প্রাগৈতিহাসিক বাংলাদেশ: ধীবর দিঘির দিব্যক জয়ের স্তম্ভ
আজ থেকে ঠিক এক যুগ আগে প্রয়াত শাহাদাত চৌধুরী সম্পাদিত সাপ্তাহিক ২০০০ এ খন্দকার মাহমুদুল হাসানের একটি লেখায় প্রথম শুনি ধীবর দিঘি ও দিঘির মাঝের স্তম্ভের কথা। এর আগে অশোক স্তম্ভের নাম শুনেছিলাম কিন্তু আমাদের দেশেও যে এ ধরণের কিছু একজিষ্ট করে তা ছোট্ট আমাকে বেশ চমৎকৃত করে। কিন্তু একটা ছোট স্কুলবালকের পক্ষে তখন চাইলেও দেশের আরেক প্রান্তে যাওয়া সম্ভব ছিলোনা। কিন্তু সেদিনই সংকল্প করি আমিও একদিন দেখতে যাবো ধীবর দিঘির দিব্যক জয়ের স্তম্ভ। সেই “একদিন” এলো অবশেষে। মান্দা থেকে সাপাহারগামী বাসে সাপাহারের কয়েক কিলো আগে হাতের ডানেই ধীবর দিঘির গেট। সেখান থেকে ব্যাটারী ভ্যানে ৫টাকায় ধীবর দিঘি। প্রশাসন বেশ সাজানোর চেষ্টা করেছে আশপাশটা। চারপাশে জনবসতি নেই, বরেন্দ্র অঞ্চলে যেমনটা হয় ধাপ কেটে কেটে বানানো ধানী জমি যেন বিশাল দিঘিটির চারপাশে গ্যালারী হয়ে আছে। ঘাটে একটা নৌকা, দুই মাঝিই সাওতাল কিশোর। তারাই আমাদের পুষ্পক রথের স্বপ্ন সারথী হয়ে আমাদের দাড় বেয়ে নিয়ে গেলো দিব্যক জয়ের স্তম্ভের কাছে। হাত দিয়ে ছুয়ে দেখলাম সাড়ে ত্রিশফুটি অখন্ড পাথর কেটে বানানো গ্রানাইট স্তম্ভটি। মনটা ভরে গেলো! রাজা এলো, রাজা গেলো। কালের ভ্রুকুটি উপেক্ষা করে আজো কীর্তি রয়ে গেলো! ভাবা যায় স্তম্ভ যদি ত্রিশ ফুট প্লাস হয় কত বড় ছিলো অখন্ড পাথরখন্ডটি যেটি কুঁদে বানানো হয়েছিলো স্তম্ভটি? আজ থেকে এক হাজার বছর আগে কেমনে হলো এসব কীর্তি? সময় বোবা, তাই বলতে পারেনা! নীরবে বয়ে যায় শুধু!
প্রথম মহিপালের আমলে পাল বংশ ভারতের বিশাল অংশসহ বিহার ও বরেন্দ্র এলাকা অধিকারে আনেন। কিন্তু তার পুত্র দ্বিতীয় মহিপাল ছিল দুর্বল ও চরিত্রহীন শাসক। দ্বিতীয় মহীপালের (১০৭০–১০৭১) রাজত্বকালেই বরেন্দ্রীতে ঘটে গিয়েছিল তৎকালীন পরিপ্রেক্ষিতে এক যুগান্তকারী ঘটনা। কৈবর্ত্য বিদ্রোহ। মৎস্যজীবী কৈবর্ত্য বীর দিব্যকের নেতৃত্বে বরেন্দ্রর সাধারণ মানুষ বিদ্রোহ ঘোষনা করেছিলেন পাল শাসনের বিরুদ্ধে। সেই বিদ্রোহ দমন করতে এসে পরাজিত এবং নিহত হয়েছিলেন রাজা দ্বিতীয় মহীপাল। তারপর সর্বসম্মতিক্রমে বরেন্দ্রভূমির অধিপতি নির্বাচিত হন দিব্যক। দিব্যকের রাজত্ব কালে পাল যুবরাজ রামপাল বরেন্দ্র উদ্ধারের চেষ্টা করে দিব্যক এর নিকট পরাজিত হন।দিব্যক এ সাফল্যের স্মৃতি রক্ষার উদ্দেশ্যে দীঘি মধ্যস্থিত এ স্তম্ভ নির্মান করেন। পাল আমলে খননকৃত ৬০ বিঘা দিঘীর মাঝখানে আশ্চর্যজনকভাবে স্থাপিত অখন্ড গ্রানাইড পাথরের স্তম্ভ সূদুর অতীতের বাঙ্গালীর শৌর্যবীর্যের সাক্ষ্য বহন করছে আজও। এখানে সবার যাবার দরকার নাই। এখানে দেখার চোখের চেয়ে অনুভবের অন্তর্দৃষ্টি বেশি প্রয়োজন!
উত্তরবঙ্গের গৌরব ঐতিহাসিক দিবর দীঘি।
পাল আমলে খননকৃত ৬০ বিঘা দিঘীর মাঝখানে আশ্চর্যজনকভাবে স্থাপিত অখন্ড গ্রানাইট পাথরের স্তম্ভ সূদুর অতীতের বাঙ্গালীর শৌর্যবীর্যের সাক্ষ্য বহন করছে আজও। নীরব জনশূণ্য প্রান্তর। চারপাশে সিড়ির মত স্তরে স্তরে ধানচাষ হচ্ছে। বরেন্দ্রে খুব স্বাভাবিক দৃশ্য। তাই এখানে দেখার চোখের চেয়ে অনুভবের অন্তর্দৃষ্টি বেশি প্রয়োজন!
পত্নীতলা, নওগাঁ
ঢাকা থেকে ডাইরেক্ট সাপাহারের বাসে উঠে সাপাহারের তিন কিলো আগে নামতে হবে।তারপর ভ্যানে পাঁচ টাকা।
Post Copied From: Apu Nazrul > Travelers of Bangladesh (ToB)