দারুচিনি দ্বীপ এর ভ্রমন অভিজ্ঞতা

ভেবেছিলাম অন্যদের মত দারুচিনি দ্বীপ ভ্রমণ নিয়ে একটা সুন্দর ভ্রমণকাহিনী লিখে ফেলব। কিন্তু, পরে চিন্তা করে দেখলাম, এধরনের লেখা অনেক আছে গ্রুপে। আমি বরং ভ্রমণ অভিজ্ঞতার আলোকে কিছু পয়েন্ট তুলে ধরি।

১৫-১৬ প্রচন্ড রাশের মধ্যে ওখান থেকে ঘুরে এলাম। এমনিতেই সিজনে দাম থাকে চড়া। আর এই হাই ভোল্টেজ সিজনে তো আসল দামের সাথে গুণিতকের কোন শেষ নাই। শুরু থেকে শুরু করি।

১. শীত ওখানে তত একটা নেই। ভারী কিছু নিয়ে অযথা ব্যাগ ভারী করবেন না। হালকা শীতের কাপড় সাথে মাফলার, মাথার টুপি বা মাংকি টুপি অবশ্যই। বিকেলের পর থেকে আর ফেরার পথে রেলিং এ দাড়ালে কিংবা ঢাকা/চট্টগ্রাম থেকে টেকনাফ/ ফিরতি পথে কাজে দেবে।

২. দ্রুত যেতে চাইলে গ্রীণ লাইন। তবে খুব একটা ব্যবধান হয় না। গ্রীনের আধাঘন্টা খানেক পর কেয়ারি আর তারও ১৫-২০ মিনিটের মধ্যেই কুতুবদিয়া পৌঁছে যায়। অগ্রীম টিকিট বুকিং মাস্ট।

৩. সেইন্টমারটিন এ অগ্রীম হোটেল বুকিং দেবেন না। তবে যদি স্পেসিফিক কোন জায়গায় থাকতে চান, সেক্ষেত্রে অবশ্যই দেবেন। এই হাই ভোল্টেজেও থাকার জায়গা পেয়েছি সুতরাং চিন্তা নেই। রুম দেখে শুনে বুঝে, ভাড়া দরদাম করে উঠবেন। সী ভিউ কটেজ/রুম চাইলে ভাড়া একটু বেশি হবে স্বাভাবিক। তবে থাকতে চমৎকার লাগবে।

৪. গ্রুপের রিভিউ নিয়ে আমি পশ্চিম বীচে ছিলাম। থাকতে পারেন। সিটিবি বলে সী ভিউওয়ালা একটা আছে। সীজনে ২০০০ পার রুমকে পারফেক্ট ডিল বলতে পারেন। কমে পেলে জিতবেন। ২৫০০ এর উপরে গেলে ঠকবেন। ফ্যামিলি নিয়ে বা ২৫-৩০ জনের বড় গ্রুপ গেলে হুমায়ূন আহমেদের সমুদ্রবিলাসের কোনই জবাব নেই। এরকম হলে নক করবেন। চেষ্টা করব ইনশা আল্লাহ। সত্যিই গ্রুপ নিয়ে মনে হবে নিজের বাড়িতে আছেন। কেয়ারটেকার ওমর ফারুক ভাই। ঘাটে এসে শীপে তুলে দিয়ে গেছে। সকালে ফোন করে খবর নিয়েছে পৌঁছেছি কি না। আমি মুগ্ধ উনার ব্যবহারে। এমনিতেই ঘুরতে যেয়ে লাভ নেই। গেটের বাইরে থেকে ছবি তুলে চলে আসতে হবে। বোর্ডার ছাড়া ঢুকতে দেয় না।

৫. জাহাজ ঘাট/জেটি থেকে পশ্চিম বীচ ন্যূনতম ৮০-১০০ টাকা নিবে যার সাধারণ সময়ের ভাড়া ২০ টাকা!!! হেটে যেতে সময় লাগবে মাঝারি গতিতে ১৫-২০ মিনিট। সুতরাং, হাটুন, দ্বীপ দেখুন, হোটেল পেলে দরদাম করুন। পথেই পড়বে উত্তর বীচ যেখানে সীভিউ রিসোর্ট আর প্রাসাদ আছে। দেখতে পারেন। জেটি থেকে ১০ মিনিট।

৬. ফাস্ট চার্জার বা থ্রি পিনের চার্জার হলে মাল্টিপ্লাগ বা কনভার্টার নিন নতুবা মাল্টিপ্লাগ বা থ্রি পিন প্লাগ আছে এমন রুম দেখে উঠুন। পড়ে পস্তাবেন। সন্ধ্যার পর হোটেলভেদে ১০-১২টা পর্যন্ত কারেন্ট থাকে।

৭. পশিম বীচে হাসান রেস্তরাঁ আছে। অসাধারণ লেগেছে আমার কাছে ওদের খাবারের স্বাদ। আমি সামুদ্রিক মাছ তেমন খাই না কিন্তু এবার তৃপ্তি নিয়ে ভাজা মাছ খেয়েছি। ২০০ তে বড় রুপচান্দা পেলে জিতবেন। ২৫০ এর বেশি নিলে ঠিকবেন। টুনা ১০০-১২০। গোলচান্দা, কালাচান্দা, সুন্দরি, অন্যান্য মাছ (কোরাল ছাড়া) না খাওয়াই ভাল হবে। টাকা নষ্ট। লবস্টার ১০০-৩০০ টাকা এই সিজনে। টোটাল লস। ভেতরের অল্প সাদা মাংস ছাড়া আর সব ফাও।

৮. পশ্চিমে গেলে অবশ্যই সূর্যাস্ত দেখবেন। ডাবের বদলে নারকেল খেয়ে ৪০-৬০ টাকা নষ্ট করবেন না। কফি হাফ ১৫, ডাবল ৩০, বীচে অন্যান্য শুকনো খাবারে ৫ টাকা করে বেশি, শুয়ে শুয়ে সমুদ্র দেখার জন্যে ঘন্টা ৩০ টাকা, সিঙ্গারা ১০, পেঁয়াজু ২, জিলাপি ৫ টাকা। আর কিছু নাই তেমন খাওয়ার। সকালের নাস্তায় পরোটা/খিচুড়ি। দুপুর আর রাতে ভাত, ডাল, ভর্তা, সবজি, ফ্রেশ ভাজা সামুদ্রিক মাছ/মুরগী/গরু।

৯. রাতে এককাজ করতে পারেন। ভাজা মাছ টাছ খেয়ে বীচের পার ধরে একটু ইভিনিং ওয়াক করলে ২০-২৫ মিনিটেই পশ্চিম থেকে উত্তর হয়ে জেটি/পূর্ব বীচে পৌঁছে যাবেন। মেইন রাস্তা ধরর ব্যাক করতে ১৫ মিনিট। একদম সেফ। আকাশে অসংখ্য তারা। পূর্ণিমায় জ্যোতস্না। দ্বীপের অর্ধেক হেটেই শেষ! দক্ষিণ পরের দিন। জেটি থেকে ছেঁড়া দ্বীপ লাইফ বোটে/স্পীড বোটে/ সাইকেলে/ হেটে যাবার পথেই কাভার হয়ে যাবে। ছেঁড়া দ্বীপ এর সবচেয়ে বাজে ব্যাপার ছেঁড়া দ্বীপ এর কাছে এসে লাইফ/স্পীড বোট থেকে সাম্পানে উঠানামা করা। তাড়াহুড়ো করবেন না। ডুবে গেলে লাইফ রিস্ক আছে। তবে জার্নি এক্সপেরিয়েন্স আপনাকে মুগ্ধ করবেই। লাইফ বোটে যাওয়া আসা জনপ্রতি ৪০০ সময় ৪৫ মিনিট, স্পীডবোটে ১০০০, সময় ১৫ মিনিট।

১০. পারলে ফেরার আগের রাতে বা রওয়ানা দেবার আগেই টেকনাফ থেকে ফেরার বাস টিকিট কেটে রাখবেন। টেনশান থাকবে না।

সুস্থ, সুন্দর ও নিরাপদ ভ্রমণে শুভকামনা।

Post Copied From:মাহরুফ নজরুল‎>Travelers of Bangladesh (ToB)

Leave a Reply

Your email address will not be published.