। টয় ট্রেন এর টুকিটাকি।
উত্তরঃ যারা কিনা কলকাতা থেকে কালকা হয়ে সিমলা হয়ে মানালি যাবেন তাদের জন্য এই লেখাটুকু। কলকাতা থেকে কালকা যাওয়ার একমাত্র সরাসরি ট্রেন হল কালকা মেইল। যদিও বলা হয় কালকা মেইল সুপার ফাস্ট, কিন্তু কালকা পৌছাতে ৪ থেকে ৫ ঘণ্টা লেট হয়। কালকা স্টেশন থেকে সিমলার উদ্দেশে সকাল ৬ টা থেকে ট্রয় ট্রেন ছেরে যায়। প্রতি ৩০ মিনিট / ১ ঘণ্টা পরপর ট্রেন ছারে। লাস্ট ট্রেন ১ টায় ছেরে যায়। এখনে অনেকেই বলে থাকে রিজার্ভেশন করা থাকলে ট্রয় ট্রেন এর সিট পাওয়া যায়। কিন্তু আমি বলবো তাদের সব ট্রেন রিজার্ভেশন সিস্টেম থাকে না। প্রতি ১ ঘণ্টা পর পর যেই ট্রেন গুল ছারে সেইগুল তে কোন রিজার্ভেশন থাকে না। যার যেই খানে ইচ্ছা বসতে পারে। র টিকেট এর দাম মাত্র ৫০ রুপি। পাহাড়ের বুক চিরে ১০২ টা টানেল ভেদ করে মেঘের সাথে খেলা করে অসাধারন এক ভ্রমন শেষে করে সিমলা পৌছতে সময় লাগবে ৫ ঘণ্টার মত। তাই আমি বলবো রিজার্ভেশন এর ঝামেলায় যাওয়ার কোন প্রয়োজন নেই অনায়েসে ট্রয় ট্রেন পেয়ে যাবেন।
৫। ইন্ডিয়ান রেল এর টুকিটাকি।
উত্তরঃ ইন্ডিয়ান রেল এর টিকেট পাওয়াটা আকাশের চাঁদ পাওয়ার মত। যারা ফাস্ট টাইম ইন্ডিয়া র কলকাতার বাহিরে যাবেন তাদের জন্য অনেক কঠিন কাজ। অনেকেই চেষ্টা করে দেশে থেকেই টিকেট কনফার্ম করার জন্য বাই এজেন্সি ততকাল কোঠায়, নেট ফেয়ার থেকে বেশি টাকা দিয়ে। যদি কোন পরিচিত এজেন্সি থাকে তবে টিকেট করে নিতে পারেন। অন্যথায় আমি বলবো কলকাতায় হাওরায় ফেয়ারলি প্লেস থেকে ফরেন কোঠায় টিকেট কাটুন। ( হাওড়া গামি যে কোন বাস হেল্পার কে বললেই ফেয়ারলি প্লেস চিনিয়ে দেবে)। সকাল ৮ টার ভিতর ফেয়ারলি প্লেস এ থাকতে পারলে, ভাগ্য ভালো থাকলে অই দিন এর ও টিকেট পেয়ে যেতে পারেন। না হয় ত সর্বচচ ২ দিন কলকাতা থাকতে হতে পারে। আর দিল্লি থেকে অনায়েসে টিকেট পাওয়া যায়। নয়া দিল্লি স্টেশন এর ২য় তালায় ইন্টারন্যাশনাল কোঠায় টিকেট কাটা যায়। সেখনে যে কোন দিন এর টিকেট পেয়ে যেতে পারবেন। তারা অনেক হেল্প ফুল্ল।

৬। ইন্ডিয়া র বিভিন্ন স্থান এর পরিবহন সমাচার।
উত্তরঃ পরিবহন খরচ ট্যুর খরচ এর সব থেকে বড় একটি অংশ। কলকাতা থেকেই শুরু করি, কলকাতা শহর ও আশেপাশে ঘুরার জন্য বাস টাই বেস্ট। মাঝে মাঝে শেয়ার আ সিনজি ব্যাবহার করতে পারেন। মেট্রো রেল ও ব্যাবহার করতে পারেন। এবার আসুন সিমলা, মানালি র পরিবহন খরচ, সিমলা র আশেপাশে ঘুরার জন্য অনায়েসে ট্যাক্সি পেয়ে যাবেন সে সব স্পোর্ট ২০০০ থেকে ২৫০০ রুপির ভিতরে ঘুরে দেখাবে। আই টা সিজন ভেদে কমবেশি হয়ে থাকে। সিমলা থেকে মানালি বাই বাস HRTC (A/C) ৬৫০ রুপি। মানালির আশেপাশে ঘুরার জন্য ট্যাক্সি/জীপ/মাহেন্দ্রা পাবেন। আমি বলবো মানালি শহর এবং আর আশেপাশে পায়েহেটে ঘুরুন অনেক মজার। মানালির শহরের আশেপাশের স্পোর্ট দেখতে ১০০০ থেকে ১৫০০ রুপির ভিতর ট্যাক্সি পেয়ে যাবেন। সলাং ভ্যালি তে যেতে ২০০০ থেকে ২৫০০ পরবে সিজন ভেদে কম বেশি হয়ে থাকে। রথাঙ্গ পাস ২০০০থেকে ৮০০০০ পর্যন্ত হতে পারে সিজানভেদে। (ট্যাক্সি/জিপ)
মানালি থেকে দিল্লি বাই বাস ( A/C VOLVO) ১২০০ থেকে ১৩০০ রুপি পরবে। আর দিল্লি শহর ঘুরলে সিটি ট্যুর প্যাকেজ এ ঘুরতে পারেন। নিজেরাও বাস, সিনজি, ট্যাক্সি, মেট্রো তে করে দিল্লি ঘুরতে পারেন। আর আগ্রা হল সবথেকে খারাপ জায়গা ইন্ডিয়া তে, আগ্রা তে অনেক দালাল দের উপদ্রপ। আগ্রা তে রাতে না থাকাই ভালো ।
৭। ইন্ডিয়ান বিভিন্ন স্থান এর হোটেল সমাচার।
উত্তরঃ ইন্ডিয়া র কলকাতা বাদে সব ট্যুরইস্ট প্লেস এর হোটেল ভাড়া তুলনা মুলক কম। দালাল দের একটা ঝামেলা সব যায়গাতেই থাকবে। শতভাগ চেষ্টা করবেন এরিয়ে চলার জন্য। এতে কিছু টাকা হলেও বাচবে। আপনি আপনার ট্যুর এর প্ল্যান অনুযায়ী হোটেল নির্বাচন করুন। মানালি তে থাকার জন্য সব থেকে সুন্দর যায়গা হল ওল্ড মানালি। ওখানে ১০০০ থেকে ১৫০০ রুপির ভিতর অনেক বড় এবং সুন্দর রুম পাবেন। আর নিউ মানালি ( মল রোড) প্রচণ্ড গিঞ্জি মানুষ বেশি ভারাও বেশি। আর এলোয় ( নিউ মানালি) মল রোড থেকে একটু দূরেই অই খানের হোটেল গুলোর ভাড়া তুলনা মুলক কম। এবার আসুন দিল্লি তে দিল্লি তে থাকার মত অনেক যায়গা আছে। তবে আপনি যদি নিউ দিল্লি স্টেশন এর পাসে পাহাড় গঞ্জ এ থাকতে পারেন। মাইন রোড থেকে একটু ভিতরেই ১০০০ রুপিতে এ/সি রুম পাবেন। এ ছারাও আপনি জামা মসজিদ এর আশেপাশে , রাজীব চওক এর আসে পাসে থাকতে পারেন। ১০০০ থেকে ১৫০০ ভিতর পেয়ে যাবেন। এবার আসুন আগ্রা, আমরা যদিও আগ্রায় রাতে ছিলাম না। আর আগ্রা খুব একটা নিরাপদ যায়গা না। এখানে দালালদের উপদ্রপ খুব বেশি। আপনি চাইলে তাজমহলের আশেপাশে কম খরচে থাকতে পারবেন। এবার আসুন কলকাতায়, নিউ মার্কেট অনেক বেস্ত একটা যায়গা। বাংলাদেশী রা নিউ মার্কেট এর মির্জা গালিব স্ট্রিট, মার্ক কুইক স্ট্রিট, পার্ক স্ট্রিট এর আসেপাসেই থাকেন বাংলাদেশী দের চাপ বেশী থাকলে হোটেল ভাড়া বেড়ে যায় শেয়ার বাজারের মত। এ/সি রুম আর জন্য আপনাকে ২০০০ থেকে ৩০০০ রুপি বাজেট রাখতেই হবে।
৮। ইন্ডিয়া র বিভিন্ন স্থান এ খাবার সমাচার।
উত্তরঃ আমাদের বাঙ্গালী মুসলিমদের জন্য ইন্ডিয়া তে ভালো খাবার পাওয়া টা একটু কষ্ট কর। কলকাতায় আপনি ভালো মানে খাবার পাবেন। খাবার খেয়ে ভালো লাগবে। কিছু হোটেল আর নাম দিয়ে দিলাম হোটেল রাঁধুনি, হোটেল প্রিন্স এই হোটেল গুলোর খাবার অনেক ভালো। যখনি আপনি কলকাতা ছারবেন তখন থেকেই ভালো রুচি সম্মত খাবারের কষ্ট শুরু হয়ে যাবে। ট্রেন এ খাবারের অনেক কষ্ট আণ্ডা বিরানি আর ভেজ বিরানি ছাড়া ট্রেন এ খাবার কিছুই পাওয়া যায় না। ট্রেন এর ওই বিরানির টেস্ট খুব একটা ভালো নয়। আমি বলবো অবশ্যই ট্রেন এ পর্যাপ্ত খাবার নিয়ে উঠার জন্য। সিমলায় থাকলে সিমলা মল রোড এর আশেপাশে বাঙ্গালী খবার হোটেল আছে। এবার আসুন মানালিতে, মল রোড এর আসে পাসে অনেক হোটেল আছে ইন্ডিয়ান খাবার পাওয়া যায়। তবে মানালিতে মুসলিম হোটেল আছে একটাই,হোটেল এর নাম “করিম খানা খাজানা” হোটেল এর মালিক হাফেজ তারিক, খুব ভালো একজন মানুষ, সে বাংলা বুঝে এবং বাংলা বলতেও পারে। উনার বাসা কাশ্মীর। বাংলাদেশ থেকে যারা মানালি তে যায় তাদের কে সে অনেক হেল্প করে। তার নাম্বার আমি দিয়ে দিতেছি (৯৮১৬৬৯৩৭২২, ৯৮০৫১৫৫৪৮৯)।
দিল্লি তে প্রচুর মুসলিম হোটেল পাবেন, কিন্তু খাবারের মান খুব বেশি ভালো হবে না। আগ্রাতেও একি রকম। প্রচুর খাবারের হোটেল আছে। ইন্ডিয়ান রা একটা জিনিস খুব বেশি খায় তা হল চাটনি। যা আমরা একবার খেলে মুখ এক মিনিট বন্ধ হয়ে থাকে। আর কেক, মিষ্টি, ফাস্ট ফুড, চিপ্স, জুস ইত্যাদি আরও অনেক কিছু পাবেন কম টাকায়। ইন্ডিয়া র যেখানেই যাবেন ভারি খাবার খেলে আপনার ২০০ থেকে ২৫০ রুপি পরবে। ( বিরিয়ানি, সাদা ভাত)।
৯। রথাঙ্গ পাস সম্পর্কে কিছু কথা।
উত্তরঃ মানালি থেকে রথাঙ্গ পাস এর দূরত্ব ৫২ কি মি, মানালির সব থেকে সুন্দর যায়গা হল এই রথাঙ্গ পাস। সৃষ্টি কর্তা কতটা সুন্দর্য দিয়েছে এই রথাঙ্গ পাস কে তা না দেখলে বিশ্বাস করা যায় না। যারা মানালি যায় তাদের অনেকই রথাঙ্গ পাস যেতে পারে না। এই টা আসলে ভাগ্যের বেপার। সবার ভাগ্যে রথাঙ্গ পাস থাকে না। তবে পারফেক্ট টাইম এ গেলে রথাঙ্গ পাস এর আসল সুন্দরয দেখা যায়। এপ্রিল , মে, জুন(প্রথমে) আপনি রথাঙ্গ পাস এর রোড পারমিশন পাবেন। সেই সময় আপনি রথাঙ্গ পাস এ পাবেন প্রচুর বরফ, আমি আমার প্রথম লেখাতেই সেই ভিডিও টা দিয়েছিলাম। যদিও পরিবহন খরচ টা একটু বেশি হবে। আপনি যেই দিন মানালি তে যাবেন সেই দিন থেকেই রথাঙ্গ পাস যাওয়ার জন্য চেষ্টা করতে থাকবেন। এজেন্সি র মাধ্যমে গেলে টাকাটা একটু বেশি লাগবে কিন্তু রথাঙ্গ পাস যেতে পারবেন সেই টা ১০০% নিশ্চিত। আমাদের খরচ হয়েছিল জন প্রতি ২০০০ রুপি। ড্রেস ২৫০ রুপি । আমরা দুইজন গিয়েছিলাম শেয়ারে। আমাদের জীপে আরও ৬ জন ছিল। রথাঙ্গ পাস এ প্রতিদিন ১০০০ গাড়ীর পারমিশন দেয় তার ভিতর ৬০০ পেট্রোল র ৪০০ ডিজেল। আপনি মানালির বিভিন্ন ট্যাক্সি ড্রাইভার দের ও হেল্প নিতে পারেন। আর কারও যদি ড্রাইভিং লাইসেন্স থাকে তবে সে ইচ্ছা করলে মোটর সাইকেল এর পারমিশন নিয়ে রথাঙ্গ পাস যেতে পারে।
১০। দিল্লি ও আগ্রা নিয়ে কিছু কথা।
উত্তরঃ- দিল্লি দুই দিন ই যথেষ্ট, বড়জোর ৩ দিন থাকতে পারেন সব ঘুরতে পারবেন। নিউ দিল্লি স্টেশন এর পাশেই পাহাড়গঞ্জ এলাকায় থাকতে পারেন হোটেল ভারাও কম সুবিধাও বেশি। আমি সবাইকে যা বলবো তা হল, প্রতি টা হোটেল এই ট্যুরিস্ট কোচ আছে এ/সি সার্ভিস, এক এক জনের কাছে এক এক টা প্রাইজ রাখে। ৪০০ থেকে ৫০০ রুপি র ভিতর পেলে ওদের ট্রিপ টা নিতে পারেন, সব স্পোর্ট ঘুরলেন, ওদের প্রবলেম একটাই টাইম লিমিট কম। আপনার যেই স্পোর্ট বেশি ভালো লাগবে সেই স্পোর্ট গুল পরের দিন আবার গেলেন বাস এ ( বাস,মেট্রো) পাবলিক সার্ভিস খরচ খুব ই কম। তবে আমরা দিল্লি পাবলিক সার্ভিস এই ঘুরছি। আর আগ্রা থাকার দরকার নাই, একদিন ই আগ্রার জন্য যথেষ্ট। আগ্রা খুব খারাপ যায়গা তাই বলবো সাবধানে থাকবেন। ওদের দালাল গুল খুবই খারাপ। অবশ্যই দালাল এরিয়ে চলবেন দরকার হলে পুলিশ এর সাহায্য নিবেন।

আজ এই পর্যন্তই, আমার ৩য় লিখাতে আমাদের মুল ট্যুর এবং কিছু মজার সৃতি আপনাদের কে বলবো।

Post Copied from:Riad Arefin‎>Travelers of Bangladesh (ToB)

ঢাকা-কলকাতা-দিল্লী-মানালী-সিমলা-আগ্রা ট্যুর সমন্ধে আমার অভিজ্ঞতা

আমার মত যারা প্রথম বিদেশ ভ্রমন করার চিন্তা করছেন তারা বিশেষ করে অনেক দুশ্চিন্তায় থাকেন বাজেট কত লাগবে, ট্যুর প্লান কি করব, নিরাপত্তার ইস্যু, কোথায় থেকে কিভাবে কোথায় যাব, সব চিনব তো? আর যদি সাথে ফ্যামিলি নিয়ে যান তাহলে তো কথাই নেই। আমি আমার অয়াইফ নিয়ে উক্ত রুটে ভ্রমন করেছি। এবং আল্লাহর রহমতে বেশ ভালভাবেই সম্পন্ন করে গত ৩১ শে অক্টোবর দেশে ফিরেছি। যাবার আগে কত যে চিন্তা ভাবনা করেছি তার ইয়ত্তা নেই। এজেন্ট এর মাধ্যমে যাব কিনা, একা এত সব কিছু ম্যানেজ করতে পারব কিনা, সাথে মেয়ে মানুষ থাকবে আবার ইন্ডিয়ার এখন যা অবস্থা দিল্লী তো ধর্ষনের মাপকাঠিতে বেশ উপরেই আছে। বলে রাখা ভাল, আমার ফেসবুক একাউন্ট ছিল না, টিওবি সমন্ধে একজনের কাছে শুনার পর একাউন্ট ওপেন করি এবং টিওবিতে যুক্ত হই। তারপর সবই ইতিহাস। এই ছেলে একাই পুরো ট্যুরের প্লান করে বউকে নিয়ে কোনো এজেন্ট ছাড়াই দিব্যি সফল ট্যুরের বাস্তবায়ন করতে পেরেছে।
আমার পোষ্টটি বিশেষ করে তাদের কাজে আসবে যারা খরচের চিন্তা না করে ফ্যামিলি নিয়ে সুন্দর একটা রিলাক্স ট্যুর দিতে চান।
প্রথমেই আসি রুট প্লান সমন্ধে। দেখুন যে রুটের কথা আমি বলছি সেই রুটে অনেক ভাবে ভ্রমন করা যেতে পারে। সম্ভাব্য প্লান গুলো এই রকম হতে পারে;
 ঢাকা থেকে সরাসরি দিল্লী রিটার্ন এয়ার তারপর দিল্লী থেকে সিমলা-মানালী-দিল্লী করতে পারেন আবার দিল্লী-মানালী-সিমলা-দিল্লী করতে পারেন।সেক্ষেত্রে কোলকাতা বাদ পরবে।
 ঢাকা-কোলকাতা বাসে যেয়ে কোলকাতা-দিল্লী রাজধানী ট্রেন তারপর দিল্লী থেকে সিমলা-মানালী-দিল্লী করতে পারেন আবার দিল্লী-মানালী-সিমলা-দিল্লী করতে পারেন।
 ঢাকা-কোলকাতা মৈত্রী ট্রেনে গিয়ে কোলকাতা থেকে দিল্লী রাজধানী ট্রেন তারপর দিল্লী থেকে সিমলা-মানালী-দিল্লী করতে পারেন আবার দিল্লী-মানালী-সিমলা-দিল্লী করতে পারেন।
 ঢাকা-কোলকাতা মৈত্রী ট্রেনে গিয়ে কোলকাতা থেকে কালকা ট্রেনে যেয়ে, কালকা থেকে টয় ট্রেনে সিমলা যাবেন। এখানে উল্লেখ্য টয় ট্রেন কিন্তু ওয়ার্ল্ড হেরিটেজের একটি। তারপর সিমলা থেকে মানালী বাসেও যাওয়া যায় ভাড়া ৮০০ রুপি আবার ট্যাক্সি রিজার্ভ নিতে পারেন ভাড়া ২৬০০ থেকে ৫৫০০ রুপি পরবে।
আমার রুট প্লান টা বলে নিই।আমার বউ কখনো ট্রেনে উঠে নাই তাই আমি একটা ট্রেন অপ্সন রাখছি। ঢাকা-কোলকাতা মৈত্রী ট্রেন, কোলকাতা-দিল্লী রিটার্ন বাই এয়ার ইন্ডিগো, দিল্লী-মানালী এসি ভলভো বাস HRTC । মানালী-সিমলা ট্যক্সি রিজার্ভ, সিমলা-দিল্লী এসি ভলভো বাস HRTC। দিল্লী লোকাল সাইট ট্যাক্সি এবং ট্যূরিস্ট বাস, আগ্রা ফোর্ট, তাজমহল ট্যূরিস্ট বাস, কোলকাতা-ঢাকা ইউএস বাংলা এয়ারলাইন্স।

টিকেট সংগ্রহঃ পাসপোর্টের অরিজিনাল কপি নিয়ে কমলাপুর স্টেশনে যেতে হবে অন্য কারো কাছে পাঠিয়ে দিলেও হয় সমস্যা নাই কিন্তু টিকেট কাটতে পাসপোর্টের অরিজিনাল কপি দরকার এটাই হল মুলকথা। তো মৈত্রীর টিকেট কাটলাম কমলাপুর থেকে ১৬৩৩ টাকা পার টিকেট, তারপর ইন্ডিগো এয়ারের টিকেট কাটলাম গুলশান নন্দোস এর উপরে ইন্ডিগোর এজেন্ট এর কাছ থেকে রাউন্ড ট্রিপ কোলকাতা-দিল্লী ১১৯০০ টাকা পার পারসন।

প্রথম দিন
অক্টোবরের ২০ তারিখ সকাল সকাল যাত্রা শুরু করলাম। ক্যান্টনমেন্ট স্টেশনে পৌঁছলাম সকাল ৭ টার দিকে। অনেক লোকের ভীড়, লম্বা লাইন ধরে ভীতরে ঢুকলাম। নির্ধারিত আসনে বসে পড়লাম। আমার ওয়াইফ দেখলাম বেশ অন্য রকম অনুভুতিতে আবিষ্ট। প্রথম দেশের বাইরে যাচ্ছে হোক সেটা ভারত। ট্রেন ছাড়ল সকাল ৮:১০ এ। প্রায় আধা ঘন্টা পর নামল ঝুম বৃষ্টি। চারিদিকে অন্ধকারাচ্ছন্ন আর আমি হেমন্ত দার গান শুনছি;

“এই আছি এই নেই আমি যেন পাখী মেলি পাখনা
সীমানার সীমা ছেড়ে যাই দূর প্রান্তে
নীড় একা পরে থাক থাকনা”

ট্রেনের মাঝে কিছু নাস্তা খেলাম, চিকেনের কোনো আইটেম হবে চিমসায়ে কাঠ হয়ে গেছে। একজন এসে ইমিগ্রেশনের জন্য আরোহন কার্ড দিয়ে গেল, ওটা পুরন করে ফেললাম।ট্রেনের খাবার সরবরাহকারি এসে দুপুরের খাবারে অর্ডার নিয়ে গেল ১৫০ টাকা এক মিল। আমরা দুজনে একটার জন্য বললাম। দুপুর ২:৩০ টায় পৌঁছলাম দর্শনা স্টেশনে, তাড়াহুড়ো করে নেমে পড়লাম। বউকে নিয়ে যেতে যেতে তবুও লাইনের মাঝখানে। একজন মহিলা পুলিশ এসে বললেন আমি একাই দুইজনের টা করতে পারব। ইমিগ্রেশনের ফর্মালিটিজ শেষ করে সিটে ফিরে দেখি দুপুরের খাবার দিয়ে গেছে। খাবারের মান বেশ ভাল। দুজনে খেয়ে নিলাম। সবার ইমিগ্রেশন শেষ করে ট্রেন ছাড়ল বিকাল ৪:০০ টায়। ১০ মিনিট পর গেদে পৌঁছলাম। লাগেজ সব নিয়ে দুজন নেমে পড়লাম। আবার লম্বা লাইন। এখানে একটা ফরম পুরন করতে হয়, ডলার টাকা এবং রুপি কোনটা কি পরিমান আছে তার হিসেব দিয়ে। কাস্টমস অফিসারের সহাস্য প্রশ্ন
– কি করেন?
– আমি, প্রাইভেট জব করি।
– আপনাদের দেশের বেশীর ভাগই কি প্রাইভেট জব করে নাকি? যারা যায় তারাই প্রায় এই কথা বলে। পাসপোর্ট এ সিল মেরে বলছে, আমাদের খুশি করবেন না?
– আমি বললাম কিভাবে খুশি করব?
– কিছু দিয়ে যান।
– আমি বললাম রুপি তো করা হয় নাই আমার।
– তিনি বললেন আমরা সব নেই। দিন ১০০ টাকা দিন।
– ১০০ টাকা দিয়ে বের হয়ে গেলাম। এরা অনেক পাওয়ারফুল কিন্তু ছেছড়া!
ট্রেনে গিয়ে বসে পড়লাম। দেখি তখনো অর্ধেকের বেশী মানুষের ইমিগ্রেশন বাকি। কি আর করা নেমে এসে চা খেলাম ১৫ রুপি কাপ আর কিছু টাকা রুপি করে নিলাম। বর্ডার থেকে না ভাংগানোই ভাল। এখানে রেট কম পাওয়া যায়। সবার ইমিগ্রেশন শেষ করে ট্রেন ছাড়তে প্রায় ৬:৩০ বেজে গেল। অবশেষে চিতপুর স্টেশনে আমরা নামলাম রাত সাড়ে আটটায়। স্টেশন থেকে ট্যাক্সি নিয়ে চলে গেলাম মারকুইস স্ট্রিট। হোটেল আফসায় আগে থেকে ফোন করে রেখেছিলাম বাংলাদেশ থেকে কিন্তু গিয়ে দেখি কোনো রুম খালি নেই। অবশেষে হোটেল ভি আই পি কন্টিনেন্টাল এ উঠে পড়লাম ২৫০০ টাকা এক রাতের জন্য। কোলকাতা হোটেল ভাড়া একটু বেশী আর আমি একটু সুচিবাই টাইপের, অপরিচ্ছন্ন হোটেলে থাকতে পারিনা। ফ্রেশ হয়ে কস্তুরি (মারকুইস স্টিটের নামকরা হোটেল) থেকে খেয়ে নিলাম আর নিউ গংগা থেকে ডলার ভাংগিয়ে রুপি করে নিলাম। হোটেল রুমে গিয়ে ঘুম।

দ্বিতীয় দিন ২১ শে অক্টোবর
সকালে উঠে গোসল দিয়ে ফ্রেশ হয়ে নিলাম। আগের রাতে হোটেল ম্যানেজারকে বলে রেখেছিলাম ট্যাক্সি যোগার করে রাখতে, সেই মোতাবেক ট্যাক্সি হাজির। ৮:৫০ এ আমাদের ফ্লাইট দিল্লীর উদ্দেশ্যে। হোটেল থেকে রওনা হলাম ৬:৩০ এ। আধা ঘন্টার মধ্যে বিমানবন্দরে পৌঁছে গেলাম। কোলকাতার রাস্তায় জ্যাম নেই বললেই চলে। ডিজিটাল সিগনাল সিস্টেম ১০ সেকেন্ড করে সিগনাল। চেক ইন করে বোর্ডিং পাস নিয়ে প্লেনে গিয়ে উঠে বসলাম। যথাসময়ে প্লেন ছাড়ল। সকাল এগারোটায় দিল্লী বিমানবন্দর থেকে বের হলাম। ট্যাক্সি নিলাম আইএসবিটি পর্যন্ত। যেতে যেতে ট্যাক্সিওয়ালার সাথে কথা হচ্ছিল কোথায় যাব কি সমাচার। ফাজিল আমাদের নিয়ে গেল এক এজেন্টের কাছে যারা নাকি ভলভো বাস পরিচালনা করে দিল্লী থেকে মানালী পর্যন্ত। আমি আগে থেকেই খোজ খবর নিয়ে গেছি এইচ আর টি সি ভলভো বাসে যাব। তাই ড্রাইভারকে ঝারি দিলাম হালকা, আমাদের সোজা আই এস বিটি নিয়ে চলেন। বাসস্টপেজ এ নামলাম ১২ টার আগেই। ট্যাক্সি ভাড়া ৪০০। খুজে বের করলাম ২৯ নাম্বার কাউন্টার থেকে মানালির টিকেট পাওয়া যাবে। বিশ্রামাগারে বসে একটু বিশ্রাম নিলাম। টিকেট কাটলাম ২ জন মানালীর জন্য ৩০০০ রুপি। বাস বিকাল ৬:৩০ টায়। হালকা একটু নাস্তা সেরে বেরিয়ে পড়লাম। হাতে কিছুটা সময় আছে ইন্ডিয়া গেট আর রেড ফোর্ট টা দেখব বলে ট্যাক্সি ঠিক করলাম ৩৫০ রুপি দিয়ে। ঘুরে এসে যথাসময়ে বাসে উঠে বসলাম। মজার বিষয় হল বাস ছাড়ল ঠিক সময়ে এক মিনিট আগেও না পরেও না। দিল্লী থেকে যতই উত্তরে যাচ্ছি ঠান্ডার প্রকোপ বাড়ছে। রাতে বাস কোনো এক হরিয়ানার ধাবায় দাড়াল কিছু না বুঝে দাম না শুনে অর্ডার দিয়ে ৪৫০ রুপি গেল জলে খাওয়া কিছুই হল না সব ঝাঝালো আইটেম। বাসে উঠে ঘুমিয়ে পড়লাম। সকালে দেখি পাহারের আঁকাবাঁকা পথে বেয়ে বাস ছুটে চলেছে। দুই পাশে আপেলের বাগান দু চারটে আপেল আছে গাছে। আপেলের সিজন শেষের দিকে তাই গাছ অনেকটাই ফাকা।

তৃতীয় দিন ২২ শে অক্টোবর
মানালী মল রোডে পৌঁছলাম সকাল আটটার দিকে। এক নজর চারিদিকে তাকিয়ে দেখে নিলাম প্রকৃতি অপরুপ সৌন্দর্যে সেজেছে এখানে। মলে নেমেই দেখেশুনে হোটেল নিয়ে নিলাম। হোটেল হোয়াইট তারা ভাড়া ১০০০ রুপি প্রতি রাত। এখানে ৪০০ রুপি থেকে হোটেল পাওয়া যায়। ফ্রেশ হয়ে নাস্তা অর্ডার করলাম হোটেলে, ৫ মিনিটের মধ্যে নাস্তা হাজির। আজ বিকেলে আনুমানিক ১ টার দিকে লোকাল সব সাইট ঘুরে দেখব আর পরদিন রোথাং যাব বলে ট্যাক্সি ঠিক করলাম লোকাল সাইটের জন্য ৮০০ আর রোথাং এর জন্য ২৫০০। খেয়ে দিলাম এক ঘুম। ঘুম থেকে উঠে ফ্রেশ হয়ে খেয়ে নিচে নামলাম। ট্যাক্সি হোটেলের নিচেই দাঁড়িয়ে ছিল। বেরিয়ে পড়লাম। হাদিম্বা মন্দির,তারপর পাশেই আরও একটা মন্দির, ক্লাব হাউজ, হিম ভ্যালি, বিয়াস নদি দেখে দিন পার করে দিলাম।

চতুর্থ দিন ২৩ শে অক্টোবর
ট্যাক্সি হোটেলের নিচে দাঁড়িয়ে। ফ্রেশ হয়ে নাস্তা করে নিচে নামলাম। রওনা হলাম রোথাং এর উদ্দেশ্যে। পাশের পাহারের উপড় মেঘ আছড়ে পড়ছে, একটার উপড় আরেকটা লুটোপুটি খাচ্ছে। আর আমাদের ট্যাক্সি পাহারের ঢালু রাস্তা বেয়ে ধীরেধীরে ঊঠছে চুড়ার দিকে। পথ থেকে বরফে যাওয়ার পোশাক ভাড়া নিলাম ৩০০ রুপি, মোটা মোজা ১০০ টাকা ১ জোড়া। প্রকৃতি এত সুন্দর হতে পারে নিজের চোখকেও বিশ্বাস করতে পারছিলাম না। অবশেষে আমরা প্রায় ২ ঘন্টা পর পৌঁছলাম রোথাং এ। বরফ দেখে কি অবস্থা হয়েছিল তা ভাষায় প্রকাশ করার মত না। আমি পিচ্চিদের মত ছুটাছুটি শুরু করে দিলাম। বরফ হাতে নিয়ে টিকতে না পেরে এক জোড়া হ্যান্ড গ্লোভস নিলাম ১০০ রুপিতে। বরফ ছোড়াছুঁড়ি পর্ব শেষ করে হোটেলে ফিরে এলাম। বিকেলটা মলে ঘুরে কেনাকাটা করে কাটিয়ে দিলাম। মানালীর ড্রাইভারের মাধ্যমে সিমলা যাওয়ার একটা ট্যাক্সি ঠিক করলাম ২৭০০ রুপিতে। এখান থেকে এইচ আর টি সি এর ডিলাক্স বাস যায় সিমলা পর্যন্ত ভাড়া ৮০০ রুপি করে। আমি ট্যাক্সি বেছে নিলাম নিজের মত করে যাব বলে।

পঞ্চম দিন ২৪শে অক্টোবর
মানালী থেকে রওনা হলাম সকাল সাড়ে সাতটার দিকে। আধা ঘন্টার মধ্যে কুল্লু পৌঁছলাম। কুল্লু কিন্তু শালের জন্য বিখ্যাত। এখানকার শাল অনেক ভাল। আমার অফিসের বস ইন্ডিয়ান উনার কাছে থেকে শোনা। শাল ফ্যাক্টরি থেকে কয়েকটা শাল কিনলাম বেশ সাশ্রয়ী দামে। একটু যেয়ে পাঞ্জাবী এক ধাবায় নাস্তার জন্য দাড়ালাম। এদের সব খাবারে এক ধরনের মসলা ব্যবহার করে, আমার এত বিশ্রী লাগে! মুখেই তুলতে পারিনা। কোনোমতে দু লোকমা খেয়ে আবার রওনা হলাম। এই মানালী থেকে সিমলা আসার রাস্তাটা অনেক সুন্দর তাই দিনে ভ্রমন করাই বুদ্ধিমানের কাজ। আসার পথে প্যন্দহ ড্যাম পরবে এক কথায় অসাধারন। সবুজ পাহারে ঘেরা নীল পানির আধার চোখ ধাঁধানো জিনিস। পাহাড়, সবুজ আর পাইন গাছের বন পেরিয়ে ৯ ঘন্টা পর আমরা পৌঁছলাম শিমলাতে। ড্রাইভারের এক পরিচিতের মাধ্যমে হোটেল ঠিক করলাম ১৫০০ প্রতি রাত হিসেবে কিন্তু কথা ছিল হোটেল পছন্দ না হলে নিব না। মল এর পাশেই হোটেলের অবস্থান। পজিশন আর হোটেলের পরিচ্ছন্নতা দেখে পছন্দ হয়ে গেল। উঠে পড়লাম। শিমলা হিমাচলের রাজধানী তাই এখানে খরচ একটু বেশী। ১০০০ থেকে ২০০০ এর মধ্যেই হোটেল নিতে হবে। ফ্রেশ হয়ে মলে বেরিয়ে পরলাম। যেহেতু সারাদিন জার্নি করে ক্লান্ত তাই বেশী সময় ঘোরাঘুরি না করে হোটেলে এসে রাতের খাবার খেয়ে ঘুমিয়ে পরলাম। রাতের খাবার ২০০ টাকায় দুইজন।

ষষ্ঠ দিন ২৫ শে অক্টোবর
ট্যাক্সি রিজার্ভ সারাদিন ঘোরাঘুরি ১০০০ রুপি। সকাল ১০ টায় বের হলাম। প্রথমে হিপ হিপ হুররে। এটা পাহাড়ের গা ঘেষে গড়ে তোলা এমিউজমেন্ট পার্ক। এন্ট্রি ফি ২০০ টাকা প্রতিজন। তারপর কুফরি। এখানে ঘোরায় চড়ে পাহাড়ের চুড়ায় উঠতে হয় ২৮০০ মিটার উপড়ে। ঘোড়া উঠা চার্জ ৫২০ জনপ্রতি। বিকেলে শিমলা মলে চলে এলাম। এখানে রিটজ, মল রোড, স্ক্যন্ডাল পয়েন্ট, জাকু টেম্পল দেখলাম। পুরো বিকেলটা কাটিয়ে দিলাম মল রোডে। শিমলা সত্যিই একটা দেখার মত যায়গা। পাহারে গা বেয়ে বেয়ে সুনিপুনভাবে গড়ে তোলা শহর, ছিমছাম রাস্তা দেখলে যে কারো চোখ জুড়িয়ে যাবে। বিকেলে স্ক্যান্ডাল পয়েন্ট থেকে দিল্লীর টিকেট কাটলাম HRTC AC VOLVO BUS এ ৯০২ রুপি জনপ্রতি। রাতে হোটেল যেয়ে ঘুমিয়ে পড়লাম। শিমলায় কোনো কেনকাটা নয় কারন এখানে নিজস্ব কোনো ইন্ডাস্ট্রি নেই তাই জিনিসপত্রের দাম বেশি। একটা জিনিস খুব চলে এখানে সেটা হল বিভিন্ন ধরনের মদ।

সপ্তম দিন ২৬ শে অক্টোবর
সকালে উঠে হোটেল চেক আউট করে বেরিয়ে পরলাম ট্যাক্সি নিয়ে ISBT এর উদ্দেশ্যে। এটা মল রোড থেকে ৭ কিলো দূরে। ট্যাক্সি ভাড়া ৩০০ রুপি। বাসে উঠে বাংলাদেশী এক কাপল পেলাম। আলাপ করে খুব ভাল লাগল। এক সাথে দিল্লী আসলাম। পৌঁছলাম বিকেল ৫:০ টায়। ৩৫০ টাকায় ট্যাক্সি নিয়ে পাহারগঞ্জ চলে গেলাম। হোটেল ঠিক করলাম ৭০০ রুপি প্রতি রাত। হিসেব করে চলা শুরু করেছি কারন টাকা ফুরিয়ে আসার পথে। সন্ধায় বের হয়ে ট্যুরিস্ট ইনফরমেশন বুথ থেকে ডলার ভাংগালাম ৬৪ রুপি করে। পরের দিন শুক্রবার। আমাদের প্লান ছিল আগ্রা যাব পরের দিন কিন্তু সেটা হলনা। প্লান করলাম শুক্রবার দিল্লীর লোকাল সাইট দেখব আর শনিবার আগ্রা। সে অনুযায়ী ট্যুরিস্ট বাসের জন্য বুকিং দিয়ে দিলাম। খুজে কলকাতার মালিকের এক হোটেল খুজে বের করে ১৫০ টাকা থালি হিসেবে খেয়ে হোটেলে এসে ঘুমিয়ে পরলাম। পাহারগঞ্জে নন এসি হোটেল ৬০০-১০০০ টাকায় আর ১০০০-২০০০ টাকায় এসি হোটেল পাওয়া যায়।

অষ্টম দিন ২৭ শে অক্টোবর
ট্যুরিস্ট বাসে করে বিরলা মন্দির, প্রেসিডেন্ট হাউজ, ইন্ডিয়া গেট, কুতুব মিনার, লটাস টেম্পল, রাজঘাট (গান্ধীজীর সমাধী), রেড ফোর্ট দর্শন। রাতে চাদনি চকে কেনাকাটা আর জামা মসজিদের পাশে চিকেন বিরিয়ানি খাওয়া দাওয়া শেষে হোটেলে ফিরে এলাম। ভাল কথা চাদনি চকের হলদিরাম বেকারি থেকে দিল্লীর প্রায় ১০-১২ রকমের লাড্ডু সব গুলা একটা করে খেয়ে এসেছি এক কথায় অসাধারন।

নবম দিন ২৮ শে অক্টোবর
ট্যুরিস্ট বাসে করে আগ্রা যাত্রা। ট্যাক্সি রিজার্ভ ভাড়া ৪০০০ এর কাছাকাছি। আমার টাকা প্রায় শেষ পর্যায়ে তাই ট্যুরিস্ট বাসেই গেলাম। ট্যুরিস্ট বাসের একটা পেইন হলো এরা বেজায়গায় দাঁড়িয়ে সময় নষ্ট করে যেখানে আপনার কোনো প্রয়োজন নেই। প্রথমে আগ্রা ফোর্ট টিকেট ৮০ রুপি করে তারপর লাঞ্চ বিরতি। ২:০ টার দিকে তাজমহল ঢুকলাম টিকেট ৫৩০ রুপি করে। এখানে পাস্পোর্ট এবং ভারতীয়দের আধার কার্ড চেক করে। সো সাবধান। রাতে হোটেলে ফিরলাম ১২ টার দিকে। মথুরা এবং বৃন্দাবন ও দেখাইছে কিন্তু আমরা নামি নাই বাস থেকে।

দশম দিন ২৯ শে অক্টোবর
সকালে হোটেকে চেক আঊট করে অটো নিয়ে বের হয়ে পড়লাম দিল্লী বিমানবন্দরের উদ্দেশ্যে। ৯:৫০ এর ফ্লাইটে ইন্ডিগো এয়ারে কোলকাতা নামলাম ১২ টার দিকে। হোটেলে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে ভিক্টরিয়া মেমোরিয়াল এ চলে গেলাম। এন্ট্রি ফি বাগান+মিউজিয়াম ২০ রুপি। হোটেল নিয়েছিলাম মারকুইস স্ট্রিটে আর এটা ওর কাছাকাছি। ভিক্টোরিয়া ঘুরে রাতে ফিরে মারকুইস স্ট্রিটের খালিক হোটেলে খেয়ে রাতে শুয়ে পরলাম।

একাদশ দিন ৩০ শে অক্টোবর
গরিয়া হাট শাড়ি কিনতে গেলাম আদি ঢাকেশ্বরী বস্ত্রালয় থেকে শাড়ি কিনলাম। এখানে শাড়ির প্রচুর কালেকশন। বিকেলে চলে গেলাম কোলকাতা নিউ মার্কেট। কেনাকাটা শেষে রাতে খাবার খেয়ে হোটেল ঘুম।

দ্বাদশ দিন ৩১ শে অক্টোবর
ইউ এস বাংলা এয়ারলাইন্সে টিকেট কাটা ৩:৪০ এ ফ্লাইট। চকলেট আর সাবান কিনা বাকি ছিল। সকালে নাস্তা করে নিউ মার্কেট গেলাম আবার। শ্রী লেদার থেকে ইচ্ছেমত জুতা স্যান্ডেল কিনে ব্যাগ ভরে ফেললাম, চক্লেট কিনলাম। ব্যাগপত্র গুছিয়ে হোটেল চেক আউট করলাম ১২ টার আগেই। ট্যাক্সি নিয়ে বিমানবন্দর রওনা হলাম। ট্যাক্সি ভাড়া ৩০০ । ইমিগ্রেশন পার হয়ে বোর্ডিং পাস নিয়ে যথাসময়ে বিমানে উঠে বসলাম। ইউএস বাংলার সার্ভিস আমার ধারনাই পালটে দিল। এত সুন্দর পরিসমাপ্তির জন্য ইউএস বাংলাকেও ধন্যবাদ। পরিশেষে শুধু এই টুকুই বলতে চাই টিওবি না হলে আমার পক্ষে একা এই ট্যুর করা সম্ভব হত না। আমার অশেষ কৃতজ্ঞতা টিওবির প্রতি।

মোট খরচঃ ৮৬০০০ দুইজন (আমি আর আমার ওয়াইফ) ট্রান্সফার+হোটেল+খাওয়া

Post Copied from:Anwar Hossain>Travelers of Bangladesh (ToB)

কোলকাতা, শিমলা, মানালি আর আগ্রা!

১৫ হাজার টাকায় ঘুরে আসলাম কোলকাতা, শিমলা, মানালি আর আগ্রা! কোলকাতায় ২দিন, শিমলায় ১দিন, মানালিতে ২দিন আর আগ্রায় ১দিন আর ৪দিন আসা-যাওয়া মিলিয়ে ১০দিনের ট্যুর ছিল আমাদের।

আমরা গিয়েছিলাম ৪জন। ২২ সেপ্টেম্বর রওনা দিই খুলনা থেকে বেনাপোলের উদ্দেশ্যে। ঢাকা থেকে আসতে চাইলে খুলনার বাস/ট্রেনে আসা যাবে। বাস ভাড়া ৫৫০টাকা, ট্রেন ৫০৫টাকা।

Day Zero:
খুলনা-বেনাপোল ট্রেন (সকাল ৬টায় খুলনা রেলস্টেশন থেকে) = ৪৫টাকা
বেনাপোল-বর্ডার অটো= ২৫ টাকা (রিজার্ভ ১০০টাকা)

বর্ডারে কারো হাতে পাসপোর্ট না দিয়ে নিজে নিজে ইমিগ্রেশন কমপ্লিট করুন। আগে থেকে বিভাগীয় সোনালি ব্যাংক শাখায় ট্রাভেল ট্যাক্স ৫০০ টাকা জমা দিয়ে যেতে পারেন,ইমিগ্রেশনে সময় বাঁচবে। ডলার নিতে পারেন অথবা হাতে ৫০০০ টাকা রাখতে পারেন, বাকিটা ভেতরে। এইটা বৈধ না, তবে বাংলা টাকা ইন্ডিয়ায় ভাঙ্গালে রেট ভালো পাওয়া যায়। বর্ডার পার করে টাকা ভাঙ্গিয়ে আমরা সোজা বনগাঁ স্টেশন চলে যাই। এখান থেকে সকল হিসাব রুপিতে। “১ রুপি=১.২৮ টাকা” “সকল রুম ভাড়া মাথাপিছু প্রতিদিনের”

বর্ডার-বনগাঁ = ৩০ রুপি
বনগাঁ – শিয়ালদাহ = ২০ রুপি
শিমলা যেতে হলে আগে কালকা যেতে হবে ট্রেনে। আগে থেকে টিকেট বুক দিলে তো ঝামেলা কমে গেল। আর না দিলে সোজা শিয়ালদাহ থেকে ফেয়ারলি প্লেস চলে যান। ফরেনারদের জন্য শুধুমাত্র টিকেট বিক্রি হয় ফেয়ারলির ইস্টার্ন রেলওয়ে হেডকোয়ার্টার বিল্ডিং এ। তাই পাসপোর্ট+ভিসার জেরক্স সাথে নেয়া বাধ্যতামূলক।

শিয়ালদাহ-ফেয়ারলি প্লেস= ১৫০ রুপি ট্যাক্সিতে (পারহেড ৪০ রুপি)

ফেয়ারলি থেকে টোকেন সংগ্রহ+পূরণ করে যেসব টিকেট কিনবেনঃ
১) হাওড়া টু কালকা (কালকা মেইল, ১২৩১১) = ৯৯৫ রুপি স্লিপার ক্লাস (GST সহ)
২) দিল্লি টু হাওড়া (কালকা মেইল, ১২৩১২) = ৮৮৫ রুপি স্লিপার।

টিকেট কাটা হয়ে গেলে মারকুইস স্ট্রিটে চলে যান। পূঁজার সময় গিয়েছিলাম তাই আগে থেকে হোটেল বুক দিয়ে যাওয়া বেটার মনে হয়েছে। হোটেল বুক করেছিলাম  এর মাধ্যমে। জোড়া গির্জার পাশের গলিতে ” Shaw Guest House” এ ছিলাম।

রুমভাড়া= পারহেড ৪২০রুপি

কোলকাতায় ঘোরার জায়গাঃ
১) ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়াল ২) ইডেন ৩) একুইটিকা ৪) নিউমার্কেট ৫) হাওড়া ব্রীজ ৬) বিদ্যাসাগর সেতু ৭)সাইন্স সিটি

কোলকাতায় ১দিন থাকা শ্রেয়। শহর ঘুরতে হলে আশপাশে আপনার গন্তব্যে কত নাম্বার বাস যায় জিজ্ঞেস করে উঠে পড়ুন বাসে। বাস ভাড়া ৬ থেকে ১০ রুপির মধ্যে। অথবা ক্যাব ভাড়া করতে পারেন সারাদিনের জন্য। পারহেড ম্যাক্সিমাম ২৫০-৩০০ রুপি পড়বে।

খাবারঃ
১)সকালের নাস্তা- ৪টা রুটি, ডিম, ডাল তড়কা= ১৮ রুপি
২) দুপুরে চিকেন/ভেজ থালি= ৫০-৭০ রুপি
৩) রাতের খাবার দুপুরের মতো খেয়ে ফেলবেন= ১০০ রুপির মধ্যে

Day One:
কোলকাতায় ঘুরে কাটিয়েছি।

Day Two:
সন্ধ্যা ৭:৪০ এ কালকা মেইলে করে কালকার উদ্দেশ্যে যাত্রা শুরু করলাম। ৩৩ঘন্টা থাকতে হবে ট্রেনে। তাই যত হালকা পোশাক পড়তে পারেন ততই ভালো। ট্রেনে উঠার আগে শুকনো খাবার কিনে নিতে হবে সকালের নাস্তার জন্য।

Day Three:
ট্রেনেই থাকতে হবে এই দিনটা।
ট্রেনে দুপুর/রাতে খাবার খরচঃ
১) ভেজ থালি- ১১০ রুপি
২) ডিম থালি- ১৩০ রুপি
৩) চিকেন থালি- ১৪০ রুপি

প্রতি থালিতে ১জনের ভাত, ১জনের রুটি থাকবে। স্টাফ কে বললে রুটি চেঞ্জ করে এক্সট্রা ভাত দিবে যা দুইজন আরামসে খেতে পারবে।

Day Four:
ট্রেন লেট না করলে কালকা পৌছে যাবেন ভোর ৪:৩০ এ। আগে থেকে শিবালিক ডিলাক্স টয় ট্রেনের টিকেট (৪২০ রুপি) কেটে রাখলে বসে পড়ুন টয় ট্রেনে অথবা স্টেশন থেকে জেনারেল কোটায় টিকেট (৫০রুপি) কাটতে পারেন। জেনারেল কোটায় সিট পাওয়ার কোন সম্ভাবনা নাই। ট্রেনে আগে উঠলে আগে সিট পাবেন ভিত্তিতে সিট ফিলাপ হয়।

যারা প্রথম যাবেন শিমলা তারা অবশ্যই টয় ট্রেন ট্রাই করবেন। কালকা থেকে শিমলা বাসে/ক্যাবেও যাওয়া যায়। তবে সেক্ষেত্রে অন্যরকম একটা অভিজ্ঞতা মিস করে যাবেন।

শিমলায় আমরা মল রোডের ঠিক নিচেই হোটেল বুক করেছিলাম, শিমলা ওল্ড বাস-স্টপের দিকে, “Hotel Basant”
হোটেল ভাড়া= ২৭৫রুপি পারহেড

শিমলায় যদি বিকেলে পৌছান তবে শাওয়ার নিয়ে সন্ধ্যায় বেরিয়ে পড়ুন রাতের শিমলা দেখতে। বেশ ভালো ঠান্ডায় রাতের শিমলা অদ্ভুত রকমের সুন্দর।
কালি বাড়ি থেকে চার্চ পর্যন্ত হেটে বেড়ান, শেষে মল রোডে এসে বাকি সময় কাটান। আমরা এগুলা ঘুরে একটা এজেন্সীর মাধ্যমে ক্যাব বুক করলাম। নরমালি এজেন্সীর পক্ষপাতি না হলেও কস্ট কম পড়ায় এইটা নিয়ে নিই। প্যাকেজে যা যা ছিলঃ
১) শিমলা লোকাল স্পট ট্রিপ (জাখু মন্দির, গ্রীন ভ্যালি, কুফরী)
২) শিমলা থেকে মানালি বাই টাটা অল্টো ফোর সিটার
৩) মানালি লোকাল স্পট ট্রিপ (হাদিম্বা টেম্পল, মানু টেম্পল, ক্লাব হাউস, ভাসিস্থ রাম মন্দির)
৪) মানালি টু রোথাং পাস বাই টাটা অলটো
৫) রোথাং পাসের পারমিশন চার্জ

সব কিছু মিলায়ে পারহেড পড়েছিল ২১৫০ রুপি। বারগেইন করলে আরো কমে পাওয়া যেত। এজেন্সি নিলে সব কিছু আগে থেকে ঠিকঠাক করে যাবেন, কোথায় কোথায় যাবেন, কতক্ষণ থাকবেন ইত্যাদি।
ম্যানুয়ালি এই ট্রিপটা দেয়া যায় এইভাবেঃ
১) শিমলা ট্রিপ= ১২০০ রুপি ক্যাব (৪জনের)
২) শিমলা টু মানালি বাস (New bus stop shimla থেকে কিনতে হবে) = ৭০০ রুপি
৩) মানালি লোকাল স্পট= ১০০০-১২০০ রুপি পার ক্যাব
৪) মানালি টু রোথাং= অফসিজনে ২০০০রুপি আর অনসিজনে ৬০০০ রুপি পর্যন্ত হয়।
৫) রোথাং এর পারমিশন চার্জ= ৬০০রুপি

ম্যানুয়ালি/ এজেন্সি যেভাবেই যান মানালি পৌছেই রোথাং এর পারমিশন টা করিয়ে নিতে বলবেন ড্রাইভার কে। এইক্ষেত্রে ১ম দিন পারমিশন না পেলে ২য় দিন পারমিশন পাওয়ার চান্স থাকে। যেদিন পারমিশন পাবেন সেদিন ভোর ৪:৩০ এ ড্রাইভারকে পিক করতে বলবেন। নাহলে গাড়ির সিরিয়াল অনেক বেশি হয়ে যাবে আর সময় নষ্ট হবে।

Day Five:
ভোরে ক্যাবে উঠে শিমলার লোকাল স্পটগুলায় যাই। লোকাল স্পটগুলার মধ্যে আছে জাখু মন্দির, গ্রীন ভ্যালি আর কুফরী। জাখুতে অনেক বানর, তাই চশমা আর ক্যামেরা সাবধান। কুফরীতে ঘোড়ায় চড়ে উঠতে হবে।

জনপ্রতি ঘোড়ার ভাড়া= ৫০০ রুপি (এটা সরকার কর্তৃক নির্ধারিত)
ঘোড়ার খরচ একটু বেশি মনে হলেও এত দূর এসে এটা না করলে ইনকমপ্লিট থেকে যায়। ঘোড়ায় চড়ার পর মনে হয়েছে ৫০০ রুপি জলে যায় নি।
কুফরীতে ঢুকতে পথে আরো ২০রুপি দিতে হয়।

শিমলা ঘুরে আমরা দুপুর ২টা ১৫তে ক্যাবে করে মানালির উদ্দেশ্যে যাত্রা করি। পথে দুপুরের খাবার সেরে নিই।

দুপুরের খাবার= ভাত+ডাল মাখনি (৩ জন খাওয়া যায়)= ১০০রুপি পারহেড

আমরা মানালি পৌছাই রাত সাড়ে দশটায়। হোটেল ছিল মল রোডের পাশেই “Hotel Shingar”

ভাড়া= ১৭৫ রুপি পারহেড

পরের দিন মানালির লোকাল স্পটগুলায় ঘুরতে যেতে পারেন। ম্যাক্সিমাম ৩-৪ঘন্টা লাগবে সবগুলা ঘুরতে। রাতের খাবার খেয়ে তাই ঘুম দিলাম।

রাতের খাবার = ১৪০ রুপি (মানালিতে দাম একটু বেশি)

Day Six:
আটটার দিকে বেরিয়ে নাস্তা সেরে নিলাম।
নাস্তাঃ আলু পরাটা,তাওয়া রুটি আর গোলাপ জামুন= ৪৭ রুপি

মানালির লোকাল স্পটগুলার উদ্দেশ্যে বেরিয়ে গেলাম। হাদিম্বা টেম্পল, ক্লাব হাউস, বনবিহার, ভাসিস্থ রাম মন্দির দেখে চলে এলাম মল রোডে।
মল রোডে Hotel Shingar এর পাশেই একটা বাঙ্গালি হোটেল আছে।
সেখানে দুপুরের খাবার খাই।

দুপুরের খাবার (চিকেন থালি) = ১৬০ রুপি

সন্ধ্যার দিকে মল রোডে গিয়ে বসলাম আর টুকটাক শপিং করলাম। পিউর লেদার বলে অনেক জ্যাকেট বিক্রি হয় সেখানে। বাংলাদেশের তুলনায় জ্যাকেটগুলা ভালো তবে একদম ভালোগুলা ৮০০-৯০০ রুপির বেশি দেয়া ঠিক হবে না।

রাতে মল রোড থেকে একটু সামনে এগিয়ে রোডের পাশ থেকে চিকেন ভুনা আর ব্রেড কিনে নিলাম।

চিকেন ভুনা= ৮০রুপি (দুইজন খাওয়া যাবে)
ব্রেড= ২০ রুপি (বড়টা)

Day Seven:
অক্টোবরের প্রথম দিকে অফসিজন থাকে তাই রোথাং এর উদ্দেশ্যে একটু দেরী করে ভোর সাড়ে ছয়টায় রওনা দিলাম। গাড়ি সেটাই যেটা আমাদের শিমলা থেকে মানালি নিয়ে আসছিল।
মানালি থেকে ৫০ কিমি দুরের রোথাং যাওয়ার রাস্তা দেখে অবাক হয়ে গেলাম। এত বেশি এল্টিটিউডের রাস্তা কিভাবে এত সুন্দর থাকে? আঁকাবাকা পাহাড়ি রাস্তা বেয়ে উঠে গেলা ১৩ হাজার ফিট উপরে।

রোথাং পৌছাতে আমাদের সকাল সাড়ে নয়টা-দশটা বাজলো। এখন বরফ নাই, কিন্তু হাড়কাপাঁনো ঠান্ডা আছে। নভেম্বরের শেষের দিক থেকে বরফ পড়া শুরু হয়। এখন দূরের পাহাড়গুলায় বরফ দেখা যায়।
রোথাং এ অনসিজনে (নভেম্বরের শেষ থেকে মার্চ পর্যন্ত) ঘোড়ায় চড়ে উপরে উঠা, প্যারাগ্লাইডিং হয়। প্যারাগ্লাইডিং করতে হলে ৩৫০০-৫০০০ রুপি গুনতে হবে।

মানালি থেকে দিল্লির সেদিন বিকেলের ৫:৩০ এর বাসের টিকেট কাটি হোটেলের মাধ্যমে।
মানালি টু দিল্লি এসি ভলভো বাস= ৯৫০রুপি
ইন্ডিয়ান বাসের অবস্থা আমাদের দেশের চেয়ে খুবই বাজে। ফাকা রাস্তায়ও তারা ৪০ এ চালায়। বাঙ্গালি হোটেলে খেয়ে মানালির হোটেল থেকে চেকআউট করে ৫:৩০ এ “ভলভো বাস স্ট্যান্ড” থেকে বাসে উঠে পড়ি। রাতের জন্য ১কেজি আপেল ৫০ রুপি দিয়ে কিনে নিই। এখানে আপেলের দাম তুলনামূলক কম আর মানও ভালো।

Day Eight:
ভোরে/সকাল ৭টার মধ্যে দিল্লি পৌছানোর কথা ছিল। পৌছালাম সকাল সাড়ে দশটায়।
দশটায় নিউ দিল্লি রেলস্টেশন থেকে আগ্রা যাওয়ার “Jheelum Express” ছিল। তবুও ট্রেন থাকেই আগ্রার এইভেবে নিউ দিল্লি রেলস্টেশন এ যাওয়ার জন্য উবার নিলাম। বলে রাখা ভালো ইন্ডিয়ায় মুভ করার জন্য ফোনে “Uber” ইন্সটল করা ফরজ। ভাড়া নরমাল থেকেও কম পড়ে।
উবারের ড্রাইভারকে জিজ্ঞেস করলাম উনি আগ্রায় যায় নাকি?
বললেন যায়..৩২০০ রুপিতে যাওয়া-আসা।
নরমালি উবারে এই ভাড়া দেখায় ৬০০০রুপি। আমরাও আর দেরী না করে নিয়ে নিলাম। তবে ভাড়া প্রকৃতপক্ষে ৬০০০ রুপিই। উনি তাড়াহুড়ায় কম বলে ফেলসেন। 😀

আগ্রায় পৌছাতে বিকেল ৩টা বাজলো। তাজমহলের টিকেট কাউন্টার পার্কিং এর পাশেই।
তাজের টিকেট কাটতে ডকুমেট শো করতে হয়, ইন্ডিয়ানদের আধার কার্ড আর ফরেনারদের পাসপোর্ট। ইন্ডিয়ানদের জন্য যে টিকেট মাত্র “৪০” রুপি সেই টিকেটই ফরেনারদের জন্য “৫৩০” রুপি।
টিকেটের সাথে এক বোতল পানি, জুতার কভার দিবে সৌজন্য হিসেবে :3

তাজমহল ঢুকে গেলাম ফরেনার কোটায় সবার আগে আলাদা লাইনে। টাকা কথা বললে যা হয় আর কি। সূর্যোদয় থেকে সূর্যাস্ত তাজমহল খোলা থাকে। তাই সূর্যাস্ত টা বসে বসে দেখলাম তাজ থেকে।

আমাদের হাওড়া যাওয়ার কালকা মেইল Old Delhi Railway Station থেকে ছিল পরের দিন সকাল ৬:৫০ এ। আগ্রা থেকে আসার সময় গাড়ি নষ্ট হয়ে যায়, রাতের খাবার ঢাবা তে সারি।
রাতের খাবারঃ রুটি, ডিম ভুর্জি আর কফি= ৭০ রুপি

Day Nine:
রেলস্টেশন পৌছাই রাত চারটায়। সকাল ৬:৫০ এ কালকা মেইল আসলো, উঠে গেলাম, টিকেট সেই ফেয়ারলি থেকে করা।
দিল্লি থেকে হাওড়া যেতে সময় লাগে পাক্কা ২৫ঘন্টা। পরের দিন সকাল ৮টায় হাওড়া পৌছায় এই ট্রেন। ট্রেনে খাওয়া-দাওয়া আর ঘুম দেয়া ছাড়া বিশেষ কিছুই করার নাই, এটলিস্ট এত জার্নির পর আর কিছু করতে ইচ্ছাও করবে না।

সকালের নাস্তাঃ পুরি+সবজী(আলু)= ২০রুপি
দুপুরের খাবারঃ ডিম থালি= ১৩০ রুপি (২জনের)
রাতের খাবার= পুরি সবজী+ ডিম বিরিয়ানি(হাফ) = ৫৫ রুপি (১জনের)

Day Ten:
হাওড়া পৌছাই সকাল নয়টায়। হাওড়া থেকে শিয়ালদাহ চলে যাই বাসে। ভাড়া ৯রুপি। শিয়ালদাহ থেকে বনগাঁ যাওয়ার “বনগাঁ লোকালের” টিকেট কাটি ২০ রুপি দিয়ে। ১০:২৮ এ একটা ট্রেন আছে, ১১:২৮ এ একটা আছে। ১১:২৮ এর ট্রেনে বনগাঁ পৌছাই দুপুর ১:৩০ এ। সেখান থেকে সিএনজি নিয়ে সোজা বর্ডার। বর্ডার পার হয়ে গেলাম আধঘন্টার ব্যাবধানে।

বিঃদ্রঃ ইন্ডিয়ান কোন হোটেলেই এক রুমে ৩জনের বেশি এলাউ করে না, ৪জন এক রুমে থাকতে হলে এক্সট্রা বেডের টাকা দিতে হয়, ২০০-৩০০ রুপি পড়ে প্রতিদিনের হিসাবে।

হ্যাপি ট্রাভেলিং! তবে আগে দেশ ঘুরুন, পরে বিদেশ।

Post Copied From:রাহুল বণিক‎>Travelers of Bangladesh (ToB)

ইন্ডিয়া ট্রিপ- দিল্লি, আজেমর, জয়পুর, আগ্রা এবং কলকাতা

প্রথমেই দুঃখিত যে খরচের বিস্তারিত হিসাব দিতে পারছি না বলে। ফ্যামিলি মেম্বারসরা গিয়েছি বলে ওভাবে হিসাব রাখা সম্ভব হয় নাই। আমরা ঢাকা থেকে দিল্লি এবং কলকাতা থেকে ঢাকার প্লেনে আসা যাওয়া করেছি। বুকিং ডট কম থেকে সব হোটেল বুক করেছি এবং পরে স্নংশ্লিষ্ট হোটেল এর সাথে মেইল করে রি-কনফার্ম করে নিয়েছি। প্লেন এবং ট্রেনের টিকেট ঢাকা থেকেই করে নিয়ে গিয়েছি।

ডে-১- দিল্লিতে পোছাই দুপুরের দিকে। আমাদের জন্য আগে থেকেই এয়ারপোর্ট’এ ট্যাক্সি ছিল। হোটেল পর্যন্ত পার ট্যাক্সি(০৪ জন এর) ৭৫০ রুপি সাথে ওদের পার্কিং চার্জ দিতে হয়েছিল। ট্যাক্সি বলার সময় ল্যান্ডিং এর সময় মাথায় রেখে দেড় ঘন্টা পরের টাইম দেয়া ভাল। দিল্লিতে স্টেশানের কাছে অনেক বাজেট হোটেল আছে। আমরা হোটেল এলেগেন্টস’এ ছিলাম। ম্যানাজার খুবই হেল্পফুল। অনেক মেইল চালাচালি করে এয়ারপোর্ট পিক আপ এর জন্য গাড়ির কথা বলে নিয়েছিলাম। হোটেলের অবস্থা টাকার তুলনায় বেশ ভাল। নিচে কাউণ্টারে রুপি ভাঙ্গানো যায়। এবং সেটার রেট এয়ারপোর্ট থেকে অনেক ভাল। হোটেল থেকেই সেদিন ৮ ঘণ্টা ৮০ কিঃমিঃ এর জন্য ট্যাক্সি করে দিয়েছিল। ভাড়া ২০০০ রুপি। ঘুরে আসলাম হুমায়ুন টম্ব। চমৎকার লেগেছিল। ওখান থেকে কাছেই নিজাম উদ্দিনের মাজার’এ গিয়েছিলাম। পরে রাতে শপিং এরিয়াতে ঘুরাঘুরি করে খাওয়া শেষে গিয়েছিলাম ইন্ডিয়া গেট। দেখে মনে হলো রাতে এসেই ভাল করেছি। দিনে হয়ত এতো সুন্দর লাগতো না। হোটেলে ফিরে সেদিনের মতো রেস্ট। হোটেল ডেস্ক থেকে পরের দিনের জন্য গাড়ির ব্যবস্থা আগেই করে রেখেছি। ১০ জনের ক্যাপাসিটির গাড়ি ৮ ঘন্টা ৮০ কিঃমিঃ এর জন্য ৪৫০০ রুপি।

ডে-২- কোথায় ঘুরতে হবে সেটা আগেই নেটের সাইটগুলি থেকে বেছে নিয়েছিলাম। যেহেতু গাড়ি ভাড়ার ক্ষেত্রে সময় এবং দুরত্ত দুটাই ইমপর্টেন্ট তাই নিজে থেকে ছক বানিয়ে নেয়া বেটার। তা নাহলে ড্রাইভার উলটাপালটা চালিয়ে বেশি সময় নিয়ে অতিরিক্ত চার্জ করবে। আমরা শুরু করেছি কুতুব মিনার থেকে। এরপর লোটাস টেম্পল, জামে মসজিদ এবং শেষে রেড ফোর্ট অথবা লাল কেল্লা। লাল কেল্লায় বিকালে প্ল্যান করলে ভাল। বিশেষ করে যারা রাতে ওখানে লাইট এবং লেজার শো দেখতে চান তাদের জন্য। সব শেষ করে খেতে চলে

গিয়েছিলাম ম্যাকডোনাল্ডস’এ। একদিনে এর থেকে বেশি দেখা সম্ভব হলো না। কিন্তু দেখার আরো অনেক কিছু আছে দিল্লিতে। অন্তত ৩ দিন থাকলে ভাল করে দেখা যাবে মনে হল।

ডে-৩- সকালে ভোরে আজমিরের ট্রেন ধরার জন্য হোটেল থেকে আগে ঠিক করে রাখা ট্যাক্সি চড়ে স্টেশান চলে গেলাম। কুলির অনেক উৎপাত । পরোয়া না করে নিজে লোকজন কে জিজ্ঞেস করে নির্দিষ্ট প্ল্যাতফর্মে চলে গেলাম। ট্রেন একদম লেট করেনি। দুপুরের মধ্যে আজমের চলে গেলাম। ওখানে আগে থেকে যোগাযোগ করা খাদেম ছিল। তার বাসায় গিয়ে ঊঠলাম। চমৎকার খাওয়া দাওয়ার আয়োজন ছিল। পরে গেলাম হযরত খাজা মাইন ঊদ্দিন চিশিতির মাজারে। জিয়ারতের ইচ্ছা থাকলে সরল মনে সেটা করে আসাই ভাল। ওখানে গেলে অনেক কিছুই ভাল লাগবে না। অনেক বিধর্মিয়রাও যায় সেটা যার যার ব্যাপার। কিন্তু কোন কিছু নিয়ে তর্ক না করাই ভাল। বিকালে রেস্ট করে গেলাম আনা সাগর। ওখানে গিয়ে মন জুড়িয়ে গিয়েছিল। ওখানেও সম্রাট শাহাজানের কিছু কাজ চোখে পড়বে। দরগা থেকে যেতে ২০ মিনিটের মত লাগে।

ডে-৪- সকালে আরেকবার মাজার জিয়ারত করে পরদিন খাদেমের ঠিক করে দেয়া গাড়িয়ে জয়পুরের উর্দ্যেশে যাত্রা করলাম। খাদেম এর ব্যবস্থাপনায় থাকা খাওয়ার চমৎকার ব্যবাস্থা থাকে। এর জন্য কোন নির্দিষ্ট চার্জ নাই। যার যা খুশি দিয়ে আসে। কিছু না দিলেও কিছু বলবেন না। চমৎকার এক্সপ্রেস ওয়ে দিয়ে ৩ ঘন্টা তেই পৌছে গেলাম জয়পুর। প্রাইভেট গাড়ি ছাড়াও বাস অথবা ট্রেনে সহজেই ওখান থেকে জয়পুর যাওয়া যায়। হোটেল নিয়েছিলাম জল মহলের কাছেই। ছাদে থেকেই জল মহল দেখা যায় । বিকালে শপিং এবং শহর দেখার জন্য বের হয়েছিলাম। ওখানে মনে হয় প্রত্যেক লোকই ফ্রড। ড্রাইভার নিয়ে যাবে তার পছন্দের যায়গায়। দাম চাইবে ইচ্ছা মত। প্রচুর বার্গেন করতে হবে শপিং এর জন্য। ১/৪ দাম দিয়ে শুরু করা বেটার। রাতে আবার ম্যাকডোনাল্ডস।

ডে-৫- সকালে ভোরে আগে থেকে হোটেলের ঠিক করে রাখা ট্যাক্সি তে আগ্রার উর্দ্দেশ্যে ট্রেনে চেপে বসলাম। আগ্রাতে গাইড সহ গাড়ি ঠিক করা ছিল। সারাদিনের জন্য গাইড সহ ১০ জনের এসি গাড়ি ৭০০০ রুপি ছিল। আগ্রা এবং জয়পুরে বেশি গরম। এসি গাড়ি না হলে একটু

কষ্ট হয়ে যাবে। গাইড নিয়ে গেল তাজমহল। টুরিস্ট রেটেই টিকেট করেছি। অনেকে কলকাতার বলে লোকার টিকিট করতে চায়। বাট সেটা রিস্কি। অনেক সময় ধরা পড়ে যাবার পসিবিলিটি থাকে। তাজমহল দেখে আগের সব দেখা ম্লান হয়ে গেছে। কি যে সুন্দর সেটা শুধু দেখেই অনুভব করা যাবে, বর্ণনা করা যাবে না। তাজমহল থেকে বের হয়ে গেলামা আগ্রা ফোর্ট। যেখানে শাহাজান মৃত্যুর আগ পর্যন্ত বন্দি ছিলেন। সেখান থেকে বের হয়ে লানচ শেষে গেলাম আকবর’স টম্ব’এ। সময়ের অভাবে এর থেকে বেশি দেখা সম্ভব হয় নি। বিকালের ট্রেনে আবার জয়পুর ফিরে এলাম।

ডে-৬- সকাল সকাল ব্রেকফাস্ট শেষে গাড়ি নিয়ে বেরিয়ে গেলাম। প্রথমেই আম্বরস প্যালাস। শহর থেকে ৩০ মিনিটের মত টাইম লাগে। উপরে ঊঠার জন্য হাতি এবং গাড়ি আছে।। বাজেট অনুযায়ি চুজ করে নেয়া ভাল। ভিতরে গেলে শিস মহল ছাড়াও দেখার জন্য অনেক কিছু আছে। উপর থেকে চারপাশের দৃশ্যগুলাও বেশ সুন্দর। ওখানে বেড়াতে ২/৩ ঘন্টা লেগে যাবে। ওখান থেকে ফেরার পথে জল মহলের থেকে একটু দূরে দাঁড়িয়ে ফটো তুলে আসা যায়। অনেক বছর ধরেই ওখানে আর যাওয়া যায় না। এরপর গেলাম জন্তর মন্তর। এবং সিটি প্যালেস। কাছেই হাওয়া মহল আছে। বাইরে থেকে ফটো তুলে নিয়েছি। ভিতরে আর যাওয়া হয় নি। সিটি প্যালেস টা দেখার মত। শেষে পিঙ্ক সিটিতে লাঞ্চ করে এয়ারপোর্ট চলে গেলাম। সন্ধ্যার ফ্লাইটে চলে গেলাম কলকাতা। চেক ইন করলাম নিউমার্কেটের কাছে হোটেল ডি কে ইন্টারন্যাশানাল’এ।

ডে-৭- সারাদিন শপিং। সন্ধ্যায় গিয়েছিলাম কলেজ স্ট্রিটে কলকাতার নিলখেতে। চারদিকে বই আর বই। ওখান থকে গেলাম সাঊথ সিটি মল। বেশ দূরে ব্রান্ড শপের মার্কেট। ওখানকার থিয়েটারে মুভি দেখে বাইরে ডিনার করে আবার হোটেল। পর দিন শান্তিনিকেতন যাবার জন্য গাড়ি করে আসলাম।

ডে-৮- প্রায় ৪ ঘন্টা ট্রাভেল করে শান্তিনগর পৌছালাম। দেখার কিছুই নাই। গাইড আছে প্রচুর । তারা বিশ্ববিদ্যালয় ঘুরিয়ে দেখায়। তাল গাছ এক পায়ে দাঁড়িয়ে……এক পায়ে দাঁড়িয়ে থাকা তালগাছটা এখনো আছে।(যদি ওদের কথা সত্যি হয়) ওটার নিচে এবং আশেপাশে গাছের নিচে অনেকের পড়ালেখা চলছে। একটা মিউজিয়াম আছে। সময়ের জন্য যাওয়া হয় নাই। অল্প কিছুক্ষন থেকেই চলে এলাম। অনেকের ভাল না লাগলেও আমার ভাল লেগেছে। ফিরে

বিকালে আবার শপিং। রাতে আশেপাশে একটু হাটাহাটি করলাম। পার্ক স্ট্রিটে বেশ কিছু ভাল খাবার দোকান এবং বার আছে। সাথে আছে শাড়ির কিছু ব্রান্ড শপ।

ডে-৯। আর করার কিছু নাই। বিকালে ফ্লাইট। তার আগে ভিক্টরিয়া মেমোরিয়াল আর রেড কোর্সে যাবার জন্য বের হলাম। রেড কোর্সে গিয়ে দেখলাম বন্ধ। পরে আর মেমোরিয়ালও না যেয়ে ফেরত আসলাম। ফেরার জন্য তৈরি হলাম। ৩০০ রুপিতে ট্যাক্সি করে এয়ারপোর্ট ফিরলাম। সন্ধ্যার ফ্লাইটে ফিরে এলাম ঢাকা।

নোটসঃ

১। আগে থেকে ওয়েদার এর খবর নিয়ে যায়া ভাল।

২। দিল্লি মেয়েদের জন্য নিরাপদ নয়। অবশ্যই একা ট্রাভেল করা যাবে না। রাতে বের না হওয়া ভাল। যেখানেই যাবেন গ্রুপে যাবার চেষ্টা করুন

৩। সব যায়গাতেই ধাপ্পাবাজ রা আছে। নিজের বুদ্ধিতে ওদের এড়িয়ে চলতে হবে।

৪। কলকাতা ছাড়া অন্য যায়গায় সিম কার্ড নেয়া বেশ যামেলা। পাসপোর্টের ফটোকপি, নিজের ছবি এবং সাইন লাগে। এক্টিভেট হতে ২-৫ দিন পর্যন্ত লেগে যেতে পারে।

৫। সব যায়গাতেই গাড়ি ভাড়া মোটামুটি ঠিক করা রেট আছে। সেটা জেনে নিন।

৬। কোথায় যাবেন তার প্রায়োরিটি ঠিক করে নিন (ইন্টারনেট থেকে)