জয়পুর

জয়পুর আমার দেখা সবচেয়ে উন্নত শহর রাজস্থানের মধ্যে। হাজার-হোক মেট্রো সিটি বইলা কথা। রাতের অন্ধকারে যখন ষ্টেশন এ নামলাম তখন ও দিনের মত লোকজনে ভরপুর জয়পুর জংশন। রাজস্থানের বেশীরভাগ স্টেশন এই আমি দ্রুত গতির ওয়াই ফাই পেয়েছি জয়পুর ও তারপর ব্যতিক্রম নয়। ৭ প্লাটফর্ম এর বিশাল এক ষ্টেশন। জয়পুরের আরো বেশি যা ভাল্লাগছে মেট্রো রেল। কম খরচে শহরের এক মাথা থেকে আরেক মাথা পর্যন্ত যাওয়া যায়। পিংক সিটি নামের সার্থকতা পুরোপুরি বুঝা যায় চারপাশের দেওয়াল , বাড়ি ঘরের রঙ দেখে। লোকাল পরিবহন বলতে বাস, অটো আছে। এতো সুন্দর সাজানো গোছানো শহর যে এমনি ঘুরতেও ভাল্লাগে। জয়পুরে উবার, জুগনো, ওলা সব কিছু আছে সার্ভিস ও খুব ভালো দেয়। খাওয়া দাওয়া করার জন্য রেল স্টেশন এর সাথেই বাঙালি হোটেল আছে। খাবারের স্বাদ ও মান খুবি খুবি ভালো। স্টেশনের আসে পাশেই ৪০০-৬০০ রুপিতে ডাবল বেড এর ভালো হোটেল পাওয়া যাবে থাকার জন্য। জয়পুরে ঘুরার মত অনেক জায়গা আছে। আমার প্ল্যান এ জয়পুরের জন্য ১ টা মাত্র দিন এ বরাদ্দ ছিল। জয়পুরের আসার পর আমি বুঝলাম ১ দিনে কিছুই হবে না তাই জয়পুর থেকে যোধপুর-জয়সাল্মির হয়ে আমি আবার জয়পুর আসি। প্রথমেই যাই আমের দুর্গে। জয়পুর শহর থেকে ভালোই দূরে দুর্গ টা। ভালো হয় লোকাল বাস এ গেলে। দুর্গে যাওয়ার পথেই জল মহল চোখে পরবে দুর থেকে দেখতেই জল মহল সুন্দর লাগে। আমের দুর্গে নেমে প্রথমেই মনে হয়েছে গাইড নি। কিন্তু গাইড ব্যাটা এতো এতো প্যাঁচাল পারে যে শেষে বিরক্ত ধরে যায় ( পূর্ববর্তী অভিজ্ঞতার অবলম্বনে)। বুদ্ধি হচ্ছে নেট থেকে অডিও গাইড নামানো। দুর্গের যেখানেই দেখবেন অডিও গাইড নাম্বার তখন শুধু মোবাইল থেকে তত নাম্বার ফাইল টা প্লে করবেন। গাইড এর খরচ এ বেচে গেল। দুর্গে টা অনেক দুর থেকে প্রাচীর দিয়ে ঘেরা। দুর্গের ঢোকার পথ টা একটু অন্য রকম। আসলে পথ টা হাতিদের চলাচলের জন্য বানানো হয়েছিল। এখন ও প্রতিদিন সকালে হাতি চলাচল করে ওই রাস্তা দিয়ে দুর্গের ভিতরে। আপনি চাইলে হাতির পিঠে করেও দুর্গের ভেতর যেতে পারবেন। দুর্গের সামনে একটা লেক এর মত আছে। লেক এর মধ্যে একটা বাগান আছে। ঘটনা হচ্ছে লেকের ভিতরের বাগানের ভেতরের নকশা, দুর্গের ভেতরের ছোট বাগানের নকশা, শীষ মহলের বিপরীতের একটা দরজার নকশা হুবহু একই তিন জায়গাতেই একই নকশা আঁকা পার্থক্য শুধু নকশার সাইজে। দুর্গের ভিতরের বেশীরভাগ দরজা চন্দন কাঠের তৈরি। ওই সময় বাথ ট্যাব এর চিন্তা কিভাবে তাদের মাথায় আসছে জানি না কিন্তু দুর্গের ভেতর রানীদের গোসল করার জন্য বাথ ট্যাব এর মত আছে। তার পাশে গরম পানির ব্যবস্থা আছে। রানীরা এতো ভারি ভারি কাপড় এবং গয়না পড়তো যে তাদের চলা ফেরার করতে অসুবিধা হত এজন্য পালকির মত দুই চাক্কার বাহন আছে। শীষ মহলের উপরে আয়না এমন ভাবে ফিট করা যে তাতে আলো ফেললে তারার মত দেখা যায়। রানি নাকি রাজার কাছে আবদার করতো তাদের শোবার ঘর থেকে তারা দেখার। এজন্য ছাদে আয়না এমন ভাবে ফিট করা যাতে আলো পরলে তারার মত মনে হয়। সবাই যখন ছাদের দিকে মোবাইলের টর্চ মারে তখন সত্যি হাজার হাজার তারা মনে হয়। আমের দুর্গ ও অনেক বড়। অনেক সময় নিয়ে দেখলে মজা পাবেন। আমের প্যালেস এ ঢুকার দরজার উপরে একটা মাত্র জানালা আছে। রাজা যখন যুদ্ধ থেকে ফিরতও তখন রানি ওই জানালা দিয়ে রাজা কে স্বাগতম জানাতও। অডিও গাইড না শুনলে এসব জিনিস মিস করবেন। আমের দুর্গ এর পাশেই কিছু ঘরবাড়ি আছে। তারা নিজেদের মান সিঙ্ঘ এর উত্তরসূরি দাবি করে। আর সামনে যে দুর্গ দেখা যায় ওটা জয়গারহ দুর্গ। আমের দুর্গ থেকে জয়গারহ দুর্গ সুরঙ্গ দিয়ে যাওয়া যায়। এছাড়াও আর একটা সুরঙ্গ বন্ধ করে দেওয়া। আরেকটা জিনিস মাথায় রাখা জরুরী টিকেট দুইবার চেক হয়। প্রথম বার চেকিং এর পর ফালায় দিলে শেষে বিপদে পরবেন। আমের দুর্গ থেকে ফেরার পথেই রাস্তায় নেমে জল মহল দেখে নিতে পারেন। লেখা বড় হয়ে যাচ্ছে তবু জয়পুরের গল্প শেষ হচ্ছে না…………… চলতে থাকুক।

(চলবে)

Post Copied From:নুরুল গোফরান‎>Travelers of Bangladesh (ToB)

Leave a Reply

Your email address will not be published.