ছোট ভ্রমণ বিরুলিয়া, সাভার

কেন আসবেনঃ

১৫মিনিটের হাটাপথের ভেতর ১০-১৫টা জমিদার বাড়ি ।সাথে তুরাগ নদীর সোন্দর্য তো আছেই ।

আজকের ছোট্ট গ্রাম প্রায় ১০০ বছর আগে ছিল বিরুলিয়া নগরী। মিরপুর বেড়িবাঁধ থেকে নৌকায় তুরাগ নদী পার হলেই বিরুলিয়া। বর্ষাকালে গ্রামটিকে মনে হয় দ্বীপ। আগে ছিল ১৪-১৫টি, এখন আছে ৭-৮টি নকশাবহুল শতবর্ষী ভবন। এগুলোয় বসবাস করতেন তারকচন্দ্র সাহা, গোপিবাবু, নিতাইবাবু, রজনী ঘোষ প্রমুখ ব্যবসায়ী। বংশী, ধলেশ্বরী ও তুরাগ নদী পথে তাঁরা ব্যবসা-বাণিজ্য করতেন। তারা এখানে বসে নিলাম কিনতেন আর পরিচালনা করতেন জমিদারীর। আর এখানেই একসময় বসতি ছিল আদি ঢাকেশ্বরী বস্ত্রালয় এর কর্ণধার এর পিতৃপুরুষদের। চমৎকার ইট বিছানো রাস্তায় পশ্চিমে আগাতেই প্রথম চেখে পড়বে ৮৫ বছর পুরোনো শ্রী শ্রী বৃন্দাবন চন্দ্র জিউ বিগ্রহ মন্দির। সামেনে নানান ধরণের দোকান/বাড়ি – মাটির, টিনের, আধাপাকা, বিল্ডিং। বর্তমান বাসিন্দা নারায়ণচন্দ্র সাহা জানান, তাঁদের ইট-সুরকির বাড়িটি ১৩২৫ বাংলা সনে তাঁর দাদা তৈরি করেন। দাদা ছিলেন পাট ব্যবসায়ী। বর্তমানে গ্রামটিতে বাস করে আড়াইশ পরিবার। মসজিদ, মন্দির, স্কুল, কবরস্থান, শ্মশানঘাট ও বাজার আছে। বহুদিন আগের তৈরি মাটির ঘরও চোখে পড়ে। গ্রামের প্রধান রাস্তাটি সরু এবং ইটের সোলিং করা। এটি তারকচন্দ্র সাহা সড়ক নামে পরিচিত।

কিভাবে আসবেন :

মিরপুর-১ থেকে রিকসা অথবা বাস এ বেড়িবাঁধ এর বিরুলিয়া বাস স্ট্যান্ড , বাস স্ট্যান্ড এর পাশেই ঘাট… ২টাকা নৌকা ভাড়া

২টাকার নৌকা ভাড়া দিয়ে বিরুলিয়া বাস স্ট্যান্ড থেকে ওপারে গেলেই দেখতে পারবেন এক অবাক নগরী…

অসাধারন সুন্দর কৃত্রিম ঝর্না স্বাধীনতা যাদুঘর

অসাধারন সুন্দর কৃত্রিম এই ঝর্নাটি রয়েছে স্বাধীনতা যাদুঘরের ভেতর।

তবে এটাকে যাদুঘর না বলে, আর্ট গ্যালারি/ফটো গ্যালারি বলা যায় অবশ্য। যদিও স্থাপনাটিতে মিউজিয়ামের তেমন উপাদান নাই, তবুও ভেতরের পরিবেশটা অসাধারন লেগেছে আমার কাছে এর আর্কিটেকচারাল ভিউর কারনে।

মাটি থেকে প্রায় এক/দেড় তলা নিচের এই হলরুম গুলাতে প্রবেশ করলে কিছুক্ষনের জন্য মনে হবে অন্য কোন জগতে প্রবেশ করেছেন। সবচেয়ে বেশী ভালো লাগবে ভিতরের দুটা বড় হলওয়ের মাঝখানের রুমটাতে এই রুমটিতে ঢুকলে। ছাদ ফুঁড়ে প্রাকৃতিক আলোর সাথে ঝর্নার মতো পানির ধারা গোল হয়ে নিচের হাউজে এসে পড়ে। এক অসাধারণ দৃশ্য সেটি। যার দিকে চুপচাপ তাকিয়ে আনমনা হয়ে অনেকক্ষণ সময় পার করে দেয়া যাবে এখানে বসে।

স্থানঃ সোহরাওয়ার্দী উদ্যান, শাহবাগ, ঢাকা।।

যেতে হবেঃ
বাংলাদেশের যে কোন যায়গা থেকে বাসে, ট্রেনে, লঞ্চে বা বিমানে ঢাকা। ঢাকায় নেমে যে কোন যানবাহনে করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পাশে সোহরাওয়ার্দি উদ্যানে প্রবেশ করলেই অনেক উচু একটি স্তম্ভ দেখতে পাবেন, সেটির নাম স্বাধীনতা স্তম্ভ। তার পাশেই রয়েছে এই যাদুঘরটি। আর যাদুঘরের ভেতরেই এই ঝর্ণাটি।

ঘুরে আসুন গোলাপ এর রাজ্য

কম সময়ে কাছে কোথাও একদিনে ঘুরে আসতে পারবেন এমন অনেক জায়গাই আছে ঢাকার আশে পাশে। তারমধ্যে খুব সুন্দর আর মন ভালো করে দেয়ার মতো একটি জায়গা হলো গোলাপ গ্রাম। বিশ্বাস করুন, এই গ্রাম আপনার যান্ত্রিক জীবনের অনেকটা ক্লান্তিই দূর করে দিবে।

বাসেও যাওয়া যায় আবার ইঞ্জিন চালিত নৌকা করে যাওয়া যায়। আমার মতে নৌকা করে যাওয়া ভাল। মন ভাল হয়ে যাবে।

ঢাকা শহরের যেকোন প্রান্ত থেকে মিরপুর-১ কিংবা মাজার রোড নেমে রিকশা ঠিক করে দিয়াবাড়ি বটতলা ঘাট যাবেন (এটা মিরপুর এর দিয়াবাড়ি, উত্তরার না)। ভাড়া নেবে ৩০-৩৫ টাকা মত।

বটতলা ঘাট থেকে সাহদুল্লাহপুর ঘাটের উদ্দেশ্যে ৩০ মিনিট পর পর ইঞ্জিন চালিত নৌকা ছাড়ে। সাহদুল্লাহপুর যেতে যেতে ৪৫ মিনিট-১ ঘণ্টা লাগবে। সেখানে একেক জনের জন্য ২০ টাকা করে নিবে।

অথবা হাতে চালানো নৌকা রিজার্ভ করতে পারেন। সময় লাগবে আড়াই-৩ ঘন্টা মত। দিয়াবাড়ি বটতলা ঘাট থেকে সাহদুল্লাহপুর ঘাটে যাওয়ার সময়টা আপনি সত্যি মুগ্ধ হয়ে থাকবেন।

সাহদুল্লাপুর ঘাটে পৌঁছানোর পর ঘাটের বট গাছের নিচে বসে চা-নাস্তা করে নিতে পারেন। এরপর পুরো গ্রামটা হেঁটে ঘুরবেন। আমি যতটা ভেবেছিলাম তার থেকেও বেশি সুন্দর এই গ্রাম। পুরোটাই যেন গোলাপের বাগান! যতদূর যাবেন গোলাপে ঢাকা চারপাশ আপনাকে মুগ্ধ করে রাখবে। পুরোটা গ্রামকে বলা যায় গোলাপ গ্রাম। উঁচু জমিগুলো ছেয়ে আছে গোলাপে। লাল, হলুদ, সাদা—কত বর্ণের যে গোলাপ তার কোনো ইয়ত্তা নেই।

কিংবা নৌকা থেকে নেমে অটো তে করে ৫ টাকা দিয়ে সোজা গোলাপের বাজারে যেতে পারেন। ওই বাজার থেকেই সারাদেশে ফুল যায়। ঢাকার বেশি ভাগ ফুল এখান থেকে আসে। শাহবাগসহ রাজধানীর বিভিন্ন ফুলের বাজারগুলোতে গোলাপের প্রধান যোগান দেন এখানকার চাষিরা। গ্রামে প্রতিদিন সন্ধ্যায় বসে গোলাপের হাট। ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে অসংখ্য ব্যবসায়ী এসে ভিড় জমান সেখানে। জমতে থাকে বেচাকেনা, চলে রাত পর্যন্ত।

গ্রামের সবখানে শুধু ফুলের বাগান। অন্য কিছু চোখে পরে নাই।

মন ভাল করার জন্য এর চেয়ে ভাল জায়গা আর হতে পারে না। সারাদিন ফুলের রাজ্যে কাটিয়ে দিলেন। চাইলে অনেকগুলো ফুল কিনে আনতে পারবেন, খুব সস্তা দাম। ৫০ টা গোলাপ এর দাম মাত্র ৮০-১০০ টাকা।

বাসে যেতে চাইলে মাজার এর সামনে কোনাবাড়ী বাসস্ট্যান্ড থেকে বাস ছেড়ে যায়। ওখান থেকে সরাসরি আক্রান বাজার। ভাড়া ২০ টাকা। আক্রান বাজার থেকে অটো তে করে ফুলের বাজারে কিংবা সাহদুল্লাহপুর গ্রাম ১০ টাকা।

কি কি দেখবেনঃ গোলাপের ক্ষেত, বিরুলিয়াতে আছে রজনীগন্ধা আর গ্লডিওলার বাগান, বেশ কয়েকটি জমিদারবাড়ি, বিরুলিয়া ব্রিজের গোড়া থেকে হাতের বাম দিকে মিনিট দুয়েক হাঁটলেই সুদর্শন প্রাচীন বটগাছ। রাস্তায় যাওয়ার সময় দেখা পেতে পারেন মহিষের গাড়ি চালিয়ে নিয়ে যাচ্ছে গাড়িয়াল। এ বিলুপ্তপ্রায় দৃশ্যটি দেখার সৌভাগ্য হয়েছিল আমার “নৌকায় করে গোলাপের দেশে ইভেন্টে” যাওয়ার সময়।

কোথায় খাবেনঃ সাদুল্লাহপুর যেখানে অটো থামে সেখানেই খাবারের হোটেল আছে, তবে খুবই নিম্নমানের। ভাল হয় ঢাকা থেকে সঙ্গে করে খাবার নিয়ে গেলে।

অন্যান্য সুযোগ সুবিধাঃ ১০০% সেইফ এন্ড সিকিওর। মেয়েরা যেতে পারবে। আমাদের সাথে ২ জন মেয়ে ছিল। অটো থামার ওখানেই সাদুল্লাহপুর নৌকা ঘাট। পাশেই মাজার সংলগ্ন একটা মসজিদ আছে। এখানে টয়লেটের ব্যাবস্থা আছে। মাজারের ভেতরের পরিবেশটা খুবই ছায়া সুনিবিড়। বিশাল বিশাল দুটো বটগাছের নিচে আড্ডা জমাতে পারেন। গাছের নিচে বসে শীতল বাতাসে গা জুড়াতে জুড়াতে সামনের নৌকা ঘাটের দিকে তাকিয়ে ধানভর্তি নৌকা দেখবেন নদীর বুকে চলাচল করতে।

রুট প্ল্যান-১ঃ টঙ্গি ষ্টেশন থেকে কামারপাড়া হয়ে সি এন জি রিজার্ভ নিয়ে বিরুলিয়া ব্রিজ। ভাড়া ২০০ টাকা। বিরুলিয়া ব্রিজ থেকে অটোতে ১০ টাকা ভাড়ায় আক্রান বাজার, সেখান থেকে অটোতে ১০ টাকায় সাদুল্লাহপুর। বা ডাইরেক্ট ২০ টাকায় বিরুলিয়া ব্রিজ থেকে সাদুল্লাহপুর।

রুট প্ল্যান-২ঃ উত্তরা হাউজ বিল্ডিং, নর্থ টাওয়ার বা মাসকট প্লাজা থেকে সোনারগাঁ জনপথ ধরে লেগুনাতে দিয়াবাড়ি, তারপর একটু হেটে মেইনরোড, লোকাল গাড়িতে উঠে বিরুলিয়া ব্রিজ। হেঁটেও যেতে পারবেন। বিরুলিয়া থেকে প্ল্যান১ এর মত বাকিটা। বা এখান থেকে নৌকা রিজার্ভ নিয়ে সরাসরি সাদুল্লাহপুর। রিজার্ভ ভাড়া আমার কাছ থেকে ৫০০ নিছিলো। ২৫ জনের মত বসা যায়।

রুট প্ল্যান-৩ঃ মিরপুর ১ থেকে দিয়াবাড়ি বটতলা। তারপর লোকাল নৌকায় জনপ্রতি ২০ টাকা ভাড়ায় ডাইরেক্ট সাদুল্লাহপুর ঘাট।
সব থেকে বেস্ট রুট হচ্ছে রুট প্ল্যান-১। কারণ এইপথে দারুণ সব গোলাপের ক্ষেত। রাস্তার দুপাশ জুড়েই। একেবারে পুরো রাস্তা। অটো থামিয়ে থামিয়ে সবগুলো গোলাপের বাগান কাভার করতে পারবেন।

* নৌকা কিন্ত ৬ টার পর চলাচল বন্ধ হয়ে যায়।

** ঢাকা থেকে খাবার নিয়ে যেতে পারেন। অবশ্য ঐখানে মুটামুটি মানের বেশ কিছু খাবার হোটেল আছে।

*** গোলাপ বেচাকেনার বাজারে ঢুকতেই ডান দিকে এক চাচা পেয়াজি বিক্রয় করে। খেয়ে আসতে ভুলবেন না.

Post Copied From : Rafikuzzaman Rasel to Travelers of Bangladesh

ভূমি স্বর্গ কাশ্মীর ভ্রমণ পরিকল্পনা

কাশ্মীর হিমালয়ান পর্বতমালার সবচেয়ে বড় উপত্যকা ,কাশ্মীরকে বলা হয় ভূস্বর্গ । মোগল বাদশাহ জাহাঙ্গীর কাশ্মীরকে প্রথম তুলনা করেছিলেন স্বর্গের সঙ্গে। তাঁর আকুল আকাঙ্ক্ষা ছিল কাশ্মীরের তৃণভূমিতে মৃত্যুবরণ করার। তিনি ফার্সি ভাষায় বলেছিলেন, ‘আগার ফেরদৌস বে-রোহী যামীন আস্ত্। হামীন আস্ত্, হামীন আস্ত্, হামীন আস্ত্। অর্থাৎ পৃথিবীতে কোনো বেহেশত থেকে থাকে, তাহলে তা এখানে, এখানে, এখানে। মোঘল সম্রাটরা দিল্লীর গ্রীষ্মের তাপদাহ থেকে নিস্তার পেতে অবকাশ যাপনের জন্য ছুটে আসতেন কাশ্মীরে। চশমাশাহী, পরিমহল, শালিমার, নিশাত, ভেরি নাগ ইত্যাদি তারই স্বাক্ষ্য বহন করছে। শুধু কি মোগল বাদশারা ? বর্তমানে সমস্ত পৃথিবী থেকেই ভ্রমণপিপাসু মানুষেরা ভূস্বর্গ কাশ্মীর দেখার জন্য প্রতিনিয়ত ছুটে আসেন এখানে । তো চলুন আমরা জানার বুঝার চেষ্টা করি বাংলাদেশ থেকে এই ভুস্বর্গে আমরা কিভাবে সহজে এবং কম খরচে ঘুরে আসতে পারি ।

কাশ্নীর যাবার উপযুক্ত সময় কখন : কাশ্মীর ঘোরার উপযুক্ত সময় এপ্রিল থেকে অক্টোবর পর্যন্ত। তবে কাশ্মীরের পুরো রুপ দেখতে চাইলে আপনাকে অন্তত তিনবার যেতে হবে। — এপ্রিল থেকে মে বসন্তকালঃ এই সময় ফুলে ভরা ভ্যালী। টিউলিপ ফুলও দেখতে পারবেন। আর শীতের পরপরই তাই Snow ও অনেক। — সেপ্টেম্বর থেকে অক্টোবর শরৎকালঃ এই সময়ে Snow কিছুটা কম থাকবে। তবে উপরের দিকে পাওয়া যাবে। যেমন, গুলমার্গ গন্ডোলার ২য় ফেজে, সোনামার্গের থাজিওয়াস হিমবাহে। এই সময় ফল পাওয়া যাবে। গাছে গাছে আপেল ঝুলে থাকবে। আর তার সাথে চিনার গাছের রঙ্গিন রুপ। — ডিসেম্বর থেকে ফেব্রুয়ারি শীতকালঃ এই সময়ে দেখবেন সাদা শুভ্র পাহাড়। চারিদিকে শুধু Snow, snow & snow. আর Snow fall তো আছেই। তবে শীতকালে অসুবিধাও অনেক। শীতের অনেক প্রস্তুতি নিতে হবে, রাস্তা-ঘাট বন্ধ থাকে ফলে অনেক জায়গায় যেতেই পারবেন না। এমন কি আপনার আটকে পড়ার চান্স অনেক বেশী। তাই সবদিক বিবেচনা করলে এবং আপনি যদি একবার যেতে চান, তাহলে এপ্রিল-মে উপযুক্ত সময়।
বাংলাদেশ থেকে কাশ্মীর যাবো কিভাবে ? — প্রথমে ট্রেনে কিভাবে যেতে হবে সেটা বলি , ট্রেনে যেতে চাইলে আপনাকে ঢাকা থেকে কলকাতা কলকাতা থেকে জম্মু যেতে হবে এবং সেখান থেকে গাড়ী করে শ্রীনগর। কলকাতা থেকে জম্মু যাওয়ার দুটি ট্রেন আছে। হিমগিরি ও জম্মু তাওয়াই, হিমগিরি সপ্তাহে ৩ দিন (মঙ্গল, শুক্র ও শনিবার) রাত ১১:৫০ টায় হাওড়া থেকে জম্মুর উদ্দেশ্যে ছেড়ে যায়। সময় লাগে ৩৫ ঘন্টা ৩৫ মিনিট। আর জম্মু তাওয়াই প্রতিদিন চললেও সময় একটু বেশী লাগে। অনেকে আবার ট্রেনে দিল্লী গিয়ে আগ্রার তাজমহল এগুলো ঘুরে কাশ্মীর যায় সেক্ষেত্রে আপনি দিল্লী চলে যান সেখানে ঘুরে তারপর জম্মুর এভেইলেভেল ট্রেন পাবেন । কলকাতা থেকে দিল্লি যাবার ট্রেন সবসময়ই পাবেন । কলকাতা থেকে জম্মু পর্যন্ত নন এসি স্লিপার ১৫০০-১৬০০/- বাংলাদেশী টাকায় আর এসি ৩৩০০-৩৫০০/-টাকা পড়বে। এরপর জম্মু থেকে শ্রীনগর গাড়ীতে ৬ জনের দল হলে পার হেড ৬০০-৮০০/- টাকায় হয়ে যাবে। জম্মু থেকে শ্রীনগর যেতে সময় লাগবে ৮-১০ ঘন্টা। ট্রেনের টিকেট দেশের যেকোন ট্রাভেল এজেন্সি থেকে অগ্রিম কেটে রাখতে পারেন অথবা গিয়েও কাটতে পারেন যেমন আপনার খুশি । — এবার আসি বিমানে যারা যেতে চান তারা কি করবেন কাশ্মীর যেতে হলে ঢাকা থেকে আন্তর্জাতিক বিমানে প্রথম যেতে হবে দিল্লি ইন্ধিরা গান্ধী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে সেখান থেকে শ্রীনগর। অথবা ঢাকা থেকে কলকাতা যাবেন ট্রেনে বা বাসে পরে সেখান থেকে ডোমেস্টিক বিমানে জম্মু অথবা শ্রীনগর বিমানবন্দরে যাওয়া যাবে। কলকাতা থেকে সরাসরি শ্রীনগরে কোনো ফ্লাইট নেই তাই, দিল্লি হয়ে যেতে হয়। বিমানের টিকেট শ্রীনগর পর্যন্ত ৮০০০/- ১৫,০০০/- টাকা বিভিন্ন মৌসুমের উপর নির্ভর করবে। তবে বিমান খরচ কমানোর সবচেয়ে ভালো বুদ্ধি হলো বাংলাদেশের কোন ট্রাভেল এজেন্সি দিয়ে যত আগে সম্ভব ১/২ মাস আগে বিমানের টিকেট কেটে রাখা এতে সস্তায় বিমানের টিকেট পাওয়া যায় ।
কোন_স্থল_বন্দর_দিয়ে ঢুকবেনঃ দরশনা বেনাপোল দিয়ে ঢোকায় ভাল হবে। ১।বেনাপোল (বেনাপোল-পেট্রাপোল) : ঢাকা থেকে যেকোন বাসে পৌছে যান সরাসরি বেনাপোল । সীমান্তে দুই দেশের ইমিগ্রেশন পেরিয়ে আরেকটি অটোরিকশায় ২০ রুপি নেবে বনগাঁও রেলস্টেশন পর্যন্ত। বনগাঁও থেকে কলকাতার ট্রেন পাওয়া যায় প্রায় প্রতি ঘণ্টায়ই। টিকেট হবে ২০-৩০ রুপি। এছাড়া গ্রিনলাইন শ্যামলী সহ বেশকিছু বাস সার্ভিস সরাসরি কলকাতা পর্যন্ত যায় ।। ট্রেনেও ঢাকা থেকে যেতে পারেন সরাসরি কলকাতা ভাড়া পড়বে ৬৫০ টাকার মতো ।। কমলাপুর বা চিটাগাং স্টেশনে টিকেট পাবেন । কলকাতা হয়ে যাওয়াটা বেস্ট কারণ কলকাতাটাও দেখা হয়ে গেলো ২। দর্শনা – গেদে দিয়ে যদি যেতে চান তাহলে প্রথমে দর্শনা হল্ট স্টেশনে যেতে হবে। এখান থেকে চেকপোস্ট ৫ কিঃমিঃ এর মত। আপনি অটোরিকশা বা ভ্যানে চলে যান। ভারতের দিকের চেকপোস্ট গেদে রেল স্টেশনেই। এখান থেকে ১ ঘন্টা ৩০ মিঃ পরপর ট্রেন আছে। ভাড়া শেয়ালদহ পর্যন্ত ৩০ রুপি ও দমদম জং ২৫ রুপি। আপনি যদি বিমানে শ্রীনগর যান তাহলে দমদম নামবেন আর ট্রেনে গেলে শিয়ালদহ। সীমান্ত পেরিয়ে আপনার ডলারগুলো রুপিতে কনভার্ট করে নিবেন তবে কনভার্ট করার আগে অনলাইনে রেটটা জেনে নিবেন ।
থাকার ব্যবস্হা ? এবার দেখি থাকার ব্যবস্হা কি , থাকার জন্য প্রচুর হোটেল পাবেন কাশ্মীরে । সাধারণ মানের ব্যাচেলার থাকার জন্য হোটেল ৫০০-৬০০ টাকার মাঝে পাবেন । আর ফ্যামিলির স্ট্যান্ডার্ট হোটেল ১২০০-১৫০০ রুপির ভিতরে পাবেন । এর চেয়ে দামী দামী হোটেল পাবেন । আপনার বাজেট ও পছন্দ অনুযায়ী নিয়ে নিন হোটেল ।
কাশ্মীরে কোথায় কোথায় ঘুরবেন : কাশ্মীর পুরোটাই ভ্রমণপিপাসুদের জন্য স্বর্গ । তারপরও ভিন্ন ভিন্ন লোকেশনে বেশ কিছু টুরিস্ট স্পটের তালিকা দিলাম । ১। শ্রীনগরে- মোঘল গার্ডেন, টিউলিপ গার্ডেন, ডাল লেক ও নাগিন লেকে শিকারা রাইড, হযরত বাল মসজিদ। ২। গুলমার্গেঃ গন্ডোলা (ক্যাবল কার), গলফ কোর্স, বাবা ঋষির মাজার,আফারওয়াত পিক, সেন্ট ম্যারী চার্চ। ৩। পেহেলগামঃ লিদার নদী, বেতাব ভ্যালী, আরু ভ্যালী, চন্দন বাড়ী এবং ঘোড়ায় ট্রেকিং করে পেহেলগাম ভিউপয়েন্ট, মিনি সুইজারল্যান্ড খ্যাত বাইসারান, ধাবিয়ান, কাশ্মীর ভ্যালী ভিউপয়েন্ট, কানিমার্গ, Waterfall, তুলিয়ান ভ্যালী ইত্যাদি। পায়ে হেঁটেও যাওয়া যায়। তবে বৃষ্টি হলে রাস্তা অনেক পিচ্ছিল থাকে। আর তাছাড়া ঘোড়ায় চড়লে একটু Adventure ও হয়। ৪। সোনামার্গ : প্রধানত থাজিওয়াস হিমবাহ। এছাড়া সিন্ধ নদী, Waterfall, বাজরাঙ্গী ভাইজান ও রাম তেরে গঙ্গা মেরে ছবির স্যুটিং স্পট। এবার আমরা দেখি এই প্রধান স্পটগুলো ঘুরে দেখার জন্য কিভাবে প্লান করা যেতে পারে দিন-১ঃ শ্রীনগর দিন-২ঃ পেহেলগাম (পেহেলগামে রাতে থাকবেন) দিন-৩ঃ পেহেলগাম (পেহেলগাম দেখা শেষ করে শ্রীনগরে আবারও ফিরে আসবেন) দিন-৪ঃ গুলমার্গ (গুলমার্গ দেখে শ্রীনগরে ফিরে আসবেন) দিন-৫ঃ সোনামার্গ (রাতে সোনামাগার্গের হাউজ বোটে থাকবেন) এভাবে প্লান করলে আপনি ৫ দিনে মোটামুটি কভার করে ফেলতে পারবেন তবে আমি শুধুমাত্র একটা গাইডলাইন দিয়ে দিলাম আপনি আপনার মতো কাস্টমাইজ করে নিতে পারেন । সব জায়গাতেই রিজার্ভ গাড়ী নিতে হবে আপনাকে চারজন বসার মতো গাড়ীগুলো ১২০০-১৫০০ নিবে এর চেয়ে বড়গুলো ২-৩ হাজার নিবে আপনি যাচাই করে দাম দর করে গাড়ী ঠিক করবেন ,কিন্তু এরপরও কথা আছে কাশ্মীরে এক জোনের গাড়ী আরেকজোন পর্যন্ত আপনাকে নিয়ে যাবে কিন্তু টুরিস্ট প্লেসগুলো দেখার জন্য আবার গাড়ী নিতে হবে ওখানকার যেমন পেহেলগাম ও সোনামার্গে রিজার্ভ গাড়ীতে যাওয়ার পর আবারও ওখানকার গাড়ী ভাড়া করতে হবে। যেমন পেহেলগামে থেকে আরু ভ্যালী ও চন্দনবাড়ী যেতে ভাড়া ১৬০০ রুপি। পেহেলগামে ৬ পয়েন্ট (পেহেলগাম ভিউপয়েন্ট, ধাবিয়ান, বাইসারান, কানিমার্গ, কাশ্মীর ভ্যালী ভিউ পয়েন্ট, waterfall) ঘোড়ায় প্রতিজনের ১৫০০-২০০০ রুপি। এদিকে সোনামার্গ থেকে থাজিওয়াস হিমবাহ গাড়ী ভাড়া ২৫০০- ৩৫০০/- রুপি। কি বুঝে গেলো ব্যাপারটা ?
কাশ্মীরে ঘুরে আসতে খরচ কেমন হবে সত্যি বলতে খরচটা নির্ভর করে আপনার উপরে আপনি কতটা খরুচে বা বিলাসীতা প্রিয় এর উপর । তারপরও আমি একটা আইডিয়া দিয়ে দিচ্ছি ,এখান থেকে আপনি ভালো আইডিয়া পাবেন ।

১। বাংলাদেশ -কলকাতা (আসা যাওয়া)=ট্রেনে ঢাকা টু কলকাতা ৬৫০ টাকা করে আসা যাওয়া রাফ হিসেব ১৫০০ টাকা ।। অথবা বাসেও বর্ডারে গিয়ে সেখান থেকে কলতাকা চলে যেতে পারেন । ২। কলকাতা- জম্মু= (ট্রেন+ খাওয়া)- ১৬০০+৬৫০=২২৫০x২= ৪৫০০ টাকা আসা যাওয়া ৩। জম্মু- শ্রীনগর= ৭৫০/-x২= ১৫০০/- আসা যাওয়া । ৪। কাশ্মীরে (সবকিছু) = ২০,০০০ টাকা ,থাকা খাওয়া ঘুরাঘুরি প্রতিজন । তো রাফ হিসেব করলে আপনার বাজেট ২৫+ হাজার টাকায় ঘুরে আসতে পারবেন ।।
এটা একটা রাফ হিসেব খরচ বাড়তেও পারে আবার আপনি চাইলে কমতেও পারে নির্ভর করে আপনার উপর ।। আমি শুধু একটা ধারণা দিলাম । এবার কিছু দরকারী টিপস শেয়ার করি ১। কাশ্মীর পর্যটন এলাকা। এখানে সবকিছুর দাম বেশী চাইবে। তাই যাই করুন না কেনো, দরদাম করতে ভুলবেন না। তবে ভদ্রভাবে কথা বলবেন অবশ্যই। ২। এখানকার খাবারে মশলা বেশী থাকায় আমরা বাংলাদেশীরা খেতে সমস্যা হয়। ভাতের দামও অনেক বেশী । তাই রুটি খেলে খরচ কম হবে এবং খাওয়াও যাবে। ৩। সন্ধ্যা ৮টার পর হোটেলের বাইরে অযথা ঘোরাফেরা করবেন না। আর হ্যাঁ, কেনাকাটা করতে চাইলে রাত ৮ টার মধ্যেই সারুন। কারন রাত ৮ টার পর দোকান বন্ধ হয়ে যায়। ৪। যেখানেই যান পাসপোর্টসহ প্রয়োজনীয় কাগজপত্র সঙ্গে রাখুন। ৫। কাশ্মীর মুসলিম প্রধান (৯৯%)। তাই মুসলিম হলে পরিচয় দিলে সুবিধা পাবেন। আর একটি কথা কাশ্মীরীরা বাংলাদেশ ক্রিকেট দলকে খুব পছন্দ করে এবং সাকিব আল হাসানের খুবই ভক্ত। তাই বাংলাদেশী পরিচয় দিন নির্দিধায়। ৬/ট্রাভেল ট্র্যাক্স ৫০০ টাকা যাবার আগে সোনালী ব্যাংকের যেকোন শাখায় দিয়ে দিলেই হবে তাহলে সীমান্তে আর এই ঝামেলাটা থাকলোনা ।।

থাইল্যান্ডে একসপ্তাহ

বরাবরের মতোই আমি বাজেট ট্রাভেলার, এবারও পোস্টটি দিচ্ছি আমার ঔসকল বাজেট ট্রাভেলার বন্ধুদের জন্য যারা কম খরচে ঘুরতে চান, আমি শুধু পাতায়া ও ব্যাংকক ঘুরেছি তা আপনাদের কাছে বিস্তারিত শেয়ার করছি।।। জীবনে প্রথমবার গিয়েছি তাই হয়ত বহুগামিতাদের সাথে নাও মিলতে পারে সবকিছু।।। ভিসা:- আমার সময় কম এবং ঝামেলা এড়াতে এজেন্সী দিয়ে করিয়েছি ভিসা, খরচ লেগেছে ৪০০০/- টাকা, নিজে করলে মনে হয় ৩০০০/- টাকাতে করতে পারবেন। ফ্লাইট :- চট্টগ্রাম থাকি তাই এখান থেকে ডাইরেক্ট ফ্লাইট শুধু রিজেন্ট এয়ারওয়েজ, ভাড়া ২৭০০৩/- টাকা রিটার্ন, ঢাকা থেকে ২৩৫০০/-++, খাবার ভালই দেয়।। * রিজেন্ট এর ভাড়া নিয়ে একটা আপত্তি আছে তা আরেকদিন পোস্ট দিয়ে বলব।। সূবর্ণভূমি এয়ারপোর্ট:- এটি থাই এয়ারপোর্ট, ইমিগ্রেশন ফরমালিটি ২ মিনিট লেগেছে, তারপর exit দেখে একসিড়ি নিচে নামুন, এখান থেকে মোবাইল সীম কার্ড কিনুন, আমি Dtac happy tourist sim কিনেছি, দাম ২৯৯/- বাথ,,, সাতদিন মেয়াদ, ১০০/- বাথ টক টাইম, আনলিমিটেট ইন্টারনেট।।। তারপর আরেক সিড়ি নামলে পাতায়া ভলবো বাস কাউন্টার, ভাড়া ১২০/- বাথ, সময় লাগে মাত্র ২ ঘন্টা পাতায়া যেতে, বাসটি অনেক আরামদায়ক, ভিতরে টয়লেটও আছে।।।
★পাতায়া:- আমি আগেই বলেছি এটা বাজেট ট্যুর, তাই আগে থেকে হোটেল বুকিং দেইনি, তবে নেট থেকে সব চেক করে রেখেছিলাম, হেটে বিচ রোডে গিয়ে কয়েকটি হোটেলে চেক করে একটি পেয়ে গেলাম, PO post office guesthouse এটির নাম, ভাড়া ৪০০/- বাথ, (ডাবল বেড,ফ্রিজ,এসি,বেলকনি,বাথরুমে গরম পানি,free wifi), আমার বাজেট ছিল ৬০০-৭০০/- এর মতো, কিন্তু পেয়ে গেলাম ৪০০/- তে.. 🙂 আমার হোটেল থেকে বিচ ১মিনিট, walking street ৫মিনিট।।। walking street সম্মন্ধে কিছু বলার নাই, এটা যে যায় মতো এনজয় করে, তবে পাতায়া নাইট লাইফ কিন্তু এই ওয়াকিং স্ট্রিট ও বিচ রোডই… 😉 খাবারের একটু সমস্যা হতে পারে, চারিদিকে এতো পোকামাকড় ফ্রাই চোখে পরবে যে রুচী নাও আসতে পারে।। বিচ রোডে একটি বাংলাদেশী হোটেল পেলাম নাম নুরজাহান, খাবার দাম একটু বেশি। প্রতি কদমে কদমে ম্যাসাজের দোকান, অন্য কিছু না করলেও ফুট ম্যাসাজটা করে নিয়েন, ভাল লাগবে, ১৬০-২০০/-বাথ নেয়।
কোরাল বিচ(KohLarn):- প্যাকেজ ট্যুর করে ৫০০-৬০০/- বাথে(স্প্রীডবোড,লান্চ,২ঘন্টা বিচে ঘুরবেন), তবে আমি গিয়েছি অন্যভাবে, ওয়াকিং স্ট্রীট যেখানে শেষ ওখানেই ফেরি ঘাট, এখান থেকেই জাহাজ ছাড়ে কোরাল দ্বীপে যায়, ভাড়া ৩০/-বাথ, প্রতি ২ঘন্টা পরপর ছাড়ে আবার কোরাল থেকেও ২ঘন্টা পরপর পাতায়া ফিরে আসে, আপনি যতক্ষন খুশি কোরালে কাটাতে পারবেন, শুধু ফিরার জাহাজ সময় সূচীটা আগে থেকে যেনে নিবেন, এভাবে গেলে আপনার খরচ হচ্ছে ৩০+৩০=৬০/- বাথ মাত্র। লান্চ আপনি আপনার মতোই করে নিবেন, প্রচুর খাবার হোটেল আছে ওখানে, কোরালে ২-৩ টা বিচ আছে, চাইলে আপনি ২০-৩০ বাথ দিয়ে বাইকে করে ঘুরে আসতে পারবেন। জাহাজ নিরাপদ বেশি,জাহাজে সময় নেয় ৪০ মিনিট, স্প্রীটবোডে ৩০মিনিট নেয়। তবে নৌভ্রমন টাই আমার কাছে বেশি ভাল লেগেছে।
★ব্যাংকক:- পাতায়া বাস টার্মিনাল থেকে ১০৮/- বাথ দিয়ে ব্যাংককের Ekkamai তে নামতে হবে, Ekkamai BTS station থেকে Nana bts station নামলেই সুকুমভিট, মোটামুটি সবাই ব্যাংকক আসলে এই এলাকায়ই থাকে, nana station এর চারপাশ টাই সুকুমভিট। মেইন রোডটি দিয়ে সুকুমভিটকে মূলত দুভাগে ভাগ করা, এখানে রোড গুলোকে মনে হয় Soi বলে, মেইন রোডের একপাশে জোড়া সংখ্যার রোড মানে soi- 2,4,6,8,10… এবং অন্যপাশে বিজোড় রোড মানে soi- 1,3,5,7,9… etc. আমি দুদিন soi 7/1 ছিলাম, hotel best value inn,ভাড়া ৯০০/- বাথ, ক্লান্ত থাকায় বেশি খুজি নি হোটেল,দুজন ছিলাম, ভালই ছিল হোটেল কিন্তু ভাড়াটা একটু বেশি,লোকেশন ভাল, nana station 30 sec only. আমার সংগী দেশে চলে আসায় আমি হোটেল চেন্জ করলাম, এবার কম রেটের হোটেল পেলাম, soi- 4 তে, ভাড়া ৫০০/- বাথ, ফেসিলিটি সবই আছে, Nana station ৫মিনিট হেটে, আর ব্যাংকক এর নাইট লাইফ Nana plaza মাত্র ১ মিনিট। soi-3 এলাকাটি মুসলিম এরিয়া, সবধরনের হালাল ফুড পাবেন, খুবই টেস্টি, দাম তো বেশি হবেই, খেয়ে খুব শান্তি পাবেন গেরান্টি, আমাদের দেশের ফ্রাইড রাইচে ডিম আর মাংস খুজতে হয়, কিন্তু ওখানে হোটেল আল হোসাইনের ফ্রাইডে রাইচের চেয়ে মাংস বেশি দেখা যায়… 🙂 ব্যাংককের ট্যুরিস্ট এটট্রাকশনের মধ্যে Grand palace অন্যতম, সুকুমভিট থেকে ক্যাবে ২০০-৩০০/- বাথ চায়, আমি গিয়েছি লোকাল বাসে ৬.৫০/- বাথতে, একটু সময় বেশি লাগে ঘুরে ঘুরে যায়, কিন্তু আপনি ব্যাংকক শহরটিও দেখে নিতে পারেন এই বাসে বসেই,, Grand palace এর টিকেট মূল্য একটু বেশি ৫০০/- বাথ।।। ব্যাংককে আপনি ওশান ওয়াল্ড, সাফারী ওয়াল্ড দেখতে পারেন, এগুলোর এন্ট্রি ফী বেশী।।। ব্যাংককেও আপনি প্রতি কদমে কদমে ম্যাসাজ সেন্টার পাবেন, পাতায়ার চেয়ে এখানে দাম বেশি। ব্যাংককে আপনি লেডিবয়/হিজড়া একটু বেশিই দেখতে পাবেন।।।
শপিং:- Chatuchak weekend market (j j market), open only Saterday & Sunday. Largest market in Thailand. Nana station থেকে Moh chit station নামলেই এই মার্কেট,আমাদের বংগবাজার বা রিয়াজউদ্দিন মার্কেটের মতো, কি নেই এখানে, পাইকারী দরে কিনতে পারবেন, ১৫০০০ এর উপর দোকান আছে, ২৭ টার মতো সেকটরে ভাগ করা হয়েছে, এই দুদিনকে মাথায় রেখে ব্যাংকক সফর করা ভাল যদি শপিং করতে চান, যাওয়ার আগে অবশ্যই গুগল থেকে বিস্তারিত দেখে গেলেই সুবিধা বেশি।।। এছাড়া যারা এটা মিস করেছেন তাদের জন্য প্লাটুনাম, প্লাটিনাম, ইন্দিরা স্কায়ার তো রয়েছে, মোটামুটি কমে দরদাম করে কিনা যায়, পাশেই Big C shopping center আছে, এখানেও এসির বাতাস খেয়ে সবকিছুই পেয়ে যাবেন, দাম মিডিয়াম।।।
মেট্রো ট্রেন:- BTS, MRT, SRT নামে ট্রেন আছে যা শহর চষে বেড়াচ্ছে, সস্তা ও দ্রুততম বাহন। তবে মালয়েশিয়া থেকে থাইল্যান্ডের মেট্রো ট্রেনের ভাড়া তুলনামূলক বেশি মনে হয়েছে।।। টু এয়ারপোর্ট:- Nana station থেকে Phaya thai staion এসে, ট্রেন চেন্জ করে এয়ারপোর্ট লিংক ট্রেনে করে সোজা এয়ারপোর্ট, ভাড়া ৩১+৪৫= ৭৬/- বাথ, যদি ক্যাবে যেতে চান তাহলে মিনিমাম ৫০০/- বাথ লাগবে।।।। **ফুকেট যাইনি, তাই আলোচনায় আসেনি… 🙁

সাজেক সফরনামা!

ইতিহাস ঐতিহ্য বা অন্যসব পারিপার্শ্বিক আলোচনায় যেয়ে লিখা বড় করতে চাইনি,শুধু প্ল্যানটাই দিয়েছি,যাতে এটা ফলো করেই ট্যুর শেষ করা যায়।

দিন ০১: ঢাকা থেকে রাতের বাস খাগড়াছড়ি পৌছবে সকাল ৮টার মধ্যে।শহরের শাপলা চত্বরে নেমে নাস্তা সেরেই রওনা দেবেন সাজেকের দিকে।জীপ এবং বাইক পাবেন শাপলা চত্বরেই, রিজার্ভ যেতে হয়,লোকাল কোন গাড়ি নেই। শাপলা চত্বরের একটু পেছনেই একটি ব্রিজ আছে, ব্রিজের পাশেই সিএনজি স্টেশন, ওখান থেকে সিএনজি রিজার্ভ করতে পারবেন। চাইলে লোকাল সিএনজি-তে দিঘীনালা এসে দিঘীনালা থেকেও বাইক/ সিএনজি/জীপ- সাজেক যেতে পারবেন। শান্তি পরিবহণে সরাসরি দিঘীনালা এসে দিঘীনালা থেকেও যেতে পারেন। খাগড়াছড়ি -সাজেক ৩ ঘন্টা সময় লাগে।পথে মাচালং বাজারে নেমে নাস্তা করে নিতে পারেন। সাজেকে নেমেই হোটেলে চেক ইন দিয়ে খাবারের অর্ডার করে নেবেন,অর্ডার না করলে সাজেকে এমনিতে খাবার পাওয়া যায়না।রুইলুই পাড়ায় বেশকিছু রেস্টুরেন্ট পাবেন যারা খাবার করে দেয়। ফ্রেশ হয়েই ঘুরে আসতে পারবেন হেলিপ্যাড ১,২ এলাকা থেকে।বিকেলটা রুইলুই পাড়াতেই কাটাবেন।

দিন০২:খুব ভোরে উঠেই কংলাক পাড়ায় চলে যাবেন,হেটে যেতে ৩০-৪০ মিনিট লাগবে।কাঁচা রাস্তা এবং কিছুটা পাহাড় আছে তাই ভালো গ্রিপ আছে এমন জুতো পড়ে যাবেন। রুইলুই পাড়ার ২নং হেলিপ্যাডের পাশ দিয়ে সোজা উত্তরে একটি রাস্তা চলে গেছে,সেই রাস্তা ধরে এগুলেই কংলাক পাড়ায় পৌঁছে যেতে পারবেন। কংলাক আগে মূলত লুসাই এবং পাংখোয়া অধ্যূষিত পাড়া ছিলো।এখন পাংখোয়া নেই বললেই চলে,কিছু লুসাই পরিবার আছে।আর আছে ত্রিপুরা। কংলাক সাজেকের সর্বোচ্ছ চূড়া। কংলাকে কারো বাসায় ঢুকতে চাইলে বিনা সংকোচেই ঢুকতে পারেন,তবে ঢুকার আগে অনুমিত নেয়া ভালো।আর অবশ্যই জুতোজোড়া বাহিরে রেখে! ওদের রুম গুলো অনেক পরিপাটি এবং গোছানো থাকে। যেকোন কারো সাথেই ছবি তুলতে পারবেন,আগে অনুমতি নিয়ে নেবেন। চাইলে কংলাক থেকে আরো সামনের দিকে যেয়ে ঘুরে আসতে পারেন।কিছুদূর গেলে কমলা বাগান দেখতে পারবেন। ঘুরে এসে দুপুরের আগেই গাড়িতে উঠবেন,আসার পথে বাঘাইহাট এলাকায় হাজাছড়া ঝর্ণা দেখে আসবেন।রাস্তা থেকে ১০-১৫ মিনিট হাঁটলেই ঝর্ণায় যাওয়া যায়,যাওয়ার পথে তেমন কোন পাহাড় নেই তাই যে কেউই যেতে পারে। দিঘীনালার লারমা স্কয়ারে নেমে উপজাতি রেস্টুরেন্ট -এ লাঞ্চ সেরে নিতে পারেন। গাড়ি খাগড়াছড়ি পৌছবে সন্ধ্যার আগেই।খাগড়াছড়িতে রাত্রিযাপন।

দিন ০৩:সকালে শহরের শাপলা চত্বর থেকে জীপ রিজার্ভ নিয়ে চলে যাবেন রিসাং ঝর্ণায়,সাথে করে দুএকটা পুরনো জিন্স প্যান্ট যেগুলো ফেলে দেয়ার সময় হয়েছে এমন প্যান্ট নিয়ে যাবেন,কাজে লাগবে! ঝর্ণা থেকে আসার সময় আলুটিলা প্রাকৃতিক সুড়ঙ্গ দেখে আসবেন।সুড়ঙ্গে ঢোকার জন্য মশাল কিনতে পারবেন ওখান থেকেই,তবে মোবালের ফ্ল্যাশলাইটই সবচেয়ে ভালো,মশালের আলোতে কিছুই দেখা যায়না,ওইটা শুধু সুড়ঙ্গের ভেতরে ছবি তোলার কাজে লাগে! grin emoticon ফিরে এসে শহরের পানখাইয়া পাড়ায় “সিস্টেম ” রেস্টুরেন্ট-এ লাঞ্চ। বিকেলে শহরের পাশের জেলাপরিষদ পার্কে পাহাড়, ঝুলন্ত ব্রিজ এবং লেকে বিকেলটা কাটিয়ে রাতের বাসে ঢাকা,রাতের সব বাস একসাথেই রাত ৯ টায় ছাড়ে।সব গুলো বাসের কাউন্টারই শহরের নারকেল বাগান এলাকায় পাবেন। *যাদের ট্রেকিং-এর অভিজ্ঞতা আছে তারা একদিন সময় বেশি নিয়ে দিঘীনালার তৈদুছড়া ঝর্ণা এলাকা ঘুরে আসতে পারেন,একই এলাকায় বেশ কয়েকটি ঝর্ণা পাবেন,যাওয়ার ঝিরিপথটাও অনেক সুন্দর! সকালে রওনা দিলে ফিরতে বিকেল হবে,পুরো পথটাই হেটে যেতে হয়।গাইড নিতে হবে সাথে না হয় চিনবেন না। *আরো একদিন বাড়তি সময় থাকলে ঘুরে আসতে পারেন সিজুক ১,২ ঝর্না থেকে।সাজেক রোডের নন্দারাম এলাকা হয়ে যেতে হবে ঝর্নায়।৬-৭ ঘন্টার ট্রেকিং আসাযাওয়ায়। গাইড নিতে হবে সাথে।ওখানে স্থানীয় লোক পাবেন ৩০০-৪০০ দিলে ঘুরিয়ে আনবে।

যাবেন যেভাবে : ঢাকা থেকে এস আলম,সৌদিয়া,শ্যামলী, ঈগল,ইকোনো,সেন্টমার্টিন (এসি)এবং শান্তি পরিবহনের বাস আসে খাগড়াছড়ি।দিঘীনালায় শুধু শান্তি পরিবহণ আসে। ঢাকা-খাগড়াছড়ি ভাড়া ৫২০ টাকা,এসি ৮০০ টাকা।ঢাকা-দিঘীনালা ৫৭০ টাকা। চট্রগ্রাম থেকে ১ঘন্টা পরপর শান্তি পরিবহণ ছাড়ে খাগড়াছড়ির উদ্দেশ্যে,সকাল ৬/৭ টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত পাবেন,তবে বিকেল ৫টার পরে লাস্ট বাস ৮টায়,এর মাঝে আর বাস নেই। চট্রগ্রাম -খাগড়াছড়ি ভাড়া ১৯০ টাকা, চট্রগ্রাম-দিঘীনালা ২৪০ টাকা। খাগড়াছড়ি থেকে সাজেক জীপ রিজার্ভ পাবেন ৯০০০+,একদিন দিয়ে আসবে,আবার যেদিন ফিরবেন সেদিন যেয়ে নিয়ে আসবে এবং আশপাশের স্পট ঘুরে দেখানোর জন্য এই ভাড়া।সকালে গিয়ে বিকেলে ফিরে আসলে ৫০০০+। দিঘীনালা-সাজেক ৭০০০+,দিনে দিনে ফিরে আসলে ৪০০০+।বাইক পাবেন দিঘীনালা-সাজেক একবার দিয়ে আসার জন্য ৬০০+ নিবে,দুইজন যাওয়া যায় এক বাইকে।বলে রাখলে যেদিন ফিরবেন সেদিন গিয়ে নিয়ে আসবে। সাধারণত সাজেকে কোন পরিবহণ পাওয়া যায়না,তাই যে গাড়িতে যাবেন তাদের সাথে কথা বলে রাখবেন ফিরে আসার ব্যাপারে। শাপলা চত্বর থেকে আলুটিলা প্রাকৃতিক সুড়ঙ্গ এবং রিসাং ঝর্ণা যাওয়াআসা জীপ রিজার্ভ ভাড়া নিবে ১৫০০-২০০০ টাকা। যে গাড়িতেই যান দরদাম করে ভাড়া ঠিক করবেন,এই রোডে নির্দিষ্ট করে কোন ভাড়া ঠিক করা নেই।

কোথায় থাকবেন: ইমানুয়েল রিসোর্ট : ডাবল বেডরুম১০০০ টাকা,৪/l জন থাকারমত রুম ২০০০ টাকা,বুকিং নাম্বার +8801869490868 (মইয়া লুসাই)।

মেঘ মাচাং:পাহড়ের চূড়ায় আদিবাসী মাচাং-এর আদলে নির্মিত একটি রিসোর্ট, এখানে থাকার সুবিধা হচ্ছে ভোরে জানালা খুললেই নিজেকে মেঘের সাগরের উপর আবিষ্কার করবেন।

তিনটি কটেজ রয়েছে এখানে, প্রতিটিতে ছয় জন থাকা যায়,ভাড়া ৩০০০ টাকা।

বুকিং এর জন্য- 01822168877

ক্লাব হাউজ : এটি মূলত ওখানকার উপজাতিদের জন্য সেনাবাহিনী নির্মাণ করে দিয়েছে।বড় হল রুম,ফ্লোরিং করে থাকতে হয়,বেড ওরাই দিবে।ভাড়া প্রতিজন ১৫০ টাকা খাবারের ব্যাবস্থা স্থানীয় রেস্তোরাঁয় করে নিতে পারবেন,ওদেরকে ১ঘন্টা আগে বলে রাখলেই করে দিবে।

আলো রিসোর্ট : এনজিও সংস্থা আলো পরিচালিত রিসোর্ট “আলো”এখানে প্রতিজন ১৬০০ টাকায় থাকা যায়। আলো রিসোর্টের বুকিং এর জন্য;tel: 0371-62067

সাজেক রিসোর্ট : সাজেকের রুইলুই পাড়ায় ঢুকে প্রথমেই রাস্তার বাম পাশে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী কতৃক নির্মিত সাজেক রিসোর্টের অবস্থান। পাঁচটি ফ্যামিলি থাকার মত ব্যাবস্থা রয়েছে এই রিসোর্টে। ভাড়া ৭০০০-১২০০০ টাকা।

রিসোর্ট রূনময়: এটিও বাংলাদেশ সেনাবাহিনী পরিচালিত রিসোর্ট।এটি রুইলুই পাড়ার একেবারে শেষ প্রান্তে,এর আশেপাশে কোন বসতি নেই।ভাড়া ৪৫০০-৪৯৫০ টাকা। এখানেও পাঁচটি ফ্যামিলি থাকার মত ব্যাবস্থা রয়েছে। রিসোর্ট রূনময় এবং সাজেক রিসোর্টের বুকিং । এছাড়া সাজেকে স্থানীয়দের বাসায় থাকা যায় ১৫০-২০০ টাকায়।

শান্তি পরিবহণ দিঘীনালা কাউন্টার-০১৮৫৫৯৬৬১৪,০১৮১৩২৬৮৯১৯।
কলাবাগান কাউন্টার -০১১৯০৯৯৪০০৮,০৪৪৭৭৭০১১৯১
কমলাপুর কাউন্টার -০১১৯১১৯৭২৯৭।

*খাগড়াছড়ি শহরে থাকতে পারেন হোটেল ইকোছড়ি ইন-এ। শহর থেকে একটু বাহিরে পাহাড়ের উপর নিরিবিলি পরিবেশে গড়ে উঠেছে হোটেলটি। ফোন: ০১৮২৮ ৮৭৪০১৪

*দিঘীনালায় রাত্রিযাপন করতে চাইলে থাকতে পারেন স্টেশনের পাশের দিঘীনালা গেস্ট হাউজ অথবা শাহজাহান হোটেলে *যারা তৈদুছড়া যাবেন তারা ভালো গ্রিপ আছে এমন জুতা আনবেন, সাথে দড়ি রাখবেন,কাজে লাগবে।

*বৃষ্টি হলে রাতে সাজেকে ঠাণ্ডা লাগে,তাই হাকলা কিছু প্রস্তুতি নিয়ে আসবেন।

*রেইনকোট আনতে ভুলবেন না।

*শুক্র এবং শনিবারেই পর্যটকের সমাগম হয় বেশি,সেক্ষেত্রে খাগড়াছড়িতে জীপ না পেলে দিঘীনালা থেকে জীপ নেবেন। দিঘীনালাতেও না পেলে অপেক্ষা করবেন,অন্য রোডের জীপ গুলো আসলে যেকোনো একটার সাথে কথা বলে নিয়ে যাবেন।

*সাজেকে বারবিকিউ করা যায়,তবে সব উপকরণ দিঘীনালা থেকে নিয়ে যাওয়াই ভালো।

*সাজেকে ঘোরার জন্য গাইডের প্রয়োজন নেই। অনেকেরই ভুল ধারনা আছে সাজেক যেতে হলে আগে থেকে আর্মির অনুমতি নিতে হয়। বাস্তবতা হচ্ছে সাজেক যেতে হলে তেমন কিছু করতে হয়না। তবে নিজের গাড়ি নিয়ে সাজেক যেতে চাইলে যাওয়ার পথে আপনাকে চারটি আর্মি এবং একটি পুলিশ ক্যাম্পে আপনারা কিছু তথ্য দিতে হবে(এই রোডের কোন গাড়ি রিজার্ভ করে গেলে এই কাজ গুলো গাড়ির স্টাফই করবে)।

(১) খাগড়াছড়ি ঢুকতেই জিরো মাইল পয়েন্টে গাড়ি থামিয়ে আর্মির কাছে আপনার গাড়ির নাম্বার এবং কোথা থেকে আসছেন কোথায় যাবেন এমন কিছু তথ্য দিতে হয়।

(২) দিঘীনালা বাস স্টেশন থেকে তিন কিমি এগুলেই দিঘীনালা সেনানিবাস, এখানে গাড়ির নাম্বার দিতে হবে।

(৩) দিঘীনালা সেনানিবাস থেকে ৭কিমি পরেই দশনাম্বার নামক এলাকায় পুলিশ ক্যাম্পে আপনাকে একই তথ্য দিতে হবে।

(৪) দশনাম্বার থেকে আনুমানিক ৭/৮ কিমি পরেই বাঘেরহাট আর্মি ক্যাম্প,এখানে আপনাদের যেকোন একজন নেমে নিজের নাম এবং ফোন নাম্বার দিতে হবে। (৫) মাচালং বাজারের একটু আগেই রয়েছে আরেকটি আর্মি ক্যাম্প, এখানেও গাড়ির নাম্বার অথবা এই ধরনের কিছু তথ্যা দিতে হয়। এরপর আর কোন ক্যাম্পে দাঁড়াতে হয়না। ১,২,এবং ৪ এ ফেরার সময়ও গাড়ি থামাতে হবে। ৩ এবং ৫ এ ফেরার সময় গাড়ি থামাতে হয়না। সেনাবাহিনী এইকাজ গুলো করে সবার নিরাপত্তার সার্থেই।তাই একটু ঝামেলা মনে হলেও এই স্পট গুলোতে দাঁড়িয়ে আপনার তথ্য দিয়ে সেনাবাহিনীকে নিরাপত্তা রক্ষার কাজে সহযোগীতা করা উছিৎ।

*খাগড়াছড়িতে কোন সিএনজি ফিলিং স্টেশন নেই।আসার পথে ফেনীতেই পাবেন সর্বশেষ সিএনজি স্টেশন।

*দিঘীনালার পরে সাজেকের দিকে আর পেট্রলপাম্প পাবেন না। বাঘাইহাট বাজারে দুএকটা দোকানে পেট্রল/ ডিজেল পাওয়া যায়,তবে সেটা সবসময় পাওয়ার নিশ্চয়তা নাই।

* ঈদের ছুটিতে সাজেক যাওয়ার প্ল্যান থাকলে অবশ্যই আগে থেকে রিসোর্ট বুকিং দিয়ে যাবেন। । – মেঘের রাজ্য সাজেক সম্পর্কিত কিছু কমন প্রশ্নের উত্তর! *সাজেক রাঙামাটি জেলার বাঘাইছড়ি উপজেলার একটি ইউনিয়ন, তবে যেতে হয় খাগড়াছড়ির দিঘীনালা হয়ে।

*ঢাকা-খাগড়াছড়ি বাস পাবেন,ভাড়া ৫২০ টাকা,এস আলম,সৌদিয়া,ঈগল, শ্যামলী, শান্তি এবং সেন্টমার্টিন(এসি) পরিবহণের বাস চলাচল করে এই রোডে। ঢাকা-দিঘীনালা বাস ভাড়া ৫৭০ টাকা,খাগড়াছড়ি -সাজেক জীপ রিজার্ভ ৯০০০+। দিঘীনালা- সাজেক জীপ রিজার্ভ ৭০০০+ যাওয়াআসা মিলিয়ে(একদিন দিয়ে আসবে আরেকদিন যেয়ে নিয়ে আসবে এবং আশপাশের স্পট গুলো ঘুরিয়ে আনবে)সকালে গিয়ে বিকেলে ফিরে আসলে ৪০০০+। দুইতিনজন হলে বাইক/ সিএনজি-তে যাওয়া যায়,বাইকে দুজন ৬০০+ শুধু যাওয়ার জন্য,সিএনজি রিজার্ভ ৩০০০+ যাওয়াআসা।

*একটি জীপ১৫ জন যাওয়া যায়। *দিঘীনালা থেকে সাজেক যেতে দুই আড়াই ঘন্টা লাগে।

*এই রোডে কোন লোকাল পরিবহণ নেই। *সাজেকে কোন গাড়ি পাওয়ার সম্ভাবনা খুবই কম,তাই যে গাড়িতে যাবেন তাদের সাথেই আসার ব্যাপারে কথা বলে রাখবেন।

*সাজেকে হোটেল রিসোর্ট -এর পাশাপাশি স্থানীয়দের বাসায় থাকা যায়।

* আর্মি পরিচালিত সাজেক রিসোর্ট এবং রিসোর্ট রূনময়ের সকল তথ্য পাবেন www.rock-sajek.com -এ।

*সাজেকে সর্বনিম্ন ১৫০ টাকায় থাকা যায়।২০০টাকায় মোটামুটি মানের খাবার পাওয়া যায়।

*ক্যাম্পিং করা যায় তবে ডিউটি আর্মি অফিসারের অনুমতি সাপেক্ষে।

*সাজেকে নিরাপত্তার কোন সমস্যা নাই।

*২জন যান অথবা ১০জন যান প্রতিজন ৪০০০ টাকার মধ্যেই ট্যুর শেষ করা সম্ভব।

*সাজেকে বিদ্যুৎ নেই,সবকিছু সোলারে চলে,এমনকি ল্যাম্পপোস্টও!

*সাজেকের রুইলুই পাড়া থেকে কংলাক পাড়া যেতে প্রায় ৩০-৪০মিনিট লাগে।

*প্রাইভেট কার নিয়ে সাজেক যাওয়া যায়।

*রবি এবং টেলিটক ছাড়া আর কোন নেটওয়ার্ক নেই ,রবি অপেক্ষাকৃত ভালো।

*সাজেকে যাওয়ার উপযুক্ত সময় সারাবছরই, যখনি যান সাজেকের একটা রুপ পাবেনই,সাজেক আপনাকে কখনোই নিরাশ করবেনা। (তবে আমার ভালো লাগে বর্ষার বিকেলের সাজেক এবং শরৎ অথবা হেমন্তে সাজেকের পূর্ণিমারাত!)

*সাজেকের উচ্চতা ১৮০০ ফুট (আমি নিজে মেপে দেখিনি,তবে আর্মি যেদিন তাদের যন্ত্রপাতি দিয়ে মাপছিলো সেদিন সেখানে থাকার সৌভাগ্য হয়েছিলো!)

*যদি আর্মি অফিসারদের কোন অনুষ্ঠান না থেকে থাকে তাহলে রাতে যতক্ষণ ইচ্ছে বাহিরে থাকতে পারবেন। অফিসার গেলে সাধারণত ১১/১২ টার পরে বাহিরে থাকতে দেয়না।

*২-৩ ঘন্টা সময় নিতে ঘুরে আসতে পারেন সিকাম তৈসা ঝর্ণা,স্থানীয় কাউকে নিয়ে নেবেন গাইড হিসেবে,৩০০-৪০০ টাকা দিলেই হবে।

*মিনারেল ওয়াটার,বিস্কিট, সিগারেট এই ধরনের ছোটখাটো জিনিষ সাজেকে পাওয়া যায়,কষ্ট করে বয়ে নিয়ে যাওয়ার প্রয়োজন নেই।

*শুক্রবার /শনিবার এবং যেকোন বন্ধের সময় সাজেক গেলে হোটেল বুকিং দিয়ে যাওয়াই ভালো,অন্যান্য দিন তেমন বেশি মানুষ থাকেনা।

*সর্বশেষ একটি গোপন প্রশ্নের ওপেন উত্তর দেই! সাজেকে বিয়ার, হুইস্কি অথবা এই টাইপের কিছু এখন পাওয়া যায় না।স্থানীয় আদিবাসীদের তৈরি একটি পানীয় পাওয়া যায়,তবে ওইটা খেলে খুব মাথা ঘোরায় এবং আপনি সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে থাকতে পারবেন না,যেখানেই দাঁড়াবেন সামনেপিছনে এবং ডানেবামে দুলতে থাকবেন!এটা থেকে দূরে থাকাই ভালো!)
আপডেট :এখন সাজেক যেতে হলে আর্মি এসকর্টের সাথে যেতে হয়।এসকর্ট যায় দিঘীনালা থেকে আরো ১৫/১৮ কি.মি. সামনে বাঘাইহাট আর্মি ক্যাম্প থেকে।সকাল ১০:৩০ এবং বিকেল ৩টায় এসকর্ট যায়সাজেক থেকেও একই সময়ে এসকর্ট ছেড়ে আসে।

যারা সিলেট যাবেন তিন দিনের জন্য

ঘননীল আকাশ। সামনে সারি সারি পাহাড়। পাহাড়ের চূড়ায় মেঘের কুন্ডলী। নৈকট্যে গেলে ছেঁড়া ছেঁড়া মেঘ। মেঘের বুক চিরে নেমে আসা ঝর্ণা। নিচে নেমে জল ও পাথরের সম্পর্কে শাঁ শাঁ শব্দ। সেই জলই আবার মিশে যাচ্ছে পিয়াইনের সাথে। পাথরে পাথরে বন্ধুত্ব। পাথরে ও নদীতে মিতালি। পাথরে মানুষে জীবনযাপনের যুদ্ধ। চারিদিকে বিস্তৃত সবুজ। পাহাড়ে পাহাড়ে সবুজের জলকেলি। বিস্তির্ণ মাঠে সবুজের চাদর। এগুলো দৃশ্যকল্প নয়, সিলেটের বিছনাকান্দি জুড়ে এমন দৃশ্য যেন সত্যিই কেউ ফ্রেম বন্দি করে লটকে দিয়েছে আকাশের সাথে। দূর থেকে মনে হবে এই মেঘ, এই মানুষ, এই পাহাড়-নদী কিংবা পাথরের স্থিরচিত্রই এগুলো।দুই পাশে আকাশচুম্বী পাহাড়, তার মাঝে বয়ে চলা ঝরনার স্রোত। পানি একেবারে পরিষ্কার, স্বচ্ছ, এবং টলমলে। আর ছোট-বড় নানান আকৃতি আর রঙের পাথর তো আছেই। পানি এত স্বচ্ছ যে পানির তলার পাথর কিংবা নিজের ডুবে থাকা পা পর্যন্ত স্পষ্ট দেখা যায়।

কিভাবে যাবেন: ১) ঢাকা থেকে বাস, ট্রেন বা বিমানে করে সিলেটে যাওয়া যায়। ২) সিলেট শিশু পার্কের বা আম্বরখানার সামনে থেকে পাওয়া যায় গোয়াইনঘাটগামী লেগুনা অথবা সিএনজি অটো রিক্সা। ভাড়া ৮০-১০০টাকা। গোয়াইনঘাট থেকে হাদারপার বাজার যেতে হবে সিএনজি অটো রিক্সায়। ভাড়া ৩০-৪০ টাকা। হাদারপার থেকে নৌকা নিয়ে যেতে হবে বিছনাকান্দিতে। ভাড়া যাওয়া আসা ৮০০-১০০০+ টাকা। সিলেট শহর থেকে সিএনজি নিয়ে জেতেপারেন রিজার্ভ ১২০০-১৫০০ টাকা।

কখন যাবেন: সারা বছর যাওয়া যায় তবে বর্ষা কালে গেলে আসল রুপ দেখা যায়।বর্ষাকাল বলেই নৌকায় যাতায়াত করা যায়, শুকনা মৌসুমে এক ঘন্টার মত হাটতে হয় । জায়গাটায় পৌছার পর কিছুক্ষণ বিমুগ্ধ নয়নে শুধু চেয়ে ছিলাম। সত্যিকার অর্থেই ছবির চেয়ে অনেক বেশি সুন্দর।

সিলেট জেলায় ঘোরাঘুরির যায়গা গুলো
সিলেট ও সংলগ্ন জেলা গুলোতে (সুনামগঞ্জ,মৌলভিবাজার-শ্রীমঙ্গল, হবিগঞ্জ) ঘোরাঘুরির বেশ কিছু গন্তব্য আছে । এখানে সিলেট জেলায় ঘোরাঘুরির যায়গা গুলোর কিছু তথ্য দেয়া হলো।

ক্বীন ব্রিজ, আলী আমজাদের ঘড়ি ও সুরমা নদীর পাড় : শহরের মাঝে সুরমা নদীর উপর প্রাচীন লোহার ব্রীজ। নিচে নদীর পাড়ে সময় কাটানে যায়। নৌকা নিয়ে ঘোরা ও মন্দ না । ব্রীজের কাছেই আছে ১৪০ বছর পুরনো আলী আমজাদের ঘড়ি। গত শতকের তিরিশের দশকের দিকে আসাম প্রদেশের গভর্ণর ছিলেন মাইকেল ক্বীন। তিনি তখন সিলেট সফরে আসেন। তার স্মৃতিকে অম্লান করে রাখতেই এ ব্রীজটি নির্মাণ হয়। ইতিহাসবিদদের মতে, সে সময় আসামের সাথে যোগাযোগের মাধ্যম ছিল ট্রেন। সঙ্গত কারণেই সুরমা নদীতে ব্রীজ স্থাপনের প্রয়োজনীয়তা দেখা দেয়। রেলওয়ে বিভাগ ১৯৩৩ সালে সুরমা নদীর ওপর ব্রীজ নির্মাণের উদ্যোগ নেয় । ১৯৩৬ সালে ব্রীজটি আনুষ্ঠানিকভাবে খুলে দেওয়া হয়। ব্রীজটির নামকরণ করা হয় গভর্ণর মাইকেল ক্বীনের নামে। ক্বীন ব্রীজ লোহা দিয়ে তৈরী। ১৯৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে পাকিস্তানী হানাদার বাহিনী ডিনামাইট দিয়ে ব্রীজের উত্তর পাশের একাংশ উড়িয়ে দেয়। স্বাধীনতার পর কাঠ ও বেইলী পার্টস দিয়ে বিধ্বস্ত অংশটি মেরামত করা হয়। পরবর্তীতে তা হালকা যান চলাচলের জন্য খুলে দেওয়া হয়। সিলেট শহরের কেন্দ্রস্থলে ক্বীনব্রীজ এর অবস্থান ।

হযরত শাহজালাল (রঃ) মাজার: সিলেট রেল স্টেশন অথবা কদমতলী বাস স্ট্যান্ড এ নেমে রিকশা বা সিএনজি অটোরিকশাযোগে মাজারে যাওয়া যায়। রিকশা ভাড়া ২০-২৫ টাকা, সিএনজি ভাড়া ৮০-১০০ টাকা।সুরমা নদী পার হয়ে মূল শহরে এসে মাজার এ পৌছাতে হয়। মাজার গেট রোড এ অনেকগুলো আবাসিক হোটেল রয়েছে। হজরত শাহপারান (রঃ) মাজার সিলেট সিটির থেকে মাত্র ০৯ কি:মি: দূরে হযরত শাহপরান (র:) মাজার। সিলেট সিটির জেলগেট পয়েন্ট থেকে সি এন জি বা অন্যান্য বাহন দ্বারা শাহপরান বাজারে পাশে হযরত শাহপরান (র:) এর মাজার ।

মালনীছড়া চা বাগান ও অন্যান্য – উপমহাদেশের প্রথম চা বাগান মালনীছড়া। ১৮৪৯ সালে এই চা বাগান প্রতিষ্ঠিত। বর্তমানে বেসরকারী তত্তবধানে চা বাগান পরিচালিত হয়ে আসছে। ১৫০০ একর জায়গার উপর এই চা বাগান অবস্থিত। মালনীছড়া চা বাগান ছাড়াও সিলেটে লাক্কাতুরা চা বাগান, আলী বাহার চা বাগান, খাদিম, আহমদ টি স্টেট, লালাখাল টি স্টেট উল্লেখযোগ্য। মালনীছড়া এবং লাক্ষাতুড়া চা বাগান দুইটিই সিলেট শহরের উপকন্ঠে অবস্থিত। শহরের কেন্দ্রস্থল জিন্দাবাজার পয়েন্ট হতে গাড়ীতে মাত্র ১৫ মিনিটের পথ।সিলেট শহর থেকে রিকশাযোগে অথবা অটোরিকশা বা গাড়িতে বিমানবন্দর রোডে চাবাগানপাওয়া যাবে। গাড়িতে যেতে আম্বরখানা পয়েন্ট থেকে ১০ মিনিট এর পথ।রিকশাযোগে যেতে আধঘন্টা লাগবে।

পর্যটন টিলা , মোটেল ও এডভেঞ্চার ওয়ার্ল্ডবিমানবন্দর রোডে মালনীছড়া এবং লাক্ষাতুড়া চা বাগান পেরিয়ে পড়বে পর্যটন টিলা ও মোটেল। পর্যবেক্ষন টাওয়ার, এমিউজম্যান্টে পার্ক, আইস ক্রীম, এবং স্ন্যাকস এবর ব্যবস্থা রয়েছে। সিলেট আম্বর খানা থেকে অটোরিক্সা/রিকশা করে যাতায়াত। মনিপুরী জাদুঘরশহরের সুবিদবাজার এলাকায় একটি ভাড়া বাড়িতে প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে এ জাদুঘর। বৃহত্তর সিলেট অঞ্চলে বসবাসরত আদিবাসী সম্প্রদায় মনিপুরীদের শত বছরের কৃষ্টি আর ঐতিহ্য তুলে ধরা হয়েছে এ জাদুঘরের মাধ্যমে।

মিউজিয়াম অব রাজাস’ মরমী কবি হাছন রাজা ও পরিবারের অন্য সদস্যদেও স্মৃতি সংরক্ষণের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এ লক্ষ্যে সিলেট নগরীর প্রানকেন্দ্র জিন্দাবাজারে গড়ে তোলা হয়েছে একটি যাদুঘর। এর নাম দেওয়া হয়েছে মিউজিয়াম অব রাজাস’। মনিপুরী রাজবাড়ীমনিপুরী সিলেট তথা বাংলাদেশের আদি সম্প্রদায়ের অন্যতম জনগোষ্ঠি। নগর সিলেটের মির্জাজাঙ্গালে অবস্থিত মনিপুরী রাজবাড়ী প্রাচীন স্থাপত্য কীর্তির অন্যতম নির্দশন। এ ভবনের নির্মাণ শৈলী সিলেট অঞ্চলের কৃষ্টি-সংস্কৃতির অবিচ্ছেদ্য অংশ। এককালের প্রভাবশালী রাজা গম্ভীর সিং এর স্মৃতিধন্য এ বাড়িটি আজ অবহেলিত ও বিলীন প্রায়। বিভিন্ন প্রাকৃতিক দূর্যোগ ও রক্ষণাবেক্ষনের অভাবে প্রকৃত ভবন হারিয়েছে তার স্বকীয়তা। বাড়ীর সুপ্রাচীন প্রধান ফটক, সীমানা দেয়াল, মনোহর কারুকাজের সিড়ি ও বালাখাঁনার ধ্বংসাবশেষই বর্তমান মনীপুরী রাজবাড়ীর স্মৃতি সম্বল। এখনও ধ্বংস স্ত্তপের মতো টিকে থাকা স্থাপনাটি এ বাড়ীসহ সিলেটে বসবাসরত মনিপুরী সম্প্রদায়ের গভীর শ্রদ্ধা-ভক্তির স্থান। শহরের আরো কিছু যায়গা-সিলেট শহরের মাঝে ঘুরতে গেলে সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় , গৌড়-গোবিন্দের টিলা, এমসি কলেজ, মুণিপুরী মার্কেট, খাদিমনগরে ৩টি টিলার সমন্বয়ে গড়ে উঠা পর্যটন স্থান ও রিসোর্ট জাকারিয়া সিটি ঘুরে দেখা যায়। শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয় বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে সময় কাটবে ভালো। ক্যাম্পাসে আসলে দেখতে পারবেন শাবির চমৎকার শহীদ মিনার যা টিলার উপর অবস্থিত। জিতু মিয়ার বাড়িসিলেট নগরীর শেখঘাটে কাজীর বাজারের দক্ষিণ সড়কের ধারে ১ দশমিক ৩৬৫ একর ভুমি জুড়ে অবস্থিত ঐতিহ্যবাহী জিতু মিয়ার বাড়ি। চুন সুরকি দিয়ে নির্মিত মুসলিম স্থাপত্য কলার অনন্য নিদর্শন এ দালানটি নির্মাণ খান বাহাদুর আবু নছর মোহাম্মদ এহিয়া ওরফে জিতু মিয়া।

শ্রী চৈতন্যদেবের বাড়ি: ষোড়শ শতকে সিলেটের গোলাপগঞ্জ উপজেলার ঢাকাদক্ষিনে পন্ডিত জগন্নাথ মিশ্রের কৃতি সন্তান শ্রী চৈতন্য (বিশ্বম্ভর মিশ্র) বাঙালির আধ্যাত্বিক জীবনে এক বৈপ্লবিক যুগের সূচনা করেন । ব্রাম্মণ্যবাদ ও উগ্র বর্ণবাদের বিরুদ্ধে শ্রী চৈতন্য পরিচালিত গণ বিপ্লবে বাংলার আপামর জনসাধারণ বিপুলভাবে সাড়া দিয়েছিলেন। শ্রী চৈতন্যের সমকালে এবং এর বহুকাল পূর্ব থেকে নবদ্বীপে ঢাকাদক্ষিনের বহু বেদজ্ঞ অধ্যায়ন কিংবা অধ্যাপনার নিমিত্তে বসবাস করতেন । অবস্থান: সিলেট জেলার গোলাপগঞ্জ উপজেলার ঢাকা দক্ষিণ নামক স্থানে।দুরত্ব: সিলেট শহর হতে ৩০ কি.মি।যাতায়াত: সিলেট শহর হতে জকি গঞ্জ বা বিয়ানীবাজার উপজেলা গামী যেকোন বাস সার্ভিসে আপনি ঢাকা দক্ষিণ পর্যন্ত যেতে পারবেন। তারপর মহা প্রভু শ্রী চৈতন্য দেবের বাড়ী যেতে আপনাকে ভ্যান বা রিক্সা নিতে হবে।

জাফলংপ্রকৃতি কন্যা হিসাবে সারাদেশে এক নামে পরিচিত সিলেটের জাফলং। খাসিয়া জৈন্তা পাহাড়ের পাদদেশে অবস্থিত জাফলং প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের অপরুপ লীলাভূমি। পিয়াইন নদীর তীরে স্তরে স্তরে বিছানো পাথরের স্তূপ জাফলংকে করেছে আকর্ষণীয়। সীমান্তের ওপারে ইনডিয়ান পাহাড় টিলা, ডাউকি পাহাড় থেকে অবিরাম ধারায় প্রবাহমান জলপ্রপাত, ঝুলন্ত ডাউকি ব্রীজ, পিয়াইন নদীর স্বচ্ছ হিমেল পানি,উঁচু পাহাড়ে গহিন অরণ্য ও শুনশান নিরবতার কারণে এলাকাটি পর্যটকদের দারুণভাবে মোহাবিষ্ট করে। জাফলং এ আপনি দেখবেন চা বাগান ,খাসিয়া পুঞ্জি ও খাসিয়া রাজ বাড়ি এবং বল্লা ঘাট এ পাথর তুলার দৃশ্য। সিলেট জেলার গোয়াইনঘাট উপজেলায় অবস্থিত। সিলেট জেলা সদর হতে সড়ক পথে দুরুত্ব ৫৬ কি.মি। সিলেট থেকে যাতায়াতঃ সিলেট থেকে আপনি বাস/ মাইক্রোবাস/ সিএনজি চালিত অটোরিক্স্রায় যেতে পারেন জাফলং এ। সময় লাগবে ২ ঘন্টা । জৈন্তাপুরজাফলং থেকে ফিরার পথে যাবেন জৈন্তাপুর বাজার । এখানে রয়েছে জৈন্তা রাজবাড়ি আর দিঘি , খাসিয়াপাড়া আর সাইট্রাস গবেষণাকেন্দ্র । টকফল গবেষণা কেন্দ্রে দেখবেন নানা ধরনের টকফল এর বাগান।এ জায়গাটা জৈন্তা বাজার থেকে আপনি হেটে গেলে ১০ মিনিট লাগবে। জৈন্তাপুর দেখা শেষ করে আসার সময় পাবেন লালাখাল ।এখানে থাকার জন্য আছে জৈন্তা হিল রিসোর্ট।

লালাখাল: সিলেট শহর হতে লালাখাল যাবার জন্য আপনাকে পাড়ি দিতে হবে ৩৫ কি.মি রাস্তা। আর জাফলং থেকে ফেরার পথে জৈন্তাপুর এর পরে পড়বে লালাখাল। সিলেট শহর থেকে জাফলং রোডে জৈন্তা থানার সারি নদী। জৈন্তাপুরের সারিঘাটে নামতে হয়। সেখান থেকে ইঞ্জিনচালিত নৌকায় যাওয়া যায় লালাখাল।শীত কালে লালাখালের স্বচ্চ নীল জল রাশি আর দুধারের অপরুপ সোন্দর্য, দীর্ঘ নৌ পথ ভ্রমনের সাধ যেকোন পর্যটকের কাছে এক দূর্লভ আর্কষণ।লাদেশের সবোর্চ্চ বৃষ্ঠিপাতের স্থান এবং রাতের সৌন্দর্যে ভরপুর এই লালাখাল সিলেট জেলার জৈন্তাপুর উপজেলার সন্নিকটে অবস্থিত। সারি নদীর স্বচ্চ জলরাশির উপর দিয়ে নৌকা অথবা স্পীডবোটে করে আপনি যেতে পারেন লালা খালে। ৪৫ মিনিট যাত্রা শেষে আপনি পৌছে যাবেন লালখাল চা বাগানের ফ্যাক্টরী ঘাটে। ভারতের চেরাপুঞ্জির ঠিক নিচেইলালাখালের অবস্থান।লালাখালের কাছেই আছে নাজিমগড় রিসোর্ট।

পাংথুমাই, পিয়াইন নদী , বড়হিল ঝর্না ও বিছনাকান্দি পাংথুমাই একটি চোখ জুড়ানো গ্রাম। মেঘালয় রাজ্যের সারি সারি পাহাড় , ঝর্না , ঝর্না থেকে বয়ে আসা পানির স্রোতধারা , আর দিগন্ত বিস্তৃত চারণ ভুমি দেখতে পাবেন এই গ্রামটিতে ।পাংথুমাইয়ে যাওয়া যায় দুটি রাস্তায়। একটি জৈন্তাপুরের সারিঘাট হয়ে আর অন্যটি হচ্ছে গোয়াইনঘাটের সালুটিকর হয়ে । বাহন সিএনজি রিকশা। এই গ্রাম থেকে খুব কাছে দাঁড়িয়ে দেখা যায় ভারতের বড়হীল ঝর্ণা। এই ঝর্ণার জল মেশে পিয়াইন নদীতে । পিয়াইন নদীতে নৌকা ব্যাবস্থা করে যাওয়া যায় বিছানাকান্দী নামক আর একটা গ্রামে । সড়কপথে ও বিছানাকান্দী যাওয়া যায়, সাথে স্থানীয় কাউকে নিয়ে গেলে সুবিধা পাবেন। দেখতে পাবেন সীমান্ত ঘেষা অনেক পাহাড় আর বর্ষার ঝর্না । বিছানাকান্দী হতে সালুটিকর হয়ে ফেরা যায় আবার পাংথুমাই ফিরে গিয়ে জৈন্তাপুরের সারিঘাট দিয়ে ও ফেরা যায় সিলেট শহরে।

লোভাছড়া চা বাগান ও লোভাছড়া পাথর কোয়ারীসিলেট থেকে প্রথমে ৪০ টাকার বাস ভাড়া দিয়ে আসতে হবে কানাইঘাট উপজেলা সদর নৌকা ঘাটে ।তারপর ২৫ টাকার ইন্জিল নৌকা ভাড়া দিয়ে লোভাছড়া যেতে পারবেন। নৌকায় যেতে পথে পড়বে তিন নদীর মোহনা। ডান দিক থেকে এসেছে বরাক, বাম দিক থেকে এসেছে লোভা। বরাক ও লোভা এসে সুরমায় মিশে চলে গেছে সিলেটের দিকে। ভোলাগঞ্জসিলেট জেলার কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা এর অবস্থান। সিলেট থেকে ভোলাগঞ্জের দূরত্ব মাত্র ৩৩ কিলো মিটার।শহর থেকে ভোলাগঞ্জ পর্যন্ত সরাসরি কোন যানবাহন সার্ভিস নেই। আগন্তুকরা সিলেট থেকে টুকেরবাজার পর্যন্ত যাত্রীবাহি বাস অথবা ফোরস্ট্রোকযোগে যাতায়াত করেন। টুকের বাজার থেকে ভোলাগঞ্জ পর্যন্ত রয়েছে বেবিটেক্সি সার্ভিস।ভারতের আসাম প্রদেশের রাজধানী শিলংয়ে এক সময় লোকজন এ রাস্তা দিয়েই যাতায়াত করতো। কালের পরিক্রমায় এখানে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে রজ্জুপথ। নাম ভোলাগঞ্জ রোপওয়ে। দেশের সর্ববৃহৎ ভোলাগঞ্জ পাথর কোয়ারীর অবস্থানও এ এলাকায়। রোপওয়ে, পাথর কোয়ারী আর পাহাড়ী মনোলোভা দৃশ্য অবলোকনের জন্য এখানে প্রতিদিনই আগমন ঘটে পর্যটকদের।

হাকালুকি হাওর হাকালুকি হাওর সিলেটের অন্যতম বৃহৎ হাওর। বড়লেখা, গোলাপগঞ্জ ও ফেঞ্চুগঞ্জ উপজেলায় সেটি বিস্তৃত। প্রাকৃতিক ভারসাম্য বজায় রাখা ছাড়াও মৎস্য সম্পদের এক বিশাল ক্ষেত্র। অতিথি পাখির অন্যতম বিচরণ ক্ষেত্র হাকালুকি হাওর। শীত মৌসুমে হাজার হাজার অতিথি পাখি সেখানে আসে।

সিলেট ট্যুর প্লান ( তিন দিনের জন্য)
প্রথম দিন : জাফলং – সংগ্রামপুঞ্জি ঝরনা, খাসিয়া পল্লী, শাহ পরানের মাজার ১। আম্বরখানা থেকে সারাদিন এর জন্য সিএনজি ভাড়া ( ১৫০০-২০০০ টাকা) , বাসেও যাওয়া যায় কম খরচে কিন্তু যাত্রা পথের ফিলিংস টা পাওয়া যাবেনা জাফলং থেকে ফিরে আসার সময় শাহ পরানের মাজার ঘুরে আসতে পারেন, একই রোডে পড়ে ২। জাফলং এ গিয়ে ঝরনা টা অবশ্যই যাওয়ার চেষ্টা করবেন, জিরো পয়েন্ট, খাসিয়া পল্লী তে যাবেন, খাসিয় পল্লী তে নৌকা ব্যক্তিগট ভাবে ভাড়া করার দরকার নেই, কিছু সময় পর পর পার হেড ১০-২০ টাকা করে নৌকা ছাড়ে , অইখানে যাবেন আর খাসিয়া পল্লী তে ২০০-৩০০ টাকা তে ভ্যানের মত কিছু গাড়ী পাওয়া যায়, ঐগুলা ভাড়া করবেন, তবে জাফলং এর ঐ পাড়ে খাওয়া দাওয়া করবেননা, দাম অত্যন্ত বেশি, এই পাড়ে এসে খাবেন। ৩। সকাল সকাল যাওয়ার চেষ্টা করবেন , যাওয়ার রাস্তা অত ভালনা ৪। বিকেলে ঘুরে আসতে পারেন শাহজালাল ( রহ:) এর মাজার, আরেকটূ দূরে শাহজালাল ইউনিভার্সিটির সুন্দর ক্যাম্পাস।

দ্বিতীয় দিনঃ রাতারগুল, লালাখাল ২। আবার সিএনজি ভাড়া সারা দিনের জন্য , আপনার ভ্রমনের জায়গা গুলা পরিষ্কার করে বলে নিবেন (ভাড়া ১২০০-১৫০০ টাকা হওয়া উচিত) ২। প্রথমে রাতারগুলা যাবেন, ঐখানে ঘাটে গিয়ে নৌকা ভাড়া করতে হবে ( ৫০০-৭০০ টাকা হওয়া উচিত), আপনাকে ঘুরিয়ে নিয়ে আসবে রাতারগুল সোয়াম্প ফরেষ্ট , চেষ্টা করবেন লাইফ জ্যাকেট সাথে রাখার জন্য ৩। রাতারগুল দেখা হয়ে গেলে চলে আসবেন লালাখাল ( ঘন্টা খানেক সময় কাটাবেন লালাখাল এ, নৌকা ভাড়া করতে হবে, খরচ ৫০০-৭০০ টাকা) ৪। সন্ধার আগে পরে সময় পেলে ঘুরে আসতে পারেন শহরের মাঝখানেই লাকাতুয়া চা বাগান, মালিনীছড়া চা বাগান, শহরের মাঝেই ( রিকশা ভাড়া- ৫০ টাকা)

তৃতীয় দিনঃ সৌন্দর্যের রানী বিছানাকান্দী , পান্থুমাই, লক্ষনছড়া ১। সারাদিন এর জন্য সিএনজি ভাড়া ১৫০০-১৭০০ টাকা ২। সকাল সকাল রওনা দিবেন, যদি সবগুলা জায়গা কাভার করতে চান, বিছানাকান্দি যেতে ২.৫০ ঘন্টা থেকে ৩ ঘন্টা সময় লাগে ৩। হাদারপাড় নৌকা ঘাটে সিএনজি আপনাকে নামিয়ে দিবে, ঐখান থেকে ইঞ্জিন চালিত নৌকা ভাড়া করবেন, তাকে বলে নিবেন সবগুলা লোকেশন এর কথা (বিছানাকান্দী , পান্থুমাই, লক্ষনছড়া), ভাড়া নিবে ১০০০-১২০০ টাকা ৪। পান্থুমাই এ বেশি সময় দিবেননা, জাস্ট দেখে চলে আসবেন, এই প্লেস এ নাও যেতে পারেন, খুব একটা আহামরি কিছুনা, নৌকা ভাড়া কমে যাবে ৫।

লক্ষনছড়ায় যান, পানিতে কিছু সময় কাটান ৬। লাস্ট এ যাবেন বিছানাকান্দি তে ( আমার উপদেশ ২ঃ৩০-৩ টার মধ্যে বিছানাকান্দি তে পৌছাতে পারলে ভাল, বেলা সাড়ে পাচ টার পর ঐখানে থাকতে দেয়না , তাহলে আপনি ৩ ঘন্টার মত সময় পাবেন, পানিত গোসল করেন, ছবি তুলেন , উপভোগ করেন প্রকৃতির অপরূপ খেয়াল, ঐখানে ইন্ডীয়ান অনেক কোয়ালিটি প্রোডাক্টস কিনতে পাওয়া যায়, পছন্দ হলে কিনতে পারবেন।

আমার পরামর্শ তৃতীয় দিন বিছানাকান্দিতে যাওয়ার সময় আপনি হোটেলে চেক আউট করে যান তাহলে হোটেলে দুইদিন এর ভাড়া দিতে হবে আর ঐদিন রাতেই বাস অথবা ট্রেনের টিকিট কেটে রাখতে পারেন, ঢাকা থেকে ট্রেন ভাড়া শোভন ৩০০ টাকা, নন এসি বাস ভাড়া ৪০০-৪৫০ টাকা

খাওয়া দাওয়া কোথায় করবেনঃ পানশী , পাচভাই

একটা রোমান্টিক সময় কাটান ফর কাপলঃ শেষ দিন বিছানাকান্দি থেকে ফিরে আসার পর বাস বা ট্রেনে উঠার আগে হাতে কিছু সময় থাকবে , সেই সময় টা আপনি সুরমা রিভার ক্রুইজে কাটাতে পারেন ইচ্ছা করলে , সন্ধ্যা কালীন সময়ের জনক্স খুব সম্ভবত ৩৫০ টাকা নিবে পার হেড ( ফাইভ আইটেম এর ব্যুফে খাবার, নাচা গানা , আর সুরমা নদী তে ঘুরে বেড়াবেন ১ ঘন্টা, জীবনের একটা ভাল অভিজ্ঞতা হয়ে থাকবে আপনার জন্য)

কিছু এক্সট্রা বিষয়ঃ
** সিএনজি, নৌকা এর যে ভাড়া গুলা দেওয়া হয়েছে, সবাই অবশ্যি দামাদামি করবেন ভাল করে। ** অনেক জায়গায় আপনাকে চা কিনতে বলবে কিন্তু কোন জায়গা থেকে চা কিনবেন না, ভাল চা নয় ** সিলেটের সাতকড়া মশলা বিখ্যাত , আসার সময় কিনতে আনতে পারেন ** কেউ যদি দুই দিনের জন্য প্রোগ্রাম করেন তবে জাফলং এর সাথে লালাখাল রাখবেন আর বিছানাকান্দি এর সাথে রাতারগুল রাখবেন তবে অবশ্যি সকাল ৭ টার দিকে রওয়ানা দিবেন ।

১) গ্রুপ করে গেলে ভাল । ২) খাবারের জন্য আগে দাম জিজ্ঞেস করে নেয়া উচিত । ৩) রিক্সা চালকদের ড্রাইভার বলে ডাকবেন, মামা বা অন্য কিছু না বলাই ভাল। ৪) বর্ষাকালে গেলে রেইন কোট , ছাতা নিয়ে যাবেন। ৫) ভারতীয় সিমানার কাছাকাছি তাই সীমানার ব্যাপারে সতর্ক থাকবেন । ৬) আমাদের প্রকৃতি রক্ষার দায়িত্ব আমাদের তাই কোন চিপ্স,চানাচুর বা পানির বোতল ফেলে আসবেন না।

কালা পাহাড়

এক দিনের ট্যুরে যদি আপনি এক্সট্রিম এডভেঞ্চার আর ট্র্যাকিং দিতে চান।। তাহলে আপনার জন্য কালা পাহাড়ই আদর্শ স্থান।।

==========================================

কালা পাহাড় (ট্যুরের বিবরন, কিভাবে যাবেন, যাবতীয় খরচের হিসাব)

সিলেটের পাহাড় শুনলে আমরা যা মনে করি তা হল ছোট ছোট টিলা। আমার ভাবনাতেই তাই ছিল। কিন্তু সত্যি বলছি কালা পাহাড়ের উপরে যখন উঠবেন তখন বিশ্বাস করতে কষ্ট হবে আপনি সিলেট আছেন। একেবারে উপর থেকে নিচে তাকালে দেখা যাবে চারপাশে অসংখ্য ছোট ছোট টিলা আর মধ্যিখানে আপনি রাজার মত অনেক উঁচুতে আছেন।

পরপর তিনটা লুতুপুতু মার্কা ট্যুর (শ্রীমঙ্গল, নিঝুম দ্বীপ আর সেইন্ট মারটিন) শেষ করার পর দলের ভিতরে যারা ট্র্যাকিং প্রেমিক তাদের হটাত ভাবনায় পেয়ে বসে এই যে, ” কি করছি আমরা এইসব ” ? সেই নাফাখুম আমিয়াখুম আর পদ্মমুখ ঝিরি ট্র্যাকিং শেষের পর আর কোন ট্যুরে এডভেঞ্চারের নাম গন্ধ পাচ্ছিলাম না। তাই ভিতরে ভিতরে কুরকুরানি শুরু হয়ে গিয়েছিল।

মনে মনে তাই ভাবতে থাকলাম এক দিনের ভিতরে যদি কোন এক্সট্রিম ট্র্যাকিং দেয়া যায়, তাহলে মন্দ হয় না। তখনই মাথায় আসলো কালা পাহাড়ের কথা। এটির অবস্থান সিলেটের মৌলভীবাজারের কুলাউরা উপজেলার কারমাদহ ইউনিয়নের বেগুণছড়া পুঞ্জিতে। এটা মূলত খাসিয়াদের গ্রাম। ওরা গ্রামকে “পুঞ্জি” বলে আর বান্দারবনের ওদিকে বলে “পাড়া”। কালাপাহাড় সিলেট জেলার সব থেকে উচু পাহাড় যার উচ্চতা ১০৯৮ ফিট। গ্লোবাল লোকেশন N 24°24.586’ E 092°04.792’
দলে আমরা ৫ জন আমি মামুন, হিটু ভাই, মেহেদী, তপু আর অপু ভাই।

কালা পাহাড় যাবার জন্য রাস্তা একটিই কিন্তু ফেরার রাস্তা দুটি। আপনি যদি আরাম প্রিয় হন তাহলে বলবো রুট নাম্বার ওয়ান বেছে নিতে কেননা এই রুট অবলম্বন করে আপনাকে যেতে আসতে সময় লাগবে মাত্র ৪ ঘণ্টা। আর দ্বিতীয় রুটে যেতে হলে আপনাকে প্রথমে কালা পাহাড় গিয়ে রাজকি চাবাগান হয়ে ফুলতলি চ বাগান দিয়ে বের হতে হবে। এই রুটে সব মিলিয়ে সময় লাগবে সাড়ে আট ঘণ্টার মত এবং তাতে মোট ৩৫ কিলোমিটারের মত হাটতে হবে। ফুলতলি চা বাগানের গেটে আপনি সিএনজি পাবেন যাতে করে আপনাকে মুল শহরে ফিরে যেতে কোন বেগ পেতে হবে না।

নববর্ষের প্রথম প্রহরে কুলাউরা বাসস্ট্যান্ডে নামার সাথে সাথে বেশ ভালো শীত আমাদের সবাইকে ঝাকিয়ে ধরে, আরে বাবা এ কি আজিব ব্যাপার ? এই বৈশাখ মাসে কিসের এতো শীত ? যাই হোক হাতে সময় বেশী নেই ভেবে তাড়াতাড়ি একটা সিএনজি ঠিক করে ফেলি। গন্তব্য আজগরাবাদ চা বাগান। আজগরাবাদ নেমে প্রথমে গেলাম বেগুণছড়া পুঞ্জিতে কেননা কালা পাহাড় যেতে হলে ওখানকার আদিবাসীদের লিডার “লেম্বু” দায়ের (01951649881) অনুমতি নিতে হবে। বড়ই সজ্জন মানুষ এই লেম্বু দা। তার বাড়িতে যাবার পরে তিনি আমাদের আপায়্যন করলেন চা এবং বিস্কুট দ্বারা। আর আমাদের বসতে দিলেন তার বাড়ির বৈঠক খানাতে। তিনিই আমাদের গাইড ঠিক করে দিলেন। এবং গাইডের হুশিয়ার করে দিলেন এই যে, আমাদের যাতে কোন প্রকার অসুবিধা না হয়। লেম্বু দ্বা জানালেন যে, গত দুই মাসে আমরাই নাকি প্রথম গ্রুপ যারা কালা পাহাড় দেখতে এসেছি।

ট্র্যাকিং ট্রেইল অসম্ভব সুন্দর, যাত্রা শুরুর সাথে সাথে আপনি পাবেন ঝিরিপথ, তবে এই ঝিরিপথ আপনি যদি বান্দারবনের ঝিরিপথ চিন্তা করেন তাহলে আপনাকে হতাশ হতে হবে, নিরাশ হবেন না আসল সৌন্দর্য একটু পরেই পেতে শুরু করবেন।

ঝিরি পথ আর বাঁশের শাকো পার হয়ে এবার এসে গেলাম মুল রাস্তায়। দুই পাশে সবুজ আর সবুজ সেই সাথে নাম না জানা পাখির ডাক। হটাত সামনের পথ দেখলাম আস্তে আস্তে উঁচুতে উঠা শুরু করে দিয়েছে। কানে হেড ফোন লাগালাম। পাহাড়ে উঠা নামার সময়ে নিজের ক্লান্তি ভুলবার আর মনোযোগ ঠিক রাখার আমার নিজস্ব একটা পন্থা আছে সেটা হল কানে হেড ফোন গুঁজে নিবিষ্ট মনে হাটা। এটা আমি শিখেছি মেহেদী আর তপুর কাছে। চড়াই উৎরাই আর জঙ্গলের ভিতরে হাঁটতে হাঁটতে দেখি আমার কাদের উপর সকালের মিষ্টি রোদের খেলা। মনে পরে গেল জন ডেনভারের Sunshine On My Shoulder ……. Makes Me Happy ……… আসলেই আমি হ্যাপি। দুই ঘণ্টা হাটা শেষ করে এবার গাইড বলে এবার থামেন এটাই কালা পাহাড়ের চূড়া। মেহেদী তখন বলল, আরে আমি তো আর একবার এসেছি …… এটা সেই জায়গা নয়। হটাত আমি অন্য দিকে হাটা শুরু করে দিয়ে দেখি আড়াল থেকে একটা উচু পাহাড় দেখা যাচ্ছে …… তখন আমি বললাম এটা যদি কালা পাহাড় হয়ে থাকে তাহলে আমি সিলেট জেলার অন্য একটা পাহাড় আবিষ্কার করেছি যেটা কালা পাহাড়ের থেকেও উচু। আর ওইটার আবিষ্কারক আমি নিজে। কালা পাহাড় উঠেছি ভালো কথা …… কিন্তু ওইটায় না গেলে ক্যামন হয় ? আমি ওইটায় যাবো। দলের সবাই এক কথায় রাজী। কিন্তু গাইড বলল, ওখানে যাবার রাস্তা নাই। শুনে আমি বললাম রাস্তা থাকুক আর নাই থাকুক আমি যামুই যামু। বলে সবাই আমরা ওটার দিকে হাতা শুরু করলাম ……… গাইড বুঝে ফেললো ……… এগুলা বিচ্ছুর দল …… চিটিংবাজি এদের সাথে চলবে না ……… আদিবাসী নেতার কড়া হুকুম …… ট্রাভেলারদের সাথে টালটি বালটি চলবে না। করলে খবর আছে। কি আর করার গাইড আমাদের পিছনে পিছনে হাটা শুরু করে দিলো। আসলে গাইড আমাদের যেখানে নিয়ে গিয়েছিল সেটি আসলে কালা পাহাড় নয়। তারপর আনুমানিক আধ ঘণ্টা হাটার পর আসল কালাপাহাড়ের চূড়ায় এসে গেলাম। তপু সামিট নোট গেড়ে দিল। এরপর গাছের ছায়ায় বিশ্রামের পালা, ব্যাগ থেকে একটা স্নিকার চকলেট বের করে সবার হাতে একটা একটা করে ধরিয়ে দিল তপু, আর আমি ব্যাগ থেকে খেজুর বের করে সবার হাতে চারটা করে ধরিয়ে দিলাম। পুরা আট ঘণ্টা ট্র্যাকিং এই ছিল আমাদের রসদ। পাহাড়ের একেবারে চূড়ায় বিশাল বড় বড় মহিষ দেখতে পেয়েছিলাম। ভয় লাগছিল আড়াই ফুটি শিং দেখে। না দেখালাম উল্টা ওরাই আমাদের দেখে ভয় পেয়ে জঙ্গলের ভিতরে ঢুকে গেছে। সাবধান মাঝে মাঝে এদিকে নাকি বন্য হাতি দেখতে পাওয়া যায়। আসবার সময়ে প্রচুর হাতির মল দেখেছিলাম। হাতির সাথে নো মাস্তানি। এবার ফেরার পালা।

নামার সময়ে সব থেকে বিরক্ত লেগেছে পাহাড়ি একধরনের ফুলের রেশম পাপড়ি, নাড়া লাগলেই তা ঝড়ে পড়ে আর শরীরের যেখানে লাগবে শুরু হবে চুলকানি। আর সাথে জোকের অত্যাচার তো আছেই। নামার সময়ে সব থেকে বেশী কষ্ট পেয়েছি পানির ওভাবে। বৈশাখ মাসের দিন, সূর্য মাথার উপরে আর তাপমাত্রা তখন ৩২ ডিগ্রির কাছাকাছি। দলের সব থেকে সবচেয়ে টাফ গাই মেহেদীর অবস্থা করুন। কিন্তু এঞ্জয়মেন্ট কারো থেকে নেই। রাজকি চা বাগানের খুব কাছে এসে একটা খালের মত পেয়েছি যার আছে সচ্চ ঠাণ্ডা পানি আর পানির উপরেই একটা বাঁশের তৈরি বেশ চওড়া একটা ব্রিজ। সবাই এখানে গামছা ভিজিয়ে শরীর মুছে ঠাণ্ডা হয়ে নিলো। ওই খালটা না পেলে কপালে দুঃখ ছিল সবার।

এক সময় রাস্তা শেষ হল …… জঙ্গলের ভিতরেই পেয়ে গেলাম একটা চায়ের দোকান …… ওখানে চা আর কলা খেয়ে ক্লান্তি দূর করে আবার হাটা শুরু করে দিয়ে একেবারে রাজকি চা বাগানের গেটে এসে পড়লাম। আর এখানেই আমাদের যাত্রা শেষ।

ট্যুরের খরচ
বাস => ঢাকা টু কূলাঊড়া => ৪০০ X ২ = ৮০০ টাকা বাস স্ট্যান্ড থেকে আজগরাবাদ চা বাগান সিএনজি ভাড়া ৩০০ টাকা রাজকি চা বাগান থেকে কুলাউরা বাঁশ স্ট্যান্ড ৫০০ টাকা গাইড কে দিতে হবে ৪০০/৫০০ টাকা।

শ্রীমংগল ট্যুরপ্ল্যান (দুই দিন)

বাসঃ এনা-মহাখালী-১২০০টা-৪০০ টাকা(বিয়ানীবাজারের গাড়ি) সায়দাবাদ থেকে ( হানিফ – শ্যামলী ভাড়া ঃ  ৩৮০টাকা  )

প্রথম দিনঃ শ্রীমঙ্গল(চৌমুহনী) পৌছাতে আনুমানিক ভোর ৫টা।হোটেল বুক প্লাস রেষ্ট (০৫০০-০৯০০)।ব্রেকফাস্ট করে সিএনজি ভাড়া করবেন।সিএনজি ভাড়া ১০০০-১২০০ টাকা।চাইলে দুইদিনের টা একসাথে ভাড়া করতে পারেন। ২৫০০ টাকার মত পড়বে।

ঘুড়বেন-১।লাউয়াছড়া (১.৫ ঘন্টা) ২।মাধবপুর লেক (১.৫-২ঘন্টা) ৩।বাইক্কা বিল (যদি টাকা বেশি হয়ে থাকে অথবা খুব রিল্যাক্সে থাকেন) ৪।নীলকন্ঠ টি কেবিন ৫।বিজিবি বধ্যভুমি

দুপুরে লাঞ্চ করতে পারেন পানসী তে বাজেট ১০০-১৫০ টাঁকায় ভাল খেতে পারবেন ।রাতে খেতে পারেন কুটূমবাড়ি।অবশ্যই পেশোয়ারি নান ট্রাই করবেন।ডিনারের জন্য বাজেট ২০০ টাকা এনাফ।

২য়দিনঃ ১।হামহাম (অবশ্যই অবশ্যই সকাল ০৬৩০ এর মধ্যে বের হবেন) ২।বিটিআরআই (দেখার মত আসলে কিছু নাই তবু টাইম পাস করলেন)

বাসের টিকিট করে রাখতে পারেন আগের রাতেই।কোন ধরণের সমস্যা না হলে এবং সকাল ০৬৩০ এর মধ্যে বের হলে হামহাম থেকে বিকাল ৫টার মধ্যে ফিরে আসতে পারবেন।হানিফ/এনা-৩৮০-০৬৪০ অথবা শ্যামলী-৩৮০-০৭৪০।আমি সাজেষ্ট করব এনা অথবা শ্যামলী কারণ হানিফ সায়েদাবাদ/ফকিরাপুল নামায় এবং বাসের সীট আরামদায়ক না।সবকিছু ঠিকঠাক থাকলে রাত ১২।০০টার মধ্যে বাসায় পৌছানোর কথা।