কম খরচে প্যাকেজ প্ল্যান

#সিঙ্গাপুর

যদি আপনি ভ্রমণ পিপাসু হয়ে থাকেন তাহলে ভ্রমণের কথা চিন্তা করলেই নিজে নিজে প্যাকেজ প্ল্যান করুন। এতে আপনি ইচ্ছা স্বাধীনভাবে কম খরচে ঘুরতে পারবেন। একদম সহজ উপায়ে এই বেড়ানো সম্ভব কিন্তু আমরা অনেকেই এটিকে অসম্ভব মনে করে অন্যের মাধ্যমে বেশী টাকা দিয়ে বেড়াতে যাই।

দেড় বছর আগে আমার ভ্রমনটি যেমন ছিলঃ

মালিন্দো এয়ারলাইন্সে রিটার্ন সহ জনপ্রতি ২৫৫০০/- টাকা দিয়ে আমরা হাজবেন্ড ওয়াইফ দুটি টিকিট কাটলাম। আমাদের রুট ছিল প্রথমে ঢাকা টু সিঙ্গাপুর ( ট্রানজিট মালয়েশিয়া) ০২ রাত সিঙ্গাপুর থাকার পর সিঙ্গাপুর থেকে মালয়েশিয়া। এরপর মালয়েশিয়া ৪ রাত থাকার পর মালয়েশিয়া টু ঢাকা।
ঢাকা থেকেই অনলাইনে প্রতিরাত ১০০ সিঙ্গাপুর ডলারে Claremont Hotel সিঙ্গাপুরে দুইরাত ডাবল রুম বুকিং দিলাম। এছাড়া ৫০ ইউ এস ডলারে ৪ রাত Metro hotel মালয়েশিয়াতে বুকিং দিলাম।

ভ্রমণের প্রথম অধ্যায় সিঙ্গাপুরঃ
আমরা ঢাকা থেকে যাত্রা শুরু করলাম রাতে। মালয়েশিয়ার স্থানীয় সময় ভোরে পৌঁছাইলাম। সেখানে ৩ ঘন্টা এয়ারপোর্টে ট্রানজিট সময় পার করে পরবর্তী প্লেনে চলে গেলাম সিঙ্গাপুর। এটি ছিল আমার সিঙ্গাপুরে প্রথম ভ্রমণ। যদিও এর আগে একবার রাতের আকাশ থেকে সিঙ্গাপুর দেখেছিলাম আর তখনই বুঝেছি কতইনা সুন্দর একটি দেশ। বাস্তবে যখন সিঙ্গাপুর এয়ারপোর্টে পা রাখলাম তখনই বাকীটা বুঝে গেলাম এ বুঝি আমেরিকাকে ছোট পরিসরে কোন শোকেসে রাখা হয়েছে !!!!
পুরো এয়ারপোর্টটি রঙ্গিন কার্পেট দ্বারা আবৃত। যেন চারিদিকে ঝকঝক করছে। কিছু দূর হেঁটে স্কেলেটারে নেমে সোজা চলে গেলাম আন্ডারপাস ট্রেন ষ্টেশনে। আগেই বলে রাখি সিঙ্গাপুরে একটি আসাধারণ ট্রেন সার্ভিস চালু। মাটির উপরে বেশী লোকজন না দেখলেও মাটির নীচ দিয়ে হাজার হাজার মানুষের এক স্থান থেকে অন্য স্থানে যাতায়াত চলে। প্রতিটি এলাকাতেই কোননা কোন বড় বিল্ডিং বা শপিং মলের নীচে ট্রেন স্টেশন এবং দোতলা তিনতলা পর্যন্ত আন্ডার গ্রাউন্ডে একাধিক প্ল্যাটফর্ম থেকে বিভিন্ন রুটে ট্রেন চলে যা উপর থেকে কোনই বুঝার উপায় নেই।
যাইহোক আমি ষ্টেশনে যেয়েই একটি ম্যাপ নিলাম এবং দশ সিঙ্গাপুর ডলার করে দুইটি ট্রান্সপোর্ট কার্ড নিলাম কাউন্টার থেকে। এছাড়া ভ্রমণ লোকেশন অনুযায়ী আপনি বুথ বা কাউন্টার থেকে টিকিট কিনতে পারবেন তবে এই কার্ড দিয়ে আপনি সিঙ্গাপুরে যেকোন স্থানে বাস অথবা ট্রেনে ভ্রমণ করতে পারবেন এবং ঝামেলা মুক্ত। আমার যতদূর মনে আছে আমরা দুইজনে কার্ড ক্রয়সহ মোট ৪বার রিচার্জ করে অর্থাৎ ৫৭*৪০ডলার = ২২৮০টাকায় পুরো সিঙ্গাপুরে ট্রেন ভ্রমণ করি। ট্রেনের সিস্টেমটি এত সুন্দর যা আমাদের দেশ আগামী ২০০ বছরেও মনেহয় চিন্তা করতে পারবেনা। আমি কার্ডটি ওয়ালেটে ঢুকিয়ে রাখলাম এবং কার্ডের সেন্সর এত ভাল যে ওয়ালেট সহ টাচ করলেও তা কাজ করে। টাচ করে ট্রেন ষ্টেশনের প্ল্যাটফর্মে ঢুকলেও আপনার টাকা কাটবেনা। এবার আপনি ভিতরে ঢুকে এক ষ্টেশন থেকে আর এক ষ্টেশন করে পুরো সিঙ্গাপুর ঘুরে ফেললেও যেই মাত্র পান্স করে আউট হবেন ঠিক তখনই কার্ড থেকে আপনার টাকা কাটবে। মেশিন শুধু কাউন্ট করবে আপনি কোথা থেকে ইন হয়েছেন আর কোথায় আউট হয়েছেন তার দূরত্বের ভাড়া। এভাবে ম্যাপ দেখে মাঝে একটি প্ল্যাটফর্ম চেঞ্জ করে অন্য ট্রেনে উঠে হোটেলের এরিয়ার ষ্টেশনে নেমে পড়লাম এবং মাটির নীচ থেকে গ্রাউন্ডে উঠে ১০০ গজ পায়ে হেঁটেই আমার হোটেল পেয়ে গেলাম। এই হোটেলটি নেওয়ার কারন ছিল এটি মোস্তফা সেন্টারের পাশেই। হোটেলে যেয়েই গোসল করে ফ্রেস হয়ে নিলাম। সিঙ্গাপুর খুব ব্যয়বহুল সিটি এজন্য ১০০ ডলারেও মনমত হোটেলটি ছিলনা। এরই মাঝে দুপুরে ক্ষুধা লেগে গেল। খুব ভাত খেতে মন চাচ্ছিলো। সিঙ্গাপুরে অবস্থানরত আমার ছোটবেলার বন্ধু হোটেলে হাজির। উদ্দ্যেশ্য আমাকে সংজ্ঞ দিবে। তার সঙ্গে পায়ে হেঁটে চলে গেলাম এমন জায়গা মনেহয় আমি ঢাকার প্রেসক্লাবের সামনেই আছি। রাস্তাঘাট একটু স্যাঁতসেঁতে দেখেই বুঝতে পারলাম বাঙ্গালী পাড়া :p সেই ধানসিঁড়ি, বাসমতি, ফকরুদ্দিন থেকে শুরু করে ঢাকার সব রেস্তোরাই আছে সেখানে। আর ঠিক ঢাকার মত সব আড্ডাবাজি চলছে সেখানে। করল্লা সহ বিভিন্ন শাক-সবজি ও বড় বাইন মাছ দিয়ে ভরপুর সেটে দিলাম ভরা দুই প্লেট 🙂 খাওয়া দাওয়া শেষ করে হোটেলে এসে কিছুক্ষণ রেস্ট নিয়ে ড্রেস চেঞ্জ করে তিনজন চলে গেলাম মেরিনা বে। মেরিনা বে সিঙ্গাপুরের সবচেয়ে আকর্ষনীয় স্থানের মধ্যে একটি। মূল সিটি সহ অফিস পাড়া সেখানে। চারিদিকে বিশাল বিশাল বল্ডিং। বড় একটি লেকের একপাশে সিংহের মূর্তির মুখ দিয়ে পানি বের হচ্ছে আর একপাশে পরপর তিনটি বিল্ডিংয়ের উপরে শীপের আকৃতি যেটিকে মেরিনা বে স্যান্ডস বলে। আরো একপাশে ওপেন স্টেডিয়ামও আছে। সোজা কথা তার চারিপাশে বিনোদনের স্থান। ঘুরে ঘুরে আর ছবি তুলে সন্ধ্যা হয়ে গেল। এরপর শুরু হলো পানির লেজার সো যা এখন হাতিরঝিলে করেছে। আঁধার নামতেই চারিদিকে লাইটিংয়ে পুরো সিঙ্গাপুর ঝকঝক করছে। Marina Bay sands বিল্ডিংয়ের নীচে অয়ার্ল্ড ক্লাস ক্যাসিনো। পাসপোর্ট ছাড়া সেখানে ঢুকা যায় না। সেখানেও আমরা ঢুকলাম। মাথা নষ্ট করার মত সেই ক্যাসিনো। চারিদিকে শুধু জুয়ার আসর। এক সুন্দরী এসে এক গ্লাস ফ্রি সফট ড্রিংস দিল সেটি হাতে নিয়ে ভাব নিয়ে চারিদিকে ঘুরে ঘুরে জুয়ার আসর দেখলাম। ভাব দেখে সুন্দরীরা শুধু আমন্ত্রন জানাচ্ছে জুয়া খেলার জন্য কিন্তু আমি জাতে মাতাল হলেও তালে ঠিক আছি সেটি বুঝে নাই 🙂 সেই আসর থেকে বের হয়ে বিল্ডিংয়ের ভিতরে প্রবেশ করলাম। সেখানে দেখি আর এক আজব বিনোদন। বিল্ডিইংয়ের ভিতরেই কৃত্রিম ক্যানেল যেখানে দশ ডলারের বিনিময়ে বেশ কিছুক্ষণ সাম্পান রাইড করতে পারবেন। এরই মাঝে বাহিরে খুব মিউজিক কানে ভেসে আসলো। রাত হয়ে গেছে বাহিরে বের হয়ে বিল্ডিংয়ের পিছনে যেতে দেখলাম বিশাল বিশাল কৃত্রিম অনেক গাছ এবং পুরো গাছ গুলোই লাইটিং করা। সবাই মাটিতে বসে উপভোগ করছে। মিউজিকের সাথে লাইটিংয়ের খেলা দেখতে থাকলাম। অনেক সময় হয়ে গেল ক্লান্ত লাগতে থাকলো তাই হোটেলে ফিরে আসলাম। খাওয়া দাওয়া করেই হেঁটে চলে গেলাম মোস্তফা সেন্টারে। এই সেন্টারটি সারারাত খোলা। এমন একটি দোকান যেখানে ঢুকলে আপনি সব কিছুই পাবেন। শপিং করে হোটেলে ফিরলাম। পরের দিন সকালে চলে গেলাম ট্রেনে Sentosa and Universal Studio একই স্থানে অবস্থিত দুটি বিনোদন স্থান যা সারাদিনেও আপনি ঘুরে শেষ করতে পারবেন না। Sentosa তে ছোট ছোট দুই একটা বীচ আছে তা উপভোগ করে আর কোন কিছু না দেখে সোজা ঢুকে পড়লাম Universal Studio তে। অনেক মজার স্থান এটি। যতদূর মনে হয় জনপ্রতি ৭০ সিঙ্গাপুর ডলার লাগে ঢুকতে। এই টিকিটে ঢুকেই আপনি সেখানের সব রাইড উপভোগ করতে পারবেন। ইংলিশ মুভিতেই দেখা যায় যা অনেক কিছুই উপভোগ করলাম। যার মধ্যে উল্লেখ্যযোগ্য ছিল Transformers . Roller coaster, Canopy Flyer, Jurassic park, Revenge of the Mummy, Madagascar, Treasure Hunters আমার কাছে সবচেয়ে ভয়ঙ্কর ছিল রোলার কোস্টার এবং ট্রান্সফর্মার। প্রতিটি রাইড এত চমৎকার যে বিনোদন কাহাকে বলে হাড়েহাড়ে টের পাবেন। অসাধারণ অভিজ্ঞতা যে না দেখবে তাকে বুঝানো যাবেনা। সারাদিন শেষ করে সন্ধ্যায় ফিরে আসলাম হোটেলে। খুব ক্লান্ত তাই খাওয়া শেষে বেশ কিছুক্ষণ রেস্ট নিয়ে রাত ১২টায় চলে গেলাম মোস্তফা সেন্টারে। মনমতো সপিং করলাম। দাম একটু বেশী হলেও সিঙ্গাপুরে সব কোয়ালিটি পণ্য পাওয়া যায়। শপিং সেন্টার থেকে কম মূল্যে গোল্ড কিনতেও বউ ভুল করলো না 🙁 যাইহোক রাত ৩টা বেজে গেল। মল থেকে বের হয়ে মলের পাশ দিয়ে হাঁটছি। সিঙ্গাপুরের নিরাপত্তা দেখে হতবাক হয়ে গেলাম। এত কাছের একটি দেশ তারপরেও কতইনা সভ্য। মলের পাশ দিয়ে যখন হাঁটছি বাহির থেকে দেখলাম গ্লাসের ভিতর শতশত ডায়মন্ড ও স্বর্নের নেকলেস ডিসপ্লে করা এবং তার গ্লাসডোরে শুধুমাত্র বাই সাইকেল ব্যবহার করা লক লাগানো যা সহজেই গ্লাস ভেঙ্গে বা লক ভেঙ্গে ডাকাতি করা যায় অথচ কেউ ভুলেও তা ধরছেনা। বিষয়টি অদ্ভুদ লেগেছে যেহেতু চোরের দেশে আমাদের জন্ম 🙁
যাইহোক পরের দিন সিঙ্গাপুর ভ্রমণ শেষ করে ট্রেনে আবার এয়ারপোর্ট এসে সেই মালিন্দোতে রওনা দিলাম মালয়েশিয়া। অনেক বড় লেখা তাই এ পার্ট এখানেই শেষ করছি

Post Copied From:Miah Mizanur Rahman Kazol‎>Travelers of Bangladesh (ToB)

Leave a Reply

Your email address will not be published.