হ্যাভলক দ্বীপের রাধানগর বিচ
ঢাকা , কলকাতা , দিল্লি , চেন্নাই ইত্যাদি অনেক জায়গা থেকে পৌঁছতে পারেন ভারতের আন্দামান দ্বীপপুঞ্জে। কলকাতা ও চেন্নাই থেকে জাহাজেও যাওয়া যায়। যাইহোক – ভোরের ধাতব পুস্পক রথে চেপে পোর্টব্লেয়ারে নাবার সময় ঘড়িতে প্রায় ৭.৩০। পাখির চোখ দিয়ে দেখেছিলাম একগাদা সবুজ টুকরো নীল সমুদ্রের বুকে। বৃষ্টি ধোয়া সবুজ দ্বীপটায় পা দিয়ে নিজেকে বীর সাভারকার না মনে হলেও , ভালোবেসে ফেললাম দ্বীপটাকে। জানতাম না গাছের পাতার রং এতটা সবুজ হয়। এবারে আমার মাছের চোখ ছিল হ্যাভলক দ্বীপের রাধানগর বিচ। উইলিয়াম হ্যাভলক এর ছেলে হেনরী হ্যাভলকের নামে এ দ্বীপ টার নাম হয়েছিল। মাথার উপর মেঘাচ্ছন্ন আকাশ দেখে মস্তকের পশ্চাৎ দেশে বিরল কুন্তলরাশিতে হাত বুলিয়ে ভাবার চেষ্টা করলাম , বায়ু মন্ডলের চাপে বিপুল উর্মিমালার মধ্যে কি গন্তব্যে পৌঁছনো সম্ভব ? চাপ হয়েগেছে বস , সহজ ভাষায় – এই ভেবে মাথা চুলকোচ্ছিলাম যে ওয়েদার খারাপ থাকলে ৪০ কিমি সমুদ্র পাড়ি দি কি করে? পরের দিন সূর্যদেব সহাস্যে সমস্যাটা দূর করে দিলেন। আমাদের দ্রুতগামী জাহাজটার নাম ছিল ম্যাক্স। কয়েক ঘন্টা নীল সমুদ্রে দৌড়ে সে আমাকে পৌঁছে দিলো হ্যাভলক দ্বীপে। অবাঙালি ট্যুরিস্ট বেশি ছিল এই সময়। দেখলাম বাঙালি বা অবাঙালি , ব্যাপারটা একই , জল থেকে ডাঙায় নেবেই উদ্ভ্রান্তের মতো গাড়িওয়ালাদের সঙ্গে দরাদরি। একটা মজার ব্যাপার হলো এ দ্বীপে বেশিরভাগ মানুষ বাংলায় কথা বলেন।
একটি গাড়ি মাত্র আধ ঘন্টায় আমাকে ঘন সবুজ গাছগাছালির মধ্যে দিয়ে পৌঁছেদিল। রাধানগর বিচে দাঁড়িয়ে বুঝলাম কেন একে পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ বিচ বলা যায়। নীল আকাশ দিয়ে মোড়া পরিষ্কার সাদা বালির বিচ, সবুজ পাহাড় দিয়ে ঘেরা। দিঘার সমুদ্রের মতো ঘোলাটে জল নয় , বরং ঘন নীল জল পায়ে সুড়সুড়ি দেয় এখানে। বিচটা সবুজ জঙ্গলে ঘেরা , এতগুলো প্রকৃতির রং এখানে মিশে অদ্ভুত সৌন্দর্য সৃষ্টি করেছে। এখানে কয়েকটি প্লাস্টিকের ঈগলুও (সরকারি ) আছে থাকার জন্য। এ ছাড়া এ দ্বীপে এখন গাদা গাদা হোটেল হয়েছে। হ্যাভলক থেকে ফেরার সময় ঢেউয়ের বিপরীতে চলতে হয় তাই সময় একটু বেশি লাগে। ফেরার জাহাজে বসে দুলুনি উপভোগ করতে করতে ভাবলাম প্রকৃতির ডাকে সাড়া দেওয়া প্রয়োজন। জাহাজের পেছন দিকে অনেকগুলি শৌচাগার। গিয়ে দেখি , একাধিক মনুষ্য প্রজাতির প্রাণী ক্রমাগত উদগিরণ করে চলেছেন। আমার আর ডাকে সারা দেওয়া হলো না , জাহাজের কর্মীরা বললেন , ফেরার সময় ঢেউয়ের বিপরীতে চলার জন্যই এই বিপত্তি।