জাফলং!!

জাফলং বেড়াতে যায়নি এমন লোক বাংলাদেশে খুব কমই আছে। আমি গিয়েছি অসংখ্যবার। জায়গাটি প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে পরিপূর্ণ বলে আমি বারবার গিয়েও অতৃপ্ত থেকেছি। যখনি সুযোগ হয়েছে তখনি যেতে এতটুকু দ্বিধা করিনি। যদিও দেশের ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা অনেক প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের লীলাভূমি এখনো আমার দেখা হয়নি। বান্দরবন, খাগড়াছড়ি, সেন্ট মারটিন যাই যাই করে এখনো যাইনি।

জানুয়ারি মাস। শীতের পুরো আমেজ চারিদিকে। কোথায় যাবো ভাবছি। হটাত সবচেয়ে প্রিয় বন্ধুর তলব। বললো, চার বছর পর বিনোদন ছুটি পেয়েছে। জাফলং যেতে চায়। আমার বাড়ী সিলেট আমাকে তার সাথে যেতেই হবে। শুধু যে যেতেই হবে তাও না, সব কিছুর ম্যানেজমেন্ট ও আমাকে করতে হবে। আমি অনুরোধটি লুফে নিলাম।

সকালে সকালে ফোন দিলাম জাফলং এর জৈনতা হিল রিসোর্টে। এক ভদ্র লোক লম্বা করে সালাম দিয়ে ফোন ধরলেন, বললেন, তিনি ওখানকার কেয়ারটেকার। আমি রুমের কথা জানতে চাইলে বললেন, মাত্র একটা ডাবল বেডেড রুম খালি আছে তাও যিনি সবচেয়ে আগে ডাচ বাংলা ব্যাংকের মাধ্যমে অনলাইনে আগে টাকা পাঠাতে পারবেন তিনিই বুকিং পাবেন। আমাকে ব্যাংক একাউন্ট নাম্বার দিতে দিতে বললেন, অনেকেই ঐ রুমের জন্য তার সাথে কথা বলেছে কিন্তু এখনও পেমেন্ট করেনি বলে বুকিং কনফার্ম হয়নি।

আমি ছুটে গেলাম ডাচ বাংলা ব্যাংকের বিজয়নগর শাখায়। আমার অফিসের এর চেয়ে কাছে ঐ ব্যাংকের আর কোন শাখা নেই। কিন্তু বিধি বাম, এতো লম্বা লাইন যে আদৌ টাকা জমা দিতে পারবো কিনা এবং পারলেও বুকিং পাবো কিনা শঙ্কিত হয়ে গেলাম। যাই হোক, অনেকক্ষণ লাইনে দাঁড়িয়ে টাকা জমা দিলাম । আবার ফোন করলাম রিসোর্টে । ততক্ষণে টাকা জমা হওয়ার খবর পৌঁছে গেছে তার কাছেও। আমাদের দুই রাত থাকার সংস্থান হলো।

সেদিন শুক্রবার। ফজরের আজানের সাথে সাথেই আমরা রওয়ানা দিলাম। তখনো আলো আধারির খেলা, রাস্তা ঘাট ফাঁকা। আমরা টঙ্গি ষ্টেশন রোড দিয়ে উঠে গেলাম কালিগঞ্জ ভৈরব সড়কে। এই রাস্তায় সকাল সকাল রওয়ানা দেয়ার সুবিধা হলো যানজট এড়িয়ে দ্রুত ভৈরব পৌঁছে যাওয়া যায়। আমরা ভৈরব ব্রিজ পেরিয়ে সিলেট রোডে উঠে গেলাম ঘনটা দেড়েকের মধ্যে। এর মধ্যে নাস্তা সেরে নিলাম উজান ভাটিতে। সিলেটের পথে এটাই ভালো রেস্তোরা।

তারপর সিলেট রোডে গাড়ী ছুটছে। এই রোডে গাড়ী চালানোর মজাই আলাদা। ১৫০০ সি সির টয়োটা করোল্লা , যেন সুপারিসর রানওয়ে তে দৌড়চ্ছে , যে কোন সময় টেক অফ করবে। দুইপাশের দৃষ্টিনন্দন দৃশ্যাবলী যেন পলকে পলকে হারিয়ে যাচ্ছে। আমরা মাত্র পাঁচ ঘণ্টায় সিলেট শহরের শেষ প্রান্ত টিলাগড় পেরিয়ে জাফলং রোডে উঠে গেলাম। সিলেট জাফলং রোড আর সুন্দর, সুপারিসর ঝকঝকে। হৃদয়ের মাঝে উৎসারিত হতে লাগলো ভালো লাগার উথাল পাতাল ঢেউ, ছুটে চললো গাড়ী, অপরূপ সুন্দরকে চিরে চিরে এগিয়ে যাচ্ছি আমরা। চারিদিকে সবুজ প্রকৃতি টিলা, চা বাগান আর সুদূরে ভারতের বড় বড় পাহাড় নজর কেড়ে নিচ্ছিল। পরিস্থিতিটা এমন যে কোনটা রেখে কোনটা দেখি।

শুক্রবার হওয়ায় আমরা গাড়ীর গতি পেলাম অনেক বেশী। দুপুর দেড়টার মধ্যে আমরা পৌঁছে গেলাম রিসোর্টে। গাড়ী দেখেই এগিয়ে এলেন রিসোর্টের কেয়ার টেকার। আমাদের অভ্যর্থনা জানালেন বিনম্র ভদ্রতায় কারণ এরি মধ্যে তার সাথে আমাদের অনেকবার কথা হয়ে গেছে। জানলাম বড় বড় দাড়িওয়ালা নুরানি চেহারার মধ্য বয়সী এই ভদ্রলোকের নাম শফিকুর রাহমান। তিনি আমাদের থাকার জায়গা বুঝিয়ে দিয়ে বললেন, পাশের রেস্তোরায় জেনো লাঞ্চ সেরে নেই। কিছুক্ষণের মধ্যে এই শফিকুর রহমান তার কিছু কিছু আচার আচরণে আমাদের সম্মোহিত করে ফেললেন। তিনি হয়ে গেলেন আমদের শফিক ভাই। রিসোর্টের দায়িত্ব ছাপিয়ে হয়ে গেলেন আমাদের কেয়ার টেকার, আমাদের গাইড।

রেস্তোরাঁয় খেতে খেতে অনুভব করলাম এখানে তৈরি খাবারের স্বাদ ব্যতিক্রমী এবং সুস্বাদু । সেদিন দুপুরে আমরা হাঁসের মাংস দিয়ে লাঞ্চ শুরু করেছিলাম এবং তারপর আরো সাতবার ঐ হোটেলে খাবার খাওয়ার সুযোগ হয়েছিল আমাদের। শফিক ভাই ডাল আর ভাত ছাড়া একি আইটেম আমাদের দুইবার খেতে দেননি। স্বাভাবিক করনেই তার সাথে আমাদের একটা বিশেষ সম্পর্ক গড়ে উঠেছিলো।

তাছাড়া শফিক ভাই আমাদের কাছে ছিলেন রহস্যময় একজন মানুষ। একজন কবি, একজন ভালো আবৃতি-কার। আমাদের তিন দিন দুই রাত তার রিসোর্টে অবস্থান কালে কমপক্ষে ২০ তি কবিতা আবৃতি করে শুনিয়েছিলেন। আর এই সবগুলি কবিতা ছিল পরিবেশ পরিস্থিতির সাথে সুনিবিড় খাপ খাওয়ানো। তিনি যেন যোগান দিয়ে যাচ্ছিলেন আনন্দ আর রোমান্টিকতার। যেমন তিনি যখন আমাদের রুম বুঝিয়ে দিচ্ছিলেন তখন সুন্দর করে আবৃতি করেছিলেন:

স্বাগতম প্রকৃতির মাঝে
অপরূপ রূপের অবলোকনে,
করেছি সামান্য আয়োজন
চোখ খুললেই জেনো দেখা যায়
আকাশের নীল, পাহাড়ের চূড়া
ঝলমলে জলপ্রপাত ঝরনাধারা
যখনি পড়বে মনে
হোক বর্ষ পরে…
মন জেনো হয় আত্মহারা…

উল্লেখ্য, আমাদের রুমের জানালা দিয়ে আমরা তখন দেখতে পাচ্ছিলাম গাঁড়ও সবুজ সুউচ্চ ভারতীও পাহাড়, গাছ গাছালী, পাহাড়িদের সুন্দর সুন্দর বাড়িঘর, ঝর্ণাধারা আর অপরূপ নীল আকাশ।

আমরা প্রথম দিন দুপুরের খাবারের পরে একটু বিশ্রাম নিয়ে চলে গেলাম জাফলং এর জলধারার। স্বচ্ছ পানি বয়ে যাচ্ছে, পানির নিচের পাথরগুলো স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে। কত যে কর্মকাণ্ড সেখানে। কেউ পাথর তুলছে, কেউ বালি, কেউবা পর্যটক দের নিয়ে ব্যস্ত। কথা হলো পাথর তুলছেন এমন একজন শ্রমিকের সাথে। জানতে পারলাম তারা যে নিখুঁত গোল গোল পাঁথরগুলো এখান থেকে আহরণ করে এগুলো বাস্তবে এখানে জন্মায় না। শত শত মাইল দূরে পাহাড় থেকে খসে পড়া এবড়ো থেবড়ো পাথরগুলো পানির স্রোতে গড়াতে গড়াতে জাফলঙে আসে, আর এই দীর্ঘ পথ পরিক্রমায় গড়াতে গড়াতে অজস্র ঘর্ষণে এগুলো গোলাকার ধারণ করে, যেটা আমরা যেন দীর্ঘ প্রক্রিয়া শেষে ফিনিসড প্রোডাক্ট হিসেবে পাই। যাই হোক, আমরা এসব দেখা শেষ করতে না করতে সন্ধ্যা নেমে এলো। ফিরে এলাম আমাদের রুমে।

রাতে শফিক ভাই এর সাথে রেস্তোরায় দেখা হলো। বর্ণনা করলাম কোথায় কোথায় গেলাম, কি কি দেখলাম। তিনি আমাদের বললেন, সব ঠিকই আছে তবে জাফলং এসে দুটি জায়গা না দেখা চলে গেলে জাফলং আসার কোনই মানে হয় না। জিজ্ঞেস করাতে বললেন, একটি হচ্ছে নৌকা নিয়ে জিরো পয়েন্টে গিয়ে দুর্লভ প্রকৃতিকে দেখা আর আরেকটি জায়গা আছে পরে আমি নিজে নিয়ে যাবো যেখানে মধ্যরাতে যেতে হবে। দ্বিতীয় যায়গাটির বিষয়ে তিনি আমাদের মধ্যে ভীষণ একটা সাসপেন্স রেখে দিলেন। উপরন্তু দ্বিতীয় জায়গাটাতে মধ্যরাতে যাওয়ার ব্যাপারটা একটু এডভেঞ্চার মনে হলেও প্রাণের গভীরে একটা ভীতি সঞ্চালিত হয়ে গেল। শফিক ভাইকে যেন আরো রহস্যময় মনে হলো।

পরের দিন আমরা নানান যায়গায় গেলাম। নৌকা দিয়ে অপারে গিয়ে উপজাতিদের আবাসস্থল, নানান কর্মকাণ্ড , চা বাগান, বন বাদাড়ে ঘুরে বেড়ালাম। তারপর বিকেলের দিকে নৌকার মাঝির সাথে চুক্তিবদ্ধ হলাম, সে আমাদের জিরো পয়েন্টে নিয়ে যাবে এবং যাবতীয় প্রাকৃতিক সৌন্দর্য দেখা শেষ না হওয়া পর্যন্ত আমাদের সাথে থাকবে। যাত্রা শুরু করতেই মাঝি বললো জিরো পয়েন্টে বেশীক্ষণ থাকা যাবে না। এখানে থাকাটা বিপদজনক ও বটে। কারণ ওইখানে যাওয়ার সাথে সাথে দুই দেশের সীমান্ত রক্ষীরা এলারট হয়ে যায় এবং সীমানা অতিক্রম না করার জন্য সতর্কবাণী দিতে থাকে। অনেক সময় বি এস এফ গুলি করে মানুষ মেরে ফেলে। এতো কিছু শোনার পরো আমরা মাঝিকে এগুতে বললাম। যতই আমরা সামনে এগুচ্ছি ততোই পানির গভীরতা বাড়ছে, বাড়ছে পানির স্বচ্ছতা। দুইধারে বিশাল বিশাল গাছ গাছালিতে ভরা সুউচ্চ পাহাড় আর মাঝখানে স্বচ্ছ প্রবহমান জলধারা। দেখা যাচ্ছিলো ধেয়ে আসা মেঘমালা সুউচ্চ পাহাড়ের গায়ে ধাক্কা খেয়ে গাছ গাছালীতে মিলিয়ে যাচ্ছে। আসলে এই অপরূপ সৌন্দর্যের বর্ণনা করার মত শব্দ ভাণ্ডার আমার নেই যা দিয়ে আমি এর ছিটে ফোটা তুলে ধরতে পারি। আমরা যখন জিরো পয়েন্টে তখন বিকেল বেলা। শফিক ভাইয়ের কথা মনে পড়লো। আসলেই এই জায়গার সৌন্দর্য অতুলনীয় যা দেখে না গেলে জাফলং এসে চলে যাওয়া অনেকটা বৃথা। আমরা জিরো পয়েন্ট থেকে সুউচ্চ পাহাড়ে ভারতীয়দের তৈরি করা রাস্তা আর দুটি বড় পাহাড়কে সংযুক্ত করে তৈরি করা ঝুলন্ত সেতু কাছ থেকে দেখে অবাক হলাম। দু একটা গাড়ীও চলছে ঐ পথ দিয়ে। চোখে পড়লো বি এফ এফ এর বিশাল ক্যাম্প। সব মিলিয়ে জিরো পয়েন্ট সত্যি নয়নাভিরাম। তখনও শীতের আমেজ রয়ে গেছে। জায়গাটায় এমন একটা হিমেল বাতাস বইছিলো, যে শীতলতার ছোঁওয়া আমি পৃথিবীর কোথাও পাইনি। আসলে জিরো পয়েন্টের সৌন্দর্য আমাদের এমনি বিমোহিত করে ফেললো যে আমাদের ফিরতে ইচ্ছে করছিলো না। যাই হোক, মনে মনে শফিক ভাইকে ধন্যবাদ দিতে দিতে ফিরে এলাম রিসোর্টে।

এরপর ডিনারের সময় যথারীতি শফিক ভাইয়ের সাথে দেখা। বার বি কিউ চলছে। আমরাও অংশগ্রহণ করলাম। তিনি আমাদের রাত বারটায় টাইম দিলেন। গাড়ী ড্রাইভার এবং আমাদের থাকতে বললেন রিসোর্টের গেটে। আমাদের মধ্যে একটা চাপা উত্তেজনা কাজ করতে লাগলো। শফিক ভাই আমাদের কোথায় নিয়ে যাবে। এই পাহাড়ি জনপদে মধ্যরাতেই বা কেন ইত্যাদি ইত্যাদি।

ঠিক বারোটায় আমরা গাড়ী নিয়ে রিসোর্টের গেটে থামতেই শফিক ভাই ড্রাইভার এর পাশে ফ্রন্ট সিটে বসলেন। পেছনে আমরা দুই বন্ধু। এখন স্টিয়ারিং ড্রাইভার এর কাছে থাকলেও গাড়ির যাত্রাপথ নির্ধারণ করতে লাগলেন তিনি। শীতের রাত দুর্গম পাহাড়ি পথে এগিয়ে যাচ্ছি আমরা। হটাত আমাদের চোখে পড়লো বিশাল এক পাহাড়, ঝলমলে জেনো এক নিয়ন আলোর কুণ্ডলী। এত আলো কোঁথা থেকে আসছে তখন বুঝতে পারছিলাম না। আর বেশ খানিকটা পাহাড়ি পথে এগুনোর পর সেই পাহাড়ি দৃশ্য আমাদের কাছে ঝকঝকে হয়ে উঠলো। আমরা তখন ভারতের ডাউকি নগরীর নিকটতম বাংলাদেশের সীমান্তে অবস্থান করছি। পুরো পাহাড়টা আমাদের কাছে ছবির মত মনে হচ্ছিল। এত সুন্দর করে তৈরি করা প্রতিটি বাড়ী বৈচিত্র্যময় মনে হোল । আমার জীবনে আমি অনেক দৃশ্য দেখছি, অনেক জায়গায় ঘুরেছি কিন্তু ডাউকি নগরীর এই সৌন্দর্যের মত সুন্দর খুব কমই দেখেছি। মধ্যরাতে যদিও তখন ডাউকি নগরী ঘুমিয়ে ছিল কিন্তু তার বাড়ী ঘর রাস্তা ঘাঁট প্রতি ইঞ্চি জায়গা আমরা দেখতে পাচ্ছিলাম জেনো স্বর্গের কোন সুনিপুণ কারিগর মর্তে নেমে এসেছিলেন এই নগরী বানাতে। যাই হোক দিনের বেলা জাফলঙে আমরা যে ডাউকি নগরী দেখি, আসলে সেটা না দেখার মতই। তারপর ওখানে আমরা আরেকটু থাকতে চাইলে শফিক ভাই বললেন, এটা একদম বাংলাদেশ ভারতের সীমান্ত রেখা, এখানে বেশীক্ষণ থাকা ঠিক হবে না। আমরা আবার ডাউকি নগরীকে পেছনে ফেলে ছুটলাম রিসোর্টের দিকে। ভাবতে লাগলাম এক শফিক ভাই আমাদের যা দেখালো বিগত সময়ে কমপক্ষে বিষবার এসেও আমি জাফলঙের এই সৌন্দর্য দেখিনি।

পরের দিন দুপুরে আমরা আবার ঢাকার পথে রওয়ানা দিলাম । মিস করতে লাগলাম শফিক ভাই, জিরো পয়েন্ট আর ডাউকি নগরীকে। আজো আমি মিস করি শেষবারের দেখা সেই জাফলং

Post Copied From:Wahid Siddiquey‎>Travelers of Bangladesh (ToB)

শীতের সীজনে সিলেটে ভ্রমন

এই শীতের সীজনে #সিলেটে ১ দিনের #লালাখাল এবং #জাফলং ভ্রমনের ট্যুর প্লান । আর এখন জাফলং এবং লালাখাল ভ্রমণ এর বেস্ট সময়। সিলেট এ শীতের সিজনে ১ দিনের ভ্রমণ এর জন্য এইটা আমার ব্যাক্তিগত এবং পছন্দনীয় প্লান । ।।
————————————————————————————
এক দিনে লালাখাল এবং জাফলংঃ সবচেয়ে ভাল হয় আগের দিন সিলেট চলে আসবেন । তারপর খুব সকালে রিজার্ব/ লোকাল গাড়ি করে সারিঘাট নৌকা ঘাট । তারপর সেখান থেকে নৌকা নিয়ে লালাখাল জিরো পয়েন্ট । লালাখাল এ ৩-৪ ঘন্টা ঘোরাঘুরি করে সারিঘাট এসে পড়বেন । তারপর সারিঘাট থেকে সোজা জাফলং জিরো পয়েন্ট ।

সময় মেনেজমেন্টঃ সিলেট -সারিঘাট ( ৭- ৯.৩০) / সারিঘাট- লালাখাল জিরো পয়েন্ট – সারিঘাট ( ১০ – ২ ) / সারিঘাট – জাফলং ( ২-২.৪৫) / জাফলং এ ২-৩ ঘন্টা ।। উলেখ্য সংরামপুঞ্জি ঝরনা তে পানি নাই । হেটে গিয়ে সময় নষ্ট করবেন ।

খরচঃ লালাখাল নৌকা ভাড়া (* ১৫০০ -১৭০০ )
জাফলং এ নৌকা ভাড়া করার প্রয়োজন নেই ।

জাফলং সম্পর্কিত পোস্ট

জাফলং এর প্রাকৃতিক সৌন্দর্য নতুন করে বর্ণনা করার আর প্রয়োজন মনে হয় নেই। সবাই কম বেশী এর সম্পর্কে জানেন।
প্রকৃতির দান এই জাফলং কন্যা। পাহাড় মেঘ ও নদীর অপূর্ব মিলনে সৃষ্টিকর্তার এক উপহার।
এখন আসি
কিভাবে যাবেনঃ
সিলেট টু ঢাকা ২৩৬ কিলোমিটার।
সিলেট টু জাফলং ৬০ কিলোমিটার।
ঢাকা থেকে সিলেটগামী যেকোন বাসে উঠে পড়তে পারেন। তবে ভালো ননএসি বাসগুলোর মধ্যে ইউনিক এনা হানিফ শ্যামলীর ভাড়া ৪৭০ টাকা
এছাড়া মামুন, আলমোবারাকা পরিবহনের ভাড়া ৩৫০ থেকে ৪০০ টাকা।
তাছাড়া জাফলং এ মামুন পরিবহনের আহমেদ নামে একটা বাস আছে।
এটা রাতে ১০ ও ১১ টার দিকে দুই টা বাস ঢাকা সায়দাবাদ থেকে ছেড়ে আসে। ১১ টার বাসের সার্ভিস মোটামুটি ভালো। অন্যটা ভালো না। এটা আপনাকে সকাল ৬/৭ টার দিকে জাফলং নামিয়ে দিবে।
অন্যদিকে,
সিলেট কদম তলী বাস টার্মিনালে আসার পর অন্য বাসগুলো যেখানে আপনাকে নামিয়ে দিবে সেখান থেকে এনার কাউন্টারের ঠিক বিপরীত পাশেই
জাফলং এর বাস পাবেন।
ভাড়া ৬৫ টাকা। প্রতি ১৫ মিনিট পর পর বাস ছাড়ে।
রিসেন্টলি গেইটলক সার্ভিস চালু হয়েছে ভাড়া ১৩০ টাকা। ভাড়া বেশী নিলেও কম অর্ধেক সময় বাচিয়ে দেবে।
এছাড়াও নগরীর সোবহানী ঘাট নামক জায়গা থেকেও বাস পাবেন।
এছাড়াও সিএনজি,মাইক্রো, বা ক্যারীক্যাব পাবেন।
সি এন জি ১৮০০ থেকে ২০০০
মাইক্রো ৩০০০ থেকে ৫০০০
ক্যারিক্যাব ২০০০ থেকে ২৫০০ দিলে সারাদিন
নিয়ে ঘুরতে পারবেন।
ক্যারিক্যাব ও মাইক্রো ভাড়া পাবেন ওসমানী শিশু পার্কের সামনে থেকে।
এতে আপনাকে কদম তলী হতে বন্দরবাজার আসতে হবে অথবা ঢাকার বাস যখন (হুমায়ুন চত্তর) বলে ডাকবে তখন নেমে ঠিক বিপরীত পাসে সিএনজি পাবেন। ভাড়া ১০ টাকা। বলতে হবে শিশু পার্ক যাবো।

জাফলং এর স্পটগুলোঃ
জাফলং যাওয়ার পথে রাতারগুল সোয়াম ফরেস্ট,লালাখাল,জৈন্তারাজ্যের কিছু ধ্বংসাবশেষ দেখতে পারবেন।
শ্রীপুর চা বাগানে নামতে ভুলবেন না।
আরো পাবেন ডিবির হাওর শাপলার বিল।
ও হ্যা হরিপুর ৭নং কুপ দেখতে ভুলবেন না।
৭ নং কুপে বিকেলের দিকে গেলে ভালো।
আগুনের পাহাড় দেখতে পারবেন।
পানিতে আগুনের ঝলকও আপনাকে মুগ্ধ করবে।

জাফলং জিরো পয়েন্টে যাওয়ার রাস্তা দুটি।
মামারবাজার হয়ে অথবা গুচ্ছগ্রাম বিডিয়ার ক্যাম্পের রাস্তা হয়ে।
বিডিয়ার ক্যাম্পের দিকে যাওয়াটা বেশী সুবিধা জনক।
নৌকার ভাড়া ২০/৩০ টাকাও ওপারে পৌছে যেতে পারবেন।
কিন্তু আসার সময় মামার বাজার হয়ে আসতে হবে।নতুবা গাড়িতে সিট পাবেন না।

জাফলং ভ্রমনে সবচেয়ে সুবিধা হলো মাইক্রো বা ক্যারি ক্যাব(২০০০-৩০০০টাকা) নিয়ে ঘুরা। এতে করে যেটা বাসে গেলে মিস করবেন সেটা নেমে দেখতে পারবন।
ক্যারিক্যাবের ড্রাইভারদের বললেই নিয়ে যাবে রাতারগুল,লালাখাল,শ্রীপুর, হরিপুর।

রাতারগুল যেতে কোন লোকাল সার্ভিস নেই।
আপনাকে রিজার্ভ গাড়িতে যেতে হবে
রাতারগুল নৌকা ভাড়া ১২০০/১৫০০।
তবে যত কমাতে পারেন।
সিলেট শহর থেকে সিএনজি ভাড়া ১০০০ টাকার আসে পাশে।

লালাখাল নৌকা ভাড়া ৭০০ ঘন্টায়।
লালাখালে ভ্রমনের সবচেয়ে ভালো সময় শীতকালে মানে এখনই। সারি নদীর স্বচ্ছ নীলাভ পানি এর মুল আকর্ষন। তবে নদীর গতি পথের কারনে অনেকটা বিপদজনক।
পানিতে নামার আগে মাথে দড়ি নেয়া ভালো।
কারন যেকোন সময় পানির ঘূর্ণিতে পরে তলিয়ে যেতে পারেন।

শাপলার বিলঃ শাপলার বিলে যেতে আপনাকে নামতে হবে জৈন্তাপুর।
জৈন্তাপর থেকে ডিবির হাওরে যেতে আপনাকে অটোরিকশা ভাড়া করতে হবে।
তারপর ওখানেই নৌকা পাবেন।
শাপলার বিলে সকালে যাওয়াই ভালো। নয়তো ফুটন্ত শাপলা মিস হয়ে যেতে পারে।

থাকার ব্যবস্থাঃ জাফলং এ ভালো মানের কোন হোটেল নাই। তবে যা আছে তার মধ্যে জৈন্তাহিল রিসোর্ট মোটামুটি ভালো।
আরো কিছু নতুন হোটেল হয়েছে তাদের সার্বিস সম্পর্কে আমার জানা নেই।
[ ভুল ত্রুটি হলে ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টি দেখবেন।আগুনের পাহাড়,শ্রীপুর লেক,শ্রীপুর চা বাগানের ছবি নিচে কমেন্ট বক্সে দেয়া হলো।

Post Copid From:RM Masum AhmedTravelers of Bangladesh (ToB)

সিলেট এবং পর্যটন স্পট

‪সিলেট শহর থেকে বিভিন্ন পর্যটন স্পটে সহজে এবং কম খরচে যাওয়ায় উপায়ঃ‬

‪#‎সিলেট থেকে জাফলংঃ‬-

★ সিলেট শহর থেকে জাফলং এর দূরত্ব প্রায় ৬০ কি.মি, যেতে সময় লাগবে প্রায় ২ ঘন্টা। পুরো সিলেটের মধ্যে শুধুমাত্র জাফলং যাওয়ায় রাস্তাটাই ভালো। অন্যসব রাস্তা ভয়াবহ রকমের খারাপ। অবশ্য জাফলং রোড তামাবিল পর্যন্ত ভাল, এরপর বলতে গেলে রাস্তাই নাই।‬

‪#‎যেভাবে যাবেনঃ‬

★ সিলেটের কদমতলী বাসস্ট্যান্ড/শিশুপার্ক/সোবহানীঘাট-এই তিনটি জায়গা থেকে জাফলং যাওয়ায় বাস ছাড়ে। ভাড়া ৬০ টাকা।‬

১। দরগাহ গেইট থেকে সোবহানীঘাট রিক্সা ভাড়া ২০ টাকা।‬

২। আম্বরখানা থেকে শিশুপার্ক অটো ভাড়া ৩০-৩৫ টাকা।‬

৩। আম্বরখানা থেকে কদমতলী বাসস্ট্যান্ড রিক্সা ভাড়া ৪০ টাকা।‬

‪#‎জাফলং এ কি কি দেখবেনঃ‬

♦জাফলং জিরো পয়েন্ট‬

♦সেংগ্রামপুঞ্জি ঝর্ণা‬

♦ ইউকেরাম ঝর্ণা‬

♦খাসিয়াপুঞ্জি‬

‪#‎সিলেট থেকে বিছনাকান্দিঃ‬-

★ সিলেট শহর থেকে বিছনাকান্দির দূরত্ব প্রায় ৬০ কি.মি। যেতে সময় লাগবে প্রায় ২.৩০ ঘন্টা। রাস্তা খুবই খারাপ।‬

#যেভাবে যাবেনঃ

সিলেট শহর থেকে প্রথমেই আপনাকে যেতে হবে হাদারপাড় বাজার। হাদারপাড় কয়েকভাবে যাওয়া যায়।‬

১। রিজার্ভ CNGঃ আম্বরখানা থেকে CNG রিজার্ভ নিয়ে হাদারপাড় যেতে পারেন। সেক্ষেত্রে CNG ভাড়া নিবে ৬০০-৭০০ টাকা। এক সিএনজিতে ৫ জন যেতে পারবেন।‬

২। লোকাল CNGঃ আম্বরখানা থেকে লোকালভাবেও হাদারপাড় যেতে পারেন। ভাড়া জনপ্রতি ১৫০ টাকা। আগে ভাড়া ছিল ৭০-৮০ টাকা। কিন্তু রাস্তা খারাপ হওয়াতে এখন ভাড়া বেশি।‬

৩। চূড়ান্ত লোকালঃ‬

প্রথমে সোবহানীঘাট যেতে হবে। সেখান থেকে জাফলং এর বাসে সারিঘাট যেতে হবে (৪৩ কি.মি)। সারিঘাটের ভাড়া ৪৫ টাকা, লেগুনা ভাড়া ৩০ টাকা। যেতে সময় লাগবে ১.৩০ ঘন্টা। এরপর সারিঘাট থেকে যেতে হবে গোয়াইনঘাট (১৬ কি.মি)। CNG ভাড়া ৫০ টাকা, লেগুনা ভাড়া ২৫ টাকা। সময় লাগবে ৪৫ মিনিট। তারপর গোয়াইনঘাট থেকে যেতে হবে হাদারপাড় (১৭ কি.মি)। CNG ভাড়া ৪০ টাকা, সময় লাগবে ১ ঘন্টা।‬

৪। কম লোকালঃ‬

প্রথমে আম্বরখানা/শিশুপার্ক থেকে লোকাল সিএনজিতে করে গোয়াইনঘাট যেতে হবে। ভাড়া ৮০-১০০ টাকা। এরপর গোয়াইনঘাট থেকে লোকাল সিএনজিতে হাদারপাড়। ভাড়া ৪০ টাকা।‬

‪#‎কি কি দেখবেনঃ‬

♦বিছনাকান্দি‬

♦পাংথুমাই ঝর্ণা‬

♦লক্ষণছড়া‬

♦কুলুমছড়া‬

‪#‎হাদারপাড় থেকে বিছনাকান্দি, পাংথুমাই, লক্ষণছড়া, কুলুমছড়া‬

১। হাদারপাড় থেকে রিজার্ভ নৌকা নিয়ে বিছনাকান্দি, পাংথুমাই, লক্ষণছড়া একসাথে ঘুরে আসতে পারেন। নৌকা ভাড়া নিবে ১৫০০-২০০০ টাকা। এক নৌকায় ১০-১২ জন যাওয়া যাবে।‬

২। হাদারপাড় থেকে শুধু পাংথুমাই ও লক্ষণছড়া যেতে চাইলে নৌকা ভাড়া নিবে ১০০০-১২০০ টাকা।‬

৩। হাদারপাড় থেকে শুধু বিছনাকান্দি যেতে চাইলে নৌকা ভাড়া নিবে ৮০০-১০০০ টাকা।‬

‪#‎হাটা পথে বিছনাকান্দিঃ‬

হাদারপাড় বাজার থেকে ৮-১০ মিনিট হেটে গেলে একটি খেয়া পড়বে। খেয়া পাড় হয়ে গ্রামের রাস্তা দিয়ে আরো ৫০ মিনিট হাটলেই বিছনাকান্দি।‬

‪#‎সিলেট থেকে রাতারগুলঃ‬

★ সিলেট শহর থেকে রাতারগুলের দূরত্ব প্রায় ১৯ কি.মি। যেতে সময় লাগবে ১ ঘন্টা।‬

‪#‎কিভাবে যাবেনঃ‬

সিলেট শহর থেকে রাতারগুলে যাওয়ার ৩টি পথ রয়েছে।‬

১) মটরঘাট দিয়ে‬

২) রামনগর চৌমুহনী বাজার দিয়ে‬

৩) চৌরঙ্গী বাজার দিয়ে‬

♦মটরঘাট দিয়ে যাওয়ার উপায়ঃ

১। রিজার্ভঃ আম্বরখানা থেকে মটরঘাট রিজার্ভ CNG ভাড়া ৩০০-৪০০ টাকা।‬

২। লোকালঃ প্রথমে আম্বরখানা থেকে লোকাল সিএনজিতে করে সাহেব বাজার যেতে হবে। ভাড়া ৩০ টাকা, সময় লাগবে ৪৫ মিনিট। এরপর সাহেব বাজার থেকে আবার লোকাল সিএনজিতে করে মটরঘাট যেতে হবে। ভাড়া ২০ টাকা, সময় লাগবে ১৫ মিনিট। মটরঘাট থেকে নৌকা নিয়ে রাতারগুল। নৌকা ভাড়া ৮০০-১২০০ টাকা। এক নৌকায় সর্বোচ্চ ৫ জন যাওয়া যাবে, সেটাও খুব রিস্ক।‬

♦ রামনগর বাজার দিয়ে যাওয়ার উপায়ঃ আম্বরখানা > সাহেব বাজার > রামনগর বাজার > প্রায় ২ কি.মি হেটে রাতারগুল গ্রামের ঘাট > নৌকা নিয়ে রাতারগুল (নৌকা ভাড়া ৫০০ টাকা)।‬

অথবা, আম্বরখানা > হরিপুর > ফতেহপুর > রামমনগর বাজার > রাতারগুল।‬

‪#‎বিঃদ্রঃ‬ পরামর্শ হচ্ছে আপনারা মটরঘাট দিয়ে রাতারগুল যাওয়া পরিত্যাগ  করবেন। মটরঘাটে নৌকার মাঝিরা এখন সিন্ডিকেটের খপ্পরে। শুনলাম ১০ লক্ষ টাকায় এই ঘাটটি ইজারা নেয়া হয়েছে। তাই নৌকার মাঝিরা রাতারগুল যাওয়ার জন্য আকাশচুম্বী ভাড়া চেয়ে বসে।খোজ নিয়ে জানলাম রামনগর চৌমুহনী ঘাট দিয়ে গেলে নৌকা ভাড়া অনেক কমে পাওয়া যায়।‬

‪#‎সিলেট থেকে লোভাছড়াঃ‬

★লোভাছড়া যেতে হলে প্রথমে যেতে হবে কানাইঘাট উপজেলায়। সিলেট শহর থেকে কানাইঘাটের দূরত্ব প্রায় ৬০ কি.মি। যেতে সময় লাগবে ২.৩০ ঘন্টা। সিলেট থেকে দরবস্ত বাজার পর্যন্ত ৪০ কি.মি রাস্তা খুব ভাল। দরবস্ত বাজার থেকে কানাইঘাট পর্যন্ত বাকি ২০ কি.মি রাস্তা খুব খারাপ।‬

#কিভাবে যাবেনঃ

★সিলেটের কদমতলী বাসস্ট্যান্ড থেকে বাসে করে কানাইঘাট যাওয়া যায়। ভাড়া ৬০ টাকা।‬

অথবা,‬

সিলেট শহর থেকে লেগুনাতে করে দরবস্ত বাজার। ভাড়া ৩০ টাকা। দরবস্ত বাজার থেকে কানাইঘাট বাস ভাড়া ২০ টাকা, লেগুনা ভাড়া ৩০ টাকা এবং সিএনজি ভাড়া ৫০ টাকা।‬

‪#‎কানাইঘাট থেকে লোভাছড়াঃ‬

১। রিজার্ভঃ কানাইঘাট থেকে লোভাছড়া ঘুরে আসতে নৌকা ভাড়া নিবে ১০০০-১২০০ টাকা। এক নৌকায় ১০-১২ জন যাওয়া যাবে।‬

২। লোকালঃ লোকাল নৌকায় গেলে জনপ্রতি ভাড়া নিবে ৩০ টাকা।‬

#কি কি দেখবেনঃ

♦লোভাছড়া চা বাগান‬

♦ঝুলন্ত ব্রীজ‬

♦লোভা নদীতে পাথর উত্তোলন‬

‪#‎সিলেট থেকে ভোলাগঞ্জঃ‬

★ সিলেট শহর থেকে ৩৩ কিলোমিটার দূরে কোম্পানীগঞ্জ উপজেলায় ভারতের চেরাপুঞ্জি সীমান্তবর্তী বাংলাদেশের বৃহত্তম পাথর কোয়ারি ভোলাগঞ্জ। সিলেটের সবচেয়ে বাজে রাস্তা হচ্ছে এই ভোলাগঞ্জের রাস্তা।‬

#কিভাবে যাবেনঃ

আম্বরখানার মজুমদাড়ি থেকে সিএনজিতে করে ভোলাগঞ্জ যাওয়া যায়। ভাড়া ২০০ টাকা। যেতে সময় লাগবে ২.৩০ ঘন্টা। আর রাস্তায় জ্যাম থাকলে সময় লাগবে আনলিমিটেড।‬

#কি কি দেখবেনঃ

♦দেশের সর্ববৃহৎ পাথর কোয়ারি

যারা সিলেট যাবেন তিন দিনের জন্য

ঘননীল আকাশ। সামনে সারি সারি পাহাড়। পাহাড়ের চূড়ায় মেঘের কুন্ডলী। নৈকট্যে গেলে ছেঁড়া ছেঁড়া মেঘ। মেঘের বুক চিরে নেমে আসা ঝর্ণা। নিচে নেমে জল ও পাথরের সম্পর্কে শাঁ শাঁ শব্দ। সেই জলই আবার মিশে যাচ্ছে পিয়াইনের সাথে। পাথরে পাথরে বন্ধুত্ব। পাথরে ও নদীতে মিতালি। পাথরে মানুষে জীবনযাপনের যুদ্ধ। চারিদিকে বিস্তৃত সবুজ। পাহাড়ে পাহাড়ে সবুজের জলকেলি। বিস্তির্ণ মাঠে সবুজের চাদর। এগুলো দৃশ্যকল্প নয়, সিলেটের বিছনাকান্দি জুড়ে এমন দৃশ্য যেন সত্যিই কেউ ফ্রেম বন্দি করে লটকে দিয়েছে আকাশের সাথে। দূর থেকে মনে হবে এই মেঘ, এই মানুষ, এই পাহাড়-নদী কিংবা পাথরের স্থিরচিত্রই এগুলো।দুই পাশে আকাশচুম্বী পাহাড়, তার মাঝে বয়ে চলা ঝরনার স্রোত। পানি একেবারে পরিষ্কার, স্বচ্ছ, এবং টলমলে। আর ছোট-বড় নানান আকৃতি আর রঙের পাথর তো আছেই। পানি এত স্বচ্ছ যে পানির তলার পাথর কিংবা নিজের ডুবে থাকা পা পর্যন্ত স্পষ্ট দেখা যায়।

কিভাবে যাবেন: ১) ঢাকা থেকে বাস, ট্রেন বা বিমানে করে সিলেটে যাওয়া যায়। ২) সিলেট শিশু পার্কের বা আম্বরখানার সামনে থেকে পাওয়া যায় গোয়াইনঘাটগামী লেগুনা অথবা সিএনজি অটো রিক্সা। ভাড়া ৮০-১০০টাকা। গোয়াইনঘাট থেকে হাদারপার বাজার যেতে হবে সিএনজি অটো রিক্সায়। ভাড়া ৩০-৪০ টাকা। হাদারপার থেকে নৌকা নিয়ে যেতে হবে বিছনাকান্দিতে। ভাড়া যাওয়া আসা ৮০০-১০০০+ টাকা। সিলেট শহর থেকে সিএনজি নিয়ে জেতেপারেন রিজার্ভ ১২০০-১৫০০ টাকা।

কখন যাবেন: সারা বছর যাওয়া যায় তবে বর্ষা কালে গেলে আসল রুপ দেখা যায়।বর্ষাকাল বলেই নৌকায় যাতায়াত করা যায়, শুকনা মৌসুমে এক ঘন্টার মত হাটতে হয় । জায়গাটায় পৌছার পর কিছুক্ষণ বিমুগ্ধ নয়নে শুধু চেয়ে ছিলাম। সত্যিকার অর্থেই ছবির চেয়ে অনেক বেশি সুন্দর।

সিলেট জেলায় ঘোরাঘুরির যায়গা গুলো
সিলেট ও সংলগ্ন জেলা গুলোতে (সুনামগঞ্জ,মৌলভিবাজার-শ্রীমঙ্গল, হবিগঞ্জ) ঘোরাঘুরির বেশ কিছু গন্তব্য আছে । এখানে সিলেট জেলায় ঘোরাঘুরির যায়গা গুলোর কিছু তথ্য দেয়া হলো।

ক্বীন ব্রিজ, আলী আমজাদের ঘড়ি ও সুরমা নদীর পাড় : শহরের মাঝে সুরমা নদীর উপর প্রাচীন লোহার ব্রীজ। নিচে নদীর পাড়ে সময় কাটানে যায়। নৌকা নিয়ে ঘোরা ও মন্দ না । ব্রীজের কাছেই আছে ১৪০ বছর পুরনো আলী আমজাদের ঘড়ি। গত শতকের তিরিশের দশকের দিকে আসাম প্রদেশের গভর্ণর ছিলেন মাইকেল ক্বীন। তিনি তখন সিলেট সফরে আসেন। তার স্মৃতিকে অম্লান করে রাখতেই এ ব্রীজটি নির্মাণ হয়। ইতিহাসবিদদের মতে, সে সময় আসামের সাথে যোগাযোগের মাধ্যম ছিল ট্রেন। সঙ্গত কারণেই সুরমা নদীতে ব্রীজ স্থাপনের প্রয়োজনীয়তা দেখা দেয়। রেলওয়ে বিভাগ ১৯৩৩ সালে সুরমা নদীর ওপর ব্রীজ নির্মাণের উদ্যোগ নেয় । ১৯৩৬ সালে ব্রীজটি আনুষ্ঠানিকভাবে খুলে দেওয়া হয়। ব্রীজটির নামকরণ করা হয় গভর্ণর মাইকেল ক্বীনের নামে। ক্বীন ব্রীজ লোহা দিয়ে তৈরী। ১৯৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে পাকিস্তানী হানাদার বাহিনী ডিনামাইট দিয়ে ব্রীজের উত্তর পাশের একাংশ উড়িয়ে দেয়। স্বাধীনতার পর কাঠ ও বেইলী পার্টস দিয়ে বিধ্বস্ত অংশটি মেরামত করা হয়। পরবর্তীতে তা হালকা যান চলাচলের জন্য খুলে দেওয়া হয়। সিলেট শহরের কেন্দ্রস্থলে ক্বীনব্রীজ এর অবস্থান ।

হযরত শাহজালাল (রঃ) মাজার: সিলেট রেল স্টেশন অথবা কদমতলী বাস স্ট্যান্ড এ নেমে রিকশা বা সিএনজি অটোরিকশাযোগে মাজারে যাওয়া যায়। রিকশা ভাড়া ২০-২৫ টাকা, সিএনজি ভাড়া ৮০-১০০ টাকা।সুরমা নদী পার হয়ে মূল শহরে এসে মাজার এ পৌছাতে হয়। মাজার গেট রোড এ অনেকগুলো আবাসিক হোটেল রয়েছে। হজরত শাহপারান (রঃ) মাজার সিলেট সিটির থেকে মাত্র ০৯ কি:মি: দূরে হযরত শাহপরান (র:) মাজার। সিলেট সিটির জেলগেট পয়েন্ট থেকে সি এন জি বা অন্যান্য বাহন দ্বারা শাহপরান বাজারে পাশে হযরত শাহপরান (র:) এর মাজার ।

মালনীছড়া চা বাগান ও অন্যান্য – উপমহাদেশের প্রথম চা বাগান মালনীছড়া। ১৮৪৯ সালে এই চা বাগান প্রতিষ্ঠিত। বর্তমানে বেসরকারী তত্তবধানে চা বাগান পরিচালিত হয়ে আসছে। ১৫০০ একর জায়গার উপর এই চা বাগান অবস্থিত। মালনীছড়া চা বাগান ছাড়াও সিলেটে লাক্কাতুরা চা বাগান, আলী বাহার চা বাগান, খাদিম, আহমদ টি স্টেট, লালাখাল টি স্টেট উল্লেখযোগ্য। মালনীছড়া এবং লাক্ষাতুড়া চা বাগান দুইটিই সিলেট শহরের উপকন্ঠে অবস্থিত। শহরের কেন্দ্রস্থল জিন্দাবাজার পয়েন্ট হতে গাড়ীতে মাত্র ১৫ মিনিটের পথ।সিলেট শহর থেকে রিকশাযোগে অথবা অটোরিকশা বা গাড়িতে বিমানবন্দর রোডে চাবাগানপাওয়া যাবে। গাড়িতে যেতে আম্বরখানা পয়েন্ট থেকে ১০ মিনিট এর পথ।রিকশাযোগে যেতে আধঘন্টা লাগবে।

পর্যটন টিলা , মোটেল ও এডভেঞ্চার ওয়ার্ল্ডবিমানবন্দর রোডে মালনীছড়া এবং লাক্ষাতুড়া চা বাগান পেরিয়ে পড়বে পর্যটন টিলা ও মোটেল। পর্যবেক্ষন টাওয়ার, এমিউজম্যান্টে পার্ক, আইস ক্রীম, এবং স্ন্যাকস এবর ব্যবস্থা রয়েছে। সিলেট আম্বর খানা থেকে অটোরিক্সা/রিকশা করে যাতায়াত। মনিপুরী জাদুঘরশহরের সুবিদবাজার এলাকায় একটি ভাড়া বাড়িতে প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে এ জাদুঘর। বৃহত্তর সিলেট অঞ্চলে বসবাসরত আদিবাসী সম্প্রদায় মনিপুরীদের শত বছরের কৃষ্টি আর ঐতিহ্য তুলে ধরা হয়েছে এ জাদুঘরের মাধ্যমে।

মিউজিয়াম অব রাজাস’ মরমী কবি হাছন রাজা ও পরিবারের অন্য সদস্যদেও স্মৃতি সংরক্ষণের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এ লক্ষ্যে সিলেট নগরীর প্রানকেন্দ্র জিন্দাবাজারে গড়ে তোলা হয়েছে একটি যাদুঘর। এর নাম দেওয়া হয়েছে মিউজিয়াম অব রাজাস’। মনিপুরী রাজবাড়ীমনিপুরী সিলেট তথা বাংলাদেশের আদি সম্প্রদায়ের অন্যতম জনগোষ্ঠি। নগর সিলেটের মির্জাজাঙ্গালে অবস্থিত মনিপুরী রাজবাড়ী প্রাচীন স্থাপত্য কীর্তির অন্যতম নির্দশন। এ ভবনের নির্মাণ শৈলী সিলেট অঞ্চলের কৃষ্টি-সংস্কৃতির অবিচ্ছেদ্য অংশ। এককালের প্রভাবশালী রাজা গম্ভীর সিং এর স্মৃতিধন্য এ বাড়িটি আজ অবহেলিত ও বিলীন প্রায়। বিভিন্ন প্রাকৃতিক দূর্যোগ ও রক্ষণাবেক্ষনের অভাবে প্রকৃত ভবন হারিয়েছে তার স্বকীয়তা। বাড়ীর সুপ্রাচীন প্রধান ফটক, সীমানা দেয়াল, মনোহর কারুকাজের সিড়ি ও বালাখাঁনার ধ্বংসাবশেষই বর্তমান মনীপুরী রাজবাড়ীর স্মৃতি সম্বল। এখনও ধ্বংস স্ত্তপের মতো টিকে থাকা স্থাপনাটি এ বাড়ীসহ সিলেটে বসবাসরত মনিপুরী সম্প্রদায়ের গভীর শ্রদ্ধা-ভক্তির স্থান। শহরের আরো কিছু যায়গা-সিলেট শহরের মাঝে ঘুরতে গেলে সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় , গৌড়-গোবিন্দের টিলা, এমসি কলেজ, মুণিপুরী মার্কেট, খাদিমনগরে ৩টি টিলার সমন্বয়ে গড়ে উঠা পর্যটন স্থান ও রিসোর্ট জাকারিয়া সিটি ঘুরে দেখা যায়। শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয় বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে সময় কাটবে ভালো। ক্যাম্পাসে আসলে দেখতে পারবেন শাবির চমৎকার শহীদ মিনার যা টিলার উপর অবস্থিত। জিতু মিয়ার বাড়িসিলেট নগরীর শেখঘাটে কাজীর বাজারের দক্ষিণ সড়কের ধারে ১ দশমিক ৩৬৫ একর ভুমি জুড়ে অবস্থিত ঐতিহ্যবাহী জিতু মিয়ার বাড়ি। চুন সুরকি দিয়ে নির্মিত মুসলিম স্থাপত্য কলার অনন্য নিদর্শন এ দালানটি নির্মাণ খান বাহাদুর আবু নছর মোহাম্মদ এহিয়া ওরফে জিতু মিয়া।

শ্রী চৈতন্যদেবের বাড়ি: ষোড়শ শতকে সিলেটের গোলাপগঞ্জ উপজেলার ঢাকাদক্ষিনে পন্ডিত জগন্নাথ মিশ্রের কৃতি সন্তান শ্রী চৈতন্য (বিশ্বম্ভর মিশ্র) বাঙালির আধ্যাত্বিক জীবনে এক বৈপ্লবিক যুগের সূচনা করেন । ব্রাম্মণ্যবাদ ও উগ্র বর্ণবাদের বিরুদ্ধে শ্রী চৈতন্য পরিচালিত গণ বিপ্লবে বাংলার আপামর জনসাধারণ বিপুলভাবে সাড়া দিয়েছিলেন। শ্রী চৈতন্যের সমকালে এবং এর বহুকাল পূর্ব থেকে নবদ্বীপে ঢাকাদক্ষিনের বহু বেদজ্ঞ অধ্যায়ন কিংবা অধ্যাপনার নিমিত্তে বসবাস করতেন । অবস্থান: সিলেট জেলার গোলাপগঞ্জ উপজেলার ঢাকা দক্ষিণ নামক স্থানে।দুরত্ব: সিলেট শহর হতে ৩০ কি.মি।যাতায়াত: সিলেট শহর হতে জকি গঞ্জ বা বিয়ানীবাজার উপজেলা গামী যেকোন বাস সার্ভিসে আপনি ঢাকা দক্ষিণ পর্যন্ত যেতে পারবেন। তারপর মহা প্রভু শ্রী চৈতন্য দেবের বাড়ী যেতে আপনাকে ভ্যান বা রিক্সা নিতে হবে।

জাফলংপ্রকৃতি কন্যা হিসাবে সারাদেশে এক নামে পরিচিত সিলেটের জাফলং। খাসিয়া জৈন্তা পাহাড়ের পাদদেশে অবস্থিত জাফলং প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের অপরুপ লীলাভূমি। পিয়াইন নদীর তীরে স্তরে স্তরে বিছানো পাথরের স্তূপ জাফলংকে করেছে আকর্ষণীয়। সীমান্তের ওপারে ইনডিয়ান পাহাড় টিলা, ডাউকি পাহাড় থেকে অবিরাম ধারায় প্রবাহমান জলপ্রপাত, ঝুলন্ত ডাউকি ব্রীজ, পিয়াইন নদীর স্বচ্ছ হিমেল পানি,উঁচু পাহাড়ে গহিন অরণ্য ও শুনশান নিরবতার কারণে এলাকাটি পর্যটকদের দারুণভাবে মোহাবিষ্ট করে। জাফলং এ আপনি দেখবেন চা বাগান ,খাসিয়া পুঞ্জি ও খাসিয়া রাজ বাড়ি এবং বল্লা ঘাট এ পাথর তুলার দৃশ্য। সিলেট জেলার গোয়াইনঘাট উপজেলায় অবস্থিত। সিলেট জেলা সদর হতে সড়ক পথে দুরুত্ব ৫৬ কি.মি। সিলেট থেকে যাতায়াতঃ সিলেট থেকে আপনি বাস/ মাইক্রোবাস/ সিএনজি চালিত অটোরিক্স্রায় যেতে পারেন জাফলং এ। সময় লাগবে ২ ঘন্টা । জৈন্তাপুরজাফলং থেকে ফিরার পথে যাবেন জৈন্তাপুর বাজার । এখানে রয়েছে জৈন্তা রাজবাড়ি আর দিঘি , খাসিয়াপাড়া আর সাইট্রাস গবেষণাকেন্দ্র । টকফল গবেষণা কেন্দ্রে দেখবেন নানা ধরনের টকফল এর বাগান।এ জায়গাটা জৈন্তা বাজার থেকে আপনি হেটে গেলে ১০ মিনিট লাগবে। জৈন্তাপুর দেখা শেষ করে আসার সময় পাবেন লালাখাল ।এখানে থাকার জন্য আছে জৈন্তা হিল রিসোর্ট।

লালাখাল: সিলেট শহর হতে লালাখাল যাবার জন্য আপনাকে পাড়ি দিতে হবে ৩৫ কি.মি রাস্তা। আর জাফলং থেকে ফেরার পথে জৈন্তাপুর এর পরে পড়বে লালাখাল। সিলেট শহর থেকে জাফলং রোডে জৈন্তা থানার সারি নদী। জৈন্তাপুরের সারিঘাটে নামতে হয়। সেখান থেকে ইঞ্জিনচালিত নৌকায় যাওয়া যায় লালাখাল।শীত কালে লালাখালের স্বচ্চ নীল জল রাশি আর দুধারের অপরুপ সোন্দর্য, দীর্ঘ নৌ পথ ভ্রমনের সাধ যেকোন পর্যটকের কাছে এক দূর্লভ আর্কষণ।লাদেশের সবোর্চ্চ বৃষ্ঠিপাতের স্থান এবং রাতের সৌন্দর্যে ভরপুর এই লালাখাল সিলেট জেলার জৈন্তাপুর উপজেলার সন্নিকটে অবস্থিত। সারি নদীর স্বচ্চ জলরাশির উপর দিয়ে নৌকা অথবা স্পীডবোটে করে আপনি যেতে পারেন লালা খালে। ৪৫ মিনিট যাত্রা শেষে আপনি পৌছে যাবেন লালখাল চা বাগানের ফ্যাক্টরী ঘাটে। ভারতের চেরাপুঞ্জির ঠিক নিচেইলালাখালের অবস্থান।লালাখালের কাছেই আছে নাজিমগড় রিসোর্ট।

পাংথুমাই, পিয়াইন নদী , বড়হিল ঝর্না ও বিছনাকান্দি পাংথুমাই একটি চোখ জুড়ানো গ্রাম। মেঘালয় রাজ্যের সারি সারি পাহাড় , ঝর্না , ঝর্না থেকে বয়ে আসা পানির স্রোতধারা , আর দিগন্ত বিস্তৃত চারণ ভুমি দেখতে পাবেন এই গ্রামটিতে ।পাংথুমাইয়ে যাওয়া যায় দুটি রাস্তায়। একটি জৈন্তাপুরের সারিঘাট হয়ে আর অন্যটি হচ্ছে গোয়াইনঘাটের সালুটিকর হয়ে । বাহন সিএনজি রিকশা। এই গ্রাম থেকে খুব কাছে দাঁড়িয়ে দেখা যায় ভারতের বড়হীল ঝর্ণা। এই ঝর্ণার জল মেশে পিয়াইন নদীতে । পিয়াইন নদীতে নৌকা ব্যাবস্থা করে যাওয়া যায় বিছানাকান্দী নামক আর একটা গ্রামে । সড়কপথে ও বিছানাকান্দী যাওয়া যায়, সাথে স্থানীয় কাউকে নিয়ে গেলে সুবিধা পাবেন। দেখতে পাবেন সীমান্ত ঘেষা অনেক পাহাড় আর বর্ষার ঝর্না । বিছানাকান্দী হতে সালুটিকর হয়ে ফেরা যায় আবার পাংথুমাই ফিরে গিয়ে জৈন্তাপুরের সারিঘাট দিয়ে ও ফেরা যায় সিলেট শহরে।

লোভাছড়া চা বাগান ও লোভাছড়া পাথর কোয়ারীসিলেট থেকে প্রথমে ৪০ টাকার বাস ভাড়া দিয়ে আসতে হবে কানাইঘাট উপজেলা সদর নৌকা ঘাটে ।তারপর ২৫ টাকার ইন্জিল নৌকা ভাড়া দিয়ে লোভাছড়া যেতে পারবেন। নৌকায় যেতে পথে পড়বে তিন নদীর মোহনা। ডান দিক থেকে এসেছে বরাক, বাম দিক থেকে এসেছে লোভা। বরাক ও লোভা এসে সুরমায় মিশে চলে গেছে সিলেটের দিকে। ভোলাগঞ্জসিলেট জেলার কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা এর অবস্থান। সিলেট থেকে ভোলাগঞ্জের দূরত্ব মাত্র ৩৩ কিলো মিটার।শহর থেকে ভোলাগঞ্জ পর্যন্ত সরাসরি কোন যানবাহন সার্ভিস নেই। আগন্তুকরা সিলেট থেকে টুকেরবাজার পর্যন্ত যাত্রীবাহি বাস অথবা ফোরস্ট্রোকযোগে যাতায়াত করেন। টুকের বাজার থেকে ভোলাগঞ্জ পর্যন্ত রয়েছে বেবিটেক্সি সার্ভিস।ভারতের আসাম প্রদেশের রাজধানী শিলংয়ে এক সময় লোকজন এ রাস্তা দিয়েই যাতায়াত করতো। কালের পরিক্রমায় এখানে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে রজ্জুপথ। নাম ভোলাগঞ্জ রোপওয়ে। দেশের সর্ববৃহৎ ভোলাগঞ্জ পাথর কোয়ারীর অবস্থানও এ এলাকায়। রোপওয়ে, পাথর কোয়ারী আর পাহাড়ী মনোলোভা দৃশ্য অবলোকনের জন্য এখানে প্রতিদিনই আগমন ঘটে পর্যটকদের।

হাকালুকি হাওর হাকালুকি হাওর সিলেটের অন্যতম বৃহৎ হাওর। বড়লেখা, গোলাপগঞ্জ ও ফেঞ্চুগঞ্জ উপজেলায় সেটি বিস্তৃত। প্রাকৃতিক ভারসাম্য বজায় রাখা ছাড়াও মৎস্য সম্পদের এক বিশাল ক্ষেত্র। অতিথি পাখির অন্যতম বিচরণ ক্ষেত্র হাকালুকি হাওর। শীত মৌসুমে হাজার হাজার অতিথি পাখি সেখানে আসে।

সিলেট ট্যুর প্লান ( তিন দিনের জন্য)
প্রথম দিন : জাফলং – সংগ্রামপুঞ্জি ঝরনা, খাসিয়া পল্লী, শাহ পরানের মাজার ১। আম্বরখানা থেকে সারাদিন এর জন্য সিএনজি ভাড়া ( ১৫০০-২০০০ টাকা) , বাসেও যাওয়া যায় কম খরচে কিন্তু যাত্রা পথের ফিলিংস টা পাওয়া যাবেনা জাফলং থেকে ফিরে আসার সময় শাহ পরানের মাজার ঘুরে আসতে পারেন, একই রোডে পড়ে ২। জাফলং এ গিয়ে ঝরনা টা অবশ্যই যাওয়ার চেষ্টা করবেন, জিরো পয়েন্ট, খাসিয়া পল্লী তে যাবেন, খাসিয় পল্লী তে নৌকা ব্যক্তিগট ভাবে ভাড়া করার দরকার নেই, কিছু সময় পর পর পার হেড ১০-২০ টাকা করে নৌকা ছাড়ে , অইখানে যাবেন আর খাসিয়া পল্লী তে ২০০-৩০০ টাকা তে ভ্যানের মত কিছু গাড়ী পাওয়া যায়, ঐগুলা ভাড়া করবেন, তবে জাফলং এর ঐ পাড়ে খাওয়া দাওয়া করবেননা, দাম অত্যন্ত বেশি, এই পাড়ে এসে খাবেন। ৩। সকাল সকাল যাওয়ার চেষ্টা করবেন , যাওয়ার রাস্তা অত ভালনা ৪। বিকেলে ঘুরে আসতে পারেন শাহজালাল ( রহ:) এর মাজার, আরেকটূ দূরে শাহজালাল ইউনিভার্সিটির সুন্দর ক্যাম্পাস।

দ্বিতীয় দিনঃ রাতারগুল, লালাখাল ২। আবার সিএনজি ভাড়া সারা দিনের জন্য , আপনার ভ্রমনের জায়গা গুলা পরিষ্কার করে বলে নিবেন (ভাড়া ১২০০-১৫০০ টাকা হওয়া উচিত) ২। প্রথমে রাতারগুলা যাবেন, ঐখানে ঘাটে গিয়ে নৌকা ভাড়া করতে হবে ( ৫০০-৭০০ টাকা হওয়া উচিত), আপনাকে ঘুরিয়ে নিয়ে আসবে রাতারগুল সোয়াম্প ফরেষ্ট , চেষ্টা করবেন লাইফ জ্যাকেট সাথে রাখার জন্য ৩। রাতারগুল দেখা হয়ে গেলে চলে আসবেন লালাখাল ( ঘন্টা খানেক সময় কাটাবেন লালাখাল এ, নৌকা ভাড়া করতে হবে, খরচ ৫০০-৭০০ টাকা) ৪। সন্ধার আগে পরে সময় পেলে ঘুরে আসতে পারেন শহরের মাঝখানেই লাকাতুয়া চা বাগান, মালিনীছড়া চা বাগান, শহরের মাঝেই ( রিকশা ভাড়া- ৫০ টাকা)

তৃতীয় দিনঃ সৌন্দর্যের রানী বিছানাকান্দী , পান্থুমাই, লক্ষনছড়া ১। সারাদিন এর জন্য সিএনজি ভাড়া ১৫০০-১৭০০ টাকা ২। সকাল সকাল রওনা দিবেন, যদি সবগুলা জায়গা কাভার করতে চান, বিছানাকান্দি যেতে ২.৫০ ঘন্টা থেকে ৩ ঘন্টা সময় লাগে ৩। হাদারপাড় নৌকা ঘাটে সিএনজি আপনাকে নামিয়ে দিবে, ঐখান থেকে ইঞ্জিন চালিত নৌকা ভাড়া করবেন, তাকে বলে নিবেন সবগুলা লোকেশন এর কথা (বিছানাকান্দী , পান্থুমাই, লক্ষনছড়া), ভাড়া নিবে ১০০০-১২০০ টাকা ৪। পান্থুমাই এ বেশি সময় দিবেননা, জাস্ট দেখে চলে আসবেন, এই প্লেস এ নাও যেতে পারেন, খুব একটা আহামরি কিছুনা, নৌকা ভাড়া কমে যাবে ৫।

লক্ষনছড়ায় যান, পানিতে কিছু সময় কাটান ৬। লাস্ট এ যাবেন বিছানাকান্দি তে ( আমার উপদেশ ২ঃ৩০-৩ টার মধ্যে বিছানাকান্দি তে পৌছাতে পারলে ভাল, বেলা সাড়ে পাচ টার পর ঐখানে থাকতে দেয়না , তাহলে আপনি ৩ ঘন্টার মত সময় পাবেন, পানিত গোসল করেন, ছবি তুলেন , উপভোগ করেন প্রকৃতির অপরূপ খেয়াল, ঐখানে ইন্ডীয়ান অনেক কোয়ালিটি প্রোডাক্টস কিনতে পাওয়া যায়, পছন্দ হলে কিনতে পারবেন।

আমার পরামর্শ তৃতীয় দিন বিছানাকান্দিতে যাওয়ার সময় আপনি হোটেলে চেক আউট করে যান তাহলে হোটেলে দুইদিন এর ভাড়া দিতে হবে আর ঐদিন রাতেই বাস অথবা ট্রেনের টিকিট কেটে রাখতে পারেন, ঢাকা থেকে ট্রেন ভাড়া শোভন ৩০০ টাকা, নন এসি বাস ভাড়া ৪০০-৪৫০ টাকা

খাওয়া দাওয়া কোথায় করবেনঃ পানশী , পাচভাই

একটা রোমান্টিক সময় কাটান ফর কাপলঃ শেষ দিন বিছানাকান্দি থেকে ফিরে আসার পর বাস বা ট্রেনে উঠার আগে হাতে কিছু সময় থাকবে , সেই সময় টা আপনি সুরমা রিভার ক্রুইজে কাটাতে পারেন ইচ্ছা করলে , সন্ধ্যা কালীন সময়ের জনক্স খুব সম্ভবত ৩৫০ টাকা নিবে পার হেড ( ফাইভ আইটেম এর ব্যুফে খাবার, নাচা গানা , আর সুরমা নদী তে ঘুরে বেড়াবেন ১ ঘন্টা, জীবনের একটা ভাল অভিজ্ঞতা হয়ে থাকবে আপনার জন্য)

কিছু এক্সট্রা বিষয়ঃ
** সিএনজি, নৌকা এর যে ভাড়া গুলা দেওয়া হয়েছে, সবাই অবশ্যি দামাদামি করবেন ভাল করে। ** অনেক জায়গায় আপনাকে চা কিনতে বলবে কিন্তু কোন জায়গা থেকে চা কিনবেন না, ভাল চা নয় ** সিলেটের সাতকড়া মশলা বিখ্যাত , আসার সময় কিনতে আনতে পারেন ** কেউ যদি দুই দিনের জন্য প্রোগ্রাম করেন তবে জাফলং এর সাথে লালাখাল রাখবেন আর বিছানাকান্দি এর সাথে রাতারগুল রাখবেন তবে অবশ্যি সকাল ৭ টার দিকে রওয়ানা দিবেন ।

১) গ্রুপ করে গেলে ভাল । ২) খাবারের জন্য আগে দাম জিজ্ঞেস করে নেয়া উচিত । ৩) রিক্সা চালকদের ড্রাইভার বলে ডাকবেন, মামা বা অন্য কিছু না বলাই ভাল। ৪) বর্ষাকালে গেলে রেইন কোট , ছাতা নিয়ে যাবেন। ৫) ভারতীয় সিমানার কাছাকাছি তাই সীমানার ব্যাপারে সতর্ক থাকবেন । ৬) আমাদের প্রকৃতি রক্ষার দায়িত্ব আমাদের তাই কোন চিপ্স,চানাচুর বা পানির বোতল ফেলে আসবেন না।

সিলেট জেলায় ঘোরাঘুরির যায়গা গুলো

সিলেট ও সংলগ্ন জেলা গুলোতে (সুনামগঞ্জ,মৌলভিবাজার-শ্রীমঙ্গল, হবিগঞ্জ) ঘোরাঘুরির বেশ কিছু গন্তব্য আছে । এখানে সিলেট জেলায় ঘোরাঘুরির যায়গা গুলোর কিছু তথ্য দেয়া হলো।

ক্বীন ব্রিজ, আলী আমজাদের ঘড়ি ও সুরমা নদীর পাড় : শহরের মাঝে সুরমা নদীর উপর প্রাচীন লোহার ব্রীজ। নিচে নদীর পাড়ে সময় কাটানে যায়। নৌকা নিয়ে ঘোরা ও মন্দ না । ব্রীজের কাছেই আছে ১৪০ বছর পুরনো আলী আমজাদের ঘড়ি।

গত শতকের তিরিশের দশকের দিকে আসাম প্রদেশের গভর্ণর ছিলেন মাইকেল ক্বীন। তিনি তখন সিলেট সফরে আসেন। তার স্মৃতিকে অম্লান করে রাখতেই এ ব্রীজটি নির্মাণ হয়। ইতিহাসবিদদের মতে, সে সময় আসামের সাথে যোগাযোগের মাধ্যম ছিল ট্রেন। সঙ্গত কারণেই সুরমা নদীতে ব্রীজ স্থাপনের প্রয়োজনীয়তা দেখা দেয়। রেলওয়ে বিভাগ ১৯৩৩ সালে সুরমা নদীর ওপর ব্রীজ নির্মাণের উদ্যোগ নেয় । ১৯৩৬ সালে ব্রীজটি আনুষ্ঠানিকভাবে খুলে দেওয়া হয়। ব্রীজটির নামকরণ করা হয় গভর্ণর মাইকেল ক্বীনের নামে। ক্বীন ব্রীজ লোহা দিয়ে তৈরী।

১৯৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে পাকিস্তানী হানাদার বাহিনী ডিনামাইট দিয়ে ব্রীজের উত্তর পাশের একাংশ উড়িয়ে দেয়। স্বাধীনতার পর কাঠ ও বেইলী পার্টস দিয়ে বিধ্বস্ত অংশটি মেরামত করা হয়। পরবর্তীতে তা হালকা যান চলাচলের জন্য খুলে দেওয়া হয়।

সিলেট শহরের কেন্দ্রস্থলে ক্বীনব্রীজ এর অবস্থান ।

হযরত শাহজালাল (রঃ) মাজার:  সিলেট রেল স্টেশন অথবা কদমতলী বাস স্ট্যান্ড এ নেমে রিকশা বা সিএনজি অটোরিকশাযোগে মাজারে যাওয়া যায়। রিকশা ভাড়া ২০-২৫ টাকা, সিএনজি ভাড়া ৮০-১০০ টাকা।সুরমা নদী পার হয়ে মূল শহরে এসে মাজার এ পৌছাতে হয়। মাজার গেট রোড এ অনেকগুলো আবাসিক হোটেল রয়েছে। 

হজরত শাহপারান (রঃ) মাজার সিলেট সিটির থেকে মাত্র ০৯ কি:মি: দূরে হযরত শাহপরান (র:) মাজার। সিলেট সিটির জেলগেট পয়েন্ট থেকে সি এন জি বা অন্যান্য বাহন দ্বারা শাহপরান বাজারে পাশে হযরত শাহপরান (র:) এর মাজার ।

মালনীছড়া চা বাগান ও অন্যান্য  – উপমহাদেশের প্রথম চা বাগান  মালনীছড়া। ১৮৪৯ সালে এই চা বাগান প্রতিষ্ঠিত। বর্তমানে বেসরকারী তত্তবধানে চা বাগান পরিচালিত হয়ে আসছে। ১৫০০ একর জায়গার উপর এই চা বাগান অবস্থিত। মালনীছড়া চা বাগান ছাড়াও সিলেটে লাক্কাতুরা চা বাগান, আলী বাহার চা বাগান, খাদিম, আহমদ টি স্টেট, লালাখাল টি স্টেট উল্লেখযোগ্য। মালনীছড়া এবং লাক্ষাতুড়া চা বাগান দুইটিই সিলেট শহরের উপকন্ঠে অবস্থিত। শহরের কেন্দ্রস্থল জিন্দাবাজার পয়েন্ট হতে গাড়ীতে মাত্র ১৫ মিনিটের পথ।সিলেট শহর থেকে রিকশাযোগে অথবা অটোরিকশা বা গাড়িতে বিমানবন্দর রোডে চাবাগানপাওয়া যাবে। গাড়িতে যেতে আম্বরখানা পয়েন্ট থেকে ১০ মিনিট এর পথ।রিকশাযোগে যেতে আধঘন্টা লাগবে।

পর্যটন টিলা , মোটেল ও এডভেঞ্চার ওয়ার্ল্ডবিমানবন্দর রোডে মালনীছড়া এবং লাক্ষাতুড়া চা বাগান পেরিয়ে পড়বে পর্যটন টিলা ও মোটেল। পর্যবেক্ষন টাওয়ার, এমিউজম্যান্টে পার্ক, আইস ক্রীম, এবং স্ন্যাকস এবর ব্যবস্থা রয়েছে। সিলেট আম্বর খানা থেকে অটোরিক্সা/রিকশা করে যাতায়াত। 

মনিপুরী জাদুঘর শহরের সুবিদবাজার এলাকায় একটি ভাড়া বাড়িতে প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে এ জাদুঘর। বৃহত্তর সিলেট অঞ্চলে বসবাসরত আদিবাসী সম্প্রদায় মনিপুরীদের শত বছরের কৃষ্টি আর ঐতিহ্য তুলে ধরা হয়েছে এ জাদুঘরের মাধ্যমে।

মিউজিয়াম অব রাজাস’
মরমী কবি হাছন রাজা ও পরিবারের অন্য সদস্যদেও স্মৃতি সংরক্ষণের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এ লক্ষ্যে সিলেট নগরীর প্রানকেন্দ্র জিন্দাবাজারে গড়ে তোলা হয়েছে একটি যাদুঘর। এর নাম দেওয়া হয়েছে মিউজিয়াম অব রাজাস’।

মনিপুরী রাজবাড়ী :মনিপুরী সিলেট তথা বাংলাদেশের আদি সম্প্রদায়ের অন্যতম জনগোষ্ঠি। নগর সিলেটের মির্জাজাঙ্গালে অবস্থিত মনিপুরী রাজবাড়ী প্রাচীন স্থাপত্য কীর্তির অন্যতম নির্দশন। এ ভবনের নির্মাণ শৈলী সিলেট অঞ্চলের কৃষ্টি-সংস্কৃতির অবিচ্ছেদ্য অংশ। এককালের প্রভাবশালী রাজা গম্ভীর সিং এর স্মৃতিধন্য এ বাড়িটি আজ অবহেলিত ও বিলীন প্রায়। বিভিন্ন প্রাকৃতিক দূর্যোগ ও রক্ষণাবেক্ষনের অভাবে প্রকৃত ভবন হারিয়েছে তার স্বকীয়তা। বাড়ীর সুপ্রাচীন প্রধান ফটক, সীমানা দেয়াল, মনোহর কারুকাজের সিড়ি ও বালাখাঁনার ধ্বংসাবশেষই বর্তমান মনীপুরী রাজবাড়ীর স্মৃতি সম্বল। এখনও ধ্বংস স্ত্তপের মতো টিকে থাকা স্থাপনাটি এ বাড়ীসহ সিলেটে বসবাসরত মনিপুরী সম্প্রদায়ের গভীর শ্রদ্ধা-ভক্তির স্থান।

 
শহরের আরো কিছু যায়গা-সিলেট শহরের মাঝে ঘুরতে গেলে ভেটেনারী কলেজ, গৌড়-গোবিন্দের টিলা, এমসি কলেজ, মুণিপুরী মার্কেট, খাদিমনগরে ৩টি টিলার সমন্বয়ে গড়ে উঠা পর্যটন স্থান ও রিসোর্ট জাকারিয়া সিটি  ঘুরে দেখা যায়।

শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয়ঃ বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে সময় কাটবে ভালো।  ক্যাম্পাসে আসলে দেখতে পারবেন শাবির চমৎকার শহীদ মিনার যা টিলার উপর অবস্থিত।

  
জিতু মিয়ার বাড়ি:সিলেট নগরীর শেখঘাটে কাজীর বাজারের দক্ষিণ সড়কের ধারে ১ দশমিক ৩৬৫ একর ভুমি জুড়ে অবস্থিত ঐতিহ্যবাহী জিতু মিয়ার বাড়ি। চুন সুরকি দিয়ে নির্মিত মুসলিম স্থাপত্য কলার অনন্য নিদর্শন এ দালানটি নির্মাণ খান বাহাদুর আবু নছর মোহাম্মদ এহিয়া ওরফে জিতু মিয়া।

শ্রী চৈতন্যদেবের বাড়ি: ষোড়শ শতকে সিলেটের গোলাপগঞ্জ উপজেলার ঢাকাদক্ষিনে পন্ডিত জগন্নাথ মিশ্রের কৃতি সন্তান শ্রী চৈতন্য (বিশ্বম্ভর মিশ্র) বাঙালির আধ্যাত্বিক জীবনে এক বৈপ্লবিক যুগের সূচনা করেন । ব্রাম্মণ্যবাদ ও উগ্র বর্ণবাদের বিরুদ্ধে শ্রী চৈতন্য পরিচালিত গণ বিপ্লবে বাংলার আপামর জনসাধারণ বিপুলভাবে সাড়া দিয়েছিলেন। শ্রী চৈতন্যের সমকালে এবং এর বহুকাল পূর্ব থেকে নবদ্বীপে ঢাকাদক্ষিনের বহু বেদজ্ঞ অধ্যায়ন কিংবা অধ্যাপনার নিমিত্তে বসবাস করতেন । অবস্থান: সিলেট জেলার গোলাপগঞ্জ উপজেলার ঢাকা দক্ষিণ নামক স্থানে।দুরত্ব: সিলেট শহর হতে ৩০ কি.মি।যাতায়াত: সিলেট শহর হতে জকি গঞ্জ বা বিয়ানীবাজার উপজেলা গামী যেকোন বাস সার্ভিসে আপনি ঢাকা দক্ষিণ পর্যন্ত যেতে পারবেন। তারপর মহা প্রভু শ্রী চৈতন্য দেবের বাড়ী যেতে আপনাকে ভ্যান বা রিক্সা নিতে হবে।

জাফলংঃপ্রকৃতি কন্যা হিসাবে সারাদেশে এক নামে পরিচিত সিলেটের জাফলং। খাসিয়া জৈন্তা পাহাড়ের পাদদেশে অবস্থিত জাফলং প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের অপরুপ লীলাভূমি। পিয়াইন নদীর তীরে স্তরে স্তরে বিছানো পাথরের স্তূপ জাফলংকে করেছে আকর্ষণীয়। সীমান্তের ওপারে ইনডিয়ান পাহাড় টিলা, ডাউকি পাহাড় থেকে অবিরাম ধারায় প্রবাহমান জলপ্রপাত, ঝুলন্ত ডাউকি ব্রীজ, পিয়াইন নদীর স্বচ্ছ হিমেল পানি,উঁচু পাহাড়ে গহিন অরণ্য ও শুনশান নিরবতার কারণে এলাকাটি পর্যটকদের দারুণভাবে মোহাবিষ্ট করে। জাফলং এ আপনি দেখবেন চা বাগান ,খাসিয়া পুঞ্জি ও খাসিয়া রাজ বাড়ি এবং বল্লা ঘাট এ পাথর তুলার দৃশ্য। সিলেট জেলার গোয়াইনঘাট উপজেলায় অবস্থিত। সিলেট জেলা সদর হতে সড়ক পথে দুরুত্ব  ৫৬ কি.মি। সিলেট থেকে যাতায়াতঃ সিলেট থেকে আপনি বাস/ মাইক্রোবাস/ সিএনজি চালিত অটোরিক্স্রায় যেতে পারেন জাফলং এ। সময় লাগবে ২ ঘন্টা ।  

জৈন্তাপুরঃ জাফলং থেকে ফিরার পথে যাবেন জৈন্তাপুর বাজার । এখানে রয়েছে জৈন্তা রাজবাড়ি আর দিঘি , খাসিয়াপাড়া আর সাইট্রাস গবেষণাকেন্দ্র ।  টকফল গবেষণা কেন্দ্রে  দেখবেন নানা ধরনের টকফল এর বাগান।এ জায়গাটা জৈন্তা বাজার থেকে আপনি হেটে গেলে ১০ মিনিট লাগবে। জৈন্তাপুর দেখা শেষ করে আসার সময় পাবেন লালাখাল ।এখানে থাকার জন্য আছে জৈন্তা হিল রিসোর্ট। 

লালাখাল: সিলেট শহর হতে লালাখাল যাবার জন্য আপনাকে পাড়ি দিতে হবে ৩৫ কি.মি রাস্তা। আর জাফলং থেকে ফেরার পথে জৈন্তাপুর এর পরে পড়বে লালাখাল।  সিলেট শহর থেকে জাফলং রোডে জৈন্তা থানার সারি নদী। জৈন্তাপুরের সারিঘাটে নামতে হয়। সেখান থেকে ইঞ্জিনচালিত নৌকায় যাওয়া যায় লালাখাল।শীত কালে লালাখালের স্বচ্চ নীল জল রাশি আর দুধারের অপরুপ সোন্দর্য, দীর্ঘ নৌ পথ ভ্রমনের সাধ যেকোন পর্যটকের কাছে এক দূর্লভ আর্কষণ।লাদেশের সবোর্চ্চ বৃষ্ঠিপাতের স্থান এবং রাতের সৌন্দর্যে ভরপুর এই লালাখাল সিলেট জেলার জৈন্তাপুর উপজেলার সন্নিকটে অবস্থিত। সারি নদীর স্বচ্চ জলরাশির উপর দিয়ে নৌকা অথবা স্পীডবোটে করে আপনি যেতে পারেন লালা খালে।  ৪৫ মিনিট যাত্রা শেষে আপনি পৌছে যাবেন লালখাল চা বাগানের ফ্যাক্টরী ঘাটে। ভারতের চেরাপুঞ্জির ঠিক নিচেইলালাখালের অবস্থান।লালাখালের কাছেই আছে নাজিমগড় রিসোর্ট।  

পাংথুমাই, পিয়াইন নদী , বড়হিল ঝর্না ও বিছনাকান্দিঃ পাংথুমাই একটি চোখ জুড়ানো গ্রাম। মেঘালয় রাজ্যের সারি সারি পাহাড় , ঝর্না , ঝর্না থেকে বয়ে আসা পানির স্রোতধারা , আর দিগন্ত বিস্তৃত চারণ ভুমি দেখতে পাবেন এই গ্রামটিতে ।পাংথুমাইয়ে যাওয়া যায় দুটি রাস্তায়। একটি জৈন্তাপুরের সারিঘাট হয়ে আর অন্যটি হচ্ছে গোয়াইনঘাটের সালুটিকর হয়ে । বাহন সিএনজি রিকশা। এই গ্রাম থেকে খুব কাছে দাঁড়িয়ে দেখা যায় ভারতের বড়হীল ঝর্ণা।  এই ঝর্ণার জল মেশে পিয়াইন নদীতে । পিয়াইন নদীতে নৌকা ব্যাবস্থা করে যাওয়া যায় বিছানাকান্দী নামক আর একটা গ্রামে ।   সড়কপথে ও বিছানাকান্দী যাওয়া যায়, সাথে স্থানীয় কাউকে নিয়ে গেলে সুবিধা পাবেন। দেখতে পাবেন সীমান্ত ঘেষা অনেক পাহাড় আর বর্ষার ঝর্না । বিছানাকান্দী হতে সালুটিকর হয়ে ফেরা যায় আবার পাংথুমাই ফিরে গিয়ে জৈন্তাপুরের সারিঘাট  দিয়ে ও ফেরা যায় সিলেট শহরে।

লোভাছড়া চা বাগান ও লোভাছড়া পাথর কোয়ারীঃসিলেট থেকে প্রথমে ৪০ টাকার বাস ভাড়া দিয়ে আসতে হবে কানাইঘাট উপজেলা সদর নৌকা ঘাটে ।তারপর ২৫ টাকার ইন্জিল নৌকা ভাড়া দিয়ে লোভাছড়া যেতে পারবেন। নৌকায় যেতে পথে পড়বে তিন নদীর মোহনা। ডান দিক থেকে এসেছে বরাক, বাম দিক থেকে এসেছে লোভা। বরাক ও লোভা এসে সুরমায় মিশে চলে গেছে সিলেটের দিকে।

ভোলাগঞ্জঃসিলেট জেলার কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা এর অবস্থান। সিলেট থেকে ভোলাগঞ্জের দূরত্ব মাত্র ৩৩ কিলো মিটার।শহর থেকে ভোলাগঞ্জ পর্যন্ত সরাসরি কোন যানবাহন সার্ভিস নেই। আগন্তুকরা সিলেট থেকে টুকেরবাজার পর্যন্ত যাত্রীবাহি বাস অথবা ফোরস্ট্রোকযোগে যাতায়াত করেন। টুকের বাজার থেকে ভোলাগঞ্জ পর্যন্ত রয়েছে বেবিটেক্সি সার্ভিস।ভারতের আসাম প্রদেশের রাজধানী শিলংয়ে এক সময় লোকজন এ রাস্তা দিয়েই যাতায়াত করতো। কালের পরিক্রমায় এখানে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে রজ্জুপথ। নাম ভোলাগঞ্জ রোপওয়ে। দেশের সর্ববৃহৎ ভোলাগঞ্জ পাথর কোয়ারীর অবস্থানও এ এলাকায়। রোপওয়ে, পাথর কোয়ারী আর পাহাড়ী মনোলোভা দৃশ্য অবলোকনের জন্য এখানে প্রতিদিনই আগমন ঘটে পর্যটকদের।

হাকালুকি হাওরঃ হাকালুকি হাওর সিলেটের অন্যতম বৃহৎ হাওর। বড়লেখা, গোলাপগঞ্জ ও ফেঞ্চুগঞ্জ উপজেলায় সেটি বিস্তৃত। প্রাকৃতিক ভারসাম্য বজায় রাখা ছাড়াও মৎস্য সম্পদের এক বিশাল ক্ষেত্র। অতিথি পাখির অন্যতম বিচরণ ক্ষেত্র হাকালুকি হাওর। শীত মৌসুমে হাজার হাজার অতিথি পাখি সেখানে আসে।

সিলেট ভ্রমন

অনেকেই এই সময় সিলেট যাচ্ছেন দেখে গত বছরের পোস্টটা আজকে নোট করে দিলাম। বর্ষায় সিলেটে যাওয়ার সুবিধে হচ্ছে এপার থেকেও ভারতের ঝর্না দেখতে পারবেন; শুধু বৃষ্টি বেশি হলে পাহাড়ি ঢলে বিচানাকান্দী ভয়াবহ হয় আর কি ( বর্ষার শেষে গিয়ে যত সুন্দর পাবেন; ভরা বর্ষায় বিছানাকান্দী এত সুন্দর পাবেন না ) বর্ষাকালে বিছানাকান্দী ।

  • রাতারগুল- বিছানাকান্দি ঘুরে আসলাম এই ট্যুরে; সাথে ৭/৮ জনের গ্রুপ । এর আগে সিলেট ২বার যাওয়া হয়েছে ।
    তখন জাফলং- তামাবিল – হরিপুর গ্যাসফিল্ড- আগুনের পুকুর/পাহাড়/কালো পাহাড়(নাম খেয়াল নাই) দেখা হয়েছে । গত ৩বারের সিলেট ট্যুরের অভিজ্ঞতা থেকেই লিখছি ——.
    সিলেট গেলে প্রথমেই CNG/ রিকশাওয়ালাদের মুখ থেকে যেটা শুনবেন সেটা হচ্ছে সিলেট নাকি “আরেক লন্ডন” ; এখানে সবকিছুর জন্যই নাকি আপনাকে বেশী টাকা দিতে হবে। কিন্তু আমি গত ৩বার গিয়েও একথার কোন যুক্তি খুঁজে পাইনাই !! বরং সিলেটের যে কোন কিছুর খরচ ঢাকা/ চিটাগাং থেকে সস্তা মনে হয়েছে( বিশেষ করে খাবার)। আসলে এসব বলার মানেই হলো আপনার থেকে বেশী টাকা আদায় করা। আমাদের কথা শুনে সহজেই ওরা বুঝে আমরা সিলেটী না আর তখনই ডাবল টাকা আদায় করে।
    * রিকশা থেকে শুরু করে নৌকা/প্রাইভেট গাড়ী ভাড়া সবকিছুতেই আপনাকে Negotiation করতে হবে। একটু শক্ত না হলে ধরা খেতে হবে !
  • খাওয়া দাওয়াঃ
    • সিলেটের মতো এতো ভালো- কম দামে খাবার আমি দেশের কোথাও পাই নাই। পাঁচ ভাই/পানসী তে সারাদিন ৩ বেলা খেয়েও একজন ১০০০ টাকা বিল তুলতে পারবে কিনা সন্দেহ !!
    • *সকালের নাস্তা পানসীতে করতে পারেন( নেহারি-মুরগির সুপ-খিচুরি অবশ্যই খাবেন)। পানসীর পরিবেশ খুবই ভালো। সন্ধায় পানসীর জুস কর্নারের সামনে আড্ডা দিতে পারবেন। খাবারের দাম দেখে আপনি প্রথমে বিশ্বাসই করতে চাইবেন না এতো কমে কীভাবে হোটেল চালায় !!
    • *পাঁচ ভাই হোটেলের খাবারও ভালো । দাম পানসীর মতোই । তবে পানসীর মতো হোটেলের পরিবেশ এতোটা ভালো না । পানসীর জুস কর্নার/বসার স্পেস ভালো-একটু খোলামেলা ।
    • * সিলেটে মাছের আইটেমের দাম বেশী মনে হয়েছে ।
    • * পানসীর খাবারের দাম নীচে ছবি দিয়ে দিলাম ।
    • * আপনি পান না খেলেও সিলেটে গেলে অবশ্যই মিষ্টি পান খাবেন ।
    • * পানসী/পাঁচ ভাই জিন্দা বাজারের কাছেই। দরগাহ(মাজার) থেকে ১০ টাকা রিকশাভাড়া ।
    • *পানসী/পাঁচ ভাই ছাড়া শহরের ভিতরে/ভাইরে অন্য হোটেলে গেলে অবশ্যই খাবারের দাম ভালোভাবে জেনে নিবেন। রেল স্টেশন /বাস স্ট্যান্ডের আশেপাশের দোকানে দাম অনেক বেশি
  • যাতায়াতঃ
  • রাতারগুলঃ
    • জিন্দা বাজার/ দরগাহ গেট/আম্বারখানা টু রাতারগুল CNG ২৫০ টাকা যাওয়া, রিজার্ভ করে নিয়ে যাওয়া ভালো; রাতারগুল থেকে CNG পাওয়া যাবেনা । যাওয়া-আসা ৫০০ টাকা । এক CNG তে পাঁচ জন নেয় ওরা । আপনি রাতারগুল কতক্ষন থাকবেন সেটা জানিয়ে আরো কিছু বাড়িয়ে দিবেন ।
    • * CNG কে অবশ্যই মেইন রাতেরগুল নিয়ে যেতে বলবেন । রাতেরগুল ৩গ্রামের মাঝে; ৩ পথ দিয়েই ঢোকা যায় শুনছি । মোটরঘাট দিয়ে রাতেরগুলে ঢুকতে চাইলে ভরা বর্ষা ছাড়া রাতেরগুল যাওয়া সম্ভব না( ট্যুর বৃথা )। নৌকা ভাড়া ১০০-২০০ তেই হয়। ওরা ৭০০/১০০০ পর্যন্ত বলে !! সবই আপনার দর কষাকষি করতে হবে ভাই !!
      এক নৌকায় ৫ জন বসা যায় । আপনাকে ভয় দেখিয়ে বলতে পারে এক নৌকায় ৩ জনের বেশী হয়না; যাতে ওদের কষ্ট কম হয়; আরেকটা নৌকাও নেয়া হয় ।
    • * রাতারগুলে নির্মাণাধীন ওয়াচটাওয়ার দেখতে পাবেন। ( কোন টাকা লাগেনা ) ;
    • * নৌকা ছাড়া ঘাট/ব্রিজ কোথাও কোন টাকা লাগেনা রাতেরগুলের ভিতরে ।
    • * কোন গাইডের প্রয়োজন নাই রাতেরগুলে ।
    • * দুপুরের রোদ বেশী হয় বলে ঘাটে বাচ্চারা ছাতা ভাড়া দেয় । ছাতা দরকার হলে দর কষাকষি করে ভাড়া করবেন( না হয় নিজে নিয়ে যাবেন) । অনেক সময় নৌকার মাঝি আপনাকে ছাতা ব্যাবহার করতে দিবে । আসার সময় দেখবেন ছাতা ভাড়ার জন্য বেশী টাকা চেয়ে বসবে :3 ভিতরে গাছপালা আছে বলে ছাতা না নিলেও চলে ।
    • * রাতেরগুল দুপুরের মধ্যে দেখা শেষ হলে সেখান থেকে বিছানাকান্দি চলে যেতে পারেন।( শহর থেকে CNG ভাড়ার থেকে রাতেরগুল– বিছানাকান্দি ভাড়া কম। সিলেট-বিছানাকান্দির মাঝের রোড দিয়ে ভিতরে গেলে রাতারগুল ) মইনুল ০১৭৬৪৩০৭২৪৯ (মাঝি)
  • বিছানাকান্দিঃ
    ———————–.

    • * জিন্দা বাজার/ দরগাহ গেট/ আম্বারখানা থেকে হাদারপার CNG ৪০০ টাকা যাওয়া(৫ জন)(*২০১৪, অক্টোবরের হিসাব), আপনি যদি সিলেট শহর থেকে শুধু হাদারপার/ বিছানাকান্দি যেতে চান তাহলে রিজার্ভ করার কোন দরকারই হবেনা। সিলেট টু হাদারপার বাজার CNG সন্ধার পরও চলাচল করে । লোকাল একজন ৮০ টাকা । এক সিএনজিতে ৫*৮০=৪০০ টাকা ।
    • *হাদারপার/হাদারঘাট থেকে ২০/২৫ মিনিট মাটির রাস্তা- ধান ক্ষেতের ভেতর দিয়ে হাঁটতে হাঁটতে বিছানাকান্দি চলে যাবেন । শীতের সময় ধুলা থাকে । মহিলা/শিশু না থাকলে ৪০০/৫০০ টাকা নৌকা ভাড়া করে যাওয়ার কোন মানে হয়না। পাহাড়ের টানে আপনি হাঁটতে হাঁটতে বিছানাকান্দি চলে যাবেন 🙂 কোন গাইডের দরকার নিই । স্থানীয় অনেক মানুষ দেখবেন পথে । ওদের বললেও দিক নির্দেশনা দিয়ে দিবে . বিছানাকান্দি বাজারের আশেপাশেই অনেক স্থানীয় মানুষ থাকে ; ওদের মতো করেই কম খরচে যাতায়াত করবেন। ৩/৪ গুন খরচ দিয়ে যাওয়ার প্রয়োজন কি ?? পোস্টার নিচে ম্যাপ দেখলেই বুঝবেন যে নৌকা ছাড়াও রাস্তা যায়
    • * শুক্রবার বর্ডারে( ভারতের বাজার) হাট বসে। ভারতীয় কাঁঠাল/কমলা/ ফল নাকি সস্তা ( আমরা বাজার পাইনি)। হাট থেকে নেশা/মাদকদ্রব্য কিছু সস্তায় পেলেও কিনবেন না। এগুলো অনেকসময় ভেজাল থাকে আর এসব কিনে ফেরার পথে বিজিবির চেক হয়। ধরা পরলে তো বুঝেনই !! :v
    • * মূল্যবান কিছু নিয়ে ভারতের বাজারে না যাওয়াই ভালো। এক পোস্টে দেখলাম এক জনের দামি ক্যামেরা ওপাশে রেখে দিছে।
    • * বিছানাকান্দির জন্য অবশ্যই অতিরিক্ত কাপড়/তোয়ালে এবং ভেজা কাপড় আনার জন্য পলিথিন নিয়ে যাবেন( পাশের দোকানে পলিথিন পেতেও পারেন) । শীতকালে পানি কমে যায় ।
    • * খুব কাছ থেকে দুই দেশের বর্ডার পিলার দেখবেন । নির্জন স্থান হলেও ভারতের অংশে না যাওয়াই ভালো । ওপারের কোন দুর্ঘটনার জন্য বিজিবি/ বাংলাদেশ দ্বায় নিবেনা সেটা তো বুঝেনই !!
    • * সন্ধার ১ ঘণ্টা আগেই বিছানাকান্দি থেকে রওনা দিন যদি হেঁটে ফিরতে চান । রাতের অন্ধকারে হাদারপার বাজার পথ চিনতে কষ্ট হবে। হাদারপার থেকে রাতেও সিএনজি পাবেন । আমরা সকালে দরগাহ গেট(মাজার) থেকে মাইক্রো ভাড়া করে রাতারগুল- বিছানাকান্দি ঘুরে সন্ধায় শহরে আসি। ২৭০০ টাকা নিয়েছিল(চেয়েছিল ৪০০০) । আপনি চেষ্টা করলে আরো কমাতে পারবেন ।
    • * প্রাইভেট গাড়ী নিয়েও যাতে পারবেন; রাস্তা একটু খারাপ । বাস নিয়ে গেলে সমস্যা হবে ।
  • ———————————————————————————
    • * চা বাগানে কর্মচারীদের থেকে চা না কেনাই ভালো। আমার দেখা মতে ওদের চাই সবথেকে বাজে । ( বলতে গেলে যা মনে হয় কারখানার ঝাড়ু দেয়া ময়লা চা পাতা বিক্রি করে )চা কিনতে হলে মাজারগেটের দুপাশে অনেক দোকান দেখবেন । ভালো চা বড় দানাদার হয় ।
    • *সিলেটে ট্রেনে আসলে শ্রীমঙ্গল-লাউয়াছরা;চা বাগান দেখতে দেখতেই আসবেন।
    • * চা বাগানে ঢুকে কখনোই নারী কর্মীদের ছবি তুলবেন না; ওদের তোলা চা পাতা ভর্তি ব্যাগ/মাথার হ্যাট না ধরাই ভালো; এতে ওরা বিরক্ত হয় । গাইডরাই কথা বলতে মানা করে দিবে ।
    • *অনুমতি ছাড়া চা বাগানে ধুকবেন না । অনেক বাগানে গাইড আছে ; ওদের কিছু টাকা দিয়ে ভিতরে ঘুরতে হয় । রাতারগুল-বিছানাকান্দির পথেই মালিনছরা চা বাগানে ঘুরতে পারেন জাফলং থেকে কয়েকশো গুন সুন্দর মনে হয়েছে বিছানাকান্দি ।
    • আর * তামাবিল ০ পয়েন্ট দেখার কিচ্ছু নাই( মানুষের কৌতূহল) | এর থেকে ভালো আপনি ওই রোড অর্ধেক পথেই লালাখাল ঘুরে আসেন 🙂 তবে তামাবিল রোড থেকে পাশেই ইন্ডিয়ার পাহাড়ের ঝরনা দেখতে পারবেন বর্ষাকালে। একটা রিসোর্টও আছে রাস্তার পাসে যেখান থেকে দূরের বর্ডারের ঝর্না দেখা যায় হরিপুর পরিত্যাক্ত গ্যাসফিল্ড-পুকুরের মাঝে আগুন আসলে তেমন কিছু না। পুকুর থেকে বুদবুদ করে গ্যাস বের হয় । আগুন দিলে জ্বলে আরকি । কাছে আরেকটা পাহাড় আছে ওটা এমনই । আপনার যদি সময় থাকে তাহলে দেখতে পারেন । ১দিন রাতারগুল, বিছানাকান্দি ; আরেকদিন জাফলং-তামাবিল-হরিপুর
    • *জাফলং গেলে ড্রাইভারকে অবশ্যই জাফলং-এর শেষ পর্যন্ত গাড়ী নিয়ে যেতে বলবেন ; নাহয় ঘাটে নামিয়ে দিবে; ওখান থেকে আবার অতিরিক্ত নৌকাভাড়া দিয়ে জাফলং যেতে হবে .
    • *(লালাখাল দেখা হয়নাই; কোন আইডিয়া নাই । তবে জাফলং যাওয়ার মাঝ পথে সারিঘাট এ নেমে নৌকা নিয়ে যেতে হয় শুনেছি )
  • *হোটেল*———————-
  • শুক্র বার/শনিবার অনেকে মাজারে যায় বলে বুকিং না দেয়া থাকলে হোটেল পাওয়া কষ্ট ! হোটেলের ব্যবস্থা না করে বৃহস্পতিবার সিলেটে যাওয়া অনেক বড় বোকামি হবে। দরগাহগেট( মাজারের রাস্তা) ,আম্বরখানার আশেপাশে অনেক হোটেল আছে। হোটেল ডাবল রুম ৪০০-৭০০+ এর মধ্যে দেখেছিলাম তখন। আমাদের ৪টা রুমের প্রয়োজন ছিল ; যতদুর খেয়াল আছে টোটাল ভাড়া থেকে ১০০০ টাকার মতো কমাতে পেরেছিলাম। (খুব যদি বিপদে পরেন/হোটেল আগের থেকে ম্যানেজ করতে না পারেন; তাহলে রিক্সা/অটো ড্রাইভারদের বলবেন। কেমন মানের হোটেল দরকার বুঝিয়ে বললে ওরাই দেখবেন নিয়ে যাবে ) সরকারী চাকুরিজীবি/তাদের পরিবারের সদস্য হলে জেলা পরিষদ ডাক বাংলো, রেস্ট হাউজে থাকা যাবে ; খরচ অনেক কম কিন্তু সেটাও আগের থেকে জানিয়ে যেতে হবে।
  • ————————————————————————————–
  • সব শেষে যেই অনুরোধ । আমরা সভ্য মানুষ; সব বুঝে শুনেও বারবার অসভ্য মানুষের মতো কাজ করি (*প্রচন্ড ক্ষোভ থেকেই অসভ্য বললাম*) ।চিপাচাপা থেকে তথ্য নিয়ে বিছানাকান্দি যেতে পারি আর পরিবেশ নোংরা করলে যে কি ক্ষতি হয় এটা না বোঝার মতো অবুঝ নিশ্চয়ই কেউ না !! বিছানাকান্দি গিয়ে দেখি আগে পিকনিকে আসা মানুষের খাবারের প্যাকেট !! সাইনবোর্ডে লেখা থাকলেও কারো দৃষ্টি নাই !!
    আপনার পানির বোতল/ চিপসের প্যাকেট/সিগারেট/খাবারের প্যাকেট বিছানাকান্দি ফেলে আসবেন না । পারলে অন্যের ফেলে যাওয়া জিনিস ব্যাগে করে নিয়ে আসেন। আমি তো বলবো যদি কাউকে পরিবেশ নোংরা করতে দেখেন তাহলে কানে ধরে শিক্ষা দেন !! -_-আর ঘুরতে গিয়ে অবশ্যই স্থানীয় মানুষের সাথে ভালো ব্যাবহার করুন।