ঢাকা থেকে ট্রেনে কোলকাতা ভ্রমণের কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয়

১। ঢাকা ক্যান্টনমেন্ট থেকে ট্রেন ছেড়ে যাচ্ছে প্রতি শুক্র, শনি, রবি ও বুধবার সকাল ৮:১৫ তে। এবং চিতপুরের কলকাতা ষ্টেশনে পৌঁছাবে সন্ধ্যা ৬:৪৫ সময়ে।
কমলাপুর কিংবা চট্টগ্রাম রেলস্টেশনে মৈত্রীর কাউন্টার থেকে প্রতিদিন সকাল ৯টা হতে বিকেল ৪টা পর্যন্ত অগ্রিম টিকেট সংগ্রহ করা যাবে যাত্রার ২৯ দিন আগে থেকে। যে কেউ চারটি করে টিকেট কিনতে পারবেন। এমনকি রিটার্ন টিকেট কাটা যায় কমলাপুর থেকে যাত্রার চারদিন আগে পর্যন্ত। প্রত্যেক টিকেটের জন্য পাসপোর্টের মূলকপি দেখাতে হবে অবশ্যই.. কোনো ফটোকপি গ্রহনযোগ্য নয়। আর ভিসা না থাকলেও টিকেট দেয় কাউন্টার থেকে.. তবে খেয়াল রাখবেন, ভিসা আবেদন যেদিন করবেন তার ১০ কর্মদিবস পরের যাত্রার টিকেট করবেন, কারন ভারতীয় ভিসা পেতে ৭ কর্মদিবস সময় লাগে হাতে ৩ দিন থাকা ভালো । এসি চেয়ার বা এসি স্লিপার যেটাতে যেতে ইচ্ছুক সেটার টিকিট সংগ্রহ করবেন। ‘চেয়ার’ ও স্লিপারের ‘সিট’ প্রতি ভাড়া যথাক্রমে ১৬৩৩ ও ২৩৮৬ টাকা (ট্রাভেল ট্যাক্স সহ)। ৫ বছর পর্যন্ত বয়সী বাচ্চার ভাড়া হাফ।
২। ভারতে ভ্রমণের জন্য আপনাকে বাধ্যতামূলকভাবে কমপক্ষে ২০০ থেকে সর্বোচ্চ ৫০০০ ডলারের এনডোরসমেন্ট করাতে হবে। যা আপনার পাসপোর্টের পিছনের পাতায় উল্লেখ থাকতে হবে। আপনাকে মনে রাখতে হবে এই ডলার আপনার বৈধ। কিন্তু আপনার কিছু বিশেষ দরকারে আলাদাভাবে কিছু বাংলা টাকা ও রুপি সাথে নিতে হবে। অল্প যেমন ৫০০/-টাকা ও ২০০-৩০০ রুপি।(রুপি আপনার দরকার হবে রেলস্টেশন থেকে হোটেলে যাওয়ার জন্য। এনডোর্সড ডলারের অতিরিক্ত টাকা, রুপি বা ডলার নিতে চাইলে তা নিরাপদ নয় কারণ তা মানি লন্ডারিং আইনের আওতায় পরে।
৩। নির্দিষ্ট সময়ের ১ ঘন্টাপূর্বে ঢাকা ক্যান্টনমেন্ট রেলস্টেশনে চলে আসবেন। আসার পর ইমিগ্রেশনের জন্য আপনাকে লাইনে দাঁড়াতে হবে। এখান থেকেই আপনার পরীক্ষা শুরু। ভয় পাবেন না, স্মার্টলি প্রশ্নের উত্তর দিবেন। জড়তা দেখাবেন না। যেসব প্রশ্ন করতে পারে, যেমন-আপনি কি এনডোর্সড ডলারের বেশী এনেছেন?, সাথে টাকা বা রুপি আছে , যদি বলে একদমই কিছুই আনেননি!! উত্তর- চা-নাস্তা খাওয়ার জন্য ২০০-৩০০/- আছে।। ইমিগ্রেশন শেষ করার পর আপনার নির্ধারিত কোচে উঠে আসনে বসে পড়ুন। ট্রেন ছাড়ার কিছুক্ষণ এর মধ্যেই চেকার আসবে আপনার টিকিট ও পাসপোর্ট চেক করার জন্য! তাই টিকিট ও পাসপোর্ট সযত্নে রাখুন। পাসপোর্ট সযত্নে রাখবেন, কারন এটা আপনার ভ্রমণের ছাড়পত্র। ট্রেনে খাবার সংগ্রহ করা যাবে ক্যাটারারদের থেকে নির্ধারিত মূল্য পরিশোধ সাপেক্ষে।
৪। ভারতে প্রবেশ করার পূর্বে বাংলাদেশের চেকপয়েন্ট দর্শনা রেলস্টেশনে ইমিগ্রেশনের শেষ কিছু ফর্মালিটিস পালন করতে হবে। দর্শনায় ট্রেন থামার পর ট্রেন থেকে নেমে লাইনে দাঁড়িয়ে যান। সাথে টিকিট ও পাসর্পোট নিতে ভুলবেন না। এখানে মূলত এনডোরসমেন্ট এর বিষয়ে কড়াকড়ি ভাবে দেখা হয়। যেমন এনডোরসমেন্ট এর তারিখ ভ্রমণের তারিখের তিন মাসের উর্ধ্বে যেন না যায়। (যদিও নিয়ম রয়েছে সর্বোচ্চ একক বছরের তবু) তিন মাসের বেশী হলে ইমিগ্রেশনে আপনাকে জিজ্ঞাসাবাদে পড়তে হতে পারে। আর এছাড়া ইমিগ্রেশন নিয়ে ঝামেলা হবার কিছু নাই।
৫। দর্শনায় ইমিগ্রেশন শেষে ট্রেনে উঠে পড়ুন। এরপর ট্রেন গেদেতে মানে ইন্ডিয়ায় প্রবেশ করবে। গেদেতেও একইভাবে ইমিগ্রেশনের জন্য লাইনে দাঁড়াতে হবে। ক্যান্টনমেন্ট থেকে যে ফর্মটি দিয়েছিল, তা আপনার পাসর্পোট দেখে ফিলাপ করুন। ফর্মে মূলত আপনি কোথায় থাকবেন তার নাম ও ঠিকানাটা শুধু উল্লেখ করতে হয়.. বুকিং এর কোনো কাগজ দেখাতে হবে না আর যদি থাকে দেকতে চাইলে দেখাতে পারেন।
ব্যাগ স্ক্যানিং করার পূর্বে একটি লাল কাগজ দিবে, সেটি পূরণ করে ইমিগ্রেশনে জমা দিতে হবে। ইমিগ্রেশনের শেষ ধাপ হল ছবি তোলা, এটা সবার জন্য বাধ্যতামূলক। এরপর ট্রেনে উঠে যান। গেদেতেও মানি এক্সচেঞ্জ পাবেন, এখান থেকেও ডলার ভাংগাতে পারেন, তবে এখান থেকে না ভাংগানোই ভালো, মূল্য ভালো পাবেন না।। তাই একবারে নিউমার্কেট এলাকায় গিয়ে টাকা ভাংগানো ভালো।
৬। গেদে থেকে এবার ট্রেন কোলকাতার উদ্দেশ্যে ছেড়ে যাবে। পৌছাতে ২:৩০-৩:০০ ঘন্টা সময় লাগবে। কলিকাতা টার্মিনালে পৌছার পর, স্টেশন থেকে বের হয়েই স্টেশনের সামনে Pre-paid taxi station পাবেন। এটা মূলত কলিকাতা পুলিশ নিয়ন্ত্রণ করে। এখান থেকে আপনি যেকোনো জায়গায় যেতে পারবেন। এরা আপনার থেকে ন্যায্য ভাড়া রাখবে। বাইরের ট্যাক্সিওয়ালা থেকে অনেক কমে।
৭। হোটেলের জন্য নিউমার্কেট এর আশেপাশে অনেক ভালো হোটেল আছে, যাচাই করে নিবেন। ৫০০ রুপি থেকে শুরু। মির্জা গালিব স্ট্রিট, পার্ক স্ট্রিট, সরদার স্ট্রিট, মারকুইজ স্ট্রিট এ ভালো মানের হোটেল ও গেস্টহাউজ পাবেন। হোটেল ঠিক হলে হোটেল কতৃপক্ষ আপনার পাসপোর্টের ফটোকপি বা স্কেনিং করে রাখবে, ফর্মালিটিস হিসাবে। পরে তা আবার ফিরিয়ে দিবে। ভারতের হোটেলের চেক ইন ১১:০০am থেকে পরেরদিন চেক আউট ১১:০০am হলেও নিউমার্কেট এলাকার বেশীরভাগ হোটেলে তা ২:০০pm আর মুকুন্দপুর এলাকায় ৯:০০am। তাই রুমের চাবি নেয়ার পর বিষয়টি জিজ্ঞেস করে নিবেন।
যেহেতু যেতে যেতে রাত হবে তাই মারকুইজ স্ট্রিট এর আশেপাশে কস্তুরি, খালেক হোটেল, রাঁধুনি বা প্রিন্স এ রাতের খাবার সেরে নিবেন। খাওয়া শেষে হোটেলে ফিরে ঘুম দিবেন, সকালে উঠে নাস্তা পর্ব সেরে ডলার ভাংগাতে মার্ককুইজ স্ট্রিট, পার্ক স্ট্রিট, লিন্ডে স্ট্রিট এ ডলার ভাংগানোর অনেক মানি এক্সচেঞ্জ পাবেন, কয়েকটা যাচাই করে নিবেন। আর অবশ্যই ডলার ভাংগানোর মানি রিসিপ্ট নিয়ে নিবেন। এর জন্য পাসর্পোট ও মানি রিসিপ্ট এর জন্য সার্ভিস চার্জ ৪০-৫০/- দিতে হবে। এই মানি রিসিপ্ট সযত্নে রাখবেন, কারন দেশে আসার সময় অবশ্যই প্রয়োজন।
৮। ভারতীয় রুপি নেওয়ার সময় ২০০০/ ও ৫০০/ রুপির নোট ভালো করে দেখা নিবেন। ২০০০/ ও ৫০০/ নোটে কনো দাগ বা লিখা থাকলে তা বাতিল বলে গন্য হবে। ডলার ভাংগানোর পর সিম ক্রয় করে নিবেন। SD, ISD ও 2GB net সহ সিম ৩৮০-৪০০/- পরবে। ইন্টারনেট চালু হবার পরে অবশ্যই OlaCabs নামে একটা Apps আছে ডাউনলোড করে নিতে পারেন এতে আপনি অল্প খরজে A.C গাড়িতে আপনার প্রয়োজন মিটাতে পারবেন ।
৯। কলিকাতা ভ্রমণের সাথে সাথে ফিরতি ট্রেনের টিকিট কাটতে ভুলে যাবেন না। ফিরতি টিকিট পাবেন ফেয়ারলি প্লেস, দাম পরবে ৭৯৫ রুপি। টিকেট সংগ্রহের পর চলে যাবেন হাওড়া ব্রীজ দেখতে।
১০। শপিং করতে চান ঠিক আছে, কিন্তু বিশেষ পরামর্শ হলো ঘুরে ঘুরে বাজার করুন। বিভিন্ন মল, দক্ষিণাপণ, তাঁতের শাড়ির জন্য ঠনঠনিয়া, ইত্যাদি। আর, সব টাকা শেষ করবেন না। ১০০০-১২০০ রুপি রাখতে হবে স্টেশনে যাওয়া ও দেশে আসার সময়।
১১। সব দেশেই ভালো-মন্দ আছে, তাই কোন কিছু জানার বা বুঝার থাকলে লোকাল বা পুলিশকে জিজ্ঞাসা করেন। ৩ জনকে জিজ্ঞেস করলে একজন কথা বলবে। নিরাশ হবেন না বা তাদের উপর বিরক্ত হবেন না।
১২। মেয়েদের সম্মান করুন, খারাপ মন্তব্য করা থেকে বিরত থাকুন।
১৩। আপনি ঘুরতে গেছেন, তাই এখানে হিসাব করে চলবেন, কলিকাতায় প্রচুর দালাল রয়েছে, তাই এদের থেকে সাবধান।
১৪। যাবার পালা- ব্যাগ গুছিয়ে নিন, নির্দিষ্ট সময়ের ১ ঘন্টা পূর্বে ষ্টেশন পৌঁছান। লাইনে দাঁড়িয়ে আগের মতই সব ফর্মালিটিস পালন করুন। তেমনি কোনো প্রব্লেম এ পড়লে নিজ বুদ্ধিমত্তায় তা ম্যানেজ করুন।
*** কোন কারনে আপনি কোলকাতার পথ ভুলে যান, তাহলে ভয় পাবেন না। যে কাউকে জিজ্ঞেস করে ধর্মতলা চলে আসবেন। এইখান থেকে সব জায়গার বাস পাবেন। কোলকাতা ভ্রমনে ট্যাক্সি থেকে দূরে থাকুন। পায়ে ও বাসে ভ্রমন করেন। রিয়েল মজা এখানে। ট্যাক্সি ভাড়া ৩০০ টাকা হলে বাস ১০ টাকা।

Post Copied From: Maznu Mia > Travelers of Bangladesh (ToB)

Leave a Reply

Your email address will not be published.