নিঝুম দ্বীপের ডায়েরী

প্রায় ১৪,০৫০ একরের দ্বীপটি ১৯৫০ সালের দিকে জেগে ওঠে। ১৯৭০ সালের আগে এখানে কোন লোক বসতিই ছিল না, ছিল শুধুমাত্র হরিণের অভয়ারণ্য তাই নামকরন হয়েছিল নিঝুমদ্বীপ। এখানে আছে মহিষের পাল, হরিনের দল, বিভিন্ন প্রজাতির পাখি আর নোনা পানি বেষ্টিত এই দ্বীপে রয়েছে কেওড়া গাছের রাজত্ব। তাই বলা হয়ে থাকে ম্যানগ্রোভ বনের দিক দিয়ে সুন্দরবনের পরে বাংলাদেশের দ্বিতীয় ম্যানগ্রোভ বন হলো নিঝুমদ্বীপ।

#এক_নজরে_নিঝুমদ্বীপ:
নোয়াখালী জেলার হাতিয়া উপজেলায় অবস্থিত এই “Silent Island”. আগে অবশ্য এটাকে চর ওসমান, বালুয়ার চর আর গোল্ডেন চর ও বলা হত। তবে এই ব্যাপারগুলো আমরা টুকটাক সবাই জানি। এখন এটা হয়ে উঠেছে পর্যটকদের আকর্ষণের কেন্দ্রবিন্দু। এখানে একই সাথে আপনি নদী, বন, বন্যপ্রাণী, সি- বীচ দেখতে পাবেন যেটা সুন্দরবন ছাড়া আর কোথাও পাবেন না।
এবার দেখা যাক দর্শনীয় স্থান গুলো-
১. চৌধুরীখাল ও কমলার দ্বীপ
২. কবিরাজের চর
৩. ম্যানগ্রোভ বন
৪. নামারবাজার সি-বীচ
৫. দমার চর
৬. চোয়াখালী & চোয়াখালী বীচ
৭. ভার্জিন/ কুমারী সি-বীচ ( দমার চরের দক্ষিণ অংশ)

#যে_ভাবে_যাবেন:
নিঝুমদ্বীপে মূলত আপনি দুইভাবে যেতে পারবেন। প্রথমত আপনি পানি পথে যেতে পারবেন আর দ্বিতীয়ত আপনি বাই রোডে যেতে পারবেন।

 

#রুট ১-
প্রতিদিন ঢাকার সদরঘাট থেকে এম.ভি তাসরিফ-১, তাসরিফ-২ এবং এম.ভি ফারহান-৩, ফারহান-৪ ছেড়ে যায়। তাসরিফ-১ ও তাসরিফ-২ বিকাল ৫:৩০ মি. ও সন্ধ্যা ৬.০০ টায় হাতিয়ার উদ্দেশ্যে ছেড়ে যায়। ডেকের ভাড়া ২৫০-৩০০ টাকা প্রতিজন এবং কেবিন ১২০০ টাকা ( সিংগেল) এবং ২২০০ টাকা ( ডাবল) তবে এই ভাড়া মাঝে মাঝে কমে লঞ্চ কর্তৃপক্ষ কর্তৃক।
দীর্ঘ ১২/১৩ ঘন্টার চমৎকার জার্নি শেষে সকাল ৬/৭ টার দিকে নামবেন হাতিয়ার তমরদ্দি ঘাটে। চাইলে সকালের নাস্তাটা এখানেই সেরে নিতে পারেন। কারন এবার আপনার নিঝুমদ্বীপে যাওয়ার বাহন ধরতে হবে।
এখান থেকেও দুইভাবে যেতে পারবেন। সরাসরি ট্রলারে বা বাই রোডে। আমি ব্যক্তিগতভবে ট্রলার প্রেফার করি।
তমরদ্দি ঘাট(হাতিয়া)- নামারবাজার( নিঝুমদ্বীপ) ট্রলারে যেতে সময় লাগবে ৩ ঘন্টার মত আর ভাড়া ২৫০/৩০০ টাকা পড়বে। তবে এই জার্নিটা হবে প্রচুর এডভেঞ্চারস আর থ্রিলিং এ পরিপূর্ণ।

মটরসাইকেলে গেলে তমরদ্দি- মুক্তারিয়া ঘাট তারপর ২০ টাকা দিয়ে ট্রলারে করে ঐপারের ঘাটে। সময় লাগবে ১৫/২০ মিনিটের মত। এবার আপনি ডিরেক্ট মটরসাইকেলে নিঝুমদ্বীপ চলে আসতে পারবেন।

#রুট-২:
বাসে যেতে চাইলে আপনাকে রাতের হিমাচল বাসে উঠে সোনাপুর( নোয়াখালী) নামতে হবে। ভোরবেলা বাস থেকে নামার পর সি.এন.জি নিয়ে সোজা চলে যান চেয়ারম্যান ঘাট। ভাড়া ৫০০/৬০০ টাকার( রিজার্ভ) মত আর সময় লাগবে ১ ঘন্টার মত। চেয়ারম্যান ঘাট- নলচিরা ঘাট( হাতিয়া) ট্রলারে ১৫০/২০০ টাকা ভাড়া আর সময় লাগবে ১ ঘন্টার মত। আপনি চাইলে স্পিড বোটেও যেতে পারবেন সেক্ষেত্রে সময় কম লাগলেও টাকা বেশি ৪০০/৫০০ টাকা প্রতিজন।
নলচিরা- মুক্তারিয়া ঘাট যেতে হবে বেবিট্যাক্সি নিয়ে ভাড়া ৬০০/৭০০টাকা। এবার আপনাকে ট্রলারে করে ২০ টাকা দিয়ে ওপারের বন্দরটিলা ঘাটে যেতে হবে। বন্দরটিলা- নামারবাজার( নিঝুমদ্বীপ) বাই মটরসাইকেল, ভাড়া ১০০ টাকা।

#থাকার_ব্যবস্থা :
এখানে কয়েকটা হোটেল আছে থাকার জন্য। উন্নত মানের না তবে খারাপও না একেবারে। রয়েছে শাহীন হোটেল এবং অবকাশ হোটেল। ২/৩ জনের রুম গুলো মূলত ১০০০/১২০০ টাকা ভাড়া।
#Note: চাইলে বার.বি.কিঊ পার্টি করতে পারবেন।

#খাবার_হোটেল:
লোকাল কিছু খাবারের হোটেল আছে। যেমন- হোটেল সি-বার্ড, দ্বীপ হোটেল এবং ভাই-ভাই হোটেল। এখানে আপনি মাছ, মুরগি,হাস, কাকড়া, শুটকি খেতে পারবেন। তবে ভালো মিষ্টি জাতীয় খাবার পাবেন না।

#অনুসন্ধানে_নিঝুমদ্বীপ:

#১ম_দিন– ঘুরার জন্য আপনাকে লোকাল ট্রলার হায়ার করে বের হয়ে যেতে হবে। চৌধুরী খাল, কমলার দ্বীপ, কবিরাজের চর আর ম্যানগ্রোভ বন দেখতে রিজার্ভ ট্রলার লাগবে। চাইলে রিজার্ভ না করেও শেয়ার করে ঘুরতে পারবেন। রিজার্ভ করতে গেলে ১২০০/১৪০০ টাকা লাগবে। দুই পাশে ম্যানগ্রোভ বন আর মাঝখান দিয়ে বয়ে চলেছে চৌধুরীখাল। ট্রলার থেকে নেমে হরিণ দেখতে আপনাকে চুপচাপ শান্তভাবে ম্যানগ্রোভ বনের ভিতর যেতে হবে। সেখান থেকে নদী পার হয়ে চলে আসতে পারেন সবুজের অভয়ারণ্য কবিরাজের চরে। দেখতে পাবেন বিভিন্ন প্রজাতির পাখি আর মহিষের পাল। দুপুরে হোটেলে ফিরে বিকালে যেতে পারেন নামারবাজার বীচে। হোটেল থেকে হেটে যেতে ১০/১৫ মি. লাগে।
অনন্য সুন্দর এই বীচে ভাটার সময় প্রায় ১ কিমি পানি নেমে যায় নিচে।

#২য়_দিন-সকালে মটরসাইকেলে চলে যান দমার চরে। উপভোগ করুন প্রকৃতির নৈসর্গিক সৌন্দর্য। সেখান থেকে ফেরার পথে দেখে নিন চোয়াখালী ও চোয়াখালী বীচ। দেখা পেতে পারেন হরিণ ও শিয়ালের। দুইপাশে বন আর মাঝখানের সড়ক দিয়ে ছুটে চলা সে এক স্বর্গীয় অনুভূতি।

#Note: সন্ধ্যার পর/ ভোরে জংগলের দিকে বা বনবিভাগের অফিসের দিকে গেলে হরিণ দেখতে পাবেন।

#কিছু_অবশ্য_করনীয়
১. গ্রামীণ আর রবি সিম সাথে রাখবেন।
২. যত্রতত্র ময়লা-আবর্জনা ফেলবেন না।
৩. সব-কিছু আগে থেকে দরাদাম করে নিবেন।
৪. শুকনা খাবার আর মেডিসিন রাখবেন সাথে

Post Copied From:Abdur Razzak Khan‎>Travelers of Bangladesh (ToB)

Leave a Reply

Your email address will not be published.