শীতের টাঙ্গুয়ার হাওর

প্রকৃতি ঃ- কবি সুফিয়া কামাল বলেছেন শীত প্রকৃতিকে দেয় রুক্ষতার রূপ। (সম্ভবত কবি তাহিরপুর বেড়াতে যান নি, গেলে নিশ্চই বলতেন শীত আমাকে অনেক কিছু দিয়েছে, আমি শীতকে কিছুই দেই নি ভ্যাসিলিন ছাড়া)। যাকে ভালবাসলে আনন্দ ও প্রেম পাওয়া যায় তাই হল প্রকৃতি।
উপভোগীয় স্থান ঃ-
ভ্রমণ বলতেই আনন্দ। কিন্তু মজাটা তো ভিতরে, চলুন আমরা ভিতরে যাই। প্রথমেই দুইপাশে অপরূপ গ্রামের মধ্য দিয়ে মোটরবাইকে করে, মেঘালয় বিস্তীর্ণ পাহাড় দেখে দেখে, ধূ ধূ মরুভূমির মতো বিশাল বালুচর পেরিয়ে পৌছে গেলেন জাদুর নদী জাদুকাটায়, নদীর পানি আয়নার মতো স্বচ্ছ। নিজের বাস্তব প্রতিবিম্ব এইবার ল্যাবে না জাদুকাটাতেই দেখবেন। ট্রলার দিয়ে নদী পার হলেই পাবেন বারিক্কাটিলা, পাহাড়ের উপরে উঠলেই আপনার চোখে ভেসে উঠবে প্রকৃতির আসল মিলন, যেথায় নদী, পাহাড় এমনকি বালুচর থেকে মেঘালয় এক অসাধারণ সৌন্দর্যরূপ ধারণ করে আছ । যেতে মন চাইবে না কিন্তু যেতে হবে শিমুলবাগান, হাইওয়ে রাস্তার মতো ফাকঁ রেখে রেখে বিশাল লম্বা সারি বাধা বাধানো ভূমির সাথে সমান ও সমান্তরালভাবে বেড়ে উঠা শিমুল গাছ। এখানে প্রত্যেকটা গাছের স্ট্রাক্চার একই রকম যা আপনাকে আরেকটা বাড়তি আনন্দ দিবে। তারপর মন শিমুলবাগানে রেখেই চলে যাবেন বড়ছড়া এখানে পৌছে মোটর সাইকেলের কাজ শেষ। বড়ছড়া রেস্টুরেন্টে খাওয়া দাওয়া শেষে হাটতে হাটতে চলে যাবেন নীলাদ্রী। এখানে পাবেন বাংলাদেশের বান্দরবান, পাহাড়ের উপর থেকে দেখতে পাবেন সূর্যাস্ত। নীলাদ্রী লেকের মায়াবী টান, আর সন্ধার পরপরই ওপার বাংলার সোডিয়ামের অালো আপনাকে যে অনুভূতি দিবে, সেই অনুভূতি আদু ভাই অক্সফোর্ডে চান্স পাইলে পাবে না। অবশেষে এই স্ট্যাটাসে রাত হয়ে গেল। আপনি তো অবশ্যই গাধা না, আপনাকে বিশ্রাম নিতে হবে। বিশ্রামটাও যদি হয় আনন্দঘন তবে জীবনে আর কিছু প্রয়োজন নেই। বিশ্রামটা আনন্দের তখন হবে যদি আপনি নৌকায় রাত্রিযাপনের ব্যবস্থা করেন, নীলাদ্রী থেকে নৌকা করে দুই ঘন্টায় পৌছাবেন টাঙ্গুয়ার হাওরের ওয়াচ টাওয়ারে। যাওয়ার সময় দেখতে পাবেন মিটিমিটি তারার আলো (চাইলে গুনতে ও পারবেন) যা প্রকৃতিকে করবে ধূসর কালো, পাবেন দূরের গ্রাম থেকে জ্বলে ওঠা বাল্ব, আর ওপার বাংলার সোডিয়ামের বাল্ব তো আছেই। হাওরের চরে নৌকা ভিড়িয়ে BBQ PARTY বা যার যা ইচ্ছা করতে পারেন। অার ভোর সকালে উঠেই ওঠেই ওয়াচ টাওয়ার থেকে উপভোগ করতে পারবেন সূর্যোদয়।তবে হ্যা আপনি যদি নীলাদ্রী লেকের সৌন্দর্য উপভোগ করতে চান আর রাত্রিযাপন করতে চান তবে আপনাকে অবশ্যই নৌকা রেডি রাখতে হবে। তা না করলে আপনাকে আবার তাহিরপুর উপজেলায় ব্যাক করতে হবে, যা অবশ্যই কষ্টসাধ্য ও সময়সাপেক্ষ । নৌকা কোথায় পাওয়া যাবে, বা কোথায় আসবে, কীভাবে পৌছতে হবে তা স্থানীয় লোকদের সহায়তা নিতে পারেন। ওই এলাকার মানুষগুলা খুব ফ্রী মাইন্ডেড।
যেভাবে যাবেন ঃ-
পৃথিবীর যেকোন প্রান্ত থেকে সুনামগঞ্জ নতুন ব্রীজ, পরে লেগুনা বা মোটরবাইক করে যাওয়া যায়। তবে মোটরবাইক বেটার হবে। লেগুনায় গেলে আপনি মিস করবেন মেঘালয়ের বিস্তৃত পাহাড়গুলো। আর গ্রামের অপরূপ দৃশ্য । একটি মোটরবাইকে করে সবই স্পট ঘুরে দেখতে পারবেন শুধু টাঙ্গুয়ার হাওর ছাড়া। মোটরবাইক সাথে রেখেই আপনাকে সবগুলা স্পট ঘুরে দেখতে হবে, বাইক ছাড়লে আপনাকে পস্তাতে হবে। কেননা অন্য স্পটে গেলে বাইক ভাড়া বেশী চাইবে।
খরচ ঃ- একটা বাইকে ২ জন করে। যদি আপনি কোন স্পট না ঘুরে ডিরেক্ট নীলাদ্রী চলে যান তবে ভাড়া মাথাপিছু ১৫০ টাকা আর স্পটগুলা ঘুরে ঘুরে গেলে দিতে হবে ২০০-২৫০ টাকা। আর রাত্রিযাপনের জন্য নৌকা লাগবে ৩৫০০-৪০০০ টাকা। নিজেরা রান্না করতে না পারলে নৌকার মাঝিকে বললে রান্না করে দিবে তবে এর জন্য কোন চার্জ লাগবে না যদি আপনি নৌকা কনর্ফাম করার আগে বলেন যে রান্না করে দিতে হবে।
বি ঃ দ্রঃ সকল আনন্দের মূল আনন্দ হল রাতে। রাতে না থাকলে ভ্রমণ পরিপূর্ণ নাও হতে পারে। যদি আপনি রাতে থাকেন তবে ভ্রমণ শেষে খোদার কাছে প্রার্থনা করবেন আপনাকে কচ্ছপের হায়াত দেওয়ার জন্য।

Post Copied From:Hussain Himu>Travelers of Bangladesh (ToB)

Leave a Reply

Your email address will not be published.