পাকুটিয়া জমিদার বাড়ী – অামাদের ঐতিহ্য

ঊনবিংশ শতাব্দীর শুরুতে ইংরেজদের কাছ থেকে ক্রয় সূত্রে মালিক হয়ে রামকৃষ্ণ সাহা মন্ডল পাকুটিয়ায় জমিদারী শুরু করেন। তাঁর ছিল দুই ছেলে বৃন্দাবন ও রাধা গোবিন্দ। রাধা গোবিন্দ ছিলেন নিঃসন্তান এবং বৃন্দাবন চন্দ্রের ছিল তিন ছেলে। এরা হলেন- ব্রজেন্দ্র মোহন, উপেন্দ্র মোহন ও যোগেন্দ্র মোহন। বৃন্দাবনের মেজছেলে উপেন্দ্রকে তাঁর কাকা নিঃসন্তান রাধা গোবিন্দ দত্তক নেন। ফলে উপেন্দ্র মোহন দত্তক সন্তান হিসাবে কাকার জমিদারীর পুরো সম্পদের অংশটুকু লাভ করেন। ১৯১৫ সালের ১৫ই এপ্রিল প্রায় ১৫ একর এলাকা জুড়ে তিন ভাইয়ের নামে উদ্ভোদন করা হয় একই নকশার পর পর তিনটি প্যালেস বা অট্টালিকা। পাকুটিয়া জমিদার বাড়িটি তিন মহলা বা তিন তরফ নামে পরিচিত ছিল। প্রতিটি মহলের রয়েছে নিজস্ব সৌন্দর্য, লতাপাতার চমৎকার কারুকাজ গুলো মুগ্ধ করার মতো। প্রতিটি জমিদার বাড়ীর মাঝ বরাবর মুকুট হিসাবে লতা ও ফুলের অলংকরণে কারুকার্য মন্ডিত পূর্ণাঙ্গ দুই সুন্দরী নারী মূর্ত্তি এবং সাথে এক মূয়ূর সম্ভাষণ জানাচ্ছে অথিতিকে। এছাড়া দ্বিতীয় তলার রেলিং টপ বা কার্নিশের উপর রয়েছে পাঁচ ফুট পর পর বিভিন্ন ভঙ্গিতে দাঁড়িয়ে থাকা অসংখ্য সুন্দর সুন্দর ছোট আকৃতির নারী মূর্ত্তি।

এই তিনটি স্থাপনাই অপূর্ব শিল্প সুষমামণ্ডিত। পাশ্চত্তীয় শিল্প সংস্কৃতি সমৃদ্ধ মনের মাধুরী মিশিয়ে স্থাপত্য মূল্যের এক অনন্য সৃষ্টি তাদের এই অট্টালিকা গুলো। তিনটি বাড়ীর সামনেই রয়েছে তিনটি নাট মন্দির। বড় তরফের পূজা মন্ডপের শিল্পিত কারুকাজ শতবছর পর এখনও পর্যটককে মুগ্ধ করে। জমিদার বাড়ির সামনে বিশাল মাঠ আর মাঠের মাঝখানে রয়েছে দ্বিতল নাচঘর। প্রতিটি জমিদার বাড়ির রয়েছে নিজস্ব পাতকূয়া। জমিদার বাড়ির কাছাকাছি পশ্চিমে আছে উপেন্দ্র সরোবর নামে বিশাল একটি আট ঘাটলা পুকুর। এই তিন মহলার জমিদাররা প্রত্যেকেই ছিলেন প্রজানন্দিত। তাঁদের নিজেদের প্যালেস তৈরীর পর ১৯১৬ খ্রিঃ তাঁরা তাঁদের পিতা বৃন্দাবন এবং কাকা রাধা গোবিন্দের যৌথ নামে বৃন্দবন চন্দ্র রাধা গোবিন্দ উচ্চ বিদ্যালয় (বিসিআরজি) প্রতিষ্ঠা করেন। এই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের কৃতি ছাত্রদের মধ্যে রয়েছেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিষ্টাতা উপচার্য এবং সাবেক মন্ত্রী ডঃ এ,আর মল্লিক, সাবেক প্রধান মন্ত্রী আতাউর রহমান খান এবং ভবা পাগলার মতো বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গ । দেশ বিভাগের পরে তৎকালীন সরকার কর্তৃক পুরো সম্পদ অধিগ্রহণের পর জমিদারদের প্রতি আনুগত্য প্রকাশের নিদর্শন স্বরূপ ১৯৬৭ সালে এই সম্পদের উপর গড়ে তোলা হয় বিসিআরজি ডিগ্রী কলেজ।

যেভাবে যাবেন- গাবতুলী থেকে বাসে এস বি লিংক/জনসেবা – পাকুটিয়া। ভাড়া ৫০-৬০ টাকা

Post Copied From:Likhon Ahmed‎>Travelers of Bangladesh (ToB)

Leave a Reply

Your email address will not be published.