যারা সিলেট যাবেন তিন দিনের জন্য

ঘননীল আকাশ। সামনে সারি সারি পাহাড়। পাহাড়ের চূড়ায় মেঘের কুন্ডলী। নৈকট্যে গেলে ছেঁড়া ছেঁড়া মেঘ। মেঘের বুক চিরে নেমে আসা ঝর্ণা। নিচে নেমে জল ও পাথরের সম্পর্কে শাঁ শাঁ শব্দ। সেই জলই আবার মিশে যাচ্ছে পিয়াইনের সাথে। পাথরে পাথরে বন্ধুত্ব। পাথরে ও নদীতে মিতালি। পাথরে মানুষে জীবনযাপনের যুদ্ধ। চারিদিকে বিস্তৃত সবুজ। পাহাড়ে পাহাড়ে সবুজের জলকেলি। বিস্তির্ণ মাঠে সবুজের চাদর। এগুলো দৃশ্যকল্প নয়, সিলেটের বিছনাকান্দি জুড়ে এমন দৃশ্য যেন সত্যিই কেউ ফ্রেম বন্দি করে লটকে দিয়েছে আকাশের সাথে। দূর থেকে মনে হবে এই মেঘ, এই মানুষ, এই পাহাড়-নদী কিংবা পাথরের স্থিরচিত্রই এগুলো।দুই পাশে আকাশচুম্বী পাহাড়, তার মাঝে বয়ে চলা ঝরনার স্রোত। পানি একেবারে পরিষ্কার, স্বচ্ছ, এবং টলমলে। আর ছোট-বড় নানান আকৃতি আর রঙের পাথর তো আছেই। পানি এত স্বচ্ছ যে পানির তলার পাথর কিংবা নিজের ডুবে থাকা পা পর্যন্ত স্পষ্ট দেখা যায়।

কিভাবে যাবেন: ১) ঢাকা থেকে বাস, ট্রেন বা বিমানে করে সিলেটে যাওয়া যায়। ২) সিলেট শিশু পার্কের বা আম্বরখানার সামনে থেকে পাওয়া যায় গোয়াইনঘাটগামী লেগুনা অথবা সিএনজি অটো রিক্সা। ভাড়া ৮০-১০০টাকা। গোয়াইনঘাট থেকে হাদারপার বাজার যেতে হবে সিএনজি অটো রিক্সায়। ভাড়া ৩০-৪০ টাকা। হাদারপার থেকে নৌকা নিয়ে যেতে হবে বিছনাকান্দিতে। ভাড়া যাওয়া আসা ৮০০-১০০০+ টাকা। সিলেট শহর থেকে সিএনজি নিয়ে জেতেপারেন রিজার্ভ ১২০০-১৫০০ টাকা।

কখন যাবেন: সারা বছর যাওয়া যায় তবে বর্ষা কালে গেলে আসল রুপ দেখা যায়।বর্ষাকাল বলেই নৌকায় যাতায়াত করা যায়, শুকনা মৌসুমে এক ঘন্টার মত হাটতে হয় । জায়গাটায় পৌছার পর কিছুক্ষণ বিমুগ্ধ নয়নে শুধু চেয়ে ছিলাম। সত্যিকার অর্থেই ছবির চেয়ে অনেক বেশি সুন্দর।

সিলেট জেলায় ঘোরাঘুরির যায়গা গুলো
সিলেট ও সংলগ্ন জেলা গুলোতে (সুনামগঞ্জ,মৌলভিবাজার-শ্রীমঙ্গল, হবিগঞ্জ) ঘোরাঘুরির বেশ কিছু গন্তব্য আছে । এখানে সিলেট জেলায় ঘোরাঘুরির যায়গা গুলোর কিছু তথ্য দেয়া হলো।

ক্বীন ব্রিজ, আলী আমজাদের ঘড়ি ও সুরমা নদীর পাড় : শহরের মাঝে সুরমা নদীর উপর প্রাচীন লোহার ব্রীজ। নিচে নদীর পাড়ে সময় কাটানে যায়। নৌকা নিয়ে ঘোরা ও মন্দ না । ব্রীজের কাছেই আছে ১৪০ বছর পুরনো আলী আমজাদের ঘড়ি। গত শতকের তিরিশের দশকের দিকে আসাম প্রদেশের গভর্ণর ছিলেন মাইকেল ক্বীন। তিনি তখন সিলেট সফরে আসেন। তার স্মৃতিকে অম্লান করে রাখতেই এ ব্রীজটি নির্মাণ হয়। ইতিহাসবিদদের মতে, সে সময় আসামের সাথে যোগাযোগের মাধ্যম ছিল ট্রেন। সঙ্গত কারণেই সুরমা নদীতে ব্রীজ স্থাপনের প্রয়োজনীয়তা দেখা দেয়। রেলওয়ে বিভাগ ১৯৩৩ সালে সুরমা নদীর ওপর ব্রীজ নির্মাণের উদ্যোগ নেয় । ১৯৩৬ সালে ব্রীজটি আনুষ্ঠানিকভাবে খুলে দেওয়া হয়। ব্রীজটির নামকরণ করা হয় গভর্ণর মাইকেল ক্বীনের নামে। ক্বীন ব্রীজ লোহা দিয়ে তৈরী। ১৯৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে পাকিস্তানী হানাদার বাহিনী ডিনামাইট দিয়ে ব্রীজের উত্তর পাশের একাংশ উড়িয়ে দেয়। স্বাধীনতার পর কাঠ ও বেইলী পার্টস দিয়ে বিধ্বস্ত অংশটি মেরামত করা হয়। পরবর্তীতে তা হালকা যান চলাচলের জন্য খুলে দেওয়া হয়। সিলেট শহরের কেন্দ্রস্থলে ক্বীনব্রীজ এর অবস্থান ।

হযরত শাহজালাল (রঃ) মাজার: সিলেট রেল স্টেশন অথবা কদমতলী বাস স্ট্যান্ড এ নেমে রিকশা বা সিএনজি অটোরিকশাযোগে মাজারে যাওয়া যায়। রিকশা ভাড়া ২০-২৫ টাকা, সিএনজি ভাড়া ৮০-১০০ টাকা।সুরমা নদী পার হয়ে মূল শহরে এসে মাজার এ পৌছাতে হয়। মাজার গেট রোড এ অনেকগুলো আবাসিক হোটেল রয়েছে। হজরত শাহপারান (রঃ) মাজার সিলেট সিটির থেকে মাত্র ০৯ কি:মি: দূরে হযরত শাহপরান (র:) মাজার। সিলেট সিটির জেলগেট পয়েন্ট থেকে সি এন জি বা অন্যান্য বাহন দ্বারা শাহপরান বাজারে পাশে হযরত শাহপরান (র:) এর মাজার ।

মালনীছড়া চা বাগান ও অন্যান্য – উপমহাদেশের প্রথম চা বাগান মালনীছড়া। ১৮৪৯ সালে এই চা বাগান প্রতিষ্ঠিত। বর্তমানে বেসরকারী তত্তবধানে চা বাগান পরিচালিত হয়ে আসছে। ১৫০০ একর জায়গার উপর এই চা বাগান অবস্থিত। মালনীছড়া চা বাগান ছাড়াও সিলেটে লাক্কাতুরা চা বাগান, আলী বাহার চা বাগান, খাদিম, আহমদ টি স্টেট, লালাখাল টি স্টেট উল্লেখযোগ্য। মালনীছড়া এবং লাক্ষাতুড়া চা বাগান দুইটিই সিলেট শহরের উপকন্ঠে অবস্থিত। শহরের কেন্দ্রস্থল জিন্দাবাজার পয়েন্ট হতে গাড়ীতে মাত্র ১৫ মিনিটের পথ।সিলেট শহর থেকে রিকশাযোগে অথবা অটোরিকশা বা গাড়িতে বিমানবন্দর রোডে চাবাগানপাওয়া যাবে। গাড়িতে যেতে আম্বরখানা পয়েন্ট থেকে ১০ মিনিট এর পথ।রিকশাযোগে যেতে আধঘন্টা লাগবে।

পর্যটন টিলা , মোটেল ও এডভেঞ্চার ওয়ার্ল্ডবিমানবন্দর রোডে মালনীছড়া এবং লাক্ষাতুড়া চা বাগান পেরিয়ে পড়বে পর্যটন টিলা ও মোটেল। পর্যবেক্ষন টাওয়ার, এমিউজম্যান্টে পার্ক, আইস ক্রীম, এবং স্ন্যাকস এবর ব্যবস্থা রয়েছে। সিলেট আম্বর খানা থেকে অটোরিক্সা/রিকশা করে যাতায়াত। মনিপুরী জাদুঘরশহরের সুবিদবাজার এলাকায় একটি ভাড়া বাড়িতে প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে এ জাদুঘর। বৃহত্তর সিলেট অঞ্চলে বসবাসরত আদিবাসী সম্প্রদায় মনিপুরীদের শত বছরের কৃষ্টি আর ঐতিহ্য তুলে ধরা হয়েছে এ জাদুঘরের মাধ্যমে।

মিউজিয়াম অব রাজাস’ মরমী কবি হাছন রাজা ও পরিবারের অন্য সদস্যদেও স্মৃতি সংরক্ষণের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এ লক্ষ্যে সিলেট নগরীর প্রানকেন্দ্র জিন্দাবাজারে গড়ে তোলা হয়েছে একটি যাদুঘর। এর নাম দেওয়া হয়েছে মিউজিয়াম অব রাজাস’। মনিপুরী রাজবাড়ীমনিপুরী সিলেট তথা বাংলাদেশের আদি সম্প্রদায়ের অন্যতম জনগোষ্ঠি। নগর সিলেটের মির্জাজাঙ্গালে অবস্থিত মনিপুরী রাজবাড়ী প্রাচীন স্থাপত্য কীর্তির অন্যতম নির্দশন। এ ভবনের নির্মাণ শৈলী সিলেট অঞ্চলের কৃষ্টি-সংস্কৃতির অবিচ্ছেদ্য অংশ। এককালের প্রভাবশালী রাজা গম্ভীর সিং এর স্মৃতিধন্য এ বাড়িটি আজ অবহেলিত ও বিলীন প্রায়। বিভিন্ন প্রাকৃতিক দূর্যোগ ও রক্ষণাবেক্ষনের অভাবে প্রকৃত ভবন হারিয়েছে তার স্বকীয়তা। বাড়ীর সুপ্রাচীন প্রধান ফটক, সীমানা দেয়াল, মনোহর কারুকাজের সিড়ি ও বালাখাঁনার ধ্বংসাবশেষই বর্তমান মনীপুরী রাজবাড়ীর স্মৃতি সম্বল। এখনও ধ্বংস স্ত্তপের মতো টিকে থাকা স্থাপনাটি এ বাড়ীসহ সিলেটে বসবাসরত মনিপুরী সম্প্রদায়ের গভীর শ্রদ্ধা-ভক্তির স্থান। শহরের আরো কিছু যায়গা-সিলেট শহরের মাঝে ঘুরতে গেলে সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় , গৌড়-গোবিন্দের টিলা, এমসি কলেজ, মুণিপুরী মার্কেট, খাদিমনগরে ৩টি টিলার সমন্বয়ে গড়ে উঠা পর্যটন স্থান ও রিসোর্ট জাকারিয়া সিটি ঘুরে দেখা যায়। শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয় বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে সময় কাটবে ভালো। ক্যাম্পাসে আসলে দেখতে পারবেন শাবির চমৎকার শহীদ মিনার যা টিলার উপর অবস্থিত। জিতু মিয়ার বাড়িসিলেট নগরীর শেখঘাটে কাজীর বাজারের দক্ষিণ সড়কের ধারে ১ দশমিক ৩৬৫ একর ভুমি জুড়ে অবস্থিত ঐতিহ্যবাহী জিতু মিয়ার বাড়ি। চুন সুরকি দিয়ে নির্মিত মুসলিম স্থাপত্য কলার অনন্য নিদর্শন এ দালানটি নির্মাণ খান বাহাদুর আবু নছর মোহাম্মদ এহিয়া ওরফে জিতু মিয়া।

শ্রী চৈতন্যদেবের বাড়ি: ষোড়শ শতকে সিলেটের গোলাপগঞ্জ উপজেলার ঢাকাদক্ষিনে পন্ডিত জগন্নাথ মিশ্রের কৃতি সন্তান শ্রী চৈতন্য (বিশ্বম্ভর মিশ্র) বাঙালির আধ্যাত্বিক জীবনে এক বৈপ্লবিক যুগের সূচনা করেন । ব্রাম্মণ্যবাদ ও উগ্র বর্ণবাদের বিরুদ্ধে শ্রী চৈতন্য পরিচালিত গণ বিপ্লবে বাংলার আপামর জনসাধারণ বিপুলভাবে সাড়া দিয়েছিলেন। শ্রী চৈতন্যের সমকালে এবং এর বহুকাল পূর্ব থেকে নবদ্বীপে ঢাকাদক্ষিনের বহু বেদজ্ঞ অধ্যায়ন কিংবা অধ্যাপনার নিমিত্তে বসবাস করতেন । অবস্থান: সিলেট জেলার গোলাপগঞ্জ উপজেলার ঢাকা দক্ষিণ নামক স্থানে।দুরত্ব: সিলেট শহর হতে ৩০ কি.মি।যাতায়াত: সিলেট শহর হতে জকি গঞ্জ বা বিয়ানীবাজার উপজেলা গামী যেকোন বাস সার্ভিসে আপনি ঢাকা দক্ষিণ পর্যন্ত যেতে পারবেন। তারপর মহা প্রভু শ্রী চৈতন্য দেবের বাড়ী যেতে আপনাকে ভ্যান বা রিক্সা নিতে হবে।

জাফলংপ্রকৃতি কন্যা হিসাবে সারাদেশে এক নামে পরিচিত সিলেটের জাফলং। খাসিয়া জৈন্তা পাহাড়ের পাদদেশে অবস্থিত জাফলং প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের অপরুপ লীলাভূমি। পিয়াইন নদীর তীরে স্তরে স্তরে বিছানো পাথরের স্তূপ জাফলংকে করেছে আকর্ষণীয়। সীমান্তের ওপারে ইনডিয়ান পাহাড় টিলা, ডাউকি পাহাড় থেকে অবিরাম ধারায় প্রবাহমান জলপ্রপাত, ঝুলন্ত ডাউকি ব্রীজ, পিয়াইন নদীর স্বচ্ছ হিমেল পানি,উঁচু পাহাড়ে গহিন অরণ্য ও শুনশান নিরবতার কারণে এলাকাটি পর্যটকদের দারুণভাবে মোহাবিষ্ট করে। জাফলং এ আপনি দেখবেন চা বাগান ,খাসিয়া পুঞ্জি ও খাসিয়া রাজ বাড়ি এবং বল্লা ঘাট এ পাথর তুলার দৃশ্য। সিলেট জেলার গোয়াইনঘাট উপজেলায় অবস্থিত। সিলেট জেলা সদর হতে সড়ক পথে দুরুত্ব ৫৬ কি.মি। সিলেট থেকে যাতায়াতঃ সিলেট থেকে আপনি বাস/ মাইক্রোবাস/ সিএনজি চালিত অটোরিক্স্রায় যেতে পারেন জাফলং এ। সময় লাগবে ২ ঘন্টা । জৈন্তাপুরজাফলং থেকে ফিরার পথে যাবেন জৈন্তাপুর বাজার । এখানে রয়েছে জৈন্তা রাজবাড়ি আর দিঘি , খাসিয়াপাড়া আর সাইট্রাস গবেষণাকেন্দ্র । টকফল গবেষণা কেন্দ্রে দেখবেন নানা ধরনের টকফল এর বাগান।এ জায়গাটা জৈন্তা বাজার থেকে আপনি হেটে গেলে ১০ মিনিট লাগবে। জৈন্তাপুর দেখা শেষ করে আসার সময় পাবেন লালাখাল ।এখানে থাকার জন্য আছে জৈন্তা হিল রিসোর্ট।

লালাখাল: সিলেট শহর হতে লালাখাল যাবার জন্য আপনাকে পাড়ি দিতে হবে ৩৫ কি.মি রাস্তা। আর জাফলং থেকে ফেরার পথে জৈন্তাপুর এর পরে পড়বে লালাখাল। সিলেট শহর থেকে জাফলং রোডে জৈন্তা থানার সারি নদী। জৈন্তাপুরের সারিঘাটে নামতে হয়। সেখান থেকে ইঞ্জিনচালিত নৌকায় যাওয়া যায় লালাখাল।শীত কালে লালাখালের স্বচ্চ নীল জল রাশি আর দুধারের অপরুপ সোন্দর্য, দীর্ঘ নৌ পথ ভ্রমনের সাধ যেকোন পর্যটকের কাছে এক দূর্লভ আর্কষণ।লাদেশের সবোর্চ্চ বৃষ্ঠিপাতের স্থান এবং রাতের সৌন্দর্যে ভরপুর এই লালাখাল সিলেট জেলার জৈন্তাপুর উপজেলার সন্নিকটে অবস্থিত। সারি নদীর স্বচ্চ জলরাশির উপর দিয়ে নৌকা অথবা স্পীডবোটে করে আপনি যেতে পারেন লালা খালে। ৪৫ মিনিট যাত্রা শেষে আপনি পৌছে যাবেন লালখাল চা বাগানের ফ্যাক্টরী ঘাটে। ভারতের চেরাপুঞ্জির ঠিক নিচেইলালাখালের অবস্থান।লালাখালের কাছেই আছে নাজিমগড় রিসোর্ট।

পাংথুমাই, পিয়াইন নদী , বড়হিল ঝর্না ও বিছনাকান্দি পাংথুমাই একটি চোখ জুড়ানো গ্রাম। মেঘালয় রাজ্যের সারি সারি পাহাড় , ঝর্না , ঝর্না থেকে বয়ে আসা পানির স্রোতধারা , আর দিগন্ত বিস্তৃত চারণ ভুমি দেখতে পাবেন এই গ্রামটিতে ।পাংথুমাইয়ে যাওয়া যায় দুটি রাস্তায়। একটি জৈন্তাপুরের সারিঘাট হয়ে আর অন্যটি হচ্ছে গোয়াইনঘাটের সালুটিকর হয়ে । বাহন সিএনজি রিকশা। এই গ্রাম থেকে খুব কাছে দাঁড়িয়ে দেখা যায় ভারতের বড়হীল ঝর্ণা। এই ঝর্ণার জল মেশে পিয়াইন নদীতে । পিয়াইন নদীতে নৌকা ব্যাবস্থা করে যাওয়া যায় বিছানাকান্দী নামক আর একটা গ্রামে । সড়কপথে ও বিছানাকান্দী যাওয়া যায়, সাথে স্থানীয় কাউকে নিয়ে গেলে সুবিধা পাবেন। দেখতে পাবেন সীমান্ত ঘেষা অনেক পাহাড় আর বর্ষার ঝর্না । বিছানাকান্দী হতে সালুটিকর হয়ে ফেরা যায় আবার পাংথুমাই ফিরে গিয়ে জৈন্তাপুরের সারিঘাট দিয়ে ও ফেরা যায় সিলেট শহরে।

লোভাছড়া চা বাগান ও লোভাছড়া পাথর কোয়ারীসিলেট থেকে প্রথমে ৪০ টাকার বাস ভাড়া দিয়ে আসতে হবে কানাইঘাট উপজেলা সদর নৌকা ঘাটে ।তারপর ২৫ টাকার ইন্জিল নৌকা ভাড়া দিয়ে লোভাছড়া যেতে পারবেন। নৌকায় যেতে পথে পড়বে তিন নদীর মোহনা। ডান দিক থেকে এসেছে বরাক, বাম দিক থেকে এসেছে লোভা। বরাক ও লোভা এসে সুরমায় মিশে চলে গেছে সিলেটের দিকে। ভোলাগঞ্জসিলেট জেলার কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা এর অবস্থান। সিলেট থেকে ভোলাগঞ্জের দূরত্ব মাত্র ৩৩ কিলো মিটার।শহর থেকে ভোলাগঞ্জ পর্যন্ত সরাসরি কোন যানবাহন সার্ভিস নেই। আগন্তুকরা সিলেট থেকে টুকেরবাজার পর্যন্ত যাত্রীবাহি বাস অথবা ফোরস্ট্রোকযোগে যাতায়াত করেন। টুকের বাজার থেকে ভোলাগঞ্জ পর্যন্ত রয়েছে বেবিটেক্সি সার্ভিস।ভারতের আসাম প্রদেশের রাজধানী শিলংয়ে এক সময় লোকজন এ রাস্তা দিয়েই যাতায়াত করতো। কালের পরিক্রমায় এখানে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে রজ্জুপথ। নাম ভোলাগঞ্জ রোপওয়ে। দেশের সর্ববৃহৎ ভোলাগঞ্জ পাথর কোয়ারীর অবস্থানও এ এলাকায়। রোপওয়ে, পাথর কোয়ারী আর পাহাড়ী মনোলোভা দৃশ্য অবলোকনের জন্য এখানে প্রতিদিনই আগমন ঘটে পর্যটকদের।

হাকালুকি হাওর হাকালুকি হাওর সিলেটের অন্যতম বৃহৎ হাওর। বড়লেখা, গোলাপগঞ্জ ও ফেঞ্চুগঞ্জ উপজেলায় সেটি বিস্তৃত। প্রাকৃতিক ভারসাম্য বজায় রাখা ছাড়াও মৎস্য সম্পদের এক বিশাল ক্ষেত্র। অতিথি পাখির অন্যতম বিচরণ ক্ষেত্র হাকালুকি হাওর। শীত মৌসুমে হাজার হাজার অতিথি পাখি সেখানে আসে।

সিলেট ট্যুর প্লান ( তিন দিনের জন্য)
প্রথম দিন : জাফলং – সংগ্রামপুঞ্জি ঝরনা, খাসিয়া পল্লী, শাহ পরানের মাজার ১। আম্বরখানা থেকে সারাদিন এর জন্য সিএনজি ভাড়া ( ১৫০০-২০০০ টাকা) , বাসেও যাওয়া যায় কম খরচে কিন্তু যাত্রা পথের ফিলিংস টা পাওয়া যাবেনা জাফলং থেকে ফিরে আসার সময় শাহ পরানের মাজার ঘুরে আসতে পারেন, একই রোডে পড়ে ২। জাফলং এ গিয়ে ঝরনা টা অবশ্যই যাওয়ার চেষ্টা করবেন, জিরো পয়েন্ট, খাসিয়া পল্লী তে যাবেন, খাসিয় পল্লী তে নৌকা ব্যক্তিগট ভাবে ভাড়া করার দরকার নেই, কিছু সময় পর পর পার হেড ১০-২০ টাকা করে নৌকা ছাড়ে , অইখানে যাবেন আর খাসিয়া পল্লী তে ২০০-৩০০ টাকা তে ভ্যানের মত কিছু গাড়ী পাওয়া যায়, ঐগুলা ভাড়া করবেন, তবে জাফলং এর ঐ পাড়ে খাওয়া দাওয়া করবেননা, দাম অত্যন্ত বেশি, এই পাড়ে এসে খাবেন। ৩। সকাল সকাল যাওয়ার চেষ্টা করবেন , যাওয়ার রাস্তা অত ভালনা ৪। বিকেলে ঘুরে আসতে পারেন শাহজালাল ( রহ:) এর মাজার, আরেকটূ দূরে শাহজালাল ইউনিভার্সিটির সুন্দর ক্যাম্পাস।

দ্বিতীয় দিনঃ রাতারগুল, লালাখাল ২। আবার সিএনজি ভাড়া সারা দিনের জন্য , আপনার ভ্রমনের জায়গা গুলা পরিষ্কার করে বলে নিবেন (ভাড়া ১২০০-১৫০০ টাকা হওয়া উচিত) ২। প্রথমে রাতারগুলা যাবেন, ঐখানে ঘাটে গিয়ে নৌকা ভাড়া করতে হবে ( ৫০০-৭০০ টাকা হওয়া উচিত), আপনাকে ঘুরিয়ে নিয়ে আসবে রাতারগুল সোয়াম্প ফরেষ্ট , চেষ্টা করবেন লাইফ জ্যাকেট সাথে রাখার জন্য ৩। রাতারগুল দেখা হয়ে গেলে চলে আসবেন লালাখাল ( ঘন্টা খানেক সময় কাটাবেন লালাখাল এ, নৌকা ভাড়া করতে হবে, খরচ ৫০০-৭০০ টাকা) ৪। সন্ধার আগে পরে সময় পেলে ঘুরে আসতে পারেন শহরের মাঝখানেই লাকাতুয়া চা বাগান, মালিনীছড়া চা বাগান, শহরের মাঝেই ( রিকশা ভাড়া- ৫০ টাকা)

তৃতীয় দিনঃ সৌন্দর্যের রানী বিছানাকান্দী , পান্থুমাই, লক্ষনছড়া ১। সারাদিন এর জন্য সিএনজি ভাড়া ১৫০০-১৭০০ টাকা ২। সকাল সকাল রওনা দিবেন, যদি সবগুলা জায়গা কাভার করতে চান, বিছানাকান্দি যেতে ২.৫০ ঘন্টা থেকে ৩ ঘন্টা সময় লাগে ৩। হাদারপাড় নৌকা ঘাটে সিএনজি আপনাকে নামিয়ে দিবে, ঐখান থেকে ইঞ্জিন চালিত নৌকা ভাড়া করবেন, তাকে বলে নিবেন সবগুলা লোকেশন এর কথা (বিছানাকান্দী , পান্থুমাই, লক্ষনছড়া), ভাড়া নিবে ১০০০-১২০০ টাকা ৪। পান্থুমাই এ বেশি সময় দিবেননা, জাস্ট দেখে চলে আসবেন, এই প্লেস এ নাও যেতে পারেন, খুব একটা আহামরি কিছুনা, নৌকা ভাড়া কমে যাবে ৫।

লক্ষনছড়ায় যান, পানিতে কিছু সময় কাটান ৬। লাস্ট এ যাবেন বিছানাকান্দি তে ( আমার উপদেশ ২ঃ৩০-৩ টার মধ্যে বিছানাকান্দি তে পৌছাতে পারলে ভাল, বেলা সাড়ে পাচ টার পর ঐখানে থাকতে দেয়না , তাহলে আপনি ৩ ঘন্টার মত সময় পাবেন, পানিত গোসল করেন, ছবি তুলেন , উপভোগ করেন প্রকৃতির অপরূপ খেয়াল, ঐখানে ইন্ডীয়ান অনেক কোয়ালিটি প্রোডাক্টস কিনতে পাওয়া যায়, পছন্দ হলে কিনতে পারবেন।

আমার পরামর্শ তৃতীয় দিন বিছানাকান্দিতে যাওয়ার সময় আপনি হোটেলে চেক আউট করে যান তাহলে হোটেলে দুইদিন এর ভাড়া দিতে হবে আর ঐদিন রাতেই বাস অথবা ট্রেনের টিকিট কেটে রাখতে পারেন, ঢাকা থেকে ট্রেন ভাড়া শোভন ৩০০ টাকা, নন এসি বাস ভাড়া ৪০০-৪৫০ টাকা

খাওয়া দাওয়া কোথায় করবেনঃ পানশী , পাচভাই

একটা রোমান্টিক সময় কাটান ফর কাপলঃ শেষ দিন বিছানাকান্দি থেকে ফিরে আসার পর বাস বা ট্রেনে উঠার আগে হাতে কিছু সময় থাকবে , সেই সময় টা আপনি সুরমা রিভার ক্রুইজে কাটাতে পারেন ইচ্ছা করলে , সন্ধ্যা কালীন সময়ের জনক্স খুব সম্ভবত ৩৫০ টাকা নিবে পার হেড ( ফাইভ আইটেম এর ব্যুফে খাবার, নাচা গানা , আর সুরমা নদী তে ঘুরে বেড়াবেন ১ ঘন্টা, জীবনের একটা ভাল অভিজ্ঞতা হয়ে থাকবে আপনার জন্য)

কিছু এক্সট্রা বিষয়ঃ
** সিএনজি, নৌকা এর যে ভাড়া গুলা দেওয়া হয়েছে, সবাই অবশ্যি দামাদামি করবেন ভাল করে। ** অনেক জায়গায় আপনাকে চা কিনতে বলবে কিন্তু কোন জায়গা থেকে চা কিনবেন না, ভাল চা নয় ** সিলেটের সাতকড়া মশলা বিখ্যাত , আসার সময় কিনতে আনতে পারেন ** কেউ যদি দুই দিনের জন্য প্রোগ্রাম করেন তবে জাফলং এর সাথে লালাখাল রাখবেন আর বিছানাকান্দি এর সাথে রাতারগুল রাখবেন তবে অবশ্যি সকাল ৭ টার দিকে রওয়ানা দিবেন ।

১) গ্রুপ করে গেলে ভাল । ২) খাবারের জন্য আগে দাম জিজ্ঞেস করে নেয়া উচিত । ৩) রিক্সা চালকদের ড্রাইভার বলে ডাকবেন, মামা বা অন্য কিছু না বলাই ভাল। ৪) বর্ষাকালে গেলে রেইন কোট , ছাতা নিয়ে যাবেন। ৫) ভারতীয় সিমানার কাছাকাছি তাই সীমানার ব্যাপারে সতর্ক থাকবেন । ৬) আমাদের প্রকৃতি রক্ষার দায়িত্ব আমাদের তাই কোন চিপ্স,চানাচুর বা পানির বোতল ফেলে আসবেন না।

সিলেট জেলায় ঘোরাঘুরির যায়গা গুলো

সিলেট ও সংলগ্ন জেলা গুলোতে (সুনামগঞ্জ,মৌলভিবাজার-শ্রীমঙ্গল, হবিগঞ্জ) ঘোরাঘুরির বেশ কিছু গন্তব্য আছে । এখানে সিলেট জেলায় ঘোরাঘুরির যায়গা গুলোর কিছু তথ্য দেয়া হলো।

ক্বীন ব্রিজ, আলী আমজাদের ঘড়ি ও সুরমা নদীর পাড় : শহরের মাঝে সুরমা নদীর উপর প্রাচীন লোহার ব্রীজ। নিচে নদীর পাড়ে সময় কাটানে যায়। নৌকা নিয়ে ঘোরা ও মন্দ না । ব্রীজের কাছেই আছে ১৪০ বছর পুরনো আলী আমজাদের ঘড়ি।

গত শতকের তিরিশের দশকের দিকে আসাম প্রদেশের গভর্ণর ছিলেন মাইকেল ক্বীন। তিনি তখন সিলেট সফরে আসেন। তার স্মৃতিকে অম্লান করে রাখতেই এ ব্রীজটি নির্মাণ হয়। ইতিহাসবিদদের মতে, সে সময় আসামের সাথে যোগাযোগের মাধ্যম ছিল ট্রেন। সঙ্গত কারণেই সুরমা নদীতে ব্রীজ স্থাপনের প্রয়োজনীয়তা দেখা দেয়। রেলওয়ে বিভাগ ১৯৩৩ সালে সুরমা নদীর ওপর ব্রীজ নির্মাণের উদ্যোগ নেয় । ১৯৩৬ সালে ব্রীজটি আনুষ্ঠানিকভাবে খুলে দেওয়া হয়। ব্রীজটির নামকরণ করা হয় গভর্ণর মাইকেল ক্বীনের নামে। ক্বীন ব্রীজ লোহা দিয়ে তৈরী।

১৯৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে পাকিস্তানী হানাদার বাহিনী ডিনামাইট দিয়ে ব্রীজের উত্তর পাশের একাংশ উড়িয়ে দেয়। স্বাধীনতার পর কাঠ ও বেইলী পার্টস দিয়ে বিধ্বস্ত অংশটি মেরামত করা হয়। পরবর্তীতে তা হালকা যান চলাচলের জন্য খুলে দেওয়া হয়।

সিলেট শহরের কেন্দ্রস্থলে ক্বীনব্রীজ এর অবস্থান ।

হযরত শাহজালাল (রঃ) মাজার:  সিলেট রেল স্টেশন অথবা কদমতলী বাস স্ট্যান্ড এ নেমে রিকশা বা সিএনজি অটোরিকশাযোগে মাজারে যাওয়া যায়। রিকশা ভাড়া ২০-২৫ টাকা, সিএনজি ভাড়া ৮০-১০০ টাকা।সুরমা নদী পার হয়ে মূল শহরে এসে মাজার এ পৌছাতে হয়। মাজার গেট রোড এ অনেকগুলো আবাসিক হোটেল রয়েছে। 

হজরত শাহপারান (রঃ) মাজার সিলেট সিটির থেকে মাত্র ০৯ কি:মি: দূরে হযরত শাহপরান (র:) মাজার। সিলেট সিটির জেলগেট পয়েন্ট থেকে সি এন জি বা অন্যান্য বাহন দ্বারা শাহপরান বাজারে পাশে হযরত শাহপরান (র:) এর মাজার ।

মালনীছড়া চা বাগান ও অন্যান্য  – উপমহাদেশের প্রথম চা বাগান  মালনীছড়া। ১৮৪৯ সালে এই চা বাগান প্রতিষ্ঠিত। বর্তমানে বেসরকারী তত্তবধানে চা বাগান পরিচালিত হয়ে আসছে। ১৫০০ একর জায়গার উপর এই চা বাগান অবস্থিত। মালনীছড়া চা বাগান ছাড়াও সিলেটে লাক্কাতুরা চা বাগান, আলী বাহার চা বাগান, খাদিম, আহমদ টি স্টেট, লালাখাল টি স্টেট উল্লেখযোগ্য। মালনীছড়া এবং লাক্ষাতুড়া চা বাগান দুইটিই সিলেট শহরের উপকন্ঠে অবস্থিত। শহরের কেন্দ্রস্থল জিন্দাবাজার পয়েন্ট হতে গাড়ীতে মাত্র ১৫ মিনিটের পথ।সিলেট শহর থেকে রিকশাযোগে অথবা অটোরিকশা বা গাড়িতে বিমানবন্দর রোডে চাবাগানপাওয়া যাবে। গাড়িতে যেতে আম্বরখানা পয়েন্ট থেকে ১০ মিনিট এর পথ।রিকশাযোগে যেতে আধঘন্টা লাগবে।

পর্যটন টিলা , মোটেল ও এডভেঞ্চার ওয়ার্ল্ডবিমানবন্দর রোডে মালনীছড়া এবং লাক্ষাতুড়া চা বাগান পেরিয়ে পড়বে পর্যটন টিলা ও মোটেল। পর্যবেক্ষন টাওয়ার, এমিউজম্যান্টে পার্ক, আইস ক্রীম, এবং স্ন্যাকস এবর ব্যবস্থা রয়েছে। সিলেট আম্বর খানা থেকে অটোরিক্সা/রিকশা করে যাতায়াত। 

মনিপুরী জাদুঘর শহরের সুবিদবাজার এলাকায় একটি ভাড়া বাড়িতে প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে এ জাদুঘর। বৃহত্তর সিলেট অঞ্চলে বসবাসরত আদিবাসী সম্প্রদায় মনিপুরীদের শত বছরের কৃষ্টি আর ঐতিহ্য তুলে ধরা হয়েছে এ জাদুঘরের মাধ্যমে।

মিউজিয়াম অব রাজাস’
মরমী কবি হাছন রাজা ও পরিবারের অন্য সদস্যদেও স্মৃতি সংরক্ষণের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এ লক্ষ্যে সিলেট নগরীর প্রানকেন্দ্র জিন্দাবাজারে গড়ে তোলা হয়েছে একটি যাদুঘর। এর নাম দেওয়া হয়েছে মিউজিয়াম অব রাজাস’।

মনিপুরী রাজবাড়ী :মনিপুরী সিলেট তথা বাংলাদেশের আদি সম্প্রদায়ের অন্যতম জনগোষ্ঠি। নগর সিলেটের মির্জাজাঙ্গালে অবস্থিত মনিপুরী রাজবাড়ী প্রাচীন স্থাপত্য কীর্তির অন্যতম নির্দশন। এ ভবনের নির্মাণ শৈলী সিলেট অঞ্চলের কৃষ্টি-সংস্কৃতির অবিচ্ছেদ্য অংশ। এককালের প্রভাবশালী রাজা গম্ভীর সিং এর স্মৃতিধন্য এ বাড়িটি আজ অবহেলিত ও বিলীন প্রায়। বিভিন্ন প্রাকৃতিক দূর্যোগ ও রক্ষণাবেক্ষনের অভাবে প্রকৃত ভবন হারিয়েছে তার স্বকীয়তা। বাড়ীর সুপ্রাচীন প্রধান ফটক, সীমানা দেয়াল, মনোহর কারুকাজের সিড়ি ও বালাখাঁনার ধ্বংসাবশেষই বর্তমান মনীপুরী রাজবাড়ীর স্মৃতি সম্বল। এখনও ধ্বংস স্ত্তপের মতো টিকে থাকা স্থাপনাটি এ বাড়ীসহ সিলেটে বসবাসরত মনিপুরী সম্প্রদায়ের গভীর শ্রদ্ধা-ভক্তির স্থান।

 
শহরের আরো কিছু যায়গা-সিলেট শহরের মাঝে ঘুরতে গেলে ভেটেনারী কলেজ, গৌড়-গোবিন্দের টিলা, এমসি কলেজ, মুণিপুরী মার্কেট, খাদিমনগরে ৩টি টিলার সমন্বয়ে গড়ে উঠা পর্যটন স্থান ও রিসোর্ট জাকারিয়া সিটি  ঘুরে দেখা যায়।

শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয়ঃ বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে সময় কাটবে ভালো।  ক্যাম্পাসে আসলে দেখতে পারবেন শাবির চমৎকার শহীদ মিনার যা টিলার উপর অবস্থিত।

  
জিতু মিয়ার বাড়ি:সিলেট নগরীর শেখঘাটে কাজীর বাজারের দক্ষিণ সড়কের ধারে ১ দশমিক ৩৬৫ একর ভুমি জুড়ে অবস্থিত ঐতিহ্যবাহী জিতু মিয়ার বাড়ি। চুন সুরকি দিয়ে নির্মিত মুসলিম স্থাপত্য কলার অনন্য নিদর্শন এ দালানটি নির্মাণ খান বাহাদুর আবু নছর মোহাম্মদ এহিয়া ওরফে জিতু মিয়া।

শ্রী চৈতন্যদেবের বাড়ি: ষোড়শ শতকে সিলেটের গোলাপগঞ্জ উপজেলার ঢাকাদক্ষিনে পন্ডিত জগন্নাথ মিশ্রের কৃতি সন্তান শ্রী চৈতন্য (বিশ্বম্ভর মিশ্র) বাঙালির আধ্যাত্বিক জীবনে এক বৈপ্লবিক যুগের সূচনা করেন । ব্রাম্মণ্যবাদ ও উগ্র বর্ণবাদের বিরুদ্ধে শ্রী চৈতন্য পরিচালিত গণ বিপ্লবে বাংলার আপামর জনসাধারণ বিপুলভাবে সাড়া দিয়েছিলেন। শ্রী চৈতন্যের সমকালে এবং এর বহুকাল পূর্ব থেকে নবদ্বীপে ঢাকাদক্ষিনের বহু বেদজ্ঞ অধ্যায়ন কিংবা অধ্যাপনার নিমিত্তে বসবাস করতেন । অবস্থান: সিলেট জেলার গোলাপগঞ্জ উপজেলার ঢাকা দক্ষিণ নামক স্থানে।দুরত্ব: সিলেট শহর হতে ৩০ কি.মি।যাতায়াত: সিলেট শহর হতে জকি গঞ্জ বা বিয়ানীবাজার উপজেলা গামী যেকোন বাস সার্ভিসে আপনি ঢাকা দক্ষিণ পর্যন্ত যেতে পারবেন। তারপর মহা প্রভু শ্রী চৈতন্য দেবের বাড়ী যেতে আপনাকে ভ্যান বা রিক্সা নিতে হবে।

জাফলংঃপ্রকৃতি কন্যা হিসাবে সারাদেশে এক নামে পরিচিত সিলেটের জাফলং। খাসিয়া জৈন্তা পাহাড়ের পাদদেশে অবস্থিত জাফলং প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের অপরুপ লীলাভূমি। পিয়াইন নদীর তীরে স্তরে স্তরে বিছানো পাথরের স্তূপ জাফলংকে করেছে আকর্ষণীয়। সীমান্তের ওপারে ইনডিয়ান পাহাড় টিলা, ডাউকি পাহাড় থেকে অবিরাম ধারায় প্রবাহমান জলপ্রপাত, ঝুলন্ত ডাউকি ব্রীজ, পিয়াইন নদীর স্বচ্ছ হিমেল পানি,উঁচু পাহাড়ে গহিন অরণ্য ও শুনশান নিরবতার কারণে এলাকাটি পর্যটকদের দারুণভাবে মোহাবিষ্ট করে। জাফলং এ আপনি দেখবেন চা বাগান ,খাসিয়া পুঞ্জি ও খাসিয়া রাজ বাড়ি এবং বল্লা ঘাট এ পাথর তুলার দৃশ্য। সিলেট জেলার গোয়াইনঘাট উপজেলায় অবস্থিত। সিলেট জেলা সদর হতে সড়ক পথে দুরুত্ব  ৫৬ কি.মি। সিলেট থেকে যাতায়াতঃ সিলেট থেকে আপনি বাস/ মাইক্রোবাস/ সিএনজি চালিত অটোরিক্স্রায় যেতে পারেন জাফলং এ। সময় লাগবে ২ ঘন্টা ।  

জৈন্তাপুরঃ জাফলং থেকে ফিরার পথে যাবেন জৈন্তাপুর বাজার । এখানে রয়েছে জৈন্তা রাজবাড়ি আর দিঘি , খাসিয়াপাড়া আর সাইট্রাস গবেষণাকেন্দ্র ।  টকফল গবেষণা কেন্দ্রে  দেখবেন নানা ধরনের টকফল এর বাগান।এ জায়গাটা জৈন্তা বাজার থেকে আপনি হেটে গেলে ১০ মিনিট লাগবে। জৈন্তাপুর দেখা শেষ করে আসার সময় পাবেন লালাখাল ।এখানে থাকার জন্য আছে জৈন্তা হিল রিসোর্ট। 

লালাখাল: সিলেট শহর হতে লালাখাল যাবার জন্য আপনাকে পাড়ি দিতে হবে ৩৫ কি.মি রাস্তা। আর জাফলং থেকে ফেরার পথে জৈন্তাপুর এর পরে পড়বে লালাখাল।  সিলেট শহর থেকে জাফলং রোডে জৈন্তা থানার সারি নদী। জৈন্তাপুরের সারিঘাটে নামতে হয়। সেখান থেকে ইঞ্জিনচালিত নৌকায় যাওয়া যায় লালাখাল।শীত কালে লালাখালের স্বচ্চ নীল জল রাশি আর দুধারের অপরুপ সোন্দর্য, দীর্ঘ নৌ পথ ভ্রমনের সাধ যেকোন পর্যটকের কাছে এক দূর্লভ আর্কষণ।লাদেশের সবোর্চ্চ বৃষ্ঠিপাতের স্থান এবং রাতের সৌন্দর্যে ভরপুর এই লালাখাল সিলেট জেলার জৈন্তাপুর উপজেলার সন্নিকটে অবস্থিত। সারি নদীর স্বচ্চ জলরাশির উপর দিয়ে নৌকা অথবা স্পীডবোটে করে আপনি যেতে পারেন লালা খালে।  ৪৫ মিনিট যাত্রা শেষে আপনি পৌছে যাবেন লালখাল চা বাগানের ফ্যাক্টরী ঘাটে। ভারতের চেরাপুঞ্জির ঠিক নিচেইলালাখালের অবস্থান।লালাখালের কাছেই আছে নাজিমগড় রিসোর্ট।  

পাংথুমাই, পিয়াইন নদী , বড়হিল ঝর্না ও বিছনাকান্দিঃ পাংথুমাই একটি চোখ জুড়ানো গ্রাম। মেঘালয় রাজ্যের সারি সারি পাহাড় , ঝর্না , ঝর্না থেকে বয়ে আসা পানির স্রোতধারা , আর দিগন্ত বিস্তৃত চারণ ভুমি দেখতে পাবেন এই গ্রামটিতে ।পাংথুমাইয়ে যাওয়া যায় দুটি রাস্তায়। একটি জৈন্তাপুরের সারিঘাট হয়ে আর অন্যটি হচ্ছে গোয়াইনঘাটের সালুটিকর হয়ে । বাহন সিএনজি রিকশা। এই গ্রাম থেকে খুব কাছে দাঁড়িয়ে দেখা যায় ভারতের বড়হীল ঝর্ণা।  এই ঝর্ণার জল মেশে পিয়াইন নদীতে । পিয়াইন নদীতে নৌকা ব্যাবস্থা করে যাওয়া যায় বিছানাকান্দী নামক আর একটা গ্রামে ।   সড়কপথে ও বিছানাকান্দী যাওয়া যায়, সাথে স্থানীয় কাউকে নিয়ে গেলে সুবিধা পাবেন। দেখতে পাবেন সীমান্ত ঘেষা অনেক পাহাড় আর বর্ষার ঝর্না । বিছানাকান্দী হতে সালুটিকর হয়ে ফেরা যায় আবার পাংথুমাই ফিরে গিয়ে জৈন্তাপুরের সারিঘাট  দিয়ে ও ফেরা যায় সিলেট শহরে।

লোভাছড়া চা বাগান ও লোভাছড়া পাথর কোয়ারীঃসিলেট থেকে প্রথমে ৪০ টাকার বাস ভাড়া দিয়ে আসতে হবে কানাইঘাট উপজেলা সদর নৌকা ঘাটে ।তারপর ২৫ টাকার ইন্জিল নৌকা ভাড়া দিয়ে লোভাছড়া যেতে পারবেন। নৌকায় যেতে পথে পড়বে তিন নদীর মোহনা। ডান দিক থেকে এসেছে বরাক, বাম দিক থেকে এসেছে লোভা। বরাক ও লোভা এসে সুরমায় মিশে চলে গেছে সিলেটের দিকে।

ভোলাগঞ্জঃসিলেট জেলার কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা এর অবস্থান। সিলেট থেকে ভোলাগঞ্জের দূরত্ব মাত্র ৩৩ কিলো মিটার।শহর থেকে ভোলাগঞ্জ পর্যন্ত সরাসরি কোন যানবাহন সার্ভিস নেই। আগন্তুকরা সিলেট থেকে টুকেরবাজার পর্যন্ত যাত্রীবাহি বাস অথবা ফোরস্ট্রোকযোগে যাতায়াত করেন। টুকের বাজার থেকে ভোলাগঞ্জ পর্যন্ত রয়েছে বেবিটেক্সি সার্ভিস।ভারতের আসাম প্রদেশের রাজধানী শিলংয়ে এক সময় লোকজন এ রাস্তা দিয়েই যাতায়াত করতো। কালের পরিক্রমায় এখানে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে রজ্জুপথ। নাম ভোলাগঞ্জ রোপওয়ে। দেশের সর্ববৃহৎ ভোলাগঞ্জ পাথর কোয়ারীর অবস্থানও এ এলাকায়। রোপওয়ে, পাথর কোয়ারী আর পাহাড়ী মনোলোভা দৃশ্য অবলোকনের জন্য এখানে প্রতিদিনই আগমন ঘটে পর্যটকদের।

হাকালুকি হাওরঃ হাকালুকি হাওর সিলেটের অন্যতম বৃহৎ হাওর। বড়লেখা, গোলাপগঞ্জ ও ফেঞ্চুগঞ্জ উপজেলায় সেটি বিস্তৃত। প্রাকৃতিক ভারসাম্য বজায় রাখা ছাড়াও মৎস্য সম্পদের এক বিশাল ক্ষেত্র। অতিথি পাখির অন্যতম বিচরণ ক্ষেত্র হাকালুকি হাওর। শীত মৌসুমে হাজার হাজার অতিথি পাখি সেখানে আসে।