যেখানে নৌকা হাওয়ায় ভাসে

Umngot নদী, ডাউকি, মেঘালায়, ভারত

 

প্রথম যখন ছবি দেখি তখন মনে করেছিলাম এডিট করা । পরে ইন্টারনেট ঘেটে এবং ইউটিউবে ভিডিও দেখে কিছুটা আশস্ত হলাম যে আসলে ই এমন কিছু আছে । এরপর ধারস্ত হলাম মেঘালয় বিশেষজ্ঞ বড় ভাইয়ের কাছে । সময়টা ছিলো মে ২০১৭ । ভাই বললেন স্বচ্ছ পানি আর ভাসমান নৌকার দেখা পাওয়া যায় নভেম্বর থেকে। কিন্তু জুন/জুলাই মাসে দেখা যায় সম্পূর্ণ ভিন্ন এক মেঘালয়কে, যখন এর ঝর্ণাগুলো হয়ে উঠে চির যৌবনা । ঝর্ণার প্রতি ভালোবাসা থেকে জুনেই করে ফেললাম ডাউকি পোর্ট দিয়ে মেঘালয়ের ভিসা । ঘুরে আসলাম অসাধারন এবং অকল্পনিয় কিছু ঝর্ণা ( ঐ দিকে আর যাবো না, অনেক কষ্ট হয়েছিলো 😛 ) । এতো সুন্দর ট্রিপের পরও মনের ভিতর উকি দিচ্ছিলো সেই ভাসমান নৌকার ছবি ।
অবশেষে সময় আসলো, ৩০ নভেম্বের,২০১৭ । আমাদের এবারে প্লান ছিলো ভারতের সবচেয়ে উঁচু ঝর্ণা “নোহকালিকায় ফলস” এর আপস্ট্রিমে যাওয়া, “কংথং” নামে একটি অদ্ভুত গ্রামে যাওয়া যেখানে সব মানুষের নামের পাশা পাশি থাকে একটা “Tune” এবং Umngot নদীর স্বচ্ছ পানিতে বোটিং করা ।
৩০ নভেম্বর,২০১৭ তারিখে সায়দাবাদ থেকে “আহামেদ পরিবহনে” আমাদের যাত্রা শুরু হয় । যাত্রার আগে শুনেছিলাম আহামেদ পরিবহন লোকাল টাইপ বাস । এই বাসে যাওয়ার কারন হলো এটি একমাত্র বাস যা সরাসরি জাফলং যায়, যা আমাদের সকাল ৭ টায় তামাবিল বর্ডারে নামিয়ে দিতে পারবে যেখানে সিলেট এর বাসে গেলে তামাবিল যেতে যেতে ৯/১০ টা বেজে যায় । রাত ১০ টার বাস ঠিক ১০টায় ই ছেড়ে দিলো ( লোকাল বাস যদি এমন ই হয় তাহলে সব বাস লোকাল হয়ে যাওয়া ই ভালো 😛 ) । সকাল ৭টায় তামাবিল পৌছানোর কথা থাকলেও বাস থেকে মালামাল লোড আনলোড করতে সময় নষ্ট হওয়ায় আমরা বর্ডার পৌছাই ৭.৪৫ এর দিকে । এই বর্ডারে সাধারনত ৯টার আগে ইমিগ্রেশনের কার্যক্রম শুরু হয় না কিন্তু শুক্রবার শ্যামলি বাসের শিলং প্যাকেজ এর সার্ভিস থাকে বলে আগে ভাগেই কার্যক্রম শুরু হয় । এই সুবাধে তাড়াতাড়ি ইমিগ্রেশনের কাজ শেষ করার সুযোগ হয় । নাস্তা এবং দুই বর্ডারের কাজ শেষ করতে করতে প্রায় ৯.৩০ বেজে যায় (বাংলাদেশি সময়)। এবার মোবাইল রিচার্জ এবং গাড়ি রিজার্ভ করার পালা । কিন্তু আমাদের কংথং যাওয়ার কথা শুনে কোন গাড়ি ই যেতে রাজি হচ্ছিলো না কারন অনেক দূরের পথ এবং রাস্তা ভাঙা । যাই হোক অনেক কষ্টে একটি গাড়ি ম্যানেজ করা হয় এবং শুরু হয় আমাদের এবারের অসাধারন যাত্রা। প্রথমে ই যাই ডাউকির স্বচ্ছ পানিতে বোটিং করতে । ডাউকি বাজার থেকে হেঁটে ই বোটিংর এর জায়গায় যাওয়া যায় । নদীর পানি দেখে সবার চোখ যেন কোটর থেকে বেরিয়ে আসবে এই অবস্থা । পানি এতো ই স্বচ্ছ যে নদীর নিচের পাথর এবং মাছ খুব সহজেই দেখা যাচ্ছিলো আর দেখতে পাই সেই বহুল কাংখিত ভাসমান নৌকা । যেখান থেকে বোটিং শুরু হয় সেই জায়গা থেকে আমাদের জাফলং দেখা যায় । দেখে বার বার আসফোস হচ্ছিলো আমাদের নদীর অংশ কিভাবে আমরা ধ্বংস করে ফেলেছি । নদীতে ২০/৩০ মিনিট বোটিং করে রওনা দেই কংথং গ্রামের পথে । মাঝে দুপুরের খাবারে জন্য বিরতি নেয়া হব । কংথং যেতে যেতে বিকাল ৫টা বেজে যায়। গ্রামে পৌছে ই শুনতে পাচ্ছিলাম এপাশ ওপাশ থেকে পাখির ডাকের কলরব । এটাই “Tune” যা গ্রামের মানুষ একজন আর একজনকে ডাকার ক্ষেত্রে ব্যবহার করে । আমাদের দেখে গ্রামের মানুষ ভালো ই অবাক হচ্ছিলো এতে বুঝলাম টুরিস্ট এখানে খুব বেশী আসে না । এই গ্রামে রাতে থাকার জন্য কটেজ আছে কিন্তু আমাদের সময় কম বিধায় মাত্র এক ঘন্টা ঐ গ্রামে থেকে চলে আসি চেরাপুঞ্জিতে ।
২ ডিসেম্বর “নোহকালিকায় ফলস” এর টপ এবং ৩ ডিসেম্বর সোনেংপ্যাডং ঘুরে ফিরে আসি বাংলাদেশে ।

যেভাবে যাবেন : ঢাকা>সিলেট>তামাবিল>ডাউকি

যা থাকা লাগবে : পাসপোর্ট , ডাউকি পোর্ট দিয়ে ভারতের ভিসা

খরচ : ভিসা ফি:৬০০ টাকা, ট্রাভেল ট্যাক্স:৫০০ টাকা
আমারা মোট ৯ জন ছিলাম, ভিসা ফি এবং ট্রাভেল ট্যাক্স বাদে ২ রাত ৩ দিনে আমাদের খরচ হয়েছিলো জনপ্রতি ৭৮০০ টাকা ।

Post Copied From:Rakib Apo‎>Travelers of Bangladesh (ToB)

Top of Nohkalikai Waterfall

যারা ভারতে চেরাপূঞ্জি ঘুরতে যান তাদের কাছে অন্যতম দশর্ণীয় স্থান হচ্ছে “নোহকালিকায় জলপ্রপাত” । এটি ভারতে সর্ব উঁচু জলপ্রপাত যার উচ্চতা ১১১৫ ফিট । সাধারনত অনেক দূরের ভিউ পয়েন্ট থেকে ই এই জলপ্রপাত দেখতে হয় । কিন্তু ইউটিউবে ভিডিও দেখলাম যে এই জলপ্রপাতে “আপ স্ট্রিমে” যাওয়া যায় । খোঁজ খবর নিয়ে জানতে পারলাম নভেম্বের আগে নোহকালিকায় এর টপে যাওয়ার রাস্তা অফ থাকে। আমরা ২রা ডিসেম্বরের ,২০১৭ তারিখে নোহকালিকায় এর টপে যাই ,সাথে বোনাস হিসেবে পেয়ে যাই “তালাই” নামক অসম্ভব সুন্দর একটি জলপ্রপাত। টপে যাওয়ার শুরু দিকে সহজ ট্রেকিং কিন্তু শেষের দিকে গর্তের ভিতর দিয়ে যেতে হয় যেখানে সামান্য রিস্ক রয়েছে। ট্রেকিং করে নোহকালিকায় এর টপে যেতে আমাদের সময় লেগেছিলো প্রায় ১ ঘন্টা ।

যেভাবে যাবেন : ঢাকা>সিলেট>তামাবিল>ডাউকি>চেরাপুঞ্জি>নোহকালিকায় এর টপ

যা যা লাগবে : ডাউকি পোর্ট দিয়ে ভারতে ভিসা

খরচ: ডাউকি থেকে রিজার্ভ সুমো/জীপ ৩০০০-৩৫০০ রুপি তে চেরাপুঞ্জি, চেরাপুঞ্জি থেকে রিজার্ভ সুমো/জীপ ১০০০ রুপি নোহকালিকায় এর কাছাকাছি , টিকেট জনপ্রতি ৫০ রুপি , গাইড ১০০০ ( আমারা অন্য একটা জলপ্রপাতে গিয়েছিলাম তাই গাইড খরচ বেশি হয়েছে )।

Post Copied From:Rakib Apo>Travelers of Bangladesh (ToB)

উমেংগট নদী- মেঘালয়ের অদেখা জান্নাত!

যেখানে আকাশ ধুয়ে সাজিয়েছে নিজের যতো রঙ, যেখানে প্রকৃতি মিশেছে হয়ে সবুজ তরঙ্গ…

সিলেট শহর থেকে প্রায় আড়াই ঘন্টার পথ, সেখানে তামাবিল বর্ডার পার হয়ে জাষ্ট ১৫ মিনিটের দূরত্বেই বাস করছে এই সৌন্দর্যের খনি।

ডাউকি, মেঘালয়ের রাজ্যের খাসিয়াদের ছোট এক রাজত্ব ,যেখানে খুব বেশী মানুষের আনাগোনা নেই। নেই ব্যস্ত নাগরিক জীবনের পদচারণ।

আছে শুধু প্রকৃতির ঢেলে দেয়া সৌন্দর্যের এক ফালি সবুজ প্রতিকৃতি যেখানে নিজেকে হারায়ে যেন নিজেকেই পাওয়া যায় নতুন রুপে…।

সারাদিনের জন্য চলে যেতে পারেন ছোট এক জীপ ভাড়া নিয়ে কিংবা নিজের প্রাইভেট কার থাকলে কিংবা সিলেট থেকে তামাবিল পর্যন্ত যাওয়া যে কোন পরিবহনে চড়ে, ফ্যামিলি কিংবা বন্ধুদের সাথে। এর জন্যে থাকতে হবে পাসপোর্ট, ট্রাভেল ট্যাক্স আর ডাউকির করা ভিসা।

তামাবিল পাড় হয়ে ওপারেই পেয়ে যাবেন অনেক ট্যাক্সি যাদেরকে বললে আপনাকে নিয়ে যাবে কাঙ্ক্ষিত সেই স্বচ্ছ নদীর পারে।

এটা মূলত বাংলাদেশ আর ইন্ডিয়ার মধ্যকার মাল আনা নেয়ার যে ব্রীজ রয়েছে তা পার হয়ে যেতে হয়। সেখানে রয়েছে অসংখ্য ছোট বড় নৌকা যারা আপনাকে ৫০০ রুপীর বিনিময়ে ঘুরে দেখাবে এই প্রান্ত থেকে ওই প্রান্ত।

এখানে একটা ছোট ইনফরমেশন দিয়ে রাখা ভালো, চেষ্টা করবেন ব্রীজ পার হয়ে ওই পাড়ে যেয়ে নৌকায় উঠতে তাহলে বেশীক্ষন সময় পাবেন ঘুরে দেখার নদীটা ,আর আসল সৌন্দর্য ও মুলত ওই পাড়েই। ব্রীজের এপাড় থেকে ডাউকি ভিলেজ শুরু হলেও, বাংলাদেশের একটা সীমান্ত (জাফলং) পড়ে গেছে ওই নদীটার একটা অংশে তাই ইচ্ছা থাকলেও বেশী দূর যেতে পারবেন না নৌকা নিয়ে।

এই অংশ টাতে পাবেন প্রচুর বাংলাদেশী লোক যারা অনেকেই বৈধ কিংবা অবৈধ উপায়ে রয়ে গেছে এখানে তাই চাইলে বাংলাদেশি টাকাও নিতে পারেন সাথে, এখানে বাংলা টাকাও প্রচুর চলে। প্রতিটি নৌকায় প্রায় ৪ থেকে ৫ জন করে চড়তে পারবেন, সামনেই রয়েছে মূল ঝরনার উৎসস্থল।

নদীর পাড় ঘেষেই রয়েছে ছোট বড় অনেক পাথর, চাইলেই নেমে হেটে যেতে পারেন সামনে , করতে পারেন ছোট খাটো বনভোজন কিংবা রাত্রিকালে ফায়ার ক্যাম্প।

এখানকার বেশীরভাগ মানুষের পেশা মাছ ধরা, ইভেন বাংলাদেশীরাও মাছ ধরতে এখানেই আসে, যদিও এখন আর তেমন পারমিশন পাওয়া যায়না।

অদ্ভূত লাগে দেখতে পুরা নদীটা, যেখানে নিচে পরে থাকা অসংখ্য নূড়ি পাথর আর ছোট বড় নাম না জানা মাছ। ইচ্ছা করলেই, পা ভিজিয়ে নিতে পারেন, পারেন তৃপ্তি ভরে মুখে জলচ্ছটা দিতে। দিনের বেলাতেই এর সৌন্দর্যে জ্ঞান হারাতে হয় , পুর্নিমার রাতে না জানি কেমন লাগে একে দেখতে, ভাবতেও হারিয়ে যাচ্ছি ভাবনার অতল গহবরে।

এখানে একতা অদ্ভূত ব্যাপার রয়েছে, সবাই যদিও বলে পানি দেখতে নীল, আমরা পেয়েছি পুরাই সবুজ আবার বর্ষা ঋতুতে নাকি এটা লাল বর্ণ ধারন করে।

এখানে একটা কথা বলে নেয়া ভালো, শীতকাল বা নভেম্ভর থেকে ডিসেম্বর ই কিন্তু উপযুক্ত সময় এই নদী দেখতে যাবার কারন অন্য সময় এই নদীতে পানি এতো বেশী থাকে যে নিচের স্বচ্ছ রুপ টা দেখতে পাওয়া তখন ভাগ্যের ব্যাপার।

আলহামদুলিল্লাহ, চোখের রিযিক হয়ে গেছে এই শান্ত স্নিগ্ধ অদ্ভুত সুন্দর নদী দেখে। ছবিতে বন্দি করা যদিও সম্ভব না এই নদীর প্রকৃত রুপ তারপরেও ক্ষুদ্র চেষ্টা!

Post Copied From:Farhana Asha‎>Travelers of Bangladesh (ToB