১৯৭১ সালে স্বাধীনতা ঘোষনার দুইদিন আগে পাকিস্তানি হানাদারবাহিনী তাদের এদেশীয় দোসরদের যোগসাজশে অসংখ্য প্রথিতযশা বুদ্ধিজীবীদের অপহরণ করে নির্মমভাবে হত্যা করে। উদ্দেশ্য ছিল স্বাধীন বাংলাদেশের বুদ্ধিবৃত্তিক জায়গায় আঘাত করা। যাতে খুব সহজে এ জাতি দাঁড়িয়ে যেতে না পারে। এই ক্ষতি ছিল আসলেই অপূরণীয়। বিজয়ের দুই দিন পর ১৮ তারিখে রায়েরবাজারে পরিত্যক্ত ইটখোলায় অসংখ্য লাশের সাথে এই বুদ্ধিজীবীদের লাশের খোঁজ পাওয়া যায়। পরবর্তীতে তাদের স্মৃতির উদ্দেশ্যেই নির্মিত হয় ‘রায়ের বাজার শহীদ বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধটি’।
স্মৃতিসৌধটির নকশা করেন যৌথভাবে স্থপতি ফরিদ উদ্দিন আহমেদ ও স্থপতি জামি আল শফি। এর নির্মাণ কাজ শুরু হয় ১৯৯৬ সালে এবং শেষ হয় ১৯৯৯ সালে। পুরো কমপ্লেক্সটির আয়তন প্রায় চার একর। মূল বেদির উচ্চতা ২.৪৪ মিটার। দুই পাশের কোণায় ভাঙা দুই অংশ সহ প্রায় ১১৬ মিটার দীর্ঘ দেয়াল সৌধটির অন্যতম প্রধান অংশ। দেয়ালের মাঝখানে একটি ৬.১০ মিটার বর্গায়তনের জানালা রয়েছে যার পেছনে ফ্রেমের মত ভেসে ওঠা আকাশ ও রক্তিম সূর্য নতুন দিনের আগমনী বার্তা শোনায়। দেয়ালের সামনের জলাধার থেকে উঠে এসেছে কালো গ্রানাইট পাথরের বর্গাকৃতির মূল স্তম্ভটি। গ্রানাইট পাথরের এই মূল স্তম্ভটিকে ধরা হয় শোকের প্রতীক।
বধ্যভূমির প্রধান ফটক স্মৃতিসৌধের পাশেই। বিস্তীর্ণ এলাকা জুড়ে সাড়ি সাড়ি করে ভাগ করা এই বধ্যভূমি এলাকা। সেদিনের শহীদরা বেঁচে থাকলে হয়ত এই দেশকে আরো অনেক দূর নিয়ে যেতে পারতো।
রায়েরবাজার স্মৃতিসৌধ কমপ্লেক্সে যেতে হলে শহরের ফার্মগেট অথবা গুলিস্তান থেকে মোহাম্মদপুরের বাসে উঠে মোহাম্মদপুর বাস স্ট্যান্ড আসতে হবে। এখান থেকে খুব সহজেই রিক্সা নিয়ে যাওয়া যাবে স্মৃতিসৌধে। এছাড়া সিএনজি অটোরিক্সায় আজিমপুরের সেকশন হয়ে বেড়িবাধ ধরেও স্মৃতিসৌধ যাওয়া যায়।
একজন গর্বিত বাংলাদেশি হিসেবে আমাদের অবশ্যই ভাষা আন্দোলন, স্বাধীনতা যুদ্ধসহ নিপীড়নের বিরুদ্ধে মাথা তুলে দাঁড়াবার ইতিহাস জানা প্রয়োজন। নিজে জানুন এবং পরিবারের নবীনতম সদস্যদের শেকড়ের ইতিহাস জানার এবং দেখার সুযোগ করে দিন।
ফরিদ ফারাবী
১৩১২১৭
Post Copied From:Farid Farabi>Travelers of Bangladesh (ToB)