মেঘের দেশ নাকি মেঘের সমুদ্র!

মেঘের দেশ,মেঘের সমুদ্র কিংবা স্বর্গ যে কোন নামে “সাজেক”কে সম্বোধন করতে পারবেন।সাজেকের সৌন্দর্য উপভোগ করতে হলে আপনাকে ১ রাত সাজেকে থাকতে হবে।
.
চট্টগ্রাম থেকে সাজেকে কম খরচে কিভাবে যাবেন,কোথায় খাবেন,কোথায় থাকবেন,কোন সময়ে কোন ভিউটা ভালো দেখতে পাবেন সে সব নিয়ে সাজেক ভ্রমনের অভিজ্ঞতা থেকে সবকিছু শেয়ার করছি।আশা করি কাজে দিবে।
.
প্রথম ধাপঃ
চট্টগ্রাম থেকে খাগড়াছড়ি যাওয়া।
চট্টগ্রামের অক্সজিন থেকে “শান্তি পরিবহণ” বাসের টিকেট কাটবেন।যাত্রাপথ অক্সিজেন-খাগড়াছড়ি।টিকেট মূল্য ১৯০ টাকা।অক্সিজেন থেকে বাস ছাড়ে সকাল সাড়ে সাত টা,সাড়ে আট টা,আটটা পন্ঞ্চাশে।
.
অক্সিজেন থেকে খাগড়াছড়ি পৌছতে সময় লাগবে সাড়ে ৩ ঘন্টা।
.
খাগড়াছড়ি বাজারে নেমে সাজেকে যাওয়ার জন্য জীপ ভাড়া করতে হবে।অনেকে খাগড়াছড়ি বাজার থেকে সাজেকের জন্য জীপ ভাড়া না করে দীঘিনালা বাজার থেকে ভাড়া করে।এই ক্ষেত্রে আপনিও করতে পারেন।

খাগড়াছড়ি থেকে দীঘিনালা যেতে সময় লাগে ১ ঘন্টার মত।চট্টগ্রামের অক্সিজেন-খাগড়াছড়ি সাড়ে ৩ ঘন্টার বাস জার্নিটা তাহলে আরো এক ঘন্টা বেড়ে যাবে।টিকেট মূল্য ১৯০ টাকা থেকে ২৪০ টাকা হবে।
.
আমি অনুরোধ করবো আপনারা দীঘিনালা না যেয়ে খাগড়াছড়ি বাজার থেকে সাজেকের জীপে চড়েন।
.
চট্টগ্রাম থেকে সকালের বাসে ওঠে সাড়ে সাড়ে ৩ ঘন্টার জার্নি শেষ করে দুপুর ১ টার মধ্যে খাগড়াছড়ি নেমে প্রথম কাজ হবে।সাজেকে যাওয়ার জন্য জীপ ঠিক না করলে জীপ ঠিক করা।মোবাইলের মাধ্যমে আগে ভাগে জীপ ঠিক করলে ড্রাইবারকে খুঁজে নেওয়া।তারপর ড্রাইবার আপনাদের ট্যুর গাইড হিসেবে পরবর্তী সব কাজে সাহায্য করবে।
.
একটা হোটেলে গিয়ে সবাই পেট ভরে দুপুরের খাবার খেয়ে নিবেন।প্রয়োজনে ড্রাইবারকে বলবেন মোটামুটি মানের একটা রেস্টুরেন্ট সাজেস্ট করার জন্য।
.
তারপর একটা বড় কুলিং কর্ণার টাইপের দোকানে গিয়ে প্রয়োজনী জিনিসপত্র কিনে নিবেন।প্রথমে যা কিনবেনঃ
১/খাবার পানি।
কারন সাজেকে পানির দাম অনেক বেশি।
সন্ধ্যায় নাস্তা করবেন,রাতে ভাত খাবেন,সকালে নাস্তা করবেন,দুপুরে আবার ভাত খাবেন।সো হিসেব করে পানি কিনে নিবেন।আমরা ৭ জনের জন্য টোটাল পানি লেগেছিলো প্রায় ১৪ লিটার।

২/সন্ধ্যায় নাস্তা,রাতে ঝালমুড়ি,সকালের ব্রেকফাস্টের জন্য কলা-পাউরুটি,বিস্কুটসহ প্রয়োজনমত নাস্তা কিনে নেন। কারন,সাজেকে সবকিছুর দাম বেশি।

৩/রাতে বারবিকিউ করতে চাইলে মুরগী-অন্যান্য মসল্লাও কিনে নেন।

৪/পেইন কিলার মেডিসিন,ব্যান্ডেজসহ কমন ঔষধ ফার্মেসি থেকে কিনে নেন।তারপর সব জিনিস পত্র জিপে তুলে আপনারা দুইটার মধ্যে যাত্রা শুরু করুন।

জিপ ভাড়াঃ ৭০০০ টাকা।এক জিপে ১২/১৪ জন বসতে পারবেন।আপনারা ৫ জন গেলেও ঐ ৭০০০ হাজার টাকা দিয়ে জীপ ভাড়া করতে হবে।এটা কমন ভাড়া।পরেরদিন আপনাদের সাজেক থেকে আবার খাগড়াছড়ি ফিরিয়ে না আনা পর্যন্ত এই জীপ আপনাদের সাথে থাকবে।জীপওয়ালাকে আপনাদের সাথে খাবার আর নাস্তা করাতে হবে।রাতে শোবার ব্যবস্হা জীপওয়ালা নিজে করে নিবে।আপনারা শুধু দুই টাইম খাবারটা খাওয়াবেন।তারপরও এই ব্যাপারে জীপওয়ালার সাথে কথা বলে নিবেন।

২য় ধাপঃ
খাগড়াছড়ি থেকে সাজেক…!!

খাগড়াছড়ি থেকে দেড় ঘন্টার জার্নির পর একটা আর্মি ক্যাম্প আছে।ওখানে গিয়ে সাজেকগামী সকল গাড়ি বিকাল সাড়ে ৩ টার মধ্যে পৌঁছাতো হবে।সব গাড়ি এক সাথে করে আর্মির গাড়ি সামনে থেকে সাজেকের উদ্দ্যেশ্যে চলতে থাকবে।

আর্মি ক্যাম্পের ওখান থেকে দুই শিফটে গাড়ি ছাড়ে।সকাল সাড়ে দশটা এবং বিকেল সাড়ে ৩ টা।
চট্টগ্রাম শহর থেকে যেহেতু সকাল সাড়ে ১০ টার শিফটে যাওয়া পসিবল না সেহেতু সাড়ে ৩ টার মধ্যে আর্মি ক্যাম্পে পৌঁছাতে হবে।

পৌঁছানোর সকল চিন্তা ড্রাইবার করবে।জাস্ট ধারনা দেওয়ার জন্য বললাম।আপনারা শুধু দুপুর ১ টায় গাড়ি ঠিক করে ড্রাইবারকে বলেন,
-মামা,সাজেক যামু।
-আপনি যা করার করেন 🙂
.
সাজেকে যাওয়ার রাস্তা অনেক রিস্কি।কিছু কিছু জায়গায় মনে হবে রাস্তাটা নিচ থেকে উপরে উঠতে উঠতে আকাশের সাথে মিলে যাবে।৭০/৮০ ডিগ্রি এঙেলে বাঁকানো।মনে হবে জিপের ছাদে বসে দৃশ্যটা উপভোগ করি কিন্তু রিস্ক অনেক।তবে রাস্তার দু’পাশে পাহাড়,মেঘ,বাঁকানো রাস্তা দেখে অবাক হবে আর ভাববেন,
-একটা রাস্তা এত সুন্দর ক্যামনে হতে পারে।
.
সন্ধ্যা ছয়টার মধ্যে সাজেক পৌঁছাবেন।সাজেক প্রবেশের মূল গেইটে প্রতি সাতজনের জন্য ২৪০ টাকা দিয়ে একটা টোকেন কাটতে হবে।পরের দিন সাজেক থেকে বের হওয়ার সময় এই টোকেন দেখাতে হবে।তাই টোকেনটা যত্ন করে রাখবেন।এই দায়িত্বটা ড্রাইবারকে দেন।

৩য় ধাপঃ
কর্টেজ ভাড়া…!!

সাজেকে অনেক কর্টেজ রয়েছে।দেখেশুনে ভাড়া করতে পারবেন।এই বিষয়ে ড্রাইবার আপনাদের সাহায্যে করবেন।আপনারা কত বাজেটে কেমন কর্টেজ ভাড়া করতে চান তা ড্রাইবারকে বলুন।সবাই গাড়িতে থেকে ড্রাইবারের সাথে ২/৩ জন গিয়ে কর্টেজ ভাড়া করে আসুন।

আমরা যে কর্টেজে ছিলাম সেটা সম্পর্কে ধারনা দিচ্ছি।
রুম ভাড়া ২৫০০ টাকা।একটা ডাবল বেডে ৩ জন এবং সিংগেল বেডে ২ জন ইজিলি থাকতে পারবেন।নিচে ফ্লোরিং করে আরো ২ জন কিংবা ডাবল বেডে ৩ জনের জায়গায় আরেকজনকে নিতে পারেন।টোটাল ৮ জন থাকতে পারবেন।একটামাত্র রাত।পাঁচ জনের জায়গায় ৮ জন থাকলে রুমের খরচটা একটু আপনাদের জন্য কমবে।এটাচ বাথরুম থাকবে।
.
কিছু কর্টেজের মোবাইল নম্বর দিয়ে দিবো।আপনারা চাইলে যাওয়ার আগেরর দিন একই খরচে কর্টেজ ভাড়া করে নিতে পারেন।
.
ফ্রেশ হয়ে নাস্তা সবাই নাস্তা করে নিবেন।তারপর দু’জন গিয়ে রাতের খাবার অর্ডার করে আসতে হবে।আর না হলে রাতে খেতে পারবেন না।আপনি অর্ডার করলে রেস্টুরেন্টে আপনার জন্য খাবার তৈরি করা হবে।

সাজেকে খাবারের দাম অনেক বেশি।
আমরা ১০০ টাকা দিয়ে খেয়েছিলাম।আইটেম ছিলো-ভাত,ডাল(আনলিমিটেড) অল্প করে আলুভর্তা এবং একটা ডিম।

ডিমের বদলে মুরগীর মাংস খেতে চাইলে ১৫০/১৭৫ টাকা খরচ আসবে।
.
কর্টেজে ফ্রেশ হয়ে কলা-পাউরুটি দিয়ে নাস্তা করে দল বেঁধে হ্যালিপ্যাডের দিকে রওনা হোন।হ্যারিপ্যাডের উপরে বসে আড্ডা দিয়ে।চিল করে রাত সাড়ে নয়টার মধ্যে রাতের খাবার খেয়ে নিবেন।বারবিকিউ করতে চাইলে যে কর্টেজে উঠেছেন সেই কর্টেজের ম্যানেজারের সাথে কথা বলেন।উনি সব ঠিক করে দিবেন।

রাত ১২ টার মধ্যে ঘুমিয়ে পড়েন।ভোর সাড়ে চারটায় উঠতে হবে।মনে রাখবেন সাজেকের আসল সৌন্দর্য হচ্ছে ভোরের মেঘ দেখা,মেঘ ছুঁয়া,মেঘ মেখে গোসল করা,হ্যালিপ্যাড থেকে সূর্যদয় দেখা।

ভোর পাঁচটার মধ্যে সাজেকের সব মানুষ হ্যালিপ্যাডের উপরে চলে যায় মেঘের সমুদ্র আর সূর্যদয় দেখার জন্য।

কিছুক্ষণ হ্যালিপ্যাডে থেকে কংলাক পাহাড়ের দিকে হাটা শুরু করেন।প্রায় ঘন্টাখানেক উপরের দিকে ওঠার পর আপনি কংলাক পাহাড় পৌছাবেন।পাহাড়ে ওঠার সময় কি দেখবেন কিংবা কংলাকের চূড়ায় গিয়ে কি দৃশ্য দেখবেন তা আপনাদের জন্য সারপ্রাইজ হিসেবে থাকুক।

তারপর দশটার রুমে মধ্যে ফিরে এসে ফ্রেশ হয়ে নাস্তা করে নিন।দুপুরের খাবারের অর্ডার করে আসুন।তারপর সাজেকের আনাচে কানাচে গিয়ে ছবি তোলা শুরু করুন।

দুপুর ২ টার মধ্যে দুপুরের খাবার খেয়ে নিয়ে রুমে গিয়ে ব্যাগ গোছান।৩ টার মধ্যে জীপে উঠে সাড়ে ৩ টার মধ্যে সাজেক মেইন গেইটে পৌঁছাতে হবে।সেখান থেকে সাড়ে ৩ টায় আর্মির গাড়ি সামনে থেকে নিরাপত্তা দিয়ে সকল গাড়ি সাজেক থেকে বের হবে।

সন্ধ্যা সাড়ে ছয়টার মধ্যে খাগড়াছড়ি শহরে জীপ পৌঁছাবে।কাউন্টারে গিয়ে গিয়ে ১৯০ টাকা দিয়ে চট্টগ্রামে টিকেট(অক্সজেন পর্যন্ত) কাটেন।সাড়ে সাতটা,সাড়ে আটটা এই দুই টাইমে শান্তি পরিবহনেরর বাস ছাড়ে।সবাই মিলে একটা রেস্টুরেন্ট গিয়ে নাস্তা করে রিলেক্স হয়ে বাসে ওঠে পড়েন।
.
জীপ ড্রাইবারের মোবাইল নম্বরঃJoynal Driver-01865432800
.
গ্র্যান্ড সাজেক কর্টেজ মোবাইল নম্বরঃGrand Sajek-01626414582

Post copied From:শাহরিয়ার হেলাল‎>Travelers of Bangladesh (ToB)

Leave a Reply

Your email address will not be published.