খৈয়াছড়া ঝর্ণা

এর অবস্থান চট্টগ্রাম এর মিরসরাই তে। কিছুদিন আগেও এই ঝর্ণার তেমন পরিচিতি না থাকলেও, এইই ঝর্ণার বিশালতা ও সৌন্দর্যের কারনে এর সুনাম ছরিয়ে গেছে সারা দেশজুড়ে। রিতিমত এটি পর্যটনকেন্দ্র এ পরিনত হয়েছে। তাই তো প্রতিদিন ই ভিড় বাড়চ্ছে খৈয়াছড়ায় যা ঝর্ণাপ্রেমীদের কাছে মোটেও কাম্য নয়।
আমি নিজেই ২ বার ছুটে গেছিলাম খৈয়াছড়া ঝর্ণাতে। আমার ভ্রমন অভিজ্ঞতা আজ শেয়ার করব।

*ভ্রমন গল্প – ১
আমরা সেইবার ১২ জন সদস্য গেছিলাম। প্রথমে নাপিত্তাছড়া ট্রেইল শেষ করে পৌছাই খৈয়াছড়াতে। নাপিত্তাছড়ায় প্রায় ৬ ঘন্টা ট্রেকিং পর সবারই সরিরের অবস্থা নাজেহাল ছিল। প্রথমে ২ -১ জন জেতে অনিচ্ছুক থাকলেও পরবর্তিতে সবাই হাটা শুরু করলাম খৈয়াছড়া ষ্টান থেকে। বৃষ্টিতে রাস্তাগুলো তখন অসম্ভব পিচ্ছিল ছিল। প্রতিটা ষ্টেপ এই ভেবে চিনতে পা ফেলতে হয়েছিল, কেউ কেউ পা পিছলিয়ে পরেও জাচ্ছিল। কিছু সদস্যদের কারনে আমরা সবাই পিছিয়ে যাচ্ছিলাম। তাও চাই সবাই জেনো পৌছাতে পারি শেষ অপদি।

হাটা শুরু করার ২০-২৫ মিনিট পরে ফিরে আসা কিছু অনাকাংখিত ট্রাভেলাররা বলতাছে – ভাই, লেট করে ফেলছেন, কিছুই দেখতে পাবেন নাহ, রাস্তা অনেক খারাপ, গেলে আসতে প্রবলেম হয়ে যাবে আরো অনেক কিছু। অনাকাঙ্ক্ষিত বলার কারন হচ্ছে একজন সত্যিকারের ট্রাভেলার কখনই অন্য ট্রাভেলারদের নিরুৎসাহিত করবে নাহ।

অই ট্রাভেলারদের কথা শুনে আমরা ৩-৪ জন একটু দ্রুত হাটা শুরু করি। পিচ্ছিল রাস্তায় একটু সতর্ক থাকলে একটু ভাল রাস্তা পেলেই দৌড়াচ্ছিলাম। কারন যেভাবেই হৌক দেখে যাবো। প্রায় ১ ঘন্টা পরে অবশেষে পৌছাই কাঙ্ক্ষিত সেই ঝর্ণায়।
এর পর পরের স্টেপ এ উঠার পালা, কিন্তু কিভাবে উঠবে একজন মানুষও তখন ছিল নাহ। একটা পিচ্চিকে দেখতে পেয়ে বললাম উপরে নিয়ে যেতে বিনিময় তাকে কিছু বকশিশ দিব। ওই ছেলেটা রাজি হয়।

উঠার রাস্তাটা দেখে আর একবার ভাবতে শুরু করলাম, উঠবো কি উঠবো নাহ। ট্রেকিং অভিজ্ঞতা তখন ছিল নাহ তাই একটু ভয়ও পেয়েছি। খাড়া পাহাড়ের গা বেয়ে উঠতে হবে। পর্যটকদের কারনে রাস্তা পুরোটা পিচ্ছিল ছিল, উপর থেকে মাটি ভেঙ্গে পরতাছিল। একটা রশি দেয়া আছে, ওইটা ধরেই নাকি উঠা লাগবে। কিছু রশিটা এতটা পিচ্ছিল ছিল যে বার বার হাত পিছলিয়ে যাচ্ছিলা। গামছা দিয়ে দরিটাতে গ্রিপ করে অনেক ভয় নিয়েই উঠছি ২য় স্টেপ এ।

পিচ্ছি গাইড ছেলেটা বলতাছে এখন উঠলে নামার সময় পাবেন নাহ। আবার একটা মানুষও ছিল না ওখানে। পুরো নির্জন ছিল জায়গাটা। আশায় ছিলাম কোন গ্রুপ উঠলে তাদের সাথে আমরা ২ জন এড হয়ে উঠবো। কিছুক্ষন বসে থেকেও দেখি কেউ আসে নাহ। তারপর বাধ্য হয়ে ফিরে আসছি। নিচে নেমে দেখলাম আমাদের টিম এর মাত্র ৫-৬ জন আসছে এই অপদি। বাকিরা মাঝপথ থেকেই চলে গেছে। আসার সময় মনে আকাঙ্ক্ষা ছিল পুরোটা না দেখার। হতাশ হয়েই ফিরে আসতে হয়েছিল আমাদের।

* ভ্রমন গল্প – ২

আগেরবারের আকাঙ্ক্ষাটা পুরোন করতে আবারো যাই খৈয়াছড়া ঝর্ণায়। এবার আমরা মাত্র ৪ জন। সকাল সকাল ই পৌছে যাই খৈয়াছড়া স্টান এ। হাটতে শুরু করি আমরা। এবার একটু সাহস বেসি ই ছিল। আর রাস্তাগুলো দেখে মনে হচ্ছিল প্রচুর পর্যটক এর দারা নির্যতিত তারা। রাস্তা আর এখন রাস্তা নাই, কেমন যেনো হয়ে গেছে। কাদা মাখা রাস্তার অনেকটা যায়গায় এমন ছিল যে পা দিলেই হাটু পর্যন্ত পা ঢুকে যাচ্ছে। অনেক কাদা থাকার কারনে এবার একটু সময় বেসিই লাগছিল যেতে।

গিয়ে দেখি প্রচুর মানুষের ভিড়। অবাক হয়ে গেলাম। মনে হচ্ছিল হয় ওয়াটারলেন্ড এ আসছি। যাই হোক, নিচে আর দারালাম নাহ। দরি বেয়ে উপরে উঠা শুরু করলাম। এবার জেতে খুব বেসি কষ্ট হয় নি। ২য় স্টেপ এ উঠার পরে ২ জন আর যাবে নাহ বলতাছে। আমি এবার আর হাল ছারব নাহ ঠিক করেই রাখছি। ওদের ওখানেই রেখে আমি আর এক বন্ধু উপরে উঠা শুরু করলাম। ৫/৬ স্টেপ এ উঠার পরে মানুষ পাচ্ছি না আরর। অনেকে দেখি ফিরে আসতাছে।

এর মদ্ধ্যে প্রচুর বৃষ্টিও শুরু হয়ে গেল। আর ১ স্টেপ পরে দেখি একটা গ্রুপ বসে আছে, সামনে জাওয়ার আর সাহস পাচ্ছে নাহ। তাদের উৎসাহ দিয়ে নিয়ে চললাম একসাথে। তাদের মদ্ধ্যে একটা সাহসী ছেলেও ছিল, যে অনেকবার আমকে সাবধান করেছে সাবধনএ পা ফেলতে। অবশেষ এ আমরা পৌছাই শেষ গন্তব্যে। নামার সময় খুব বেসি একটা কষ্ট হয় নি। বৃষ্টিতে পাথরের গায়ে লেগে থাকা কাদাগুলো ধুয়ে গেছে।

তখনও অনেক মানুষ উপরে উঠার জন্য মরিয়া হয়ে আছে। এমনিতে পাহাড়ের গা বেয়ে উঠতে হয়। তারপর আবার কেউ উঠতাছে আবার কেউ নামতাছে। এজন্য কোথাও কোথাও আবার ট্রাফিক ও তৈরী হচ্ছে। গা ছমছম করে নিচের দিকে তাকালেই। একটু কিছু হলেই মৃত্যু ছাড়া উপায় নেই।

সবশেষে ভাল ভাবে বাসায় ফিরে আসছি, আলহামদুলিল্লাহ।

*কিছু কথা:

খৈয়াছড়াকে একটা প্রাথমিক ট্রেকিং এর সূচনা বললে ভুল হবে নাহ। কারনটা না গেলে বুঝতে পারবেন নাহ। এমনিতে খুব বেসি কঠিন না হলেও বৃষ্টিতে এটা ভয়াবহ রূপ ধারন করে। ভিডিওতে দেখলাম এক ভাইর পা ভেঙ্গে গেছিল, তারপর তাকে এলাকাবাসীর সহায়তায় ওখান থেকে আনা হয়। সেদিন শুনলাম ভার্সিটি পরুয়া এক ভাই মারা গেছেন পাহার থেকে পরে গিয়ে। তাই ট্রেকিং এ হইহুল্লা না করে সতর্ক থাকবেন।

যেভাবে যাবেন:

ঢাকা থেকে চট্টগ্রামগামী যেকোন বাস এ মিরসরাই এর বড়তাকিয়া তে নামবেন। ট্রেন এ গেল ফেনি বা সিতাকুন্ড ষ্টেশন থেকে বাস বা লেগুনায় বড়তাকিয়া যাবেন > বড়তাকিয়ার একটু সামনে লোকাল সি.এন.জি পাবেন খৈয়াছড়া ষ্টান এ যাওয়ার> খৈয়াছড়া ষ্টান থেকে পা এ হেটে খৈয়াছড়া।

* ভ্রমন টিপস:

> খাবার স্যলাইন নিবেন, ট্রেকিং এ অনেক এনার্জি পাবেন।

> জুতা ব্যাগ যাওয়ার পথে কোন একটা রেষ্টুরেন্ট এ রেখে যাবেন। আসার পথে দুপুরের লাঞ্চও করে আসতে পারেন।

> এলাকাবাসীদের সাথে খারাপ আচরন করবেন নাহ।

> পর্যটন কেন্দ্রে পানির বোতল, খাবার, পলিথিন কোন কিছু ফেলে আসবেন নাহ।

^আপনার ভ্রমন সুন্দর ও নিরাপদ হোক

Post Copied From:MD Sayed Hossen>Travelers of Bangladesh (ToB)

নাপিত্তাছড়া ট্রেইল ও বাঁশবাড়িয়া সমুদ্র সৈকত ভ্রমণ:

গত ৪ সেপ্টেম্বর তিন বন্ধু মিলে ঘুরে এলাম নাপিত্তাছড়া ট্রেইল ও বাঁশবাড়িয়া সমুদ্র সৈকত থেকে।আমরা সরাসরি ঢাকা টু চিটাগাং না গিয়ে প্রথমে কুমিল্লায় এক রাত বন্ধুর বাসায় থেকে পরদিন সকাল ৭ টায় কুমিল্লা থেকে রওনা দেই ফেনীর উদ্দেশ্যে।ফেনী থেকে নয়দুয়ারির মসজিদ তারপর সেখান থেকেই আমাদের নাপিত্তাছড়ার উদ্দেশ্যে যাত্রা শুরু।নাপিত্তাছড়ায় আছে চারটি ঝর্ণা।এগুলো যথাক্রমে টিপরাখুম,কুপিকাটাখুম,বান্দরখুম/মিঠাইছড়ি ও বাঘবিয়ানী নামে পরিচিত।প্রায় চার ঘণ্টা ট্রেকিং শেষে সবগুলো ঝর্ণা দেখে , ঝর্ণায় গোসল করে শেষ বিকেলে ঘুরে আসি বাঁশবাড়িয়া সমুদ্র সৈকত থেকে।
খরচ:
ঢাকা(সায়েদাবাদ) টু কুমিল্লা (এশিয়া লাইন নন এসি) ,ভাড়া : ২৫০/-
কুমিল্লা(পদুয়ার বাজার বিশ্বরোড বাসস্ট্যান্ড) থেকে ফেনী(মহীপাল) ,ভাড়া:১০০/-
মহীপাল থেকে নয়দুয়ারি মসজিদ: বাস ভাড়া ১০০/-
বাঁশ ১০/-
দুপুরের খাবার (পর্যটক হোটেল):ভাত,মুরগি,ডাল ৯৫/-
নাপিত্তাছড়ায় ট্রেকিং শেষে:
নয়দুয়ারি থেকে বাঁশবাড়িয়া বাজার লোকাল বাস ৩০/-
বাঁশবাড়িয়া বাজার থেকে বাঁশবাড়িয়া বিচ সিএনজি ভাড়া ৪০/-(যাওয়া আসা)
বাঁশবাড়িয়া বাজার থেকে সীতাকুণ্ড(শ্যামলী কাউন্টার) ১৫/- লোকাল বাস
সীতাকুন্ড থেকে ঢাকা: (শ্যামলী নন এসি) ৪০০/-
মোট: ১০৪০/-
বিদ্রঃঈদের কারণে বাসভাড়া একটু বেশি ছিল।

Post Copied From:Md Fahamidul Islam Dipro>Travelers of Bangladesh (ToB)

একের ভিতর পাঁচ (খৈয়াছড়া, নাপিত্তাছড়া, চন্দ্রনাথ, ইকোপার্ক, বাশবাড়ীয়া ট্যুর)

খৈয়াছড়া, নাপিত্তাছড়া, চন্দ্রনাথ, ইকোপার্ক, বাশবাড়ীয়া ট্যুর।
এক ট্যুরে পাহাড়-পর্বত, নদী-নালা, সমুদ্র, ঝর্না সব দেখে আসছি।
বাংলাদেশের ট্রাভেলারদের মধ্যে সবচেয়ে হাইপ তোলা route এখন নিঃসন্দেহে খৈয়াছড়া+বাশবড়ীয়া/ নাপিত্তাছড়া+বাশবাড়ীয়া/সীতাকুণ্ড+বাশবাড়ীয়া। গ্রুপে পোস্ট দেখতে দেখতে আমি নিজেও বিরক্ত হয়ে গেছিলাম, মনে হচ্ছিল এখানে না গেলে মনে হয় বাংলাদেশী ট্রাভেলার হিসেবে আর পরিচয় দিতে পারবো না।
ফ্রেন্ডরা ডিসিশন নিলাম, এইটা+ওইটা না, একসাথে সব কাভার করবো, যেই ডিসিশন সেই কাজ। সময়টাও অনুকূলে ছিল, মেঘ না চাইতে বৃষ্টির মতো একসাথে ২ দিন সরকারি ছুটি+ তুমুল বৃষ্টি। আমি এর আগেও খৈয়াছড়া গিয়েছিলাম কিন্তু একদম ই পানি পাই নি, তাই সবাইকে সাজেস্ট করবো ঝর্নার আসলরূপ দেখতে হলে অবশ্যই বর্ষায়+ বৃষ্টির মধ্যে যাবেন।
ওকে, আর কথা না বাড়িয়ে একদম চলে যাই ট্যুর প্লানে। আমি মোটামুটিভাবে সবকিছু in details এ বলার চেষ্টা করবো, তারপরেও কিছু জানার থাকলে feel free to ask. আচ্ছা আগেই বলে নেই, আমি ৫০০ টাকায়/৪৮০ টাকায় ঘুড়ে আসুন অমুক-তমুক জায়গা প্লানিং এ বিশ্বাসী নই। ট্যুর দিতে যাচ্ছেন যুদ্ধ করতে নয়, টাকা বাচাতে ৩ টা পরোটা না খেয়ে ২ টা খেলেন, এতো আপনার লাভ না ক্ষতি ই হবে। চেষ্টা করবেন সবচেয়ে কম খরচে ভালো ট্যুর দেয়ার বাট তাই বলে কিপটামো নয়।
আমরা ২ দিনে খৈয়াছড়া+নাপিত্তাছড়া+চন্দ্রনাথ+ইকোপার্ক+
বাশবাড়ীয়া কাভার করেছি খরচ হয়েছে ১৪২৯ টাকা। আমরা ১১ জন ছিলাম,মাথা পিছু খরচের হিসেব দেয়া হচ্ছে। চেষ্টা করবেন ১০/১২ জন যেতে এতে টাকা সেভ হবে। আমাদের Tour plan+cost এর হিসেব:
বাসা টু কমলাপুর (১৫ টাকা) > কমলাপুর টু ফেনী মেইল ট্রেন (মেইল ট্রেন নিয়ে কিছু কথা “টিপস” সেকশন এ লিখবো) ৯০ টাকা>ফেনী স্টেশন টু মহিপাল (১৫)>ব্রেকফাস্ট (৩২)> মহিপাল টু বড়তাকিয়া (৪০)>বড়তাকিয়া থেকে আমরা হাটা স্টার্ট করেছি চাইলে সিএনজি নিতে পারেন (২০)> বাশ (১০)>খৈয়াছড়া ট্রেল(কোন খরচ নেই) >দুপুরের খাবার(৯৫)>বড়তাকিয়া থেকে নয়দুয়ারি বাজার (২০)>আবার বাশ (১০) [আমরা খৈয়াছড়ায় বাশ রেখে আসছিলাম তাই আবার কিনতে হইছে]> গাইড (২৭)>নাপিত্তাছড়া ট্রেইল (০টাকা)>নয়দুয়ারি বাজার টু সীতাকুণ্ড বাজার (৩০)> রাতের খাবার (৭৫)> হোটেল ভাড়া (২২৫)>ব্রেকফাস্ট (৩০)>
সীতাকুণ্ড বাজার টু চন্দ্রনাথ (২০)>বাশ(২০ টাকা)> চন্দ্রানাথ টু সীতাকুণ্ড বাজার (২০)> বাজার টু ইকোপার্ক (২৫) [চন্দ্রনাথ থেকে ইকোপার্ক হেটে যাওয়ার রাস্তা আছে কিন্তু রাস্তার কন্ডিশন ভালো না এবং ডাকাত আছে তাই ব্যবহার না করাই ভালো ]> ইকোপার্ক এন্ট্রিফী(২০)> সুপ্তধারা+সহস্রধারা ভ্রমন (০ টাকা)>সহস্রধারা টু মেইন গেট (৫০টাকা)পর্যন্ত >দুপুরের খাবার (৯৫ টাকা) >ইকোপার্ক টু মেইনরোড (১০ টাকা)>মেইনরোড টু বাশবাড়ীয়া (১৫)>বাশবাড়ীয়া বাজার টু সীবীচ (২০)> সিবীচে চিলিং (০ টাকা)> সীবীচ টু বাশবাড়িয়া বাজার (২০) >রাতের খাবার (৭০)>বাশবাড়িয়া টু মহিপাল(৬০) মহিপাল টু ঢাকা গুলিস্তান (২৫০)>গুলিস্তান টু বাসা(২০)
টোটাল:১৪২৯ টাকা

আমাদের জার্নি স্টার্ট হয়েছে ১৩ তারিখ রাত ৮ টায় এবং ঢাকা পৌছেছি ১৬ তারিখ রাত ২:৩০ এ।
এবার একটু স্পট ডিটেলস এ আসি।

১.খৈয়াছড়া:
অসম্ভব সুন্দর রকমের একটা ঝর্না এবং ট্রেইল টাও তুলনামূলক সহজ। আমরা 7th step পর্যন্ত উঠেছি এরপর সবাই না করছিল তাই আর সহস করতে পারি নি। বৃষ্টিতে জঘন্য হয়ে ছিল উপরের উঠার রাস্তা, ৩/৪ জন পরতে পরতে বেচে গিয়েছে (আমার উপর একজন এসে পরেছে, এখনো ঘাড় ব্যাথা করছে তার ধাক্কার)। মনে রাখবেন safety comes first, কিছু জাগায় পিছনে সরে যাওয়া কাপুরুষত্ব নয় বুদ্ধিমত্তা। যে পর্যন্ত পারবেন সে পর্যন্তই যাবেন এরপর রিস্ক নেওয়া মোটেও উচিত নয়। টানা বৃষ্টিতে উপরে উঠার রাস্তা খুব খারাপ হয়ে আছে। 7th পর্যন্ত উঠেই আমরা হ্যাপি (আলহামদুলিল্লাহ্)
২ নাপিত্তাছড়া:
“ভয়ংকর সুন্দর ” এই শব্দটি শুধুমাত্র এই ট্রেইলটির ক্ষেত্রেই যায়। যারা ১৪ তারিখ এই ট্রেইল এ গিয়েছেন তারা যানেন রাস্তার অবস্থা।
অবশ্যই গাইড নিবেন এতে সময় বাচবে (ওদের সব রাস্তা মুখস্থ) একদিনে ২ টা ট্রেইল কাভার করতে চাইলে গাইড অবশ্যই নিবেন (আমাদের নাপিত্তাছড়া থেকে রিটার্ন করতে সন্ধ্যা ৭:৩০ বেজেছে, ঝুম অন্ধকার, পাহাড়ি অচেনা রাস্তা। গাইড ছাড়া অসম্ভব ছিল)। নাপিত্তাছড়ার প্রতি বাকে বাকে অদ্ভুত রকমের সৌন্দর্য লুকিয়ে আছে যা নিজ চোখে না দেখলে বুঝা অসম্ভব। এই ট্রেইল এ আমরা টোটাল ৪ টি ঝর্না দেখেছি, প্রতিটি ঝর্নাই আলাদা রকমের সুন্দর (কুপিকাটাখুম+উজিলা+বান্দরখুম+বাঘবিয়ানী) এই ৪ টি ঝর্না।

৩.চন্দ্রনাথ মন্দির:
Almost 300 মিটার উপরে, আগের দিন খৈয়াছড়া+নাপিত্তাছড়া কাভার করে শরীরের অবস্থা ১২ টা। পরদিন ঘুম থেকে উঠেই আবার ৯০০ ফিট উপরে উঠো, শরীরের উপর অত্যাচার ই বলা যায়। এই পথে ১০-১২ টা (আমি ৯ টা গুনছি) মন্দির পরবে, সবগুলো মন্দির ঘুড়ে ঘুড়ে দেখবেন। একদম চূড়ায় চন্দ্রনাথ মন্দির (বৃষ্টির কারনে রাস্তা বেশ পিচ্ছিল হয়ে ছিল, উঠতে বেশ বেগ পেতে হয়েছে) কিন্তু উঠার পর যা দেখবেন অন্যরকম শান্তি, আমি অনেকটা নীলগিরির ফিল পাচ্ছিলাম। উপরে উঠার ২ টা পথ, আমার মতে সিরি ব্যবহার করাই ভালো।
৪ সিতাকুন্ড ইকোপার্ক:
বেশ সাজানো গুছানো একটি পার্ক, অনেকেই গেট থেকে সি এনজি নিয়ে যায় কিন্তু আমি সাজেস্ট করবো হেটে যান। পাহাড়ি আকাবাকা রাস্তা, দু পাশ ঘিড়ে গাছ। মাঝে মাঝে উকি দিয়ে দেখা যাচ্ছে সাগরের একঝলক। হাটতে হাটতে পৌছে যাবনে সুপ্তধারার কাছে সেখান থেকে ৪৯৮ টা সিরি বেয়ে নিচে নামতে হবে আবার ঝর্না দেখে উপরে উঠতে হবে। এই পথে এক বাবুমশাই এর সাথে আপনার পরিচয় হবে (জোক) আমাকে ৩ টা ধরছে। ওই রাস্তায় অলমোস্ট সবাইকে জোক ধরছিল, রাস্তাটা জোকে কিলবিল করতেছিল। জোককে ভয় পাওয়ার কিছু নেই (সাথে লবন রাখবেন) এই জিনিস আপনার জাস্ট রক্ত চুষবে, আপনাকে মেরে ফেলবেনা। সুপ্তধারা থেকে চলে যাবেন সহস্রধারায় (তুলনামূলক সবচেয়ে কম পানি পেয়েছি এখানে) তবে পানিটা বরফগলা পানির মতো ঠান্ডা ছিল, এতোটাই টায়ার্ড ছিলাম যে ঝর্ণার নিচে বসতেই আমার ঘুম চলে আসছিল। এই একটা রূটেই জোক অনেক উৎপাত করেছে, অনেকে জোকের ভয়ে ঝর্ণা অব্দি না গিয়েই চলে এসেছে।
৫ বাশবাড়িয়া সীবীচ:
আহা!! ২ দিনের অত্যাচারের পর এবার রিলেক্স করার পালা। একটা অন্যরকম প্রশান্তিময় ঠান্ডা বাতাস। মনে হচ্ছিল সে বাতাস শরীরের সব ক্লান্তিকে নিজের সাথে বয়ে নিয়ে যাচ্ছে। জোয়ার+বৃষ্টির জন্য স্টিলের রাস্তাটা পানির অনেক নিচে চলে গিয়েছিল, খানিকটা যাওয়ার পর পানির স্রোত দেখে আর সাহস করতে পারি নাই। সী বীচে হৈহুল্লোড়+ঠান্ডা বাতাস+সূর্যাস্ত দেখে অবশেষে ঢাকার উদ্দেশ্যে রওনা দিলাম।
জীবনের অন্যতম শ্রেষ্ঠ ২ টা দিন বললে হয়তো ভুল হবে না, প্রচুর শারীরিক পরিশ্রম হয়েছে কিন্তু তারমধ্যেও অন্যরকম শান্তি ছিল।

কিছু সতর্কতা ও টিপস:
১। মেইল ট্রেনে যাওয়ার ইচ্ছা থাকলে অবশ্যই ৯:৩০ এর মধ্যে কমলাপুর চলে যাবেন এবং প্লাটফর্ম এর শেষ মাথায় দাড়াবেন, এতে সিট পাওয়ার পসিবিলিটি বেড়ে যাবে।
২।বাসে উঠার আগে দামাদামি করে নিবেন, মহিপাল থেকে ভাড়া চেয়েছল ৬০, গিয়েছি ৪০ দিয়ে।
৩।ব্যাগ যথাসম্ভব হালকা রাখবেন, সাথে পানি ক্যারি করবেন, প্লাস্টিক এর জুতা ব্যবহার করবেন।
৪।খৈয়াছড়া থেকে নাপিত্তাছড়া যাওয়ার পথে বাশ ফেলে যাবেন না, এতে আবার বাশ কিনা লাগবে। জীবনে অনেক রকম বাশ খেয়েছি, এই ট্যুরে বাশ জীবন রক্ষা করেছে।
৫।ব্যাগ কম করবেন এতে এনার্জি সেভ হবে, লোকাল বাসা গুলোতে ব্যাগ রেখে যাবেন। উনাদের ব্যবহার যথেষ্ট ভালো, এবং উনারা ভরসাযোগ্য
৬।সুপ্তধারার পথে অনেক জোক, সাথে লবন রাখবেন (আমাকে ৩ টা ধরছে)
৭।বৃষ্টির জন্য রাস্তার খুব বাজে কন্ডিশন,অবশ্যই বাশ ব্যবহার করবেন।
৮।সীতাকুণ্ড থেকে ডিরেক্ট বাসে উঠবেন না, লোকালে করে মহিপাল চলে আসুন, সেখান থেকে ২৫০ টাকায় ইজিলি ঢাকার বাস পেয়ে যাবেন।

এই, আশাকরি সবকিছুই তুলে ধরেছি। বড়কথা সবাই সাবধানে যাবেন, এই রূটে মারা যাওয়ার রেকর্ড ও আছে। সো চিল করতে গিয়ে যেনো শেষে জীবন না দিতে হয় সেটা মাথায় রাখবেন।
#Stay_safe
#Happy_Traveling