টাঙ্গাইলের মহেড়া জমিদারবাড়ি

আজ ঘুরে আসলাম টাঙ্গাইলের মহেড়া জমিদারবাড়ি।এখানকার অনিন্দ্যসুন্দর কারুকার্য আর বিশাল মহলগুলো আপনার পুরো দিনটিকেই সার্থক করে দেবে, নিশ্চিত থাকুন।মহেড়া জমিদারবাড়ি সভ্যতা আর ঐতিহ্যের এক অমূল্য নিদর্শন। পুরোনো হাজারো স্মৃতি, সুখ-দুঃখের কীর্তি লেপে আছে এই বাড়ির প্রতিটি পরতে। খোঁজ নিয়ে হয়তো বা দেখলেন, মহেড়া জমিদারবাড়ি একটা পুলিশ একাডেমি। ভাবলেন, ধুর ছাই!এখানে গিয়ে কী করব? কিন্তু না, পুরো অবিকল আগের মতোই রাখা হয়েছে এই জমিদারবাড়িকে;বরং নতুন করে রঙের প্রলেপ দিয়ে বানানো হয়েছে আরো সুন্দর। সঙ্গে আছে ছোট পার্ক, চিড়িয়াখানা, বোট রাইড আর পিকনিক স্পট। সব মিলিয়ে আপনার পয়সা উসুল।টাঙ্গাইলের সদর থেকে প্রায় ১৮ মাইল পূর্বে এবং প্রায় ১০ কিলোমিটার পশ্চিমে অবস্থিত মহেড়া জমিদারবাড়ি। এর প্রতিটি ইটে জমিদারদের ইতিহাস। লোকমুখে শোনা যায়, কালীচরণ সাহা আর আনন্দ সাহা নামের দুই ভাই ছিলেন। সে অনেক আগের কথা। ১৮৯০ সাল। ব্রিটিশ সরকারের আমল তখন। কলকাতায় তাঁরা লবণ আর ডালের ব্যবসা করে অনেক টাকা আয় করে চলে আসেন এই মহেড়ায়। গড়ে তোলেন প্রাসাদ। শুরু করেন গরিবের ওপর অত্যাচার। জমিদারপ্রথা চালু হওয়ার পর তা যেন আরো বেড়ে যায়। কিন্তু তাঁদের উত্তরসূরি রাজেন্দ্র রায় চৌধুরী ছিলেন অতি সৎলোক। তাঁর তদারকিতে ওই এলাকায় রাস্তাঘাট, বিদ্যালয় গড়ে ওঠে। ১৯৭১ সালের ১৪ মে বাংলাদেশের মহান স্বাধীনতা যুদ্ধের সময়ে পাকিস্তান বাহিনী মহেড়া জমিদারবাড়িতে হামলা করে এবং জমিদার বাড়ির কূলবধূ যোগমায়া রায় চৌধুরীসহ পাঁচজন গ্রামবাসীকে চৌধুরী মন্দিরের পেছনে একত্রে দাঁড় করিয়ে নির্মমভাবে গুলি করে হত্যা করে। তার মধ্যে স্থানীয় প্রাইমারি স্কুলের শিক্ষক পণ্ডিত বিমল কুমার সরকার, মনীন্দ্র কুমার চক্রবর্তী, অতুল চন্দ্র সাহা ও নোয়াই বণিক ছিলেন। ইতিহাস কলঙ্কিত সেই রক্তের দাগ এখনো লেগে আছে মহেড়া জমিদারবাড়িতে। দেশ ও দশের জন্য নিয়োজিত জমিদার যখন দেখলেন, তাঁরই এলাকার লোকজন রাজাকার হয়ে এই হত্যাযজ্ঞের সঙ্গে শামিল হয়েছে, তখন মনের কষ্টে তিনি সবকিছু অবিকল ফেলে বাংলাদেশ ছেড়ে চলে যান। পরে এখানেই মুক্তিযোদ্ধারা ক্যাম্প গঠন করেন।১৯৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধের পর ১৯৭২ সালে পরিত্যক্ত জমিদারবাড়িটি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের নির্দেশে পুলিশ ট্রেনিং স্কুল হিসেবে প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়। আর পুলিশের দায়িত্বে থাকার কারণেই হয়তো যথাযথ রক্ষণাবেক্ষণসহ নতুন নতুন স্থাপনা তৈরি করার কারণে পুরোনো স্থাপত্যকলার অপরূপ এই জমিদারবাড়িটির সৌন্দর্য শুধু অক্ষত থাকেনি, বরং তা বৃদ্ধি পেয়েছে হাজার গুণে। আট একরজুড়ে বিস্তৃত এই জমিদারবাড়ি। প্রধান ফটক দুটি। এ ছাড়া এই জমিদারবাড়িতে রয়েছে সুবিশাল তিনটি প্রধান ভবন। সঙ্গে রয়েছে কাছারিঘর, নায়েব সাহেবের ঘর, গোমস্তাদের ঘর; এক দীঘি আছে সঙ্গে, যেখানে এখন বোট রাইড করা যায়। নাম বিশাখা সাগর। আর আছে তিনটি লজ।মহারাজ লজ সাদা ও নীলের কম্বিনেশন। রয়্যাল ব্লু যাকে বলে। এই লজ হচ্ছে সর্ববৃহৎ স্থাপনা, যা জমিদার গজেন্দ্র কুমার রায় চৌধুরীর। ১২টি কক্ষ নিয়ে ভবনটি স্থাপিত। আরো আছে ঝুলন্ত বারান্দা, যা শুটিং স্পট হিসেবে ব্যবহৃত হয়। আরো আছে মহারাজ লজ, কালীচরণ লজ, রানী মহল। কালীচরণ লজের সামনেই ছিল পূজামণ্ডপ, যার সামনে বসে পূজা করতেন জমিদাররা।
কীভাবে যাবেন
ঢাকার মহাখালী থেকে টাঙ্গাইলের বাসে উঠবেন। ঝটিকা, নিরালা, ধলেশ্বরী আর সোনিয়া ঢাকা- টাঙ্গাইলের বাস। নিরালায় সিটিং সার্ভিস। ভাড়া ১৬০ টাকা। মহেড়ায় নামব বলে রাখলেই জায়গামতো বাস থামিয়ে আপনাকে নামিয়ে দেবে। জায়গাটার আরেক নাম দুবাইল। মহেড়া বললেই চেনে। ওখান থেকে অটোতে চেপে যেতে পারেন জমিদারবাড়ি। প্রতিজনে ১৫ টাকা করে। জমিদারবাড়িতে
ঢুকতে ৫০ টাকা। বোট রাইডে চড়তে হলে দরদাম করে নেবেন। ছুটির দিন থাকলে দাম বেড়ে যায় অনেক গুণ। একই রকমভাবে ফেরার সময় দুবাইলের সড়কে ফিরতি বাসের জন্য অপেক্ষা করতে পারেন। পেয়ে যাওয়ার সম্ভাবনাই বেশি। না পেলে মির্জাপুর বাসস্ট্যান্ড থেকে ঢাকাগামী বাস নেবেন। যদি টাঙ্গাইলের শহরে যেতে চান, তাহলে নতুন বাসস্ট্যান্ডে চলে যাবেন। মহেড়া থেকে নতুন বাসস্ট্যান্ডের ভাড়া ৩০ টাকা। তাহলে আর দেরি কেন? পরবর্তী ছুটিতেই ঘুরে আসুন মহেড়া আর হারিয়ে যান প্রাচীনকালের
জমিদার আমলে।

Post Copied From:Farhana Jareen‎>Travelers of Bangladesh (ToB)

One thought on “টাঙ্গাইলের মহেড়া জমিদারবাড়ি

Leave a Reply

Your email address will not be published.