ঢাকা-কলকাতা-দিল্লী-মানালী-সিমলা-আগ্রা ট্যুর সমন্ধে আমার অভিজ্ঞতা

আমার মত যারা প্রথম বিদেশ ভ্রমন করার চিন্তা করছেন তারা বিশেষ করে অনেক দুশ্চিন্তায় থাকেন বাজেট কত লাগবে, ট্যুর প্লান কি করব, নিরাপত্তার ইস্যু, কোথায় থেকে কিভাবে কোথায় যাব, সব চিনব তো? আর যদি সাথে ফ্যামিলি নিয়ে যান তাহলে তো কথাই নেই। আমি আমার অয়াইফ নিয়ে উক্ত রুটে ভ্রমন করেছি। এবং আল্লাহর রহমতে বেশ ভালভাবেই সম্পন্ন করে গত ৩১ শে অক্টোবর দেশে ফিরেছি। যাবার আগে কত যে চিন্তা ভাবনা করেছি তার ইয়ত্তা নেই। এজেন্ট এর মাধ্যমে যাব কিনা, একা এত সব কিছু ম্যানেজ করতে পারব কিনা, সাথে মেয়ে মানুষ থাকবে আবার ইন্ডিয়ার এখন যা অবস্থা দিল্লী তো ধর্ষনের মাপকাঠিতে বেশ উপরেই আছে। বলে রাখা ভাল, আমার ফেসবুক একাউন্ট ছিল না, টিওবি সমন্ধে একজনের কাছে শুনার পর একাউন্ট ওপেন করি এবং টিওবিতে যুক্ত হই। তারপর সবই ইতিহাস। এই ছেলে একাই পুরো ট্যুরের প্লান করে বউকে নিয়ে কোনো এজেন্ট ছাড়াই দিব্যি সফল ট্যুরের বাস্তবায়ন করতে পেরেছে।
আমার পোষ্টটি বিশেষ করে তাদের কাজে আসবে যারা খরচের চিন্তা না করে ফ্যামিলি নিয়ে সুন্দর একটা রিলাক্স ট্যুর দিতে চান।
প্রথমেই আসি রুট প্লান সমন্ধে। দেখুন যে রুটের কথা আমি বলছি সেই রুটে অনেক ভাবে ভ্রমন করা যেতে পারে। সম্ভাব্য প্লান গুলো এই রকম হতে পারে;
 ঢাকা থেকে সরাসরি দিল্লী রিটার্ন এয়ার তারপর দিল্লী থেকে সিমলা-মানালী-দিল্লী করতে পারেন আবার দিল্লী-মানালী-সিমলা-দিল্লী করতে পারেন।সেক্ষেত্রে কোলকাতা বাদ পরবে।
 ঢাকা-কোলকাতা বাসে যেয়ে কোলকাতা-দিল্লী রাজধানী ট্রেন তারপর দিল্লী থেকে সিমলা-মানালী-দিল্লী করতে পারেন আবার দিল্লী-মানালী-সিমলা-দিল্লী করতে পারেন।
 ঢাকা-কোলকাতা মৈত্রী ট্রেনে গিয়ে কোলকাতা থেকে দিল্লী রাজধানী ট্রেন তারপর দিল্লী থেকে সিমলা-মানালী-দিল্লী করতে পারেন আবার দিল্লী-মানালী-সিমলা-দিল্লী করতে পারেন।
 ঢাকা-কোলকাতা মৈত্রী ট্রেনে গিয়ে কোলকাতা থেকে কালকা ট্রেনে যেয়ে, কালকা থেকে টয় ট্রেনে সিমলা যাবেন। এখানে উল্লেখ্য টয় ট্রেন কিন্তু ওয়ার্ল্ড হেরিটেজের একটি। তারপর সিমলা থেকে মানালী বাসেও যাওয়া যায় ভাড়া ৮০০ রুপি আবার ট্যাক্সি রিজার্ভ নিতে পারেন ভাড়া ২৬০০ থেকে ৫৫০০ রুপি পরবে।
আমার রুট প্লান টা বলে নিই।আমার বউ কখনো ট্রেনে উঠে নাই তাই আমি একটা ট্রেন অপ্সন রাখছি। ঢাকা-কোলকাতা মৈত্রী ট্রেন, কোলকাতা-দিল্লী রিটার্ন বাই এয়ার ইন্ডিগো, দিল্লী-মানালী এসি ভলভো বাস HRTC । মানালী-সিমলা ট্যক্সি রিজার্ভ, সিমলা-দিল্লী এসি ভলভো বাস HRTC। দিল্লী লোকাল সাইট ট্যাক্সি এবং ট্যূরিস্ট বাস, আগ্রা ফোর্ট, তাজমহল ট্যূরিস্ট বাস, কোলকাতা-ঢাকা ইউএস বাংলা এয়ারলাইন্স।

টিকেট সংগ্রহঃ পাসপোর্টের অরিজিনাল কপি নিয়ে কমলাপুর স্টেশনে যেতে হবে অন্য কারো কাছে পাঠিয়ে দিলেও হয় সমস্যা নাই কিন্তু টিকেট কাটতে পাসপোর্টের অরিজিনাল কপি দরকার এটাই হল মুলকথা। তো মৈত্রীর টিকেট কাটলাম কমলাপুর থেকে ১৬৩৩ টাকা পার টিকেট, তারপর ইন্ডিগো এয়ারের টিকেট কাটলাম গুলশান নন্দোস এর উপরে ইন্ডিগোর এজেন্ট এর কাছ থেকে রাউন্ড ট্রিপ কোলকাতা-দিল্লী ১১৯০০ টাকা পার পারসন।

প্রথম দিন
অক্টোবরের ২০ তারিখ সকাল সকাল যাত্রা শুরু করলাম। ক্যান্টনমেন্ট স্টেশনে পৌঁছলাম সকাল ৭ টার দিকে। অনেক লোকের ভীড়, লম্বা লাইন ধরে ভীতরে ঢুকলাম। নির্ধারিত আসনে বসে পড়লাম। আমার ওয়াইফ দেখলাম বেশ অন্য রকম অনুভুতিতে আবিষ্ট। প্রথম দেশের বাইরে যাচ্ছে হোক সেটা ভারত। ট্রেন ছাড়ল সকাল ৮:১০ এ। প্রায় আধা ঘন্টা পর নামল ঝুম বৃষ্টি। চারিদিকে অন্ধকারাচ্ছন্ন আর আমি হেমন্ত দার গান শুনছি;

“এই আছি এই নেই আমি যেন পাখী মেলি পাখনা
সীমানার সীমা ছেড়ে যাই দূর প্রান্তে
নীড় একা পরে থাক থাকনা”

ট্রেনের মাঝে কিছু নাস্তা খেলাম, চিকেনের কোনো আইটেম হবে চিমসায়ে কাঠ হয়ে গেছে। একজন এসে ইমিগ্রেশনের জন্য আরোহন কার্ড দিয়ে গেল, ওটা পুরন করে ফেললাম।ট্রেনের খাবার সরবরাহকারি এসে দুপুরের খাবারে অর্ডার নিয়ে গেল ১৫০ টাকা এক মিল। আমরা দুজনে একটার জন্য বললাম। দুপুর ২:৩০ টায় পৌঁছলাম দর্শনা স্টেশনে, তাড়াহুড়ো করে নেমে পড়লাম। বউকে নিয়ে যেতে যেতে তবুও লাইনের মাঝখানে। একজন মহিলা পুলিশ এসে বললেন আমি একাই দুইজনের টা করতে পারব। ইমিগ্রেশনের ফর্মালিটিজ শেষ করে সিটে ফিরে দেখি দুপুরের খাবার দিয়ে গেছে। খাবারের মান বেশ ভাল। দুজনে খেয়ে নিলাম। সবার ইমিগ্রেশন শেষ করে ট্রেন ছাড়ল বিকাল ৪:০০ টায়। ১০ মিনিট পর গেদে পৌঁছলাম। লাগেজ সব নিয়ে দুজন নেমে পড়লাম। আবার লম্বা লাইন। এখানে একটা ফরম পুরন করতে হয়, ডলার টাকা এবং রুপি কোনটা কি পরিমান আছে তার হিসেব দিয়ে। কাস্টমস অফিসারের সহাস্য প্রশ্ন
– কি করেন?
– আমি, প্রাইভেট জব করি।
– আপনাদের দেশের বেশীর ভাগই কি প্রাইভেট জব করে নাকি? যারা যায় তারাই প্রায় এই কথা বলে। পাসপোর্ট এ সিল মেরে বলছে, আমাদের খুশি করবেন না?
– আমি বললাম কিভাবে খুশি করব?
– কিছু দিয়ে যান।
– আমি বললাম রুপি তো করা হয় নাই আমার।
– তিনি বললেন আমরা সব নেই। দিন ১০০ টাকা দিন।
– ১০০ টাকা দিয়ে বের হয়ে গেলাম। এরা অনেক পাওয়ারফুল কিন্তু ছেছড়া!
ট্রেনে গিয়ে বসে পড়লাম। দেখি তখনো অর্ধেকের বেশী মানুষের ইমিগ্রেশন বাকি। কি আর করা নেমে এসে চা খেলাম ১৫ রুপি কাপ আর কিছু টাকা রুপি করে নিলাম। বর্ডার থেকে না ভাংগানোই ভাল। এখানে রেট কম পাওয়া যায়। সবার ইমিগ্রেশন শেষ করে ট্রেন ছাড়তে প্রায় ৬:৩০ বেজে গেল। অবশেষে চিতপুর স্টেশনে আমরা নামলাম রাত সাড়ে আটটায়। স্টেশন থেকে ট্যাক্সি নিয়ে চলে গেলাম মারকুইস স্ট্রিট। হোটেল আফসায় আগে থেকে ফোন করে রেখেছিলাম বাংলাদেশ থেকে কিন্তু গিয়ে দেখি কোনো রুম খালি নেই। অবশেষে হোটেল ভি আই পি কন্টিনেন্টাল এ উঠে পড়লাম ২৫০০ টাকা এক রাতের জন্য। কোলকাতা হোটেল ভাড়া একটু বেশী আর আমি একটু সুচিবাই টাইপের, অপরিচ্ছন্ন হোটেলে থাকতে পারিনা। ফ্রেশ হয়ে কস্তুরি (মারকুইস স্টিটের নামকরা হোটেল) থেকে খেয়ে নিলাম আর নিউ গংগা থেকে ডলার ভাংগিয়ে রুপি করে নিলাম। হোটেল রুমে গিয়ে ঘুম।

দ্বিতীয় দিন ২১ শে অক্টোবর
সকালে উঠে গোসল দিয়ে ফ্রেশ হয়ে নিলাম। আগের রাতে হোটেল ম্যানেজারকে বলে রেখেছিলাম ট্যাক্সি যোগার করে রাখতে, সেই মোতাবেক ট্যাক্সি হাজির। ৮:৫০ এ আমাদের ফ্লাইট দিল্লীর উদ্দেশ্যে। হোটেল থেকে রওনা হলাম ৬:৩০ এ। আধা ঘন্টার মধ্যে বিমানবন্দরে পৌঁছে গেলাম। কোলকাতার রাস্তায় জ্যাম নেই বললেই চলে। ডিজিটাল সিগনাল সিস্টেম ১০ সেকেন্ড করে সিগনাল। চেক ইন করে বোর্ডিং পাস নিয়ে প্লেনে গিয়ে উঠে বসলাম। যথাসময়ে প্লেন ছাড়ল। সকাল এগারোটায় দিল্লী বিমানবন্দর থেকে বের হলাম। ট্যাক্সি নিলাম আইএসবিটি পর্যন্ত। যেতে যেতে ট্যাক্সিওয়ালার সাথে কথা হচ্ছিল কোথায় যাব কি সমাচার। ফাজিল আমাদের নিয়ে গেল এক এজেন্টের কাছে যারা নাকি ভলভো বাস পরিচালনা করে দিল্লী থেকে মানালী পর্যন্ত। আমি আগে থেকেই খোজ খবর নিয়ে গেছি এইচ আর টি সি ভলভো বাসে যাব। তাই ড্রাইভারকে ঝারি দিলাম হালকা, আমাদের সোজা আই এস বিটি নিয়ে চলেন। বাসস্টপেজ এ নামলাম ১২ টার আগেই। ট্যাক্সি ভাড়া ৪০০। খুজে বের করলাম ২৯ নাম্বার কাউন্টার থেকে মানালির টিকেট পাওয়া যাবে। বিশ্রামাগারে বসে একটু বিশ্রাম নিলাম। টিকেট কাটলাম ২ জন মানালীর জন্য ৩০০০ রুপি। বাস বিকাল ৬:৩০ টায়। হালকা একটু নাস্তা সেরে বেরিয়ে পড়লাম। হাতে কিছুটা সময় আছে ইন্ডিয়া গেট আর রেড ফোর্ট টা দেখব বলে ট্যাক্সি ঠিক করলাম ৩৫০ রুপি দিয়ে। ঘুরে এসে যথাসময়ে বাসে উঠে বসলাম। মজার বিষয় হল বাস ছাড়ল ঠিক সময়ে এক মিনিট আগেও না পরেও না। দিল্লী থেকে যতই উত্তরে যাচ্ছি ঠান্ডার প্রকোপ বাড়ছে। রাতে বাস কোনো এক হরিয়ানার ধাবায় দাড়াল কিছু না বুঝে দাম না শুনে অর্ডার দিয়ে ৪৫০ রুপি গেল জলে খাওয়া কিছুই হল না সব ঝাঝালো আইটেম। বাসে উঠে ঘুমিয়ে পড়লাম। সকালে দেখি পাহারের আঁকাবাঁকা পথে বেয়ে বাস ছুটে চলেছে। দুই পাশে আপেলের বাগান দু চারটে আপেল আছে গাছে। আপেলের সিজন শেষের দিকে তাই গাছ অনেকটাই ফাকা।

তৃতীয় দিন ২২ শে অক্টোবর
মানালী মল রোডে পৌঁছলাম সকাল আটটার দিকে। এক নজর চারিদিকে তাকিয়ে দেখে নিলাম প্রকৃতি অপরুপ সৌন্দর্যে সেজেছে এখানে। মলে নেমেই দেখেশুনে হোটেল নিয়ে নিলাম। হোটেল হোয়াইট তারা ভাড়া ১০০০ রুপি প্রতি রাত। এখানে ৪০০ রুপি থেকে হোটেল পাওয়া যায়। ফ্রেশ হয়ে নাস্তা অর্ডার করলাম হোটেলে, ৫ মিনিটের মধ্যে নাস্তা হাজির। আজ বিকেলে আনুমানিক ১ টার দিকে লোকাল সব সাইট ঘুরে দেখব আর পরদিন রোথাং যাব বলে ট্যাক্সি ঠিক করলাম লোকাল সাইটের জন্য ৮০০ আর রোথাং এর জন্য ২৫০০। খেয়ে দিলাম এক ঘুম। ঘুম থেকে উঠে ফ্রেশ হয়ে খেয়ে নিচে নামলাম। ট্যাক্সি হোটেলের নিচেই দাঁড়িয়ে ছিল। বেরিয়ে পড়লাম। হাদিম্বা মন্দির,তারপর পাশেই আরও একটা মন্দির, ক্লাব হাউজ, হিম ভ্যালি, বিয়াস নদি দেখে দিন পার করে দিলাম।

চতুর্থ দিন ২৩ শে অক্টোবর
ট্যাক্সি হোটেলের নিচে দাঁড়িয়ে। ফ্রেশ হয়ে নাস্তা করে নিচে নামলাম। রওনা হলাম রোথাং এর উদ্দেশ্যে। পাশের পাহারের উপড় মেঘ আছড়ে পড়ছে, একটার উপড় আরেকটা লুটোপুটি খাচ্ছে। আর আমাদের ট্যাক্সি পাহারের ঢালু রাস্তা বেয়ে ধীরেধীরে ঊঠছে চুড়ার দিকে। পথ থেকে বরফে যাওয়ার পোশাক ভাড়া নিলাম ৩০০ রুপি, মোটা মোজা ১০০ টাকা ১ জোড়া। প্রকৃতি এত সুন্দর হতে পারে নিজের চোখকেও বিশ্বাস করতে পারছিলাম না। অবশেষে আমরা প্রায় ২ ঘন্টা পর পৌঁছলাম রোথাং এ। বরফ দেখে কি অবস্থা হয়েছিল তা ভাষায় প্রকাশ করার মত না। আমি পিচ্চিদের মত ছুটাছুটি শুরু করে দিলাম। বরফ হাতে নিয়ে টিকতে না পেরে এক জোড়া হ্যান্ড গ্লোভস নিলাম ১০০ রুপিতে। বরফ ছোড়াছুঁড়ি পর্ব শেষ করে হোটেলে ফিরে এলাম। বিকেলটা মলে ঘুরে কেনাকাটা করে কাটিয়ে দিলাম। মানালীর ড্রাইভারের মাধ্যমে সিমলা যাওয়ার একটা ট্যাক্সি ঠিক করলাম ২৭০০ রুপিতে। এখান থেকে এইচ আর টি সি এর ডিলাক্স বাস যায় সিমলা পর্যন্ত ভাড়া ৮০০ রুপি করে। আমি ট্যাক্সি বেছে নিলাম নিজের মত করে যাব বলে।

পঞ্চম দিন ২৪শে অক্টোবর
মানালী থেকে রওনা হলাম সকাল সাড়ে সাতটার দিকে। আধা ঘন্টার মধ্যে কুল্লু পৌঁছলাম। কুল্লু কিন্তু শালের জন্য বিখ্যাত। এখানকার শাল অনেক ভাল। আমার অফিসের বস ইন্ডিয়ান উনার কাছে থেকে শোনা। শাল ফ্যাক্টরি থেকে কয়েকটা শাল কিনলাম বেশ সাশ্রয়ী দামে। একটু যেয়ে পাঞ্জাবী এক ধাবায় নাস্তার জন্য দাড়ালাম। এদের সব খাবারে এক ধরনের মসলা ব্যবহার করে, আমার এত বিশ্রী লাগে! মুখেই তুলতে পারিনা। কোনোমতে দু লোকমা খেয়ে আবার রওনা হলাম। এই মানালী থেকে সিমলা আসার রাস্তাটা অনেক সুন্দর তাই দিনে ভ্রমন করাই বুদ্ধিমানের কাজ। আসার পথে প্যন্দহ ড্যাম পরবে এক কথায় অসাধারন। সবুজ পাহারে ঘেরা নীল পানির আধার চোখ ধাঁধানো জিনিস। পাহাড়, সবুজ আর পাইন গাছের বন পেরিয়ে ৯ ঘন্টা পর আমরা পৌঁছলাম শিমলাতে। ড্রাইভারের এক পরিচিতের মাধ্যমে হোটেল ঠিক করলাম ১৫০০ প্রতি রাত হিসেবে কিন্তু কথা ছিল হোটেল পছন্দ না হলে নিব না। মল এর পাশেই হোটেলের অবস্থান। পজিশন আর হোটেলের পরিচ্ছন্নতা দেখে পছন্দ হয়ে গেল। উঠে পড়লাম। শিমলা হিমাচলের রাজধানী তাই এখানে খরচ একটু বেশী। ১০০০ থেকে ২০০০ এর মধ্যেই হোটেল নিতে হবে। ফ্রেশ হয়ে মলে বেরিয়ে পরলাম। যেহেতু সারাদিন জার্নি করে ক্লান্ত তাই বেশী সময় ঘোরাঘুরি না করে হোটেলে এসে রাতের খাবার খেয়ে ঘুমিয়ে পরলাম। রাতের খাবার ২০০ টাকায় দুইজন।

ষষ্ঠ দিন ২৫ শে অক্টোবর
ট্যাক্সি রিজার্ভ সারাদিন ঘোরাঘুরি ১০০০ রুপি। সকাল ১০ টায় বের হলাম। প্রথমে হিপ হিপ হুররে। এটা পাহাড়ের গা ঘেষে গড়ে তোলা এমিউজমেন্ট পার্ক। এন্ট্রি ফি ২০০ টাকা প্রতিজন। তারপর কুফরি। এখানে ঘোরায় চড়ে পাহাড়ের চুড়ায় উঠতে হয় ২৮০০ মিটার উপড়ে। ঘোড়া উঠা চার্জ ৫২০ জনপ্রতি। বিকেলে শিমলা মলে চলে এলাম। এখানে রিটজ, মল রোড, স্ক্যন্ডাল পয়েন্ট, জাকু টেম্পল দেখলাম। পুরো বিকেলটা কাটিয়ে দিলাম মল রোডে। শিমলা সত্যিই একটা দেখার মত যায়গা। পাহারে গা বেয়ে বেয়ে সুনিপুনভাবে গড়ে তোলা শহর, ছিমছাম রাস্তা দেখলে যে কারো চোখ জুড়িয়ে যাবে। বিকেলে স্ক্যান্ডাল পয়েন্ট থেকে দিল্লীর টিকেট কাটলাম HRTC AC VOLVO BUS এ ৯০২ রুপি জনপ্রতি। রাতে হোটেল যেয়ে ঘুমিয়ে পড়লাম। শিমলায় কোনো কেনকাটা নয় কারন এখানে নিজস্ব কোনো ইন্ডাস্ট্রি নেই তাই জিনিসপত্রের দাম বেশি। একটা জিনিস খুব চলে এখানে সেটা হল বিভিন্ন ধরনের মদ।

সপ্তম দিন ২৬ শে অক্টোবর
সকালে উঠে হোটেল চেক আউট করে বেরিয়ে পরলাম ট্যাক্সি নিয়ে ISBT এর উদ্দেশ্যে। এটা মল রোড থেকে ৭ কিলো দূরে। ট্যাক্সি ভাড়া ৩০০ রুপি। বাসে উঠে বাংলাদেশী এক কাপল পেলাম। আলাপ করে খুব ভাল লাগল। এক সাথে দিল্লী আসলাম। পৌঁছলাম বিকেল ৫:০ টায়। ৩৫০ টাকায় ট্যাক্সি নিয়ে পাহারগঞ্জ চলে গেলাম। হোটেল ঠিক করলাম ৭০০ রুপি প্রতি রাত। হিসেব করে চলা শুরু করেছি কারন টাকা ফুরিয়ে আসার পথে। সন্ধায় বের হয়ে ট্যুরিস্ট ইনফরমেশন বুথ থেকে ডলার ভাংগালাম ৬৪ রুপি করে। পরের দিন শুক্রবার। আমাদের প্লান ছিল আগ্রা যাব পরের দিন কিন্তু সেটা হলনা। প্লান করলাম শুক্রবার দিল্লীর লোকাল সাইট দেখব আর শনিবার আগ্রা। সে অনুযায়ী ট্যুরিস্ট বাসের জন্য বুকিং দিয়ে দিলাম। খুজে কলকাতার মালিকের এক হোটেল খুজে বের করে ১৫০ টাকা থালি হিসেবে খেয়ে হোটেলে এসে ঘুমিয়ে পরলাম। পাহারগঞ্জে নন এসি হোটেল ৬০০-১০০০ টাকায় আর ১০০০-২০০০ টাকায় এসি হোটেল পাওয়া যায়।

অষ্টম দিন ২৭ শে অক্টোবর
ট্যুরিস্ট বাসে করে বিরলা মন্দির, প্রেসিডেন্ট হাউজ, ইন্ডিয়া গেট, কুতুব মিনার, লটাস টেম্পল, রাজঘাট (গান্ধীজীর সমাধী), রেড ফোর্ট দর্শন। রাতে চাদনি চকে কেনাকাটা আর জামা মসজিদের পাশে চিকেন বিরিয়ানি খাওয়া দাওয়া শেষে হোটেলে ফিরে এলাম। ভাল কথা চাদনি চকের হলদিরাম বেকারি থেকে দিল্লীর প্রায় ১০-১২ রকমের লাড্ডু সব গুলা একটা করে খেয়ে এসেছি এক কথায় অসাধারন।

নবম দিন ২৮ শে অক্টোবর
ট্যুরিস্ট বাসে করে আগ্রা যাত্রা। ট্যাক্সি রিজার্ভ ভাড়া ৪০০০ এর কাছাকাছি। আমার টাকা প্রায় শেষ পর্যায়ে তাই ট্যুরিস্ট বাসেই গেলাম। ট্যুরিস্ট বাসের একটা পেইন হলো এরা বেজায়গায় দাঁড়িয়ে সময় নষ্ট করে যেখানে আপনার কোনো প্রয়োজন নেই। প্রথমে আগ্রা ফোর্ট টিকেট ৮০ রুপি করে তারপর লাঞ্চ বিরতি। ২:০ টার দিকে তাজমহল ঢুকলাম টিকেট ৫৩০ রুপি করে। এখানে পাস্পোর্ট এবং ভারতীয়দের আধার কার্ড চেক করে। সো সাবধান। রাতে হোটেলে ফিরলাম ১২ টার দিকে। মথুরা এবং বৃন্দাবন ও দেখাইছে কিন্তু আমরা নামি নাই বাস থেকে।

দশম দিন ২৯ শে অক্টোবর
সকালে হোটেকে চেক আঊট করে অটো নিয়ে বের হয়ে পড়লাম দিল্লী বিমানবন্দরের উদ্দেশ্যে। ৯:৫০ এর ফ্লাইটে ইন্ডিগো এয়ারে কোলকাতা নামলাম ১২ টার দিকে। হোটেলে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে ভিক্টরিয়া মেমোরিয়াল এ চলে গেলাম। এন্ট্রি ফি বাগান+মিউজিয়াম ২০ রুপি। হোটেল নিয়েছিলাম মারকুইস স্ট্রিটে আর এটা ওর কাছাকাছি। ভিক্টোরিয়া ঘুরে রাতে ফিরে মারকুইস স্ট্রিটের খালিক হোটেলে খেয়ে রাতে শুয়ে পরলাম।

একাদশ দিন ৩০ শে অক্টোবর
গরিয়া হাট শাড়ি কিনতে গেলাম আদি ঢাকেশ্বরী বস্ত্রালয় থেকে শাড়ি কিনলাম। এখানে শাড়ির প্রচুর কালেকশন। বিকেলে চলে গেলাম কোলকাতা নিউ মার্কেট। কেনাকাটা শেষে রাতে খাবার খেয়ে হোটেল ঘুম।

দ্বাদশ দিন ৩১ শে অক্টোবর
ইউ এস বাংলা এয়ারলাইন্সে টিকেট কাটা ৩:৪০ এ ফ্লাইট। চকলেট আর সাবান কিনা বাকি ছিল। সকালে নাস্তা করে নিউ মার্কেট গেলাম আবার। শ্রী লেদার থেকে ইচ্ছেমত জুতা স্যান্ডেল কিনে ব্যাগ ভরে ফেললাম, চক্লেট কিনলাম। ব্যাগপত্র গুছিয়ে হোটেল চেক আউট করলাম ১২ টার আগেই। ট্যাক্সি নিয়ে বিমানবন্দর রওনা হলাম। ট্যাক্সি ভাড়া ৩০০ । ইমিগ্রেশন পার হয়ে বোর্ডিং পাস নিয়ে যথাসময়ে বিমানে উঠে বসলাম। ইউএস বাংলার সার্ভিস আমার ধারনাই পালটে দিল। এত সুন্দর পরিসমাপ্তির জন্য ইউএস বাংলাকেও ধন্যবাদ। পরিশেষে শুধু এই টুকুই বলতে চাই টিওবি না হলে আমার পক্ষে একা এই ট্যুর করা সম্ভব হত না। আমার অশেষ কৃতজ্ঞতা টিওবির প্রতি।

মোট খরচঃ ৮৬০০০ দুইজন (আমি আর আমার ওয়াইফ) ট্রান্সফার+হোটেল+খাওয়া

Post Copied from:Anwar Hossain>Travelers of Bangladesh (ToB)

Dhaka – Kolkata – Simla – Manali – Dhaka

Duration: 11 Night 10 Days
 Places: Dhaka – Kolkata – Simla – Manali – Dhaka

* Day 01:

08:30 am -
Will Leave Dhaka for Kolkata by Train
Over Night Stay @ Hotel in Kolkata

* Day 02:
 

12:00 pm – Will leave Kolkata for Delhi By Ndls Duronto Express Train.

* Day 03:

Whole Day train journey & Reach Delhi @ 6.00 am.
Will stay & sight seeing @ Delhi whole day
Will Leave Delhi @ 11.00pm for Shimla by BUS.

* Day 04:

09:00 am Reach Shimla After breakfast take hotel
12.00 Shimla local sight seeing, shopping
Night Stay @ Hotel in Shimla

* Day 05:

07:00 am After breakfast proceed to Manali, arrival Manali
4.00 pm Hotel stay @ Manali
5.00 pm Local Sight Seeing @ Manali

* Day 06:

07:00 am After breakfast full day sight seeing at Manali with Rotang Pass & Solang Vally
Hotel Stay @ Manali

* Day 07: 

Local Sight Seeing @ Manali
Night Hotel Stay @ Manali

* Day 08: 

After breakfast Local Sight Seeing
At 03.00 pm start for Chandrigor rail station & reach @ 10 pm

* Day 9:

At 01.10 am start for Hawrah by Kalka Mail Express (Train), over night train journey.

* Day 10:

Reach @ Kolkata hotel stay
Shopping
Start for Dhaka