পানিহাটা

পানিহাটা শেরপুর জেলার, নালিতাবাড়ির অন্যতম পর্যটন স্পট। শহরের কোলাহল পুর্ণ জীবন থেকে একটু অবসর পেতে যে কেউ চলে আসতে পারেন শেরপুরের নালিতাবাড়ি উপজেলার রামচন্দ্রকুড়া ইউনিয়নের প্রকৃতির নৈসর্গিক শোভা মন্ডিত পানিহাটা পাহাড় এলাকায়। এখানকার উত্তরে ভারতের মেঘালয় রাজ্যের তুরা জেলার সীমান্তঘেষা ঘন সবুজ শ্যামল বন, খরস্রোতা পাহাড়ী ভোগাই নদের সাথে মিতালী আর বৃক্ষরাজি দেখে ভ্রমন পিয়াসীদের মন উদ্বেলিত হয়। তারা কিছুক্ষণের জন্য হলেও ভুলে যান শহরের জীবনের কর্মক্লান্তি। প্রকৃতির নিখুত ভালবাসায় হারিয়ে যান তারা স্বপ্নের রাজ্যে।

পানিহাটা-তারানির সৌন্দর্য্য :
পানিহাটা-তারানি ভারত সীমানাঘেষা হওয়ায় চিরসবুজ বাংলা মায়ের অপরুপ দৃশ্য দেখার পাশাপাশি ভারতের সবুজ বনানী দর্শনার্থীদের অনেক বেশি মনের তৃপ্তি মেটায়। পানিহাটা পাদ্রি মিশনের পশ্চিম পাশে উচু পাহাড়ে দাড়িয়ে উত্তর দিকে চাইলে চোখে পড়ে নীলাভ-চিরসবুজ ভারতের পাহাড়ী তুরা জেলাকে আবছা আবরণের চাদরে জড়িয়ে নিয়েছে কুয়াশার মতো মেঘ কখনো বা কুয়াশা নিজেই। দূরের টিলাগুলো কেবলই লুকোচুরি খেলে এরই আড়ালে। ভারতের মেঘালয় রাজ্যের ছোট ছোট পাহাড় গুলোকে ফাঁকি দিয়ে তুড়ার অববাহিকা থেকে সামনে সোজা এসে পশ্চিমে চলে গেছে পাহাড়ি খরস্রোতা নদ ভোগাই। একপাশে তার কাশবন আর অপর পাশে শত ফুট উঁচু দাঁড়িয়ে থাকা সবুজে জড়ানো পাহাড় ও নদী। নদীর টলটলে স্বচ্ছ পানির নিচে গড়াগড়ি খাচ্ছে নুড়ি পাথরগুলো। সামনের একশ গজ দূরে উত্তরে ভারত অংশে পিঁচঢালা আকাবাঁকা রাস্তা পূর্ব থেকে পশ্চিমে পাহাড়ের বুকচিরে চলে গেছে। আর মাঝে মধ্যেই হুসহাস করে ছুটে চলছে মালবাহী ট্রাকগুলো।
চারদিকে ছোট ছোট অসংখ্য পাহাড়ের সারি সারি পাহাড়। পূর্ব দিকের কয়েকটি পাহাড়ের গা ঘেঁষে ভোগাই নদীতে এসে মিশেছে ছোট একটি পাহাড়ি ঝরণা। তার পাশেই খ্রিষ্টান ধর্মালম্বীদের উপাসনালয় পানিহাটা পাদ্রি মিশন। এখানে আছে ছোট একটি চিকিৎসা কেন্দ্র, বিদ্যালয় আর ছোট ছোট শিক্ষার্থীদের থাকার হোস্টেল। সেখানে শিশু-কিশোরদের কোলাহল। এসব মিলে প্রকৃতি প্রেমীদের প্রতিনিয়ত আকর্ষণ করে অপরূপা পানিহাটা-তারানি পাহাড়। অবশ্য এলাকার জনগন এ পাহাড়টিকে পানিহাটা নামেই জানেন। কিন্তু এই সৌন্দর্য্যের ভাগটা শুধু পানিহাটাই নিতে পারেনি। এর একটা অংশে ভাগ বসিয়েছে পাশের তারানি গ্রামের পাহাড়। তাই দর্শণার্থীদের জন্য পানিহাটা-তারানি দুটো মিলেই গড়ে উঠতে পারে পর্যটন কেন্দ্র।
সবুজ চাদরে ঘেরা গারো পাহাড়ে প্রিয়জনকে সাথে নিয়ে চলে যান প্রকৃতির রাজ্যে। যারা শুনেছেন নালিতাবাড়ির বন্য হাতির তান্ডব তারা মিশনের পুর্বপাশে গারো উপজাতি পল্লীর অধিবাসীদের কাছ থেকে শুনতে পারবেন বন্যহাতির ধংসলীলার কথা। মার্তৃতান্ত্রিক ব্যাবস্থার অধিনে পরিচালিত গারোদের পরিবার প্রধান নারীরা। তাদের সহজ-সরল জীবন যেন ভ্রমন পিয়াসীদের অবাক করে দেয়। তাদের জীবন সংগ্রাম কাছে থেকে দেখারও সুযোগ পাবেন এ গ্রামে। দারিদ্র আর বন্যহাতির সাথে লড়াই করে বেঁচে থাকা এসব গারো উপজাতিদের জীবনযাত্রা ও অকৃত্রিম আতিথিয়েথা দেখে মুগ্ধ হন ভ্রমন পিয়াসীরা। বর্তমান কৃত্রিমতার যুগে প্রকৃতির নির্মিত সবুজ বনানী দেখে কর্মক্লান্তি ভুলে অনাবিল আনন্দে দিনের আলোতেই ভ্রমন পিয়াসীরা ফিরে যান নিজ ঘরে।
পানিহাটা পাদ্রি মিশনের রেভারেন্ট ফাদার ফিলিপ বিশ্বাসের মতে, অপার পর্যটন সম্ভাবনাময় পানিহাটা-তারানি পাহাড় এলাকাটি প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে ভরপুর। প্রকৃতির সান্নিধ্য পেতে এখানে প্রতিবছর দেশি-বিদেশি পর্যটকরা ভীড় জামান। এখানে সরকারিভাবে পর্যটন কেন্দ্র গড়ে তুললে সরকার বিপুল পরিমানে রাজস্ব পাবে। তবে তিনি আরো জানান, বর্তমানে চায়না মোড় থেকে পানিহাটা-তাড়ানি যেতে প্রায় ১.২০ কি.মি. রাস্তা বর্ষাকালে চলাচলের অযোগ্য হয়ে পড়ে। তাই এ রাস্তা টুকু জরুরী ভিত্তিতে পাকা করা প্রয়োজন।

কিভাবে যাবেনঃ
জেলা শহর থেকে প্রায় ৩০ কি.মি. সোজা উত্তর দিকে নিজস্ব পরিবহন বা সিএসজি যোগে সড়ক পথে সরাসরি চলে আসুন নাকুগাও স্থলবন্দর এলাকায়। ভোগাই নদের ব্রীজের উপর দিয়ে পুর্ব দিকে প্রায় ২-৩ কি.মি. যাওয়ার পর ঘন সবুজ পাহাড় মাড়িয়ে উত্তর দিকে পানিহাটা-তাড়ানি পাহাড়ে ঢুকে পড়ুন। বিনা টিকিটে উপভোগ করুন প্রকৃতির নয়নাভিরাম দৃশ্য। যদি নালিতাবাড়ি উপজেলা শহর থেকে আসতে চান তাহলে সড়ক পথে প্রায় ১৯ কিলোমিটার দূরে রামচন্দ্রকুড়া ইউনিয়নে অবস্থিত এ স্থানটি। শহরের গড়কান্দা চৌরাস্তা মোড় থেকে সোজা উত্তরে প্রথমে নাকুগাঁও পরে পূর্ব দিকে মোড় নিয়ে সৌন্দর্যমন্ডিত ভোগাই ব্রিজ পাড়ি দিতে হবে। এরপর সোজা পূর্ব দিকে প্রায় আড়াই থেকে তিন কিলোমিটার গেলে চায়না মোড়। এ মোড়ে এসেই আবারও গতিপথ বদলিয়ে যেতে হবে সোজা উত্তরে। এ রাস্তা ধরে প্রায় এক কিলোমিটার গেলেই পানিহাটা-তারানির সবুজ শ্যামলময় পাহাড়ী এলাকা। সেখান থেকে ভিতরে ঢুকতেই দেখতে পাবেন সবুজের সমারোহ। ব্যক্তিগত উদ্যোগে রিকশা, সিএনজি অটোরিশা বা ভাড়ায় চালিত মোটর সাইকেলেও যাওয়া যায় জেলা শহর থেকে আর নালিতাবাড়ি শহর থেকে মাত্র ৩৫-৪৫ মিনিটের ব্যবধানে এবং অল্প খরচের মধ্যেই চলে যাবেন আপনার গন্তব্যে। মোটরসাইকেলে জেলা শহর থেকে ভাড়া লাগবে আসা-যাওয়া প্রায় ৪০০ টাকা ।
কোথায় থাকবেনঃ
এখানে পিকনিক বা বেড়ানোর জন্য যে কারনেই আসুন না কেন বেলা শেষে জেলা বা উপজেলা সদরের হোটেলে রাত যাপন করতে হবে। তাছাড়া এখানে ভাল মানের কোন খাবার হোটেল নেই। তাই নিজ নিজ ব্যাবস্থাপনায় খাবারের ব্যাবস্থা করতে হবে।
সরকারের সদিচ্ছা, প্রয়োনীয় অবকাঠামো, যোগাযোগ ব্যবস্থা উন্নীতকরণসহ প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিলে এ স্থানটি আকর্ষণীয় একটি পর্যটন কেন্দ্রের পাশাপাশি রাজস্ব আয়ের মাধ্যমে সরকারের কোষাগার সমৃদ্ধ হতে পারে বলে করেন সংশ্লিষ্টরা। তবে আগে যোগাযোগ ব্যবস্থা নাজুক থাকলেও বর্তমানে অনেকটা উন্নত হয়েছে। সেসঙ্গে সরকারী বা সরকারের সহযোগিতায় বেসরকারী উদ্যোগে এখানে একটি পর্যটন কেন্দ্র গড়ে তোলা সম্ভব।

Post Copied From:Rifat Afroz Kushal‎>Travelers of Bangladesh (ToB)

Leave a Reply

Your email address will not be published.